নষ্ট গলি পর্ব-৩৬
লেখা-মিম
নিজের বেডরুমে মুখোমুখি বসে আছে আলিশা রুপম। প্রচন্ড মনোযোগ আর উৎকন্ঠা নিয়ে রুপম তাকিয়ে আছে আলিশার দিকে। কোত্থেকে কথা শুরু করবে খুঁজে পাচ্ছে না আলিশা। অহেতুক নিজের গাল চোখ হাত চুলকাচ্ছে কিছুক্ষণ পরপর।
-কি না বলতে চেয়েছিলে?
-হুমমম।
– তোমার তো শরীর চুলকাচ্ছে না। কেনো শুধুশুধু শরীর চুলকাচ্ছো?
– কিভাবে বুঝলে?
– তোমার সাথে সংসার করছি বহুদিন৷ এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝবো না?
– আমাকে এত ভালোবাসো কেনো?
– জানি না তো।
– আমি খুব পাগলামি করি তাই না?
আলিশার কথায় শব্দ করে হেসে উঠলো রুপম।
– হ্যাঁ পাগলামি তো করো। কিন্তু তোমাকে আজকে সুস্থ মনে হচ্ছে।
– মজা করছো?
– নাহ আমি সিরিয়াস। সত্যিই একটু অন্যরকম লাগছে তোমাকে। ভালো লাগছে খুব।
নিজের হাত বাড়িয়ে রুপমের হাতটা ধরলো আলিশা। চোখে পানি ছলছল করছে ওর।
– তোমার কি মন খারাপ আলিশা?
– রুপম,, আজকে সোহানকে দেখেছি মায়ার সাথে। অনেকটা সময় নিয়ে ওদের দেখেছি। খুব সুখে আছে সোহান। ওর জীবনটা মায়া গুছিয়ে নিয়েছে। মায়াকে ও প্রচন্ড ভালোবাসে। ওর চোখ দেখলেই বুঝা যায়। সোহানের হাসির আওয়াজ কানে লাগছিলো খুব। এভাবে কখনো ওকে হাসতে দেখিনি জানো। মায়া নিজের ভালোবাসা আদায় করে নিতে জানে। সত্যিই ও ভালোবাসার মানুষটাকে আগলে রাখতে জানে৷
– এজন্য মন খারাপ?
– না। মন খারাপ অন্য কারনে।
– কি কারন?
– নিজেকে খুব হীন মনে হচ্ছে।
– কেনো?
– আমি খুব খারাপ। খুউউব বেশি। ভালো সন্তান হতে পারিনি। ভালো ওয়াইফ হতে পারিনি৷ ভালো মা হতে পারিনি। কোনো সম্পর্কের মূল্যায়ন আমি করতে জানি না রুপম। সম্পর্কে বিষ ঢেলে ঢেলে একদম শেষ করে ফেলেছি। বাবা মা ভাইয়া কেও আমার সাথে সম্পর্ক রাখতে চায় না। আফিফ আমাকে দেখলে যতটা সম্ভব লুকানোর চেষ্টা করে। আমার কাছে ঘেষতে চায় না। সোহান আমাকে ফেলে চলে গেছে। তোমার ফ্যামিলির মানুষও আমাকে দেখতে পারে না। বাকি আছো শুধুমাত্র তুমি। সবাই আমাকে ফেলে চলে যাচ্ছে। আমি তোমাকেও হারাতে চাই না৷
ঠোঁট ভেঙে কাঁদতে লাগলো আলিশা। খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে আলিশাকে জড়িয়ে ধরলো রুপম।
– আমি কোথায় যাবো?
– দূরে।
– যাওয়ার হলে তো অনেক আগেই যেতে পারতাম। গিয়েছি আজ পর্যন্ত?
– যদি চলে যাও?
– মরন ছাড়া কোথাও যাবো না। পুরো পঁচিশ লাখ টাকা খরচ করে পনেরো লাখ টাকা দেনমোহর পরিশোধ করে বিয়ে করেছি। আপনাকে আমি ছাড়ছি না৷ বহু পরিশ্রম করে টাকা কামাই করি। চল্লিশ লাখ টাকা উসুল না করেই কি চলে যাবো নাকি?
রুপমের কথায় ঠোঁটের কোনে মুচকি হাসি ফুটে উঠলো আলিশার। রুপমের বুক থেকে মাথা তুলে বললো,
– তুমি না বলেছিলে সাইকাআট্রিস্টের কাছে নিয়ে যাবে আমাকে,?
– তুমি ডক্টরের কাছে যাবে?
– হুম যাবো। যাওয়াটা দরকার।
– কালকেই নিয়ে যাবো।
– রুপম আমি ভালো থাকতে চাই।
– অবশ্যই থাকবে। তুমি জাস্ট নিজেকে একটু চেঞ্জ করো। দেখবে সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে।
– আর আমাদের সম্পর্কটা?
– মানে?
– আমি তোমাকে ভালোবাসতে পারি না কেনো?
– তুমি কখনো আমার ভালোবাসাটা রিয়েলাইজ করতে চাওনি। তোমার মাথায় সোহানকে পাওয়ার ভূত চেপে ছিলো এতদিন। আমার ভালোবাসা অনুভব করার মতো সময়ই তো ছিলো না।
– সরি,,,,,, সম্পর্কটা কি সুন্দর করা যায় না?
-অবশ্যই যায়। আমি তো হাত বাড়িয়েই রেখেছি। এখন শুধু তোমার হাতটা আমার দিকে বাড়িয়ে দেয়া বাকি।
রুপমকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো আলিশা। মুখ ফুটে কিছু বলেনি ও। আলিশার স্পর্শের গভীরতায় রুপম যতটা বুঝার বুঝে নিয়েছে।
দুইদিন পর………
মায়াকে নিয়ে সকালের ফ্লাইটে কক্সবাজার গিয়েছে সোহান। বাসায় কেও নেই৷ কাজের লোক দুটোকে ছুটি দিয়েছে দুইদিনের। ওরা যে যার মতো গ্রামের বাড়ি গিয়েছে। সালমান ওর কোন এক বন্ধুর বাসায় গিয়েছে। সোহান ঢাকা ফিরে আসার আগ পর্যন্ত বন্ধুর ওখানেই থাকবে।
রাত পৌনে একটা। সোহানের ফ্ল্যাটের স্টোর রুমে একটা চেয়ারে বেঁধে রাখা হয়েছে ইমনকে। জোনাকি দশটার দিকে খবর দিয়েছিলো ঐ পাড়ায় যাওয়ার জন্য। মায়া অপেক্ষা করছে ওর জন্য। কারা যেনো ঐ গলির সামনে থেকে ওকে তুলে এনেছে। অন্ধকারে কারো চেহারা দেখতে পায়নি। সরু গলিটার কাছে যেতেই ৮-৯ জন মিলে একটা জটলা পাকালো। কেও একজন ওর নাকে কাপড় চেপে ধরলো। এরপর আর কিছু মনে নেই। চোখ মেলে নিজেকে আবিষ্কার করলো এই রুমে। ডিম লাইট জ্বলছে বাম পাশের দেয়ালটাতে। দেখে মনে হচ্ছে স্টোর রুম। কিন্তু পুরো রুম ফাঁকা। কয়েকবার চিৎকার করেছে কারো সাহায্য পাবার আশায়৷ কেউই ওর ডাকে সাড়া দেয়নি।
থাইগ্লাসের দরজাটা কেও খুলছে। একজন পুরুষ মানুষ ছোট একটা বস্তা মতন দেখতে ব্যাগ এনে রুমের ভিতর রেখেছে। মুখটা অর্ধেক ঢেকে রেখেছে। তাই চেহারা বুঝা যাচ্ছে না৷ অদ্ভুত শব্দ করে হাসছে লোকটা।
– কি রে শালা, তুই নাকি ইন্দুররে জমের মতো ভয় পাস। নে, আজকে রাতে তোরে ইন্দুর দিয়া নাচামু।
লোকটা কথাটা বলেই ব্যাগের মুখ খুলে দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে রুম থেকে বেরিয়ে থাই গ্লাসটা আবার আটকে দিলো। ইমন লোকটার কথা কিছু বুঝে উঠার আগেই ডিম লাইটের আবছা আলোতে দেখতে পেলো ব্যাগের ভিতর থেকে একের পর এক ইঁদুর বের হতে শুরু করেছে। শরীর সর্বশক্তি দিয়ে সেখান থেকে ছুটে যাবার চেষ্টা করছে সে। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করছে,
– সরাও এগুলো। আমার সহ্য হয় না। আমাকে যেতে দাও।
পুরো রুমে ইঁদুর ছুটোছুটি করছে। তিন চারটা ইঁদুর ইমনের শরীরে বেয়ে উঠা নামা করছে। ভয়ে পুরো শরীর ঘেমে ভিজে গেছে ইমনের। ফর্সা মুখে রক্ত জমে লাল হয়ে গেছে। গলায় তীব্র ব্যাথা হচ্ছে। তবু থেমে নেই সে। চিৎকার করেই যাচ্ছে
– আমাকে এখান থেকে বের করো। যা চাও তাই দিবো।
(চলবে)