Shadow_in_love Part-10

0
1931

#Shadow_in_love

Part-10

#ফাবিহা_নওশীন

আরহানের মম আরহানকে আর আয়েশাকে ডেকে পাঠিয়েছে সকাল সকাল।
ওরা কেউ বুঝতে পারছেনা কেন এভাবে ডেকে পাঠিয়েছে।আরহান আর আয়েশা দুজনেই ড্রয়িংরুমে এসে দেখে মধ্যবয়সী একটা লোক বসে আছে।আর সেখানে আরহানের দুজন ফ্রেন্ড বসে আছে।আর ওর পুরো ফ্যামিলি।
আরহান আর আয়েশা একে অপরের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে।ওরা একে অপরকে ইশারায় বুঝাচ্ছে ওরা কেউ কিছু জানেনা।

আরহান ওর মমের কাছে গিয়ে বললো,
—–মম কি হয়েছে?কোনো সমস্যা?

আরহানের মম আরহানের কথার উত্তর না দিয়ে আয়েশাকে বললো,
—–আয়েশা মা মাথায় ঘোমটা দিয়ে এখানে এসে বসো।আর আরহান এখানে এসে বস।

আরহান আর আয়েশা দুজনেই দুপাশে বসতে গেলে আরহানের মম বাধা দিলো।
—–দুজনে পাশাপাশি বসো।

আরহান আর আয়েশা পাশাপাশি বসলো।ওরা দুজনেই জিজ্ঞাসুক দৃষ্টি নিয়ে আরহানের মমের দিকে চেয়ে আছে।
আরহানের মম ওদেরকে বললো,
—–ওনি কাজি আর ওরা সাক্ষী।আজ এক্ষুনি তোমাদের বিয়ে হবে।

এই কথা শুনে আয়েশার চোখ বড়বড় হয়ে গেলো।আরহান অবাক হয়ে বললো,
—–বিয়ে!!কি বলছো মম?

—–হ্যা আমি কোনো রিক্স নিতে চাইনা।আমার মনে হচ্ছে শবনম কোনো না কোনো একটা সমস্যা করবেই।তাই এখুনি তোমাদের বিয়ে হবে।অনুষ্ঠানের কথা পরে ভাবা যাবে।

—–তাই বলে এভাবে হুট করে?

আরহানের মা আয়েশার দিকে তাকিয়ে বললো,
—–আয়েশা তোমার বাবা আর আমরা সবাই রাজি।তোমার কোনো আপত্তি আছে এই বিয়েতে?

আয়েশা থমকে গেলো।এতগুলো মানুষের সামনে কি করে বলবে ও বিয়েতে রাজি।আয়েশা ওর বাবার দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে ওর বাবা কি বলে।ওর বাবা ইশারায় হ্যা জানালো।আয়েশা আরহানের দিকে চোখ দিলো।আর তখনই আরহানের মম বললো,
—–কি আয়েশা তুমি বিয়েরে রাজি তো?

আয়েশা আরহানের মমের দিকে চেয়ে মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো।উনি মুচকি হেসে আরহানকে বললো,
——আয়েশা রাজি এখন তুই রাজি না হলে আমি অন্য কারো সাথে আয়েশার বিয়ে দিয়ে দিবো।

আরহান দ্রুত বললো,
—–আমি রাজি।

সবাই হেসে দিলো।আয়েশা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো।তারপর দুজন রেজিস্ট্রি আর ধর্মমতে বিয়ে করে নিলো।কোনো বাধা রইলো না ওদের মাঝে।

~এক সপ্তাহ পর~
আজ ওদের বিয়ের রিসিপশনের অনুষ্ঠান করা হচ্ছে।আত্মীয় স্বজন,বন্ধুবান্ধব সবাইকে আমন্ত্রণ করা হয়েছে।এর মাঝে কোনো সমস্যা হয়নি আর না শবনম এসেছিলো।
আরহান আর আয়েশার ফটোসেশান করা হচ্ছে।আরহান ব্ল্যাক স্যুট,বুড পড়েছে।ড্যাশিং লাগছে।আয়েশা সাদা-সোনালী মিক্স লেহেঙ্গা পড়েছে।তাতে ছোট ছোট স্টোন বসানো।রাতের বেলায় আলোতে জ্বলজ্বল করছে।ব্রাইডাল লুকে বেশ লাগছে।আরহান বারবার আড়চোখে আয়েশাকে দেখছে।
ফটোগ্রাফার সেটা অনেকক্ষণ যাবত লক্ষ্য করেছে।ফটোগ্রাফার মুচকি হেসে বললো,
—–ভাই ভাবিকে দেখার জন্য অনেক সময় পড়ে আছে।পুরো রাত আছে। আপাতত ক্যামেরার দিকে তাকান প্লিজ।

আয়েশা অবাক হয়ে আরহানের দিকে তাকালো।আরহান মুচকি হেসে সামনের দিকে তাকালো।আয়েশা সামনে তাকাতেই লজ্জা পেয়ে গেলো।এভাবে লজ্জা দিতে পারলো।

আয়েশার বাবা নিজেদের বাড়িতে চলে গেছে।
আয়েশা আরহানের ফুলে ফুলে সাজানো বিছানায় বসে আছে।এক সপ্তাহ যাবত বিয়ে হয়েছে কিন্তু এতটা অদ্ভুৎ অনুভূতি হয়নি।কিন্তু আজ ওর বুক ঢিপঢিপ করছে।ক্রমশ ঘেমে যাচ্ছে।

তখন হটাৎ করে রুমের লাইট অফ হয়ে গেলো।বিদঘুটে অন্ধকার পুরো রুমে বিচরণ করছে।আয়েশা ভয় পেয়ে গেলো।এই অন্ধকার যেনো ওকে গ্রাস করে নিচ্ছে।
আয়েশা ঢুক গিলে একটু সরে গিয়ে বেডসাইড টেবিলে হাত বাড়ালো ফোনের জন্য।তখনই রুম আলোয় আলোকিত হয়ে উঠলো।তবে লাইটের না জোনাকির স্রোত বয়ে যাচ্ছে পুরো রুমে।জোনাকিরা দল বেধে উড়ে বেড়াচ্ছে।

আয়েশার অজান্তেই ওর ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো।
আয়েশা আধো আলোয় একটা ছায়া দেখতে পেলো।সে আর কেউ নয় আরহান।অদ্ভুত মুগ্ধতা নিয়ে আয়েশাকে দেখছে সাথে ঠোঁটের কোনে হাসি।
হাত বাড়িয়ে আয়েশাকে ডাকলো।আয়েশা বেড থেকে নেমে ওর দিকে এগিয়ে গেলো।আয়েশা এগিয়ে যেতেই আরহান আয়েশার পিঠ নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।তারপর জোনাকির দিকে হাতের ইশারা করলো।আয়েশা আরহানের বুকে নিজের ভর ছেড়ে দিয়ে অবাক চোখে দেখছে।
জোনাকিরা আরহান লাভ আয়শু সেফ তৈরি করেছে।
আয়েশার চোখে মুখে বিস্ময়।আয়েশা আরহানের দিকে ঘুরে মুগ্ধ করা হাসি দিলো।

আরহান আয়েশার মাথায় হাত দিয়ে মাথা থেকে ওড়না ফেলে দিলো।আয়েশার গালে হাত রেখে কপালে ঠোঁট ছোয়ালো।আয়েশা আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলো।
হটাৎ করে আরহান ছিটকে সরে গেলো।আয়েশা সেটা অনুভব করতে পেরে চোখ মেললো।
আরহান কাপছে।ওর শরীর ঘামছে,চোখ গুলো অসম্ভব লাল হয়ে আসছে।কেমন অস্থির লাগছে।আয়েশা হাত বাড়িয়ে ছুতে গেলেই আরহান দূরে সরে যায়।
তারপর অনেক কষ্টে নিশ্বাস টেনে বললো,
—–আয়শু এখান থেকে চলে যাও।তাড়াতাড়ি যাও।

আয়েশা অস্থির হয়ে বললো,
—–না আমি যাবোনা।আপনাকে এই অবস্থায় রেখে আমি কি করে যাই।

আরহান মিনতি করে বললো,
—–প্লিজ চলে যাও নয়তো অজান্তেই তোমার ক্ষতি করে ফেলবো।আমার কিছু হবেনা।তুমি যাও প্লিজ।

আরহানের অবস্থা খারাপ হচ্ছে।আয়েশা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো,
—–আমি যাবোনা।

আরহান ধমকে বলে,
—–যেতে বলেছি যাও।এসব হচ্ছে যাতে তোমার ক্ষতি করি তাই।তোমার কিছু হলে আমি বেচেও মরে যাবো প্লিজ চলে যাও।অন্য রুমে গিয়ে থাকো।যাওয়ার সময় দরজা লক করে যাবে।তাড়াতাড়ি যাও।

আয়েশা যেতে চাইছে না কিন্তু আরহানের কথার অমান্য করতে পারছেনা।

—–আয়শু শোনো আরেকটা কথা বাড়ির কাউকে এ বিষয়ে কিছু বলার দরকার নেই।যাই হয়ে যাক সকালের আগে এখানে আসবেনা।

আয়েশা মাথা নাড়িয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।দরজার সামনে গিয়ে আরহানের দিকে একবার চেয়ে চোখের পানি মুছে দরজা লক করে দিলো।

আয়েশা পা টিপে টিপে গেস্ট রুমে গেলো।ওর চোখের পানি বাধ মানছেনা।আরহানের জন্য ওর চিন্তা হচ্ছে।ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।

আয়েশা কাদতে কাদতে ফ্লোরে ঘুমিয়ে পরলো।হটাৎ ঘুম ভাংতেই ও লাফিয়ে উঠে।দেয়াল ঘড়িতে দেখে ৫.৩০বাজে।আয়েশা ছুটে আরহানের রুমের কাছে গেলো।তারপর তাড়াতাড়ি লক খোলে ভিতরে যায়।পুরো রুম তছনছ করা।আরহান ফ্লোরে পড়ে আছে।আয়েশা দৌড়ে ওর কাছে গেলো।
ওর মুখ তুলে দেখে হাত আর মুখে রক্ত জমে আছে।।
আয়েশা কান্না শুরু করে দিলো।আরহানকে বারবার ডাকছে কিন্তু আরহান সাড়া দিচ্ছে না।আয়েশা পানি এনে ছিটা দিলো কিন্তু তাতেও ওর জ্ঞান ফিরেছে না।আয়েশা এবার ভয় পেয়ে বাড়ির সবাইকে ডাকলো।

চলবে…..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে