অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১২
লেখা –সুলতানা ইতি
গাইথির কান্না দেখে চুহেসের বুকের বিতর প্রচণ্ড এক ব্যাথা অনুভব হয়,মনে হচ্ছে খুব অন্যায় কাজ করে ফেলেছি, চুহেস তাড়া তাড়ি করে বসে পড়ে কাউচে,নাহ এ ভাবে বলা উচিত হয়নি,মেয়েটা খুব কষ্ট পেয়েছে
চুহেস নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে নিচে গেস্ট রুমের দিকে যায়,গাইথির রুমের দরজা খোলা ই ছিলো,চুহেস দরজা টা একটু ফাক করে দেখতে পায় গাইথি বালিশে মুখ গুঁজে উপড় হয়ে শুয়ে আছে,মাঝে মাঝে কেপে উঠছে তার শরির,
চুহেসের বুকের বেতর চলাৎ করে উঠে, বাবুই এখন ও কাদছে
আমি কি তাকে ডাকবো, না থাক কাঁদুক কাঁদলে মন হালকা হবে,এই ভেবে উলটো দিকে হাটা ধরলো আবার কি মনে করে গাইথির রুমে ফিরে এলো,
তাকিয়ে আছে গাইথির দিকে, ছোট বেলার মতো রাগ হলে বালিশে মুখ গুঁজে কাদে,কারো সামনে কাঁদতে ওর অসস্থি হয়,ছোট বেলার অভ্যাস টা এখন ও ছাড়তে পারেনি,
চুহেস আসতে করে গাইথির পাশে বসলো
আদর মাখানো স্বরে ডাক দিলো
– বাবুই,কাঁদছিস কেনো, প্লিজ কাঁদিস না
গাইথি চোখ মুছে, বালিশ থেকে মুখ তুললো
বল্লো
– কেনো এসেছেন,আমাকে আমার জায়গা টা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ
চুহেস- আমি কথা টা এমনি বলেছি,আমি বুঝতে পারিনি আমার বলা কথা তোমাকে এতো টা আঘাত করবে,আমি স্যরি প্লিজ বাবুই
গাইথি চুহেসের মুখে বাবুই নাম টা শুনেই তার রাগ চলে যায়,আর রাগ উড়ে গিয়ে সেখানে সিমাহীন মায়া এসে ভীড় করে, এই ভেবে যে এতো বছর পরেই সেই নাম টা মনে রেখেছে চুহেস,সেই কবে এই নাম টা মুছে গেছিলো,
চুহেস গাইথি কে চুপ থাকতে দেখে বল্লো
– দেখ বাবুই প্রচন্ড খিদা লেগেছে,তুই যদি এবার না উঠিস তা হলে তোকে টেনে ফ্লোরে ফেলে দিবো
গাইথি মিষ্টি হেসে বল্লো
– আচ্ছা তাই,ঠিক আছে উঠলাম, আসুন
গাইথি চুহেস কে নিয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে বল্লো
-আপনি বসুন খাবার টা গরম করে নিয়ে আসি এতোক্ষনে ঠান্ডা হয়ে গেছে
চুহেস- লাগবে না,সব ধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস আছে
চুহেস খাচ্ছে গাইথি পাশে বসে আছে
চুহেস খেতে খেতে বল্লো
– তুমি নাকি রাধতে জানো না,তা হলে এই রান্না টা কি করে রাধলে
গাইথি- বলবো না,নইলে আমার আর কোন ক্রেডিট থাকবে না,হি হি হি
চুহেস খাওয়া বন্ধ করে গাইথির হাসি মাখা মুখের দিকে তাকিয়ে বল্ল
– শুন, চোখের পানি খুব মূল্যবান এই পানি যার তার জন্য ফেলতে নেই,যত্ন করে রেখো,সঠিক মানুষের জন্য,
গাইথি- আপনার সেই পিন্ডিতি কথা গুলো আর গেলো না, চোখের পানি আবার মূল্যবান হয় নাকি
চুহেস- হয়, সেটা তুমি বুঝবে না,
গাইথি- আর কথা বলতে হবে না খেয়ে নিন,পরে কথা বলা যাবে
চুহেস খাওয়া শেষ করে বেলকনিতে গিয়ে দোলানায় বসে পড়ে
গাইথি দু মগ কফি নিয়ে বেলকনিতে যায়
চুহেস কফি দেখে খুশি হয়,কিন্তু খুশি টা প্রকাশ করলো না,
কিছুতেই গাইথির মায়ার জ্বালে ঝড়াতে চাইছে না,তবু ও অজান্তে ই যেন ঝড়িয়ে পড়ছে
গাইথি কফির মগ হাতে একটা চেয়ারে বসলো
গাইথি- কফি পেয়ে খুশি হন নি
চুহেস- কফি না হলে কোন সমস্যা ছিলো না
গাইথি কিছুক্ষন চুহেসের দিকে তাকিয়ে থেকে বল্লো
– ওহ বুঝতে পারি নি,
চুহেস কথা প্রসঙ্গ পালটিয়ে বল্লো
– তুমি ঘুমাবে না?
গাইথি- কেনো আপনার কি ঘুম পাচ্ছে
চুহেস কিছুক্ষন নিরব থেকে বল্লো
– হুম আমি এখন ই ঘুমাবো
চুহেসের কথা শুনে গাইথি চট করে উঠে হাতের কফি ফেলে দিয়ে দূত সেখান থেকে চলে গেলো
আকস্মিক গাইথির এই পরিবর্তন চুহেস কে খুব ভাবালো,
কিন্তু কিছু করার নেই,গাইথি ছোট, বয়স কম,আবেগ বেশি, তাই অন্যের বাগদত্তা হয়ে ও সেদিকে কোন খেয়াল নেই,
চুহেস রুমে চলে এলো ভাবছে সে,
গাইথি কে ভালোবাসি,কিন্তু এটা তাকে বুঝাতে চাই না,কষ্ট টা আমার এক তরফা থাক,যখন সাইমুম কে বিয়ে করে আমেরিকা চলে যাবে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে
পরদিন সকালের নাস্তা টা ও গাইথি নিজ হাতে তৈরী করলো বুয়া কে হাত লাগাতে দেয় নি,, রাতের ঘটনায় যদি খুব কষ্ট পেয়েছে তবু ও নিজেকে সামলে নিয়েছে
ঐশী কিচেনে গিয়ে গাইথি কে দেখে দুষ্টুমির হাসি হেসে বল্লো,যাকে রান্না ঘরের পাশে দিয়ে হাটতে দেখিনি,সে আজ দু দিনে পাকা গৃহিনী হয়ে গেছে দেখছি
এতো কষ্ট কার জন্য
গাইথি ম্লান হেসে বল্লো
– ভাবি তোমার খোঁচা মেরে কথা বলা টা আর গেলো না
ঐশী- খোচা মারলাম কই,ভাগ্যিস কাল রাতে মিশমির কান্না থামানোর জন্য ওকে নিয়ে হাট ছিলাম,ড্রইং রুমে, নইলে দেখতে ই পেতাম না,
তা ননদিনী, উনার মনের বরফ কি গলেছে
গাইথি দীর্ঘ এক নিশ্বাস ফেলে বল্লো
-না ভাবি,তার মনের বরফ জমে সে বরফ পাথরে পরিনত হয়েছে
সে এখন অন্ধ,কারো মনের আকুতি ই তার স্পন্দন তোলে না
ঐশী- এতো তাড়া তাড়ি হাল ছেড়ে দিলে
গাইথি – না ভাবি, দেখি আমার ভাগ্য আমাকে কোথায় নিয়ে যায়, ভাইয়ার কি খবর ফ্ল্যাট কি পাওয়া গেছে
ঐশী- হুম পাওয়া গেছে একটা, চুড়ান্ত কথা হবে আজকে
গাইথি আর কোন কথা বল্লো না, নাস্তা টেবিলে রাখলো
সবাই নাস্তা খেতে বসলো , চুহেস এখন ও সবার সাথে খেতে বসেনি,ব্যাপার টা গাইথির কাছে পরিস্কার হয়ে যায়,চুহেস তাদের কে এড়িয়ে চলছে,
চুহেস তাড়া হুড়া করে বেরিয়ে বল্লো,হাতে একদম সময় নেই,নাস্তা খেতে পারবো না,অফিস ক্যান্টিনে এক ফাকে খেয়ে নিবো,
আদনান – অল্প করে কিছু খেয়ে যা চুহেস
চুহেস- বললাম না লেইট হয়ে গেছে,
এই বলে নিহার কে উদ্দেশ্য করে বল্লো
– তুমি কি এখানে বসে থাকবে নাকি উঠবে
নিহার কিছু বলার আগে
গাইথি বল্লো
– আপনি নিজে খেতে চাইছেন না ভালো কথা, অন্য জনকে খেতে নিষেধ করার কোন রাইট আপনার নেই
চুহেস রাগে কট মট করে নিহারের দিকে তাকায়
নিহার বুঝতে পারলো চুহেস রেগে গেছে
– ইয়ে না মানে সত্যি লেইট হয়ে গেছে,আমি তা হলে উঠি,আজ অফিসে মিটিং আছে এই বলে নিহার গিয়ে গাড়ি তে বসলো
ওরা চলে যাওয়ার পর খাওয়ার টেবিলে পিন পতন নিরাবতা, নিরবতা ভেংগে আহমদ মেহেরা বল্লো
– আমাদের এখানে থাকা উচিত হচ্ছে না আদনান
আদনা কিছু বলতে যাবে তার আগে গাইথি বল্লো
– কেনো বাবা, চুহেসের এই ব্যাবহার তুমি নিতে পারছো না তাই তো,,কিন্তু চুহেস তো তোমার সাথে তেমন কিছুই করেনি,শুধু এড়িয়ে চলছে, আর আমি তার জায়গা হলে কি করতাম,
এতো টুকু বলে একটু দম নিলো গাইথি,হয়তো নিজেকে কন্ট্রোল করেছে ,থাক সেই কথা তোমাকে বলতে চাই না, তুমিআমার বাবা হয়তো এই কথা তুমি আমার কাছে থেকে আশা করো না
আদনান – আহ গাইথি চুপ করতো,তার পর আদনান আহমদ মেহেরা কে বল্লো
– বাবা আজ আমি আর ঐশী বেরুবো, বাড়িয়ালার সাথে কথা ফাইনাল করে, তার পর কালকের মধ্যে নতুন বাসায় গিয়ে উঠবো
চুহেস নিজের ক্যাবেনি বসে ভাবনার জগতে ভেসে যাচ্ছে,,
মিথ্যা বলে বেরিয়েছি বাবুই সামনে থাকলে নিজে কে ধরে রাখতে পারি না,
তাই ওর চোখের সামনে থেকে চলে এলাম কিন্তু অন্তরে যে তার ছবি আকা,সেটা বার বার চোখে ভাসছে
to be continue