অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-২১
লেখা –সুলতানা ইতি
চুহেস গাইথির রুমের দরজায় নক করে
গাইথি- এই সময় আবার কে এলো,
গাইথি দরজা খুলে চুহেস কে দেখে বল্লো
– আরেহ আপনি আসুন
চুহেস বিতরে গিয়ে বসে
গাইথি পাশে আরেক টা সোফায় বসে বলে কিছু বলবেন
চুহেস- নাহ তেমন কিছু বলবো না এমনি দেখতে এলাম, তুমি কি করছিলে এতোক্ষন?
গাইথি- ভাবছিলাম
চুহেস- কি ভাবছিলে
গাইথি- বলবো না
চুহেসের ঠোটের কোনে মিষ্টি একটা হাসি ফুটে উঠলো
পরক্ষনেই হাসিটা মিলিয়ে গেলো চুহেস গম্ভীর হয়ে উঠলো, গাইথির একটা হাত টেনে নিজের হাতের উপর রাখলো
– জানো বাবুই যেদিন থেকে তোমার চোখের আড়াল হয়েছি সেদিন থেকেই তোমার শূন্যতা একটু একটু করে উপলব্ধি করেছি তখন ও তোমায় ভালোবাসি কি না বুঝি নি,
কিন্তু তোমার কথা ভাবতে আমার ভালো লাগতো, কি ভাবে যেন কতো গুলো বছর পার হয়ে গেলো টেরই পাইনি,
গাইথি চুহেস কে থামিয়ে বল্লো।
– আপনার কি কখন বউ সংসার এগুলার কথা মনে হয়নি
চুহেস- সব সময় ব্যাস্ত রাখতাম নিজেকে যদি একটু অবসর পেতাম তোমার ছোট্ট মায়াবী মুখটা ভেসে উঠতো চোখের সামনে, তোমাকে দেখার কৌতূহল জাগতো মনে
কিন্তু আমি মনকে প্রশ্রয় দিতাম না আর ও অনেক বেশি ব্যাস্ততার মাঝে ডুবিয়ে ফেলতাম নিজেকে
তার পর এমনি একদিন নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করে আর না ফেরে ছুটে যাই গ্রামে তোমাকে একটু দেখবো বলে,
কিন্তু মনে আশংকা ছিলো তুমি আমাকে ছিনবে না, আর সেটা আমি কি করে মেনে নিবো…..
গাইথি- আমার তো মনে হয় প্রথম দেখে আপনি নিজেই আমাকে চিনতে পারেননি
চুহেস- মিথ্যা বলবো না,কিন্তু পরে তোমাকে ঠিকই চিনেছি, কিন্তু তুমি আমাকে ছিনতে অনেক সময় নিয়েছো
গাইথি চুহেসের ঠোঁটে আংগুল ছেপে বলে
-সে কথা বলবেন না,আমার নিজের ই মনে হলে খারাপ লাগে,আমার মন যাকে খুজছিলো তাকে এতো কাছে পেয়ে ও ছিনতে আমার অনেক দেরি হলো
চুহেস গাইথি কে থামিয়ে বল্লো
– সে সব কথা মনে করে কষ্ট পেয়ে ও না বাবুই, পরিস্থিতি টা ই তখন এমন ছিলো, এতে তোমার,আমার কারো ই কোন দোষ নেই
আচ্ছা বাদ দাও যখন আমি গ্রামে তোমাকে দেখি ঠিক তখন থেকে ই তোমাকে বউ করার স্বপ্ন টা মনে জেগে উঠে,আর সেটা সত্যি ও হতে চলছে
গাইথি- হাম তাই, আমার কেমন যেন সব কিছু স্বপ্নের মতো লাগছে,মনে হচ্ছে এই বুঝি ঘুম ভেংগে যাবে আর….
চুহেস- আর বলতে হবে না বাবুই, আমি নিজেই কেমন যেন ঘোরের মধ্যে আছি
আজকের দিনটা সত্যি ভুলে যাওয়ার মতো নয়, না চাইতে ই অনেক অধিকার আজকের এই অনুষ্ঠান শেষে আমি পেয়ে গেছি
গাইথি ঠোঁটে হাসি টেনে বল্লো
– কি অধিকার পেয়েছেন শুনি
চুহেস মুচকি হেসে বল্লো
– এই যে তুমি আমার হয়েছো
গাইথি – এখন ও হইনি মিঃ
চুহেস- পঞ্চাশ পার্সেন্ট অধিকার পেয়ে গেছি, কয়েকদিন পর বাকি টা ও পাবো তার পর
গাইথি- তার পর কি
চুহেস- তার পর “আদি, নীড়’ এর কথা ভাববো
চুহেসের কথা শুনে গাইথি লজ্জা পেয়ে যায়,দ্রুততার সাথে চুহেসের হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে মুখটা অন্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়
চুহেস- বাহ লজ্জা ফেলে তো তুমি আর ও সুন্দর হয়ে যাও, আচ্ছা শুনো একটা কথা দিতে হবে তোমাকে
গাইথি চুহেসের দিকে মুখ না ফিরিয়ে বলে
– কি কথা বলুন
চুহেস- তুমি আমার দিকে তাকাও আর আমার হাতে হাত রেখে কথা দাও আমার কথা শুনে তুমি কষ্ট পাবে না
চুহেসের কথা শুনে গাইঠি হৃদয়টা কেপে উঠে,মুহুর্তেই লজ্জা রঙ টা মুখ থেকে উবে গেলো, আর সেখানে এসে জমা হলো ভয় আর আশংকা
চুহেস গাইথির দিকে তাকিয়ে বল্লো
– আমার কথা না শুনেই মুখের এই হাল করে ফেলেছো,থাক বলবো না
গাইথি নিজেকে সামলে নিয়ে বল্লো
– আসলে ভয় হয়, এক রকম জোর করেই সাইমুমের সাথে আমার বিয়ে হতে যাচ্ছিলো, আমি সাইমুমের মাঝে কখনো ই কোন মুগ্ধতা খুঁজে পাইনি, কিন্তু আপনাকে একনজর দেখে ই আমার মাঝে কেমন যেন একটা পরিবর্তন এসে যায়, আর না চাইতে আমি আপনার মনের উজাড় করা ভালোবাসা পেয়ে যাই
গাইথির মুখের কথা কেড়ে নিয়ে চুহেস বল্লো
– আমি ভেবেছি আমার অবেলায় ভালোবাসা মেঘেডাকা আকাশের অনাকাঙ্ক্ষিত সূর্যের মতো ডুবে থাকবে মেঘের আড়ালে, কিন্তু তুমি এসে তোমার ছোয়াতে মেঘ দূর করে সেখানে এক উদিয়মান সূর্যের আলো জ্বেলেছো, সত্যি বাবুই যা কিছুর যোগ্য আমি নই,তুমি এর থেকে ও অনেক বেশি ভালোবাসা নিয়ে আমার দরজায় এসেছো
গাইথি- এ ভাবে বলবেন না,নিজেকে বড় অপরাধি মনে হয়,
আপনি অনন্য ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখেন,আমার মনে হয় আমি তত টা দিতে পারছি না আপনাকে
চুহেস গাইথিকে থামিয়ে দিয়ে বল্লো
– তোমার মনে হওয়ার মধ্যে ভুল আছে,
গাইথি- ঠিক আছে হার মানলাম, এবার বলুন কি কথা বলতে এসেছেন
চুহেস – কিন্তু তুমি আমাকে কথা দাওনি যে তুমি…..
গাইথি- অফসস, কোন রকম ভনিতা না করে মূল কথা বলুন
চুহেস- ওকে তা হলে শুনো,রাবেয়া খালা অসুস্থ,তিনি শেষ বার আমাকে দেখতে চেয়েছে, এখন কি করবো তুমি বলো
চুহেসের কথা শুনে গাইথির মুখের হাসি টা উবে যায়, তবু ও মুখের হাসি ধরে রাখার জন্য ম্লান হেসে বল্লো
– আপনার সেখানে অবিলম্বে যাওয়া উচিত,রাবেয়া খালা আপনার জন্য অনেক করেছে
চুহেস- আমি ও তাই ভাবছি, কিন্তু ব্যাপার টা তুমি কি ভাবে নিবে সেটা ভেবেই মন অস্থির হয়ে উঠছিলো আমার
গাইথি- ওতো অস্থির না হয়ে প্রথমে ব্যাপার টা আমার সাথে সেয়ার করা উচিত ছিলো নয়কি
চুহেস- এখন মনে হচ্ছে আমি তোমাকে বুঝতে ভুল করেছি
গাইথি- ঠিক আছে আজকের পর থেকে তো আর ভুল হবে না,যাচ্ছেন কখন?
চুহেস- আগামি কাল সকাল দশটায় ফ্লাইট
চুহেসের কথা শুনে গাইথির মন টা আর ও খারাপ হয়ে যায়, মনের অজান্তেই মুখ থেকে একটি কথা বের হয়ে যায়
– কাল ই যাচ্ছেন
চুহেস- তুমি নিষেধ করলে কালকের টিকেট ক্যান্সেল করে দিবো
গাইথি- টিকেট ক্যান্সেল করার দরকার নেই, আপনি কাল ই যাচ্ছেন
চুহেস- কিন্তু আদনান,ভাবি,তোমার বাবা উনারা ব্যাপার টা কি ভাবে নিবে
গাইথি- আপনি এসব নিয়ে ভাববেন না আমি ম্যানেজ করে নিবো
চুহেস- থ্যাংস বাবু টা. ঠিক আছে এখন একটু ঘুমাও তুমি, আমি যাই সব গুছিয়ে নিতে হবে
গাইথি- একটা কথা
চুহেস- কি?
গাইথি- আপনি এখন ও বাবা কে ক্ষমা করতে পারেন নি তাই না
চুহেস- আমি তো আগে ই বলেছি আমার উনার উপর কোন রাগ নেই
গাইথি- তা হলে আমার ভাইয়া আমার ভাবি যদি আপনার হয়,আমার বাবা কেনো আপনার বাবা হবে না
চুহেস একটু গম্ভীর হয়ে বল্লো
– গাইথি এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ তুমি কখনো, তোমার বাবা কে আমি বাবা বলে ডাকি না কেনো এ জন্য মন খারাপ করবে না, এটা ঠিক যে উনি আমার শ্বশুর হতে চলছে কিন্তু আমার বাবাকে ছাড়া অন্য কাউকে বাবা ডাকতে পারবো না, প্লিজ তুমি আমাকে মাফ করে দিও
গাইথির চোখের কোনে পানি চিক চিক করছে,এই উত্তর টা সে চুহেসের কাছে থেকে আশা করেনি,তবু ও নিজেকে সামলে নিয়ে বলে
– ঠিক আছে আমি কখনো এই নিয়ে আপনাকে ঝোর করবো না,
তার পর গাইথির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বল্লো ভোর হতে আর বেশি দেরি নেই
চলুন আপনাকে জামা কাপড় গুছাতে হেল্প করবো
চুহেস- আমার এই সব নিহার ই গুছিয়ে দিবে তোমার ব্যাস্ত হতে হবে না
গাইথি কৃত্তিম রাগ দেখিয়ে বল্লো
– বিয়েটা কি আমাকে করছেন নাকি নিহার কে
চুহেস মিষ্টি হেসে বল্লো
– কি যে বলো না তুমি,আমার শুধু একটা ই বাবুই পাখি আছে বুঝলে
গাইথি- তা হলে চলুন, আমার দায়িত্ব আমাকে বুঝে নিতে দিন,
চুহেস গাইথিকে নিয়ে নিজের রুমের দিকে পা বাড়ালো
সকালে আদনান আর ঐশী কথা টা শুনেই ওরা খুব রিয়েক্ট করে
গাইথি সবাই কে বুঝিয়ে বলে, তার পর গাইথির যুক্তির কাছে সবাই হার মানে
নিহার আর গাইথি চুহেসের সাথে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত যায়
ড্রাইভিং সিটে নিহার বসেছে তার পিছনে গাইথি আর চুহেস
চুহেস- বাবুই একদম মন খারাপ করবে না কেমন আমি সেখানে পৌছেই তোমার সাথে কথা বলবো
গাইথি কিছু বল্লো না হয়তো কান্না ভেজা কন্ঠ টাকে আড়াল করার জন্য ই কিছু বলেনি
চুহেস গাইথির দিক থেকে কোন রেসপন্স না পেয়ে বল্লো
– তুমি এমন করছো মনে হয় আমি জীবনে ও আর ফিরবো না এটা ই যেন আমার শেষ যাওয়া
চুহেসের কথা শুনে গাইথি আঁতকে উঠে বলে
– এমন করে বলবেন না,শুনতে ভয় লাগে, আমি চাই আপনি ভালো ভাবে ফিরে আসুন
চুহেস- ওকে মাই ডিয়ার বাবুই,
গাড়ি গিয়ে এয়ারপোর্ট এ পৌছলো
চুহেস গাইথির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে প্লেনের দিকে অগ্রসর হয়
গাইথি চুহেসের যাওয়ার পথে তাকিয়ে আছে যতক্ষন না চুহেস চোখের আড়ালে গেছে
নিহার গাইথিকে এমন ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বল্লো
– ম্যাডাম চলুন এবার ফেরা যাক
গাইথি- ওহ হা চলুন,গাইথি হাত দিয়ে মাথার ঘোমটা টা আরেকটু টেনে দেয় যেন নিহার তার চোখের পানি না দেখতে পায়
to be continue