অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৮
লেখা –সুলতানা ইতি
তুমি প্লিজ কেদো না
গাইথি- আপনি আমাকে কাঁদতে নিষেধ করছেন, আপনি জানেন আমি ঐ ছেলের সামনে যেতে কতোটা ভয় পাই
চুহেস- শুনো তুমি এখন যা কান্না করার করে নাও, বিয়ের পর একদম কাদবে না,নইলে আমার কাছে তোমার একটা ই নাম থাকবে’চিচকাদুনে’
গাইথি ওপাড় থেকে রেগে গিয়ে বলে
– কিহ আপনি আমার সাথে মজা করছেন, আপনি ও আমার কষ্ট টা বুঝলেন না,যান আপনাদের কারো সাথে আর কথা বলবোনা, গাইথি রাগ করে কল অফ অরে দেয়
চুহেস – যাক বাবা কি এমন বললাম যে এতো রেগে গেলো,
পরদিন চুহেস গাড়ি নিয়ে বসে আছে গাইথিদের বাসার সামনে কিন্তু গাইথির নিচে নামার কোন নাম গন্ধ ও নেই
চুহেস কল দিচ্ছে কল ও রিসিভ করছে না
চুহেস ঐশীর ফোনে কল দিয়ে বল্লো
– ভাবি গাইথি ফোন রিসিভ করছে না কেনো
ঐশী- নন্দিনী রেগে আছে,তুমি উপরে এসো রাগ ভাংগাও তার পর নিয়ে যাও
চুহেস আর কোন পথ খুজে না পেয়ে গাইথি কে আনতে গেলো
চুহেস ডোর বেল বাজাতেই ঐশী দরজা খুলে দিলো
ঐশী -ডাইনিং রুমে এসো সবাই ওখানে ই আছে
চুহেস ডাইনিং রুমে যেতেই
গাইথি স্বগত স্বরে বল্লো
গুড মর্নিং মিঃ
চুহেস দেখলো সেখানে আদনান, আহমদ মেহেরা সবাই নাস্তা সামনে নিয়ে বসে আছে
চুহেস- কি ব্যাপার সবাই বসে আছেন কেনো
আদনান- তোমার জন্য অপেক্ষা করছি
চুহেস- আপনারা জানতেন আমি আসবো
আদনান- গাইথি যেহেতু রাগ করেছে সেহেতু তুমি না এসে পারবে না তাই
চুহেস- ওহ আচ্ছা বুঝলাম.রাগ টাগ কিছুই না, নাস্তার দাওয়াত এটাই তো
ঐশী- একদম ঠিক ধরেছো চুহেস
চুহেস বসতে বসতে বল্লো,গাইথি এটা তুমি একদম ঠিক করনি
গাইথি- আমি যা করি তা সব সময় ঠিক
চুহেস- ঠিক হলো কি ভাবে শুনি
গাইথি- রোজ রোজ বুয়ার হাতের রান্না খেয়ে ক্যান্টিনের রান্না খেয়ে বৌর হয়ে যান না,তাই একদিন ভিন্ন হাতের রান্না খেয়ে মাইন্ড টা রিফ্রেশ করুন
চুহেস- এখন ভিন্ন হাতের রান্না না খেলে ও চলবে, কয়দিন পরে তো পার্মানেন্টলি ভিন্ন হাতের রান্না খাবো ই
গাইথি- আমার বয়েই গেছে আপনার জন্য রান্না করতে
আদনান- আহ তোরা পরে ঝগড়া করিস আগে খেয়ে নে,ঝগড়া করতে হলে তো শক্তির প্রয়োজন তাই না, খেয়ে শক্তি করে নে
চুহেস আর কোন কথা না বলে খাওয়াতে মনযোগ দিলো
গাইথি- ভাইয়া ভাইয়া দেখো রাক্ষসেরর মতো খাচ্ছে দেখো
ঐশী- গাইথি মার খাবি,এতো কথা বলছিস কেনো তুই খেতে দে ওকে
চুহেস- ভাবি তুমি উনাকে বলে দাও আমি রাক্ষস হলে উনি রাক্ষসী হা হা হা
গাইথি-আবার দাঁত কেলিয়ে হাসছে দেখো
এবার আহমদ মেহেরা কথা বল্লো
– আহ গাইথি ছেলেটা কে এতো কথা বলছিস কেনো তুই,ছুপ ছাপ খা তো
গাইথি আর কথা বল্লো না
চুহেস খাওয়া শেষ করে বল্লো, চলো রেডী হয়ে নাও
গাইথি- আমি রেডী আপনি আসুন
গাইথি আর চুহেস গিয়ে গাড়িতে বসলো
গাইথি – আমার খুব টেনশন হচ্ছে,সাইমুম না জানি কি বলে বসে, আপনি কিন্তু ওর সাথে কথা বলার সময় আমার পাশে থাকবেন
চুহেস- এটা আমি পারবো না, আর এটা ভালো দেখাবে না আমি পার্কিং এ গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো,
গাইথি- ঠিক আছে, কিন্তু আমি যদি আধা ঘন্টার মধ্যে গাড়িতে ফিরে না আসি, তা হলে আপনি কফিশপের বিতরে যাবেন , ঠিক আছে
চুহেস- ওকে ডান
কিছুক্ষন পর গাড়ি থেমে যায়
চুহেস- তুমি যাও আমি পার্কিং গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করবো
গাইথি গাড়ি থেকে নামতে নামতে বল্লো
– আমি যা বলেছি তা যেন আপনার মনে থাকে
চুহেস- আচ্ছা ঠিক আছে
গাইথি- ভুলবেন না যেন
চুহেস- ঠিক আছে ভুলবো না
গাইথি চলে যাওয়ার পর চুহেস আবার ড্রাইভিং সিটে বসে পড়লো,,বসে বসে ভাবছে গাইথির কথা, একদম বাচ্ছা ই রয়ে গেলো, একজন মানুষের সাথে দেখা করতে যাবে, এই জন্য এতো ভয়,আর যদি ব্যাতিক্রম কিছু হতো, তা হলে জানি কি করতো
গাইথি কফিশপের বিতরে যেতেই দেখে পাশে একটা টেবিলে সাইমুম বসে আছে
গাইথি গিতে সাইমুমের সামনে একটা চেয়ার টেনে বসলো
সাইমুম যেন কিছু একটা নিয়ে গভীর ভাবনায় ডুবে ছিলো , গাইথির চেয়ার টানার শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো
সাইমুম- ওহ তুমি এসেছো,বলো কি খাবে, কি অর্ডার দিবো
গাইথি- স্যরি আমি কিছু খাবো না, আপনি কি বলবেন তাড়া তাড়ি বলুন
সাইমুম গাথির মুখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
– মনে হয় তুমি এখানে অস্বস্তি ফিল করছো, তুমি কি আমাকে…….
গাইথি সাইমুমের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বল্লো
– এতো ক্যাছাল না করে, সোজাসুজি বলুন কি বলতে চান
সাইমুম গাইথি গম্ভীর কন্ঠ শুনে একটু অবাক হয়,গাইথির এই রুপের সাথে সে একদম অপরিচিত, তার পর বল্লো
– শুনলাম তুমি নাকি বিয়েটা করতে চাইছো না, কেনো করতে চাইছো না আমি তোমাকে সেটা জিজ্ঞাস করবো না, শুধু বলবো এংগেজমেন্টের এতো দিন পর তোমার কাছে থেকে এই উত্তর আসা টা অবাঞ্ছিত
গাইথি শান্ত আর কঠোর কন্ঠে বল্লো
– অবাঞ্ছিত হলে এটা সত্যি
সেই প্রথম থেকে ই আপনাকে আমার পছন্দ নয়,শুধু ফ্যামেলীর উপরে কোন কথা বলিনি
সাইমুম- তখন ফ্যামেলির উপরে কথা বলোনি এখন বলছো কেনো
গাইথি- এখন বলছি তার কারন…
সাইমুম- কারন কি?
গাইথি- কারন, আমি ভেবেছি এই লম্বা সময়ের মধ্যে, আপনাকে মেনে নিতে পারবো,কিন্তু আমি দুঃখিত মিঃ সাইমুম আপনার সাথে সারা জীবন কাটানো সম্ভব নয়
সাইমুম হঠাৎ করে গাইথি কিছু বুঝার আগেই গাইথির পায়ের কাছে বসে পড়ে বলে
– প্লিজ গাইথি আমাকে একটু সময় দাও আমি তোমার মনের মতো হতে চাই প্লিজ এভাবে আমাকে ফিরিয়ে দিও না,আমি তোমাকে ভা….
গাইথি চট করে উঠে দাঁড়িয়ে বলে
– কি করছেন কি আপনি হুম, লোকে কি বলবে তাড়া তাড়ি উঠে বসুন
সাইমুম- না আমি উঠবো না আগে তুমি বলো আমায় ছেড়ে যাবে না
গাইথি- প্লিজ মিঃ সাইমুম পাগলামি করবেন না, দেখুন আপনি এই রকম পাগলামি করলে আমি কিন্তু এখনি এখান থেকে চলে যাবো
সাইমুম এবার উঠে বসে মুখ নিচু করে বল্লো স্যরি গাইথি,আমি বুঝতে পারছি আমার কথা গুলো শুনতে তোমার ভালো লাগছে না, কিন্তু কি করবো তোমাকে ছাড়া যে আমি অচল
গাইথি- দেখুন, বাস্তববাদী হোন,বাস্তবতা কে মেনে নিন , আমার আর কিছু বলার নেই আপনাকে এই বলে গাইথি বেরিয়ে যায় কফিশপ থেকে
সাইমুম নির্বাক হয়ে গাইথির যাওয়ার পথে ছেয়ে আছে,
গাইথি গাড়ির কাছে এসে ধুম করে গাড়ির দরজা খুলে পিছনের সিটে বসে
চুহেস হেসে বল্লো
– কি ব্যাপার আমার পাশে বসতে কি লজ্জা করছে নাকি
গাইথি এতোক্ষন রাগে ফুলছিলো, চুহেসের কথা শুনে বোমা পাটানো কন্ঠে বল্লো
– একদম কথা বলবেন না আপনি চুপ করে থাকবেন
চুহেস- অমা বলে কি আমি তো বোবা না কথা বলতে জানি চুপ করে থাকবো কেনো
গাইথি- একদম ফাজলামি করবেন না, কি বলে গিয়েছিলাম আমি, আমি যাওয়ার আধা ঘন্টা পর বিতরে যাবেন,কিন্তু আপনি যাননি তো
চুহেস অবাক হয়ে বল্লো
– কি বলো আধা ঘন্টা হয়েছিলো বুঝি
গাইথি- চুপ করুন,আধা ঘন্টা ফেরিয়ে চল্লিস মিনিট হলো তখন ও আপনি যান নি
চুহেস- স্যরি স্যরি একদম খেয়াল করিনি
গাইথি- মিথ্যা বলবেন না আপনি ইচ্ছে করে এমন করেছেন
to be continue