অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২২
লেখা –সুলতানা ইতি
গাইথি মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে দেয় যেন নিহার তার চোখের পানি না দেখতে পায়
নিহার- ম্যাডাম কোন বাসায় যাবেন আপনি
গাইথি- বনশ্রী তে চলুন
নিহার- কিন্তু ভাই, ভাবি, আংকেল, রা তো ঐ বাসায়
গাইথি- এতোক্ষনে এসে পড়ার কথা আপনি যান
গাইথি বাসায় এসে ডুপ্লিকেট চাবি দিয়ে বিতরে ডুকে আদনান রা এখন ও আসেনি
গাইথি ঐশী কে ফোন করে
– ভাবি তোমরা আসছোনা কেনো এখনো
ঐশী- তুই কোথায়
গাইথি- আমাদের বাসায়
ঐশী- ওহ আমরা তো তোর জন্য ই অপেক্ষা করছিলাম, আচ্ছা তুই থাক আমরা আসতেছি
গাইথি কল অফ করে দেয়
কিছু ই ভালো লাগছে না গাইথি মনকে শান্ত করার জন্য একটা গল্পের বই নিয়ে বসে
এমন সময় গাইথির মোবাইলে কল আসে
মোবাইলে স্কিনে তাকিয়ে দেখে সাইমুমের নাম্বার
গাইথির বুকের বিতর কেমন যেন করে উঠলো, ভয় কাজ করছে গাইথির মাঝে কল রিসিভ করবে কি করবে না এই নিয়ে টেনশনে পড়ে গেলো
কল কেটে যায় আবার কল আসে
দুবার রিং হয়ে যাওয়ার পর গাইথি কল রিসিভ করে
গাইথি হ্যালো বলার আগেই ওপাড় থেকে ব্যাস্ত কন্ঠে সাইমুম বলে
– কি করছিলে এতোক্ষনে কল রিসিভ করছিলে না কেনো, আমি কতো ভয় পেয়েছিলাম জানো, কেমন আছো তুমি, এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে সাইমুম থামলো
গাইথি- ভালো আছি,,অনেক টা বিরক্ত কন্ঠে বলে
সাইমুম- কি করছিলে তুমি
গাইথি সাইমুমের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পালটা প্রশ্ন করে সাইমুম কে
– আপনি ভয় পেয়ে ছিলেন কেনো
সাইমুম- ভেবেছি তুমি আমার কল রিসিভ করবে না, এই জন্য
গাইথি- কল রিসিভ না করাটা ই স্বাভাবিক নয়,
(শান্ত আর কঠোর কন্ঠে গাইথি কথা টা বলে)
সাইমুম- ওহ তাই তো আসলে ই কল রিসিভ করার কথা না,তবু ও রিসিভ করেছো তার জন্য তোমাকে অন্তর থেকে ভালোবাসা জানাই,
যদিও আমার ভালোবাসা না বাসা দিয়ে তোমার কিছু যায় আসে না,
তো যাই হোক শুনলাম নতুন করে বিয়ের পিড়িতে বসছো, কথা টা কি সত্যি
গাইথি গম্ভীর কন্ঠে বলে
– হ্যা সত্যি,আপনি যে ভাবে বলছেন নতুন করে বিয়ের পিড়িতে বসছি,মনে হয় এর আগে আমি হাজার বার বিয়ে করেছি
সাইমুম – বিয়ের পিড়িতে না বসো,কারো সাথে বিয়ের আসরে বসার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলে,
গাইথি- ভুল বলছেন আমক কাউকে নিজের মুখে এই প্রতিশ্রুতি দিই নি
সাইমুম- হুম নিজের মুখে দাওনি বলে ই বিয়েটা ভাংগতে ফেরেছো কংগ্রাচুলেশনস, নতুন মানুষ টা কে নিশ্চয়ই এই পতিশ্রুতি নিজে দিয়েছো
গাইথি- এটা আমার পার্সোনাল ম্যাটার, আমি এই নিয়ে আপনার সাথে কথা বলতে চাই না
সাইমুম- চমৎকার কথা বলতে শিখেছো,আগে এমন কথা বলতে জানতে না,নিশ্চয়ই এই ক্রেডিট টা ও নতুন মানুষ টার
গাইথি- প্লিজ আপনি ফোন রাখুন নইলে আমি লাইন কেটে দিবো
সাইমুম- বিরক্ত হচ্ছো? আচ্ছা আর বেশি বলবো না মাত্র কয়েকটা কথা বলেই লাইন কেটে দিবো,,শ্রুতি ভাবির সাথে কথা হলো উনি বল্লো তোমার সে কাজিন চুহেসের সাথে ই নাকি এখন তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে
গাইথি- হুম আপু ঠিক বলেছে
সাইমুম- তুমি নিশ্চই ওর মাঝে এখন মুগ্ধতা খুঁজে পাও যা তুমি আমার মাঝে পাওনি
গাইথি……
সাইমুম- কিন্তু ঐ লোকটার সাথে তোমার বয়সের ফাক অনেক, সেটা ভেবে দেখেছো তো,
গাইথি- আপনি চুহেস কে নিয়ে কথা না বললে আমি খুশি হবো
সাইমুম- দেখো না একটা সময় আসবে তুমি বাচ্ছা ই থেকে যাবে আর তোমার বরের চুল পেকে যাবে দাত পড়ে যাবে হা হা হা হা কেমন লাগবে তোমাদের ঝুটিটা কে দেখতে আমি সেটা ই ভাবছি,একটা বার ভাবো তোমার লাইফ টা একদম নষ্ট হয়ে যাবে চুহেস কে বিয়ে করলে
গাইথি- ধন্যবাদ আমার জন্য এতো টা ভেবেছেন তাই”নিজের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ানো আপনা সবাব”বুঝতে ফেরেছি আমি কিন্তু স্যরি আমি এখন কল অফ করে দিবো আপনার একটা কথা শুনার ধৈর্য্য। আর আমার নেই
এই বলে গাইথি কল অফ করে দেয়
গাইথি মোবাইল হাত থেকে রাখার পর ই আবার কল আসে
এবার চুহেস কল দিয়েছে
গাইথি- কোথায় আপনি পৌছে গেছেন সেখানে, মিঃ চিকি কি আপনাকে এয়ারপোর্ট এ রিসিভ করতে এসেছে
চুহেস- বাবাহ গাইথি তুমি এক সাথে এক নিশ্বাস এ এতো কথা বলতে পারো, ভালো ই লাগলো শুনতে,হুম আমি পৌছেছি, এখন একটু রেষ্ট নিচ্ছি,
গাইথি- ওহ আন্টি কেমন আছে
চুহেস- আছে তেমন ভালো নেই তোমার কথা বলেছি আন্টি কে, শুনে খুব খুশি হয়েছে তোমাকে দেখতে ছেয়েছে, বলেছি আপনি সুস্থ হোন তার পর আপনাকে নিয়ে সোজা দেশে চলে যাবো আপনার বউমার কাছে
চুহেসের কথা শুনে গাইথি লজ্জা পেয়ে যায়
কোন কথা ই বলতে পারেনি
চুহেস- কি হলো তুমি চুপ করে আছো কেনো
গাইথি- ফিরছেন কখন?
চুহেস- কেনো খুব মিস করছো বুঝি
গাইথি- দূর আপনি কি যে বলেন, এমনি আসতে বলতে পারি না নাকি
চুহেস- পারো তবে আমি আজ ই এসেছি আর আজ ই তুমি আসতে বলতে পারো না
গাইথি মন খারাপ করে বল্লো
– ওহ তাই তো
চুহেস হেসে বল্লো
– সুইট হার্ট মন খারাপ করো না এখানে একটু কাজ আছে কাজ টা সেরে খুব শিগ্রই আসছি তোমার কাছে
গাইথি- ঠিক আছে আসুন, এখন রাখছি বাই
গাইথি কল অফ করে দিয়ে মোবাইল সুইচস্টপ করে দেয় যদি আবার সাইমুম কল করে বসে এই ভয়ে
এভাবে আতঙ্ক আর উদ্বেগের মধ্য দিয়ে কেটে গেলো অনেক দিন, দুপুরে চুহেস কল দিয়ে জানায় সে আগামি কাল আসছে
অনেক দিন পর গাইথির নিজেকে হালকা লাগছে
আর নিশ্চিন্তে ঘুমাতে যায়
এমন সময় গাইথির মোবাইল বেজে উঠলো
স্কিনে নামটা দেখে নিলো গাইথি আমেরিকা থেকে শ্রুতি ফোন করেছে
গাইথি ফোন রিসিভ করে সালাম দিলো শ্রুতি কে
ওপার থেকে শ্রুতি সালামের উত্তর নিয়ে বল্লো
– কেমন আছিস,অবশ্য এখন তো ভালো থাকার ই কথা তোর
গাইথি- খোঁচা মেরে কথা বলছো কেনো আফা
শ্রুতি – খোঁচা মারবো কেনো তোকে, অবশ্য এখন তোকে আমার খোঁচা মেরে কথা বলা ও সাজে না,বিরাট বড় লোকের বউ হতে যাচ্ছিস
গাইথি- আফা তুমি কেনো আমার সাথে এমন করে কথা বলছো,শুধু সাইমুমের জন্য ই তো,এই রকম অনেক হয় আফা কতো মানুষের তো বিয়ের আসর থেকে ও বিয়ে ভেঙে যায়
শ্রুতি কর্কশ কন্ঠে বলে
– সেই রকম এক্সিডেন্ট হলে আমি মেনে নিতাম গাইথি, কিন্তু যেটা তুই ইচ্ছে করে করেছিস সেটা আমি কি করে মেনে নিই,সাইমুম তোর জন্য কতো টা কষ্ট পাচ্ছে তুই জানিস
গাইথি- আফা সাইমুম কষ্ট টা তুমি বুঝো, একটা বার তুমি চুহেসের কষ্ট টা বুঝতে চাইলে না,আল্লাহ কাকা, কাকি কে নিয়ে গেছে আমরা তার আপন হয়ে তার প্রতি কতোটা ন্যায় কাজ করেছি বলতে পারো,পারো না,যখন চুহেস নিজের প্রচেষ্টায় আজকের জায়গায় এসেছে,তখন ও তুমি তার বিরুদ্ধতা করছো,
সাইমুম আমাকে ভালোবাসে এটা তুমি বুঝেছো,কিন্তু সাইমুমের অনেক আগে থেকে চুহেস আমাকে ভালোবাসে সেটা তুমি বুঝলে না,তোমার ও সাইমুমের মতো নিজের খেয়ে বনে মহিষ তাড়ানোর অভ্যাস
শ্রুতি রেগে গিয়ে অনেক টা চিৎকার করে বলে গাইথি
তুই কার সাথে এমন করে কথা বলছি,তুই ভুলে যাচ্ছিস
গাইথি- ভুলিনি আফা তুমি আমার বড় বোন তুমি আমার কাছে থেকে সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখো, কিন্তু বড়দের ছোটদের প্রতি কিছু দায়িত্ব থাকে,যখন কেউ নিজের ইগোর কারনে দায়িত্ব এড়িয়ে যায় তখন সেখানে, দায়িত্ব আর অধিকার দুটো ই হারিয়ে যায়
শ্রুতি- খুব বড় বড় কথা বলতে শিখেছিস,দেখবো তোর বড় কথা কয়দিন থাকে,এই বলে শ্রুতি কল অফ করে দেয়
গাইথি বড় বোনের সাথে এই আচরন করতে চায়নি কিন্তু কেউ যদি চুহেস কে ছোট করে কথা বলে সেটা সহ্য করা যায় না
এভাবেই গাইথির রাত টা কেটে যায় ঘুম আর হয়নি
পরদিন সকালে আদনান গাইথি নিহার এয়ারপোর্টে যায় চুহেস কে আনতে
দুপুর বারোটায় প্লেন ল্যান্ড করে চুহেস এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে সবার সাথে সাক্ষাত করে কিন্তু তার চোখের দৃষ্টি অন্যকাউকে খুজছে
আদনান- তুমি কি কিছু খুজছো?
চুহেস মৃদু হেসে বল্লো
– না তো
নিহার- স্যার আপনি যাকে খুজছেন তিনি গাড়িতে অপেক্ষা করছে আপনার জন্য
আপনি আরর ম্যাডাম আলাদা গাড়িতে যান আমি আর আদনান ভাই আসছি অন্য গাড়িতে
চুহেস আর কথা না বলে গাড়ির দিকে হাটা ধরলো,মাঝখানে একটু থেমে বল্লো
– নিহার ড্রাইভার কে আমাদের গাড়িতে পাঠিয়ে দাও আমি এখন ড্রাইভ করতে পারবো না
নিহার একটু অবাক হলো চুহেসের কথায়,কোথায় এতোদিন পর ম্যাডামের সাথে দেখা হবে দুজন একা কথা বলবে তা না,ড্রাইভার কে নিচ্ছে সাথে,
নিহার ড্রাউভার কে পাঠিয়ে দিলো
চুহেস এসে গাইথির পাশের সিটে বসলো
ড্রাইভার গাড়ি স্ট্রাট দিয়েছে
দুজনেই নিরব কারো মুখে কোন কথা নেই, গাইথি নিরাবতা ভাংলো প্রথমে
গাইথি- কিছু বলছেন না যে
চুহেস- তুমি চুপ করে আছো তাই কথা বলিনি,
গাইথি হালকা হেসে বল্লো
– ওকে বলুন,আন্টি কেমন আছে উনাকে নিয়ে আসেন নি কেনো
চুহেস- আগের থেকে ভালো, আসতে ছেয়ে ছিলেন আমি আনিনি
গাইথি- কেনো আপনি ই তো বলেছেন আমাদের বিয়েতে আন্টি কে নিয়ে আসবেন
চুহেস- বলে ছিলাম নাকি
গাইথি সংকোচ দূর করে অনেক্ষন থেকে চুহেসের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, চুহেস কেমন যেন হয়ে গেছে এই কয়দিনে,শুকিয়ে গেছে চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে কি রকম রোগা দেখাচ্ছে
চুহেস- কি দেখছো
গাইথি- আপনি ঠিক আছেন তো
চুহেস- কেনো আমাকে দেখে কি তোমার বেঠিক মনে হয় নাকি
গাইথি- তা নয়,আচ্ছা থাক এখন এই সব কথা
গাইথি মনকে বুঝালো হয়তো লং জার্নি করাতে এমন লাগছে
বাকি পথ কেউ কারো সাথে কথা বলেনি বাসায় পৌছে
গাইথি চুহেস কে বল্লো
– আপনি যান ফ্রেশ হয়ে আসুন খুব গরম পড়ছে আমি আপনার জন্য ঠান্ডা কিছু ব্যাবস্থা করছি
চুহেস- কিছু খেতে ইচ্ছে করছে না বাবুই তুমি শুধু ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বের করে রাখো
চুহেস ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং এ আসলো
চুহেস- এখানে ই খাবে নাকি
গাইথি- আপনার ইচ্ছে, ব্যালকনিতে নিয়ে আসবো নাকি
চুহেস- হুম তাই নিয়ে এসো
ব্যালকেনিতে দাঁড়িয়ে দুজনেই আইসক্রিম খাচ্ছে
হঠ্যাৎ চুহেস বল্লো
– গাইথি আমার মাথা ঘুরাচ্ছে মনে হয় বমি আসবে
গাইথি ব্যাস্ত হয়ে বল্লো
– আসুন মাথায় পানি দিই,, আপনি রেষ্ট নিন আমি ডাক্তার কে কল করছি
চুহেস কিছু না বলে ওয়াশরুমে ডুকে গেলো
অনেক্ষন পরে গাইথিইই বলে একটা ডাক দিলো
গাইথি হন্তদন্ত হয়ে ওয়াশ রুমের দরজা নক করে না দরজা খোলা আছে লক করেনি গাইথি ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখে চুহেস চেন্সলেস হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে
গাইথি ভাইয়া বলে এক চিৎকার দিলো
ড্রইং রুমে বসে নিহার আরর আদনান গল্প করছিলো
to be continue