অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৫
লেখা –সুলতানা ইতি
মনের অজান্তেই চুহেসের ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠে
বিছানায় বসে ই কিছুক্ষন ভাবলো,যদি এই কথা গুলো সরা সরি বাবুই আমাকে বলতো,মোবাইলে না বলে,
কিন্তু ওতো সামনে এলে কিছুই বলে না, খুব ভয় পায়, দূর কিচ্ছু ভালো লাগছে না,আমি কি আজ একবার যাবো ঐ বাসায়,নিজেই নিজেকে বল্লো,
– যেতেই পারি,
তার পর ফ্রেশ হয়ে অফিসে গেলো উদ্দেশ্য ফেরার পথে একবার বাবুই দের ওখানে যাবে
চুহেস অফিসের কাজ শেষ করে বের হতে হতে সাড়ে পাঁচটা বেজে গেলো
কিন্তু আজ একটু অবাক হলো এই ভেবে যে বাবুই লাঞ্চের কথা মনে করিয়ে দেয়ার জন্য কোন টেক্সট, কোন ভয়েজ এস এম এস কিচ্ছু পাঠায়নি, ও কি ভুলে গেছে এস এম এস পাঠাতে, কিন্তু ভুলবে কেনো কেউ যদি মন থেকে কোন কাজ করতে চায়, সে ঐ কাজের কথা ভোলা সম্ভব ই না ,
আচ্ছা গেলেই বুঝতে পারবো কি হয়েছে আজ চুহেস একা গাড়ি ড্রাইভ করে এসেছে কাউকে সংগে আনেনি,ড্রাইভার কে আনা যেতো কিন্তু ড্রাইভার কে আনলে নিহার জানতে ফেরে যাবে আমি এখানে এসেছি,,কিছু না বললে ও সারা দিন আমার দিকে তাকিয়ে মিট মিট করে হাসবে,
কথা টা ভাবতে চুহেসের মনে অন্য ভাবনা জেগে উঠলো
যদি আমার একটা ভাই থাকতো সে ও কি এমন করতো আমার সাথে হয়তো করতো,হয়তো আমি ও তার ভয়ে এই ভাবে লুকিয়ে প্রেমিকার সাথে দেখা করতে আসতাম, চুহেসের মনটা বিষাদে ভরে গেলো,
গাইথিদের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো , মন টা কে হালকা করার জন্য চুহেস চারি দিকে নজর ভুলাল, দেখলো আর ও দুটি কার দাঁড়ানো,বুঝলো কেউ এসেছে,কিন্তু বাবুইরা কোন ফ্লরে থাকে সেটা ই তো জানি না, আচ্ছা কাউকে জিজ্ঞাস করি
কিন্তু আশে পাশে কাউকে দেখলো না,
চুহেস – ঠিক আছে একটা ফ্লরে গিয়ে নক করে জিজ্ঞাস করলে ই জানা যাবে
অবশেষে চুহেস গাইথিদের ফ্ল্যাটে এসে নক করলো
কিছুক্ষন পর দরজা খোলার শব্দ হলো আদনাম দরজা খুলেছে
আদনান – আরেহ চুহেস তুই,তুই এই বাসায়, মানে আমি স্বপ্ন দেখছি না তো
চুহেস- আগে বিতরে যেতে দিন ভাইয়া
আদনান- ওহ হা তাই তো আয়, আয়,
বাবা দেখো চুহেস এসেছে,বলতে বলতে আদনান চুহেস কে নিয়ে ড্রইং রুমে গেলো,,সেখানে আর ও কয়েক জনকে দেখতে ফেলো চুহেস
আহমদ মেহেরা- বস বাবা,চুহেস কে লক্ষ করে বল্লো
চুহেস বসলে আদনান বলে আলাপ করিয়ে দিচ্ছি আপনাদের সাথে
এই হচ্ছে আমার ভাই চুহেস মেহেরা,
আর চুহেস এ হচ্ছে সাইমুম এর নাম তুই শুনেছিস কিন্তু দেখিস নি,আর উনারা সাইমুমের বাবা,মা,বোন
চুহেসের এদের পরিচয় শুনেই মন খারাপ হয়ে গেলো,তবু ও আদনান কে থামিয়ে দিয়ে বল্লো,বুঝতে ফেরেছি ভাইয়া
তার পর চুহেস কিছক্ষন বসে,বল্লো
– আমি তা হলে এবার উঠি, আমার একটু কাজ আছে
আহমদ মেহেরা,- সেকি প্রথম এলে আমাদের বাড়িতে,খালি মুখে ই চলে যাবে
চুহেস কিছু বলতে যাবে তার আগে আদনান বল্লো
– তুই তো ঐশী, গাইথি কারো সাথে ই দেখা করলি না,তুই এসেছিস জানলে গাইথি খুশি হতো
চুহেস কিছু না বলে ঠোটে তাচ্ছল্য হাসি ফুটিয়ে বেরিয়ে এলো
চুহেস বেরিয়ে যাওয়ার পর সাইমুম আদনান কে বল্লো,আপনার ভাই মনে হয় আমাদের পছন্দ করেনি তাই ও ভাবে চলে গেছে
আদনান- আরেহ না,তেমন কিছু ই না,এ দেশের সাকসেসফুল বিজনেসম্যান দের মধ্যে ও একজন এদের কতো ব্যাস্ততা থাকে
সাইমুমের মা বল্লো,আপনি যাই বলুন আদনান
আমরা আপনাদের আত্মিয় হচ্ছি মানে, চুহেস মেহারার ও আত্মীয়,সেদিক থেকে আমাদের জন্য ওর মাঝে এতোটুকু সৌজন্যবোধ আমরা দেখিনি
ঐশী দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে ড্রইং রুমের সব কথা ই শুনেছে, শুনে এটা বুঝলো চুহেস যেমন সাইমুম কে পছন্দ করেনি,তেমন সাইমুম ও চুহেস কে,কিন্তু এ দুয়ের মাঝে আমার হাবা ননদ টা কাকে বেছে নিবে, দুজন ই ওর যোগ্য
যাই গাইথি কে খবর টা দিহে আসি,
এদিকে চুহেস গাইথিদের বাসা থেকে বেরিয়ে গাড়ির উপর দু হাত দিয়ে কিচ্ছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো,হয়তো যে শকড টা পেয়েছে সেটা হজম করার চেষ্টা করছে
তার পর গাড়িতে উঠে গাড়ি স্ট্রাট করলো
গাড়ি চলছে, ভাবছে চুহেসে,
কি ভুলটা ই না করলাম,কেমন করে ভুলে গেলাম এ কথা যে গাইথি আমার নয়,ও সম্পূর্ণ সাইমুমের, তা হলে আমি কেনো ওদের মাঝে বাধা হয়ে আসবো না না, আমি আর কখনো গাইথির মুখোমুখি হবো না, যাকে ভালোবাসি তাকে সুখি দেখতে চাই আমি
আমি আর গাইথির সাথে কোন ধরনের যোগা যোগ রাখবো না, এই বলে মোবাইল বের করে গাইথির নাম্বার বল্ক লিস্টে পাঠালো, তার পর ধীরে ধীরে গাড়ি চালিয়ে বাসায় পৌছলো
নিহার- স্যার আজ আবার একা একা কোথায় বেরিয়েছেন বলুন
চুহেস- এই এমনি একটু শহর টা দেখে এলাম,
এই বলে নিহার রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করে দেয়
নিহার চুহেসের এই আচরনে একটু অবাক হয়, স্যার শহর দেখতে বেরিয়েছে কথা টা একদম ই অবিশ্বাস ও,আবার মন খারাপ করে রুমে ডুকে দরজা লক করে দিলো,কিন্তু কেনো
চুহেস দরজা লক করে বিছানায় উপড় হয়ে শুয়ে পড়লো, ভাবছে গাইথির কথা, ওকি সুখি হবে সাইমুমের সাথে,হবে হয়তো,সাইমুম ছেলেটা তো অনেক ভালো, গাইথির প্রতি তার অনেক আগ্রহ, এই সব সাত পাচ ভাবতে ভাবতে ঘুমের অতল সাগরে ডুবে গেলো,
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা খেয়ে যেই না অফিসের জন্য বেরুতে যাবে,অমনি সামনে গাইথিকে দেখে ভুত দেখার মতো থেমে গেলো,এই সময় গাইথিকে একদম ই আশা করেনি চুহেস ভ্রু কুঁচকে বল্লো
– তুমি
গাইথি- কাল ঐ বাসা থেকে চোরের মতো পালিয়ে এলেন কেনো,আপনাকে তো খুব সুপুরুষ হিসেবে জানতাম,
চুহেস- এখানে চোরের কি দেখলে তুমি আমি তো সবার কাছে বলে এসেছি,জরুরি কাজ পড়ে যাওয়াতে চলে আসতে হলো
গাইথি- ঐ সব অজুহাত অন্য সবাইকে দেখিয়ে পার পেয়ে যাবেন,কিন্তু আমাকে ঐ সব অজুহাত দেখাবেন না
চুগেস গম্ভীর কন্ঠে বল্লো
– আমি তোমাকে কেনো অজুহাত দেখাতে যাবো,যা সত্যি তা ই বলেছি, আর নিজেকে খুব ইমপটেন্টস দিচ্ছো তুমি,আমার কাছে তোমার কোন গুরুত্ব ই নেই, পথ ছাড়ো অফিসে যাবো, লেইট হয়ে যাচ্ছে
গাইথি দু পা এগিয়ে চুহেস কে ধাক্কা দিয়ে বল্লো-
হোক লেইট, এই ছেলে খুব ভাব না আপনার,এতো ভাব রাখেন কোথায়,
তার পর আরেক টা ধাক্কা দিয়ে বল্লো,
-আর সবার সাথে রাগ দেখিয়ে ভাব দেখিয়ে নিজেকে লুকাতে পারলে ও,আমার কাছে পারবেন না, আমি আপনার সম্পর্কে সব বুঝি,এ থেকে যেড পর্যন্ত আমার মুখোস্ত
এই বলে চুহেসের বুকে মুখ লুকিয়ে বল্লো কেনো বুঝেন না আপনি,খুব ভালোবাসি আপনাকে, সেই দিন সুন্দর নগর দেখা হওয়ার পর থেকে ভালোবেসে ফেলেছি
আকস্মিক দুই টা ধাক্কা খেয়ে তার পর গাইথির স্পর্শ পেয়ে চুহেস যেন বড় ধরনের একটা শকড খেলো, গাইথির কথা গুলো যেন মাথার মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে ঘুরছে
এবার গাইথি দু হাত ফেছিয়ে ধরে রাখলো চুহেস কে,যেন উত্তর না ফেয়ে ছাড়বে ই না
কিছুক্ষন পর চুহেস ও ঝড়িয়ে ধরলো গাইথি কে,ঝড়িয়ে ধরে বল্লো
– আমি ও
গাইথি চুহেস কে ছেড়ে দিয়ে পরিপূর্ণ দৃষ্টি মেলে চুহেসের দিকে তাকিয়ে কঠোর কন্ঠে বল্লো
– আমি ও কি?
চুহেস- ভালোবাসি এই পাগলিটাকে, ভালোবাসি তার ভালোবাসা ঝড়ানো শাসন গুলো কে
গাইথি – তা হলে চলুন বাবা আর ভাইয়া কে বলবেন, নইলে ওরা তাদের পছন্দের ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে
চুহেস একটু দুষ্টুমি করে বল্লো
– আমার যাওয়ার কি দরকার তুমি তো নিজেই বলতে পারো,এই একটু আগে যেমন রাগিণী হয়ে আমাকে বললে
গাইথি রাগে চোখ দুটোকে গোল। করে ফেল্লো
চুহেস– এই দেখো দেখো,তোমাকে এখন পেছার মতো লাগছে
গাইথি- ভালোবাস তে পারবে আর সাহস করে শ্বশুর কে,আর শালাকে বলতে পারবে না , ভিতু একটা
চুহেস- এহ আমি একদম ই ভিতু নই
গাইথি- প্রমান করুন,আগামি দুই ঘন্টার মধ্যে আমাদের বিয়ের কথা বাবা কে আর ভাইয়া কে বলে
চুহেস- না,না দুই ঘন্টার মধ্যে নয়,
গাইথি- কেনো
চুহেস- নিজের বিয়ের কথা বলতে যাচ্ছি,সাহস সঞ্চয় করতে হবে,লজ্জা সংবরণ করতে হবে তাই না
গাইথি- কি বললেন,ছেলেদের আবার ও লজ্জা ও আছে নাকি
চুহেস- কেনো লজ্জা শুধু কি নারীর ভূষণ হবে, ছেলেদের ভূষণ নয় কেনো
গাইথি- আর একটা কথা বললে মার খাবেন বলে দিলাম
গাইথি- ওরে বাবারে ভয় পেয়েছি,আমার মতো অসহায় একটা ছেলের গায়ে হাত তুলবে
গাইথি চুহেসের মুখে আঙুল দিয়ে ফিস ফিস করে বল্লো
-শুস একদম নিজেকে অসহায় বলবেন না, আমি আছি না
চুহেস হাত সরিয়ে বল্লো
– চলো আজকের এই দিন স্বরনীয় করে রাখতে তোমাকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো
to be continue