অবেলায় ভালোবাসা পর্ব-১০
লেখা –সুলতানা ইতি
সাইমুম আদনানের এই ব্যাবহারে, একটু অবাক হলো তার পর আর কিছু না বলে বেরিয়ে এলো
নিহার ড্রাইভ করছে,চুহেস পিছনের সিটে আনমনা হয়ে বসে আছে,নিহার লুকিং গ্লাসে চুহেসের মুখ স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে,,আর নিজে ই নিজেকে বলছে
– স্যার যে কেমন মানুষ, সেটা বুঝা বড় ধায়, তুলে নিয়ে এলাম গাইথি কে,এই রকম একটা সুযোগ নিজের ইচ্ছে তে হাত ছাড়া করলো,আবার এখন মন খারাপ করে বসে আছে
চুহেস ভাবছে,এতোক্ষনে মনে হয় সাইমুম এসে পড়েছে আমার দেয়া চিরকুট টা পড়ে হয় তো আবার বিয়ের জন্য রাজি হয়েছে হবার ই কথা
গাইথির মতো মেয়ে তো আর দ্বিতীয় টা পাবে না ওদের ভালোবাসার কাছে,আমার এই অবেলায় ভালোবাসার কোন দাম নেই,
সব দিক থেকে ই আমি গাইথির অযোগ্য, আমি না হয় এই জন্য অবহেলিত হয়ে থাকলাম, সব ভালোবাসা তো আর পূর্ণতা পায় না,
জীবনে অনেক বেলা হওয়ার আগে ই ভালোবাসার মানুষ কে খুঁজে নিতে হয়,আমি তা নিতে পারিনি এটা আমার ব্যার্থতা,,
গাড়ি এসে চুহেসের বাসার সামনে থামলো, চুহেসের যেন সে দিকে কোন খেয়াল নেই
নিহার- স্যার,এসে পড়েছি,,
চুহেসের কথায় ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে
তার পর গাড়ি থেকে নেমে পড়ে,
*
এদিকে গাইথি সেই যে রুমে ডুকে দরজা বন্ধ করেছে আর বের হবার নাম নেই,আদনান আর ঐশী এসে অনেক বার ডেকেছে তবু ও দরজা খোলেনি,
বালিশে মুখ গুঁজে অনেক্ষন কাদলো, ছোট বেলার কিছু স্মৃতি যেন ওকে শান্ত হতে ই দিচ্ছে না,
গাইথি বার বার বলছে,আমি কেমন করে সব কথা ভুলে যেতে পারলাম,কেনো আমার এতো দিন সব কথা মনে পাড়েনি,,
এবার আহমদ মেহেরা এসে মেয়েকে ডাকতে শুরু করলো
গাইথি- উফফ এরা আমাকে আমার মতো করে থাকতে দিবে না দেখছি,
উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলো, আহমদ মেহেরা, আদনান, ঐশী,সবাই গাইথি রুমে যায়
আহমদ মেহেরা চুপ করে আছে মেয়ে কে বলার মতো কোন কথা ই যেন তার কাছে নেই
আদনান বোন কে বল্লো
– এমন করছিস কেনো গাইথি,তুই আমার ছোট বোন, অনেক আদর দিয়ে তোকে বড় করেছি,তুই এমন মন মরা হয়ে থাকলে আমাদের ভালো লাগে বল
গাইথি- আমি ঠিক আছি ভাইয়া
আদনান – কেমন ঠিক আছিস সেটা তো দেখতে ই পাচ্ছি,খাওয়া দাওয়া সব বন্ধ করে দিলি, কেন এমন করছিস বোন, বল আমায়
গাইথি ভাইয়ের কথা শুনে কেঁদে উঠলো,কাঁদতে কাঁদতে ভাই কে বল্লো
– ভাইয়া আমরা কেমন করে চুহেসের কথা ভুলে যেতে পারলাম বলো,ও কি আমাদের কেউ ছিলো না
আদনা বোন কে শান্তনা দিয়ে বল্লো
– ভুল টা আমাদের ই অনেক অন্যায় করেছি আমরা ওর সাথে,
তার পর একটু স্বাভাবিক হয়ে বল্লো,আমি তোর ভাবি,আর বাবা মিলে একটা প্লান করেছি
গাইথি চোখের পানি মুছে,জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আদনানের দিকে
আদনান – আমরা সবাই মিলে চুহেসের বাসায় যাবো, আমাদের অন্যায় স্বিকার করে ওর সাথে সম্পর্ক টা স্বাভাবিক করতে চাইবো,ও তো আমাদের ভাই তাই না
গাইথি- হালকা হেসে ফেল্লো,তার পর বল্লো,হুম ভাইয়া,ও তোমার ভাই হয় তো
ঐশী দুষ্টুমির হাসি দিয়ে বল্লো
– কেন তোর বুঝি অন্য কিছু হয়
ঐশীর কথা শুনে গাইথির লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেলো, মুখে কিছু বলতে যেয়ে ও যেন বলতে পারছে না,এই রকম লজ্জা সংকোচ তো আগে লাগে নি,
যখন ভাবি সাইমুম কে নিয়ে এই রকম কথা বলতো,তা হলে আজ কেনো লাগছে
গাইথির এই অবস্থা দেখে কেউ আর কোন কথা বল্লো না,সবাই গাথির রুম থেকে বেরিয়ে গেলো,
গাইথি আবার বালিশে মুখ গুজলো,উহ হু, এবার আর কাঁদছে না,লজ্জায় মুখ গুজলো
*
চুহেস অফিসে যাওয়ার জন্য রেডী হচ্ছে, অফিসে অনেক কাজ পড়ে আছে
তাই তড়িঘড়ি করে অফিসের জন্য বেরিয়ে পড়লো
চুহেস অফিসে গিয়ে নিজের ক্যাবেনি গিয়ে একগাদা ফাইলে ডুবে গেলো
নিহার কে পাঠিয়েছে এম এ কম্পানিদের সাথে একটা ডিল করতে,
এমন সময় অফিস টেলিফোন বেজে উঠে
চুহেস ফোন ধরে বল্লো,ইয়াহ মিস,ইভানোভা বলুন
ইভানোভা- স্যার আপনার বাসা থেকে একজন আয়া ফোন করেছে,বলছে আর্জেন্ট কথা আছে
চুহেস -ওকে লাইন দাও
চুহেস বাসায় কথা বলা শেষ করে অল্পক্ষণ কিছু ভাবলো, তার নিহার কে কল দিয়ে বলে,নিহার তুমি কি জানতে আজ বাসায় গেস্ট আসবে
নিহার- না তো স্যার,কেনো কেউ এসেছে নাকি
চুহেস- হুম,আয়া ফোন করেছে বাসা থেকে
ঠিক আছে তুমি ওদিকের কাজ সেরে চলে এসো
আমি দেখছি এদিক টা, চুহেস কল কেটে দিয়ে,, রিভলভিং চেয়ারে সোজা হয়ে বসলো,,,
রাবেয়া খালা তার ছেলের কাছে যাওয়ার পর আমি নতুন বাড়িতে উঠি,কেউ তো নেই যে আমার নতুন বাড়ির ঠিকানা জানবে,
আর সেখানে আসবে কোন খবর না দিয়ে,,
রাবেয়া খালা ছাড়া তো এই শহরে আমার এমন কেউ নেই যে আমার খোঁজে আসবে
সব চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে চুহেস ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে এলো,,রিসেপশনে ইভানোভা কে বল্লো
– মিস নোভা,নিহার আসলে বলবেন আমি বাসায় ফিরে গেছি,
ইভানোভা একটু অবাক হলো এই প্রথম অফিস ছুটি হওয়ার আগে বাসায় যেতে দেখে চুহেস কে
মুখে কিছু না বলে,মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো চুহেসের কথায়
চুহেস গাড়িতে এসে বসলো, ঢাকা শহরের ঐতিহাসিক জ্যামের কারনে আধ ঘন্টার পথ পার হতে দেড় ঘন্টা লাগলো,
বাসার গেটে গাড়ি পার্কিং করে বাসার বিতরে গেলো,
প্রথমে ড্রইং রুম, ড্রইং রুমে চোখ পড়তে ই ভুত দেখার মতো চমকে উঠে চুহেস,
আহমদ মেহেরা, আদনান,ঐশী,গাইথি,
গাইথির দিকে চোখ পড়তেই চুহেসের বুকের ধুকফুকানি বেড়ে গেলো,গাইথি কে দেখলে এই অনুভুতি টা হয়,এই অনুভুতির কোন কারন আজ ও চুহেস বুঝতে পারলো না,
গাইথি ফুলহাতার একটা সাদা গাউন পরেছে,এতেই তার লাবন্যতা যেন আর ও বেড়ে গেছে, অপলক ছেয়ে আছে চুহেস গাইথির দিকে
এমন সময় গাইথির ও চোখ পড়ে যায় দরজায় দাঁড়ানো চুহেসের উপর,এই প্রথম চার চোখের মিলন হলো,
গাইথি লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নেয়,
চুহেস নিজেকে সামলে নিয়ে বিতরে প্রবেশ করতে করতে বল্লো
-আরেহ মিঃ আদনান আপনারা
এতোক্ষনে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে চুহেস
আদনান হেসে উত্তর দিলো
– চলে এলাম দেখতে
চুহেস- কি দেখতে এলেন আমাকে নাকি,আমার আজকের এই সাকসেস টা কে
চুহেসের কথায় বিব্রত বোধ করলো আদনান, তবু ও নিজেকে সামলে নিলো
চুহেস- যাই হোক অনেক দূর থেকে এসেছেন আপনারা আগে রেষ্ট নেন, তার পর কথা হবে,এই বলে চুহেস বাড়ির একজন আয়া ডেকে বল্লো
– তাহের গেস্ট রুমে নিয়ে যাও এনাদের কে
এবার আহমদ মেহেরা কথা বল্লো
– আমরা এখানে থাকতে আসিনি আমি কিছু কথা বলেই চলে যাবো
চুহেস তাহের কে ওয়াডার দিয়ে চলে যাচ্ছিলো,আহমদ মেহেরার কথা শুনে থমকে দাড়ালো,আহমদ মেহেরার দিকে তাকিয়ে বল্লো
– এখন ও বুঝি আপনার কিছু কথা রয়ে গেছে,কিন্তু আমার মনে হয় আপনার কোন কথা ই নেই
আহমদ মেহেরা- অনেক টাকা কামিয়েছো তুমি,নাম জোশ খ্যাতি ও অনেক করেছো,কিন্তু এসবের মাঝে বড়দের সাথে সম্মান দিয়ে কথা বলা টা ভুলে গেছো
চুহেস- ওহ তা হলে আপনি যা করেছেন আমার সাথে, তার পরে ও আমার কাছে থেকে সম্মান পাওয়া আশা করেন
আহমদ মেহেরা আর কোন কথা বলতে পারলো না
আদনান বল্লো
– চুহেস ভাই আমার,যা হয়েছে সব ভুলে গিয়ে কি আমরা নতুন করে এক হতে পারি না
চুহেস- আমি কি করে সব ভুলে যাবো মিঃ আদনান,আমার সাথে যা হয়েছে,তা আপনার সাথে হলে আপনি কি ভুলে যেতে পারতেন
আহমদ মেহেরা এবার নরম স্বরে বল্লো,
– বাবা আমি সত্যি তোর উপর অনেক অন্যায় করেছি, আমার অন্যায়ের কি কোন ভাবে ক্ষমা হয় না
চুহেস- আমার কারো প্রতি কোন রাগ নেই কিন্তু, আমি আমার অতিত কে ভুলে যেতে পারবো না, আশা করি আপনি এমন করে আমাকে অনুরোধ করবেন না,
আপনারা এসেছেন ভালো কথা,খেয়ে দেয়ে রেস্ট করুন
কথা শেষ করে চুহেস তার রুমে চলে যায়
গাইথি মনে মনে খুব কষ্ট পেয়েছে এতো দূর থেকে যার জন্য ছুটে এসেছি,সে একটি কথা ও বল্লো না আমার সাথে
গাইথি কে এমন বিমূঢ় অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে
ঐশী ফিস ফিস করে গাইথি কে বলে,
– আহ হা ননদিনী এতো অল্পতে ভেংগে পড়লে চলবে কি করে,,চুহেসের মনে বরফ জমেছে সেটা গলানোর দায়িত্ব যে তোমার
গাইথি বিব্রত বোধ করলো ভাবির কথা শুনে,, তাহের ডাইনিং রুমে খাবার রেডী করে ওদের ডাকতে এলো,
নিহার অফিসের সব ঝামেলা চুকিয়ে বিকাল পাঁচটা তে বাসায় ফিরে,
গেস্ট রুমের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো বিশেষ কেউ এসেছে,নইলে এতোক্ষনে চলে যেত,নিহার ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া সেরে চুহেসের রুমের দরজায় নক করে
চুহেস- বিতরে এসো নিহার
নিহার গিয়ে চুহেসের মুখোমুখি একটা সোপায় বসে
নিহার – স্যার প্রথমে একটা ব্যাড নিউজ,এম এ কম্পানি আমাদের সাথে ডিল টা করতে রাজি হয়নি,অনেক বুঝিয়ে ও কাজ হয়নি,
আর গুড নিউজ হলো ফ্রান্স যে শাখাটা করতে ছেয়ে ছিলেন সেটা ফাইনাল হয়েছে এখন সেটা উদ্বোধন করতে কখন যাবেন,সেখান কার কাজে নিউজিত কর্ম কর্তারা,আপনাকে না দেখে ফ্যাক্টরি চালু করতে চাইছে না, তাদের একটা ই দাবি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে বস কে হাজির থাকতে হবে
চুহেস- হুম দ্বিতীয় খবর টা শুধু গুড নিউজ ই নয় আমার জন্য অনেক বড় একটা পাওয়া তবে সেখানে আমি যেতে পারবো না,
আমার হয়ে উদ্বোধন করবে রাবেয়া খালা,উনি তো ফ্রান্সে উনার ছেলের কাছে ই আছে,সো আমি চাই উনাকে দিয়ে কাজ টা শুরু হোক, উনি না থাকলে আমি যে কোথায় ভেসে যেতাম
নিহার- স্যার, আরেক টা কথা, রাবেয়া খালা অসুস্থ উনি চায় আপনি নিজে ফ্রান্সে যান আর উনার সাথে দেখা করুন, মিঃ চিকি গতকাল ফ্যাক্স করেছে আমাকে, আপনি অনেক ব্যাস্ত থাকেন তাই আপনাকে সরাসরি বলতে চায়নি তারা
চুহেস- তা হলে আমাকে যেতেই হবে, কখন যেতে হবে
নিহার- নেক্সট মানতে গেলে ভালো হয়,এক সাথে দুটো কাজ হয়ে যেত
চুহেস- ঠিক আছে তাই হবে,, যাও তুমি রেস্ট নাও
নিহার- আরেক টা কথা স্যার
চুহেস ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বল্লো,এবার তুমি এটা জিজ্ঞাস করোনা আজকের গেস্ট রা কারা,কারন তুমি এদের ভালো করে জানো,
নিহার- স্যারর দরজায় এসে কখনো কথা বলতে হয়না নক করলে ই আপনি বুঝে যান,প্রশ্ন করার ধরন দেখলে আপনি বুঝতে পারেন কি বলতে চাই,
এটা কি করে সম্ভব হয়
চুহেস- এটা কমনসেন্স নিহার,
নিহার- হবে হয়তো
বলে নিহার গেস্ট রুমের দিকে এগুলো,কোন রুমে নক করবে এটা ভাবছে সে
পিছন থেকে চুহেস বল্লো
বাম দিকের রুমে যাও বুঝতে পারবে
নিহার চুহেসের কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে বল্লো, স্যার আপনি কি করে বুঝলেন যে আমি এটা ই ভাবছি
চুহেস- কিছু না এমনি চলো আমি ও যাবো তোমার সাথে,
চুহেস আর নিহার আহমদ মেহেরা রুমে গেলো,গিয়ে দেখলো সবাই আহমদ মেহেরার রুমে
নিহার সবাইকে দেখে অবাক হলো ভাবলো
এরা এখানে কেনো এসেছে, স্যারের সাথে গাইথি ম্যাডামের বিয়ের কথা বলতে এসেছে কি? কি জানি হবে হয় তো
চুহেস তাদের দিকে তাকিয়ে বুঝলো,এরা হয়তো নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলো
চুহেস- স্যরি আমরা মনে হয় ভুল সময় এসেছি
আদনান- আরেহ না না,বিতরে এসো আমরা এমনি কথা বলছিলাম তেমন কিছু নয়
চুহেস আর নিহার গিয়ে বসলো,
চুহেস- আপনাদের কোন অসুবিধা হয়নি তো
আহমদ মেহেরা- না বাবা কোন অসুবিধা নেই,তবে আমরা আজ সন্ধায় রওনা হবো, গ্রামের উদ্দেশ্যে
চুহেস কিছু বল্লো না শুধু বল্লো আপনাদের ইচ্ছে এই বলে সে উঠে গেলো
নিহার বসে আছে,
নিহার- আমার মনে হয় আপনাদের কয়দিন এখানে থাকা দরকার
ঐশী- কেনো
নিহার- চুহেস স্যারের সাথে আপনাদের যে বন্ধন টা ছিলো সেখানে মরিচা ধরেছে, এবার সে বন্ধনে সান দিয়ে ধারালো করা উচিত
আদনান – কিন্তু কি করে, চুহেস তো আমাদের কোন সুযোগ দিচ্ছে না
to be continue