বাড়ি প্রচ্ছদ পৃষ্ঠা 1204



ছায়া নীল! ২০

0

ছায়া নীল!

২০.

Maria Kabir

কপাল ঘামে ভিজে আছে। ওকে ডাকা যাবেনা। আমার জন্যে এমনিতেই অনেক ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। এখন ঘুমানো যাবে না। টেলিভিশন ছেড়ে খুঁজতে থাকলাম কোনো ভালো মুভি হচ্ছে নাকি। পেয়েও গেলাম। ইংলিশ মুভি টাইটানিক। অসম্ভব ভালো একটা মুভি একবার দেখলে বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ভয় টা আস্তে আস্তে কেটে যেতে লাগলো। মুভিতে এতোই মগ্ন হয়ে রইলাম যে সময় সেটাও খেয়াল নেই।
মুভির শেষ মুহূর্তে আমার গাল বেয়ে পানি টপটপ করে পরছে। সৌরভ ঠিক এই সময়ে রুমে ঢুকলো। মনে হলো একটু অবাক হলো। জিজ্ঞেস করলো
– আবার কী হয়েছে??
কথা বলার সাথে সাথে ও টেলিভিশনের দিকে তাকালো তারপর হেসে বলল
– ওহ এই কাণ্ড!
চোখেরজল মুছে বললাম
– কত কষ্টের কাহিনী দেখেছো। রোজ, জ্যাককে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
– আচ্ছা বুঝলাম। একটা প্রশ্নের উত্তর দাও।
– হুম, বলো।
– শারলিন, নীল কে ছাড়া কীভাবে থাকবে??
ওর মুখের দিকে তাকালাম। এই প্রশ্ন কেন করলো??
– বুঝলাম না?
– খাবার এসে যাবে তুমি গোসল করে নিতে পারো। না না থাক তোমার হাত ভেজানো যাবে না।
– নীল অনেকদিন গোসল করি না। কেমন বিশ্রী লাগছে।
– শারলিন আর মাত্র ২ দিন। তারপর পুকুরে লাফাবা তাতেও কিছু হবেনা।
– পুকুর কই পাবো??
– আমাদের বাসায় আছে। হাত মুখ ধুয়ে নাও। আমি খাবার রেডি করছি।
হাত মুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে দেখি বিছানার উপর চাদর বিছিয়ে খাবার রাখা হয়েছে।
আমাকে দেখে বলল
– পিওর বাঙালি খাবার। কোনো হোটেল থেকে আনা না।
– তাহলে তুমি রেঁধেছ??
– আমার দ্বারা সম্ভব না। আমাদের পিয়নের বউ হেব্বি রান্না করতে পারে। ওনাকেই ঠিক করা আমার।
– বুঝেছি।
খাবার খাওয়ার সময় ওকে বললাম
– আমার সেই ভয় পাওয়ার কারণ টা জানো??
– আমি একটা কারণ খুঁজে পেয়েছি। অবশ্যই তুমিও পেয়েছো। তোমার টা আগে শুনি।
– তোমাদের বাসায় খারাপ কিছু আছে। ভূত টাইপের।
– তোমার হাতের রক্ত খেতে চেয়েছিলো??
– হুম।
আমার খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। সেই রাতের কথা মনে পড়ে গেলো।
– তুমি খাও। আমি বলছি কারণটা কী। তোমার ভেতর এই ধরনের ভয় অনেক আগে ঢুকে গেছে। মানুষের মস্তিষ্কের একটা অংশে এই ভয়টা জমা থাকে। যখন ওই ধরনের অর্থাৎ একটু পুরাতন বাড়ি বা গল্পে, মুভিতে ভূত থাকার আলামত বলে দেয় ওরকম কিছু দেখলেই সেই ভয়টা জেগে উঠে।
তারপর ও চুপ হয়ে গেলো। আমার কথা গুলোতে বিশ্বাস হচ্ছে। ছোটোবেলায় দাদীর কাছ থেকে অনেক ভূতের গল্প শুনেছি। এমনকি আমি প্রচুর হরোর মুভিও দেখি। ও আবার বলল
– আমাদের বাড়িটা অনেক পুরাতন। ভাঙা চোড়া তাই তোমার কাছে ভুতুড়ে মনে হয়েছে। মস্তিষ্কের সেই ভয় তোমার ঘুমের ঘোরে হানা দিয়েছে। তাছাড়া আর কিছুই না।
– সত্যি তো??
– হ্যা অবশ্যই। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে তোমাকে সেই ভয় তাড়া করে ফিরবে।
– বুঝলাম না??
– মনে করো আমার রুমে তোমার আর একা ঘুমানো সম্ভব না। ভয়টাকে জয় না করতে পারলে একসময় তুমি কোনো রুমেই একা থাকতে পারবে না।
– একটু আগেও চোখ বুজেছিলাম কিন্তু আবার সেই হাত…
– বলেছি না তোমাকে।
– এখন কী করতে হবে বলো??
– কোনো সাইক্রাটিসই বলতে পারবে। আমি তো এটুকু জানতাম তাই বললাম।
– নীল আমাকে সাহায্য করো। আমি আর পারছি না, আমি ক্লান্ত।
– এতেই তুমি হেরে গেলে?? তুমি তো এতো সহজে হার মানার মেয়ে না।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন করবো ঠিক উত্তর দিবে??
– হ্যা করো।
– স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা আমাকে দিলা না। আমি জানতে চাই কীভাবে???
– বলবো। আগে খেয়ে নাও। শান্তি মতো বসে বলা যাবে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৯.

0

ছায়া নীল!

১৯.

Maria Kabir

তাড়াতাড়ি করে ব্রাশ করে, পোশাক পাল্টে নিলাম। খুদা লেগেছে খুব, খেতে বসবো তখন সৌরভ হাতে ঘড়ি পড়তে পড়তে বলল
– সময় নেই, এখন খেতে হবেনা।
ফুপু বললেন
– এতদূর যাবে না খেয়ে কীভাবে থাকবে??
– বাইরে থেকে খাবার কিনে দিবো বাট এখন সময়ের বড় অভাব।
না খেয়েই আমাকে গাড়িতে উঠতে হলো। ও গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার পাশে তোমাকে বসাই না কেনো জানো??
– নাহ, আমার মাথায় তো জট নেই।
– তুমি পাশে থাকলে মনে হবে তাকিয়ে থাকি তারপর এক্সিডেন্ট হবে…!
– ভালো তো মরে গেলেই ভালো। আমার খুদা লাগছে সৌরভ।
– বুজেছি কিন্তু সময় ছিলো না।
গাড়ি তো সে ঝড়ের বেগে ড্রাইভ করতে শুরু করলো। এদিকে পেটে খুদা তার উপর এতো স্পিডে গাড়ি চলছে, কেমন লাগছে বলে বুঝাতে পারবো না।
গাড়ি থেমে গেলো। সৌরভ বলল
– নামো, এখানে নাস্তা করে যাওয়া যাবে।
ছোটোখাটো রেস্টুরেন্ট এর মতো একটা হোটেল। একে হোটেল বলবো না রেস্টুরেন্ট বলবো??
ও বললো
– নিশ্চয়ই কনফিউজড তুমি এটা হোটেল না রেস্টুরেন্ট ভেবে??
– হ্যা, আমি না বুঝতে পারছি না।
– হাফ রেস্টুরেন্ট হাফ হোটেল।
আমরা বাইরে চেয়ার টেবিল পাতা ওখানেই বসলাম।
– শুনো খিচুড়ি অর্ডার দাও আর সাতে ডিম পোঁচ।
– ওকে।
খাবারের জন্য অপেক্ষা করছি ৫-৬ জন ছেলে আমাদের পাশের টেবিলে এসে বসলো।
আমি চুপচাপ বসেই ছিলাম আর ও মোবাইলে কী যেন করছিলো।
ছেলে গুলো খুব বাজে বাজে কথা বলছিলো আর হাসছিলো। বেশিরভাগ কথা গুলোই মেয়েলি বিষয়ক। এইখানে আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে নেই।
সৌরভের সামনে আমার লজ্জা লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো গাড়িতে ফিরে যাই। সৌরভ হয়তোবা খেয়াল করছে। ওর চোখমুখ শক্ত হয়ে যাচ্ছিলো। খাবার খেয়ে নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম।
হাসপাতালে এসে সরাসরি ডাক্তারের কাছে চেকাপ করালাম। মেডিসিন চেঞ্জ করে দিলেন। আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ডাক্তার বললেন
– পুলিশ কেস হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু মিস্টার সৌরভের রিকুয়েস্টে করি নাই। বুঝেছেন??
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি জানালাম। তারপর মেডিসিন কিনে সৌরভ বলল
– আমার অফিসে কাজ আছে।
– আমি কই যাবো??
– তুমি আমার সাথে থাকবা তারপর একসাথে বাসায় যাওয়া যাবে।
ওর অফিস রুমটা সুন্দর বিশেষ করে সাজানোটা।সৌরভ কে বললাম
– চেয়ারে বসে থাকতে হবে??
সৌরভ আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে অফিস রুমের উত্তর কোণার দরজা খুলে ভিতরে নিয়ে গেলো।
– আমার বিশ্রামকক্ষ। তোমার জন্য উন্মুক্ত। এখানে বসে টেলিভিশন দেখো, ফ্রিজে খাবার আছে খাও। আর বোরিং লাগলে আমি তো আছি।
ওর অফিস বিল্ডিং টাও সুন্দর। দোতলা ভবন, নিচতলায় গাড়ি পার্ক করা হয় আর দোতলায় বিশাল হল রুমে কর্মকর্তা রা কাজ করছে।
– এই শুনো না।
– বলো কী বলবা??
– তুমি নিজেই এই ব্যবসা খুলেছো??
– বাবার ছিলো। একা ভালো লাগছেনা এখানে থাকতে??
কথাটা বলে ও আমার কপালের চুলে হাত দিয়ে বিলি কাটতে শুরু করলো।
– নাহ।
ও আরেক হাত দিয়ে প্যান্টের পিছনের পকেট থেকে পিস্তল বের করে বিছানার উপর ছুড়ে মারলো। তারপর বলল
– মেজাজ গরম হয়েছিল এতক্ষণ।
– কেনো??
– থাক বাদ দাও। আমি যাই অনেক কাজ বাকি আছে।
ও চলে গেলো। বিছানার উপর শুয়ে টেলিভিশন ছাড়লাম। কিন্তু ঘুম আসছিলো। তাই টেলিভিশন অফ করে চোখ বুজলাম। চোখ বুজার সাথে সাথেই সেই বিশ্রী হাত ভেসে উঠলো।
সাথে সাথে চোখ খুললাম। কিন্তু আশেপাশে তো কিছুই দেখছি না।

চলবে…..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৮

0

ছায়া নীল!

১৮.

Maria Kabir
আমি বললাম
– নাহ।
সৌরভ বলল
– নিশ্চয়ই মায়ের রান্না খেয়ে চেহারার এই হাল হয়েছে।
কথাটা বলেই হাসতে শুরু করলো। হাসা অবস্থায় বলল
– প্রথম প্রথম খুবই বাজে লাগবে। পরে অভ্যেস হবে তবে জিহ্বার কোনো স্বাদকোরক জীবিত থাকবে না।
– ভালো তো। তুমি তো ছোটোবেলা থেকেই তার হাতের রান্না খাও। তাহলে তো তোমার জিহ্বা বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই।
– তা ঠিক বলেছো। এইজন্য ভেবেছি শেফ বিয়ে করবে।
– মুর্দা জিহ্বাকে পুনরায় জীবিত করার জন্য।
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক ক্লেভার।
– ছাই, তাহলে তো তুহিন লোকটাকেই বিয়ে করতাম। গাধার মতো তোমার জন্য নিজের বিপদ ডেকে আনতাম না।
সৌরভ আমার এ কথার কোনো প্রতি উত্তর দিলো না। আমি সেই ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে মোবাইলে গেমস খেলতে শুরু করলাম।
নাক ডাকলে ঘুম আসে নাকি। ঘুমাতেও ভয় লাগছে আবার সেই হাত যদি।
টেম্পল রান খেলতে মজাই লাগে। তোয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে সৌরভ আমার পাশে বসলো।আমি না দেখার ভান করে খেলায় ব্যস্ত রইলাম। ও আমার আরো কাছে এসে বসলো। আমিও দূরে সরে গেলাম। ও আবারো কাছে এসে বসলো। এভাবে সরে বসতে বসতে একসময় আর জায়গা নাই সরে বসার।
ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
– এগুলা কোন ধরনের শয়তানি??
– শয়তানির কী আছে? তোমার পাশে আমি বসবো না তো কে বসবে?? ওহ তুহিন পাশে বসবে??
– কীসব বাজে কথা বলছো।
– কই, তুমি তো একটু আগেই বললে তুহিন কে বিয়ে করার কথা।
– সেটা পারসোনাল ব্যাপার আমার। তোমার পারসোনাল ব্যাপারে তো আমি নাক গলাই না।
– আমার পারসোনাল বলতে তো তেমন কিছুই নেই।
– সে তুমিই জানো। আমার পাশে থেকে সরো। আমার অসহ্য লাগছে তোমাকে।
– আমাকে এতো তাড়াতাড়ি অসহ্য লাগছে??
আমি চলে যাবার জন্য উঠলাম ও আমার হাত ধরে টেনে পাশে বসালো।
– শেফ বিয়ে করবো তাই এতো রাগ?? বিয়ে করলে কী করবা?
– কিছুই করবো না। চেয়ে চেয়ে দেখবো একটা শয়তান আমার জীবন থেকে বিদায় নিছে।
তারপর সৌরভ ওর প্যান্টের পিছনে হাত দিয়ে কী যেন বের করার চেষ্টা করছে। পিস্তল বের করলো।
জীবনে এই প্রথম কাছ থেকে পিস্তল দেখলাম। পিস্তল হাতে নাড়াচাড়া করছে আর বলল
– এর থেকে ভালো আইডিয়া আমার কাছে আছে।
তারপর আমার হাতে পিস্তল দিয়ে বলল
– এটায় গুলি লোড করা আছে। ৫-৬ টা আছে।
হাতে পিস্তল নিয়ে কেমন ভয় লাগতে শুরু করলো।আমি আস্তে আস্তে বললাম
– তো??
– কিছুনা, যতক্ষণ রাগ থাকবে ততক্ষণ আমার বুকের বামপাশ টাতে একটার পর একটা গুলি ঢুকিয়ে দিতে থাকবা।
– তারপর??
– তাতেও রাগ না কমলে আমার পকেটে আরো গুলি আছে লোড করে নিবা।
– আমি শুট করতে পারি না আর তো গুলি লোড।বাদ দাও তো এসব।
– ভয় লাগছে??
পিস্তল টা সোফায় রেখে দিলাম। মন বলছে ওকে জড়িয়ে ধরে বলি, তোমাকে ছাড়া আমার কী হবে??
কিন্তু আমার ভিতরের কেউ একজন বলছে, না।
– ভয় কেনো লাগবে? যে আত্মহত্যা করার চেষ্টা করতে পারে সে অন্যকে হত্যা কেনো করতে পারবে না?
– তাহলে কী?
– আমি যে বিন্দুকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত আবর্তিত হচ্ছি সেই বিন্দুকে কীভাবে মুছে ফেলি।
– কিন্তু বিন্দু টা তো ভুল বিন্দু।
– নাও তো হতে পারে। আর এইসব বিশ্রী জিনিষ আমাকে দেখাবে না।
– লাইসেন্স করা আর্মস। দেখতেই হবে তোমাকে। আর অভ্যেসও করতে হবে, আমার সাথে থাকছো যে।
– বাহ কী বিরাট যুক্তি। যাও খেয়ে মাথা ঠাণ্ডা করো।
– মার রান্না খাবার খেলে মাথা ঠাণ্ডা হবেনা, গরম হবে।আমি খেয়ে এসেছি।
তারপর কিছুক্ষণ চুপচাপ কাটলো। ও কীভাবে যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন অস্বস্তিকর লাগছিলো। বাধ্য হয়ে বললাম
– প্লিজ ওভাবে তাকিয়ে থেকো না।
– তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে।
– এটা তো আগেও ছিলাম। নতুন কোনো কথা না।
– হ্যা কিন্তু কিছু কিছু সময় সেই সৌন্দর্য টাকে অন্যরকম লাগে। দেখোই না চাঁদ কে প্রতিনিয়ত দেখছি কিন্তু সবসময় তো সুন্দর লাগে না।
– বুঝলাম, কিন্তু আমার এই কালি পরা চোখ বিশিষ্ট চেহারায় নতুন কোনো সৌন্দর্য নামক কিছুই নাই।
– মনে পড়েছে তোমাকে ডাক্তারের কাছে আবার যেতে হবে।
– আবার লং জার্নি উফফ। ঘুমাবা না??
– নাহ দুপুরে লম্বা ঘুম দিয়েছি। জানি তুমি আজকেও ঘুমাতে দিবা না।
– নাহ আজকে ফুপুর পাশে ঘুমাবো তাই সমস্যা নেই। তুমি ঘুমাও।
– আজকে গতকালের যুক্তি খাটছে না। অন্যকিছু।
– বুঝেছি, সারারাত বসে বসে আমাকে হা করে দেখবে।
– হুম। দেখবো তুমি কী দিয়ে তৈরি? এতো ভালবাসতে কীভাবে পারো?? আমার আগের সে তো ভালবাসতে পারেনি।
– যাও তো ঘুমাও। আর আমাকেও যেতে দাও।

পুরো পাগল, আর আমার চেয়েও জেদি। পিস্তল নিয়ে হাজির। ফুপুর পাশে শোয়ার পর নাক ডাকার শব্দ কানে আসছে। আলাদা একটা ছন্দে নাক ডাকছে।আহা, এযে মহান ছন্দময় সুর।
শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম ভাঙলো ফুপুর ডাকে।
– এই ওঠ, ডাক্তারের কাছে যাওয়া লাগবে বলে??
– হুম। কয়টা বাজে??
– ৯ টা। সৌরভ এখনি চলে যাবে। তাড়াতাড়ি ওঠ……

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল। ১৭.

0

ছায়া নীল।

১৭.

Maria Kabir
সকাল যখন হলো তখন সৌরভ বলল
– ঘুমাও তো।
– নাহ নাহ আমি এই বাড়িতে ঘুমাতে পারবো না।
– দেখো আমি আর মা এখানে ১০-১২ বছর যাবত আছি। আমরা তো কিছুই দেখতে বা অনুভব করতে পারিনি।
– আমি সত্যি বলছি, সত্যি একটা হাত…
– শারলিন তোমার ভুল। অনেক স্ট্রেসে আছো তাই এরকম আবোলতাবোল স্বপ্ন দেখেছো।
– আমাকে একটা মহিলা হোস্টেল খুঁজে দাও। আমি চলে যাই।
– দেখো আমার ব্যবসায় লাল বাতি জ্বলছে। তোমার জন্যে একমাত্র।
– শুরুটা তুমি করেছিলে।
– আমার ব্যবসা ঠিক করে যখন সময় পাবো তখন খুঁজে দেখবো। তোমার মতো মেয়ের জন্য আমি আর সময় নষ্ট করতে পারবো না।
– তোমার খুঁজতে হবেনা। আমিই খুঁজে নিবো। আমাকে শুধু আমার বাসায় দিয়ে আসো।
– আমি তোমাকে একটু আগেই বলেছি, তোমার জন্যে আমার সময় নেই। বহুত ফাজলামি করেছো এখন আর না।
আমার আর সহ্য হচ্ছে না। ওর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় এসে বসলাম।
সত্যি মা ঠিকি বলে, আমি খুব খারাপ। আমিই চলে যাবো এখান থেকে। গন্তব্য হীন ভাবে হেটে যাবো মরলে মরবো বাচলে বাঁচবো। তাও যারা আমাকে ঘৃণা করে তাদের কাছে থাকবো না।
সোফার সামনে রাখা টিটেবিলে পাউরুটি আর কলা রেখে সৌরভ বলল
– আমি বের হচ্ছি এই বাড়ি থেকে এক পা বের হলে তোমার পা ভেঙে ঘরে বসায় রাখবো।
– আমাকে খুঁজে পাবে কোথায়?
– সেটা আমি বুঝবো।খেয়ে নিবে। রাগ আমার সাথে খাবারের সাথে না।
সৌরভ দ্রুত চলে গেলো। গাড়ির শব্দ পেলাম। তারপর খেয়ে নিলাম। মেডিসিন খেয়ে ওর রুমে রাখা আয়নায় নিজেকে একটু দেখছি। চেহারা আর চেহারা নেই। চোখের নিচে কালি পরেছে। চুল রুক্ষমূর্তি ধারণ করেছে। আয়নায় কারো যেন ছায়া দেখতে পেলাম।গতকালের রাতের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। পিছনে ফিরে দেখি ফুপু। ফুপু আমাকে বলল
– কিরে কিছু খেয়েছিস?
– হুম।
– একটু অসুস্থ ছিলাম তো তাই দেরি হলো উঠতে।
– ঠিক আছে ফুপু।
ফুপু খুব সুন্দর, আমার তো মনে হচ্ছে ফুপু আমার কপি।
ফুপু বলল
– তুই আমার দর্পণ। মনে হচ্ছে বয়স্ক নূরের সামনে ১৯ বছরের নূর দাঁড়িয়ে আছে।
– আপনি বেশি সুন্দর।
– নাহ রে সমান সমান। আমি আমার সৌরভের জন্য এমন একটাই মেয়ে খুজছি।যাই হোক বাদ দে, কী খাবি দুপুরবেলা??
– আপনার ইচ্ছা।
– আচ্ছা তুই আমার সাথে সাথে থাকবি। রান্নাবাড়া দেখলে শিখতে পারবি।
ফুপু বেশি কথা বলেন না। পুরো বাড়িতে আমরা দুজন।
দুপুরবেলা খাওয়ার সময় ফুপু বলল
– দুপুরে একা খেতে হয়। ভালো লাগেনা। আমার একজন সংগী হলো।
– সৌরভ ভায়া আসে না?
– ওর কোনো ঠিক নাই। সেই সকালে যায় আর রাতে ফিরে। তাও গভীর রাতে।
– আপনার কষ্ট হয়না?
– অভ্যেস হয়ে গেছে।
খাবার মোটেও ভালো হয়নি। খুব কষ্ট হলো খেতে। খাওয়ার পর খুব অস্থির লাগছিলো। ফুপু আর আমি রাতে খেয়ে শুয়ে পরলাম। গেস্ট রুমের চাবি ফুপু খুঁজে পাচ্ছেনা। তাই আমাকে তার রুমেই ঘুমুতে হলো।
শোয়ার সাথে সাথে ফুপু নাক ডাকতে শুরু করলো। গতকালের ভয় আর এই নাক ডাকাতে ঘুম আসছে না।
মেইন গেট খোলার শব্দ পেলাম। ফুপুর পাশ থেকে নীরবে উঠে রুম থেকে বের হলাম।
সৌরভ জুতা খুলছিলো।
আমাকে দেখে বলল
– কী খুব miss করেছো তাই না???

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৬

0

ছায়া নীল!

১৬.

Maria Kabir

আমি বললাম
– এতো দূরে থাকার কারণ??
– মা নিরিবিলি থাকতে পছন্দ করেন।
– আচ্ছা তুমি পড়াশোনা করো নাকি চাকরী?
– আমি তোমার মতো বাচ্চা না। আমার গ্রাজুয়েশন ৩ বছর আগেই কমপ্লিট। এখন ব্যবসা করছি।
– আমি বাচ্চা না। তুমি তো বেশ বয়স্ক!
– হ্যা বুড়ার প্রেমেই তো পড়েছো।শুনো বাড়ির মধ্যে জোড়ে কোনো শব্দ করবে না। মা ঘুমুচ্ছে।
কথাটা বলে সৌরভ আমাকে নামিয়ে দিলো। রাতের অন্ধকারে ভালো বুঝতে পারলাম না বাড়িটা দেখতে কেমন। তবে যতটুকু বুঝলাম তাতে শিওর বেশ পুরাতন বাড়ি।
ডুপ্লেক্স সিস্টেম বাড়ি। সৌরভ বলল
– গেস্ট রুম টা তালা দেয়া আর চাবি মায়ের কাছে।
– তাহলে কই থাকবো? ফুপুকে ডেকে চাও চাবিটা।
– নাহ, তুমি আমার রুমেই ঘুমাও। আমি ড্রয়িংরুম এ সোফায় বেশ চালিয়ে নিবো।
– নাহ নাহ তুমি তোমার রুমে ঘুমাও, আমিই সোফায়….
– আমাদের তো হরোর মুভি দেখার কথা তাই না?
– হুম।
হরোর মুভির নাম শুনলে আমার যেমন ভয় লাগে তেমনিভাবে ভালোও লাগে। বাড়িটা এতো পুরাতন যে দেয়ালে ইট দেখা যাচ্ছে। লাইটের আলোও কেমন তেজ ছাড়া।
সৌরভ গাড়ি গ্যারেজে রাখতে গেছে। এই ফাকে একটু জামা কাপড় পাল্টে নিলে ভালো হতো।
কিন্তু হাতের দিকে তাকাতেই চিন্তাটা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললাম।
এই বাড়িতে মনেহয় আর কেউ থাকে না। কাজের লোক কাজ করেই চলে যায়। ড্রয়িংরুমের সাথেই ডাইনিং রুম।ছোট্ট টেবিল আর দুটো চেয়ার। আমার হুট করে বাগানের ভিতর হারিয়ে যাওয়ার কথা মনে পড়ে গেলো। আমি তো ওর পিছনেই ছিলাম।
পিছন থেকে সৌরভ বলল
– তোমার হাতের ডান পাশে আমার রুম। রুমে গিয়ে রেস্ট নাও।
ওর রুমে ঢুকে মেজাজ বিগড়ে গেলো। এতো অগোছালো কেউ কীভাবে হতে পারে?
বিছানার উপর ওর কাপড় চোপড় দিয়ে ঠাসা। মেঝেতে পা দিতেই গা সিরসির করে উঠলো। এতো ময়লা!
সৌরভ বলল
– তোমার ঝামেলায় আমার রুম গোছানো বন্ধ হয়ে গেছে।
– মাতাল হয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে তো রুমের প্রয়োজন কখনওই হবেনা। তাই এত নোংরা।
ও আর কোনো কথা বলল না। বিছানার উপর থেকে কাপড় চোপড় নিয়ে চলে গেলো। তারপর এসে বিছানা ঝেড়ে বালিশ ঠিক করে রেখে আমাকে বলল
– মশার সমস্যা নাই, তুমি ঘুমাও।
– আর তুমি?
– আমি তো মাতাল। মাতালের আর কী?
– আমি মজা করে বলেছি।
– অনেক রাত হয়েছে এখন আর মজা করার সময় না।
– মুভি???
– নাহ আমার ভালো লাগছে না।
ও চলে গেলো। আমিও আর ডাকলাম না। শুয়ে পরলাম।
হঠাৎ মনে হলো কেউ আমাকে ধরতে আসছে।
খুবই বিশ্রী একটা হাত। কিন্তু হাত টা যে কার সেটা দেখা যাচ্ছে না। আমি সরে যাওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। আর হাতটাও আমার খুব কাছাকাছি চলে এলো। আমার কাটা হাতটা ধরলো। ব্যথায় কুঁকড়ে উঠলাম।
এতো শক্ত করে হাত ধরেছে যে আমি ছাড়াতেও পারছিলাম না।আমার পুরো শরীর ভার হয়ে যাচ্ছে।
সৌরভের কণ্ঠ শুনতে পারলাম। আমাকে ডাকছে
– শারলিন, শারলিন….
আমি উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি পারছি না।
শরীর আর আগের মতো ভার মনে হচ্ছে না।চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি সৌরভ চিন্তিত মুখে দাঁড়িয়ে আছে।
– কী হয়েছে? তোমার শরীর ঘেমে ভিজে গেছে।
আমিও অবাক হলাম আমার শরীর ভেজা।
– আমি বুঝতে পারছিনা। মনে হলো একটা বিশ্রী হাত আমাকে ধরতে আসছে। জানো নীল আমার কাটা হাতও ধরেছিলো।
সৌরভ সাথে সাথে আমার কাটা হাত নিয়ে কী যেন দেখলো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে।
তারপর বলল
– আরে কিছুই না। আসার পর থেকে চিন্তাই করে গেছো যে বাড়িটা ভূতের তাই অদ্ভুত স্বপ্ন দেখেছো।
– নাহ নাহ সত্যি বলছি।
– হয়েছে বুঝেছি। এখন চুপ থাকো। তোমার গোঙানির আওয়াজে আমার ঘুম ভেঙে গেছে।
– আমার এখানে থাকতে ভালো লাগছে না। তুমি আমাকে একটা মেয়েদের হোস্টেল খুঁজে দাও। বাবা সব টাকা দিয়ে দিবে।
– এতো রাতে কই পাবো? তার জন্যে তো দিন হতে হবে।

পুরো রাত আমি আর ও জেগে রইলাম। ভুলেও আমি চোখের পাতা এক করিনি। যে ভয়টা পেয়েছি তাতে আমার এই বাড়িতে থাকার সাহস নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! 15

0

ছায়া নীল! 15

Maria Kabir

গাড়ির স্পিড আবার বেড়ে গেলো। সৌরভ কে বললাম
– আরে কমাও না প্লিজ।
– দেখো আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। স্লো স্পিডে চালালে অনেক রাত হয়ে যাবে।
– কই থাকো তোমরা?
– একটু শহর থেকে দূরে গ্রামের কাছাকাছি। সিট বেল্ট বেধে নাও।
জানালা দিয়ে রাতের শহর দেখছিলাম। ও দেখতে খারাপ না। তবে স্মার্ট, লম্বা, গায়ের রঙ শ্যামলা। তবে চলাফেরাতে একধরনের আভিজাত্য প্রকাশ পায়। ও দেখতে যেমনি হোক না কেনো, আমি ওকে ভালবাসি। গাড়ি থেমে যাওয়াতে একটু সামনে ঝুকে গেলাম।
আমি বললাম
– চলে এসেছি?
সৌরভ হেসে বলল
– নাহ। যেতে অনেক দেরি।
– তাহলে থামলে যে??
– কী খাবে বলো?
– না কিছুই খাবো না।
– দেখো শারলিন, পরে খুদা লাগলে কিন্তু ভালো কিছু পাবা না। এটাই লাস্ট ভালো খাবারের হোটেল।
– আমি আসার আগেই খেয়েছি।
– যদি খুদা লাগে আর আমার কাছে খাবার চাও তো পুকুরে ফেলে দিয়ে চলে যাবো।
সৌরভ গাড়ি থেকে নেমে গেলো।
কথায় কথায় রাগ দেখানো একটা বদ অভ্যাস। ওর সাথে বাধ্য হয়ে যাওয়া। এর থেকে তুহিন লোকটাকে বিয়ে করলেই হতো। কত শান্তিতে থাকতাম।
হাতে খাবারের প্যাকেট নিয়ে গাড়িতে ঢুকলো। ও বলল
– খবরদার খাবারের দিকে তাকাবা না।
– আমার ওরকম স্বভাব নেই।
গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলল
– আমার প্রথম প্রেমিকা ছোঁচা ছিলো। বিশ্বাস করবা না শারলিন। ঘুরতে বের হলেই তার খুদা লেগে যেতো। আর আমার পকেট ফাকা হতো।
– হ্যা, তোমার ভালবাসার মানুষের জন্য তুমি সামান্য টাকা ভাঙতেই পারো।
– হ্যা, জীবন দিলেও বা কী? তুমি যেমন টা করেছো।
– অনেক বড় ভুল করেছি। বিয়েটা করে নিলেই হতো। মাও রাগ হয়ে বাড়ি ছেড়ে চলে যেতো না আর বাবাকে এতো কষ্ট করতে হতো না।
– তোমার মা তো সেরা পাব্লিক।
আমি আর কিছুই বললাম না। আমার মৃত্যুই এখন সবাইকে শান্তি দিবে। মাও বাঁচবেন সৌরভ ও।
প্রায় ১ ঘণ্টা পর আমার মোবাইলের রিংটোন বেজে উঠলো। আফরোজার ফোন। রিসিভ করলাম। আফরোজা বলল
– কিরে কেমন আছিস?
– আছি ভালোই। তুই?
– ভালো। আংকেল বাসায় এসেছিলো।
– কী বলল?
– তোকে তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠানোর কথা।
– হুম। রাখি, পরে কথা বলবো।
সৌরভ কোকাকোলার মাঝারি বোতল আমার দিকে ছুড়ে দিয়ে বলল
– ক্যাচ।
ক্যাচ ধরতে গিয়ে কাটা হাতের উপর বোতল এসে পরলো।
কাতরে উঠলাম, মুখ দিয়ে ব্যথা পাওয়ার উঁহু শব্দ বের হয়ে আসলো। আর ব্যান্ডেজ লাল হয়ে যাচ্ছিলো। সৌরভ গাড়ি থামিয়ে পিছনে এসে আমার পাশে বসলো। তারপর বলল
– ক্যাচ ও ধরতে পারো না।
– পারি তো কিন্তু হাতে যে ব্যথা।
রক্তে ব্যান্ডেজ ভিজে যাচ্ছে। ও ব্যান্ডেজ খুলে ফেলল। আমার ওড়নার এক পাশ দিয়ে রক্ত মুছে দিয়ে ওর প্যান্টের পকেট থেকে রুমাল বের করে হাত বেধে দিলো।
তারপর বলল
– বাসায় গিয়ে আমি ব্যান্ডেজ করে দিবো। তুমি কীভাবে হাত এভাবে কাটতে পারলে?
হাত ধুয়ে খাবারের প্যাকেট থেকে খাবার বের করে বলল
– মা রান্না করেছে কিনা ঠিক নেই। তাই এখন খেয়ে নাও।
ফাস্টফুড এনেছি। সবজির স্যুপ টা খাও।
কিন্তু বাটি ধরলাম এক হাতে কিন্তু খাবো কোম হাত দিয়ে? ওই হাত তো নাড়াতেই পারছি না।
আমার এই অবস্থা দেখে ও আমার হাত থেকে বাটি নিয়ে বলল
– আমি খাইয়ে দেই। আমার জন্যেই তো নিজেকে শেষ করে দিয়েছো।
১০.৩০ টায় পৌছালাম। এত অন্ধকার আশেপাশে।ও বলল
– আমার পিছনে পিছনে আসো।
গাড়ি থেকে নেমে দেখলাম গাছপালা দিয়েই ভরা।
– শুনো না?
– বলো।
– বাড়ি কই তোমাদের?
– একটু ভিতরে। আগে বাগান তারপর…
– লাইট তো নেই, এতো অন্ধকার।
– মা লাইট জ্বালাতে ভুলে গেছেন।
ওর পিছনে হাটছি, এতো বড় বড় গাছ। ঝিঝিপোকার ডাকে পরিবেশ থমথমে হয়ে গেছে।
একটু পর মনে হলো ও আমার সামনে নেই। কই গেলো?
অন্ধকারের মধ্যে ওর হাতের টর্চের আলোতেই যাচ্ছিলাম। এখন সেই আলোও দেখছি না আর ওকেও দেখছি না।
হাতে মোবাইল এতবার লক বাটন চাপলাম কিন্তু ফোনে আলো জ্বললো না।
খুব ঘামতে শুরু করলাম। আমি এগোতেও পারছি না আমার পিছাতেও পারছিনা। কাটা হাত থেকে মনে হচ্ছে রক্ত পরছে।
আশেপাশে তাকিয়ে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখতে পারছিনা।
দূর থেকে একটা ছায়া আমার দিকেই আসছে। ছায়া দেখে মনে হলো, ও আসছে।
আমার কাছেই এসে বলল
– তুমি এখানে কেনো?
বাসার ভিতরে ঢুকে পিছন ফিরে দেখি তুমি নেই।
– তুমিই তো আমাকে ছেড়ে চলে গেলে।
– মজা করার সময় এখন না।
– আমি মজা করছিনা। সত্যি আমি তোমার পিছনেই ছিলাম কিন্তু হুট করে তুমি উধাও হয়ে গেলে।
– আমি তো ভূত তাই না?
– হতেও পারো। যা যা করে আসছো এতদিন তাতে তো স্বাভাবিক মানুষ মনে হয়না।
– বাসায় গিয়ে আলোচনা করা যাবে।আমার পিছনে পিছনে আসো।
– তুমি এবারো আমাকে ফেলে চলে যাবা।
আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বলল
– এবার উধাও হলে একসাথে হবো।
– একি এই অবস্থায় কেউ দেখলে?
– মা ঘুমাচ্ছে আর কেউই নেই। শারলিন তুমি অনেক হাল্কা।
– হয়েছে হয়েছে আমাকে নামাও।
– চুপ থাকো।
ও হাটছে আমি বললাম
– তোমাদের বাড়িটা না হরোর মুভিতে দেখানো বাড়ির মতোই।
– তুমি এখনো বাড়িটা দেখোনি।
– ঠিক কিন্তু গাছপালা আর বাড়িতে যেতে..
– পাগলী একটা। অতিমাত্রায় হরোর মুভি দেখার ফলাফল।
– আমার মজা লাগে দেখতে।
– আমার কাছে আছে। আজকে দেখা যাবে একসাথে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৪.

0

ছায়া নীল!

১৪.

Maria Kabir

খাবার যা এনেছে তাতে মনে হচ্ছে বাবা না খেয়েই মার ওখান থেকেই এসেছে। দুটো প্লেটে খাবার বেড়ে টেবিলে রাখলাম। খাবার পানিও প্রায় শেষ। বাইরে টিউবওয়েল আছে ওখান থেকে পানি আনতে হবে। পানির জগ হাতে নিয়ে টিউবওয়েল এর কাছে আসার পর দেখলাম বাবা চোখেরজল মুছছে আর কথা বলছেন ফোনে।
বাবা যদি দেখে ফেলে আমি তাকে এই অবস্থায় দেখে ফেলেছি তাহলে অনেক লজ্জা পাবে। তাই না দেখার ভাব করে টিউবওয়েল থেকে পানি নিলাম। এক হাত দিয়ে কাজ করা কতো যে কষ্ট বুঝতে পারছি। এর থেকেও কষ্ট মনে।
টেবিলে বসে বাবার জন্য অপেক্ষা করছি। আমার ফোন বেজে উঠলো। সৌরভ ফোন করেছে।
রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করলাম। আমি বললাম
– কেনো ফোন করেছো?
– আরে ফোন ধরেই ধমক?
– কী কারণে ফোন করেছো?
– শুনলাম আমাদের বাসায় নাকি আসতেছো?
– হুম। তো?
– আমাদের বাসায় তুমি আসবা না। বড় মামাকে বলো যে,তুমি ওই বাড়িতে যাবে না।
– কেনো আসবো না তোমাদের বাসায়?
– সে কৈফিয়ত আমি তোমাকে দিতে বাধ্য নই।
– আমি তোমাদের বাসায় যাবো না যাবো সেটা আমার ব্যাপার।
– মানে তোমার লজ্জা বলতে কিছু নাই? আমার বাসায় আসতে নিষেধ করছি। আর তুমি বেহায়ার মতো আসার জন্য পাগল হয়ে আছো।
– শুনো আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ। অস্বাভাবিক মানুষের লজ্জা থাকেনা। লজ্জা থাকলে তোমার মতো নিচু প্রকৃতির মানুষের সাথে কথা বলতাম না।
– nonsense কোথাকার।
আমি বলতে যবো আর ফোন কেটে দিলো সৌরভ।
বাবা আসছেন মনেহয়। বাবা বললেন
– খেয়ে নে মা। তোকে আজকেই পাঠিয়ে দিবো।
– বাবা তুমিও তো খাওনি।
বাবা আর আমি খেয়ে নিলাম। বাবা বললেন
– তোর ব্যাগ গুছিয়ে রাখ আর মেডিসিন নিতে ভুলিস না। সৌরভ এসে নিয়ে যাবে।
– তুমি নিয়ে গেলেই তো হয়।
– আমি চিনি না রে মা।
বাসার জামা কাপড় পড়েই যাবো। আমার এখন আর সাজগোজ এর মন নেই।
ব্যাগ গুছিয়ে মোবাইল হ্যান্ড ব্যাগে রাখলাম। বাবা বলল
– সৌরভ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে।
বাবা ব্যাগ নিয়ে আগে আগে গেলে। বাবা বলল
– দরজা টা ভালোভাবে লক কর। চাবি এই নে।
বাবা বেড়িয়ে গেলেন আমি লক করে চাবি নিয়ে বাবার পিছনে পিছনে ছুটলাম।
বাবা একটা সাদা রঙের গাড়ির কাছে গিয়ে থেমে গেলে।
বাবা কার সাথে যেন কথা বলছে। কাছে গিয়ে দেখি ড্রাইভার সিটে সৌরভ বসা। সৌরভ বলল
– শারলিন তুমি পিছনে বসো।
বাবাকে বলল
– বড় মামা আপনিও বসুন আপনাকেও পৌঁছে দেই।
বাবা বলল
– নাহ বাবা, আমার মেয়েটার একটু খেয়াল রেখো। তোমার মামী একটু শান্ত হলেই ওকে নিয়ে আসবো।
সৌরভ বলল
– বড় মামা সমস্যা নাই। ও যতদিন ইচ্ছা থাকবে।
বাবা বলল
– তাহলে যাও বাবা।
সৌরভ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে এতো দ্রুত গাড়ি ছুটালো যে মনে হলো ওর ট্রেন ছুটে যাবে। আমার এতো গতিবেগে শরীর খারাপ লাগছে। সৌরভকে বললাম
– স্লোলি ড্রাইভ করো।
সৌরভ বলল
– আমি এভাবেই ড্রাইভ করি। অভ্যাস করে নাও।
– সৌরভ আমার খারাপ লাগছে।
– কবে তোমার ভাল লাগছিলো?
মনে হচ্ছে গাড়ি একটু স্লো করেছে ও।
– ঝড়ের বেগে কেউ ড্রাইভ করে?
– কেউ বেড়াতে গেলে ফকিন্নির মতো কাপড় পড়ে?
– আমি তো অস্বাভাবিক মানুষ।
– পাইছো এক ডায়লগ। আল্লাহ আমি কোন মুখে এই কথাটা বলছিলাম।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১৩

0

ছায়া নীল!

১৩.

Maria Kabir
– আচ্ছা স্বভাবে কি ভালবাসা থাকে না?
– থাকতেও পারে।তোমার সাথে আর কয়দিন এভাবে দেখা সাক্ষাৎ হতে থাকলে সত্যি আমি আবার প্রেমে পড়বো। তবে এবারকার প্রেম হবে ভয়াবহ।
– প্রেম আবার ভয়াবহ হয় নাকি?
– তুমি যা করেছো সেটা কি ভয়াবহ নয়? কোনো স্বাভাবিক মানুষ নিজের দেহকে ক্ষত বিক্ষত করতে পারে না।
– তুমি বলতে চাচ্ছো আমি অস্বাভাবিক?
– হ্যা। যাই হোক বাদ দাও। আমি আপাতত তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না।
– বাবা আর মা চলে আসবে এখন এখান থেকে ভাগো।
– হ্যা যাচ্ছি। মোবাইল টা নিয়ে আসো।
মোবাইল টা এনে ওর হাতে দিলাম।
সৌরভ হেসে বলল
– একটা মিথ্যা কথা বলেছি তোমাকে।
– কয়টা বলেছো তা কি আমি জানি? একটার বেশিও তো হতে পারে।
– নাহ একটাই বলেছি। সেটা হলো, তোমার পরে আর কোনো মেয়ের সাথে আমি জড়াই নেই।
– বললা কেনো?
– ভাবলাম তোমার প্রতিক্রিয়া টা কেমন একটু দেখা দরকার।
– আর কোনো মিথ্যে কথা বলেছো?
– নাহ। দুপুরে অনেক ঘুমাবা।
– কেনো?
– রাত জাগতে হবে। সারারাত ফোনে কথা বলবো।
– আমার পক্ষে সম্ভব না। আমি অসুস্থ।
– তোমার চোখে আমার জন্যে যা দেখেছি সেটা মিথ্যে না।
– আমি তোমার মতো মিথ্যে বলি না।
– ১ টাই বলেছি তাতেই মিথ্যেবাদী?
– ওই কথায় আমি খুব কষ্ট পেয়েছি।
আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল
– আহারে। Sorry শারলিন আর হবে না।
– আমাকে ছাড়ো। ভালবেসে আমাকে স্পর্শ করবে। যদি না পারো তাহলে স্পর্শ করবে না।
– আচ্ছা আচ্ছা ছেড়ে দিলাম।
এই কথা বলে আমাকে ছেড়ে দিলো। তারপর সৌরভ চলে গেলো।
দরজা আটকে দিয়ে বাবা আর মা আসার অপেক্ষায় রইলাম। দুপুর গড়িয়ে প্রায় বিকাল হচ্ছে বাবার খোজ নেই। এদিকে আমি রান্নাও করতে পারছি না। খুদায় অসহ্য লাগছিলো। এক হলো মনের অশান্তি ২য় হলো শরীরের যন্ত্রণা।
বিকালবেলা কলিংবেল বাজলো। বাবা এসেছে মনে হয়। সাথে মাও এসেছে মনে হয়।
দরজা খুলে দেখি বাবা একা। বাবার চেহারা দেখেই বুঝতে পারলাম ঝামেলা একটা হয়েছে। বাবার হাতে খাবারের প্যাকেট।
দরজা আটকে দিয়ে বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম
– মা আসেনি?
বাবা বললেন
– তুই এই বাড়িতে থাকলে সে আসবে না।
কথাটা শুনে বুঝতে পারলাম, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। বাবা আমাকে অনেক ভালবাসেন। আমার সব ভুল, দোষ ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখেন।
কিন্তু মা আমাকে পছন্দ করেন না। বুঝতে শেখার পর থেকেই বুঝেছি।
মা চাইতেন ছেলে হোক। কিন্তু মেয়ে হলো।আমার পরে তার একটা ছেলে হয়েছিল কিন্তু সে জন্মের পরেই মারা যায়। এরপরে মা আর কোনোদিনও সন্তান নিতে পারলেন না। তার নাকি রক্তে আরএইচ প্রব্লেম না কী যেন আছে।
সে আমাকে এমনিতেই পছন্দ করতো না তার উপর আমার চেহারা নাকি মেজো ফুপুর মতো।
আর আমিও কোনোদিন মা পছন্দ করে এমন কাজও করিনি। তাই আমার প্রতি মায়া তার কমেছে দিনদিন, বাড়েনি।
বাবাকে বললাম
– তুমি আমাকে ছোটো ফুপুর বাসায় কয়েকদিনের জন্যে রেখে আসো। মার রাগ ঠাণ্ডা হলে আমি চলে আসবো।
– বলেছিলাম তোর ছোটো ফুপুকে কিন্তু সে রাজি হয়না। বলে, ওরকম পাগল খারাপ মেয়ে আমার বাসায় আনবো না। কোনো দুর্ঘটনা ঘটিয়ে বসলে, দায়ী কে হবে?
– বড় খালা তো মায়ের মতোই। সে তো আমাকে আগাগোড়াই পছন্দ করেন না।
– কী বলবো রে মা, কপাল আমার তোমার মায়ের মতো একজন বউ পাইছিলাম। পুরো জীবন কষ্ট করতে করতেই গেলো আমার। এই পুরো সম্পত্তি তোর মায়ের নামে। চাইলেও তো তাকে তালাক দিতে পারছি না। চাকরী যা করি তাতে তোর আমার চলবেও না।
– বাবা আমাকে কোনো হোস্টেলে পাঠিয়ে দাও।
– তোর মেজো ফুপুর বাসায় পাঠিয়ে দেই কয়েকদিনের জন্য।
– মেজো ফুপু?? উনি রাজি হবে তো?
– দেখি। খাবার টা খেয়ে নে। আমি কথা বলে আসি।
বাবা চলে গেলেন ফোন হাতে নিয়ে।
আমার জীবন টা এমন হয়ে গেলো? নিজের বাড়িতে নিজেই থাকতে পারছি না। সম্পত্তি বাবারই কিন্তু মা তার নিজের নামে লিখিয়ে নিয়েছেন যদি ছেলের আশায় আরেকটা বিয়ে করেন তখন কী হবে?
আমার জীবন টা একটা অদ্ভুত বিন্দুকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আমি জানিনা, আমার বাবা কবে সুখের দেখা পাবেন!
আমার নিজের সুখ তো নিজেই ধ্বংস করেছি। আমার জন্মটাই অলক্ষুণে।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১২

0

ছায়া নীল!

১২.

Maria Kabir
সৌরভ গ্লাসের পানিটুকু এক চুমুকে শেষ করে টেবিলের উপর গ্লাস রেখে বলল
– উমম তোমার কী মনে হয়??
– আমি তোমাকে প্রশ্ন করেছি। তার উত্তর দাও।
গ্লাসটাকে হাত দিয়ে নড়াচড়া করছে, তারপর কিছুক্ষণ ভাবলো। কী ভাবছে জানি না। আমি বললাম
– কী উত্তর দিবে?
– তুমি আমার ২য় নাম্বার প্রেমিকা!
– আমার পরেও তো অনেক আছে তাই না?
– হ্যা আছে।
– তোমার প্রথম প্রেমিকার নামটা শুনি? আর ব্রেকাপ এর কারণ?
– নাম? আচ্ছা তুমি পুরোনো কথা উঠাচ্ছো কেনো?
– উত্তর চাই আমি বুঝেছো?
– ওর নাম বৃষ্টি ! ব্রেকাপ এর কারণ, “আমাকে তার আর ভালো লাগেনা। এক জিনিষ আর কতদিন?? আমার সাথে নাকি তার কোনো মিলই নেই! আমার প্রতি তার আর কোনো ফিলিংস নেই! ”
– শুধু ওর দোষ দিচ্ছো কেনো? তোমার দোষ নেই বুঝি?
– নাহ ছিলোনা, কারণ ও আমার প্রথম ভালবাসা। আমার জীবনে যখন ভালবাসা নামক অনুভূতি টা ওর হাত ধরেই এসেছে। ওকে আমি যতোটা ভালবেসেছি, ততোটা তোমাকে অনন্তকাল ভরেও বাসতে পারবো না।
– আমার পরে কারা আছে শুনি না তাদের নাম?
– এতো নাম মনে নাই। ফোনে নাম্বার সেভ করা আছে পরে দেখে নিও।
– আমার এখানে কেনো এসেছো?
সৌরভ মনে হলো অবাক হয়েছে আমার প্রশ্নে!
– আমার মামা বাড়ি তাই এসেছি।
– এতদিন কেনো আসনি? হঠাৎ আমার বিয়ের দিনই হাজির??
অনেকক্ষণ চলে যাবার পরও এই প্রশ্নের উত্তর পেলাম না। ও গ্লাস টাকে নিয়েই ব্যস্ত আছে। আমার সাথে তাহলে এত নাটক করার কী দরকার ছিলো? আমাকে যদি ভাল নাই বাসতে পারলো তাহলে আমার এখানে কেনো এসেছে?
আমি দ্রুত চেয়ার ছেড়ে উঠতে গিয়ে টেবিলের সাথে কাটা হাতে ব্যথা পেলাম। কী যে অসহ্যকর ব্যথা। সৌরভ সাথে সাথে উঠে আমার হাত ধরে বলল
– একটু সাবধানে থাকলেই পারো।
আমি ওর হাত ছাড়িয়ে দিয়ে বললাম
– যথেষ্ট হয়েছে নাটক আর ভাঁওতাবাজি। আমার সাথে অনেক মজা করা হয়েছে তোমার। এখন আর নাটক করতে হবে না।
– সত্যিটাই তো বললাম। আর যাকে আমি ভালবাসি তার কথা শুনতে চেয়েছো তাই বলেছি।
– খুব সহজ না তোমার কাছে এসব তাই না?
– আরে আমি তো জাস্ট মজা করেছি স্বপ্নে, আর তুমি সেটাই সিরিয়াসলি নিয়ে এতো মহাকান্ড করে বসলে।
– তোমার কাছে মজা ছিলো, আমার কাছে না।
– দেখোই না বৃষ্টি আমাকে ছ্যাকা দিয়েছে বড়লোক এক ছেলের জন্য। আমি তো তার বাস্তব জগতের ছিলাম তাও চলে গেলো।
তাই আমি ভাবলাম তুমিও তাই করবে।
– বের হও বাসা থেকে এখনি।
– আহারে সত্য কথা সহ্য হচ্ছে না। আমার আরো অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক আছে। তবে তোমার ঝামেলার জন্য তাদের সময় দিতে পারছি না।
– তুমি গতকাল বললা, আমাকে ভালবাসো। আবার আজকেই এই কথা বলছো?
– আরে ওটা সান্ত্বনা ছিলো। তা না হলে পরের মেয়ে মইরা গেলে একটা বিশ্রী ব্যাপার।
– আমার তোমার সান্ত্বনা লাগবে না। ধ্বংস তো করেই ফেলছো আমাকে, এখন কীসের জন্য ওয়েট করছো?
– আসলে আমি নিজেও জানি না কী কারণে আমি এখনো তোমার আশেপাশে? আমি চাচ্ছি চলে যেতে বাট পারছি না। কিছু একটা তোমার দিকে আমাকে টানে। আগে তো একটা নেশার মতো ছিলা।
– নেশা কেটে গেলে আমিও কেটে যাবো।
– দারুণ একটা কথা বলেছো। নেশা না কাটা পর্যন্ত আমি যাচ্ছি না।
আমি রান্নাঘরে গিয়ে তরকারি কাটার চাকু এনে ওর হাতে দিয়ে বললাম
– তোমার তো যাওয়ার ইচ্ছা নেশা কবে কাটবে তার ঠিক নেই তার আগেই আমার গলায় খুব জোড়ে একটা পোচ দাও। ব্যাস, সমস্যা সমাধান।
চাকুটা সৌরভ হাতে নিয়ে বলল
– ভালো ধার আছে। তুমি নিজেই তো সাহসী এসব ব্যাপারে। আমাকে শুধুশুধু এসব উটকো ঝামেলায় জড়াচ্ছো কেনো?
– আরে এদেশে আসল খুনি কে পুলিশ ধরতে পারেনা। আর তুমি তো ভালো মানুষ না যে ধরা খাবে।
ও চাকুটা আমার গলায় ধরে বলল
– আমি কিন্তু তোমাকে সত্যি মেরে ফেলতে পারি।
– জানি তো।
– না পারবো না। নেশা কাটুক তারপর জাহান্নাম এ যাও আমার দেখার বিষয় না।
– এখনি বাসা থেকে বের হও।
– যেতে ইচ্ছে করছে না। তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
– সৌরভ প্লিজ আমাকে সত্যিটা বলো। আমার না মাথা ফেটে যাচ্ছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, খুব।তুমি কি পাগল? একেক সময় একেকটা কথা বলো?
– আরে আমি তো বললামই।
– সৌরভ আমি না তোমাকে খুব ভালবাসি।
হাতের আংগুল গুলো দেখিয়ে বললাম
– দেখোই না তোমাকে কাছে পাবার জন্য আংগুলে আলপিন ফুটিয়েছি। জানো তোমার জন্য আমি অনেক কষ্ট করেছি।
– আমিও করেছিলাম লাভ হয়নি।
– সৌরভ আমি তোমার ভালবাসা না প্রয়োজন? প্লিজ একটা উত্তর চাই আমি। তারপর আমি আর তোমাকে আমার কাছে আসতে বলবো না।
– কোনোটাই না। তুমি আমার স্বভাব।রোজ তিনবেলা তোমার সেই ছবিটা না দেখলে ভালো লাগেনা। দেখতেই হবে। এটাই স্বভাব। তোমাকে স্বপ্নে আনতে হবে এটা আমার স্বভাব।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১১.

0

ছায়া নীল!

১১.

Maria Kabir
আসলে সত্য অনেক তিতা হয়। যেটা হজম করা খুব কষ্টের। কিন্তু একবার হজম হয়ে গেলে তারপর আর সেই তিতা আর গায়ে লাগে না। ও যদি অন্যের শোধ আমার উপর নিতে পারে তাহলে আমি আমার শোধ কেনো ওর উপর নিতে পারবো না। ও আমাকে তিলে তিলে ধ্বংস করেছে। ওর জন্য আমাকে প্রতিবেশীরা পাগল ভাবে। আমি নাকি খারাপ মেয়ে। ও আমাকে ছেড়ে দেবার জন্য যতবার চেষ্টা করবে আমি ওকে ততবার নিজের দিকে টানবো।
আমি ওকে এতো সহজে চলে যেতে দিবো না। একমাত্র ওর জন্য আমার পুরো পরিবারকে কথা শুনতে হয়েছে।
আমাকে নিয়ে খেলেছে আমিও এই খেলা তে হারছি না।
মনে হচ্ছিলো ফোন ভেঙে ফেলি কিন্তু পরক্ষণেই মনে হলো ফোন ভাঙলে নতুন ফোন কবে পাবো তার ঠিক নেই। আর মা চলে আসলে তো আমার খাওয়া দাওয়াও বন্ধ করে দিতে পারে। ফোন তো দূরে থাক।
এতো খেলা খেলেও আবার বলে বিশ্বাস ভাঙতে পারবে না।
ওকে ভালবাসছি তো ওকে আমার করেই ছাড়বো। বদনাম হয়েছি তো ওকে নিজের করেই ক্ষান্ত হবো আমি।
ফোন টাকে বালিশের নিচে রেখে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
কিন্তু বারবার মাথায় এক চিন্তাই আসছে ও বাসায় গেছে তো নাকি এখনো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে??
মোবাইলে টাইম দেখলাম ১.২৫ বাজে। এই সময় ছিনতাই কারী থাকে, খারাপ লোক থাকে, ওর যদি খারাপ কিছু হয়ে যায়।
ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ভাংলো বাবার ডাকে। বাবা বললেন
– নাস্তা টেবিলে রাখা আছে আর পাশে মেডিসিন রাখা আছে খেয়ে নিও।
বাবাকে দেখে মনে হলো কোথাও যাবে। বাবাকে বললাম
– কোথাও যাচ্ছো??
বাবা বললেন
– তোর মাকে নিয়ে আসতে যাই। তুই কোনো কাজ করার চেষ্টা করিস না।
বাবা চলে গেলেন আমি দরজা আটকে দিয়ে ব্রাশ করতে বাথরুমে গেলাম। ব্রাশ করে বের হবার পরপর মনে হলো ফোন বাজছে।
রুমে এসে ফোন রিসিভ করলাম হ্যালো বলবো আর জড়ালো কণ্ঠে সৌরভ বলল
– আমি সৌরভ বলছি।
– হ্যা বলো।
– তুমি বাসায় একা তাই না?
– হ্যা, আর এটা কার নাম্বার দিয়ে ফোন করেছো?
– আরে দোকানদারের নাম্বার। আমি বাসায় আসছি দরজা খোলো।
– এখন?
– হ্যা এখন।
ফোন কেটে গেলো। কী ঝামেলা রে। এ হুটহাট করে বাসায় চলে আসে কেউ একবার দেখলেই হয় কিয়ামত ঘটে যাবে তাও আমি একা।
দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় ১০ মিনিট পর সৌরভ চোখ ডলতে ডলতে বাসার মধ্যে ঢুকলো। আমি দরজা আটকে দিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– এভাবে হুটহাট করে বাসায় চলে আসবা না।
– মামার বাড়িতে আমি আসতেই পারি তোমার কী?
– আমি একা তাই নিষেধ করছি।
কোনো কথা বললো না। সরাসরি আমার রুমে গিয়ে কী যেন খুঁজছে। সৌরভ কী খুজছো আমাকে বললেই হয়।
– তোমার মোবাইল চার্জার কই?
পড়ার টেবিলের ড্রয়ার থেকে বের করে দিলাম। ও মোবাইল চার্জ দিয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো।
আমি খাবার টেবিলের চেয়ারে বসে রইলাম।
বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল
– নাস্তা আছে??
– হ্যা আছে।
এদিকে আমার পেটে ইঁদুর ছুটাছুটি করছে। খাবার তো মনে হয় আমার যোগ্য।
ও আমার পাশে চেয়ার টেনে বসলো। আমি জিজ্ঞেস করলাম
– রাতে কই ছিলে??
– রাস্তার উপর ঘুমিয়ে ছিলাম।
– বাসায় কী সমস্যা???
– সমস্যা না, এমনি যেতে ইচ্ছে করেনি তাই যাইনি।
– যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো তখন??
– হয়নি তো দেখছোই তাহলে প্রশ্ন করে কী লাভ???
– এমন আর করবে না।
– তোমার রুমে এসে পড়ে থাকবো তখন পাড়ায় বদনাম রটে যাবে। অমুকের মেয়ে ঘরে ছেলে নিয়ে থাকে।
– শুনো এমনিতেই আমার বদনামে পুরো পাড়া ভরপুর। যাকেই জিজ্ঞেস করবা সেই বলবে শারলিন একটা নিকৃষ্ট মেয়ে।
– sorry !
– জানো সেটা কার জন্য??
– আমার জন্য তাই তো।
– হ্যা। নাস্তা করবে বলে নাও টেবিলে খাবার আছে খেয়ে নাও।
– আসো ভাগ করে খাই।
– নাহ আমার খাওয়ার দরকার নাই। তোমার কথায় পেট ভরে গেছে।
ও খাবারের প্লেট সামনে নিলো। বাবা অনেক খাবার রেখে গেছেন। হোটেল থেকে আমার পছন্দের খাবার কিনে এনেছেন। পরোটা আর ডিম ভাজি আর ডাল।
খুব খিদে পেয়েছে কিন্তু ওকে তো বলেই ফেললাম আমি খাবো না।
সৌরভ পরোটা ছিড়ে ডিম দিয়ে আমার মুখের সামনে ধরলো তারপর বলল
– আর এমন হবে না। সত্যি শারলিন আমি আর করবো না।
– আমার খিদে নেই।
– তোমার মুখ দেখেই মনে হচ্ছে কিছুই খাওনি আর তোমার খুব খিদে পেয়েছে।
পরোটার টুকরো টুকো মুখে নিলাম। ও খাচ্ছে আমি হাত দিয়ে নিতে গেলাম, তখন ও বলল
– আমি খাইয়ে দিচ্ছি।
পুরো প্লেট ফাকা হয়ে যাবার পর সৌরভ বলল
– পেট ভরেছে??
– হ্যা, তোমার?
-হ্যা।
মেডিসিন খেয়ে নেবার পর সৌরভ কে বললাম
– একটা প্রশ্ন করবো ঠিক তার উত্তর দিবে??
সৌরভ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে বলল
– হ্যা করো।
– আমি তোমার কত নাম্বার প্রেমিকা???

চলবে….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১০.

0

ছায়া নীল!

১০.

Maria Kabir
সৌরভ বলল
– আমি তো ভূত না যে তুমি ভয় পাবে??
– হুম
– তাহলে ভয় কেনো পেলে??
– এমনি।
– এমনি আবার কেউ ভয় পায় নাকি??
– আরে আমি ভয় পাই নাই।
– কী বলো?? একটু আগেও তো বললে ভয় পাইছো।
– শুনো আমি ভয় পাইছি । কারণ টা হলো – এতো রাতে এভাবে কারো বাসায় আসে??
– কারো বাসায় না মামার বাড়ি আমার।
মাতালরা নাকি সত্য কথা বলে। আমার যে ব্যাপার গুলোতে কনফিউশন আছে এখন জিজ্ঞেস করলে সত্যটা জানা যাবে।
– আচ্ছা সৌরভ এতো দিন তোমাদের তো আমাদের বাসায় আসতে দেখলাম না। কেনো??
– খুব সোজা, তোমাদের সাথে আমাদের ঝগড়া ছিলো।
– কী নিয়ে ঝগড়া ছিলো??
– তুমি জানো না???
– আমি জানলে তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম না।
– জানো কখন তোমায় প্রথম দেখেছিলাম??
– হ্যা স্বপ্নে!
ও প্রসঙ্গ পাল্টাতে চাচ্ছে যেভাবেই হোক আমাকে সব খবর বের করতে হবে।
– না না স্বপ্নে না। তোমার ছবি মা আমাকে প্রথম দেখিয়েছিলেন।
– কী??? দেখে কী মনে হয়েছিলো?
– শুনো তখন আমি ইন্টারে পড়ি আমার প্রথম প্রেমের ফুললি ব্রেকাপ হলো।
তারপর চুপ। কোনো সাড়াশব্দ নেই। কুকুরের ঘেউ ঘেউ কানে আসছে।
সৌরভ এমনভাবে কথা বললো তাতে মনে হলো ও ফিসফিস করে বলছে।
– হুশশ শারলিন কথা বলে না। কথা বললে কুকুর কামড়ে দিবে। তারপর ৭ টা ইনজেকশন দিবে।
কী বলবো আমি ওকে??
ও আবার বললো
– কুকুর টা চলে যাচ্ছে বুঝছো?? এইতো এইতো যাচ্ছে…
– তুমি এখনো বাসায় যাও নি??
– নাহ আসছিলাম তোমার কাছে তুমি তো খেদিয়ে দিলে!
আল্লাহ আমি ওকে খেদিয়েছি নাকি ও নিজেই বের হয়েছে।
– বাসায় যেতে কতক্ষণ লাগবে??
– সারারাত লাগবে।
– কেনো তোমার বাসা কি আমাজানে???
– নাহ, আমি বাসায় যেতেই চাই না এখন।
– ব্রেকাপ এর পর কী হলো??
– প্রথম প্রেমে ছ্যাকা খেয়ে আমি ব্যাকা হয়ে গিয়েছিলাম।
– তারপর??
– তোমার ছবি দেখে ভালো লাগলো। তারপর ভাবলাম একটু মজা করি।
– তুমি আমাকে ভালবাসো না মজা করেছো আমার সাথে??
– নাহ রে পাগলী। আসলে বিশ্বাস করার ক্ষমতা ছিলো না। ভালোই কাটছিলো তুমি সুইসাইড করে বসলা সব ফিনিশ।
– ফিনিশ না শুরু।
– না তুমি বুঝবা না এটাই ফিনিশ।
– তাহলে বুঝাও।
– শুনো কালো অন্ধকার রাতে আমি একা রাস্তায়। খুব মজার ব্যাপার।
– তুমি বাসায় যাও তো।
– বাসায় তুমি নাই কী করতে যাবো??
– এতদিন বাসায় কেনো যেতে??
– ওহ শারলিন তুমি তো অনেক স্মার্ট!
– ফুপু আমার ছবি কীভাবে পেয়েছিলো?
– শুনোনা শারলিন। যখন সত্যি ভালোবেসে কষ্ট পেলাম। জানো ও আমার জীবন টাকে পুরো নষ্ট করে দিয়েছিলো। তখন মনের ভেতর আগুন জ্বলছিলো। তোমার ছবি যখন পেলাম তখন তুমি ক্লাস ৭ বা ৮ রাইট??
– হ্যা। ক্লাস ৭ এর মাঝামাঝি তে।
– তোমার সেই পিচ্চি পিচ্চি চেহারাটা আমাকে পাগল করেছিলো কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম আমাকে যেমন ঠকিয়েছে আমিও একজনকে ঠকাবো। আমাকে নিয়ে ও যেমন খেলেছে আমিও কারো সাথে খেলবো।
কথাগুলো আমাকে খুব কষ্ট দিচ্ছিলো। ও এইজন্যই আমাকে এই অবস্থায় বলতে চায়নি। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম
– তুমি তো সামনাসামনি এসেই আমার সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে পারতে। স্বপ্নের ব্যাপার টা কেনো করলে?? স্বপ্ন বাদে আসলে তুমি তো আমাকে বেডেও নিয়ে যেতে পারতে।
– শারলিন আমি সেটা জীবনেও করতে পারবো না। আজকে পারলেই আমি পারতাম। তুমি আমাকে যে পরিমাণ বিশ্বাস করো। আমি অবশ্যই এর ফায়দা নিতে পারতাম।
– কেনো নিলে না???
– তোমার চোখে আমার জন্য যে ভালবাসা, বিশ্বাস দেখেছি আমি চাই না ভাঙতে । আমি এই প্রথম মা ছাড়া অন্য কারো চোখে এতো ভালবাসা আর বিশ্বাস দেখেছি।
– তুমি তো আমার সাথে মজা করেছো তাহলে….
– হ্যা করেছিলাম কিন্তু……
– কিন্তু কী???
– পরে বলবো!
এই কথা এখন আর বের করা যাবেনা।
– আচ্ছা তুমি স্বপ্নের ব্যাখ্যা টা দিবে??
– কীরকম ব্যাখ্যা??
– আমার ছবি দেখার পর তুমি স্বপ্নে কীভাবে এসেছিলে???
– আরে ওটা একটু কঠিন….
– বলোই না।
– ব….
আর শুনতে পারলাম না। ফোন কেটে গেলো । য ধুত্তুরি ফোন কেটে যাওয়ার সময় আর পেলো না।
এখন ওর আবার ফোন করার অপেক্ষায় থাকা ছাড়া উপায় নাই।
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর গুলোই পেলাম না।
একজন মানুষ দিনের পর দিন আমার সাথে অন্যের কর্মের প্রতিশোধ তুলেছে। আর আমি সেটাকে ভালবাসা মনে করে বসে আছি।
কেউ খেলা করেছে আর আমি নিজেকে শুধুই কষ্ট দিয়েছি।
আমি এতো বড় ভুল করেছি তার প্রায়শ্চিত্ত কীভাবে করতে হবে আমার জানা নেই।

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৯.

0

ছায়া নীল!
৯.

Maria Kabir
হঠাৎ অনুমতি চাচ্ছে কেনো?? ও কি কোনো বিষয় নিয়ে টেনশনে আছে??
মেসেজ রিপ্লে দেয়ার মতো ব্যালেন্স নাই। এখন বাবার কাছে ফোন চাইলে সন্দেহ করতে পারে। কী করবো বুঝতে পারছি না।
আবার মেসেজ টোন বাজলো। মেসেজ চেক করলাম ওর মেসেজ। লিখেছে
– আমাকে এখন সহ্য হয়না??
আরে এ কী বলতেছে??? আমার ওকে কেনো সহ্য হবে না?
ফোন হাতে নিয়ে বসে রইলাম। ঘুমাতেও পারছি না।
মহাপাগলের পাল্লায় পড়েছি। ঝিমুচ্ছিলাম হঠাৎ করে ফোন বেজে উঠলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম। আমি আগে কথা বললাম
– সৌরভ…
– কী আমাকে তোমার পছন্দ হয়না এখন???
– কেনো পছন্দ হবেনা??
– তুমি এতো সুন্দর….
– তো কী??? তুমি এতো পাগলামি কেনো করছো???
– আমার ভালো লাগছে না। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে!
– এখন এতো রাতে তুমি কীভাবে আসবে??
– শারলিন….
– হুম বলো!
– আমার জন্য তুমি অনেক কষ্ট সহ্য করেছো কিন্তু আমি তো কিছুই করিনি।
– এখন এই রাতে এগুলো নিয়ে আলোচনা করার সময় না।
– তুমি ঘুমাচ্ছো?
– নাহ।
– তুমি দরজা টা খোলো তো!
– মানে???
– তোমার বাড়ির দরজা খুলো। আমি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি।
– সৌরভ তুমি পাগলামি করছো কেনো???
– আমি সত্যি বলছি শারলিন।
– বাবা জানতে পারলে ঝামেলায় পড়বো।
– কোনো ঝামেলায় পড়বা না। দরজা খোলো।
– আচ্ছা।
কী বিশ্রী ব্যাপার, ও এতো রাতে আমাদের বাসায়। তাও বাবা জানে না। আমার তো মাথায় কিছুই ঢুকছে না।
ফোন হাতে নিয়ে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম।
খুব আস্তে আস্তে দরজা খুললাম। যাতে কোনো শব্দ না হয়।
দরজা খুলেই দেখি ও দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে দেখে হাতের গোলাপ ফুল আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
– নাও তোমার জন্য।
আমি ফুল হাতে নিলাম। ওর চেহারা কেমন কেমন লাগছে।
চুলগুলো কেমন আওলা ঝাওলা হয়ে আছে।
এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে আমার ভালো লাগছে না আবার বাসায়ও তো ঢুকাতে পারছি না।
বাবা ঘুমাচ্ছে, পুরো বাড়িতে আমি ধরা যায় একা।
সৌরভ বলল
– তোমার নীলকে ভিতরে যেতে দিবে না???
– হ্যা হ্যা আসো।
ও ভিতরে ঢুকে সরাসরি আমার রুমে চলে গেলো।
আমি তাড়াতাড়ি করে দরজা আটকে দিয়ে আমার রুমে এসে রুমের দরজা বন্ধ করে দিলাম।
রুমে ডিম লাইট জ্বলছে। ওর হাটাচলা কেমন কেমন লাগছে।
আমি নিচু স্বরে বললাম
– তুমি কিছু বলবা???
– তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছে জানো??
– দেখা হয়েছে আমাকে???
– আরে কই দেখতে পারলাম! একটু আলো জ্বালাও দেখি তোমাকে।
আমি লাইট জ্বালালাম। ও আমার কাছে এসে দাঁড়ালো।
উটকো গন্ধ নাকে আসলো। এরকম গন্ধ কেনো???
নাকে হাত দিয়ে বললাম
– এরকম গন্ধ কেনো???
– কিছু খেয়েছি তো তাই…!
– মদ তাই না??
ও আমার কপাল থেকে চুল সরিয়ে দিয়ে কপালে আংগুল বুলিয়ে দিচ্ছিলো। হাত এতো ঠাণ্ডা পুরো শরীরে কাটা দিয়ে উঠলো।
– তুমি অনেক সুন্দর জানো তো??
– হ্যা জানি।
– রাগ করেছো??
আমি ওকে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– দূরে থাকো!
– আমার স্পর্শ এখন ভালো লাগছে না??
– তুমি নেশাগ্রস্ত। স্বাভাবিক হয়ে আমাকে স্পর্শ করবে।
– আচ্ছা আচ্ছা আমি আর এমন করবো না।
– নেশা করার কারণ??
– অনেক খারাপ লাগছিলো।
– তুমি ডেইলি খাও তাই না??
– নাহ, যখন খুব খারাপ লাগে তখন দুই একটু খাই।
– আজকে খারাপ লাগার তো তেমন কিছুই হয়নি।
– আমার জন্য তোমাকে কতো কষ্ট করতে হচ্ছে!
– তাই বলে…
– আমি যাই, তোমাকে ডিস্টার্ব করবো না। তুমি ঘুমাও।
– বাসায় যেতে পারবে একা একা??
– হ্যা খুব পারবো। তুমি ঘুমাও আমি ঠিক বাসায় যেতে পারবো।
– আচ্ছা তুমি কী কারণে এসব ছাইপাঁশ খেলে??
– আরে সখী বলবো। তুমি ঘুমাও শারলিন।অনেক জ্বালাইলাম তোমারে।
ও চলে যাচ্ছিলো আবার ফেরত আসলো তারপর বললো
– তোমাকে তো দেখতেই পারলাম না।
– চোখ বুজে ছিলে নাকি??
– আরে তুমি এতো প্যাঁচাল পারলা তাই দেখতে পারলাম না।
– আচ্ছা আমি চুপ করলাম।
আমার চারপাশ দিয়ে ও ঘুরলো। সাত পাক ঘুরে যে বিয়ে করে আমার মনে হয় ও আমার সাত পাক ঘুরছে। আল্লাহ কী মহাপাগলের পাল্লায় পড়লাম।
হুট করে আমার কাটা হাত ধরলো।এমনিতেই ব্যথা তার উপর ও যেভাবে ধরেছে তাতে তো মনে হলো আমি শেষ!
দাঁতে দাঁত চেপে বললাম
– উরে আস্তে আস্তে গেলাম আমি!
– আরে sorry sorry!
ও নিজেই দরজা খুলে চলে গেলো।আমি পিছুপিছু গিয়ে দরজা বন্ধ করলাম।
গোলাপ ফুলটা এখনো আমার হাতে। ওর কর্মকাণ্ডে আমার এখন হাসি পাচ্ছে। শুনেছিলাম মাতালদের পাল্লায় পড়লে নাকি পাগল হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়।
হাতের ব্যথাটা বাড়ায় দিয়ে গেলো।
রুমে এসে লাইট অফ করে ডিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে আবার বিছানায় শুইলাম। আবার ফোন বেজে উঠলো, রিসিভ করলাম
– শুনো তোমাকে বিয়ে করার পর আমি আর মদ খাবো না।
আমি যাই বলবো তাতেই ও প্যাঁচাবে। তাই হ্যা, না দিয়েই কাজ চালাতে হবে!
– হুম
– আমি বাসায় যাচ্ছি। বুঝছো??
– হ্যা বুঝেছি।
– শুনো হাতে ব্যথা দিয়েছি তাই sorry!
– it’s ok.!
– ভয় পাইছো??
– হুম।

পুরেটা রাত আমার মনে হচ্ছে এভাবেই কেটে যাবে। ওর মদ খাওয়ার ফলাফল আগামীকাল পাবে। এখন কিছু থেকে কিছু বললে ও আবার বাসায় চলে আসবে।
কারে ভালবাসলাম আমি??

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল !৮

0

ছায়া নীল !৮.

Maria Kabir
আমি সৌরভ এর বুকের বাম পাশের উপর আমার ব্যান্ডেজ করা হাত রাখলাম। সৌরভ কিছুটা অবাক হলো। আমি ওকে বললাম
– আমার চোখের দিকে তাকাও
ও আমার চোখের দিকে তাকালো আমি ধীরে ধীরে বললাম
-আমি তোমাকে বুঝতে পারছি না। যা যা ঘটেছে তোমার আমার মাঝে তার কোনো সঠিক ব্যাখ্যা আমি পাচ্ছি না। প্লিজ সৌরভ হেল্প মি!
সৌরভ আমার হাতের উপর হাত রেখে বললো
– আমি বলবো তোমাকে কিন্তু এখন না।
– আমি সব গুলিয়ে ফেলছি। সবকিছু ধোঁয়াটে লাগছে আমার কাছে।
– মনে করো সবকিছু স্বাভাবিক আর কোনো ধোঁয়াটে কিছুই নাই।
– আমি পারছি না।
– একটু সুস্থ হও তারপর সময় করে বলবো।
– তুমি যেও না আমাকে একা ফেলে।
– আরে আমি তো আছি তোমার মাঝেই। তোমার মাঝেই আমি ছড়িয়ে আছি শুধু অনুভব করতে যতটুকু সময় লাগে।
মনে হচ্ছে কেউ আমাদের দিকে আসছে। আমি ওর থেকে দূরে সরে গেলাম আর সৌরভও দূরে গিয়ে দাঁড়ালো।
বাবা বারান্দায় এসে বলল
– ওরা তো এখন চলে যাবে তাই রাতের খাবার খেয়ে নিলে ভালো হয়।
সৌরভ বলল
– কিন্তু এতো তাড়াতাড়ি তার উপর আবার রান্না কে করেছে???
– বাইরের থেকে খাবার কিনে এনেছি।
– আমরা বাসায় গিয়ে খাবো আপনার কষ্ট করতে হবে না।
সৌরভের কাঁধে হাত দিয়ে বাবা বলল
– নাহ বাবা তুমি যা উপকার করেছো সারাজীবন মনে রাখবো।
কথাটা শুনে আমার হাসি পেলো। আমার সুইসাইড এর কারণ টা বাবা জানলে কাঁধে হাত না রেখে গালে থাপ্পড় বসাতো।
জোড়াজুড়ির কারণে রাত ৮ টায় খেতে হলো।

সৌরভ চলে যাবার আগে আমাকে ওর ফোন নাম্বার দিয়ে গেলো আর বললো – যখন খুব মনে পড়বে তখন আমাকে ফোন করবে।
আমি বললাম – তুমি করবে না???
সৌরভ কী যেন ভাবলো তারপর বললো
– হ্যা করবো।
মেজো ফুপু আর সৌরভ চলে গেলো। পুরো বাসায় আমি আর বাবা।
বাবা আমার বিছানা গুছিয়ে দিয়ে বলল
– তুই ঘুমা আর কাল সকালে তোর মা আসবে।
কথাটা বলেই বাবা চলে গেলো। মা আসবে, জানি না আবার কতো বেশি মার খেতে হবে।
মা যে কেনো এমন করে বুঝিনা। আমাকে কেনো এতো বড়লোকের সাথে বিয়ে দিতে হবে???
বড়লোক দিয়ে কী হবে?? কেনো বুঝে না মা আমার শান্তি অন্যকিছুতে।
শুয়ে শুয়ে ভাবছিলাম হঠাৎ করে সৌরভের চেহারা টা চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
নীল নাম দিয়েছিলাম কোনো নাম খুঁজে না পেয়ে। নীল নাম দেয়ার মধ্যেও একটা লজিক আছে।
লজিকটা হলো – রাতের অন্ধকারে একমাত্র নীল রঙ টাই মিশে যায়।
রাধা ঘন শ্যামের সাথে রাতের বেলা দেখা করতে যাওয়ার সময় নীল রঙের শাড়ী পড়তেন। যাতে কেউ রাধার অস্তিত্ব বুঝতে না পারেন।
ঠিক তেমনিভাবে ও………
ফোনের রিংটোন বেজে উঠলো। নীলের নাম্বার। ফোন রিসিভ করলাম। হ্যালো হ্যালো করছি কিন্তু কোনো শব্দ আসছে না ওপাশ থেকে।
এতোবার হ্যালো বললাম তারপরও কোনো রেসপন্স নাই।
ফোন কেটে দিলাম হয়তোবা ঘুমায় আছে। হাতের আশেপাশে ফোন ভুলে চলে আসছে।ফোন পাশে রেখে চোখ বুজলাম সাথে সাথে আবার ফোন বেজে উঠলো।
এর মধ্যে আবার কাটা হাতে ব্যথা করতে শুরু করলো।
ওর ফোন, রিসিভ করলাম।
– হ্যালো
এইবার প্রথমে ওপাশ থেকেই আগে হ্যালো বললো। ওর কণ্ঠ তো এমন না। ফোনে তো অনেকের কণ্ঠে চেঞ্জ আসে।
ওর নাম্বার থেকে ও ছাড়া আর কেউই ফোন করতে পারেও না।
আমি বললাম
– এতো রাতে ফোন দিলা???
হাসার শব্দ কানে আসলো তারপর বললো
– কেবল ১১ টা বাজে এখন তো কেবল শুরু।
– কিছু বলবা???
– তোমার হাতের ব্যথা বেড়েছে মনে হয়??
– হ্যা, তুমি জানলে কীভাবে?? আমি তো বলিও নাই।
– আরে রাতে সবধরনের ব্যথা বাড়ে তাই বললাম।
– ওহ। তুমি কী করছো??
– আচ্ছা রাখি। তুমি ঘুমাও।
– এই শুনো কিছু বলবা???
– রাখো তো।
ফোন কেটে গেলো। আমি যে ফোন দিবো ফোনে টাকাও নেই।
জানি না আমি আমার জীবন কোন দিকে যাচ্ছে।
জানি না ভালবাসার ঢেউ আমাকে কোথায় ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
আমার কেনো যেন কোথাও একটা খটকা লাগছে।
মেজো ফুপুর কাহিনী টা যেভাবেই হোক আমাকে জানাতে হবে!
কিন্তু সেটা কী হতে পারে????
ফোনে মেসেজ আসলো। মেসেজ চেক করলাম
সৌরভের মেসেজ – স্বপ্নে আমি আসতে পারি??

চলবে……….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৭.

0

ছায়া নীল!
৭.

Maria Kabir

আমি বললাম
-শুরুটা আমি করেছিলাম নাকি তুমি???তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে, আমি তোমাকে ডেকে আনি নি। মনে পড়ে??? নাকি ভুলে গেছো???
– হ্যা আমিই শুরুটা করেছি। কিন্তু সামান্য স্বপ্নে যার অস্তিত্ব তার প্রতি এতোটা পাগল হওয়াটা ঠিক না।
– আমি কি একাই পাগল হয়েছি??? নাকি প্রতিটা স্বপ্নে তুমি আমাকে প্রতিবার তোমার দিকে টেনেছো???
ও চুপ করে আছে। কোনো কথা বলছে না।
আমি বললাম
– কী কোনো কথা নাই কেনো?? সামান্য স্বপ্ন না আমার কাছে। আমার কাছে অনেক বেশি দামী সেই শুরু থেকে আজকের স্বপ্নটা।
– শারলিন শান্ত হও।
– কেনো শান্ত হবো?? সত্যিটা সহ্য হচ্ছে না??
– তুমি অসুস্থ তাই।
– আমাকে যেহেতু তোমার প্রয়োজন নেই তাহলে আমাকে বাঁচালে কেনো???
– তুমি একজন মানুষ। চোখের সামনে একজন মানুষ কে সুইসাইড করতে দেখা যায় না।
– তুমি তো আমার সামনে ছিলে না।মিথ্যা কেনো বলছো???
– তোমার রুমের জানালার পাশে যে রাস্তা আমি ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তোমার জানালা খোলা ছিলো।
– আমার জানালার পাশে কী করছিলে??? আমি তো তোমার কেউ নই।
কথাটা বলে আমার খুব খারাপ লাগা শুরু হলো।
যার জন্য আমি এতো কিছু করলাম। নিজের শরীরকে শরীর মনে করিনি। দিনের পর দিন শুধু নিজেকে কষ্টই দিয়ে গেছি। শুধু ওকে কাছে পাবো বলে।
কিন্তু কী হলো?? সেই উল্টো আমাকে কথা শোনাচ্ছে।
কাঁদতে শুরু করলাম। তুহিন লোকটার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর থেকে অনেক কষ্ট ভুগেছি।
এই তো প্রথম না। এসএসসি এক্সাম দেয়ার পর থেকে কতবার যে,আমি বিয়ে ভেঙেছি আর মায়ের হাতে মার খেয়েছি তার হিসেব নাই।
আমি মাথা নিচু করে আছি। সৌরভ বলল
– কান্নাকাটি বন্ধ করো। এমনিতেই আজ ২ দিন যাবত অনেক স্ট্রেস এ আছি।
– আমি তো খুব সুখে আছি।
– তুমি ২ দিন যাবত অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার কিছু হয়ে গেলে……
– ভালোই হতো সব ঝামেলা শেষ হয়ে যেতো।
সৌরভ আমার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বলল
– তোমাকে সামনাসামনি এক পলক দেখবো বলেই আমি তোমার রুমের আশপাশ দিয়ে ঘুরাঘুরি করছিলাম। তোমার বারান্দায় এসে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। ধরা খাওয়ার মতোই অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। তুমি খেলে আছাড়।
আছাড় না খেলেই ভালো হতো। তোমার অবস্থা এতো খারাপ হতো না।
– তুমি কেনো আমার সাথে এমন করলে???
– প্লিজ একটু শান্ত হও না। পরেও জানা যাবে।
– পরে কেনো?? বলা তো যায় না পরে সময় টা নাও আসতে পারে।
– কী বললা তুমি??? এই শারলিন আবার কিছু করার চেষ্টা করলে সত্যি বলছি আমি কিন্তু চলে যাবো।
– তুমি এতদিন কেনো সামনে আসোনি??আর স্বপ্নের ব্যাপার টা মাথায় আসছে না। কীভাবে কী ???
– পরে একদিন। এখন চিন্তা করো তোমার মা কী করবে???
– মানে???
– তোমার তো জানার কথা না। তোমার এই মহান কাজে তোমার বিয়ে ভেঙেছে। ভালোই হয়েছে। কিন্তু বিশাল কেলেঙ্কারি হয়ে গেছে ।
– কী আর হবে??? আমি পাগল, মানসিক রোগী বা অন্য কারো সাথে লাইন আছে বা ভূতে ধরেছে।
সৌরভ হেসে বলল
– শেষের দুটো কারেক্ট আছে।
– খুব মজা লাগছে তাই না।
– হ্যা কিছুটা। তোমাকে এতো কাছে পাবো ভাবিনি।
ওর এই কথাতে মনে পড়লো ও আর আমি খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে আছি। এই প্রথম কারো খুব কাছে দাঁড়িয়ে।
সৌরভ হেসে বললো
– কোনো সমস্যা নেই আমি তোমাকে এই অবস্থায় স্পর্শ করবো না।
– হুম।
– মেডিসিন ঠিক মতো খাবে, খাবার ঠিক মতো খাবে। আর আমাকে মনে করবে।
– তুমি কই যাবে???
– তোমার মা আমাকে আর আমার মাকে সহ্য করতে পারে না।
– মা তো নেই এখন।
– আসবে তো তাই না??? রাগ করে বাপের বাড়ি চলে গেছে তোমার মা। আজিব ব্যাপার মেয়ে রাগ করে বাপের বাড়ি আসবে তা না মা রাগ করে বাপের বাড়ি যায়।
এ কথা বলে ও অট্টহাসিতে মত্ত হয়ে গেলো।
আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি। ওর মেজাজ কিছুক্ষণ পর পর বদলে যাচ্ছে।
আমি ওকে বুঝতে পারছি না। এই বলে আমাকে তার প্রয়োজন নেই আবার এই বলে আমার জন্য সে কষ্টে আছে।
আমি তো একটা পাগল আর এ তো মনে হয় মহাপাগল।

চলবে…….!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৬

0

ছায়া নীল! ৬.

Maria Kabir

ও বলেছিলো, স্পর্শ করলেই আমাকে চিনতে পারবে।
ওর হাত ধরাতেই আমি বুঝতে পেরেছি এই মানুষ টাই আমার স্বপ্নের নীল।
আজ ৬ বছর যাবত যাকে আমি শুধুই স্বপ্নে খুঁজে ফিরেছি, সে আমার সামনে।
আমার হাত ছেড়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করে কেবিনের বাইরে চলে গেলো।
ওর আমাকে পরিচয় দেয়ার কোনো দরকার নেই ঠিক তেমনিভাবে আমার ওকে জিজ্ঞেস করারো নেই ও কে???
আশেপাশে কেউ নাই। দেয়ালের ঘড়িটা নষ্ট মনে হয়। সময় দেখাচ্ছে ৬ টা। কিন্তু জানালা দিয়ে আকাশ দেখে তো সেটা মনে হয় না।
ও আবার ফিরে এলো তবে একা না সাথে একজন নার্স।
নার্স আমাকে জিজ্ঞেস করলেন
– এখন কেমন বোধ করছো???
– ভালো।
আমার চোখ শুধু ওর উপরই আটকে আছে। কিন্তু ও একবারো আমার দিকে তাকাচ্ছে না। নার্স যা যা করছেন ও সেদিকেই তাকিয়ে আছে।
বাবা আর একজন মহিলা কেবিনে এলেন।
নার্স চলে গেলেন। বাবা আমার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
বাবার চোখ দিয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পরলো।বাবা বললে
– মামণি এরকম কাজ করতে হয়না।
আমার কিছু বলার মতো নেই। আমি যেটা করেছি সেটা অনেক বড় ভুল কিন্তু তাছাড়া কোনো উপায়ও ছিলো না।
বাবার সাথের সেই মহিলা বললেন
– ভাইজান এখন এসব রাখেন তো। পরে কথা বলবেন।
বাবা বললে
– নাহ, মেজো। আমার মেয়ে বড় জেদি। আরে বিয়ে করবি না বুঝলাম তাই বলে সুইসাইড কেউ করতে যায়????
বাবা ওনাকে মেজো কেনো বলল??? বাবা তো মেজো ফুপুকে মেজো বলে ডাকতেন। বাবার মুখেই ওনার গল্প শুনেছি কিন্তু সবাই তো বলে উনি মারা গেছেন।
সেই মহিলা বললেন
– আরে মারা তো যায়নি। ভাগ্যিস আমার সৌরভ দেখেছিলো রাস্তা থেকে যে আপনার মেয়ে হাত কাটছে।
কথাটা বলে নীলকে সেই মহিলা কপালে চুমু দিলেন।
বাবা বললেন
– মেজো তোর ছেলে হয়েছে খুব ভালো।
আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কী ঘটছে আর এই মহিলা কে???
বাবাকে জিজ্ঞেস করেই বসলাম
– বাবা, এরা কারা?? আমি তো এদের চিনতেই পারছি না।
বাবা বলল
– এই হলো তোর মেজো ফুপু আর এইযে ছেলেটাকে দেখছিস তোর ফুপাতো ভাই সৌরভ।
– কিন্তু বাবা তুমি তো বলেছিলে যে….
বাবা আমাকে আর বলতে দিলেন না। আমার কথার মাঝে কথা বলে ফেললেন।
– বাসায় গিয়ে সব বলবো।
বাসার কথা বলাতে মায়ের কথা মনে পড়লো।
বাসায় যে কী অবস্থা চলছে আল্লাহ জানে।
সৌরভ বলল
– মামা আজকে মনে হয় শারলিন কে ছেড়ে দিবে। আপনি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসুন। তাহলে ভালো হবে।
বাবা বলল
– প্রথম থেকে তো তুমিই কথা বলেছো। তাই এখন তুমি গেলেই ভালো হয়।
সৌরভ চলে গেলো। মেজো ফুপুকে ভালোভাবে দেখছি। মায়ের মুখে শুনেছি তার সাথে নাকি আমার চেহারার অনেক মিল।
বয়স হয়ে যাওয়াতে তেমন একটা মিল খুঁজে পাচ্ছি না।
তবে চোখ আর গায়ের রঙটাতে মিল আছে।
বাবা আর মেজো ফুপু কেবিনের বাইরে চলে গেলো আমাকে বিশ্রাম করতে বলে।
আফরোজার কথার অর্থ এখন বুঝতে পারলাম।
সৌরভ, নামটা খারাপ না। নীল বলে আর ডাকবো না। সেতো স্বপ্নের মানুষ টার নাম।
তারপরও নীল নামটা কে বেশি কাছের মনে হয়।
কিন্তু… থাক না ওকেই জিজ্ঞেস করবানি।
কী ঘটছে সেটা বুঝতে পারছি না। আমি জানতাম মেজো ফুপু মারা গেছেন আবার আজকে তাকে জীবিত দেখলাম তাও সাথে একজন ছেলেসহ।
আমাকে ছেড়ে দেয়া হলো।
বাবা, মেজো ফুপু, সৌরভ আর আমি বাসায় আসলাম।
পুরো বাসা নীরব। নীরব থাকাটাই স্বাভাবিক। যে কাণ্ড করেছি তাতে বিয়ে তো অবশ্যই ভেঙেছে। আর যেহেতু বিয়ে ভেঙেছে সেহেতু আত্মীয় স্বজন দের থাকার কথা না।
বাবা আমাকে আমার রুমে রেখে গেলেন।
কাটা হাত টা দিয়ে কিছুই করতে পারছি না। এক হাত দিয়ে আর কতটুকুই করা যায়।
ড্রেসিং টেবিলের উপর আমার ফোন পরে আছে।
বাসায় কি কেউই নাই???
ফোন বন্ধ হয়ে আছে, চার্জার খুঁজে ফোন চার্জে দিলাম।
আমি তো শাড়ী পড়া ছিলাম। কোন সময় যে আমাকে এই পোশাক পড়িয়েছে তাও জানি না।
যাই হোক কাপড় বদলে নিলাম। কাপড় বদলানোর সময় হাতে একটু ঝাকি লেগেছিল। মনে হলো আমার পুরো শরীর কেপে উঠলো ব্যাথায়।
বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালাম। মনে হলো কতদিন পর এখানে এলাম।
বিকাল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামছে। এই সময় টা প্রকৃতি এতো সুন্দর থাকে, বলার মতো না।
আমার খুব ভালো লাগছিলো আজকে। অনেকদিন পর আমার খুব ফ্রেশ লাগছে।
বাবা আর মেজো ফুপুর কণ্ঠ শোনা যাচ্ছে।
বাসায় কেউ নাই কেনো???
মনে হলো কেউ আমার পিছনে দাঁড়িয়ে আছে।
পিছনে ঘুরবো আর তখন পুরুষ কণ্ঠ বলল
– পিছনে ঘুরো না। গোধূলি লগ্ন দেখো আর ভাবো কুকর্ম করার ফলাফল কী পেয়েছো???
কণ্ঠ শুনে বুঝতে পারলাম নীল মানে সৌরভ।
আমি বললাম
– কুকর্ম কেনো করেছি সেটা তুমি জানো।
– একটা লিমিট আছে, শারলিন।
– তোমাকে ভদ্রভাবে আমি অনেকবার বলেছিলাম, মনে পড়ে????
– আমিও ভদ্রভাবে বলেছিলাম সম্ভব না।এতো জেদ ভালো না শারলিন।
– তোমাকে কাছে পাওয়াটা যদি জেদ করা হয়ে থাকে। তাহলে আমি আরো বেশি করে করবো।
– তুমি যা করেছো সেটা বড় ধরনের ঝামেলা তৈরি করেছে।
– সবকিছুর জন্য তুমি দায়ী।
– আমি দায়ী????

চলবে…….!

# Maria_kabir

ছায়া নীল! ৫

0

ছায়া নীল!
৫.

Maria Kabir
রক্তের ধারা কী সুন্দর ভাবে বয়ে যাচ্ছে। এক নাগারে তাকিয়ে থাকার দরুন আমার মাথা ঘুরতে শুরু করলো। রক্তের গন্ধ নাকে আসছিলো। পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো।
বিয়ের শাড়ী রক্তে ভিজে যাচ্ছে আর আমারো কেমন লাগছে। মনে হলো পুরো রুম ঘুরছে আর আমি পরে গেলাম ফ্লোরের উপর।
চোখ বুজে আসলো। সব কিছু অন্ধকার। ঘোর অন্ধকারে আমি পরে আছি।
মনে হচ্ছে কোনো এক অতল গভীর অন্ধকারে আমি ডুবে যাচ্ছি।
কেউ আমাকে খুব টানছে। কে???
আশেপাশে খুব চিল্লাচিল্লি হচ্ছে। সবার কান্নার আওয়াজ কানে আসছে। দরজা ভাঙার চেষ্টা চলছে শব্দ শুনে তাই মনে হচ্ছে।
মনে হলো দরজা খুলে ফেললো। কেউ আমাকে কোলে নিয়ে ছুটছে। খুব চেনা স্পর্শ মনে হচ্ছে।
মনে হচ্ছে যে আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তাকে আমি জানি, চিনি।
আবারো মনে হলো গভীর অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছি।
মনে হচ্ছে আমি ঘন, গভীর জংগলের মাঝে হারিয়ে গেছি। পথ খুঁজে পাচ্ছি না। ছোটাছুটি করছি পথের সন্ধানে।
কোন পথের সন্ধানে সেটা তো আমি জানি না। তাহলে কেনো খুজছি???
একটা বড় গাছের নিচে দাঁড়ালাম। মনে হলো কেউ আমার হাত ধরলো।আমি তাকিয়ে দেখলাম নীল আমার হাত ধরে আছে।
হাত ধরে টেনে নিলো তার কাছে। আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম
– তুমি এমন কেনো?
– হুশ, কোনো কথা বলে না।আমাকে জড়িয়ে ধরে আছো না?
– হুম।
– কিছু বুঝতে পারছো?
ওর হৃদস্পন্দন শুনছি খুব শান্ত মনে। মনে হলো ওর খুব কষ্ট হচ্ছে।
আমারো কষ্ট হচ্ছিলো কিন্তু এখন ভালো লাগছে ওকে ছুঁয়ে থাকতে।
– তুমি কষ্ট পাচ্ছো কেনো??
– তুমি এমন কেনো করলে?? যদি খারাপ কিছু হয়ে যেতো?
– হলেও বা কী??
– তুমি বুঝতে চেষ্টা করো। আমার সামনে আসাটা সম্ভব না।
– কেনো সম্ভব না নীল? বলো না?? আমি তোমাকে বাস্তবে ছুঁয়ে থাকতে চাই।
– আমি তো তোমার মাঝেই আছি, সবসময় ছুঁয়ে। আমাকে অনুভব করার চেষ্টা করো। তাতেই তুমি পাবে।
– আমি তোমাকে শুধু অনুভবে নয় চোখের সামনে আমার মাঝে দেখতে চাই।
– জেদ করো না। আর কথা দাও নিজের কোনো ক্ষতি করবে না???
– আগে তোমাকে কথা দিতে হবে?আমার বাস্তব জীবনে তুমি আসবে।আমার হয়ে থাকবে।
– সম্ভব না।আমি তোমার মাঝেই আছি তোমার হয়েই।
– তাহলে আমিও তোমার কথা রাখতে পারবো না।
নীল আমার চিবুকে চুমু দিয়ে আমার চোখেরজল মুছে দিয়ে বলল
– আমি আসবো। তোমার কথা রাখলাম। এখন আমার শারলিন আমার কথা রাখবে। তাই না??
আমি ওকে আবারো জড়িয়ে ধরলাম। তারপর বললাম
– হ্যা, তোমার শারলিন কথা রাখবে!তোমাকে চিনবো কী করে?
– আমি তোমার আশেপাশে থাকলে তুমি অনুভব করতে পারবে।
আমাকে স্পর্শ করলে বা আমি স্পর্শ করলে তুমি বুঝতে পারবে।
আরেকটা কথা, আমি তোমার নীল সেটা কাউকে জানাবে না?
– হুম।
– আমি যাই???
– নাহ, থাকো না এভাবে কিছুক্ষণ।
– অনেক সময় পার হয়ে গেছে। জানো তো?
– কই নাতো? মাত্র কয়েকটা মুহূর্ত।
– শারলিন??
– হুম বলো।
– সত্যি তো আর এমন পাগলামি করবে না তো?
– তুমি না আসলে করবো।
– আমি যাই???
আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বললাম
– যাও।
ও মৃদু হেসে চলে যেতে লাগলো। আর আমি ওর চলে যাওয়া দেখছি।
একসময় ও আমার দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেলো।
আর আমিও গভীর জংগলের পথ ধরে হাঁটতে শুরু করলাম। অনেক দূরে আলোর রেখা দেখা হচ্ছে।
আমি ধীরেধীরে সেই আলোর রেখার মাঝে মিশে গেলাম।
আলোর মাঝে চোখ খুলতে পারছিলাম না। খুব চেষ্টা করছি। আস্তে আস্তে চোখ খুললাম।
আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম আমি হাসপাতালের কেবিনের বেডে শুয়ে আছি। আমার হাত কেউ ধরে আছে। আমি পাশ ফিরে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে সে মৃদু হেসে ফেললো। ঠিক সেই নীলের হাসি। কেবলই ও চলে যাবার সময় মৃদু হেসেছিলো।
আমি ওকে ছুঁয়ে দেখার জন্য হাত বাড়ালাম। ও আমার হাত আলতোভাবে ধরে,
আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
– love you!

চলবে……!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৪.

0

ছায়া নীল!৪.

Maria Kabir
ওকে আমি অনুভব করতে পারি। আচ্ছা ও কি আমায় অনুভব করতে পারে??
আমি ওর জন্য যতোটা পাগল, ও কি তাই?
আমি ওকে যতোটা কাছে পেতে চাই, ও কি ততোটাই আমাকে কাছে পেতে চায়???
আফরোজা আমাকে ছেড়ে দিয়ে কিছু একটা বললো। কী বললো বুঝলাম না।
অন্যমনস্ক ছিলাম তাই বুঝতে পারি না। আফরোজা কে জিজ্ঞেস করলাম
– কিছু বললি?
– কফি খাবি??
– আনতে পারিস।
আফরোজা চলে গেলো। একটা সুযোগ পেয়েছি তার সদ্ব্যবহার করা দরকার। ড্রেসিং টেবিলের ড্রয়ার থেকে আলপিন এর প্যাকেট টা বের করলাম।
একটা আলপিন ডান হাতে নিয়ে বাম হাতের প্রত্যেকটা আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
এখন আর তেমন ব্যথা লাগে না। প্রথম প্রথম খুব ব্যথা লাগতো। কয়েকদিন যাবত হাত ফুলে থাকতো। কিন্তু এখন একটু জ্বলে।
এটুকু কষ্টে ওকে কাছে নিয়ে আসা সম্ভব না।
আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম। আরেকটা আলপিন বাম হাতে নিয়ে ডান হাতের আংগুলের ডগায় ফোটাতে লাগলাম।
কিন্তু আলপিন টা বারবার পিছলে যাচ্ছে। রক্তে ভিজে আছে আংগুল গুলো আর সেই ভেজা আংগুলে আলপিন ধরাতে পিছলে যাচ্ছে।
মনে হলো কারো পায়ের শব্দ আমার রুমের দিকেই আসছে।
তাড়াতাড়ি করে হাত মুছে নিয়ে, আলপিন টা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলাম।
এই কাজ প্রথম না তাই খুব সহজে করতে পারি। আমার কারণেই চাকু, বটি বা ধাড়ালো কোনো জিনিষ বা ব্লেড ও তালা মেরে রাখা হয়।
যখন প্রয়োজন হয় তখন মা নিজে দাঁড়িয়ে কাজ করিয়ে আবার তালা মেরে রাখেন।
বিয়ে বাড়িতে চাকু পাওয়াটা কঠিন হবে না।
আফরোজাই মাকে এগুলো লুকিয়ে রাখতে বলেছে।
ওকে সব শেয়ার করার একটা খারাপ দিক। আমার কোনো ক্ষতি হবে বুঝতে পারলেই সেটা বলে দিবে মার কাছে।
ব্যাস আমি তখন বন্দী কারাগারে।
আলপিন গুলো খুব সাবধানে রেখেছি। দুই মগ কফি নিয়ে আফরোজা এলো।
আমার হাতে এক মগ দিয়ে ও নিজে এক মগে চুমুক দিলো।
আমিও ওর সাথে কম্পানি দিলাম। গরম মগ ধরাতে হাত টা জ্বলছে। জ্বলুক না, ওর জন্য তো এটুকু কিছুই না।
চাকু কীভাবে আনবো সেই ফন্দী টা আঁটতে পারলেই হয়।
কফি শেষ হবার পর আফরোজাকে বললাম
– আফরোজা আমার না খিদে পেয়েছে।
– আন্টিকে বলবো ভাত বা পোলাও আনতে?
– না রে ওসবের খিদে না।
– তাহলে কী খাবি?
– ফল খাবো।
– একটু বোস আমি নিয়ে আসছি।
ও আবার চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর ও ফল নিয়ে ফিরে এলো। কিন্তু চাকু নেই।
আমি বললাম
– আপেল কী দিয়ে কেটে খাবো?
– দাঁত দিয়ে। আমি জানি তুই ফল কেনো চেয়েছিস? তুই চাকু দিয়ে নিজের হাত বা পা কাটবি। তাই না???
আমি হেসে ফেললাম। হাসতে হাসতেই বললাম
– তুই তো আমার থেকেও চালু।
– তোর সাথে প্রায় ৭ বছর যাবত আছি। তোকে আমি পুরোটা না হলেও অধিকাংশ টাই জানি।

নিলু আমাদের রুমে এসে আফরোজা কে বলল
– খালাম্মা আপনাকে ডাকে।
আফরোজা চলে গেলো। নিলুকে আমার নানী নিয়ে এসেছেন। সে এই বাড়িতে নতুন। তার আমার ব্যাপারে বেশি কিছু জানার কথা না।
ওকে দিয়েই কাজটা করানো যাক।
নিলু চলে যাবে আর ওকে ডেকে বললাম
– নিলু, চাকু নিয়ে আয় তো। ফল কেটে খাবো।
– আচ্ছা, আপামনি।
মুহূর্ত এর মধ্যে ও চাকু টা এনে দিলো। নিলুকে বললাম চলে যেতে।
চলে গেলো। মেয়েটা অনেক ভালো। আমাকে যখনি দেখে তখনই ঢ্যাব ঢ্যাব করে তাকিয়ে থাকে।
আমার অসহ্য লাগে এভাবে তাকালে। যাকে এতো ভালবাসি সেই তাকায় না আর অন্যরা…….
চাকুটার ধার আছে বটে।
চাকুটাকে কব্জির নিচে ধরলাম। খুব আলতো করে একটা আচর দিলেই হবে।
মনে হচ্ছে মা, আফরোজা আর আরো কয়েকজন আমার রুমের দিকেই আসছে। তাই চাকুটাকে আমি যেখানে বসেছি তার নিচে রেখে দিলাম আড়ালে।
রুমে ঢুকে আমার সামনে একজন ৬০-৬৫ বছরের মহিলা বসলেন।
তার হাতে লাগেজ। আমাকে বললেন
– বউ মা, ঝটপট করে সেজে নাও তো। আর বেশিক্ষণ নেই।
মা তাকে জিজ্ঞেস করলেন
– বেয়াইন সাহেব, কাজী সাহেব কতদূর?
ও তার মানেই ইনিই আমার হবু শাশুড়ি। দেখতে খারাপ না। আচ্ছা নীলের মা দেখতে কেমন? সেও কি আমাকে বউ মা বলে ডাকবে???
হবু শাশুড়ি বললেন
– আর মাত্র ১ ঘণ্টা!
হবু শাশুড়ি চলে গেলেন। লাগেজ থেকে শাড়ী বের করে আমাকে পড়িয়ে দিলেন।
আমিও ভালো মেয়ের মতো পড়লাম। মা সাজাতে জানেন না।
তাই শাড়ী পড়িয়ে, গহনাগাঁটি পড়িয়ে বললেন
– দেখেছিস কতো গহনা দিয়েছে তোকে??
– অনেক, আরো দিবে বিয়ে হলে।
– হ্যা, ঠিকি ধরেছিস।
– মা, আমার না পানির তেষ্টা পেয়েছে।
আফরোজা যে কোন সময় রুম থেকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।
মাও পানি আনতে চলে গেলো।
ড্রয়িংরুমে কথাবার্তার মাধ্যমে বুঝতে পারলাম কাজী সাহেব এসে গেছেন।
রুমের দরজা আটকে দিলাম আর বারান্দার দরজাও আটকে দিলাম।
চাকু টা ডান হাতে নিয়ে চোখ বন্ধ করলাম। ওকে অনুভবে আনার চেষ্টা করলাম।
চেষ্টা বিফল হলো। বাম হাতের কব্জির নিচে চাকুর ধাড়ালো অংশ ধরে খুব জোড়ে আচর কাটলাম।
সাথে সাথেই ফিনকী দিয়ে রক্তের স্রোত বয়ে যেতে লাগলো।
অসহ্য যন্ত্রণা হতে লাগলো। খুব কষ্ট হচ্ছে, তুমি বুঝতে পারছো????
দেখো না আমার খুব খারাপ লাগছে???

চলবে……..!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ৩.

0

ছায়া নীল! ৩.

Maria Kabir

ওর কাছে যাওয়ার জন্য দ্রুত হাঁটতে শুরু করলাম। মনে হলো কিছু একটাতে পা আটকে গেছে আর সাথে সাথেই আমি উপর হয়ে পরে গেলাম।
কপাল সরাসরি ফ্লোরের উপর পরাতে খুব ব্যথা পেলাম। উঠতে পারছি না, কিন্তু আমাকে তো ওর কাছে যেতেই হবে।
আমার পরে যাওয়াতে খুব জোড়ে শব্দ হয়েছে।
মা আর আফরোজা আমাকে টেনে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিলো।
মনে হচ্ছে পুরো মাথা ঘুরছে আর চোখ তুলে তাকাতে পারছি না।
মা বললো
– কীভাবে পরলি?
আমি বললাম
– ফ্লোরে কিছু একটাতে পা আটকে গিয়েছিলো।
আফরোজা বলল
– কই ফ্লোরে তো আটকে যাওয়ার মতো কিছুই নেই।
মা বললো
– আফরোজা যাও তো বরফ নিয়ে আসো। ওর কপাল টা ফুলে যাচ্ছে। বিয়ের দিন মেয়ের যদি এই অবস্থা হয়, তাহলে কী যে হবে?
মনে হলো আফরোজা বরফ আনতে গেছে। আমার তো চোখ খুলতে ইচ্ছে হচ্ছে কিন্তু পারছিনা।
বরফ এনে কপালে মা ডলে দিচ্ছিলো। তার মধ্যেই নানী মাকে ডাকলেন।
মা আফরোজাকে বলল
– তুমি কপালে ডলে দাও । আমি একটু দেখে আসি।
আফরোজা বরফ ডলে দিচ্ছিলো। আফরোজা বলল
– এই তোর কোনো ফুফু আছে নাকি? যাকে ত্যাজ্য করা হয়েছে?
– নাহ তো আমার জানামতে তো নেই।
আফরোজা চাপাস্বরে বলল
– জানিস না একজন মধ্যবয়সী মহিলা আর তার পরিবার এসেছিলো। তোর মা আর ছোটো ফুফু তাড়িয়ে দিয়েছে।
আমার এখন একটু ভালো লাগছিলো। মনে হলো চোখ খুলতে পারবো। চোখ খুলে বললাম
– কী এমন বলেছে যে,তুই আমার ফুপু ভাবলি?
– তোর ছোটো ফুফু সেই মধ্যবয়সী মহিলাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করলো।
আমি খুব চিন্তায় পড়ে গেলাম ছোটো ফুপু তো তার মেজো বোন মানে আমার যেই ফুপু মারা গেছে তাকে মেজো আপা বলে সম্বোধন করে।
মেজো ফুপুর কথা তেমন কেউ বলে না। হঠাৎ হঠাৎ সবাই একসাথে হলে বাবা ওনার প্রসঙ্গ তুলে।
– কিন্তু আফরোজা আমার মেজো ফুপু তো মারা গেছেন অনেক আগেই।
– কিন্তু জানিস শারলিন তোর চেহারার সাথে অনেক মিল পেলাম।
– বাবা বলে আমি নাকি মেজো ফুপুর মতো সুন্দর।
– শোন কোনো একটা ঝামেলা আছে এর মধ্যে।
– বাবা আসুক। জানা যাবে।
বাবার কথা তোলাতেই আমার ওর কথা মনে পড়লো। সাথে সাথেই ওকে যেখানে দেখেছিলাম সেখানে তাকালাম।
কিছুক্ষণ আগেও ও ওইখানে ছিলো আর এখন নেই।
মেঝের উপর তো কিছুই নেই, তাহলে আমি পরলাম কীভাবে?
আমি তো সহজে আছাড় খেয়ে পরি না। ও কি চায়না আমি ওকে পাই?
না এটা হতেই পারেনা। আমারি ভুল।
আফরোজা বলল
– এই তোর শাড়ীর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আমি বললাম
– ওইতো পায়ে বেধে আমি ঠাস আর পাড় ছিঁড়ে গেছে।
আরেকটা কথা মাথায় ঘুরছে। এতক্ষণে তো বিয়ে হয়ে যাবার কথা।
– আফরোজা।
– হ্যা বল
– বিয়ে তে দেরি হচ্ছে কেনো?
– তোদের বিয়ে পড়ানোর জন্য যে কাজী সাহেবের আসার কথা তিনি ফেরিঘাট এ আটকে আছেন।
– ফেরিঘাট এ কেউ একটা বোম ফাটালেই হয়।
– তুই যা বলেছিস। মনে হয় আর কোনো কাজী সাহেব নেই।
– আজকের দিনের মতো তো বিয়ে থেমে যাবে।
– কিন্তু হবে তো একদিন। সেটা পরে দেখা যাবে।
– তোর কপালে এই তুহিন মশাই আছে।
ওর কথা শুনে গা জ্বলতে শুরু করলো। আমি ভাবতে শুরু করলাম কীভাবে ওকে আমার সামনে বাস্তবে আনা যায়?
আচ্ছা আমি তো পরিষ্কার ভাবে ওর ছায়া দেখেছি। ও আমার আশেপাশেই ছিলো।
আফরোজাকে তো সেই ছোট্টবেলা থেকে আমার সব কথাই বলি। এটা কেনো বাদ দিবো?
– আফরোজা জানিস ওকে আমি কিছুক্ষণ আগেও ওই বারান্দার দরজার কাছে দেখেছি।
– তারপর তুই দৌড়ে ওকে ধরতে গিয়ে আছাড় খেলি?
– হ্যা।
– এর মাঝেই ও হাওয়া?
– হ্যা। জানিস ওকে সামনে আনার একটা উপায় পেয়েছি?
– কী শুনি তো?
– নিজেকে যত বেশি কষ্ট দিবো ও ততোই আমার কাছে আসবে।
– শারলিন, যথেষ্ট হয়েছে। আর কত কষ্ট দিবি?
আজ প্রায় ২ বছর যাবত তুই নিজেকে যতটা কষ্ট দিয়েছিস সেটা কি কম ছিলো?
– হ্যা ছিলো।
– জেদ করবি না।
– জেদ না। আরো আগে থেকে শুরু করলে আজ আমার সাথে থাকতো।
– শারলিন চুপ কর।
– নিজেকে যত কষ্ট দিয়েছি ও ততোটাই আমার কাছে এসেছে। আগে তো দূরে দাঁড়িয়ে থাকতো। আমাকে ওর কাছে আসতে দিতো না। এখন আমাকে জড়িয়েও ধরে।
জানিস আজকে জিজ্ঞেস করেছে, আমি কেনো নিজেকে কষ্ট দেই?
– তুই কী বলেছিস?
– কিছু বলার আগেই তো তুই স্বপ্নটা ভেঙে দিলি ।
– আমি জানি না এর শেষ কোথায়???
– আমি জানি। আমার মৃত্যুই এর শেষ। আমাকে যেদিন সাদা কাফনে সাজিয়ে রাখবে, সেদিন ও আসবে।
তখন ওকে বলিস, ভালে সময়ে এসেছেন।
আফরোজা আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।
এটা প্রথম না। আজ ২ বছর যাবত আমার এসব কথা শুনতে শুনতে ও অভ্যস্ত কিন্তু সহ্য করার ক্ষমতা ওর এখনো হয়নি। তাই কেঁদে ফেলে বাচ্চাদের মতো।
আর আমারি বা কী করার আছে? ও আমার কাছে একটা নেশার মতো হয়ে আছে।
যাকে আমি ভুলে থাকার কথাও ভাবতে পারিনা।
একটা মানুষ স্বপ্নে এসেই আমাকে অর্ধেক পাগল করে দিয়েছে।
ও চায়টা কী?
একদিন জিজ্ঞেস করেছিলাম
– কী চাও?
আমাকে বলেছিলো
– তোমাকে চাই। তোমার প্রতিটা রক্তবিন্দুতে আমি থাকতে চাই। তোমার প্রতিটা নিশ্বাসে আমি থাকতে চাই। আমি চাই তুমি প্রতিটা মুহূর্ত আমাকে কাছে পাওয়ার আশায় বাঁচো।
তোমার এই মায়াবী চোখ যেনো প্রতি মুহূর্ত আমাকেই খুঁজে বেড়ায়।
তোমার শয়নেস্বপনে আমি শুধু আমি থাকতে চাই।
আমি বলেছিলাম
– আছোই তো।
ও আমার হাতে চুমু দিয়ে বলেছিলো
– মায়াবিনী তাহলে তো আমি তোমার স্বপ্নে না তোমার বস্তুজগৎ এ থাকতাম।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ২.

0

ছায়া নীল! ২.

Maria Kabir

রুমে আমি একা। আমার চোখ বারবার ময়লার ঝুড়ির দিকেই যাচ্ছে। মন বলছে, কাগজের টুকরো গুলোকে আবার জোড়া দেই।
আবারো পায়ের শব্দ। আমার রুমের দিকেই আসছে। হাটার শব্দে মনে হচ্ছে আফরোজা।
আমার দরজায় এসেই থেমে গেলো।
তাকিয়ে দেখি আফরোজা।
আমি বললাম
– আয় বোস আমার পাশে।
ও আমার পাশে এসে বসলো। ও কোনো কথা বলছে না। আর আমারো ইচ্ছে নেই।
একই কথা বারবার বলতে আর ভালো লাগেনা।
কেউ আমাকে বুঝে না, বুঝতে চায়না। সবাই ভাবে আমি মিথ্যে বলি।
আফরোজা বলল
– শারলিন।
– হ্যা বল।
– বিয়েটা করে নে।
– নীল বলতে যদি কেউ থাকতো, তাহলে সে তোর কাছে চলে আসতো।
– ও আমার কাছে আসবে না। আমাকেই ওর কাছে যেতে হবে।
– কীভাবে???
– জানি না। তবে আমি সত্যি ওকে পাবো।
– শোন পাগলামি করিস না।একটু পরেই তোর বিয়ে।
– তুই এখান থেকে যা। যা বলছি, তোকে আমার দেখতে ইচ্ছে করছে না।
– সত্যি সবসময় তিতাই হয়।
– ও আমাকে খুব ভালবাসে। ওকে আমি পাবোই।
– ছাই ভালবাসে। যার অস্তিত্ব শুধুই স্বপ্নে, যার শুধুই ছায়া দেখেছিস, যে প্রতিনিয়ত তোকে কষ্টই দিয়ে যায় সে তোকে কীভাবে ভালবাসবে?
– তুই বুঝবি না ওসব।
আফরোজা উঠে চলে গেলো রুম থেকে। ছোফায় হেলান দিয়ে চোখ বুজলাম। দুচোখে ঘুম ভর করলো।
আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে গেলাম। ঘুমের মধ্যে একটা আচ্ছন্নভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
একটা স্বপ্নের ঘোরে চলে এলাম আমি। মনে হচ্ছে দূরে ও দাঁড়িয়ে আছে।
আমি দৌড়াতে শুরু করলাম,ওকে ধরার জন্য প্রাণপণে!
ওকে আমি জড়িয়ে ধরলাম। ও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
জড়িয়ে ধরা অবস্থায় বললাম
– তুমি আসো না কেনো?
ও বললো
– কই? এইযে এসেছি!
– এভাবে না নীল, বাস্তবে আসো না।
– এসে কী হবে শুনি?
– ওরা আমাকে জোড় করে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে।
– আচ্ছা করো বিয়ে আমি যাই।
– নাহ, আমি বিয়ে করবো না। আমি তোমাকে বিয়ে করবো।
– তুমি তাহলে বিয়ে করো না। আর নিজেকে এতো কষ্ট দিচ্ছো কেনো?

কেউ আমাকে ঝাঁকাচ্ছে। ঘুম ভেঙে গেলো সাথে স্বপ্নটাও ভেঙে গেলো।
দেখি আফরোজা হাতে তোয়ালে নিয়ে আমার কপাল মুছে দিচ্ছে।
আমি বললাম
– তোকে এখানে কে আসতে বলেছে?
– আরে তুই কাঁদছিলি। তোর কান্নার শব্দ পেয়েই তো ছুটে এসেছি।
স্বপ্নে যা যা দেখেছি সেগুলো মনে করার চেষ্টা করলাম।
ওকে যখন স্বপ্নে দেখি তখন স্বপ্নের মাঝে একটা আচ্ছন্নভাব থাকে।
স্বপ্ন সাদা কালো বলে ওর ফেস টা আমার দেখা হয়নি। এটা আমি অনেক আগে ভেবেছিলাম। কিন্তু পরে শুনেছি যে,
স্বপ্নে তাদেরই দেখা যায়, যাদের তুমি জীবনে কোনো একদিন দেখেছো।
কিন্তু ওকে তো আমি কোনোদিনও দেখিনি। তাই ওর ফেসটা আমি স্বপ্নে আনতে পারি না।
কিন্তু ওর বেলায় এই যুক্তিও খাটে না। কারণ ওর দেহের একটা অবয়ব বা ছায়া আমি দেখতে পারি।
ওর সাথে কথা হয় কিন্তু কণ্ঠটা কেমন সেটা আমি কখনওই মনে রাখতে পারিনি।
স্বপ্নের মাঝে যখন ও চলে যায় সেই যাওয়ার সময় একটা ছায়া পরে, সেই ছায়াটাই আমার মেমোরিতে থেকে যায়।
আজও ওর সেই ছায়াটা মেমোরিতে থাকতো কিন্তু আফরোজার এই ঝাঁকানিতে সব গেলো

আমি আফরোজা কে বললাম
– একটু আগেও ওকে আমি স্বপ্নে দেখেছি।ও আমাকে বিয়ে করতে নিষেধ করেছে।
আফরোজা বলল
– তুই বিয়ে করতে চাচ্ছিস না তাই স্বপ্নে এইরকম একটা ক্যারেক্টার তৈরি করেছে তোর অবচেতন মন। তারপর…….

– আফরোজা চুপ কর। তোকে কতবার বলবো ও আমার অবচেতন মনের তৈরি কোনো ক্যারেক্টার না।
– তাহলে কী? শারলিন বল আমায় ও কে?
– আমি জানি না। তবে আমি বিয়ে করতে পারবো না।
– তুই বিয়ে কর। দেখবি ওকে তুই ভুলে যাবি।
– না, আমি ওকে ভুলতে চাই না।
ড্রয়িংরুম থেকে চিল্লাচিল্লির আওয়াজ আসছে।
আফরোজা উঠে চলে গেলো কী হয়েছে দেখার জন্য।
আমাদের বাসার বারান্দা দিয়ে সব রুমেই যাওয়া যায়। ঘোরানো সিস্টেম বারান্দা।
রাত কখন হয়েছে টেরও পাইনি। বিয়ে তো অনেক আগেই হয়ে যাওয়ার কথা এখনও হচ্ছে না কেনো?
যাই হোক আমাকে এই বিয়ে থামাতেই হবে।
ময়লার ঝুড়ির দিকে আবার চোখ পড়লো। কেউ আমাকে টানছে ওই ঝুড়ির দিকে। বসে থাকতে না পেরে ময়লার ঝুড়ির কাছে গেলাম।
কাগজের টুকরো গুলোকে একটা একটা করে উঠালাম। ঘরের জানালা দরজা সবই খোলা।
বাতাস আসছে। বারান্দার যে দরজা সেটা খোলা থাকলে বাতাস বেশি আসে।
খুব ঠাণ্ডা লাগতে শুরু করলো। সব গুলো টুকরো উঠানো হয়ে গেলো।
ড্রেসিং টেবিলে রাখার জন্য উঠে দাঁড়ালাম। আমি যেখানে ছিলাম সেখান থেকে বারান্দায় সরাসরি চোখ যায়।
আমার রুমের দরজার সাথে একটা ছায়া দেখতে পেলাম।
দেখে আমি চমকে উঠলাম। এতদিন যাকে স্বপ্ন দেখেছি তার ছায়া টুকুই শুধু আমার মনে থাকে।
সেই ছায়া বাস্তবে আমার সামনে।ও চলে যাবার সময় যেই ছায়া পড়ে সেই ছায়া। আমার দিকে পিছন ফিরে থাকা সেই ছায়া আর মাত্র কয়েক পদক্ষেপ পরে দাঁড়িয়ে আছে।

চলবে………!

#Maria_kabir

ছায়া নীল! ১

0

ছায়া নীল! ১.

#Maria Kabir

অনেকক্ষণ ধরেই খাতায় কাটাকুটি করছি। কিছু একটাকে পেন্সিলের কালি ব্যবহার করে কাগজে একটা রূপ দেবার চেষ্টা করেই যাচ্ছি সেই সকাল থেকে। হচ্ছে না কেনো?
আমার মেজাজ খারাপ হচ্ছে। যাকে আমি এতোটা চিনি তাকে কেনো কাগজে রূপ দিতে পারছি না?
যে আমার সেই ছোট্ট বেলা থেকে জানি তাকে কেনো কাগজে রূপ দিতে পারছি না।
পেন্সিল টাকে রুমের এক কোণায় ছুড়ে ফেললাম। আর কাগজ টাকে টুকরোটুকরো করে ছিঁড়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেললাম।
পেন্সিল টা দুভাগ হয়ে গেছে। বিছানা থেকে নেমে পেন্সিল টার কাছে গেলাম।
দুই টুকরা পেন্সিল দুইহাতে নিয়ে নিলাম। এটা প্রথম বার নয়। এর আগেও অনেক পেন্সিল ভেঙেছি। অনেক কাগজ ছিঁড়ে টুকরোটুকরো করে ফেলেছি।
তবুও তাকে কাগজে রূপ দিতে পারিনি। কেনো পারছি না?
আচ্ছা, সে কি চায়না আমার কাগজে পেন্সিলের দাগে রূপ নিতে???
দরজায় কে যেনো নক করছে।দরজার কাছে গিয়ে বললাম
– কে??
কথাটা বলেই দরজা খুলে দিলাম। মাকে দেখে আমার খুব রাগ হলো।
মন খুব খারাপ থাকলে দরজা আটকে দিয়ে রুমে চুপচাপ বসে বা শুয়ে থাকি।
কিন্তু মার জন্য আর সেটা হলো না।
দরজা খুলে দিয়ে বিছানায় এসে আসন গেড়ে বসলাম।
মা বললেন
– ১২ টা বাজে। ছেলেপক্ষ চলে আসবে ৩ টার মধ্যে। তুই এখনো বসেই আছিস?
কথা বলার কোনো ইচ্ছা নেই আমার। তাই চুপ রইলাম।
মা আমার ড্রেসিং টেবিলের উপর হলুদ বাটা, লাক্স সোপ আর নতুন গামছা রেখে দিয়ে বলল
– শোনো মেয়ে, এইবার আর কোনো অজুহাত শুনবো না। তোমাকে এইবার বিয়ে করতেই হবে।
আমার জেদ চাপলো। চাপাস্বরে বললাম
– নাহ, বিয়ে আমি করবো না।
মা আমার গালে ঠাস করে চড় মেরে বলল
– গলা বেড়েছে তাই না? এইজন্যই তোমার বাবাকে বলেছিলাম মেয়েদের বেশি পড়াতে নেই। না, সে কেনো শুনবে?
– মেয়েদের পড়াতে হয়। আমি আরো পড়বো।
– আমি আধা ঘণ্টা পর এসে যেনো দেখি তোমার গোসল শেষ হয়েছে। তা না হলে লাত্থি দিয়ে বাসা থেকে বের করে দিবো।
মা রাগে গজগজ করে চলে গেলেন। আমার খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে। বাবাও নেই, বাবাকে মা আমার থেকে দূরে রেখেছেন। যাতে সে আমার বিয়ে ভাঙতে না পারেন।
আমার রুমটা ড্রয়িংরুম এর সাথে লাগানো। বাসায় অনেক মেহমান এসেছে। সবাই আমার আশেপাশে থাকতে চাচ্ছে। কিন্তু আমার তো ভালো লাগেনা এতো মানুষ জন। দরজা খোলাতে মেহমান দের কথাবার্তা কানে আসছে। কেউ কেউ বলছে
– মেয়ের কপাল দেখো? কতো বড় জায়গা থেকে সম্বন্ধ এসেছে?
আমার নানী তাতে তাল মিলিয়ে বলছে
– নাত্নী আমার সুন্দরী বলেই তো এসেছে।
সুন্দরী হওয়াটাই পাপ আমার কাছে। আমি কোনো বড়লোক চাই না। আমি যে তাকেই চাই।
কী করবো বুঝতে পারছি না। আফরোজাকে একটু বলে দেখি।
আফরোজা কে ফোন দিলাম। ফোন রিসিভ হলো। আমি বললাম
– আমি বিয়ে করবো না।
– তোর মা আবার শুরু করেছে?
– হ্যা। আমি অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু নিজেকে ঠিক করতে পারছি না।
– দ্যাখ আর কতোবার বিয়ে ভাঙবি? তুই এবার বিয়েটা করে ফ্যাল।
– আমি পারবো না।
– দ্যাখ, তুই যার আশায় আছিস সেটা কেবলি একটা ভ্রম।
– সে ভ্রম না, সে ছায়া নীল।
ও কিছু বলার আগেই ফোন কেটে দিলাম। বাধ্য হয়ে গোসল করলাম হলুদ বাটা আর লাক্স সোপ দিয়ে।
আমি তো এমনিতেই ফর্শা, আমার তো হলুদ বাটা লাগে না। তারপর ও মার আমাকে হলুদ মাখাতেই হবে।
আচ্ছা ছায়া নীল তুমি কী দেখছে পারছো? আমার আজ বিয়ে?
গোসল করে বের হবার সাথে সাথেই মা এলেন আমাকে সাজাতে।
সাথে আমার বড় খালা আর ছোটো ফুপু। আমার আরো একজন ফুপু আছে। তবে সে অনেক আগেই মারা গেছেন।
আমি নাকি তার মতো দেখতে, বাবা বলেন।
সাজানোর সময় বিড়বিড় করে বলছি। দেখো না ছায়া নীল আমাকে সাজাচ্ছে।
তুমি কী আসবে না??
আমার রুমেই আমি বসে আছি। হঠাৎ সবার চ্যাঁচামেচি বেড়ে গেলো। বাসার বাচ্চারা বলতে লাগলো – বর এসেছে, বর এসেছে।
বুঝতে পারলাম,
ছেলে পক্ষ চলে এসেছে। তাদের কথাবার্তা সবই আগে থেকেই হয়ে আছে। আজকে শুধু কাবিন করাবে। পারলে আমাকে একেবারে উঠিয়ে নিয়ে যাবে। কথা গুলো আমার জানা ছিলো না। সবার কথাবার্তায় বুঝতে পেরেছি।
বড় খালা আমার রুমে এলেন। সবাই আজ খুব সেজেছে। পুরো বাড়িটাকে সাজানো হয়েছে। বড় খালা বললেন
– কোনো ঝামেলা যেন না হয়। বুঝতে পারছিস?
আমি মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালাম।
বড় খালা চলে গেলেন আর আমাকে ছোটো ছোফার উপর বসিয়ে দিয়ে গেলেন।
আমাকে মা বলেছিলো – শুধু দেখতে আসবে।
তবে আমি জানি মা মিথ্যে বলেছে, যাতে আমি খারাপ কিছু না করে বসি।
ছেলে আমার সাথে নাকি কথা বলবে। ছেলের ছবি আমাকে মা দিয়েছিলো। আমি দেখিনি, ছিঁড়ে ফেলেছি।
আমি চেহারা দেখতে চাই না, দেখতে চাই তার ছায়া।
কানে কারো পায়ের শব্দ আসছে। মনে হয় সেই ছেলে আসছে। ধীরেধীরে শব্দটা আমার রুমের দিকে আসছে।
তারপর শব্দটা আর নেই। এর অর্থ, আমার রুমের দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তারপর
ছেলে আমার সামনের ছোফায় এসে বসলো। আমি তাকাবো না, আমি তো দেখবো তার ছায়াকে।না তাকিয়েও বোঝা যাচ্ছে, ছেলে বেশ লম্বা আর অনেক ফর্শা।
আর আমিও তো কম ফর্শা না। আয়নায় যখন নিজেকে দেখি নিজেরই চোখ সরে না।
আচ্ছা নীল, তোমারও কি চোখ সরে না আমাকে যখন দেখো?
একটু পরই আমার বিয়ে, তুমি আমাকে নিতে আসবে না?
ছেলে বলল
– আমার নাম তুহিন। আপনার নাম?
– শারলিন।
– আপনি খুব সুন্দর। বিশেষ করে আপনার চোখ।
হ্যা হ্যা, আমার চোখ খুব সুন্দর। কিন্তু সে তো জানে না? জানে?
আমার কোনো উত্তর না পেয়ে তুহিন বলল
– আমি পেশায় একজন ব্যবসায়ী। অনেক নাম ডাক আমার।
– হুম। আমি ইন্টার পাশ। মেয়েদের বেশি পড়তে নেই।
– আপনার মতো সুন্দরীদের তো ঘরে আটকে রাখাটাই ভালো।
– হ্যা, পায়ে শিকল দিয়ে।
– শুনো একটু পরেই কাবিন হবে এবং তার পর পরই তোমাকে নিয়ে যাবো। আর আমার সাথে কোনো ত্যাড়া কথা চলবে না।
– এতো তাড়াতাড়ি তুমিতে নামলেন?
– আচ্ছা, আমি যাই।
বলেই তুহিন লোকটা চলে গেলো। এখনো এই দুনিয়াতে বিয়ের জন্য মেয়েদের অনুমতি নেয়া হয়না।
দেখো না কীভাবে আমাকে জোড় করে বিয়ে দেয়া হচ্ছে, নীল?
নীল তুমি আমাকে বুঝতে পারছো না?
তুমি কি শুধুই ভ্রম হয়েই রবে? নাকি………..

চলবে……..!

#Maria_kabir