#seeing_with_you
Episode – 31 #আমি_এবং_সে
Writer – Zaira Insaan
রিদান রিতুর মা বাবার সাথে এ বিষয়ে কথা বলতেই সাথে সাথে মানা করে দেয় তারা। নিজের চাচাতো ভাইয়ের সাথে বিয়ে এ ব্যাপারটি গ্ৰহণযোগ্য মনে হচ্ছে না জায়েদ সাহেব থেকে। তার উপর বাকি কাজিনদের নাক ছিটকানি দেখে মন খারাপ হয়ে আসে রিতুর। এ জন্য সে কখনো বলতে চাইনি সে জানতো এতো বাজে ভাবে সবাই রিয়েক্ট করবেই। নিজের উপরই রাগ হচ্ছে এক মুহুর্ত দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না সে। রিদান বুঝতে পারছে রিতুর অস্তিরতা। তাই সে একটু উচ্চ স্বরে বলল,, আমার সাথে বিয়ে দিলে ওকে নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে যাব ওখানেই তার পড়ালেখা শেষ করাবো।” বলতেই রিতুর দিকে তাকায় রিতু ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে আবার চোখ নামিয়ে নেয়। জায়েদ সাহেব চিন্তিত মুখোভাব নিয়ে রিতুর দিকে তাকান। তারপর রিদানকে বলেন,, তোমার ওখানে কি জব লেগেছে?’ রিদান হালকা মাথা নেড়ে বলল,, হ্যা ওখানে এক হসপিটালে জবের ইন্টারভিউ দিয়েছি, তারা আমার সিভি দেখে নিয়ে নিয়েছে এখন শুধু ভিসা করার বাকি, আমি রিতুকে বিয়ে করতে চাই আমার সাথে রাখতে চাই।” জায়েদ সাহেব এবার রিতুকে জিজ্ঞেস করেন,, তুমি কি রিদানের সাথে বিয়ে করতে রাজি আছো?”
হুট করে প্রশ্ন করাতে কিছুটা ঘাবড়ে গেল রিতু। সে তো বিয়েতে রাজি আছে কিন্তু সে বলবে কিভাবে? বেহায়ার মত তো বলতে পারবে না আমি বিয়েতে রাজি আছি আব্বু! জায়েদ সাহেবের দিকে এক পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল রিতু। বাকি সবাই দর্শকের মতো তাদের দিকে আছে। রিতু যে হালকা লজ্জা পাচ্ছে তা বেশ বুঝতে পারলো জায়েদ সাহেব তিনি তার স্ত্রী সানায়া বেগমের দিকে তাকালেন সানায়া মাথা নেড়ে হ্যা জানাতে বলল। জায়েদ সাহেব আবার তাদের দিকে তাকালেন তারপর রিদানকে উদ্দেশ্য করে বলেন,, দুজনের ভিসা রেডি করো এই মাসেই তোমাদের বিয়ে দিব।” রিতু অবাক হয়ে তাকায় রিদানের মুখে চিলতে হাসি ফুটে উঠে। রিদান গিয়ে জায়েদ সাহেব কে জড়িয়ে ধরে কিন্তু রিতু এখনো ঠাই হয়ে আছে তার কোন নড়চড় নেয়। সানায়া বেগম এসে রিতুকে টেনে বাবাকে জড়িয়ে ধরতে বলে। রিতু এবার কোনমতে জায়েদ সাহেবকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে।
__________________________
ছাদে বসে আছে দুজন রিতু ও রিদান। কারোর মুখে কোন কথা নেই। নিস্তব্ধ পরিবেশ। এভাবেই কিছু সময় পেরুতেই রিদান বলে উঠে,, তোর সাথে আমার বিয়ে হবে কখনো কল্পনা করিনি।’ রিতু ও মুচকি হেসে বলে,, আমিও করিনি।” রিদান আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,, আগে বললে কি হতো? এতো দিনে আমাদের অনেক বাচ্চা কাচ্চাও হয়ে যেতো।” কথাটি কর্ণগোচর হতেই চোখ মুখ লজ্জায় লাল হয়ে যায় রিতুর, সাথে সাথে দূরে সরে বসে সে লজ্জায় তাকাচ্ছে ও না। রিদানের হাসি পাচ্ছে তাও হাসলো না তাকে আরো লজ্জা দেওয়ার জন্য তার গা ঘেঁষে বসে। রিতু অন্য দিকে তাকিয়ে আছে লজ্জায় রিদান তার কানের কাছে মুখ এনে এমন কিছু কথা বলল যা শুনার মাত্রই জমিন ভেদ করে ঢুকতে মন চাইছে রিতুর। সে রিদানের দিকে তাকায় রিদান ঠোঁট কামড়ে তাকিয়ে আছে সাথে সাথে চোখ সরিয়ে নেয় সে। বেশিক্ষণ তাকাতে পারবে না সেই চোখে। রিদান ধীরে ধীরে তার হাত স্পর্শ করলো মৃদু কেঁপে উঠে রিতু, রিদান আঙুলে আঙুল ঢুকিয়ে দিয়ে শক্ত করে ধরে নেয় রিতু মুচকি হাসে। রিদান হাত উঠিয়ে হাতের পিঠে গাঢ় চুমু দিয়ে বলল,, এভাবেই সবসময় ধরে রাখব তোমাকে কোথাও যেতে দেব না।” তার মুখে তুমি শুনতেই শরীরে শীতল শিহরণ বয়ে যায় চোখ মুখে খুশির ঝলক দেখা দেয়। দুজনেই একে অপরের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে দৃষ্টি গাঢ় হতেই ঘোর লেগে যায় রিদানের রিতুর কাছে আসতে লাগল। রিতুও হুশে নেয় সেও ঘোরে চলে যায়। দুজনেই একে অপরের বেশ কাছে আসতেই অন্য ছাদ থেকে নিচে সিমেন্ট এর বস্তা পরে জোরে আওয়াজ হতেই তাদের শরীর ঝাকুনি দিয়ে উঠে। তাদের হুশ আসতেই খানিকটা দূরে সরে বসে। রিতু আবারো লজ্জায় রাঙিয়ে যায় রিদান বিরক্তিতে আঙুল দিয়ে কপাল ঘষে। রিতু মনে মনে বলে,, যা হতে যাচ্ছিল তা হয়ে গেলেই ভালো হতো।” ভেবে আরো বেশি লজ্জায় পড়ে যায়। তার লজ্জা মাখা মুখ দেখে রিদান দুষ্টুমি হাসি দিয়ে কাছে চলে আসে। রিতু চোখ বড়বড় করে কিছু বলতেই তার আগেই রিদান তার গালে গভীর ভাবে অধর ছোঁয়ালো।
(চলবে…)
#seeing_with_you
Episode – 32 #জোড়া_পাখি
Writer – Zaira Insaan
বিয়ের আয়োজনে মার্কেটিং করতে আসে বর বধূর পরিবারের সবাই। সবাই সামনে আগে আগে হাঁটছে কিন্তু মুরাকের জন্য মোমো তাদের সাথে সামনে যেতে পারছে না। অনেকক্ষণ যাবত মার্কেটে ঘুরা ঘুরি করাতে অনেক কিছুই কিনে নেয় তারা। ক্লান্ত ভঙ্গিতে দিহান বলল,, কিছু খাবা নাকি ভুকা মেরেই যাবা? তার কথাতে সবাই হেসে দেয়। রিমি বললো,, চলনা কেন্টিনে বসে কিছু খেয়ে নেয় তারপর নাহয় বাকি শপিং গুলো করে নেব? সবাই তার কথায় রাজি হয়। সবাই আগে আগে কেন্টিনে চলে যায় মোমো মুরাক যেতেই পথে রিদানের সাথে দেখা মিলে। রিদান মোবাইল দেখে দেখেই হাঁটছিল তারা একে অপরকে দেখে দাঁড়িয়ে যায়। রিদান মোমোর দিকে তাকাতেই মোমো মুরাকের দিকে তাকিয়ে চলে যাওয়ার ইশারা করে চলে যায় মুরাক হাঁ সূচক মাথা নাড়ে। রিদান ও মুরাক একে অপরের দিকে তাকায় কিন্তু কিছু বলে না। রিদান আগের সব কিছু ভুলে মুচকি হেসে বলে,, কেমন আছিস রে? তোর তো কোন খোঁজখবর নেই।” মুরাক মুচকি হাসার চেষ্টা করে বলল,, ভালো, তুই?
রিদান আবারো হেঁসে বলল,, ভালোই আছি, আরো বেশি ভালো থাকব!’ মুরাক কিছু বুঝলো না তাই জিজ্ঞেস করলো,, মানে?
রিদান ব্রু উঁচু করে নামিয়ে আস্তে করে বলে,, বিয়ে আমার।” মুরাক অবাক হয়ে বললো,, কার সাথে? আর কিভাবে মানে কখন? রিদান হেঁসে বলে,, রিতুর সাথে, আর এই মাসে।” মুরাক একটু চিন্তা করে বলল,, রিতু না তোর চাচাতো বোন? রিদান বলে,, হুমম, ও প্রপোজ করে ছিল তাই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছি এখন এই মাসে বিয়ে ১৫ তারিখ আসিস বিয়েতে মোমো কে নিয়ে।” বলে মুচকি হাসি দেয়। মুরাক এবার মাথা নামিয়ে বলে,, আমারো বিয়ে এই সপ্তাহে ৪ তারিখ।” রিদান কিছুক্ষণ চুপ করে দাঁড়ায় তারপর হেঁসে বলে,, ওহহ~~~ এই জন্যই তো এতো ব্যস্ত কাটছে দিনকাল তোর হুম~~, যাইহোক আমিও আসবো তোর বিয়েতে রিতু কে নিয়ে তুই দাওয়াত দিলেও না দিলেও হা হা হা…।
মুরাক তার ব্যবহার ধরতে পারছে না তাও এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরে বলে,, সরি।” রিদান বুঝেও না বুঝার ভান ধরে বলে,, কেন? মুরাক মিইয়ি কন্ঠে বলে,, সব কিছুর জন্য মাফ করে দে।” রিদান ও আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না চুপ করে রইল। হয়তো সেও সব কিছু ভুলতে না পারলেও মাফ তো করতে পারবে! মুরাক সরে দাঁড়ালো রিদান তার কাঁধে হাত রেখে বলল,, ভালো থাকিস আর বিয়েতে আসিস সবাইকে নিয়ে এখন আমি যায় পরে কথা হবে।”” মুরাক ও মুচকি হাসি দিয়ে মাথা নাড়ে তারপর দুজন দুই মোড়ে চলে যায় মুরাক সামনে ফিরতেই দেখে মোমো দাঁড়িয়ে মুচকি হাসছে মুরাক ও তাকে দেখে মুচকি হাসি দেয়।
_________________________
পশ্চিম আকাশে হেলে পড়া সূর্য এখনো তীব্র রোদ ছড়াচ্ছে। এই গরম রোদে যেন সবকিছুই গলে পড়ছে। বৃষ্টির সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই এই খড়া গরম শুরু হয়ে গেল। ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে হাতে ঠান্ডা পানির বোতল নিয়ে গুমরো মুখে বসে আছে মোমো। পিছনে ভারি লেহেঙ্গা ও গহনা গুলো দেখে মাথা ঘুরতে শুরু করলো তার। বিয়ে করতে যে ইচ্ছাটা ছিল তা এই মরা গরম রোদটি নষ্ট করে দিল। এসব ভাবতে ভাবতে রুমে রিতু ও মাহিরা একসাথে প্রবেশ করলো মোমো কে বেপরোয়া ভাবে বসে থাকতে দেখে তারা এগিয়ে আসে রিতু কাঁধ ধাক্কিয়ে জিজ্ঞেস করলো,, কিরে এমন ভাবে বসে আছিস কেন? জলদি লেহেঙ্গা পড়ে নে।” মোমো চোখ বড়বড় করে বললো,, এতো তাড়াতাড়ি এগুলো পড়ে কি করবো? মাহিরা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে,, মাথা ঠিক আছে? এখন সাড়ে চার টা বাজতে চলছে আর তুমি বলছো এতো তাড়াতাড়ি? তাড়াতাড়ি পড়ে নাও পার্লার থেকে তোমাকে সাজাতে আসবে।” মোমো হাত দিয়ে বারান্দায় ইঙ্গিত করে বললো,, বাহিরে অবস্থা দেখছো? কি রোদ! এই মোটা ভারি লেহেঙ্গা, ভারি গহনা গুলো পড়ে তার পর কি ভারি মার্কা মেকআপ দিয়ে বসে থাকতাম? আমার আর বিয়ের আসরে বসতে হবে না সোজা হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, না না আমি বিয়ের শুরু হওয়ার ১ ঘন্টা আগে সাজবো।” দরজায় দাঁড়িয়ে রুহি বলে উঠলো,, দিদি পারছে না যে গেঞ্জি প্যান্ট পড়েই বিয়েতে বসতে তাই না মুনতাহা দিদি? মোমো এক গাল হাসি দিয়ে বলল,, Correct, Ruhi!
সবাই একে অপরের দিকে বিরক্তিতে তাকায়। মোমো বোতল খুলে পানি খেতে লাগল দরজায় রোকেয়া কাউকে সাথে নিয়ে এসে বলে,, এইতো এই এখানে।’ বলতে বলতে রুমে ঢুকে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,, পার্লার থেকে আসছে এরা, তোমরা সবাই মুনতাহার সাথে থাকো দেখ সুন্দর করে সাজাচ্ছে নাকি, আমি আসি আমার অনেক কাজ আছে!!”” সবাই বাঁকা হেঁসে মোমোর দিকে তাকায় মোমো বিরক্তিতে মুখ মুচরিয়ে নেয়। সব কিছু পেরে উঠতে পারলেও তার মা রোকেয়ার জন্য সব কিছু নষ্ট হয়ে যায়। সবাই মিলে মোমো কে বসিয়ে সাজানো শুরু করে।
_________________________
বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে আসলো। বিয়ের পর্ব শুরু হলো। কাজি সাহেব আসতেই সবাই বধূ কে নিতে ছুটে গেল। মোমোর যেই অস্বস্তিটা ছিল সেটা আর নেই লজ্জা মাখা মুখ হয়ে গেল তার। সবাই তাকে নিয়ে নিচে নেমে এলো কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করলো। মুরাক অপলক দৃষ্টিতে এক নাগাড়ে তাকিয়ে আছে মোমোর দিকে। মোমো তা ভালো বুঝতে পারলো কিন্তু সে উপরে চোখ তুলে তাকাচ্ছে না। তাকালে সে যে আবার লজ্জায় পড়বে। কিছুক্ষণ পরেই কাজি সাহেব তাদের ‘কবুল’ বলতে বললেন। দুজনেই সুন্দর করে কবুল বলে দিলেও আশেপাশে সবাই ওহো~~~ বলে লজ্জা দিচ্ছে। রিদান মুরাকের পাশে স্বাভাবিক ভঙ্গিতেই দাঁড়িয়ে আছে। বিয়ের পর্ব শেষ হতেই আরেক ধাপ লজ্জা পেয়ে বসল মোমোর মুখে যখন সে শুনলো,, এখন তো বাসর রাতের পালা, দুলাভাই তো ছাড়বেন না।” এ কথাটি রুপালিই বলল। মোমো এমন লজ্জা পাচ্ছে তার ইচ্ছা করছে কোথাও দৌড় দেয়। সবাই মিলে তাকে এক রুমে বসালো তারপর তারা হাসতে হাসতে চলে গেল। মোমো দাঁড়িয়ে যায় পুরো রুমে পায়চারি করতে লাগল। খানিক বাদে দরজা বন্ধ করার শব্দ শুনতে পেল সে সাথে সাথে চমকে লাফিয়ে উঠে। মুরাক মুচকি হেসে এগিয়ে আসতেই মোমো এক হাতে লেহেঙ্গা খামচে ধরে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,, আ..আমি ওয়াশরুমে যাবো, স..সরুন।” মুরাক ব্রু কুটি করে। মোমো দ্রুত চলে যেতে নিলে মুরাক তার হাত ধরে বলল,, আমি জানি তুমি বাথরুমে গেলে আর আসার নাম নিবে না তার চেয়ে ভালো নাইয় যাও।” মোমো বড়বড় চোখ করে বলল,, এটা আবার কেমন কথা বাথরুমে না যাও? হাত ছাড়ুন নাহয় কামড় দিব!!
অনেক টা সাহস নিয়ে বলল সে মুরাক অপ্রস্তুত হয়ে হাত ছেড়ে দেয়। কেননা আরেক বার কামড় দেওয়াতে তার হাত ফুলে গিয়েছিল। মোমো সাথে সাথে বাথরুমে ঢুকে গেল।
১৫ মিনিট হয়ে মোমো সত্যিই আসছে না। এইদিকে অপেক্ষা করতে করতে ঘুম পেয়ে যাচ্ছে মুরাকের। সে সাথে সাথে লাইট অফ করে দেয়। পুরো রুম অন্ধকারে ডুব দেয়। মোমো দরজা হালকা ফাঁক করে রুমে উঁকি দেয় পুরো রুম নিস্তব্ধ অন্ধকার। ভালো সুযোগ পেয়ে বাথরুম থেকে বেরিয়ে যায় সে। এক পা এগিয়ে আনতে না আনতেই সাথে সাথে কোলে তুলে নেয় কেউ। মোমো চেঁচিয়ে বলে,, কে? মুরাক রেগে বলে,, তোমার জামাই! আমি ছাড়া তোমাকে কোলে কে নিবে আজব!! মোমো স্বস্তি ফিরে পেল বললো,, ওহ আচ্ছা, নিচে নামান! মুরাক দুষ্টু সুরে বলল,, নিচে নামানোর জন্য তোমাকে কোলে নেয় আমি, ভুলে গেছো আজকে কি রাত? মোমোর সাথে সাথে ভয় ঢুকে গেল কাঁধ ধাক্কিয়ে বলে,, এই না কিছু করবেন না নিচে নামান আমাকে, ভুল ছিল বাথরুম থেকে বেরিয়ে আসার উচিত ছিল না।” মুরাক বাঁকা হেঁসে বলল,, তোমাকে আজকে আমি শিখাবো কি করার উচিত।” বলেই বিছানার দিকে এগিয়ে যেতে লাগল…..।
____________________
🌸🌸🌸
শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে মোমো। গতরাতে কথা ভাবতেই মুচকি হাসি চলে আসে তার। আলমারি খুলতেই তার চোখ যায় এক কালো প্যাকেটের মধ্যে। শপিং এর সময় মুরাক কিনে দিয়েছিল তাকে প্যাকেট টি হাতে নিতেই একটু চিন্তা করে কাপড় বের করে ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। একটু পরেই বেরিয়ে আসে সেই কাপড়টি পড়ে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভালোভাবে দেখতে লাগল। ফর্সা শরীরে এই মিষ্টি রঙের কূর্তি টি তাকে বেশ মানিয়েছে। ফুল দিয়ে ডিজাইন করা পুরো কাপড়টি। চুল গুলো শুকিয়ে হালকা সেজে নিলো সে। তারপর সে মুচকি হেসে বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ায়। রেলিং এ হাত রেখে আশেপাশে চোখ বুলাতে লাগল সে।
আকাশ আজ পুরো স্বচ্ছ। গতরাতে বৃষ্টি পড়ে গরম কে দমিয়ে দিল। সূর্যের আলো মেঘের আড়াল হতে হালকা উঁকি ঝুঁকি দিচ্ছে। নরম রোদ গায়ে ছুঁয়ে দিতেই মুগ্ধ হাসলো সে। রুমে মোমো কে দেখতে না পেয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালো মুরাক। পুরো অবাক হয় সে মোমো কে এ কাপড়ে বেশ সুন্দর লাগছে সে গিয়ে আস্তে করে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। মোমো চমকে উঠে ঘাড় বেঁকে তাকায় তারপর মুচকি হাসে। হুট করেই সে মোমো কে কোলে তুলে নেয় মোমো চমকে উঠে বলে,, কি করছেন নিচে নামান!” মুরাক কিছু বলল না শুধু মুচকি হাসলো। রুমে এসে বিছানার কাছে আসতেই মোমো পা নেড়ে নেড়ে বলল,, যখন তখন না, নিচে নামান প্লিজ।” মুরাক ব্রু কুঁচকে ফেলল তারপর বাঁকা হেঁসে বলল,, আমার বউ যে সবসময় এসব মাইন্ডে থাকে আমার জানা ছিল না।” মোমো না বুঝে বোকার মত বলল,, মানে? আপনিই তো…।” মুরাক তাকে থামিয়ে বলল,, আমি তোমাকে বাগানে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুমি দেখি রোমান্টিক মুডে আছো তাই আর যাচ্ছি না, রোমান্স করবো।” বলে বাঁকা হেঁসে দেয়। মোমো নিজের বোকামি বুঝতে পেরে এদিক ওদিক তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল,, না না আমি ও..ওঠা বলতে চাইনি, চ..চলেন বাগানে যায়।” মুরাক ফিক করে হেসে দিল তার বাচ্চামো মুখ দেখে মোমো ব্রু কুঁচকে তাকাতেই মুরাক আড়চোখে তাকিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বাগানে তাকে কোলের থেকে নামিয়ে বলল,, তোমার ইচ্ছা ছিল যে না আমার বাগানে আসা? মোমো মুগ্ধ চোখে আশেপাশে তাকিয়ে বলে,, হুম, আমারো বাগান করার খুব শখ কিন্তু…। বলে থেমে যায় সে। মুরাক জিজ্ঞেস করে,, কিন্তু কি?” মোমো ফুলগুলো ছুঁয়ে বলে,, কিছু না।” মোমো পুরো বাগান হেঁটে হেঁটে দেখছে আর ফুল গুলো আলতো হাতে ছুঁয়ে দিচ্ছে। মুরাক দূর থেকে এক অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মোমোর পড়া কাপড়টি ফুলগুলোর সাথে মিশে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে সে কাঠগোলাপ গাছের সামনে দাঁড়ায় মুরাক এসে সেখান থেকে এক কাঠগোলাপ ছিঁড়ে মোমোর কানের পিছনে চুলে গুঁজে দেয় মোমো খিলখিল করে হেসে দেয়। মুরাক মুগ্ধ নয়নে তাকায় তারপর তাকে জড়িয়ে ধরে বলে,, এই বাগানটি প্রায় মরেই গিয়েছিল কিন্তু তুমি আসার সাথে সাথে সতেজ হয়ে উঠে।” মোমো লাজুক হাসি দেয়। দুটো পাখি এসে গাছের ডালে বসে এক পাখি অনেক্ষণ ধরে কিচিরমিচির করতে লাগল অন্য পাখি চুপ করে বসে আছে। মুরাক আঙুলে ইশারা করে মোমো কে দেখিয়ে দিয়ে বলল,, তুমি হচ্ছে ওই পাখি টার মতো সারাক্ষণ চেঁ চেঁ করতে থাকো, আর আমি হচ্ছে এই পাখিটার মতো সারক্ষণ তোমার চেঁচামেচি শুনতে থাকি।” মোমো গাল ফুলিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলল,, কি বললেন আমি চেঁচামেচি করি?
মুরাক হেঁসে দেয় মোমো রাগ করে অন্য দিকে ফিরে যায়, মুরাক তার হাত ধরে আলতো করে টেনে গালে দুহাত রেখে আদুরে গলায় বলে,, আহা তুমি রাগ করছো কেন? তোমার চেঁচামেচি আমি শুনবো না তো কে শুনবে? আমার ভালোবাসা আমার হলুদ পাখি!!”
মোমো এবার হেঁসে জড়িয়ে ধরে বলল,, শুনতে না চাইলেও জোর করে শুনাবো বুঝলেন? মুরাক তাকে জড়িয়ে ধরে কপালে ভালোবাসার পরশ বসিয়ে দেয়। মোমো পাখি গুলোর দিকে ইশারা করে বলে,, আমরা হচ্ছি এই জোড়া পাখির মতো, অনেক ভালোবাসি আমি।” মুরাক তার ঠোঁটে চুমু দিয়ে বলে,, আমিও।””
(সমাপ্ত…)