অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৬

0
2889
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৬
অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৬

অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৬

লেখা –সুলতানা ইতি

তার মানে তুমি বলতে চাইছো কথা টা সাধারন ঠিক আছে তা হলে চলো কাজী অফিস যাই

এবার গাইথি হাটা বন্ধ করে থেমে যায়, চুহেসের দিকে তাকিয়ে বলে
-আপনি কি সিরিয়াস, নাকি মজা করছেন

চুহেস-কেনো তোমার কি মনে হচ্ছে
গাইথি রেগে গিয়ে বলে
-আমার কিছুই মনে হচ্ছে না আসলে আপনার সাথে কথা বলা ই আমার ভুল হয়েছে প্লিজ আপনি যান,এই বলে গাইথি আগে আগে হাটা শুরু করলো

চুহেস – এই গাইথি আমি তো মজা করছিলাম তোমার সাথে, প্লিজ রাগ করো না, আচ্ছা যাও এই কান ধরেছি এবার তো আমার দিকে তাকাও

গাইথি থমকে দাড়ালো পিছনে তাকিয়ে দেখে সত্যি চুহেস কান ধরে দাঁড়িয়ে আছে,
গাইথি চুহেসের কাছে গিয়ে ধমক দিয়ে বলে
-আপনি কি পাগল, এ ভাবে রাস্তার মধ্যে কেউ কান ধরে, কেউ দেখলে কি হবে বলুন তো, হাত নামান

চুহেস কান ছেড়ে দিয়ে বল্লো
-কি করবো বলো, এমন না করলে তো তুমি রাগ দেখিয়ে চলে যেতে

গাইথি ভাবছে চুহেসের মতো একটি ছেলে আমার জন্য এতো পাগলামি করছে কেনো, কি হই আমি তার মাত্র তো কয়েক দিনের পরিচয়

চুহেস- কি হলো কথা বলছো না যে
গাইথি- কি বলবো?
চুহেস- চলো কোথাও গিয়ে বসি
গাইথি- আমার কলেজ
চুহেস- আজ আর যেয়ে লাভ নেই দেখো ১১টা বাজে সো চলো কোথাও বসি
গাইথি- কোথায় বসবেন
চুহেস- কোন খোলা মাঠ হলে ভালো হয়

তা হলে চলুন আমাদের বাড়ির ওদিকে একটা খোলা মাঠ আছে সেখানে যাই
চুহেস- চলো

অনেক্ষন হলো চুহেস সবুজ ঘাসের উপর বসে আকাশের দিকে ছেয়ে আছে মনে হচ্ছে সে এ জগতে নেই, ঐ বিশাল আকাশে যেন কিছু খুঁজছে মনযোগ দিয়ে

গাইথি নিরাবতা ভাংলো, আপনাকে একটা কথা বলা হয়নি
চুহেস- কি কথা
গাইথি- হয়তো কথাটা বলার কোন প্রয়োজন নেই তবুও বলছি

চুহেস গাইথিকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
-ওতো ভণিতা না করে সোজাসুজি বলো, কথা টা কি
গাইথি-আমি এঙ্গেজড

কথা যেন চুহেস বুঝতে পারলো না সে এমন ভাবে বল্লো
– কি বললে তুমি

গাইথি- হুম যা শুনেছেন তা সত্যি, আমার এস এস সি পরিক্ষার পরেই পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠান করে এঙ্গেজ হয়

চুহেস পুরো কথা টা শুনে পাথরের মতো বসে রইলো, তার পর রাগ না করে নরম স্বরে বল্লো
-তুমি কথা টা আমায় কেনো বলেছে, তুমি কি কিছু আঁচ করতে ফেরেছো

গাইথি-নাহ মানে,আমি এমনি বলেছি

চুহেস- মিথ্যা বলছো কেনো তুমি ভেবেছো আমি তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছি, তাই তুমি কথা টা বলে আমাকে সাবধান করেছো,সাবধান করার মতো কিছু হয়নি গাইথি, আমি চললে যাচ্ছি আমার ব্যাস্ত শহরে,আর হয়তো আমাদের দেখা হবে না আবার কাজে ডুবে যাবো
হয়তো কোন এক পড়ন্ত বিকেলে কপির ধোয়া তোমার কথা মনে করিয়ে দিবে,কিন্তু তা আমি মন থেকে ধোয়ার মতো করে ই উড়িয়ে দিবো, হয়তো কোন নির্জন সন্ধা কপি খাওয়ার সংগী হিসেবে তোমাকে পাশে চাইবে,কিন্তু আমি সেটা পাত্তা দিবো না, যদি শিশির ভেজা ঘাসের উপর তোমার হাত ধরে হাটার ইচ্ছে হয়, আমি ছুঁয়ে যাবো পাতায় ঝমে থাকা শিশির বিন্দু কে তবুও আসবো না বাধা হয়ে তোমার সুখের জীবনে,

আচ্ছা চলি, এই বলে গাইথি কে একটা কথার সুযোগ না দিয়ে চলে গেলো

গাইথি থ হয়ে সেখানে বসে আছে, কি বলে গেলো ও কিছুই বুঝলাম না দার্শনিকের মতো কতো গুলো কথা বলেই চলে গেলো,আচ্ছা ওকি সত্যি চলে যাবে আর কখনো ফিরবে না কথা টা মনে হতেই গাইথি মনের গহীনে কাটা বিধার মতো ব্যাথা অনুভব করলো
চুহেস চলে যাবে কথা টা আমি মানতে পারছি না কেনো, উফফ আর ভাবতে পারছি না,এই কয়দিনে আমার জীবন টা পুরো পালটে দিলো,
গাইথি আনমনা হয়ে সেখানে কতোক্ষন বসে ছিলো তার খেয়াল নেই,অবশেষে বাড়ির পথে হাটা ধরলো

চুহেস আনমনা হয়ে হাটছে যেনো সে নিজের মধ্যে নেই,বাবুই কি বিয়ে তে রাজি নয় ওর কথার ধরন দেখে বুঝলাম বিয়েতে ওর মত নেই তা হলে কেনো বিয়ে ঠিক হলো,বাবুই কি আমাকে…
এই টুকু ভেবেই আবার থেমে গেলো নাহ
এই সব কি ভাবছি আমি
এতো অল্প সময়ে কেউ কাউকে ভালোবাসতে পারে না আর বাবুই তো ছোট বেলার কথা ভুলেই গেছে,

রেস্ট হাউজে এসেই নিহার কে বল্লো
-নিহার সব কিছু কি রেডী?
নিহার- জ্বী স্যার,আমরা ভোর রাতে রওনা হতে পারবো

চুহেস- ভোর রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে না নিহার,আমরা এখন ই রোওনা হবো

নিহার অবাক হয়ে বল্লো -এখন
চুহেস- কেনো তোমার কি কোন কাজ আছে না কি এখানে

নিহার – না স্যার ঠিক আছে চলুন
ব্যাগ প্যাক সব গাড়িতে উঠালো নিহার, ড্রাইভিং সিটে নিহার বসে গাড়ি স্ট্রাট করলো

পিছনে চুহেস বসে, মন টা তার খুব ভারী হয়ে আছে মনে হচ্ছে সব ছেয়ে মূল্যবান জিনিষ টা যেন রেখে যাচ্ছে,

নিহার খেয়াল করলো চুহেসের দিকে, তার পর বল্লো
– স্যারের কি মন খারাপ,

চুহেস- না,
নিহার- মনে হয় গ্রাম ছেড়ে যাচ্ছেন দেখে মন ভালো নেই আপনার

চুহেস ধমক দিয়ে বল্লো সামনে তাকিয়ে গাড়ি ড্রাইভ করো চারিদিকে নজর দিতে হবে না
নিহার আর কিছু বল্লো না গাড়ির লুকিং গ্লাসে দিয়ে চুহেসের দিকে নজর রাখলো হয়তো নিহার চুহেসের মন পড়ার চেষ্টা করছে, ভাবছে নিহার সামনে তাকিয়ে স্যার মনের মাঝে এতো কষ্ট লুকিয়ে বেছে আছে কি করে

প্রায় নয় ঘন্টা পরে ওরা ঢাকায় গিয়ে পৌছলো, জ্যামের কারনে দেরি হয়েছে, রাত তখন দুইটা
চুহেস ফ্রেশ হয় এসে বসে থাকলো কি করবে কিছুই ভালো লাগছে না

নিহার- স্যার আপনি ঘুমিয়ে নিন, সময় মতো আমি আপনাকে ডেকে তুলবো,
এই বলে নিহার চলে যায়

চুহেস যেমন ছিলো তেমন ই বসে আছে মন টা বার বার কুহ ডাকছে, কেনো এমন লাগছে বুঝতে পারছি না, সুন্দর নগরের আপন মাটি আপন মানুষ বাবুই কে রেখে আসার জন্য ই কি এমন লাগছে, কিন্তু বাবুই তো আমার নয় সে অন্য কারো জন্য বউ সাজবে, ছোটবেলায় ওকে আমি নিজ হাতে বউ সাজিয়ে দিতাম ওর জন্য ই মেয়েদের সব সাজের নাম আমার মনে রাখতে হতো, ভেবেছিলাম বড় হলে একেবারে বউ সাজিয়ে নিয়ে আসবো আমার কাছে, কিন্তু তা আর হলো না,একটা ঝড় এসে আমাদের সাজানো বাগান টাকে এলোমেলো করে দিলো,
গুছিয়ে দেয়ার জন্য নতুন করে কেউ আসেনি,যারা এসেছিলো বন্ধু বেসে, তারা স্বার্থের জন্য এসেছিলো, স্বার্থ নেই তারা ও এখন আর নেই,আফসোস আহমদ মেহেরা এতো আপন হয়ে ও তাদের দলের
ভাবতে ভাবতে ই চুহেসের তদ্রা লেগে এলো চোখে

পরদিন থেকেই চুহেসের আবার ব্যাস্ত জীবন শুরু, এতো ব্যাস্ততার মাঝে ও চুহেস তার বাবুই যে ভুলতে পারছে না, কিন্তু না ভুলতে চাইলে ও ভুলে থাকার অভিনয় করতে হবে, বাবুই আমার নয়,

নিহার কতো গুলো ফাইল হাতে নিয়ে চুহেসের ক্যাবিনে যায়
ক্যাবিনে ডুকে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে ছিলো
– চুহেস খেয়াল করেনি

নিহার বুঝে ছিলো স্যার নিজের মাঝে নেই, কেনো নেই তা ও বুঝতে পারছে নিহার,
– আর নয় অনেক হয়েছে এবার আমি নিজেই স্যারের এই কষ্ট টা দূর করার চেষ্টা করবো,
নিহার স্যার বলে ডাক দিলো

চুহেস চমকে উঠে বল্লো হা তুমি, কখন এলে
নিহার- এই তো কিছুক্ষন আগে, এই ফাইল গুলো তে আপনার সাইন লাগবে
চুহেস- রেখে যাও

নিহার- স্যার আমার এক দিনের ছুটি লাগবে
চুহেস- তোমাকে তো চাকরী তে জয়েন করার সময় বলা হয়েছে দুই ঈদ ছাড়া তুমি এমনি কোন ছুটি পাবে না।

নিহার- তবু ও স্যার একদিনের জন্য
চুহেস- ঠিক আছে দিলাম

নিহার ছুটি পেয়ে খুশি হয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে নিদিপার কাছে ফোন করে(পাঠক নিদিপা গাইথির বান্ধুবী ভুলে যাবেন না)

নিদিপার আর নিহারের পরিচয় হয় গ্রামে একদিন চুহেস কে খুঁজতে বেরিয়ে না পেয়ে বোর হচ্ছিলো
তখন নিহারের মনে দুষ্ট বুদ্ধি এলো যে অনেক ছেলে ই তো রাস্তা মেয়ে দেখলে পটাতে চায়,আজ আমি ট্রাই করে দেখি পারি কিনা,

ঠিক তখন নিদিপা কলেজ থেকে বাড়ি ফিরছিলো
নিহার- আরেহ তোমাকে কোথায় যেন দেখেছি,এমন ভাবে নিহার বল্লো যেন অনেক দিনের পরিচিত নিদিপা

নিদিপা তো অভাক হলো
নিদিপা- মানে কি বলছেন আপনি
নিহার- আরেহ তুমি আমাকে ছিনতে পারছো না আমি নিহার

নিদিপা-কিন্তু আপনাকে কোথাও দেখেছি বলে আমার মনে হয় না
নিহার- আচ্ছা বাদ দাও,তোমার নাম টা যেন কি?
-আমি নিদিপা

নিহার- ওহ হা এই তো মনে পড়েছে নিদিপা,আচ্ছা নিদিপা আজ তা হলে আসি
এই বলে নিদিপা কে কোন কথা সুযোগ না দিয়ে উলটো দিকে হাটা ধরলো

নিদিপা তো কোন কিছু ই বুঝতে পারলো না পুরো ব্যাপার টা যেন মাথার চার ইঞ্চি উপর দিয়ে গেলো

নিহার ফিরে এসেই ফেজবুকে নিদিপা নাম সার্চ দিয়ে নিদিপার আইডি খুঁজে বের করে নিদিপা কে মেসেজ দেয়

হাই আপনি কি নিদিপা? আই মিন রাস্তার
ও পাড়ের নিদিপা

প্রায় ঘন্টাখানেক পর নিদিপার রিপ্লায় আসে আপনি সেই হঠ্যাৎ দেখার ছেলেটি তাই তো

এ ভাবে ই তাদের কথা বলা শুরু হয় এক সময় প্রেম হয়
নিদিপার কাছে থেকে নিহার জানতে পারে আজ তার বান্ধুবী গাইথির বিয়ে

নিহারের মনে কৌতুহল জাগে,
নিহার-কোন গাইথি?
নিদিপা- তুমি চিনবে না, আমার বান্ধুবী কে

নিহার- ছিনলে ও ছিনতে পারি তুমি বলো তো
তার পর নিদিপার কাছে সব বর্ননা শুনে,নিহার বল্লো
-নিদিপা বিয়েটা হতে দেয়া যাবে না
নিদিপা- কেনো

নিহার সব কথা নিদিপা কে বলে
নিদিপা সব কথা শুনে বলে কিন্তু গাইথি কি তোমার স্যার কে পছন্দ করে?

নিহার- আমার মনে হয় করে,তার পর নিদিপার সাথে নিহার একটা প্লান করে

প্লান অনুযায়ী আজ নিহার ছুটি নিয়ে গাইথি দের গ্রামে যাবে
নিহার যখন গাইথি দের গ্রামে পৌছয় তখন বিকেল তিনটা,
রাস্তায় জ্যাম না থাকার কারনে ঠিক সময়ে আসতে ফেরেছে
নিদিপা বাড়ির দরজায় দাঁড়িয়ে ছিলো নিহারের জন্য
নিহার- সব ঠিক ঠাক ভাবে আছে তো নিদিপা
নিদিপা- কিচ্ছু ঠিক নেই, গাইথি বিয়েটা করবেই সে কিছুতেই স্বিকার করছে না চুহেস কে সে পছন্দ করে

নিহার- তা হলে কি করা যায় এখন
নিদিপা- বুঝতে পারছি না
নিহার-উপায় একটা আছে
নিদিপা- খুশি হয়ে বলে কি
নিহার- কিডন্যাপ, আমি গাইথি কে কিডন্যাপ করবো তুমি আমাকে সাহায্য করবে
নিদিপা- কিহ,কি বলছো তুমি, মাথা ঠিক আছে তোমার

to be continue

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে