অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১৩
লেখা –সুলতানা ইতি
অন্তরে যে তার ছবি আকা সেটা বার বার চোখে ভাসছে
আমি কি পারবো এতো কাছে আসার পর দূরে সরতে,,
অফিস ছুটির পরে ও আজ চুহেস বাসায় যায়নি শহরের কোলাহল থেকে দূরে তার একটা বাংলো আছে,চুহেস বাংলো টার নাম দিয়েছে
” নেইজিনের নীড়ে “নাম অদ্ভুত হলে ও চুহেসের পছন্দের,, সেখানেই আসলো
বাংলোর তিন দিকে ই বাগান, শুধু ফুলের বাগান নয়, নানা রকম নাম না জানা গাছ, ও আগাছা ভরা বাগান টা,
এখানে পরিচিত কোন ফুল পাওয়া যাবে না,যা আছে সব জংলি ফুল, চুহেস এই সব ফেরিয়ে বাংলোর উত্তর দিকের বাগান ফেরিয়ে একটা ছোট্ট পুকুর আছে,
পুকুরের পাড়ে একটা নৌকা,চুহেস নৌকায় উঠে মাঝ পুকুরে গিয়ে বৈঠা ফেলে দিয়ে,
চারিদিকে বনোজ সুন্দর্য দেখতে লাগলো মুগ্ধ দৃষ্টি ফেলে,মুহুর্তেই চুহেসের মন টা ভালো হয়ে গেলো,
চুহেস মন খারাপ থাকলে এই নেইজিনের নীড়ে চলে আসে,কিছুক্ষন থেকে আবার চলে যায়,কিন্তু আজ কিছুতেই যেতে ইচ্ছে করছে না , কেনো জানি সব কিছু অন্য রকম লাগছস,,চুহেস মনে মনে কথা বলছে
– ভালো ই হয়েছে এই নীড়ের কথা কেউ জানে না নিহার ও না,নিশ্চিন্ত থাকা যাবে কেউ ডিস্টার্ব করতে আসবে না
★
রাত প্রায় নটা চুহেসে এখন ও ফেরেনি গাইথি এবার চিন্তায় পড়লো, কোথায় গেলো চুহেস,নিহার তো বলছে সে কিছু জানে না
অপর দিকে এটা ও বলছে এভাবে না বলে উনি কখনো কোথায় ও যান না,তা হলে আজ কোথায় গেলো ,,,
শুধু কি আমি, বাবা, আছি বলে ই কি উনি বাসায় আসতে চাইছেন না,,
কিন্তু আমাদের বললে ই তো হতো যে উনি আমাদের চোখের সামনে দেখতে চান না,, আমাদের কিছু না বলে নিজে ই উধাও ,,
প্রায় শত বার ফোনে ট্রাই করা হয়ে গেছে,রিসিভ হচ্ছে না কোন বিপদ আপদ হয়নি তো
কথা টা মনে পড়তে ই গাইথি আতকে উঠে,,
গাইথি চুহেসের রুমে বসেই এই সব ভাবছিলো, হঠ্যাৎ ঐশী এসে বল্লো
– গাইথি আমরা কাল সকাল সকাল ই নতুন বাসায় উঠবো
ঐশীর কথা শুনে গাইথি কোন রেসপন্স করেনি,যেমন বসে ছিলো,এখন তেমন ই আছে
ঐশী – গাইথি কে ধাক্কা দিয়ে বল্লো কিরে, কোন জগতে আছিস তুই
গাইথি চমকে উঠে বল্লো
– কিছু বলবে ভাবি
ঐশী- কিছু বলবো নয়, কিছু বলেছি,তুই শুনতে পাসনি
গাইথি- কি বলেছো
ঐশী- আগে বল তুই কি ভাবছিস
গাইথি ছোট্ট একটা নিশ্বাস ফেলে বল্লো
– ভাবি আজ উনি ফেরেন নি অফিস থেকে,কোথায় গেছে সেটা তার, পি এ, বলতে পারছে না
ঐশী- সে কি, আসেন নি কেনো
গাইথি- কেনো আসেনি সেটা তুমি ও হয়তো আচ করতে ফেরেছো
ঐশী- হুম সেটাই,আমরা কালকে আমাদের নতুন বাসায় উঠবো
কথা টা শুনে গাইথির মনে তেমন ভাবান্তর এলো না, উলটো ঐশী কে প্রশ্ন করলো
– আচ্ছা ভাবি উনি কোথায় যেতে পারেন
ঐশী- আমি কি করে বলবো, তুই এই ব্যাপারে নিহারের সাথে কথা বল
ঐশী বেরিয়ে যায়, কিছুক্ষন পর গাইথি উঠে নিহারের ঘরের দিকে যায়
★
গাইথি বিষন্ন মনে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে,চুহেস কাল রাতে বাসায় ফেরেনি,,নিহার অফিসে গিয়ে বাসায় ফোন করে জানিয়ে দেয় চুহেস অফিসে আছে
খবর টা শুনে গাইথি স্বস্তি পায়,আদনানরা চলে গেছে সকালে ই, গাইথি যায়নি,
বলেছে
– আমি চুহেসের সাথে দেখা না করে যাবো না, তোমরা যাও আমি পরে আসবো,
ঘড়িতে দুপুর বার টা এলার্ম বেঝে উঠে, গাউথি ভাবনায় ছেদ পড়ে, তার পর কিচেন রুমে যায়,,
কি রান্না করবে তাই ভাবছে,,
– কিন্তু চুহেস যদি আজ ও না আসে,কথা টা ভাবতেই মন খারাপ হয়ে গেলো
তবু ও মনকে বুঝালো এক রাত আসেনি তাই বলে আজ ও আসবে না এমন টা তো নয়, মনে আশার সঞ্চয় করে, রান্না শুরু করে দিলো
বিকাল
পাঁচটা বাজে চুহেস বাসায় আসে,,বাসা টা নিরিবিলি দেখে মন টা ছেৎ করে উঠে, তা হলে কি বাবুই চলে গেছে চারিদিকে এতো নিরব কেনো
চুহেস নিজের রুমে চলে যায়, ফ্রেশ হয়ে এসে, বুয়াকে ডেকে বল্লো
– বুয়া টেবিলে নাস্তা দাও,
গাইথি- সব রেডী আপনি আসুন
গাইথির কথা শুনে চমকে উঠে চুহেস তা হলে কি বাবুই যায় নি,,কিন্তু এতোক্ষন দেখিনি কেনো,হয় তো আমি ভুল শুনেছি, চুহেস গাইথির চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে, ডাইনিং রুমে যায়, গিয়ে দেখে বুয়া দাঁড়িয়ে আছে
চুহেস- যা ভেবেছিলাম তাই, আমি ভুল শুনেছি,বাবুই নেই
চুহেস বসে খেতে শুরু করলো,
– দুপুরে লাঞ্চ করেছেন
চুহেস কথা টা শুনেই পাশে তাকিয়ে দেখে গাইথি দাঁড়িয়ে আছে
চুহেস চোখ বন্ধ করে ফেলে, উফফ কেনো শুধু ওকে দেখি,ওতো বাসায় নেই
গাইথি- কি হলো চোখ বন্ধ করে কি ভাবছেন
চুহেস এবার চোখ মেলে দেখলো না কল্পনা নয়, বাস্তবে ই গাইথি দাঁড়িয়ে
আছে তার পাশে
গাইথি- কি হলো বলুন
চুহেস- ক্যান্টিনে খেয়ে নিয়েছি
গাইথি- কাল বাসায় ফিরেন নি কেনো
চুহেস প্রশ্ন টা এড়িয়ে যাওয়ার জন্য বল্লো
– এগুলা কি তুমি বানিয়েছ,খেতে ধারুন হয়েছে
গাইথি রেগে গিয়ে বল্লো
– আমাকে কি আপনার এখন ও বাচ্ছা মনে হয়, একটা প্রশ্নের আরেক টা উত্তর শুনে চুপ করে যাবো
চুহেস- আমার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে তোমাকে বাচ্ছা ভাবতে যাবো,জ্বীনের মতো চোখ দিয়ে আগুন বের হচ্ছে,কখন ঘাড় মোটকানো শুরু কর….
চুহেস কে কথা শেষ করতে দিলো না,গাইথি চিৎকার করে বল্লো
– কি বললেন আপনি
চুহেস গাইথির চোখের দিকে তাকিয়ে বল্লো
ঐ দেখো ঐ দেখো তোমার চোখ দিয়ে আগুনের ফুল্কি বের হচ্ছে,
গাইথি রেগে চলে যায়
চুহেস মিট মিট করে হাসছে,আর বলছে পাগলি একটা এখন ও বাচ্চা ই রয়ে গেলো,কেমন রাগিয়ে দিলাম
চুহেস খাবার শেষ করে, রুমে এলো
কিছুক্ষন পর গাইথি চুহেসের কাছে এলো সাথে একটা ব্যাগ
চুহেস ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বল্লো,এই রাতে কোথায় যাবে,একদম ব্যাগ প্যাক নিয়ে বের হচ্ছো
গাইথির চোখ তখনো লাল, দেখেই বুঝা যাচ্ছে প্রচুর কেঁদেছে
– আমি চলে যাবো এখন তাই বলতে এলাম
চুহেস কপাল কুঁচকে বল্লো
– একা একা কোথায় যাবে
গাইথি- আপনাকে বলা হয়নি,ভাইয়া আর ভাবি বাবা, সবাই সকালে ই চলে গেছে নতুন বাসাতে
চুহেস- তুমি যাওনি কেনো
গাইথি কিছুক্ষন চুপ করে থেকে বল্লো
– এতো দিন আপনার এখানে থাকলাম,আপনাকে না বলে যাওয়া টা ভালো মনে করিনি তাই, সবার পক্ষ থেকে আমি বলার জন্য থেকে গেলাম
চুহেস- তার কোন দরকার ছিলো না ওদের সাথে চলে গেলে ভালো হতো
চুহেসের কথা শুনে গাইথি চুহেসের দিকে তাকালো,মুখে যেন তার সব কথা হারিয়ে গেছে
নিরাবতা ভেঙে চুহেস বল্লো
-বাসা নিয়েছো কোথায়
গাইথি- বনশ্রী তে
চুহেস- এখন যেতে হবে না,সকালে নিহার তোমাকে নামিয়ে দিবে এখন যাও
গাইথি- তার কোন দরকার নেই,আমি এখন ই
যাবো
চুহেস কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– এই মেয়ে তোমার প্রব্লেম কি হুম,নিজেকে খুব বেশি চালাক ভাবো,বললাম না সকালে যাবে,যাও এখন নিজের রুমে
চুহেসের রাগ দেখে গাইথি চুপসে গেলো,আনমনে হেটে বেরিয়ে গেলো চুহেসের রুম থেকে
to be continue