#Shadow_in_love
Part-8
#ফাবিহা_নওশীন
??
আয়েশা আরহানের পাশে বসে ছটফট করছে।মনে হচ্ছে আরহানের না ওর ছুড়ি লেগেছে।আরহান চুপ করে আয়েশাকে দেখছে।
আয়েশা কাদতে কাদতে বললো,
—–এখন আমি কি করবো? রাত হয়ে আসছে,কেউ নেই এখানে।আশেপাশে কাউকে দেখছিনা।কত রক্ত পড়ছে।হসপিটালে নিতে হবে।
উফফ আপনার গাড়িও তো নষ্ট আর ম্যাজিক আজকেই যাওয়ার ছিলো।এখন আমি কি করবো?কিভাবে আপনার ট্রিটমেন্ট করবো?
একটানা কথাগুলো বলে আয়েশা কান্নার গতি বাড়িয়ে দিলো।
আরহান বুকে হাত দিয়ে চেপে ধরে উঠে বসার চেষ্টা করলো।আয়েশা বাধা দিলো।
—–যেভাবে আছেন সেভাবে থাকুন।
আরহান ওভাবেই রইলো।তারপর আয়েশাকে বললো,
—–চোখের পানি মুছো।আমার কিছু হবেনা।তুমি যতক্ষণ আছো আমার কিছুই হবেনা।সো রিলেক্স।
——আপনি এই অবস্থায় কিভাবে রিলেক্স হতে বলছেন?কত ব্লাড বের হচ্ছে।এতো ব্লাড বের হলে তো আপনার বড় কোনো ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আরহান শান্ত গলায় বললো,
—–তাতে তোমার কি?
আয়েশা চুপ করে গেলো কোনো উত্তর দিচ্ছেনা।আরহান সেটা দেখে বললো,
——আমার কিছু হয়ে গেলে তুমি মুক্তি পেয়ে যাবে।আর তুমি তো সেটাই চাও।সো আমাকে মরতে দেও।কেননা বেচে থাকা অবস্থায় কেউ আমার থেকে তোমাকে আলাদা করতে পারবেনা।
—–আপনি চুপ করুন তো।আমাকে ভাবতে দিন।
আয়েশা নিজের ওড়না হাতে নিলো।সেটা কিছুটা ছিড়ে ওর মাথায় বেধে দিলো।বাকি ওড়না দিয়ে আরহানের বুকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করা জায়গায় শক্ত করে বেধে দিলো।
আয়েশা আরহানকে বললো,
—–দাড়ান দেখি আশেপাশে কেউ আছে কিনা।
আয়েশা জোরে জোরে বললো,
—–হেল্প হেল্প!! কেউ আছেন?
আয়েশার চিতকারের প্রতিধ্বনি ফিরে ওর কাছেই আসছে।
আরহান বললো,
—–শুধু শুধু চিতকার করছো এখানে কেউ নেই।
আয়েশা রেগে বললো,
—–আপনি এখানে কেন এসেছিলেন?
আপনার ফোন দিন আমাকে।
আরহান পকেটে থেকে ফোন বের করে আয়েশাকে দিলো।আয়েশা ফোন নিয়ে দেখে লক করা।
আয়েশা আরহানের দিকে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
—–পাসওয়ার্ড দিন।
আরহান ফোন না নিয়েই বললো,
—–পাসওয়ার্ড আয়েশা নুর।
আয়েশা আরহানের দিকে বিস্ময় নিয়ে চেয়ে আছে।
আরহান সেটা দেখে বললো,
—–লক খোলো।
আয়েশা আরহানের ফোনের লক খোলে আরেক ঝাটকা খেলো।ফোন স্কিনের ওয়ালপেপারে ওর পিক।
আয়েশা সেটা নিয়ে কথা না বাড়িয়ে ফোন করার চেষ্টা করছে কিন্তু নেটওয়ার্ক নেই।
আয়েশা আরহানের দিকে অসহায় ফেস করে বললো,
—–নেটওয়ার্ক নেই।
আরহানের খুব কষ্ট হচ্ছে।জোরে শ্বাস নিয়ে টেনে টেনে বললো,
——কি আর করার।
আয়েশা বললো,
—–আপনি এখানে থাকুন আমি অন্যদিকে গিয়ে দেখি নেটওয়ার্ক পাওয়া যায় কিনা।
—–নো আয়েশা তুমি কোথাও যাবেনা। প্লিজ যেওনা।এখানে কেউ নেই।কোথায় কি আছে কে জানে।প্লিজ আমার কাছে থাকো।
আয়েশা আরহানের হাত ধরে আস্বস্ত করলো,
—–আই প্রমিস টু ইউ আমি ফিরে আসবো।আপনাকে ফেলে আমি কোথাও যাবোনা।
—–আয়েশা তুমি ভয় পাবে।সন্ধ্যা হয়ে গেছে কিছুক্ষণ পর গাঢ় অন্ধকার নামবে।
—–কিচ্ছ হবেনা আমি আসছি।
আয়েশা ইফাতের দিকে একবার তাকালো।তারপর উঠে জোরে দৌড়াতে লাগলো।
একদম মেইনরোডে উঠে গেছে।সেখানে গিয়ে গাড়িটা দেখতে পেলো।আয়েশা নেট পাওয়ার চেষ্টা করছে কিন্তু নেট পাচ্ছেনা।গাড়ি থেকে পানির বোতল আর ওর ব্যাগ নিলো।তারপর আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে।অনেক ক্ষন এভাবেই দাড়িয়ে রইলো।
ওদিকে আরহান অস্থির হয়ে পড়ছে আয়েশার জন্য।হাটুতে ভর দিয়ে উঠে দাড়ালো।বুকে হাত দিয়ে খুড়িয়ে হাটছে।
আয়েশা দুটো বাচ্চা ছেলেকে দেখতে পেলো।একজনের মাথায় বস্তা।খুশিতে আয়েশার চোখ মুখ চকচক করছে।
আয়েশা ওদের ডেকে হেল্প চাইলো।ওরা আয়েশার সাথে আরহানের কাছে যাচ্ছে।কিছুদূর গিয়ে আরহানকে আসতে দেখলো।আয়েশা দৌড়ে আরহানের কাছে গেলো।
—–আপনাকে কে একা একা আসতে বলেছে।
—–তোমার জন্য টেনশন হচ্ছিলো।
—–আর টেনশন করতে হবেনা।
আয়েশা বাচ্চা দুটোকে দেখালো।
আয়েশা আরহানকে পানি খাইয়ে আরহানকে ওদের সাহায্য নিয়ে ওদের বাড়িতে গেল।
জংগলের শেষ দিকে ওদের বাড়ি।সেখানে আশেপাশে কিছুটা দূরত্বে কয়েকটি বাড়ি।
মাটির ভিটের টিনের ঘর।বাচ্চা দুটোর বাবা-মা আয়েশা আর আরহানকে এভাবে দেখে ছুটে আসে।
——আপনেরা কারা?হের কি হইছে?
আয়েশা আমতা আমতা করে বললো,
—–আমরা শহর থেকে এসেছি।পথে ডাকাত পড়েছিলো।ওরা এসব করেছে।আমাদের একটু সাহায্য করুন প্লিজ।
—–হেতে আপনের কি হয়?
আয়েশা বুঝতে পারছেনা কি বলবে।কিন্তু পাকাপোক্ত সম্পর্ক না বললে যদি না আশ্রয় দেয়।
তাই বললো,
—–আমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ।
—-বুঝলাম না আফা।
—–মানে আমি স্বামী স্ত্রী।
—–ওহ আহেন ঘরে আহেন।
ওদেরকে ঘরে নিয়ে গেলো।আয়েশা আরহানকে শুইয়ে দিলো।কিছুক্ষণ পর মহিলা এসে পানি,কাপড় আর লতাপাতা দিয়ে বানানো ওষুধ দিয়ে গেলো।আয়েশা আরহানের শরীর থেকে ওড়না খোলে নিলো।মাথা পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে কাপড় বেধে দিলো।এখন সমস্যায় পড়েছে শার্ট খোলা নিয়ে।
আয়েশা আরহানের শার্টের দিকে হাত বাড়িয়ে আবার সরিয়ে নিচ্ছে।
আরহান সেটা দেখে বললো,
—–আয়শু আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।
আয়েশা আরহানের কষ্টের কথা শুনে তাড়াতাড়ি শার্টের বোতাম খোলে নিলো।তারপর কেমন কাচুমাচু করতে এদিক সেদিক দৃষ্টি ঘুরিয়ে ফিরিয়ে কাটা স্থান পরিস্কার করে নিলো।আয়েশা এমনিতে কাটা ছেড়া ভয় পেলেও আজ পাচ্ছেনা।কেন পাচ্ছেনা ও নিজেও জানেনা।
আয়েশা ভালো করে পরিস্কার করে ওষুধ লাগিয়ে কাপড় বেধে দিলো।
আরহান বলছে,
—–কেন করছো এসব?
আয়েশা আরহানের কথা শুনে আরহানের দিকে তাকালো।আর ভাবছে ঠিকই তো কেন করছে,,ইফাতকে ফেলে চলে এলো।আরহানকে তো ওর অপছন্দ।ভয় পায় ওকে,ওর থেকে পালাতে চায় তবে আজ কেন নিজ থেকেই ধরা দিলো।চাইকে ইফাতের সাথে চলে যেতে পারতো।
আয়েশা বললো,
—–মানবতা।
আরহান বললো,
—–শুধুই মানবতা?ইফাতকে ফেলে চলে এলে ওই জংগলে।
আয়েশা রেগে বললো,
—–জাহান্নামে যাক ইফাত।
আরহান আয়েশাকে রাগানোর জন্য বললো,
—–ওভাবে বলে না ও তোমার হবু স্বামী।
আয়েশা রাগে গজগজ করছে।
—–দেখুন আরেকবার যদি ফাজলামো করেন তবে ভালো হবেনা।
—–আমাকে হুমকি দিচ্ছো?আরহানকে?
আমাকে তুমি দেখছি আজ ভয় পাচ্ছোই না।
——আমি আপনাকে ভয় পাইনা।আপনি নিজেই এখন দূর্বল তাছাড়া ম্যাজিক নেই।।
——হুম কেউ বলেছিলো হাতি কাদায় পড়লে ব্যঙও লাফি মারে।
—–তারমানে আপনি হাতি।
—–আর তুমি ব্যঙ।
—–হুহ(গাল ফুলিয়ে)
তখনই দরজায় নক পড়লো।আয়েশা উঠে গিয়ে একটা প্লেট নিয়ে এলো।তাতে কিছু শুকনো রুটি আর ভাজি।
আয়েশা আরহানের সামনে প্লেট রাখতেই আরহান অবাক চোখে খাবারের দিকে চেয়ে আছে।আয়েশা সেটা বুঝতে পেরে বললো,
—–কষ্ট করে খেয়ে নিন।বুঝতেই তো পারছেন দরিদ্র মানুষ।এদিকে নেটওয়ার্ক নেই,রাস্তাঘাট ভালো না।
আরহান মুচকি হেসে বললো,
—–যদি তুমি খাইয়ে দেও তবে খাবো।
আয়েশা আরহানকে খাওয়াতে লাগলো।
সকালে ঘুম ভেঙে আরহান দেখে আয়েশা গুটিশুটি হয়ে ওর গা ঘেঁষে ঘুমিয়ে আছে।আরহানের মনে হচ্ছে আয়েশা ওর বিয়ে করা বউ।অদ্ভুত ফিলিংস হচ্ছে।আরহান আবারো চোখ বন্ধ করে নিলো।
ওরা কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ওদের থেকে বিদায় নিয়ে সকালে বেরিয়ে গেলো।যাওয়ার সময় বাচ্চাটার হাতে কিছু টাকা দিয়ে এসেছে।
আরহান আগের চেয়ে অনেকটা সুস্থ।ওরা দুজন মাটির রাস্তা ধরে হাটছে।আরহান বারবার ম্যাজিক করার চেষ্টা করছে কিন্তু বারবারই ব্যর্থ হচ্ছে।
সেটা দেখে আয়েশা বললো,
—–হচ্ছেনা কেন?সমস্যা কি?
আরহান চিন্তিত ভংগীতে বললো,
—–সেটা তো আমিও বুঝতে পারছিনা।এঞ্জেল আমার ডাক শুনতে পারছেনা।হয়তো গতকালের প্রভাব এখনো কাটেনি।
চলো মেইন রোডের দিকে যাই।যদি কোনো ট্রান্সপোর্ট পাওয়া যায় কিংবা নেটওয়ার্ক।
আয়েশা মাথা নাড়ালো।ওরা মেইনরোডে উঠে দাড়িয়ে আছে।দাড়িয়ে থাকতে থাকতে আয়েশার পা ব্যথা হয়ে গেছে।
আয়েশা একটা গাছের নিচে গিয়ে বসে পড়ে।হাত দিয়ে বাতাস করছে।গরমে ওর অবস্থা অনেক খারাপ।
আরহান তখনও দাড়িয়ে আছে।হুট করে আয়েশার কাছে গিয়ে ওকে টেনে তুলে ভিতরে একটা গাছের আড়ালে চলে গেলো।আয়েশা কিছু বলতে চাইলে ওর মুখ চেপে ধরে।কিছুক্ষণ পর মুখ থেকে হাত সরালে আয়েশা বললো,
—–কি হলো এভাবে মুখ চেপে ধরেছিলেন কেন?একটা গাড়ির আওয়াজ পেলাম।হেল্প নিতে পারতাম।
—–হুম তোমার হবু স্বামী এসেছিলো ৩-৪জন সাথে নিয়ে।
আয়েশা ভয়ে ভয়ে বললো,
—–ইফাত!!
—–হ্যা ওরা আমাদের খোজছে।সাথে আরো ৪জন।এইখানে ওরা আমাদের মেরে গেলেও কেউ সাহায্য করতে আসবেনা।আমার নিজেরই বেহাল অবস্থা,এছাড়া জাদু কাজ করছে না।ওদের সাথে লড়াই করার অবস্থায় নেই।নিজেকে নিয়ে আমার ভয় নেই।যত ভয় তোমাকে নিয়ে।গতকাল তুমি যা করেছো তাতে ও তোমাকে ছেড়ে দিবেনা।
আয়েশা ভাবনায় বিভোর।আরহান চুটকি বাজিয়ে বললো,
—–কি ভয় পাচ্ছো?
—–না ভাবছি।গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাবছি।এই ইফাত গতকাল এখানে কিভাবে এলো?ও কি করে জানলো আমি আপনার সাথে,আপনি আমায় নিয়ে এসেছেন?ও কি করে আমাকে ঠিক সময়ে সেভ করে নিলো? এখান থেকে কি করে গেলো?
আরহানেরও মনে হচ্ছে ঘাপলা আছে কোনো কিন্তু কি?
আরহান আর আয়েশা জঙ্গলের ভেতর গা ঢাকা দিয়ে আছে।আরহান আয়েশার পাশে গিয়ে বসে।
আয়েশা কাদো কাদো ফেস করে বললো,
—–আর কতক্ষণ?বাবা নিশ্চয়ই খুব টেনশন করছে।আমরা কি চুড়ি ডাকাতি করেছি যে এভাবে গা ঢাকা দিয়ে লুকিয়ে আছি।দূরর ভাল্লাগে না।
আরহান হেসে বললো,
—–আমার কিন্তু বেশ লাগছে।
—–আপনার তো লাগবেই।ক্ষুধায় আমার পেট চু চু করছে।খাবার নিয়ে আমাকে কিডন্যাপ করতে পারেননি।
—–আমি কি তোমাকে নিয়ে পিকনিক করতে যাচ্ছিলাম?
—–আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিলেন বলুন তো?
—–শহর থেকে দূরে আমাদের বাংলোতে।
——সেখানে কেন?
——বিয়ে+হানিমুন করতে।(বাকা হেসে)
আয়েশা চোখ বড়বড় করে তাকালো।
সন্ধ্যা নেমে এসেছে।আরহান খুজে খুজে গাড়ি থেকে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে।গাড়িতে গিয়ে বসতেও পারছেনা ইফাতের ভয়ে।আরহানের ব্যথা বাড়ছে।আয়েশা ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে।বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে।আরহান বুঝতে পেরে আয়েশার গা ঘেঁষে বসে।
——ভয় পেওনা আমি আছি।এখানে বন্য জন্তু নেই।
আয়েশা জোরপূর্বক হেসে ঠিক আছে বুঝালো।মোবাইলের লাইট অন করে দিলো।এই অন্ধকারে কি করবে বুঝতে পারছেনা।
আয়েশা গাড়ি থেকে আনা বড় কাপড়টা বিছিয়ে নিলো।
লাড়কি জড়ো করে দুজন মিলে আগুন জ্বালালো।যতক্ষণ জ্বলে।আয়েশা আরহানের গা ঘেঁষে শুয়ে আছে ভয়ে।আরহানের হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
মাঝরাতে কোনো কিছুর শব্দে আয়েশার ঘুম ভেঙে গেছে।চোখ মেলতে পারছেনা ভয়ে।চোখ বন্ধ করে বুঝার চেষ্টা করছে কিসের শব্দ।আরহানের দিকে আরো চেপে যায়।তখন শব্দটা আরো তীব্র হলো।আয়েশা আস্তে আস্তে চোখ মেললো।ব্যাগ হাতরে ফোন বের করে ফ্ল্যাশলাইট অন করলো।
আরহান মুখ দিয়ে শব্দটা করছে।আয়েশা আরহানের গায়ে হাত দিলো।আরহান জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে।আর ঘুমের মধ্যে প্রলাপ বকছে।
এখন আমি কি করবো?পানিও নেই যে জলপট্টি দেবো।উনি তো কাপছেনও।গায়ে কি দেবো।
আয়েশা নিজের ওড়না খোলে ওর গায়ে দিয়ে দিলো।যতটুকু রক্ষা হয়।
আরহান আস্তে আস্তে চোখ মেললো।আয়েশাকে দেখে বললো,
—–আয়শু তোমাকে বিপদে ফেলে দিলাম।আমার জন্য এতো কষ্ট করতে হচ্ছে।তোমার ইফাতের সাথে চলে যাওয়া উচিত ছিলো।কেন শুধু শুধু আমার জন্য ঝামেলা পোহাচ্ছো?আমাকে তো ভালোবাসোনা,,পছন্দ পর্যন্ত করোনা।তাহলে কেন?
আয়েশা আরহানের জবারের উত্তরে আরহানের মুখের দিকে এগিয়ে গেলো।আরহানের কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।আরহান চোখ বন্ধ করে নিলো।আরহানের গালে ঠোঁট ছুইয়ে বললো,
—–এবার নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন কেন আছি আপনার সাথে?
আরহান চোখ মেলে আয়েশার দিকে তাকালো।চোখের ভাষায় বুঝে নিচ্ছে মনের কথা।আরহানের ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটে উঠেছে।আয়েশা আরহানের বুকে সাবধানে শুয়ে জড়িয়ে ধরলো।
—–ভালোবাসি আপনাকে!!
আরহান আয়েশাকে দুহাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
—–আয়শু লাভ ইউ টু।তুমি সব জেনে আমাকে একসেপ্ট করে নিয়েছো সত্যি বলছো?
—–হুম।
—–আমি তোমাকে পৃথিবীর সব সুখ এনে দেবো।কখনো তোমাকে নিরাশ করবোনা।প্রমিস।
সূর্যের আলোয় ঝলমল করছে চারপাশ।আয়েশার মুখের উপর মিষ্টি রোদ পড়েছে।আয়েশার চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটে উঠেছে।আয়েশা চোখ মেলে নিজেকে কুশনের উপর মাথা রাখা অবস্থায় আবিষ্কার করলো।আয়েশা লাফিয়ে উঠে।ওর পাশে আরহান নেই।আরহানকে না দেখে ভয় পেয়ে যায়।
আয়েশা উঠে দাড়িয়ে আরহানকে চারপাশে খোজছে।
কিন্তু আরহান নেই।আয়েশা ভয় পেয়ে গেলো।আরহান আরহান বলে চিতকার করে ডাকছে।
আরহান পেছন থেকে বললো,
—–আয়শু!!
আয়েশা পেছনে ঘুরে আরহানকে দেখে প্রাণ ফিরে পায়।দৌড়ে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে।
—–কোথায় চলে গিয়েছিলেন?আমি কত ভয় পেয়েছি জানেন?
আরহান আয়েশাকে ছেড়ে এঞ্জেলকে দেখালো।
আয়েশা এঞ্জেলকে দেখে আরহানের দিকে অবাক হয়ে তাকালো।আরহান চোখ দিয়ে ইশারা করে হ্যা বললো।
—–শক্তি ফিরে এসেছে।তাই তো তোমার মাথায় কুশন।
আমি এঞ্জেলকে নিয়ে আশেপাশে দেখতে গিয়েছিলাম।তার আগে তোমার সুরক্ষার ব্যবস্থা করে গিয়েছি।
এই দেখো আমি ঠিক আছি।সম্পুর্ন সুস্থ।
আয়েশা আরহানের দিকে চেয়ে দেখে ওকে পুরো ফিট লাগছে।ওর গায়ের পোশাকও চেঞ্জ।ওকে ফ্রেশ দেখাচ্ছে।
আয়েশা বললো,
—–বাহ!! শক্তি পেতে না পেতে সাজগোজ করে নিয়েছেন?
—–কেন তোমার হিংসা হচ্ছে?তোমার জন্যই ব্যবস্থা আছে।
আরহান একটা ব্লু কালার থ্রি-পিস আয়েশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো চেঞ্জ করে নিতে।
আয়েশা চোখ বড়বড় করে বললো,
—–আমি এই খোলা আকাশের নিচে চেঞ্জ করবো?লাইক সিরিয়াসলি?
আরহান বললো,ওহ শিট!ওয়েট।
আরহান ম্যাজিক করে বড়বড় পর্দা টানিয়ে দিলো।
—–যাও চেঞ্জ করে এসো।আমি এখানে আছি।
—–এখানেই থাকবেন কিন্তু।
আরহান মুচকি হাসলো।
আয়েশা তাড়াতাড়ি চেঞ্জ করে আসলো।এক জামাকাপড় পড়ে দুদিন নোংরা অবস্থায় ছিলো।আজ ফ্রেশ লাগছে।আয়েশা বেরিয়ে দেখে আরহান এঞ্জেলের সাথে কথা বলছে।আরহান আয়েশাকে এক পলক দেখে ধীরে ধীরে ওর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।আয়েশা বুঝতে পারছেনা আরহান কেন এভাবে ওর দিকে আসছে।আরহান আয়েশার পেছনে গিয়ে দাড়ালো।ওর উষ্ণ নিশ্বাস আয়েশার ঘাড়ে গিয়ে পড়ছে।আয়েশা চোখ বন্ধ করতেই আরহান আয়েশার চুলগুলো পেছনের দিকে নিলো।আয়েশা অনুভব করতে পারলো ওর চুলে চিড়নি চলছে।
আরহান ওর চুল আচড়ে দিচ্ছে।আয়েশা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলো।আরহান ওর চুলগুলো আচড়ে বেধে দিয়ে ওর ঘাড়ে একটা চুমু খেলো।আয়েশা আবেশে কেপে উঠলো।
তারপর আমতা আমতা করে বললো,
—–আমরা কিভাবে যাবো?
আরহান আয়েশার কাছে থেকে সরে এঞ্জেলের কাছে গিয়ে চুটকি বাজালো।এঞ্জেল একটা গাড়িতে পরিণত হলো।আয়েশা সেটা দেখে বললো,
—–ওয়াও! ম্যাজিক থাকার কত সুবিধা।আমারো যদি এমন ম্যাজিক থাকতো!!
আরহান বললো,
—–উহু,,যেমন আছো তেমনই ভালো।এসব অনেক ঝামেলা।দেখোনি গতকাল কত দূর্বল ছিলাম।
ওরা গাড়িতে উঠে বসে।আরহান গাড়ি স্টার্ট দিলো।আয়েশা কথা বলতে বলতে ঘুমিয়ে পড়েছে।গাড়ি এসে আয়েশার বাড়ির সামনে থেমেছে।আরহানের ইচ্ছে করছে না আয়েশাকে জাগাতে।মেয়েটা আরহানের কাধে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।আরহান আয়েশার গালে হাত রেখে আস্তে আস্তে আয়শু বলে ডাকছে।
আয়েশা চোখ মেলে দেখে ওর বাড়িতে এসে গেছে।
আয়েশা আরহানের দিকে তাকালো।আয়েশার খুব কষ্ট হচ্ছে আরহানকে ছেড়ে যেতে।
আরহান বললো,
—–আমি আবার আসবো।তোমার বাবা চিন্তা করছে।বাসায় গিয়ে ফোন দেবো।এখন যাও মাই লাভ।
আরহান আয়েশার কপালে ঠোঁট ছুইয়ে দিলো।আয়েশা গাড়ি থেকে নেমে বাড়ির ভিতরে চলে গেলো।
আরহান নিজের বাড়িতে প্রবেশ করতেই ওর মম,পাপা,দাদি এগিয়ে এলো।সবাই ওকে দেখেই অস্থির হয়ে পড়লো।আরহানের মম কান্নাকাটি শুরু করে দিয়েছে।
—–মম আমি ঠিক আছি।সবাই রিলেক্স হও।আমি পরে সব খোলে বলবো।
আরহানের মম বললো,
—–তুই জানিস কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।দুইটা দিন গায়েব।ফোন বন্ধ।কোনো খোজ খবর পাচ্ছিলাম না।
—–মম নেটওয়ার্ক বিহীন জায়গায় ফেসে গিয়েছিলাম।সরি সরি।
তখন আরহান হজুর মতো একজন লোক দেখতে পেলো।বড়বড় দাড়ি,সাদা পোশাক।
লোকটি এগিয়ে এসে বললো,
—–তুমি বড় একটা বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছো।সামনে তোমার আরো বিপদ।তাই সাবধানে থাকবে।প্রতিটি পদক্ষেপ জেনে বুঝে নিবে।কারণ তুমি নিজেকে নিজেই বিপদ থেকে রক্ষা করার সামর্থ্য রাখো।ভুলে যেওনা তোমার অস্তিত্বে আরেক অস্তিত্বের বসবাস।মানুষরুপি জ্বিন তুমি।
তারপর তিনি আরহানের হাতে একটা তাবিজ বেধে দিলো।
—–এটা সাথে রাখবে।
—–জ্বি।
অপরদিকে আয়েশা ওর বাবাকে ইফাতের ব্যাপারে সব বলেছে।ওর বাবা সেটা শুনে প্রচন্ড রেগে গেছে।আয়েশা আরহানের ব্যাপারেও কথা বলেছে।ওর বাবা আরহানকেও মেনে নিয়েছে।আয়েশা বলে নি আরহান জ্বিন।
আরহান আয়েশার কাছে সবটা জেনে বাড়িতে সব জানানোর কথা ভাবলো।
আরহান ওর দাদির কাছে গিয়ে বললো,
—–দাদি তোমার সতিন ঠিক করে ফেলেছি।
—–তাই নাকি কই কই?
আরহান ফোন বের করতে করতে বললো,
—–দেখাচ্ছি।
তারপর আয়েশার একটা ছবি বের করে দেখালেন।
দাদি দেখে বললো,
—– মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।কি নাম আমার সতিনের।
—–আয়েশা নূর।
—–বাহ!!
কই গো আরহানের মা এদিকে এসো দেখে যাও তোমার ছেলের বউকে।
—–দাদি!!
—–চুপ কর।
আরহানের মা ছুটে এলো।
—–কি হলো মা?কিসের বউ?
—–তোমার ছেলের বউ।এই দেখো।
ফোন এগিয়ে দিলো।
আরহানের মা দেখে বললো,
—-বাহ,,নাম কি মেয়েটির?
—–আয়েশা নূর।
আরহানের মম আরহানকে বললো,
—–শুধুই পছন্দ না ওকে বলেছিস।
আরহান মাথা চুলকে বললো,
—–ইয়ে মানে আমরা রিলেশনশিপে আছি।
—–আরে বাহ!! এতোকিছু?তাহলে তো কথাই নেই।যত তাড়াতাড়ি ওকে বউ করে নিয়ে আয়।
ও কি জানে?
আরহানের মম শেষের কথাটা গম্ভীর ভাবে বললো।
—–হ্যা মম ও জানে।আমি ওকে সবটা জানিয়েছি।প্রথমে ভয় পেয়ে গিয়েছিলো।কিন্তু পরে আমাকে একসেপ্ট করে নিয়েছে।মম আমি ওকে অনেক ভালোবাসি।
আরহানের মায়ের মুখে হাসি ফুটলো।ছেলের খুশিতেই উনি খুশি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ে দিয়ে দিতে চান।যদি কোনো ঝামেলা হয় বিয়েতে সেটা ভেবেই ভয় পাচ্ছেন।
চলবে….
(ভুল ত্রুটিগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।বাস্তবতা কিংবা লজিক দিয়ে যাচাই করবেন না।গল্পটা সম্পূর্ণ কাল্পনিক।)