#seeing_with_you
Episode – 3
Writer – Zaira Insaan
মোমো ও রিতু দুজনেই বসে আছে ড.রিদান এর সামনে। মোমো নার্ভাস হয়ে নিচে হাত মুড়ি দিচ্ছে। এদিকে রিতু ও রিদান একে অপরের সাথে গল্প করতে ব্যস্ত এদিকে যে আরেকজন আছে তারা তা খেয়াল করে না। কিছুক্ষণ পর মোমো গলা ঝেড়ে তাদের কে বোঝায় আমি আছি এখানে। রিতু ও রিদান তার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তারপর তারা সোজা হয়ে বসে। রিদান মুচকি হেসে তাকে জিজ্ঞেস করে,,,
– আপনার নাম কি?
– মুনতাহা তাসরিন মোমো।
রিদান মোমো নামটা শুনে ফিক করে হেসে দেয়। মোমো তার হাসি দেখে ব্রু কুঁচকে ফেলে জিজ্ঞেস করে,,
– আপনি হাসছেন কেন?
– মোমো কারোর নাম হয় নাকি?
– সবাই আমাকে মোমো বলে ডাকে। তাছাড়া আমার অনেক নাম আছে।
– তা কি?
– নিলাসা, তিথি, অবনি, নবনি, মাহি, তিন্নি, মায়া, আরোহি, তিসা, আফিয়া, আয়াত আরো অনেক আছে।
বলে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে মোমো সে সব নাম এক নিঃশ্বাসে বলেছিল। রিদান তার বলা নাম শুনে অবাক হয়ে যায় এতো সুন্দর সুন্দর নামে সবাই তাকে ডাকে।
– আচ্ছা,
বলে রিদান তাকে ১ ঘন্টা যাবত বিচিত্র রকমের সব প্রশ্ন করতে থাকে এদিকে মোমো বিরক্ত হলেও তা প্রকাশ করছে না সুন্দর করে উত্তর দিচ্ছে তার যে চাকরি পেতে হবে। তার CV দেখে ও কথাবার্তা শুনে রিদান খুশি হয়ে তাকে নিজের আন্ডারে কাজে নিয়ে নেয়। মোমো রিতু কিছুক্ষণ কথা বলে বাইরে চলে আসে। তাদের চলে যাওয়াতে রিদান নিজেকে বলে উঠে,, আমার তোমাকে খুব পছন্দ হয়েছে মোমো, বলে মুচকি হেসে দেয়। এদিকে মোমো খুশিতে লাফ দিয়ে রিতুর গায়ে উঠে জড়িয়ে ধরে রিতুও তাকে জড়িয়ে ধরে। মোমো খুশিতে বলে,,
– রিতুনিইইই, আমি আজ অনেক খুশি তোর উপর। তুই আমার অনেক বড় কাজ করে দেলি।
– হুমম ট্রিট দিতে হবে তোকে।
– দিব নিই পড়ে।
– আচ্ছা এখন বাসায় চল আটটা বেজে গেছে।
– হু চল…
দুজনের রাস্তা আলাদা হওয়াতে দুজন দুই মোড়ে চলে যায়। মোমো রাস্তায় আনন্দ নিয়ে হাটছে হঠাৎ সে বিরক্ত হয় রাস্তা দেখে তারপর বলে,, কাল রাতে বৃষ্টি পড়ে পুরো রাস্তা পানি জমিয়ে দিয়েছে বিরক্তিকর বৃষ্টি হুহহ। বলে আবার আনন্দ মনে হাঁটতে লাগলো হঠাৎ তার মোবাইল এ কল আসাতে সে এক সাইড দাঁড়িয়ে ফোন রিসিভ করে কথা বলতে লাগল। সামনে এক কালো গাড়ি আসছে ভিতরে ড্রাইভ করা ছেলেটি মোমো লক্ষ্য করে ভালো করে তাকিয়ে দেখে এই সেই মেয়ে যেকিনা রাস্তার সবার সামনে দাঁড়িয়ে ভিখারির মত ৩০০০ টাকা দিয়ে তাকে অপমান করে। মুহূর্তের মধ্যে ছেলেটির রাগ উঠে যায় বিড়বিড় করে বলে,, মেয়েটাকে একটা শিক্ষা তো দিতেই হবে আমাকে যে সবার সামনে অপমান করছে। বলে চিন্তা করতে লাগল হঠাৎ সামনে তার চোখ যায় দেখে রাস্তায় বৃষ্টি পানি জমে আছে গর্ত হয়ে পরক্ষনে এক বাঁকা হাসি দিয়ে হাই স্পিডে গাড়ি মোমো এর সামনে চালিয়ে যায় ফলে জমিয়ে থাকা ময়লা পানি ও কাদা মোমো এর গায়ে ছিটকে পড়ে। মোমো মুখটাকে হা করে ফেলে পাশে তাকিয়ে দেখে এক কালো গাড়ি থেকে ছেলেটি মাথা বের করে তাকে টাটা ইঙ্গিত করছে। মুহূর্তের মধ্যেই মোমো এর মাথা খারাপ হয়ে যায় নিচের থেকে পাথর নিয়ে দৌড়ে ছুড়ে মারবে এমন সময় ছেলেটি তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে চলে যায় মোমো স্লিপ খেয়ে ধোপাস করে কাঁদায় পড়ে যায়। সে মনে মনে ছেলেটা সহ নিজেকে উদ্ধার করছে। অনেক কষ্টে উঠে পা টিপে টিপে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে যায়।
।।
।।
আধাঘণ্টা পর সে বাসার সামনে হাজির হয় বেল দেওয়ার সাথে সাথে ইভান দরজা খুলল খুলার সাথে সাথে ভূত দেখার মত চমকে যায়। চমকে জিজ্ঞেস করে,
– একি তোর এ অবস্থা কেন? কার সাথে কাবাডি খেলছো?
– চুপ কর আর মাকে ডাক।
রোকেয়া এসে চমকে যায়। তার কাপড়ে ও মুখে কাদা ও ময়লা লেগে সর্বনাশ হয়েছে। সে ধমকের সুরে বলে,,
– এই বাসায় আসবি না। দাঁড়া আমি আসছি।
বলে চলে যায় কিছুক্ষণ পর এক বালতি পানি এনে তার দিকে ছুড়ে মারে। মোমো হা হয়ে তাকিয়ে রইল। রোকেয়া বলে উঠে,,
– এখন আয়।
মোমো ভিতরে ঢুকে কিছুদূর যেতেই আবার স্লিপ খেয়ে ধোপাস করে পড়ে যায় সে রেগে বলে উঠে,, ধুর আজকেই আমার Good & bad luck ফালতু এই ইভান আমাকে উঠতে সাহায্য কর। ইভান তাকে ওঠায় চলে যায়। মোমো রুমে গিয়ে নিজেকে বলে,, আল্লাহ্ ওই খোচ্চর লোকটার সাথে আবার দেখা করাইয়ু না…
চলবে……
#seeing_with_you
Episode – 4 (পুনরায় দেখা)
Writer – Zaira Insaan
সকালে কে যেন ফোন করে ঘুম ভেঙে দেয় মোমোর। বিরক্ত মুখ নিয়ে হাত দিয়ে চারিদিকে ফোন খুঁজতে লাগল পেয়েও গেল চোখ খুলে দেখে রিতু কল করেছে রিসিভ করার সাথে সাথে অপাশ থেকে রিতু চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,, ওই হারামি আজ ভার্সিটি আসবি না? তার চিৎকার শুনে মোমোর ঘুম উধাও হয়ে যায় সে উঠে বসে বলে,, এ কথাটা আসতে বলতে পারতি চিল্লানোর দরকার কি? রিতু ব্যস্ত স্বরে বলে,, ৪দিন হয়ে গেল ভার্সিটি আসোছ না কেন? মোমো দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বলে,, ওহহ তোকে বলতে ভুলে গেলাম কি আমি শুধু পরীক্ষা দেওয়ার সময় আসব। রিতু অবাক হয়ে চেঁচিয়ে বলে,, কিহ, তোকে ছাড়া আমি ক্লাস কিভাবে করবো? মোমো মোবাইলটা কান থেকে সরিয়ে আবার কানে দিয়ে বলল,, গলার আওয়াজ কি বেশি বেড়ে গেছে বলদের মত চিৎকার দিচ্ছোস কেন? রিতু আমতা আমতা করে বলে,, ওহহ সরি সরি তাহলে তুই আসবি না তাহলে আমিও যাব না। মোমো ব্রু কুঁচকে বলে,, কেও না গেলে ক্লাস কে করবে? ‘আমাদের আত্না’ লাপাত্তা ভাবে বলে রিতু। মোমো কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে,, আচ্ছা রিতুনি তোর কাজিন রিদান কি চোখে কম দেখে? রিতু চমকে উঠে বলে,, কই নাতো কেন? মোমো বিরক্ত সুরে বলে,, তো সে আমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে কেন? কিছু বলতে পারি না অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হাসে পাগলের মত। ‘ওহহ’ বলে চুপ হয়ে যায় রিতু কিছু একটা চিন্তা করছে সে। মোমো বলে উঠে,, আচ্ছা রাখি এখন হসপিটাল এ যেতে হবে ভালো থাকিস। ‘হুম’ বলে কেটে দেয় রিতু। মোমো উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে সুন্দর করে সেজে নেয় আজ সে জিন্স প্যান্ট ও ব্লু কালারের লেডিস শার্ট পড়ে এক প্যাচ ওড়না ঝুলিয়ে দেয় চোখে চিকন লাইনার ও ঠোঁটে হাল্কা লিপস্টিক দেয় তারপর নিজেকে আয়নায় খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে আর নিজের সৌন্দর্যের বর্ণনা করছে পরক্ষণে হেসে নাস্তা করে কাজে চলে যায়।
।।।
।।।
৩ ঘন্টা যাবত অনেক রোগীর সেবা যত্ন করে দেখে এক রোগী প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে পড়ছে সে তাড়াতাড়ি ড.রিদান এর কেবিনে যায় দেখে ড.রিদান সামনে এক যুবকের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে মোমো কে কেবিনের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রিদান মুচকি হেসে বলে,, কি হয়েছে? মোমো তড়িৎ গতিতে বলে,, স্যার এক পেশেন্ট এর অবস্থা অত্যন্ত খারাপ হয়ে আসছে স্যার একটু আসেন না। ‘হুম’ বলে রিদান কাগজে কি যেন লিখছে। রিদানের সামনে বসা ছেলেটা ব্রু কুঁচকে পেছনে ফিরে তাকায় এ সময়ও মোমো ছেলেটির দিকে আড়চোখে তাকায় দুজনে এক অপরের দিকে তাকিয়ে চমকে যায় মোমো মনে মনে বলে,, এই খোচ্চর টা এখানে কি করে! রিদান তাকে বলে,, এই তাহলে তুই তোর দাদিমাকে কাল নিয়ে আসবি হসপিটালে এডমিট করিয়ে ট্রিটমেন্ট শুরু করে দিব। সে চিন্তা করতে করতে বলে,, হুম আচ্ছা আমি এখন যায়। বলে উঠে দাড়ালো তারপর মোমোর দিকে ব্রু কুঁচকে তাকিয়ে পাশ কেটে চলে যায় মোমো একবার পিছনে ফিরে তাকায় তারপর রিদানকে জিজ্ঞেস করে,, স্যার উনি কে? রিদান তার দিকে সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকায় তারপর মুচকি হেসে বলে,, ওই হারামি টা আমার ছোট কালের বন্ধু “মুরাক” দুজনেই একসাথে বড় হয়েছি পড়ে ক্যারিয়ার গড়তে আমরা দুজনে আলাদা হয়ে যায় সে তার বাবার বিজনেস টা নিয়ে বিজনেস ম্যান হয়ে যায় আর আমি ডাক্তার ৩ দিন আগে দেখা হয় তার সাথে প্রথমে চিনতে কষ্ট হয় পড়ে চিনতে পারি ওহহ হ্যা কাল সে তার দাদিকে এডমিট করাবে এখানে তার দাদির সেবা যত্ন করার দায়িত্ব তোমাকে দিলাম। মোমো চোখ বড়বড় করে বলে,, স্যার আমি? রিদান মুচকি হেসে বলে,, হ্যা তুমি ৪দিন ধরে তোমার কাজ দেখছি তাই আমার বন্ধুর দাদির সেবা করার কাজ তোমাকে দিলাম।
মোমো বিড়বিড় করে বলতে লাগল,, শান্তি নেই, ওই খোচ্চর টার দাদিকে আমি সেবা..উফফ বিরক্তিকর ওই লোকটারে তো আমার একদম পছন্দ না তার উপর..। তাকে এভাবে বিড়বিড় করতে দেখে রিদান বলে উঠে,, কি বিড়বিড় করছো? মোমো চমকে উঠে বলে,, না স্যার ওই রোগীটা! ‘হ্যা আমি আসছি’ বলে উঠে দাঁড়ায় রিদান ও মোমো চলে যায়।
।।।
।।।
সন্ধ্যা হয়ে নামতেই মোমো বাহিরে চলে আসে বাসার দিকেই যাচ্ছে এক বিরক্ত মুখোভাব নিয়ে হাঁটতে হাঁটতে সবাইকে মনে মনে উদ্ধার করছে,, একতো ড.রিদানকে পছন্দ করিনা আমি, কেমন কেমন চোখে তাকিয়ে থাকে আর দাঁত কেলানি তো আছেই আর ওইদিকে খোচ্চর মুরাক দুজনেই অসহ্যকর দুনিয়ার পাগল মনে হয় আমার সামনেই আসে। হাঁটতে হাঁটতে সে তার কপাল ছুঁয়ে দেখে সে ঘেমে গেছে এ হাল্কা শীতে সে প্রচন্ড ঘামছে সে হাতের উলটো পিঠে ঘাম মুছে যাচ্ছে আর বলছে,,, আজব! এতো ঘামছি কেন আমি এখন একটা আইসক্রিম না খেলে নির্ঘাত গলে যাব। বলে মোমো সামনে আইসক্রিম এর দোকানে যেতে লাগল হঠাৎ এক ছেলে তার সামনে দাঁড়ায় মোমো তাকে দেখে বিরক্তিতে চোখ উল্টে ফেলে কারণ ছেলেটি “আবির” ভার্সিটির সময় তাকে অনেক বার প্রপোজ করেছিলো মোমো পাত্তা দেয় না তারপরেও তার সামনে এসে হাজির হয় ঘরে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছে কিন্তু কোন মেয়ের বাবা তার নিজের মেয়েকে এক বেকার ছেলের হাতে তুলে দেবে। মানা করার পরেও বারবার আসে। হঠাৎ আবির বলে উঠে,, কেমন আছো “মুন”? মোমো রেগে বলে,, আপনাকে কয়বার বলেছি আমার নাম মুনতাহা বারবার মুন মুন বলে ডাকেন কেন? আবির মুচকি হেসে বলে,, হাজার বার বললেও আমি তোমাকে মুন বলে ডাকবো। মোমো রেগে চোয়াল শক্ত করে দোকানে ঢুকে যায় আইসক্রিম কিনে টাকা দিতে যাবে এমন সময় আবির দিয়ে দেয় সেই টাকাটা মোমো সেখান থেকে চলে আসে বাহিরে এসে আবির তার হাত ধরে নেয় মোমো তার দিকে তাকায় আবির বলে উঠে,, আমি এখন এক চাকরি পেয়েছি তোমার খরচ বহন করতে পারবো বিয়ের প্রস্তাব দিলে রাজি হবে তো? মোমো ব্রু কুঁচকে তার দিকে ফিরে বলে,, আবির ভাইয়া দেখেন আমি আপনাকে ভালোবাসি না অনেক বার বলেছি, আপনি চাকরি পেয়েছেন জেনে খুশি হয়েছি আলহামদুলিল্লাহ আপনি আমার থেকে অনেক গুন ভালো মেয়ে পাবেন আপনাকে লাস্ট বলছি প্লিজ ভাইয়া আমার পিছু নেবেন না। বলে মোমো ফিরে হাঁটা শুরু করে বহু দূর চলে যায় আবির তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মন খারাপ করে এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে..
চলবে….