pyar_tho_hona_hi_tha Part-14

0
2157

#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা-পূজা
পর্ব-১৪


পরেরদিন সকালে,
নিলি ঘুম থেকে উঠে দেখে বিছানায় শুয়ে আছে। ও অনেকটা অবাক হলো। কারন ওর স্পষ্ট মনে আছে কাল রাতে গান শুনতে শুনতে ও সোফায় শুয়ে পরেছিলো। আর কোনো মেয়ের এত শক্তি নেই ওকে বিছানায় নেওয়ার। আর জোর করে নিলে ও ঘুম ভেঙ্গে যেতো। কাল ও ডিনারও করতে যায় নি। তাই একা রুমে বসে গান শুনছিলো। কখন ঘুমিয়ে পরেছে বুঝতেই পারে নি। নিলি গালে হাত দিয়ে ভাবছিলো তখনি তৃনার ঘুম ভেঙ্গে যায় আর চোখ কচলে উঠে বসে।

নিলিঃআমি বিছানায় ঘুমালাম কিভাবে?

তৃনাঃমানে?

নিলিঃকাল তো আমি সোফায় শুয়ে পরেছিলাম।

তৃনাঃআমি তো রুমে এসে তকে বিছানায়ই পেলাম।

নিলিঃকিইই? সত্যি।

তৃনাঃহুম।

তৃনা বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো। নিলি ও বিছানা থেকে উঠলো। তার কিছুক্ষণ পর নিশি আর তিন্নি ও উঠে গেলো। নিলি ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হলো। হালকা কোয়াশার মধ্যে হাটতে ভালোই লাগে। এখনো কেউ বাইরে বের হয় নি। নিলি সাইডের বাগান ঘুরে ঘুরে দেখলো।

আস্তে আস্তে সবাই ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে বাইরে বের হলো। আজ একটু কোয়াশা বেশি পরেছে আর ঠান্ডা ও বেশি। সবাই প্লেন করলো আজ সিলেটের কাছেই শ্রীমঙ্গল ঘুরতে যাবে। সেখানে অনেক দর্শনীয় স্থান আছে। সকাল ৮টার আগেই সবাই খাওয়ার জায়গায় চলে এলো। ব্রেকফাস্ট করবে তারপর রেডি হয়ে বেরবে।

নিলয় রেডি হচ্ছে অফিসে যাওয়ার জন্য আর আরশি আড় চোখে দেখছে। নিলয় হ্যান্ডওয়াচ পরতে পরতে বললো,”এভাবে তাকাচ্ছো কেনো? কিছু বলবে?”

আরশিঃনা না কিছু বলবো না। আপনি রেডি হয়ে আসুন আমি নিচে যাচ্ছি।

আরশি বিছানা থেকে উঠে জলদি নিচে চলে গেলো। কেনো জানি নিলয় সামনে থাকলে ওর চোখ বার বার নিলয়ের দিকে চলে যায়। এইভাবে বার বার তাকালে নিলয় ওকে বেহায়া ভাব্বে তাই চলে এসেছে রুম থেকে।

নিলয় রেডি হয়ে নিচে নামলো। আরশি ডিম বেজে টেবিলে রাখছিলো। নিলয় চেয়ারে বসলো।

নিলয়ঃতুমি ও খেয়ে নাও।

আরশিঃআপনি খান। আমি পরে খাবো।

নিলয়ঃচুপচাপ বসো। আমি কোনো কথা শুনতে চাই না।

আরশি বসে পরলো। চুপচাপ খেয়ে নিলো। নিলয় খেয়ে উঠে চলে যায় অফিসে। আরশি ফোন বের করে ওর বেস্টফ্রেন্ড সিথিকে ফোন দেয়। অনেকদিন ধরেই ওর সাথে কোনো কন্টাক নেই ওর। ১বার ফোন দিতেই ফোনটা রিসিভ করলো।

আরশিঃহ্যালো জানু কেমন আছিস?

সিথিঃআরুউউ তুই? কুত্তি বান্দরনি এতোদিন পর তর মনে হলো আমার কথা।

আরশিঃতুই তো জানিস আমি কিসের মধ্যে ছিলাম।

সিথিঃওই শুনেছি তর নাকি বিয়ে হয়ে গেছে? নিরবভাইয়াকে পেয়েছিস।

আরশিঃনা ওর ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হয়েছে।

সিথিঃউয়াট? এসব কি বলছিস তুই। তো ভাইয়া কোথায়?

আরশি সিথিকে সব বললো। সব শুনে সিথি বললো,”ভাইয়ার সাথে খুব খারাপ হয়েছে। উনি এভাবে চলে গেলেন আর আমরা জানতে ও পারলাম না। তুই ঠিক আছিস তো?”

আরশিঃহুম আমি ঠিক আছি। সবাই আমার সুখের জন্য এতকিছু করলো এখন যদি আমি ভালো না থাকি তো সবাই আরো বেশি কষ্ট পাবে।

সিথিঃহুম। যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার জিজুকে নিয়েই হ্যাপি থাক।

আরশিঃচেষ্টা করছি সব মানিয়ে নিতে। তা তুই এখন কোথায়?

সিথিঃশ্বশুরবাড়িতেই।

আরশিঃহানিমুন থেকে চলে এসেছিস?

সিথিঃতুই এটা কি করে জানলি।

আরশিঃসিদ্ধার্থভাইয়া বলেছে।

সিথিঃওহ আচ্ছা। আমি ঢাকা আসলে তর সাথে মিট করবো।

আরশিঃওকে জলদি আসিস।

সিথিঃআচ্ছা। নাউ বাই। পরে ফোন দেবো।

আরশিঃওকে। বাই।

নিলি আর তৃনা পাশাপাশি হাটছে গাড়ি থেকে নেমে। আর এটা ওটা নিয়ে কথা বলছে। হঠাৎ নিলি বললো,”তৃনা তকে একটা কথা বলার ছিলো।”

তৃনাঃবল।

নিলিঃতীব্রকে নিয়ে।

তৃনাঃবাব্বা তীব্র😉

নিলিঃমজা করিস না প্লিজ। সিরিয়াস কথা।

তৃনাঃওকে বল।

নিলিঃউনি আমাকে আজ পর্যন্ত টাইম দিছেন।

তৃনাঃকিসের টাইম?

নিলিঃপ্রপোজাল এক্সেপ্ট করার।

তৃনাঃমানে?

তৃনা তীব্রর বিয়ে ঠিক হওয়া থেকে শুরু করে সব বললো।

তৃনাঃও মাই গড। এত কিছু হয়ে গেলো। আর তুই আমাকে বললি ও না

নিলিঃতকে তো একা পেতামই না। কীভাবে বলতাম? এবার বল কি করবো।

তৃনাঃদেখ, ভাইয়া কিন্তু সত্যিই খুব ভালো। সব দিন কিভাবে খেয়াল রাখে দেকেছিস। আমার মনে হয় তর রাজি হয়ে যাওয়া উচিৎ। আর তুই কিন্তু নিজে ও ভাইয়াকে ভালোবাসিস একটু গভিরে গিয়ে দেখ। না হলে তুই কি কখনো কোনো ছেলেকে তর এত কাছে আসতে দিয়েছিস। আসতে চেষ্টাও করলে তার কি অহস্থা হতো তার সাক্ষী তো আমি। রাহুল রিত্তিক ওরা আমাদের এত ক্লোজ ফ্রেন্ড হয়ে ও কিন্তু কখনো তুই ওদের তকে টাচ্ করতে দিতি না। সেখানে ভাইয়াকে…….

নিলি ভাবছে তৃনার কথা। ও ভুল কিছু বলেনি। তাহলে কি……। তৃনা আবার বললো,”আমার যা মনে হয়েছে তাই বলেছি। এবার তুই ভেবে দেখ। লাইফ তর ডিসিশন তর।”

নিলিঃহুম।

ওরা মাধবপুর লেক দেখতে যাচ্ছে। চা বাগান পাহাড় আরো অনেক কিছুই আছে। ৭রঙ্গের চা। শ্রীমঙ্গলের সব থেকে বিখ্যাত খাবার সাত রঙ্গের চা। ওরা পাহারের উপরে উঠার জন্য হাটছে। পাহাড় বেশি উচু না। নিলি তো ভয়ে উপরে উঠছেই না নিচে দারিয়ে আছে। নিলির ভয় দেখে তৃনার ও ভয় করছে উঠতে যদি সত্যিই পরে যায়। তীব্র আর তানভীর ওদের কাছে এসে বললো,”এভাবে দারিয়ে আছো কেনো তোমরা?”

নিলিঃভাইয়া আমরা যাবো না। আপনারা যান।

তানভীর ভ্রুকুচকে বললো,”কেনো?”

তৃনাঃপরে যদি যাই। হাত পা ভাঙ্গবো। তখন আমাকে কেউ বিয়ে করবে না। আর আমি কুমারি মরতে চাই না।

তানভীরঃউয়াট?

তীব্রঃআরে তোমরা এত ভয় পাচ্ছো কেনো? আমাদের হাত ধরে উঠো। কিছুই হবে না।

নিলিঃযদি হাত ছেড়ে দেন।🤨

তীব্রঃএইটুকু বিশ্বাস নেই?

নিলি কিছু বললো না। তীব্র নিলির হাত শক্ত করে ধরবো।

তানভীরঃম্যাম আপনার হাত ও ধরতে হবে নাকি?

তৃনা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নিলো। তানভীর তৃনার কাছে এসে হাত ধরে হাটা শুরু করলো।

ওরা পাহাড় ঘুরে লেক এর কাছে গেলো চারদিকে শুধু চা বাগান আর পাহাড়ি মেয়েরা চা পাতা তুলছে। চারিদিকে চা বাগানের মধ্যে ও অসাধারন পরিষ্কার পানির লেক। পানির মধ্যে অসংখ্য শাপলাফুল। স্বচ্চ পানিতে যে কেউ স্নান করতে পারবে। যে ছেলেগুলো এক্সট্রা কাপড় এনেছিলো তারা স্নান করে ও নিলো।

সব শেষে গেলো সাত রঙ্গের চা খেতে। চা দেখতে যতটা সুন্দর খেতে ততটা ও ভালো না। লেবু চা ঝাল চা সব ধরনের চা এখানে আছে। লেবু চা টাই খেতে সব থেকে ভালো।

খেয়ে দেয়ে আরো অনেকক্ষণ চারপাশ ঘুরলো তারা। সন্ধ্যার সময় সবাই গিয়ে গাড়িতে উঠলো।

নিলয় সন্ধ্যার পর বাসায় এলো। আরশি তখন ড্রয়িংরুমেই ছিলো। নিলয়কে রুমে যেথে দেখে আরশি কিচেনে গিয়ে ঝটপট এক কাপ কফি বানিয়ে নিয়ে আসলো রুমে। রুমে এসে দেখে নিলয় বসে আছে। আরশি নিলয়কে কফিটা দেয়। নিলয় কফি হাতে নিয়ে একটা খাম আরশির দিকে এগিয়ে দেয়।

আরশিঃকি এটা?

নিলয়ঃআংকেল দিয়েছেন। আই থিংক তোমার ভার্সিটি রিলেটেড কিছু। আমি খুলে দেখিনি।

আরশিঃওহ। আচ্ছা।

নিলয়ঃকাল ভার্সিটি গিয়ে প্রিন্সিপল এর সাথে দেখা করতে বলেছেন।

আরশিঃকেনো?

নিলয়ঃজানি না। আমি পৌছে দেবো তোমাকে। আবার বাসায় ড্রপ করে দিয়েই আমি অফিসে যাবো। জলদি ঘুম থেকে উঠবে।

আরশিঃওকে।

আরশি নিচে চলে গেলো রান্না করার জন্য। ওর নিজের হাতে নিলয়কে রান্না করে খাওয়াতেই এখন ভালো লাগে।

শ্রীমঙ্গল থেকে সিলেট আসতে রাত ৯টা বেজে যায় ওদের। এতক্ষণ নিলি তীব্রর কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে ছিলো। এখানে পৌছতেই নিলির ঘুম ভেঙ্গে যায়। সবাই আস্তে আস্তে গাড়ি থেকে নেমে পরে। বাট তীব্র নামছে না। তীব্র না নামলে তো নিলি ও নামতে পারবে না।

নিলিঃকি হলো নামছেন না কেনো?

তীব্রঃআর একটু থাকো না প্লিজ। কাল থেকে তো তোমার সাথে আর টাইম স্পেন্ড করতে পারবো না।

তীব্রর কথা শুনে নিলি মাথা নিচু করে নিলো। ওর কষ্ট হচ্ছে তীব্রর এসব কথা শুনতে।

তীব্রঃআচ্ছা মন খারাপ করতে হবে না। চলো যাই।

তীব্র বসা থেকে উঠে পরলো। নিলি ও উঠলো। তীব্র গাড়ি থেকে নেমে বাইরে দারালো। নিলি চলে যাবে তখনি পিছন থেকে আবার তীব্র ডাক দিলো।

নিলিঃকি?

তীব্রঃকিছু না। যাও।

নিলি সামনে আস্তে আস্তে হাটছে তীব্র পেছনেই দারিয়ে আছে। হঠাৎ নিলি দারিয়ে গেলো। আর পেছন ঘুরে দৌড়িয়ে তীব্রর কাছে এলো।

নিলিঃআপনি সত্যিই আর কথা বলবেন না আমার সাথে?

তীব্রঃহুম। কি করবো বলো। বাসায় ফিরে মা জোর করে হলেও নেহার সাথে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে। তার আগে তো তোমাকে একটু হলেও ভুলতে হবে নয়ত বিয়ে করতে কষ্ট হবে। আর যার সাথে বিয়ে হবে তাকে কিভাবে ধোকা দেবো অন্য মেয়ের কথা ভেবে?

নিলি এবার কাদতে কাদতে বললো,”আপনার কথা না শুনলে আমার ভালো লাগবে না। আপনাকে না দেখলেও ভালো লাগবে না। আপনি আমার সামনে কিভাবে অন্য একটা মেয়ের কথা বলতে পারেন? সত্যিই ভালোবাসলে কখনোই বলতে পারতেন না।”

তীব্রঃতুমি তো আমাকে ভালোবাসো না। তাহলে কেনো আমি তোমার সাথে দেখা না করলে কথা না বললে এত খারাপ লাগবে তোমার।

নিলিঃআমি কিচ্ছু জানি না। আমি শুধু জানি আপনি আমার পাশে থাকলে আমার খুব ভালো লাগে। মনে হয় আমার আর কিছুর প্রয়োজন নেই। সব আমার সাথেই আছে।

তীব্রঃএর মানে বুঝো?

নিলিঃনা।

তীব্রঃতাহলে আর কখনো বুঝবেও না। যাও রুমে।

এটা বলে তীব্র সামনে এগুবে তখনি নিলি পেছন থেকে তীব্রর হাত ধরে। তীব্র ভ্রুকুচকে নিলির দিকে তাকায়।

নিলিঃআমি জানি আপনি এখন আমার মুখ থেকে কি শুনতে চান। আচ্ছা শুধু এটা বললেই কি প্রমান হয় ভালোবাসি? মন থেকে ফিল করা যায় না।

তীব্র মুচকি হেসে নিলির সামনে দারিয়ে বললো,”আমি মন থেকেই তোমাকে ফিল করি নিলি। আর আমি জানি তুমি ও আমাকে ভালোবাসো। বাট বলতে পারছো না।”

নিলিঃতাহলে আপনি আমাকে ছেড়ে চলে যাচ্চেন কেনো?

তীব্রঃআমি শুধু চেয়েছিলাম তুমিও এটা ফিল করো। নাউ ইউ ফিল ইট। আমি আর কিছুই চাই না। আর কখনো তোমাকে ছেড়ে যাবো না। যদি না তুমি….

নিলিঃসত্যি তো। আর আপনার বিয়ে?

তীব্রঃসেটা আমার উপর ছেড়ে দাও। একবার জরিয়ে ধরতে পারবো?

নিলি কিছু বললো না লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। তীব্র নিলিকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো। নিলির তীব্রর এই স্পর্শ খারাপ লাগছে না। খুব ভালোই লাগছে।

নিলয় আর আরশি ডিনার করে রুমে এলো। নিলয়ের আজ সন্ধ্যা থেকেই কেমন অস্তির অস্তির লাগছে। বুকে অদ্ভুত ধরনের এক ব্যাথা করছে। বিছানার এক সাইডে শুয়ে পরলো নিলয়। আর মাঝখানে কোলবালিশ। আরশির ইচ্ছে করছে কোলবালিশ এই সতিনটাকে এক্ষনি এখান থেকে সরিয়ে ফেলতে। আরশি উকি দিয়ে দেখে নিলয় ঘুমিয়ে আছে কিনা। নিলয়ের চোখ বন্ধ। আরশি ভেবেছে ঘুমিয়ে গেছে। তাই ও বালিশটা আস্তে করে সরিয়ে নিলয়ের একটু পাশে এসে শুয়ে পরলো। নিলয় বুঝতে পেরেছে তবুও কিছু বলে নি। নিলয় কপালে হাত দিয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালে নিলয় ঘুম থেকে উঠে দেখে আরশির একটা পা নিলয়ের পায়ের উপর। অন্যদিন বালিশের উপর থাকতো। নিলয় মুচকি হেসে আলতো করে আরশির পা সরিয়ে দিলো। তারপর বিছানা থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে জগিং করতে বের হলো। প্রায় ১ঘন্টা পর নিলয় ফিরে এলো। এসে দেখে আরশি কিচেনে। ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে। আজ ভার্সিটিতে যেথে হবে। তাই জলদি উঠে গেলো। ব্রেকফাস্ট রেডি করে শাওয়ার নিবে। আরশি সব টেবিলে সাজিয়ে উপরে গেলো নিলয় তখন শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে শুধু টাওয়াল পরে। নিলয় ভেবেছে নিলয়কে এভাবে দেখে হয়ত আরশি কিছু একটা বলবে। বাট কিছুই বললো না। আলমারি থেকে একটা ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো। নিলয় আরশির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। এই মেয়ের বিহেভিয়ার নিলয়ের কাছে এখন অদ্ভুত লাগছে।

নিলয় রেডি হয়ে নিচে গিয়ে খাওয়া শুরু করলো। আরশি আরো কিছুক্ষণ পর রেডি হয়ে সব কাগজ একটা ব্যাগে ভরে নিচে এলো।

নিলয়ঃজলদি খেয়ে নাও।

আরশিঃআপনার লেইট হলে চলুন। আমি এসে না হয় খেয়ে নেবো।

নিলয়ঃচুপচাপ খেতে বসো। আমার লেইট হচ্ছে না। তোমার জন্য এখানে সারাদিন বসে থাকতে পারবো।

আরশি তারাতারি একটু খেয়ে নিলো। তারপর আরশিকে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।

ওরা আজ পান্তুমাই গ্রাম দেখতে যাবে। বিছানাকান্দির পাশেই পান্তুমাই। প্রথমদিনই দেখার প্লেন ছিলো। বাট সময় ছিলো না। তাই আজ দেখতে যাবে। এখন তারা গাড়িতেই আছে। আজ তীব্র আর নিলির থেকে দুরে নেই। তীব্র চায় বাকি যে ৩দিন আছে খুব ভালোভাবে ইনজয় করতে। নিলির সাথে ভালোভাবে টাইম স্পেন্ড করতে। তাদের প্রেমের শুরুটা না হয় এখান থেকেই হোক।

তীব্রঃনিলু বেবি।

নিলি চোখ বড় বড় করে তীব্রর দিকে তাকিয়ে বললো,”ছিঃ এসব কি বলছেন?”

তীব্রঃ🙄কি বলেছি?

নিলিঃআমাকে দেখতে আপনার বেবি মনে হচ্ছে।

তীব্রঃআরে আমি সেটা মিন করি নি। তুমি বেবি হতে যাবে কেনো? তুমি তো আমার বেবির মা হবে😉।

নিলিঃ😐এত এডভান্স কেনো আপনি?

তীব্রঃ২জনের মধ্যে একজনকে এডভান্স হতেই হয়। আচ্ছা এসব বাদ দাও। আজ আমাদের রিলেশনের ফাস্ট ডে। রাইট।

নিলিঃহুম।

তীব্রঃস্পেশাল কিছু করা উচিৎ। যাতে এই দিনটার কথা সবসময় মনে থাকে।

নিলিঃকি করবেন?

তীব্রঃভাবতে দাও।

আরশি আর নিলয় অনেকক্ষণ ধরে অফিসরুমে বসে আছে। বাট প্রিন্সিপাল স্যারের খবরই নেই। এদিকে নিলয়ের লেইট হয়ে যাচ্ছে। একটা মিটিং এটেন্ড করতে হবে। আরশি দেখতেছে নিলয় বার বার টাইম দেখছে।

আরশিঃআপনার ইমপর্টেন্ট কাজ থাকলে চলে যান। আমি একা বাসায় ফিরতে পারবো।

নিলয়ঃনা তোমাকে বাসায় দিয়েই আমি অফিসে যাবো।

আরশিঃশুনুন আমি কোনো বাচ্চা না যে একা যেথে পারবো না। আর ভুলে যাবেন না এই ভার্সিটিতে আমি আরো ২বছর পরেছি মাঝখানে কিছু মাস শুধু আসি নি। আগেও আমি এখান থেকে একাই বাসায় ফিরতাম।

নিলয়ঃতোমাকে এখানে একা রেখে অফিসে যেথে ইচ্ছে করছে না।

আরশিঃবলছি তো আমি একা যেথে পারবো। আর কোনো প্রবলেম হলে ফোন তো আছেই। আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ যান।

নিলয়ঃকিন্তু……

আরশিঃকোনো কিন্তু না। যান।

আরশি নিলয়কে টেলে গাড়ির কাছে নিয়ে গেলো। নিলয় আরশিকে একবার দেখে গাড়িতে উঠে চলে গেলো। কাল রাতে যেরকম বুকে অদ্ভুত ব্যাথা করছিলো এখন আরশির থেকে দুরে গিয়ে একি রকম ব্যাথা করছে নিলয়ের। জোরে একটা শ্বাস নিয়ে দ্রুত গাড়ি চালিয়ে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর প্রিন্সিপাল স্যার এলেন আরশি স্যারের সাথে কথা বলে নিলো। তারপর অফিসরুম থেকে বেরিয়ে ওর ক্লাসমিটদের সাথে একটু দেখা ও করে এলো। গেইট থেকে বেরবে তখনি পিছন থেকে কেউ বললো,”ভালোই আছো দেখছি নতুন আশিক নিয়ে।”

আরশি পেছনে তাকিয়ে দেখে ওর ক্লাসমিট রিহান। আরশি কিছু না বলে চলে যাবে আবার রিহান বললো,”নিরব নামের কারো জন্য আমাকে রিজেক্ট করেছিলে। এখন নিরব বাদ দিয়ে অন্য ছেলে। বাহ! ভালো। আমি ও তো দেখতে ভালো টাকা ও আছে আমাকে ও একটু চান্স দিও।”

আরশিঃনা জেনে একদম বাজে কথা বলবে না।

রিহানঃতোমার মত মেয়ের বিষয়ে আর কি জানার আছে আমার। একটা ছেলে দিয়ে তোমার হয় না। তাহলে আমার কাছে আসতে অন্য ছেলের কাছে কেনো গেলে। আমি ও কি কম মজা দিতাম।

আরশিঃরিহান!

টাস করে রিহান এর গালে একটা চর বসিয়ে দিলো। চর খেয়ে রিহান রাগে ফুসছে। একটা মেয়ের হাতে চর খেয়েছে তাও ভার্সিটির মাঠে অনেকে চেয়েও আছে। রিহানের ইগোতে লাগলো এটা।

রাগি চোখে আরশির দিকে তাকিয়ে বললো,”তোমার সাহস কি করে হলো আমাকে চর মারার।”

আরশিঃভাগ্য ভালো তোমার। শুধু চর মেরেছি। তোমাকে তো জুতো খুলে মারা উচিৎ ছিলো। তোমার সাহস কি করে হলো আমার নামে বাজে কথা বলার।

রিহানঃকোনো বাজে কথা বলিনি। যা বলেছি ঠিকই বলেছি। তুমি তো শুধু ছেলেদের সাথে ব…….

আবার একটা চর বসিয়ে দেয় আরশি। আরশি জানে এখন কি বলবে রিহান। রিহান এর আগেও আরশিকে খুব বাজে কথা বলেছে বাট তখন কোনো প্রতিবাদ করেনি। এখন নিলয়ের নামে কোনো বাজে কথা ও সহ্য করতে পারবে না।

আরশিঃতর মত কিছু ছেলেদের জন্য আজ এই দেশটার এত অবনতি হচ্ছে। মা বোন নিরাপদ ভাবে চলাফেরা করতে পারছে না। সবাইকে নিজেদের মতো ভাবিস কেনো তরা। ভুলে যাস না তুই একটা মেয়ের গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছিস। মেয়েদের সম্মান করতে শিখ।

রিহানঃতুই আবার আমাকে মেরেছিস😡? তর এই হাত যদি আমি ভেঙ্গে না দিয়েছি তো আমার নাম রিহান না।

আরশি কিছু না বলে ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে পরে। রিহান বাইক নিয়ে বের হয় আর আরশির পিছু নেয়। রিহানের রাগে মাথা পুরো গরম হয়ে আছে। আরশি রাস্তার কিনার দিয়ে হাটছে। ভাবতেছে সোজা নিলয়ের অফিস চলে যাবে এখন বাসায় যেথে ইচ্ছে করছে।

মেইন রুডের কাছে আসতেই রিহান আরশিকে ধাক্কা দিয়ে একটা গাড়ির সামনে ফেলে দেয়। আর ও বাইক নিয়ে এখান থেকে চলে যায়। আরশি রাস্তায় পরে থাকে। মাথা থেকে রক্ত পরে রাস্তা ভিজিয়ে দিচ্ছে।


চলবে?🙄

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে