অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-৫
লেখা –সুলতানা ইতি
গাইথি খুশি হলো মোবাইলে স্কিনের দিকে তাকিয়ে শ্রুতি আপু কল দিয়েছে আমেরিকা থেকে
গাইথি কল রিসিভ করে কথা শুরু করলো
– হা আপি বল, কেমন আছিস? আমার দুলাভাই কেমন আছে
শ্রুতি- ভালো রে, কি খবর তোর পড়াশুনা কেমন চলছে
– ভালো আপি,
এই শুন না আপি আমাদের এলাকায় না একটা রোবট এসেছে,
শ্রুতি অবাক হয়ে বল্লো
– কি বলছিস সত্যি?
কই ঐশী তো বলেনি
গাইথি- আরেহ ভাবি জানবে কি করে এই রোবট টা মানুষের মতো দেখতে মানবিক জ্ঞান সম্পূর্ণ কিন্তু মানুষ নয়
এতোক্ষনে শ্রুতি গাইথির কথা বুঝলো
– বুঝেছি তোর কথা তা রোবট কে, বলতো শুনি
গাইথি- কে সেটা বলতে পারবো না গ্রামে এসেছে বেড়াতে, জানিস কাল সকালে আমাকে দেখা ও করতে বলেছে
শ্রুতি- হুম রোবটের তো দেখছি ভালোবাসার ও মন আছে, নইলে তোর মতো মেয়ের সাথে দেখা করতে চাইতো না কিন্তু নাম তো বললি না
গাইথি- রোবটের নাম চুহেস, চলা ফেরা পুরোই রোবটিক
শ্রুতি – চুহেস, ভাবান্তরিত কন্ঠ নাম টা নিজে রিপ্লাই করে
গাইথি- আপি তোর কি হইছে মনে হচ্ছে কিছু নিয়ে ভাবছিস
শ্রুতি- না কিছু না, আচ্ছা শুন ঐ ছেলের সাথে দেখা করা তোর ঠিক হবে না, তুই ভুলে যাস না তুই আরেক জনের বাগদত্তা এখন
গাইথি- আপি তোরা তোদের চাওয়া টা কেনো আমার উপর ছাপিয়ে দিচ্ছিস বলতো, সাইমুম আমেরিকা থাকে
দুলা ভাইয়ের সাথে ভালো পরিচয়, তার মানে এই না যে তার সাথে আমি সুখি হবো,
যার সাথে কখনো মনের মিল টা ই হবে না তার সাথে সুখি হবো কি করে?
শ্রুতি গাইথিকে ধমক দিয়ে বল্লো
-বেশি পাকামি করছিস, তুই এখন ও ছোট ভালো মন্দ বুঝার বয়স হয়নি
গাইথি- আমি যখন ছোট তখন বিয়ে দিচ্ছিস কেনো
শ্রুতি- কঠিন কন্ঠে বল্লো বিয়েটা এখন হচ্ছে না,
গাইথি – বিয়ে এখন না হলে কেনো এতো হাতে পায়ে তাড়াহুড়া করে বেড়ি পরিয়েছো আমার,
ঐ সাইমুম ফোন করলে বলবে এটা করবেনা ওটা করবে না বান্ধুবীদের বাসায় যাবে না,
টিউশনি করবেনা,
বিয়ে না হতেই তার এতো হুকুম বিয়ে হলে কি করবে দূর ভালো লাগে, তোমাদের সাথে কথা বলাটা ই ভুল,
গাইথি রেগে গিয়ে কল কেটে দিয়ে মোবাইল টা ছুড়ে মেরে বালিশে মুখ গুঁজে কান্না শুরু করলো
কেউ আমার কথা টা বুঝতে চায় না, মা থাকলে হয়তো আমার কথা টা বুঝতে চাইতো,
আমি এতো টাকা ওয়ালা সাইমুম কে চাই না, আমি সাধারণ একটা মানুষ চাই যার কাছে টাকা থাকবে না কিন্তু অপুরন্ত ভালোবাসা থাকবে
কান্না করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়ে গাইথি
★
চুহেস মোবাইলে এলার্ম দিয়ে ঘুমায়, সকাল ছয়টা এলার্ম বাজার শব্দে ঘুম ভেংগে যায়,ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে পড়ে
প্রায় দেড় ঘন্টা হেটে দিঘীর পাড়ে পৌচয় তার পর জায়গা মতো গিয়ে ঘাসের উপর বসে পড়ে,
সকালের শিশির ভেজা ঘাসের উপর পা ভিজিয়ে হাটতে ধারুন এক অনুভূতি হয়, আর হাত দিয়ে স্পর্শ করলে তো কথা ই নেই
গ্রামে সকালে প্রাকৃতিক সুন্দর্য ই অন্য রকম,
অনেক্ষন চুহেস বসে আছে আসতে আসতে সকালে শিশির গুলো রোদের তাপে ঘাসের উপর থেকে মাটিতে পড়ে মিশে যাচ্ছে,
কিন্তু এখন ও গাইথির আসার নাম নেই,গাইথি কি তা হলে আসবে না , আসতেই হবে গাইথি কে, আমি ডেকেছি ওকে আমার ডাকে সাড়া দিতে ই হবে
এই ভাবে আনমনে নিজের সাথে কথা বলছে চুহেস
এমন সময় গাইথি এসে পিছনে দাঁড়ালো
চুহেস- গাইথি সামিনে এসো আমার পাশে বসো
গাইথি অবাক হলো তার পর জিজ্ঞাস করেই ফেল্লো
গাইথি- আচ্ছা মিঃ চুহেস,আমি তো শব্দ করে আসিনি,এমন কি কোন কথা ও বলিনি,আপনাকে স্পর্শ ও করিনি ,তবু ও কি করে বুঝলেন যে আমি এসেছি
চুহেস- আমি বুঝি গাইথি
গাইথি- কি করে আপনি কি যাদু জানেন , অদৃশ্য জিনিশ দেখতে পান
চুহেস কিছু বলতে গিয়ে থেমে যায়
– তুমি বুঝবে না গাইথি
এ ভাবে অনেক কথা হয় ওদের মাঝে
তার পর গাইথি বল্লো
– আপনি আমাকে কেনো দেখা করতে বলেছেন সেটা কিন্তু বলেন নি এখন ও
চুহেস কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না তবু ও বল্লো
-এমনি এই যে কথা বলছি একা থাকলে তো তা পারতাম না,
আচ্ছা এবার তা হলে উঠি এই চুহেস উঠে দাড়ালো
গাইথি অভাক হলো
গাইথি-আপনি অনেক টা রোবটের মতো
চুহেস কিছু বল্লো না, নিচু স্বরে বল্লো,আমাদের আবার কখন দেখা হবে গাইথি
গাইথি প্রশ্নটা শুনে চমকালোনা, স্বাভাবিক ভাবে বল্লো
– যখন আপনি চাইবেন,
গাইথির উওর শুনে চুহেস অবাক হলো,তার পর বল্লো
-তুমি খুব মিশুক একটা মেয়ে, অচেনা মানুষদের সাথে খুব সহজে মিশতে পারো , আমার সাথে এতোক্ষন ছিলে, আবার দেখার করার জন্য ও রাজি আছো তাই বললাম
গাইথি- কেনো আপনি ও তো অচেনা মানুষের মিশতে পারেন,এই এতোক্ষন কথা বললেন
চুহেস গাইথির কথা শুনে যেন অন্য জগতে হারিয়ে গেলো অচেনা হুম অচেনা আনমনে কথা বলে হাটতে শুরু করলো
গাইথি ভাবছে সত্যি কি এই লোকটা আমার অচেনা, ওর সাথে কথা বলে এতো ভালো লাগছে কেনো আমার মনে হচ্ছে কতো আগের পরিচিত
চুহেস হাটছে আর ভাবছে সত্যি কি বাবুই অচেনা আমার কাছে
না মোটেও অচেনা নয়,
বাবুইর কথা ছোট বেলার মতো, হাত নেড়ে কথা বলার অভ্যাস টা এখনো যায়নি, আর নিজে কথা বলে নিজেই হাসে ব্যাপার টা সত্যি আকর্শন করেছে
চুহেস বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেতে বসলো
নিহার- স্যার আমাদের কালকেই ফিরে যেতে হবে, গাজীপুরের কারখানাতে একটু প্রব্লেম দেখা দিয়েছে শ্রমিক দের মাঝে
সেটা আপনাকে ই হ্যান্ডেল করতে হবে
চুহেস- ঠিক আছে কাল কখন যেতে হবে
নিহার- সকালবেলা রওনা হলে ভালো হয় স্যার, জ্যাম কম থাকবে পথে
চুহেস- ঠিক আছে তাই হবে
চুহেস নাস্তা খেয়ে আর এক মিনিট ও দেরি করলো না
চলে এলো গাইথিদের বাড়ির পাশে যদি গাইথি কে দেখতে পায় তো জানিয়ে দিবে যাওয়ার কথা
আর হলো ও তাই গাইথি কলেজের উদ্দেশ্য বের হলো
গাইথি- ওহ হো আজ অনেক লেইট হবে কলেজে যেতে কি যে করি নিদিপাকে বললাম যাওয়ার সময় আমাকে ডাকতে শয়তান টা ডাকলোই না
বেখায়ালী হাটতে গিয়ে গাইথি চুহেসে সামনে পাড়ে
চুহেস গাইথি কে দেখে অবাক হলো না বরং মনে মনে খুশি হলো আর মনের খুশি টাকে প্রকাশ না করে বল্লো
-আরেহ তুমি? কলেজে যাচ্ছো বুঝি,
গাইথি- হুম,
চুহেস-তা এতো তাড়াহুড়ার কি আছে,
গাইথি-অনেক লেইট হয়ে গেছে
চুহেস- দেরি যখন হয়েছে তখন আজ কলেজে না গেলে হয় না
গাইথি- মানে, কলেজের জন্য বেরিয়ে এখন বুঝি আমি কলেজে যাবো না
চুহেস দুষ্টুমির হাসি হেসে বল্লো
-তুমি চাইলে আমরা কাজী অফিস যেতে পারি
গাইথি- মানে কা,কাজী অ, অফিস
চুহেস গাইথির অবস্থা দেখে হো হো হও করে হেসে উঠলো
গাইথি এই প্রথম চুহেসের হাসি দেখছে মন দিয়ে দেখছে, মনে হচ্ছে অনেক দিন পরে সে এমন মন খুলে হাসছে
গুনি জ্ঞানিরা মেয়েদের হাসি নিয়ে বিশ্লেষণ করে বের করেছে কিছু শব্দ” হাসিতে মুক্ত ঝরে আর কতো কি”
কিন্তু কেউ কি জানে ছেলেদের হাসিতে ও মুক্ত ঝরে যেমন টা চুহেসের হাসিতে ঝরছে
চুহেস হাসি থামিয়ে গাইথির দিকে খেয়াল করে দেখলো গাইথি এই জগতে নেই
গাইথি চোখের সামনে চুহেস বা হাতে তুড়ি বাজিয়স বল্লো
-কোথায় হারিয়ে গেলে বলো
গাইথি চমকে উঠে নিজেকে স্বাভাবিক করে নেয়
চুহেস -বাই দ্যা য়ে তুমি মনে ভয় পেয়েছো
গাইথি- মোটেই না, আমি কি ভিতু নাকি যে সাধারণ একটা কথায় ভয় পাবো
চুহেস- তার মানে তুমি বলতে চাইছো কথা টা সাধারণ, ঠিক আছে তাইলে চলো কাজী অফিস যাই
to be continue