অন্যরকম_বিয়ে চতুর্থ_অংশ
বিয়ের আগে আমাদের দুই ফ্যামিলির যেখানে খুব ভাল সম্পর্ক ছিল সেটা এখন প্রায় শত্রুতায় পরিণত হল।মুখ দেখাদেখি বন্ধ।কথা বলা বন্ধ।
মিলির এ নিয়ে কোন অনুশোচনা ছিল না।বিয়ের পর ওর সব কাপড় চোপড় আমাদের বাড়িতে চলে এল,, বাড়ি বলতে আমার ঘরে। ওর সব কিছু আমার ঘরে থাকলেও ওর নিজের জায়গা হত না আমার ঘরে।
আমি বাসায় থাকতে ও আমার ঘরে ঢুকত না, কথাও কম বলত প্রয়োজন ছাড়া কথা হত না।তবে দুই দিন যেতেই ওকে মেরে ফেলার প্লান বাদ দিয়ে,,,ওকে ইগ্নোর করা শুরু করলাম।
বাসার কেউ আমার কথা বোঝার চেষ্টা করেনা,
বাহিরের কাউকে বলবো তারও কোন উপায় ছিল না।এ অবস্থায় মিলিকে মেরে ফেলা ঠিক হবেনা।তাই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করলাম।
আমার সাথে মিলির খুব অল্পই কথা হতো।সেটাও খুব প্রয়োজনীয়।ও আমাকে এখন তুমি করে বলা শুরু করছে।
কি অদ্ভুত, যে মেয়েটা দুদিন আগে ভাইয়া আর আপনি বলত সে আজ তুমি বলে,,,নাম ধরে ডাকে,,,, যদিও হ্যাজবেন্ডকে কেউ ভাইয়া
বলেনা।তবুও ব্যাপার টা কেমন জানি।
ওর সারাদিন কোন কাজ থাকেনা,,সেজে গুজে থাকা ছাড়া।ইদানিং শাড়ি পরাও শুরু করেছে।
গতকাল ওকে বললাম,,,,
– ব্যাপার কি শাড়ি পরো কেন ?
•
– বাড়ির বউ শাড়ি পরব না,,
•
– ও আচ্ছা,,
•
– কেন,,,আমি শাড়ি পরলে ভাল লাগেনা ?
•
– না খুব বাজে লাগে,,
.
তবে মিলিকে শাড়ি পরলে খুব সুন্দর লাগত।শাড়িতে বেশ মানিয়ে যেত ওকে।
মেয়েটা আমাকে সরাসরি ভালবাসি বললে কিছু একটা ভেবে দেখতাম তাই বলে এ ভাবে,,,,
মিলিকে কিছু একটা বললেই সেটা বাবা মায়ের কানে চলে যেত। এই যে শাড়িতে ওকে বাজে বলেছি এটাও মায়ের কানে চলে গেলো।
খেতে বসে মা আমাকে কথা শুনিয়ে দিল।
বললো,,,
•
– প্রেম করে বিয়ে করেছিস,এখন আবার এমন করিস কেন ?
•
– কি করেছি ?
•
– মিলির সাথে খারাপ ব্যাবহার করিস কেন,,এত ভাল একটা মেয়ে।আমাদের কোন কথাই ফেলেনা।আর খারাপ ব্যাবহার করবিনা।
•
– আমি কারোর সাথেই খারাপ ব্যাবহার করিনা,,
.
আমার কোন কথাই মা বাবা বুঝত না।
যে কোন কিছু হলেই ভাবত সেটা আমার দোষ।
.
সমস্যা শুধু বাসাতে তা নয় ক্যাম্পাসেও হলো।
যখন সব বন্ধু বান্ধবীরা জানলো বিয়ে করেছি,
সবাই আমার উপর মন খারাপ করলো।অনেক কষ্টে ওদের বোঝালাম সব হুট করে হয়েছে।সবাই মিলিকে দেখতে চাইলো।
এটা অবশ্য খুব একটা প্রবলেমের ছিলনা।
মিলির কলেজ আর আমার ভার্সিটি প্রায় এক সাথেই ছিল
তাই একদিন মিলিকে ডাক দিয়ে দেখিয়ে দিলাম।সবাই মিলিকে দেখে মিলির খুব প্রশংসা করল।এত মিষ্টি মেয়ে তুই কিভাবে বিয়ে করলি ?তোর ভাগ্য ভাল। ওদের কথা শুনে মনে হয়েছিল ওরা কেউ আমার বন্ধু না সব মিলির বন্ধু।
•
এরপর থেকে যত দিন যেতে লাগল মিলি আমার উপরে অধিকার খাটানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
সেদিন বিছানায় শুয়ে ছিলাম, হুট করেই দেখি মিলি আমার রুমে এলো।
– কি ব্যাপার ? অনুমতি ছাড়া আমার ঘরে আসলে কেন ?
•
– কিসের অনুমতি,,,,আমারও ঘর এটা,,,,
•
– কি কারণে ঢুকছ ?
•
– কলেজ যাবো,,
•
– তো যাও,, কলেজে এ পড়ো,, সাথে করে যেতে হবে নাকি,,
•
– বাবা বলছে তোমায়,আমাকে কলেজে রেখে আসতে,,
•
– আমি পারবো না,, আর তুমি আপনি করে বলবা আমাকে,,
•
– কিসের আপনি ? আর পারবানা কেন ?
•
– তোমাকে কলেজে নিয়ে গেলে বাইকের যে তেল ফুরাবে সেই তেলের টাকা কে দিবে ?
•
– আজব তো,, বিয়ে করছ।আমার পিছনে খরচ করবা না তো কার পেছনে করবা ?
বিয়ের আগে হেল্প চাইলে তো ঠিকি করতা,,,,,
.
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই ঘরের বাহির থেকে বাবা বলতেছে,,,,
– চিৎকার হয় কিসের ? যা কলেজ নিয়ে যা,,
.
বাবার মুখের উপর কথা বলার সাহস তখনো হয়নি তাই বাধ্য হয়ে কুমুকে নিয়ে বের হতে হলো।
একবার ভাবলাম মেয়েটাকে নিয়ে ট্রাকের নিচে ফেলে দেই,, পরে মনে হলো এইভাবে তো নিজেও মরবো। না এইভাবে হবে না।
মিলিকে বাইকে নিয়ে আরেক অসুবিধা এই মেয়ে এত চেপে বসে কেন,,,,
একবার বলেই ফেললাম,,,,
•
– মিলি এভাবে কেন বসো ?
•
– কিভাবে ?
•
– আগে যে ভাবে বসতে সেভাবে বসো,,,,
•
– আগে তো আমরা স্বামী স্ত্রী ছিলাম না তাইনা ?
এর পর আমি আর কিছু বললাম না। খুব দ্রুত মিলিকে কলেজে পৌছে দিলাম।
কিন্তু, সেখানে গিয়েও আরেক প্রবলেম। বাইক ঘুরিয়ে ফিরে আসার সময় মিলি বলল,,,,
•
– টাকা দাও কিছু ?
•
– কেন?
•
– কেন আবার ? আমার হাত খরচ লাগবেনা ?
•
– আমার কাছে চাও কেন ?
•
– উহু তুমি ছাড়া কে দিবে ? কার কাছে চাইবো,,
.
কলেজের সামনে কথা বাড়ানোর কোন ইচ্ছাই ছিলনা।তাই বাধ্য হয়ে পাঁচশ টাকার একটা নোট বের করে ওর হাতে দিতে হল।
.
মিলিকে কলেজ থেকে আনতে যাওয়ার কথা ছিল অবশ্য কিন্তু আমি আর গেলাম না।
সেদিন সারাদিনে বাসায় ও ফিরলাম না।মিলি দুবার ফোন করেছিল ফোন ও ধরিনি।রাত্রে বাসায় এসে শুনি অনেক কিছু হয়েছে।মিলির বাসা থেকে সব মেনে নিয়েছে।
একটাই মেয়ে মেনে নেওয়া ছাড়া অন্য কোন উপায়ও ছিল না।আমার অবশ্য এ বিষয়ে কোন ইন্ট্রারেস্ট ছিল না।
তবে সেদিনের পর থেকে মিলির খবর দারী বেড়ে গেল।এটা কেন করি ? ওটা কেন করি ?
ঠিকমত খাচ্ছিনা কেন ? এই কাপড়ে ভাল লাগেনা।ওখানে যাবানা ইত্যাদি।
ওর এসব কাজ কর্মের বিরুদ্ধে আমি কিছু বলতেও পারতাম না। বাবা মা দুজনেই ওর পক্ষে ছিল।আমি শুধু সব মুখ বুজে সহ্য করে নিতাম।
তবে আজ মিলি অতিরিক্তই করে ফেলল।রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে নিজের রুমে এসে
পিসিতে বসেছিলাম। ইদানিং কিচ্ছু লেখা হয়না মন মেজাজের অবস্থা চূড়ান্ত রকমের খারাপ।
কিছুক্ষন যেতেই দেখি মিলির প্রবেশ আমার ঘরে।
•
এই মেয়ে রাতে আমার ঘরে কি করতে এসেছে,,,
•
-তুমি এখানে কেন ?
•
-কেন আবার ? সারাজীবন তোমার বোনের ঘরে থাকব নাকি,,,,, ??
চলবে..
লেখা ||Tuhin Ahamed