স্বামীর ভালোবাসা part : 3

0
4910

স্বামীর ভালোবাসা part : 3

লেখিকা সুরিয়া মিম

!
যা পারো করো গিয়ে তাতে আমার কি?
আমার কোনো কষ্ট হয় না,
একি ঘরে তো অপরিচিত হয়ে থাকো,
!
তারপর ইমান রুমে চলে যায়,
সেখানে গিয়ে দেখে,
ইশা মিশকার বিয়ের গহনাগাঁটি গুলো ট্রাই করে দেখছে,
!
তাই নিজেকে সংযত করতে না পেরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
!
তুই মানে তুমি এগুলো কোথায় পেয়েছ?
!
বাবু মিশকা আমাকে ওর সব গহনাগাঁটি দিয়ে দিয়েছে সাথে লকারের চাবি এবং তোমার ইম্পরট্যান্ট পেপারস গুলো ও দিয়ে দিছে
!
এতকিছু দিয়েছে সাড়ি গুলো দেয়নি?
!
বাবু ও জানে আমি সাড়ি পড়িনি আর পড়ি না তাই ও সাড়ি গুলো ভিক্ষারী কে দিয়ে দিবে,
!
ও তাই?
!
হুমমম,
!
তারপর ইমান ওকে মিষ্টি হাসি দিয়ে কনফারেন্সে চলে যায়,
যতই হাসি দিক ওর মিশকার এমন আচরণ একটু ও ভালো লাগছে না,
তাই ও কনফারেন্স শেষে বাসায় ফিরে আসে,
!
আর শাওয়ার নিয়ে ইশা কে নিয়ে ওর বন্ধুর বিবাহবার্ষিকীর পার্টি তে যাওয়ার জন্যে রেডি হয়ে হলে যায়,
সেখানে গিয়ে দেখে,
!
মিশকা সেই একহাত ঘোমটা দিয়ে কিচেনে ডিনার তৈরি করছে,
তখন ও ইশার প্রশংসা করে বলে,
!
বেবি ইউ আর লুকিং সো হট,
!
ময়না বেশি গরম হলে পুরে যাবে গ্যাস টা অফ করে রাখ,
!
তখন ময়না মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
আচ্ছা বৌ রানী,
!
তখন ইমান মিশকার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,
আর ইশা এসে বলে,
!
আয় নো আয় এম রেয়ালি হট বাবু,
ওর কথা শুনে ইমান মিশকাকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে,
ইশা কে কোলে নিয়ে গাড়ি তে গিয়ে বসায়,
!
ময়না পাখি তখন মিশকা কে জড়িয়ে ধরে বলে,
!
কাইন্দো না গো বৌ রানী,
এই বৌ দিয়া সাহেবের কখনওই সুখ হবে না তুমি দেইখা লইয়ো,
কেমন চলা ফেরা ও বিশ্রী সাজপোশাক সাহেব কেন?
যেকোনো পুরুষ এমন মহিলার বাইরে বেড়িয়ে থাকা অঙ্গ দেখলে লালসাকামনা করবে,
আর ইনি তো চব্বিশঘণ্টা এমন পোশাক পরে যে সবি দেখা যায়,
!
তয় এতো কষ্ট করে ছোটো ছোটো জামাকাপড় পড়ে লাভ কি?
জামাকাপড় ছাড়া নাঙ্গা থাকলেই তো পারে,
!
তোমরা চুপ করবে প্লিজ?
আমার এসব শুনতে ভালো লাগছেনা প্লিজ,
!
তুমি তো ভালা তাই তোমার খারাপ জিনিস সহ্য হয় না সেটা মেরা জানি গো বৌ রানী,
!
তাহলে প্লিজ চুপে করো,
!
আচ্ছা,
ওহন তো আমনের ঘোমটা তোলেন এহন কেউ নাই,
!
ওদের কথা শুনে আমি আমার ঘোমটা তুলে চোখের জল মুছে,
নিজের অনাগত সন্তানের কথা ভেবে পেট ভরে খাবার খেয়ে নেই,
তারপর নিজের বিছানায় গিয়ে শুয়ে পরি,
!
পরেরদিন সকালে আমার ঘুম থেকে উঠতে দেড়ি হচ্ছে দেখে,
ময়না ও পাখি এসে
আমাকে ডেকে তোলে,
তখন আমি ওদের বলি,
!
আমি না খাবারের কাছে গেলে খেতে গেলে আষ্টে গন্ধ পাই আর সাথে সাথে আমার বমি পেয়ে যায়,
তাই আর আমি রান্নাবাড়া করবো না তোরা প্লিজ ম্যানেজ করে নে?
!
এ আর নতুন কি?
মা হতে হলে এসব তো হবেই,
আর আমরা তো আমি তুমি টেনশন করো না গো বৌ আপি,
আমরা সব সামলে নেবো,
তুমি শুধু তোমার আর বাচ্চার যত্ন নেও,
!
যাক বাবা বাচাঁলি আমায়,
তাছাড়া এখন আর এটা আমার সংসার নয়,
তাই যার সংসার তাকে তার জিনিসপত্র গুছিয়ে দিয়ে,
আমি আমার সন্তান নিয়ে দূরে কোথাও চলে যেতে চাই,
যেখানে শুধু আমি ও আমার সন্তান থাকবো,
!
তুমি এটা অনেক ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছ বৌ রানী,
!
হুমমম নেক্সট উইকে আমার শশুড় শাশুড়ি আসছেন আমাকে আমার এই বন্দী দশা থেকে মুক্তি দিতে,
!
আলহামদুলিল্লাহ্‌ তাহলে তো ভালোই,
!
হুমম তোমরা এখন যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি,
!
ওরা চলে যেতেই আমি ফ্রেশ হয়ে নিচে গিয়ে দেখি,
!
উনি ও ওনার বৌ ড্রিংক করে সোফায় পরে পরে ঘুমচ্ছে,
আগে তো তুমি এমন ছিলে না গো,
বিড়ি, সিগারেট, ড্রিংক এসবের ধরে কাছে ও ঘেষতে না তুমি,
আর সেই তুমি আমার ভালোবাসা ভুলে এমন একজনের ভালোবাসায় মাতলে যে তোমাকে………. থাক আর বললাম না আমার বলায় কি বা আসে যায়?
!
আমার শুধু একটাই কষ্ট,
যে আমি তোমাকে পতন থেকে অধপতের দিকে এগিয়ে যেতে নিজের চোখে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখছি,
কিছু করার নেই আমার তুমি সেচ্ছায় এপথ বেছে নিয়েছ,
তাই নিজের খেয়াল নিজ দায়িত্বে রেখো,
!
কি ভাবছ বৌ রানী?
!
নাথিং,
আমি ইউনিভারসিটি যাচ্ছি ওনারা উঠলে ওনাদের আচ্ছা মতো প্যামপাড় করো কেমন?
!
জ্বি বৌ রানী,
!
হা হা হা,
!
ইসসসস,
বৌ রানীর হাসি টা কত সুন্দর আর এই লোকটা ওনার হাসি টাই নিয়ে গেছে,
!
শোন পাখি যে লোকেরা একটা থুইয়া একটা লইয়া পইরা থাকে হেগো কপালে শান্তি নাই নিজের চোখে দেহা,
!
ঠিক কইছিস,
চল কামে চল না হলে হেরা উঠে আবার ফাইফরমাশ খাটানো শুরু করবো,
!
ময়না শোন এ বাড়িতে ভালো মানুষ শুধু একটাই আর সেটা আমাগো বৌ রানী,
মাঝেমধ্যে মনডায় চায় আমি ওনাগো দুজনরে বৌ রানী পা ধোয়া পানি এনে খাওয়াই,
!
হা হা হা,
চল বোন কামে চল,
!
কিছুদিন ধরে ইমান খাবার খেতে পারেনা,
খাবারে সেই আগের স্বাদ পায় না,
সবকিছু পানসে পানসে লাগে,
তাও চুপচাপ সোনা মুখ করে খেয়ে নেয়,
!
কিন্তু আজ কে রাগ করে ময়না পাখিকে ডেকে বলে,
!
এরকম এই বাজে খাবার গুলো কে রান্না করছে?
!
সাহেব আমরা রান্না করেছি,
!
কেন সে কোই?
!
বৌ রানী অসুস্থ তাই আমরাই এখন থেকে রান্নাবাড়া করবো,
!
মিশকা অসুস্থ শুনে ওর বুকে টা অজানা ব্যথায় চিনচিন করে ওঠে,
আর তখনি মিশকার বেষ্ট ফ্রেন্ড রুহান এসে হাজি হয়,
!
আরে রুহান তুমি এখানে?
!
হ্যা আমি এখানে,
আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড কে ডক্টর দেখাতে নিয়ে যেতে এসেছি,
!
বকবক করা হলে ওপরে আয়,
আমার কষ্ট হচ্ছে আমি রেলিং ধরে নামতে পারবোনা,
!
আচ্ছা বাবা আসছি,
তারপর রুহান এসে মিশকাকে ধরে নিচে নিয়ে যায়,
!
ইমান বিষয় টা এভাবে এড়িয়ে গেলে ও অন্য একটা ছেলে ওকে এভাবে ধরে ধরে নামাচ্ছে এটা ওর মনে কষ্টের সৃষ্টি করছে,
!
তুই এভাবে একহাত ঘোমটা দিয়েছিস কেন?
!
লজ্জা করে তাই,
!
কেন করে?
!
পরপুরুষ কে মুখ দেখাতে লজ্জা করে তাই,
!
এতো লজ্জা করে যে পরপুরুষ কে মুখ দেখাচ্ছ আর আমার সাথে অপরিচিত হয়ে থাকছ,
!
সাহেব বৌ রানী কে রুহান ভাই একা ধরে নামাতে পারবেনা আপনি একটু ধরেন,
!
নাহহ না,
আমি ঠিক আছে রুহান পারবে,
আপনি প্লিজ আমাকে ছোঁবেন না,
!
মিশকার কথা শুনে ইমান নির্বাক হয়ে তাকিয়ে থাকে,
আর রুহান ওকে নিয়ে হসপিটালে যায়,
দরজায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইমান ওর চলে যাওয়া দেখে,
!
বাবু তুমি দরজায় দাঁড়িয়ে আছো কেন?
!
কোই কিছুনা তো এমনি দাঁড়িয়ে আছি,
!
একটা কথা বলি,
!
কি?
!
মিশকা তোমাকে বললে পারতো খামোখা অন্য একটা ছেলে কে,
!
তোমার ভালোলাগাত আমি যদি ওকে ডক্টরের কাছে নিয়ে যেতাম?
!
তখন ইশা চুপ করে মাথা নিচু করে ইমানের সাথে খেতে বসে যায়,
কিন্তু,
ইমানের গলা দিয়ে খাবার নামছেনা কারন ও না চাইলে ও মিশকাকে নিয়ে ভাবছে,
তাই কোনো মতে খেয়েদেয়ে বিছানায় গিয়ে গা এলিয়ে দেয়,
আর ভাবে,
!
এই কি সেই মিশকা যে আমাকে তার চোখে হারাত?
আমাকে অনেক ভালোবাস তো?
নাহহহ চিনতে পারছিনা আমি ওকে,
আমার ছোয়ার পাগল আমাকে ছুতে বারণ করে,
!
আশ্চর্য আমার এতো গায়ে লাগে কেন?
ও ওর মতো আমি আমার মতো,
আমি আর কখনো ওকে নিয়ে ভাববো না,
!
পরেরদিন সকালে মিশকা ইমানের রুমের সামনে দিয়ে হলে যাওয়ার সময়ে হঠাৎ করে রুমের মধ্যে নজর যেতে দেখে,
!
ইমান ইশা উলঙ্গ অবস্থায় একে অপর কে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে শারীরিক সম্পর্ক করছে,
!
মানুষ কতো টা নির্লজ্জ হলে বেড রুমের দরজা খেলা রেখে এসব করে খোদাতায়ালাই জানে,
!
তবু ও মিশকা নিজেকে সামলে নিয়ে কিচেনে গিয়ে ইলিশ পোলাও রাধতে শুরু করে,
!
ইলিশ পোলাও এর গন্ধে পাগল হয়ে কিছুক্ষণের মধ্যেই ইমান নিচে চলে আসে কারন এটা ওর সবচেয়ে ফেভারিট ডিশ,
আর ও ভাবে,
!
যে মিশকা এক হাত ঘোমটা টেনে ওর জন্যে ইলিশ পোলাও রান্না করছে,
!
কিন্তু ওর আশায় জল ঢেলে মিশকা রুহানের জন্যে রান্নাকরা ইলিশ পোলাও নিয়ে ইউনিভারসিটি তে চলে যায়,
!
তখন ইমানের চোখ জোড়া ছলছল করে ওঠে,
!
তখন বাসার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা সুইপারদের বলাবলি করতে শোনে,
!
সাহেব কত নির্লজ্জ ছিছিছি,
দরজা খোলা রেখে বৌ রানী কে দেখাতে ওনার দ্বিতীয় বৌয়ের সাথে ছিছিছি কি আর বলবো?
হে সময় মুই ঘর মুছি
হঠাৎ দেহি ওই সব ছিছিছি
হেই
আবার আশা করে আমাগো বৌ রানী হেরে নিজের হাতে রান্নাকরে খাওয়াবো,
আল্লাদে বাচেঁ না,
!
বাপের কালে যে কি কি দেখবো খোদাতায়ালা জানে,
!
তুই খোদাতায়ালার কথা কও?
মুই ভাবি বৌ রানী কি ভাব যে?
ছিছিছি,
!
সুইপার দের কথা শুনে নিজের অজান্তেই কেঁদে ফেলে ইমান,
!
চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে