প্রত্যাখান_পর্ব(০২)
রচনায়- অনামিকা ইসলাম ‘অন্তরা
লাবণ্যকে নিয়ে একটা ভাবনার জগৎ সৃষ্টি হলো আমার হৃদয় রাজ্যে। কখন যে আমি ওকে ভালোবাসার সিংহাসনে বসিয়ে ফেলেছিলাম বুঝতে পারিনি। মাস দুয়েক পর —- মা’কে পুনরায় পাঠালাম লাবণ্যদের বাড়িতে। আমার বিয়ের পয়গাম নিয়ে মা গেল। এবারো লাবণ্য নাকচ করে দেয়, প্রত্যাখান করে দেয় বিয়ের প্রস্তাব। মনে ভিষণ কষ্ট পাই। অথচ আমি তার অযোগ্য ছিলাম না। কয়টা দিন অসহ্য এক যন্ত্রণায় কাটলো। তারপর চলে এলাম। আমরা নরসিংদী থেকে বদলি হয়ে ঢাকায় চলে এলাম। ঢাকায় এসে মন থেকে পুরনো সবকিছু দুরে সরিয়ে রেখে আমি আমার কাজে মনোনিবেশ করতে চাইলাম। হলোও তাই। অল্প কিছুদিনের ভেতর লাবণ্যকে ভুলে আমি আমার কাজে পূর্ণ মনোযোগ স্থাপন করতে পারলাম। কেটে গেল অনেকগুলো মাস — সেবার বাবা -মা এবং একটা আদরের ছোট বোনকে নিয়ে বেরিয়ে ছিলাম শহরের বাইরে। সেখানে কাকতালীয় ভাবে লাবণ্যর সাথে দেখা। ও’কে দেখে না দেখার ভান করে কেটে পড়তে চাইলাম আমি। পিছু থেকে ডাক দেয় লাবণ্য। কথা হয়। কথাচ্ছলে জানতে পারলাম, ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে বাংলা’য় অনার্স করছে লাবণ্য। এটাও জেনে নিলাম, আমাদের ঠিক পাশের এলাকায় লাবণ্যর অবস্থান। সেদিন ভ্রমন শেষে একসাথে আমরা ঢাকায় পৌঁছি। কথায় কথায় মা লাবণ্যকে জানায়, কষ্ট করে ম্যাচে থাকার চেয়ে তুমি বরং আমাদের বাসায় চলে আসো। এমনিতে ঘরের খাবারও খেতে পারবে আর পড়াশুনায়ও মনোনিবেশ করতে পারবে। মায়ের প্রস্তাবে বিনা বাক্যে রাজি হয়ে যায় লাবণ্য। জিনিসপত্র গুছিয়ে চলে আসে আমাদের বাসায়। ওর সান্নিধ্যে ঘুমিয়ে থাকা ভালোবাসা পুনরায় মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আবার নতুন করে ভালোবেসে ফেলি ও’কে। সুযোগ বুঝে একদিন লাবণ্যকে বললাম আমার ভালোবাসার কথা, ভালো লাগার কথা। কিন্তু বাদ সাধল লাবণ্য। বলল, বামন হয়ে চাঁদে হাত বাড়াতে চাই না। কোথায় আমি আর কোথায় আপনি। লাবণ্যকে বোঝালাম। বুঝতে চাইল না। বলল, আপনার বাবা সরকারি চাকুরীজীবি। ক’দিন পর আপনারা এখান থেকে বদলি হয়ে যাবেন আর আমি ঝরা ফুলের পাপড়ির মতো কিংবা পার্কে ছড়িয়ে থাকা বাদামের খোসার মতো পড়ে থাকব। লাবণ্যর কথা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম। একটু থেমে আবার বলল, আমাকে যদি আপনার সত্যিই ভালো লাগে তাহলে আপনি আমাকে বন্ধু হিসেবে পেতে পারেন। তাতে না পাওয়ার বেদনা থাকবে না। হারিয়ে যাওয়ার ভয়ও থাকবে না। লাবণ্যর এত সুন্দর গুছিয়ে কথা বলার কাছে আমি হেরে গেলাম। আমার অন্তরাত্মা শুকিয়ে এতটুকু হয়ে গেল। তারপরও আমি হাল ছাড়লাম না। লাবণ্যর সাথে আমার রোজ দেখা হতো। কখনো খাবার টেবিলে, কখনো ড্রয়িংরুমে আমার মা-বোনের সাথে গল্প গুজবের সময় কখনো বা ছাদে। এছাড়াও হতো দৃষ্টির আলাপন। লাবণ্যর নিজস্ব মোবাইল ছিল না। আমার মায়ের ফোন থেকেই সে মাঝে মধ্যে তার গ্রামে আপনজনদের সাথে কথা বলতো। ওকে একটা মোবাইল কিনে দিতে চাইলাম। পড়াশুনার ক্ষতি হবে বলে নিতে চাইল না। একদিন ঠিক করলাম লাবণ্যকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যাব। ওকে বললাম, ও রাজি হলো। রিকশায় চেপে দুজন রওনা দিলাম। রিকশায় বসে লাবণ্যর একটি হাত ধরলাম। ছাড়িয়ে নিতে চাইল। কিন্তু পারল না। কখন যেন আমাদের হাত দুটির ওপর লাবণ্যর আরেকটি হাত এসে ভর করল। লক্ষ্য করলাম, ওর নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। খেয়াল করলাম, আমার হাতের মধ্যে রাখা ওর হাত দুটো মৃদু কাঁপছে। চলবে…