#Revenge_of_love
#Nusrat_Jahan_Bristy
#part_1
আজ নন্দিতা আর রাফির জীবনে বিশেষ একটা রাত। প্রত্যেকটা মেয়েরেই এই রাতটা নিয়ে হাজারটা স্বপ্ন থাকে। নন্দিতারও আছে কিন্তু নন্দিতা জানে এই রাতটা তার জন্য সুখের নয় বরং তার জন্য এই রাতটা অপমানে রাত, কষ্টের রাত। কারন রাফি যে তাকে খুব ঘৃণা করে। এই ঘৃনা জমে আছে পাঁচ বছর ধরে। রাফি তার বাবা মার চাপে পড়েই নন্দিতাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। রাফির মা বাবা আর নন্দিতার বাবা মা কেউ জানে না ওরা দুজনে একে ওপরকে আগে থেকেই চিনে। রাফি রুমে এসে দরজাটা লাগিয়ে দিয়ে নন্দিতার দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে বলে।
“বেড থেকে নাম”
নন্দিতা রাফির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকায়। নন্দিতার চাওনি দেখে রাফি উচ্চস্বরে বলে উঠে।
“কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোকে আমি বেড থেকে নামতে বলেছি কানে কথা ঢুকে না তোর।”
নন্দিতা তাড়াতাড়ি বেড থেকে নেমে ঘরের এক কোণায় এসে দাঁড়ায়। রাফি বেডে এসে বসে কন্ঠে তেজ এনে বলে।
“আমার বেডে তোর মতো মেয়ের কোনো জায়গা নেই বুঝলি। এর পর যেন আমি তোকে আমার বেডে না দেখি বুঝতে পেরেছিস আর তোকে বিয়ে করেছি বলে মনে করিস না তোকে আমি আমার স্ত্রীর অধিকার দিবো সেই অধিকার তুই অনেক আগে হারিয়ে ফেলেছিস।”
নন্দিতা এতোক্ষণ চুপ করে থাকলে আর চুপ থাকতে পারলো না।
অস্পষ্ট স্বরে বলে।
“তাহলে আমাকে বিয়ে করলে কেন?”
নন্দিতার কথাটা বলতে দেরি হলো কিন্তু রাফির বেড থেকে উঠতে দেরি হলো। উঠে দ্রুত কদমে নন্দিতার কাছে এসে তার দু বাহু ধরে দেয়ালের সাথে শক্ত করে চেপে ধরে বলে।
“তোকে বিয়ে করেছি দুইটা কারনে এক বাবা মা জোর
করেছে বলে, দুই তোর থেকে প্রতিশোধ নেওয়া জন্য,তা না হলে তোর মতো থার্ড ক্লাস মেয়েকে এই রাফি তাজওয়ার বিয়ে করবে ভাবলি কি করে।”
নন্দিতা বলে, “শুধু মাত্র প্রতি’শোধ নেওয়ার জন্যই আমাকে তুমি বিয়ে করেছো।”
“হুম প্রতি’শোধ নেওয়ার জন্য,, তুই কি ভেবেছিস তোকে আদর করার জন্য আমি বিয়ে করছি। আজ থেকে তোর লাইফ আমি হেল করে দিবো হেল, আমার লাইফটা যেভাবে পাঁচ বছর আগে হেল করেছিলি ঠিক সেই ভাবে। না ভুল বললাম সেই ভাবে না আরও ভ’য়ংক’র ভাবে তোর লাইফটা আমি হেল করবো বুঝতে পেরেছিস।”
কথাাটা বলেই রাফি নন্দিতাকে ধাক্কা দিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। এভাবে নন্দিতাকে ফ্লোরে ফেলে দেওয়াতে অনেকটা ব্যথা পায়। হাতে কাচের চুড়ি থাকার কারনে অনেকটা জায়গা কেটে যায়। তাই নন্দিতা একটু শব্দ করেই কেঁদে ফেলে। নন্দিতার কান্না দেখে রাফি বলে।
“একদম ন্যাকামো করবি না আমার সামনে হুম, তোর এই ন্যাকামো দেখে আগের রাফি ভুলে যেতো কিন্তু এখনের রাফি এত সহজে ভুলবে না। তাই তোর এই ন্যাকামো আমাকে না দেখিয়ে তোর প্রান প্রিয় আশিককে দেখবি। ও হে,, আচ্ছা তোর ওই আশিকের খবর কি যার জন্য আমাকে ছেড়ে চলে গেছিলি নাকি ওই আশিকেও আর এক আশিকের জন্য ছেড়ে দিয়েছিস। আচ্ছা তোর লাইফে কয়টা আশিক ছিলো বলবি আমাকে একটু।”
“এসব কি বলছো তুমি রাফি আর তুমি আমাকে তুই তুকারি করচ্ছো কেন?”
রাফি এবার তোমার সামনে হাটু ঘেড়ে বসে রেগে তোমার মুখ চেপে ধরে বলে।
“তাহলে তোর সাথে কিভাবে কথা বলবো আমি আপনি করে তোকে বলতে হবে এখন আমাকে। শুন আমার সাথে তোকে এভাবেই থাকতে হবে সারাজীবন। তোর লাইফে সুখ বলতে কিচ্ছু থাকবে না থাকবে শুধু যন্ত্রনা আর অপমান। এখন থেকেই অভ্যাস করে নে। আমি এতো বছর যে যন্ত্রনায় ভুগেছি সেই যন্ত্রণা তোকেও ভুগতে হবে। ভুলেই তো গিয়েছিলাম তোকে তাহলে ফিরে আসলি কেন আবার আমার জীবনে। যখন এসেই পরেছিস তার ফল তোকে তো ভোগতেই হবে।”
রাফি নন্দিতাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে, “শুন আমার বাবা- মার সামনে স্বাভাবিক থাকবি ওনারা যাতে বুঝতে না পারে আমার আর তোর সর্ম্পকটা কেমন? বাইরের জগতে আমার একটা সুখী দম্পতি। কিন্তু ভেতরের জগত শুধু যন্ত্রনা যে যন্ত্রনা তুই ভোগ করবি।”
কথাটা বলে রাফি বেলকনিতে চলে যায়। পকেট থেকে সিগারেট বের করে তাতে আগুন জ্বালিয়ে ঠোঁটের কোণে সিগারেট রেখে নিকোটিনের ধোঁয়াটা আকাশের দিকে ছেড়ে দিছে। রাফি যে ভেতরে ভেতরে পুড়ে যাচ্ছে নন্দিতার কষ্ট দেখে। যে রাফির কষ্ট বেশি হত নন্দিতার কষ্ট দেখে। আজ সেই রাফি নন্দিতাকে নিজ হাতে কষ্ট দিছে, ভ্যাগের কি পরিহাস তাই না। রাফি আধ ঘন্টা পর বেলকনি থেকে রুমে আসে। রুমে এসে দেখে নন্দিতা ফ্লোরে বসে দেয়ালের সাথে মাথাটা হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। নন্দিতাকে এভাবে দেখে রাফির বুকের ভেতরটা ধ্বক করে উঠে। রাফি ধীর পায়ে নন্দিতার কাছে গিয়ে বসে। নন্দিতার চোখের কোণে পানি জমে আছে কান্না করার কারনে। রাফি নন্দিতার চোখের পানি মুছে দেয় নিজের বুড়ো আঙ্গুল দিয়ে আলতো করে। রাফি ঠোঁট দুটো চেপে ধরে মনে মনে বলে।
“পাঁচ বছর আগে যদি তুমি এমনটা না করতে তাহলে হয়তো আমাদের এই বিশেষটা রাতটা এমন হতো না মধুর একটা রাত হতো। কিন্তু তুমি সবটা শেষ করে দিল, সাথে আমার লাইফটাও । কেন করলে এমনটা তুমি কি দোষ ছিলো আমার? আমার ভালোবাসার কি কমতি ছিলো। আমার ভালোবাসাকে তুমি অমর্যাদা করেছো নন্দিতা এর শা’স্তি তো তোমাকে প্রতি পথে পথে পেতে হবে। আমি তোমাকে এর জন্য কোনো দিন ক্ষমা করবো না কোনো দিন না।”
রাফি রাগে উঠে চলে যায় আর বেডে গিয়ে শুয়ে পড়ে। রাফি চলে যাওয়ার সাথে সাথে নন্দিতা চোখ মেলে তাকায়। নন্দিতা এতোক্ষণ জেগে ছিলে। নন্দিতা মনে মনে ভাবে।
“আমি জানি রাফি তুমি এখনও আমাকে ভালোবাসো কিন্তু আমার করা কাজটার জন্য তুমি আমার উপর প্রচন্ড রে’গে আছো, রেগে আছো বললে ভুল হবে প্রচন্ড ঘৃণা করো তুমি আমাকে কিন্তু তখন যে আমি নিরুপায় ছিলাম। এই কাজটা না করলে যে অনেক বড় কিছু হারিয়ে ফেলতাম। কিন্তু যে এই কাজটা করতে আমাকে বাধ্য করেছে সে কোথায় সে তো বলেছো তোমাকে সুখে রাখবে,, তোমাকে আমার থেকেও বেশি ভালোবাসবে কিন্তু সে এখন কোথায়?”
নন্দিতা এসব ভাবতে ভাবতে ভোর রাতে চোখটা লেগে যায়।
সকালে রাফি ঘুম থেকে উঠে দেখে নন্দিতা রুমে নেই। রাফি একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়। কিছু ক্ষন পর রাফি ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে রেডি হতে থাকে অফিসে যাওয়ার জন্য। ঠিক সেই সময় নন্দিতাও রুমে আসে হাতে চায়ের কাপ নিয়ে। রাফি নন্দিতাকে দেখে তো বড়সর একটা ক্রাশ খেয়ে বসে। ক্রাশ খাওয়ার কারনটা হলো নন্দিতার সাজ। নন্দিতা একটা লাল জামদানি শাড়ি পড়েছো মুখে তেমন সাজ নেই বলেই চলে, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক, নাকে নাক ফুল থাকার কারনে নন্দিতার দিকে একটু বেশিই আর্কষণ অনুভব করছে রাফি। চুল গুলা ভেজা থাকার কারনেও নন্দিতাকে আরও বেশি সিন্ধ লাগছে। রাফির এভাবে তাকানো দেখে নন্দিতা হালকা লজ্জা পায়। রাফি নন্দিতার দিক থেকে তাড়াতাড়ি চোখ সরিয়ে নেয়। নন্দিতাও নিজেকে আবার স্বাভাবিক করে নিয়ে বলে।
“তোমার চা রাফি!!”
“এতক্ষনে চা নিয়ে আসার সময় হলো।”
“না আসলে আমি অনেক আগেই চা নিয়ে এসেছিলাম কিন্তু তখন তুমি ওয়াশরুমে ছিলে।”
“খুব ভালো এবার চা টা দিন।”
বিদ্রুপের স্বরে কথাটা বলে রাফি নন্দিতার হাত থেকে চা নিয়ে চুমুক দেওয়ার সাথে সাথে ভ্রু কুচকে নেয়। নন্দিতা তা দেখে বলে।
“কি হয়েছে?”
“এতো ঠান্ডা কেন চা?”
“কিন্তু আমি তো মাত্র….”
নন্দিতাকে আর কিচ্ছু বলতে না দিয়ে রাফি আচমকা নন্দিতার মুখে চা টা ছুড়ে মারে কিন্তু ভাগ্যক্রমে নন্দিতা নিজের ডান হাতটা দিয়ে মুখটা আড়াল করে ফেলে যার কারনে মুখে চা না পড়ে হাত পড়ে যায় চা টা। রাফি তেজ নিয়ে বলে।
“এটা কি চা এনেছিস নাকি শরবত এনেছিস এতো ঠান্ডা কেন? কোনো কাজেই ঠিক মতো করতে পারিস না তুই Useless একটা।”
বলেই রাফি হন হন করে ঘর থেকে বের হয়ে যায় রাগে। নন্দিতার তো বুক ফেটে কান্না আসছে একে তো হাতে গরম চা পড়েছে তার জন্য হাত জ্বলে যাচ্ছে আর এক রাফির কটু কথা। চা টা প্রচন্ড গরম ছিলো কিন্তু তারপরও রাঈি চা টা ঠান্ডা বলে নন্দিতার গায়ে ঢেলে দেয় ইচ্ছে করে নন্দিতাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য সেটা নন্দিতা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে। না চাইতেই চোখ দুটো নোনা জলে ভরে যায়। হঠাৎ করে রাফির মা হেনা বেগম নন্দিতাকে ডাক দেয়। নন্দিতা তাড়াতাড়ি করে চোখ মুছে জোরে একটা শ্বাস ছেড়ে নিচে চলে যায়।
চলবে।