pyar_tho_hona_hi_tha❤ Part-3+4

0
3094

#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা- পূজা
পর্ব-৩


সকালে,
নিলয় ঘুম থেকে উঠে ওয়াশরুমে যায়। আরশি এখনো ঘুমাচ্ছে। নিলয় শাওয়ার নিয়ে বেরিয়েছে একটা টাওয়াল পেচিয়ে। নিলয় বেরতেই আরশি আস্তে আস্তে চোখ খোলে তাকায়। আর নিলয়কে এইভাবে দেখে চোখ বড় বড় করে তাকায়। হাত দিয়ে চোখ ডেকে বলে,”এসব কি মি.চৌধুরি।”

নিলয়:কি সব? আর তুমি মুখ ডেকে আছো কেনো?

আরশি:এই রুমে একটা মেয়ে থাকে এইটা কি আপনি ভুলে গেছেন। এই ভাবে টাওয়াল পেছিয়ে কেনো আসলেন। লজ্জা সরম কি সব বেচে চলে এসেছেন।

নিলয়:জাস্ট সাট আপ। আমার রুমে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো। যেরকম ইচ্ছা সেরকম আসবো।

আরশি:😡এই রুমটা এখন আমার ও।

নিলয়:কোন অধিকারে এটা তোমার রুম বলছো।

আরশি:স্ত্রীর অধিকারে। আপনি ভুলে যাবেন না। আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী।

নিলয়:ওহ তাই! তা তুমি নিজেকে আমার স্ত্রী হিসেবে কখন মেনে নিয়েছো?

আরশি নিলয়ের এই কথায় চুপ হয়ে যায়। আর ভাবে,”ধুর এসব আমি কি বলছিলাম।”

নিলয়:বেশি বকবক না করে ফ্রেস হতে যাও।

আরশি উঠে ওয়াশরুমে চলে গেলো। নিলয় ড্রেস পরে নিলো। রেডি হয়ে নিচে গেলো। আজ নিলি আর ওর মা বাবা চলে যাবেন। নিলয় নিচে যেথেই দেখলো নিলি চেয়ারে বসেই নিলয় এর জন্য ওয়েট করছে।

নিলি:গুড মরনিং ভাইয়া। বউমনি কোথায়?

নিলয়:আসছে ফ্রেস হয়ে।

মামনি:আজ তো আমরা চলে যাবো। তুই বউমাকে নিয়ে সব সামলে নিতে পারবি তো। কোনো সমস্যা হলেই কিন্তু আমাদের ফোন করবি।

নিলয়:চিন্তা করো না মামনি। আমি সব সামলে নেবো।

নিলয়ের কাকু:শুন বউমাকে মাঝে মাঝে ঐ বাসায় পাটিয়ে দিবি। যখন ওর এই বাসায় একা ভালো লাগবেনা। কিছুক্ষণ গল্প করে আবার চলে আসবে। আর নদি তো এই বাসায় মাঝে মাঝে আসবেই।

নিলয়:আচ্ছা।

আরশি নিচে চলে আসে। এসে দেখে সবাই ব্রেকফাস্ট করছে। ও মামনির কাছে গিয়ে বললো,”সরি মামনি ঘুম থেকে উঠতে লেইট হয়ে গেলো।”

মামনি:আরে সরি বলছো কেনো? কাল ঘুমাতে লেইট হয়েছে হয়তো তাই উঠতে পারো নি। ব্রেকফাস্টটা সেরে নাও। আমরা আজ চলে যাবো। কাল থেকে তোমাকেই তোমার সংসার সামলাতে হবে।

আরশি:আমি চেষ্টা করবো।

নিলি:ভাইয়া আমাকে ভার্সিটিতে ড্রপ করে দিবি।

নিলয়:রেডি তো তুই।

নিলি:হুম।

নিলয়:ওকে।তাহলে চল।

নিলি:আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি।

নিলয়:আসি মামনি। বাসায় গিয়ে ফোন দিও।

নিলির মা:আচ্ছা। সাবধানে যাস।

নিলয় গিয়ে গাড়িতে বসে পরলো। কিছুক্ষণ পর নিলি এলো। নিলয়ের পাশে বসলো। নিলয় গাড়ি স্টার্ট দিলো।

নিলি:ভাইয়া একটা সত্যি কথা বলবি।

নিলয়:কি?

নিলি:বউমনি কি এই বিয়েতে রাজি ছিলো না?

নিলয়:ছিলো তো। রাজি নাহলে কি বিয়েটা হতো।

নিলি:আমাকে মিথ্যে বলছিস। তাইনা।

নিলয় কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,”ও নিরবকে ভালোবাসতো।”

নিলি:কিইইই? নিরব……

নিলয়:স্টপ। আর কোনো কথা বলবি না। মামনি কাকু কেউ যেনো এসব জানতে না পারে। সবাই এই বিয়ে নিয়ে খুব খুশি। কেউ কষ্ট পাক। সেটা আমি চাই না।

নিলি:আর তর কষ্টটা।

নিলয়:আমি কষ্ট পাচ্ছি না তো। আমি তো আর আরশিকে ভালোবেসে বিয়ে করিনি। আংকেল এর কথা রাখতে বিয়ে করেছি। তাই কোনো কষ্ট হচ্ছে না।

নিলি:আমার কাছে কখনো কিছু লুকাবিনা। কথা দে।(হাত এগিয়ে দিয়ে)

নিলয় মুচকি হেসে ওর একটা হাত নদির হাতে রেখে বললো,”ওকে মাই কিউট সিস্টার।তুই ও তর সব প্রবলেম এর কথা আমায় বলবি।”

নিলয়ের মুখে প্রবলেম এর কথা শুনেই ওর মুখটা মলিন হয়ে গেলো। কিভাবে বলবে সত্যিই ও প্রবলেম এ আছে। আজ বলতে চেয়েছিলো। কিন্তু এসব শুনে আর বলতে ইচ্ছে করছে না।

নিলয়:এসে গেছি। বাসায় গিয়ে ফোন দিস।

নিলি:আচ্ছা ভাইয়া। বাই।

নিলয় “বাই” বলেই গাড়ি গুড়িয়ে চলে যায়। নিলি আস্তে আস্তে ভেতরে ডুকে। ওর বেষ্টফ্রেন্ড তৃনাকে দেখতে পায়।

নিলি:তৃনাআআআ।

তৃনা:উপপপ নিলি তর এই ফাটা বাশের মতো গলা দিয়ে কোনো কথা বলিস না তো। বয়রা হয়ে যাবো কোনো একদিন।

নিলি:😐এত দিন পর ভার্সিটিতে এলাম। কোথায় আমাকে জরিয়ে ধরে বলবি। কেমন আছি নিধি এতদিন এলি না কেনো একদম শুকিয়ে গেছিস। খাওয়া-দাওয়া করিসনি নাকি। ইশশশ তর চোখের নিচে দেখ কালি পরে গেছে। তর কন্ঠ এমন দেখাচ্ছে কেনো। তর কি ঠান্ডা লেগেছে…….

এটা বলেই ঘুরে দেখে তৃনা চোখ বড় বড় করে নিলির দিকে তাকিয়ে আছে আর তৃনার পিছনে কেউ পলকহীনভাবে ওর দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনছিলো আর মুচকি হাসছে।

তৃনা:তুই পারিস ও বটে। এখন চল ক্লাসে। তুই এতক্ষণ যা বলছিলি। তার কিছুই হয় নি তর।

নিলি:😒

তৃনা টানতে টানতে নিলিকে নিয়ে ক্লাসে চলে গেলো। ও পিছনে ঘুরে একবার ছেলেটিকে দেখলো।

পিটে কেউ থাপ্পড় দিতেই পিছন ঘুরে তাকায় তীব্র।

তীব্র:উপপ তানভীর তর জন্য আমার পরির যাওয়াটা ভালো করে দেখতে পারলাম না। কতোদিন পর দেখেছি আজ ওকে।

তানভীর:কতোদিন পর কোথায়। মাত্র ৪দিন।

তীব্র:আমার কাছে ৪দিনই ৪বছরের সমান।

তানভীর:ও তো তর প্রপোজাল এক্সেপ্টই করছে না। এইভাবে দুর থেকেই কি ভালোবেসে যাবি।

তীব্র:আজ না হয় কাল। ঠিক ও ভালোবাসবে। আমার ভালোবাসার টানে ওকে আমার কাছে আসতেই হবে।

তানভীর:মনে আছে তো ওর পিছনে পড়া ছেলেদের কি অবস্থা করতো ওর ভাই।

তীব্র:কিন্তু ওর ভাই তো ম……

তানভীর:নিলয়।

তীব্র:ওহ হ্যা। আজ কতোদিন হলো ও জানে ওকে আমি ভালোবাসি।

তানভীর:তা তো ৪মাস হয়ে যাচ্ছে।

তীব্র:এতদিনে ও ওর ভাইকে আমার কথা যখন বলেনি। ফিউচারে ও বলতে পারবে না। এতেই বুঝা যায় ওর মনে ও আমার জন্য কিছু আছে।

তানভীর:বাহ! কতো গভিরে গিয়ে ভেবেছিস। এবার চল ক্লাসে। আর দেখতে পারবি না ওকে।

তীব্র:হুম চল।

নিলয় অফিসে কাজ করছে আর ল্যাপটপে দেখছে আরশি কি করছে। নিলয় সারা বাসায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়েছে। আরশিকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। কখন কি করে বুঝা মুশকিল। কখন দেখা যাবে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। বাইরে গার্ড আছে তারপরো চোখে চোখে রাখছে।

আরশি হেটে হেটে সারা বাড়ি দেখছে। বাড়িটা অনেক বড়। এই বাড়িটা নিলয় এর দাদু বানিয়েছিলেন। কিন্তু এই বাসায় উনাদের বেশি থাকা হতো না। নিলয়ের কাকু যে বাসায় থাকেন ঐ বাসায়ই ওরা থাকতো। নিলয়ের মা বাবা মারা যাওয়ার পরই নিলয় একা এই বাসায় থাকতে শুরু করে। মাঝে মাঝে অফিসের কাজে বাইরেও যেথে হয়।

আরশি হাটতে হাটতে একটা রুমে এসে আটকে যায়। রুমটা বাইরে থেকে থালা দেওয়া। আরশি থালাটা ছুতে গেলেই,
সার্ভেন্ট:সরি ম্যাম আপনি এই রুমে ডুকতে পারবে না।

আরশি:কেনো?

সার্ভেন্ট:নিলয় স্যারের কড়া আদেশ। এই রুমে কেউ প্রবেশ করতে পারবে না।

আরশি:(কি এমন আছে এই রুমে। যে ডুকা বারন। আমাকে তো দেখতেই হবে।) আচ্ছা ডুকবো না।

সার্ভেন্ট চলে যায়। আরশি এই রুমের কাছে আসতেই নিলয় ফোন দিয়ে আরশিকে আটকানো কথা বলে। আরশি এই জায়গা থেকে চলে যেথেই নিলয় ল্যাপটপ অফ করে কাজে মন দেয়। আর আরশি রুমে বসে ভাবে কিভাবে নিরব কে খুজা যায়। কতো ভালোবাসতো নিরব ওকে। সবসময় আগলে রাখতো। কখনো কোনো কষ্ট পেতে দিতো না। আর আজ কিনা এতো কষ্টের মাঝে ওকে রেখে নিরব চলে গেছে।

নিলি আর তৃনা ক্লাস শেষে বাইরে এসে দেখে তীব্র দারিয়ে আছে। নিলির হার্ট ফাস্ট কাজ করছে। এই ছেলেটা সামনে এলে নিজেকে এত পাগল পাগল লাগে কেনো ভাবছে নিলি। কোনো ছেলে ওর দিকে তাকালেই তো ওর ভাইকে বলে দিতো। তাহলে এই ছেলেটার কথা নিলয়কে বলতে পারছে না কেনো।

তৃনা:কি ভাবছিস চল।

নিলি:হুম।

নিলি তৃনার সাথে চলে যায় বাসায়।
অন্যদিকে আরশি একা বাড়িতে বসে বসে বোর হচ্ছে। নিলয়টা ও না। আরশিকে একা রেখে চলে গেলো। নিলয় ল্যাপটপে দেখছে আরশিকে। আর কাজ করছে।

সন্ধ্যার আগেই নিলয় বাসায় ফিরে আসে। এসে রুমে যায়। আরশি জানলার গ্রিল ধরে দারিয়ে আছে। নিলয় ব্যাগ রেখে সোজা ওয়াশরুমে ডুকে পরে। ফ্রেস হয়ে এসে দেখে আরশি আগের মতোই বসে আছে।

নিলয়:এইভাবে বসে আছো কেনো?

আরশি:আপনাকে বলতে হবে।

নিলয়:অফ কোর্স। লিগালি আম এম ইউর হাজব্যান্ড।

আরশি:আমি তো মানি না।

নিলয়:তোমার মানায় বা না মানায় কিছুই যায় আসে না।

আরশি:লিসেন মি.চৌধুরি নিরবকে পেলে কিন্তু আপনি আমায় ডিবোর্স দিয়ে দেবেন।

নিলয়:ওকে।

আরশি:সত্যি বলছেন তো।

নিলয়:হুম।

আরশি এগিয়ে যায় নিলয়ের দিকে। নিলয়ের সামনে হাত রেখে বলে,”প্রমিস”

নিলয়:প্রমিস।

আরশির মুখে হাসি ফুটে উঠে। এখন শুধু নিরবকে পাওয়ার অপেক্ষা। কিন্তু কোথায় পাবে।


চলবে?🙄

#pyar_tho_hona_hi_tha❤
লেখা- পূজা
পর্ব- ৪


নিলয় ওর অফিসের কিছু কাজ শেষ করে ওই বন্ধ দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে। আরশি নিচে ছিলো। নিচ থেকেই দেখেছে নিলয় ওই রুমে ডুকেছে। আরশির ও কৌতূহল জাগলো ভেতরে কি আছে দেখার। উপরে উঠে ওই রুমের সামনে গিয়ে দারালো। দরজা ভেতর থেকে বন্ধ। তাই ভেতরে ডুকতে পারছে না। কান পাতলো দরজার দিকে ভেতরে কি হচ্ছে শুনার জন্য। কিন্তু ভেতর থেকে কোনো শব্দই আসছে না। অনেকক্ষণ কেটে যাওয়ার পর হঠাৎ দরজা খুলে দিলো নিলয়। আরশি দরজায় হেলান দিয়ে ভেতরে কি হচ্ছে বোঝতে চাইছিলো। তাই নিলয় দরজা খুলতেই আরশি সোজা গিয়ে পরে নিলয়ের উপর। হঠাৎ আরশি এইভাবে পরায় নিলয় হতভম্ব হয়ে যায়। নিলয় দরজায় দরে নিজেকে সামলে নেয় পরা থেকে। আরশিকে সোজা দার করায়। তারপর রাগি গলায় আরশিকে বললো,”তুমি একানে কি করছিলে।”

আরশি কি বলবে বুঝতে পারছে না। আমতা আমতা করে বলে,”আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম।”

নিলয়:কেনো?

আরশি:খাবার জন্য।

নিলয়:তাহলে এভাবে দরজায় হেলান দিয়ে কি করছিলে।

আরশি নিলয়ের পিছনে উকি দিয়ে দেখে ভেতরে কি। নিলয় আরশির এমন উকি দেওয়া দেখে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়। আরশি যতটুকু দেখেছে বুঝতে পারে এটা একটা বেডরুম। আর দেওয়ালে কিছু ছবিও। বাট কার ছবি এটা ও দেখতে পারে নি।

নিলয়:কি হলো। এভাবে উকি দিচ্ছো কেনো। একদম এই রুমের আশে পাশে ও আসবে না। বলে দিচ্ছি।

আরশি:কেনো? এই রুমে কি এমন আছে যে আসা বারন।

নিলয়:সব প্রশ্নের উওর দিতে আমি বাধ্য নই।

আরশি মুখ ভেংচি দিয়ে চলে যায়। নিলয় ভালো করে রুমটা তালা দিয়ে যায়।

নিলয় নিচে ড্রয়িংরুমে গিয়ে বসতেই নিলি ফোন দেয় নিলয়কে। আরশি পাশেই বসে ছিলো।

নিলয়:হ্যা নিলি বল।

নিলি:কি করছিস তুই? বউমনি কি করছে?

নিলয় আড়চোখে একবার আরশির দিকে তাকালো তারপর বললো,”এইতো ড্রয়িংরুমে বসে আছি। ও আমার সামনেই আছে।”

নিলি:বউমনির কাছে ফোনটা দে তো কথা বলবো।

নিলয় ফোনটা আরশির দিকে এগিয়ে দেয়। আরশি ভ্রু কুচকে নিলয়ের দিকে তাকায়।

নিলয়:নিলি কথা বলবে।

আরশির নিলয়ের কাছ থেকে ফোন নিয়ে এখান থেকে চলে যায়।

নিলয়:আমার সামনে কথা বললে কি হতো।হুহ।

আরশি:হ্যা নিলি বলো কেমন আছো? মামনি কাকু ওরা কেমন আছেন?

নিলি:আমি মা বাবা সবাই ভালো আছি। তুমি কেমন আছো?

আরশি:ভালো নেই। সারাদিন বাসায় একা থাকি। বোর হয়ে যাই।

নিলি:আমি ভাইয়াকে বলবো। তুমি কাল আমাদের বাসায় চলে এসো। এই বাসায় তো আসো ও নি। আসলে ভালো লাগবে আর টাইম ও কাটবে।

আরশি মনে মনে ভাবলো এই বাসা থেকে একবার বেরতে পারলে নিরবকে খুজতে পারবে। বাড়িতে বসে বসে তো আর খোজা যায় না।

আরশি:যদি যেথে না দেন উনি।

নিলি:আমি বললে দেবে। তুমি এসব আমার উপর ছেড়ে দাও। আমার ভার্সিটির পরে তোমাকে নিয়ে যাবো। তারপর না হয় ভাইয়া এসে আবার তোমাকে পিক করে নেবে।

আরশি:(তাহলে আমি খুজবো কি করে নিবরকে) আরে না। তোমার কষ্ট করে আসতে হবে না। তুমি শুধু তোমার ভাইয়াকে রাজি করাও। আর এড্রেসটা মেসেজ করে দিও। আমি চলে আসবো।

নিলি:তোমাকে একা কি করে আসতে দেই।

আরশি:কোনো ব্যাপার না। আমি সব ম্যানেজ করতে পারবো।

নিলি:আচ্ছা তুমি নিয়ে ফোনটা ভাইয়ার কাছে দাও আমি বলছি।

আরশি খুশি হয়ে নিলয়ের কাছে গেলো আর ফোনটা এগিয়ে দিলো নিলয়ের দিকে। নিলয় ফোন নিয়ে বললো,”হ্যা নিলি বল।”

নিলি:ভাইয়া প্লিজ কালকে বউমনিকে আমাদের বাসায় আসার পারমিশনটা দিস। তুই না বললে তো আসতে পারবে না। বাসায় একা বোর হয়।

নিলয়:ওকে। আমি পৌছে দেবো। আবার পিক করে ও নিয়ে আসবো।

আরশি নিলয়ের কথা শুনে উত্তেজিতো হয়ে বললো,”না না তার দরকার নেই। আমি একা যেথে পারবো।”

নিলয় আরশির কথা কানে তুললো না। নিলয় জানে আরশি বাইরে বের হলেই নিরবকে খুজবে।

নিলয়:তুই এখন ডিনার করে পরতে বস। কাল তর সাথে কথা বলবো।

নিলি:ওকে ভাইয়া। বাই গুড নাইট।

নিলয়:গুড নাইট।

আরশি:আমি একা যেথে পারবো। আপনি শুধু এড্রেসটা বলে দিয়েন।

নিলয়:একা যেতে চাইলে যাওয়ার দরকার নেই। বাড়িতেই বসে থাকো।

আরশি:এটা কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।

নিলয়:আই নো। তোমার নতুন করে বলতে হবে না।

আরশি নিলয়ের দিকে রাগি ভাবে তাকিয়ে হনহন করে কিচেনে চলে গেলো। কোথায় ভেবেছিলো নিরবকে খুজতে একটু বের হবে তা আর হলো না।

এদিকে তীব্র বেলকনির ফ্লোরে বসে গিটার বাজাচ্ছে। পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো তৃষিকা।

তীব্র:তৃষু।

তৃষি:শুধু গিটার বাজাচ্ছিস কেনো। গান গা না।

তীব্র:না।

তৃষি:প্লিজ ভাইয়া একটা।

তীব্র:নিলি আমার প্রপোজাল এক্সেপ্ট করে না কেনো? এতদিন ধরে ওর পিছনে পরে আছি।

তৃষি:চিন্তা করিস না ভাইয়া। বউমনির একটু টাইম লাগছে বুঝতে যে তকে ভালোবাসে। যেদিন বুঝবে দেখিস তর কাছে ছুটে চলে আসবে।

তীব্র:কবে আসবে। তার আগে যদি অন্য কেউ ওকে নিয়ে চলে যায়।

তৃষি:তর সবসময় নেগেটিভ কথাবার্তা। এখন চুপচাপ একটা গান গা তো।

তীব্র একটু মুচকি হাসি দিলো। আর আবার গিটার বাজাতে শুরু করলো।

“হাম তেরে বিন আব রেহ নেহি সাকতে
তেরে বিনা কিয়া ওয়াজুদ হে মেরা”
“হাম তেরে বিন আব রেহ নেহি সাকতে
তেরে বিনা কিয়া ওয়াজুদ হে মেরা”
“তুঝসে জুদা আগার হো জায়েঙে
তো খুদসে হি হো জায়েঙে জুদা
কিউ কি তুম হি হো আব তুম হি হো”
“জিন্দেগি আব তুম হি হো
চ্যান ভি, মেরা দারদ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো”
“তেরা মেরা রিসতা হে ক্যাসা
এক পাল দূর গাওয়ারা নেহি
তেরে লিয়ে হার রোজ হে জিতে
তুঝকো দিয়া মেরা ওয়াক্ত সাভি
কোয়ি লামহা মেরা না হো তেরে বিনা”
“হার শাশ পে নাম তেরা
কিউ কি তুম হি হো আব তুম হি হো”
“জিন্দেগি আব তুম হি হো
চ্যান ভি, মেরা দারদ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো
তেরে লিয়ে হি জিয়া মে
খুদ কো যো ইউ দে দিয়া হে
তেরে ওয়াফা নে মুঝকো সাম্ভালা”
“সারে গামো কো দিল সে নিকালা
তেরে সাথ মেরা হে নাসিব জুরা
তুঝে পাকে আধুরা না রাহা হুম…
কিউ কি তুম হি হো আব তুম হি হো”
“জিন্দেগি আব তুম হি হো
চ্যান ভি, মেরা দারদ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো
কিউ কি তুম হি হো আব তুম হি হো”
“জিন্দেগি আব তুম হি হো
চ্যান ভি, মেরা দারদ ভি
মেরি আশিকি আব তুম হি হো।”

তৃষি:এই গানটা বউমনি শুনলে তো পুরো পাগল হয়ে যাবে। তখন আর এই বাড়িতে বউ হয়ে আসতে হবে না।পাবনা পাটাতে হবে।

তীব্র:কি বললি?তবে রে…..

তৃষি দৌড়। আর পিছনে তীব্র ও।

তৃষি:ভাইয়া আমাকে মারলে কিন্তু বউমনির কথা সবাইকে বলে দেবো।

তীব্র তৃষির কথা শুনে দারিয়ে যায়। তীব্রর মা এইটা জানলে ওর লাভ স্টরি শুরু হওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে। তীব্রর মা খুব রাগি। উনি এসব একদম পছন্দ করেন না।

তৃষি:হিহিহি।

তীব্র:যা আজকের জন্য তকে ছেড়ে দিলাম। বেচে গেলি।

তৃষি:ভয় পেয়েছিস😂

তীব্র:তীব্র কাউকে ভয় পায় না। ওকে।

তৃষি:আই নো আই নো। ডং😏

সকাল ৬টা☀️
নিলয় ঘুম থেকে উঠে জগিং করতে বের হয়। নিলয়ের এটা অনেকদিনের অভ্যাস। কিন্তু কিছুদিন বিয়ের জন্য যেথে পারে নি। এখন থেকে আবার যাওয়া শুরু করবে। আরশি ঘুমিয়ে আছে।

১ঘন্টা পর নিলয় বাসায় ফিরে রুমে গিয়ে দেখে আরশি এখনো ঘুমিয়েই আছে। নিলয় গেলো ওয়াশরুমে। শাওয়ার নিয়ে বের হলো। তারপর রেডি হলো। কিন্তু আরশির ঘুম থেকে উঠার নামই নেই। নিলয় এবার এক গ্লাস পানি আরশির মুখে ডেলে দিলো।

আরশি:আআআআআ বাপিইইই

নিলয়:চুপ। সকাল কটা বাজে সেটা খেয়াল আছে। এত ঘুম কোথা থেকে আসে তোমার।

আরশি:তাই বলে আপনি আমার উপর পানি ডেলে দিবেন। আমার বাপি হলে এটা কখনো করতো না।

নিলয়:আমি তোমার বাপি নই। ওকে। এবার যাও ফ্রেস হতে। তোমাকে ঐ বাসায় ড্রপ করে আমাকে অফিস যেথে হবে।

আরশি:আপনি চলে যান না। আমি একা যেথে পারবো।

নিলয়:না আমি পৌছে দেবো। এবার যাও ফ্রেস হতে। আমি নিচে যাচ্ছি।

নিলয় চলে গেলো নিচে। আর আরশি রাগে ফুসতে ফুসতে ওয়াশরুমে গেলো।

নিলি ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য রিক্সা খুজছে। নিধি গাড়ি থাকা সত্বেও গাড়ি নিয়ে যায় না। কেউ ড্রপ করে দিলেই যায়। নয়ত রিক্সায় যায়। হঠাৎ রিলির সামনে একটা বাইক এসে দারায়। হঠাৎ এমন হওয়ার রিলি ভয় পেয়ে ২পা পিছিয়ে যায়। তীব্র মাথা থেকে হেলমেট খুলে।

তীব্র:আরে আমি ভয় পেয়ো না।

নিলি:😡আপনি এইভাবে আমার সামনে আসলেন কেনো?

তীব্র:তুমি রিক্সা পাচ্ছিলে না তাই ভাবলাম একটু হেল্প করি।

নিলি:আমার আপনার হেল্প এর প্রয়োজন নেই। প্লিজ আপনি আমার থেকে দুরে থাকুন। নয়ত আমি ভাইয়াকে বলে দেবো।

তীব্র:কি বলবে?

নিলি:আপনি আমায় ডিস্টার্ব করেন।

তীব্র:বলতে পারবে?

নিলি:মানে?

তীব্র:মানেটা খুব সিম্পল নিলি। এতদিন যখন বলতে পারো নি। এখন ও পারবে না। কারন তোমার মনে ও আমার জন্য ফিলিংস আছে।

নিলি:একদম না। আপনি ভুল জানেন। আমি আপনাকে একদম পছন্দ করি না।

তীব্র:তোমার চোখ তো সেটা বলছে না।

নিলি:আপনি যান তো এখান থেকে।

ওদের কথা বলার মধ্যেই নিলয়ের গাড়ি ওদিকে আসে। নিলয় নিলিকে একটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে দারিয়ে যায়।

নিলি:ও নো। ভাইয়া!

তীব্র ও তাকিয়ে দেখে নিলয় গাড়ি থেকে নামছে। নিলয় এসে ওদের সামনে দারালো।

নিলয়:তুমি তনয় আংকেল এর ছেলে না।

তীব্র:জি ভাইয়া।

নিলয়:এখানে কি করছো?

তীব্র:একটা ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে এসেছিলাম। নিলিকে দেখলাম রিক্সা খুজছে তাই হেল্প করতে এলাম। ও আর আমি এক ভার্সিটিতেই পরি।

নিলয়:ওহ আচ্ছা। তুমি একটু নিলির উপর নজর রেখো তো। কোনো প্রবলেম হলে আমাকে জানাবে।

তীব্র আড়চোখে নিলির দিকে তাকায় তারপর নিলয়কে বলে,”জি ভাইয়া।”

নিলি:উনাকে এসব বলছিস কেনো? আমি তো তকে সবই বলি।

নিলয়:আমি তীব্রকে চিনি। ও একটু দেখে রাখলে আমি একটু নিশ্চিন্ত হবো। সবসময় তো তর পাশে থাকতে পারবো না। আমার ও কাজ আছে। এখন তো আর…….

নিলি:প্লিজ ভাইয়া এটা নিয়ে আর কথা বলিস না।

নিলয়:আচ্ছা তুই ভার্সিটিতে যা।

তীব্র:ভাইয়া আমি ওকে নিয়ে যাই।

নিলয়:ওকে যাও।

নিলি:না না লাগবে না। আমি একা যেথে পারবো।

তীব্র:ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। বেশি টাইম নেই। চলে আসো।

নিলয়:চলে যা।

নিলি বাধ্য হয়ে বাইক এ উঠে বসে।আরশি গাড়িতেই বসে ছিলো। নিলি বসা থেকেই আরশিকে বললো,”আসি বউমনি। দুপুরে তোমার সাথে দেখা হবে।”

আরশি:ওকে।

নিলয় গাড়ি নিয়ে বাসায় চলে গেলো। আর তীব্র নিলিকে নিয়ে ভার্সিটি। নিলি তীব্র থেকে একটু ফাক রেখে বসেছে। যা তীব্রর মোটেও ভালো লাগে নি। তাই ও বাইকের স্প্রিড বারিয়ে দেয়। নিলির তো রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে। রেগে চিল্লিয়ে বললো,”আপনি ইচ্ছে করে এসব করছেন।”

তীব্র নিলির কথা কানে ও তুলছে না। অন্য রাস্তায় বাইক ঘুরিয়ে নিলো। এবার নিলি আরো জোরে চিল্লিয়ে বললো,”আপনি বাইক থামান নয়ত আমি বাইক থেকে লাফ দেবো।”

নিলির কথায় তীব্র ভয় পেয়ে যায়। যদি সত্যিই লাফ দেয়। এই মেয়েকে দিয়ে কোনো বিশ্বাস নেই। তীব্র বাইক থামিয়ে নেয়। নিলি বাইক থেকে নেমে তীব্রর কলার চেপে ধরে বলে,”ভাইয়ার জন্য আপনার সাথে আসতে রাজি হয়েছিলাম। আর আপনি কিনা আমার সুযোগ নিতে চাচ্ছেন। এতদিন কিছু বলি নি বলে কি ভেবেছেন আর কখনো বলতে পারবো না। আজই গিয়ে ভাইয়াকে সব বলে দেবো। আপনাদের মতো ছেলেদের আমার খুব ভালো করে চেনা আছে।”

“আপনাদের মতো ছেলেদের” এই কথাটা তীব্রর একদম পছন্দ হয় নি। অন্য ছেলেদের সাথে ওকে কেনো তুলনা করবে। তীব্রর রাগ উঠে গেলো। নিলির হাত ওর কলার থেকে চারিয়ে মুচরিয়ে পিছনে নিয়ে লাগালো। তারপর বললো,”আমি তোমাকে ভালোবাসি বলে কিছুই বলছি না বলে এটা ভেবো না তুমি যা ইচ্ছা তাই বলতে পারবে। অন্য ছেলেদের সাথে একদম আমার তুলনা করবে না। কখনো কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাইনি। তোমাকে প্রথম দেখায় ভালো লেগেছে তাই তোমার পিছনে ঘুরছি। নয়ত এই তীব্র কখনো কোনো মেয়ের পিছনে ঘুরে নি। মেয়েরাই আমার পেছনে ঘুরেছে।”

নিলি:(নিজেকে যে কোনো ফিল্ম এর হিরো ভাবতাছে নিজেই জানে। ফেইচ তো সেই বান্দরের মতোই। ডং)

নিলি হাত ছারানোর জন্য মুচরামুচরি করতেছে। তীব্র কিছুক্ষণ নিলির দিকে তাকিয়ে হাত ছেড়ে দিলো। নিলি হাত ধরে মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে। হাত লাল হয়ে গেছে। আঙ্গুলের দাগ ও বসে গেছে। কি শক্তি ছেলেটার হাতে ভাবছে নিলি।

তীব্র:সরি। রাগের মাথায় এত শক্ত করে ধরেছি।

তীব্র এগিয়ে গিয়ে নিলির হাত ধরতে গেলে নিলি আরো ২পা পিছিয়ে যায়।

তীব্র:ওকে ধরছি না। চলো তোমাকে ভার্সিটি পৌছে দেই।

নিলি:লাগবে না আমি একা যেথে পারবো।

তীব্র:চার পাশে তাকিয়ে দেখো একটা ও রিক্সা বা গাড়ি নেই। আর ঐ দিকের লোক গুলোকে দেখো কিভাবে তাকিয়ে আছে। আর আমি চলে গেলেই……

তীব্র আর কথা শেষ করতে পারলো না। নিলি তারাতারি তীব্রর বাইকে গিয়ে বসে পরলো। তীব্র মুচকি হেসে বাইক স্টার্ট দিলো। আর সোজা ভার্সিটিতে নিয়ে গেলো।


চলবে?🙄

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে