অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৯
লেখা –সুলতানা ইতি
আমি আপনাদের সবার কাছে নিহারের হয়ে ক্ষমা চাইছি
উপস্থিত সবাই চুপ কারো মুখে কোন কথা নেই
সবার প্রথমে গাইথি কথা বল্লো
– আপনি কথা গুলো বলে সবার কাছে ভালো হয়ে গেলেন,আমার কি হবে একটা মেয়ের বিয়ে ভেঙে যাওয়া কতোটা অপমানের, সেটা আপনার মতো লোকের বুঝার কথা নয়
চুহেস গাইথির দিকে এক নজর তাকিয়ে বল্লো
– ঠিক বলেছো,,তোমাকে অপমানের হাত থেকে বাচানোর একটা এ উপায় আছে, যার সাথে তোমার বিয়ে ভেঙেছে তার সাথে আবার বিয়ে হওয়া
এবার আদনান বল্লো
– কিন্তু সে যদি আমার বোন কে বিয়ে করতে রাজি না হয়
চুহেস- রাজি হবে,আমি কথা বলবো ওর সাথে আপনারা ওকে আসতে বলুন
আদনান। ঐশীর দিকে তাকায়
ঐশী বুঝতে পারলো আদনান কি বলতে চায়
– ঠিক আছে আমি ফোন করছি
চুহেস উপস্থিত গ্রামবাসী দের উদ্দেশ্য করে বল্লো,
-সব ঝামেলা তো শেষ হলো,এবার নিশ্চয়ই আপনাদের আর কিছু বলার নেই
গ্রামের সকলের মাঝে দোকানি রফিক ও ছিলো,
– সে বল্লো না বাবা আর কিছু বলার নেই আমাদের
গ্রামের সবাই চলে গেলো,শুধু দোকানী রফিক যায় নি
চুহেস গভীর ভাবে যেন কিছু ভাবছে
আমি যদি সাইমুম আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করি তা হলে আমি আর ও দূর্বল হয়ে পড়বো, হয়তো সাইমুম কে সব কথা গুছিয়ে বলতে পারবো না,তার আগে এখান থেকে সরে পড়তে হবে
চুহেস আদনান কে উদ্দেশ্য করে বল্লো,আমি সাইমুম এর জন্য একটা মেসেজ লিখে রেখে যাচ্ছি, দয়া করে আপনি, ও আসলে দিয়ে দিবেন
এখন তা হলে আমরা উঠি, চুহেস আদনানের হাতে মেসেজ লিখা কাগজ টা দিয়ে
নিহার কে নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ,
চুহেসের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে আহমদ মেহেরা,দোকান দার রফিক, আর উপস্থিত সবাই
কারো মুখে কোন কথা নেই
নিরাবতা ভেঙে রফিক বল্লো
আহমদ,তুমি এখন ও চুপ করে থাকবে, অনেক তো অন্যায় হলো ছেলেটার প্রতি,আর কোন অন্যায় হতে দিও না,সে আমাদের গাইথি মাকে ছোট বেলা থেকেই অনেক পছন্দ করে
আদনান রফিকের কথা শুনে অবাক হয়ে আহমদ মেহেরাকে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– বাবা রফিক চাচা কি বলছে, আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না,চুহেস স্যারের সাথে আমাদের কি আগের কোন সম্পর্ক আছে
আহমদ মেহেরা ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে, এই বয়সে এসে ভয়ংকর সত্যের মুখোমুখি হতে হবে তা তিনি কোন দিন ভাবেন নি, কি জবাব দিবে ছেলে মেয়েদের
শ্বশুরের নিরাবতা দেখে ঐশী বল্লো
– বাবা আমার মনে হয় চুহেস ছেলেটার সাথে এই ফ্যামেলির একটা যোগসাজশ আছে,অনেক দিন আগে আমি কিছু কাগজ পত্র
গুছাতে গিয়ে একটা ছবির এ্যালভাম পাই,এ্যালভামের অনেক ছবির সাথে আমি গাইথির সাথে একটা ছেলের ছবি দেখি,সেই ছবির ছেলেটার সাথে এই চুহেস ছেলেটার চেহেরা হুবহু মিলে যাচ্ছে
হঠ্যা ৎ গাইথির মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন এসে ভীড় করে
সে ঐশী কে বলে
– ভাবি ছবি টা তে কি আমার গায়ে সাদা জামা ছিলো
ঐশী- হুম, সাদা জামা ছিলো তোর গায়ে
গাইথি যেন চুপসে যায়, হয়তো সে অতিতের সাথে কিছু মিলাতে চেষ্টা করছে
আদনান আবার ও বল্লো,
– বাবা ছোট বেলায় তুমি আর মা, আমাকে পড়া লেখার জন্য মামার বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছিলে, তবু ও আমার পঞ্চইন্দ্রিয় বলছে, ছোট চাচার ছেলে , আজকে আমাদের এই চুহেস স্যার,
একবার আমি বাড়িতে আসার পর চুহেসের কথা জানতে চাইলে তুমি বলে ছিলে চুহেস তোমার টাকা চুরি করে পালিয়েছে,
কথা টা তুমি মিথ্যা বলেছিলে সেটা আজকের চুহেস কে দেখে ই বুঝতে ফেরেছি আমি
সন্তানের মুখে এসব কথা শুনে আহমদ মেহেরার চোখ দিয়ে গড় গড় করে পানি পড়ছে
গাইথি এগিয়ে গিয়ে বাবার পায়ের কাছে বসে
– বাবা তুমি আর কিছু লুকিয়ে ও না, যা জানো সব বলো
এবার আহমদ মেহেরা কথা বল্লো,চোখ মুছে তিনি বলতে শুরু করলেন
– এই গ্রামে অনেক সম্পত্তির মালিক ছিলো আমার বাবা আজম মেহেরা, তার মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে, আহমদ ও আবরার সে সম্পত্তির মালিক হয়
কিন্তু তখন আমার মাঝে লোভ কাজ করছিলো
আমি চেষ্টা করতে শুরু করলাম কি করে আবরার কে সম্পদ কম দেয়া যায়,
কিন্তু সেটা কিছুতেই সম্ভব ছিলো না, কারন বাবা মিত্যুর আগে উইল করে যায়, যেন আমাদের মাঝে আর কোন ঝামেলা না থাকে,
আবরার তার বউ ছেলে কে নিয়ে আলাদা থাকতো আমাদের থেকে, একদিন খবর এলো অফিস থেকে ফেরার পথে রোড এক্সসিডেন্টে আবরার গুরুতর আহত হয়,আবরার কে হোসপিটাল নিয়ে যাওয়া হয়,
খবর পেয়ে আমরা ও সেখানে যাই আবরার ইমারজন্সি তে তিন দিন ছিলো, তার পর সে মারা যায়
হয়তো আবরার এভাবে চলে যাওয়া টা,চুহেসের মা মেনে নিতে পারেনি, সে আসতে আসতে অসুস্থ হয়ে যায়,
তখন আমাদের ওদের বাড়িতে রিতিমত আসা যাওয়া হতো, ব্যাংকে যা টাকা ছিলো তা এক সময় শেষ হয়ে যায়,
আবরারে বউ আফসানা তখন আমাকে ডেকে বলে
– ভাইজান টাকা পয়সা সব তো শেষ আমার চিকিৎসার পিছনে, আমি হয়তো আর বাছবো না, তবুও আমার ছেলেটার কথা ভাবলে বাছার খুব ইচ্ছে হয়,
তার তো আর কেউ নেই, আপনার ভাই চলে গেছে,কিছু সম্পত্তি আমার নামে রেখে গেছে সেখান থেকে কিছু বিক্রি করে চিকিৎসা টা করাতে চাই,
আর চুহেসের সম্পদ চুহেস বড় না হওয়া পর্যন্ত কিছু করা যাবে না
আমি এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলাম, বললাম ঠিক আছে আফসানা আমি টাকা দিবো, সে টাকার বিনিময়ে তুমি কিছু জমি আমার নামে লিখে দিও, আফসানা রাজি হয়,
আমি আফসানার অসুস্থতার সুযোগ নিয়ে আফসানার নামে থাকা সব সম্পত্তি আমার নামে লিখিয়ে নিই, তার কিছু দিন পরে আফসানা ও আবরারে পথে পাড়ি দেয়,
চুহেস কে আমি আমার কাছে নিয়ে আসি,তোর মা চুহেস কে পছন্দ করতো না,
সে বলতো চুহেসের থাকা খাওয়ায় অনেক টাকা খরচ হয়, বিশেষ করে চুহেস গাইথির সাথে খেলতো, সারা দিন গাইথি চুহেসের পিছু পিছু থাকতে,আর এটা সেটা আবদার করতো,
চুহেস গাইথির সব আবদার মেনে নিতো ব্যাপার টা তোদের মা ভালো চোখে দেখতো না
একদিন গাইথি কে নিয়ে চুহেস রাতে চাঁদ দেখতে বের হয় তোদের মা অনেক রেগে যায় চুহেসের উপর ওকে অনেক মারধর করে,
আমার কাছে নালিশ করে আমি চুহেস কে না মারলে,অনেক খারাপ ভাষায় কথা বলি,
এই টুকু বলে আহমদ মেহেরা থামলো নিজের চোখের পানি মুছলো,উপস্থিত সবার চোখে পানি
আহমদ মেহেরা চোখের পানি মুছে আবার বলতে শুরু করলো,ছোট থেকে চুহেসের আত্মসম্মান একটু বেশি ছিলো,হয়তো এই জন্য ই সে রাতে কাউকে না বলে বাড়ি থেকে চলে যায়,
আমরা কেউ আর তার খোজ নিতে চেষ্টা করিনি, আসতে আসতে সবাই চুহেসের কথা ভুলে যায়,,
আহমদ মেহেরা থামলো,কারো মুখে তখন কোন কথা নেই,
এমন সময় সাইমুম এসে উপস্থিত হয়,,সাইমুম গাইথি কে দেখে অবাক হয়,
সাইমুম গাইথির দিকে এক গাধা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়, গাইথি কারা তোমাকে নিয়ে গেছে, আমি জানি তুমি অন্য কারো সাথে যেতে পারো না,নিশ্চয়ই তোমাকে কোন বোখাটে তুলে নিয়ে গেছিলো, তোমার কোন ক্ষতি করেনি তো তারা
গাইথি সাইমুমের কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে
– ভাইয়া তুমি একে কেনো ডেকেছো বলো,এই বলে গাইথি তার রুমে চলে যায়
আদনান গাইথির দিকে একটুকরো কাগজ এগিয়ে দেয়
সাইমুম- কি আছে এটা তে
আদনান- তুমি দেখো
সাইমুম কাগজ টা খুলে দেখে কয়েক টা লাইন লেখা”গাইথি তোমার ছিলো তোমার আছে,তোমার থাকবে
চুহেস মেহেরা
সাইমুম – কিছুক্ষন চুপ থেকে বল্লো, এখন আপনারা কি ভেবেছেন এই ব্যাপার টা নিয়ে
আদনান- আমরা এখন এই নিয়ে কোন কথা বলতে চাই না তুমি এখন আসতে পারো
সাইমুম আদনান এর এমন ব্যাবহারে একটু অবাক হলো তার পর কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো
to be continue