My Mafia Boss পর্ব-.২
Writer:Tabassum Riana
নুহাশদের বাড়িতে লোকের সমাগম বেড়েই চলছে। কাজ তো আছেই সেই সাথে মেহমান দের ও দেখতে হচ্ছে বাড়ির বড় বৌ আয়েশার।আয়েশা নুগাশের ভাবি।তবে এক্ষেত্রে আয়েশা বেশ পারদর্শী।কাজে কোন ভুল থাকা চলবেনা তার শাশুড়ী রাহেলা বেগমের আদেশ।ছোট ছেলের বিয়ে বলে কথা।পুরো বাড়িতে হাঁটছেন সবার কাজের তদারকি করছেন। বৌমা এটা এমন করে রাখলো কেন?টেবিলের ওপর ফুলদানি দেখিয়ে বললেন রাহেলা বেগম।
মা আমি এক্ষুনি ঠিক করে দিচ্ছি।ফুলদানি নিয়ে টি টেবিলের ওপর রাখলো আয়েশা।মা আপনাকে চা দিবো?চা দিবা? দিলে দাও মুখ শুকিয়ে বললেন রাহেলা বেগম।জি মা আনছি বলে পাকঘরে এলো আয়েশা।এক চুলায় চা বসিয়ে দিলো অপর চুলায় পায়েশ নাড়ছে আয়েশা।
বাজার করে ঘরে ফিরলো ইমান।ভীষন ক্লান্ত আজ।অফিস থেকে ফিরে বাজারে চলে গিয়েছিলো।মা ফোনে বলে বলছিলেন ওনার পান লাগবে আর সবজি নেই।সেগুলোই কিনে ঘরে ফিরলো ইমান।আয়েশা!!আয়েশা!!!ডাকছিলো ইমান।শাড়ীর আঁচলে মুখ মুছতে মুছতে দরজার কাছে এলো আয়েশা লাগবে কিছু?
খাটের ওপর বসলো ইমান একটু পানি দিও তো।
আনছি ডাইনিংরুমে এসে গ্লাসে করে পানি নিয়ে ইমানের কাছে এলো আয়েশা ধরো।থ্যাংকস।পানি টুকু খেয়ে নিলো ইমান।নুহাশ কই?নুহাশ ভাই সকালে কই জানি গেল?আম্মার সাথে কথা হয়েছে মনে হয়।
হুম।আয়েশার হাত ধরে টেনে পায়ের ওপর বসালো ইমান।ঘাড়ে নাক ঘষতে ঘষতে বলল একটু কি পাওয়া যাবে তোমায়?না ইমান এখন না বাসায় গেস্ট আছে কিন্তু ছাড়ো তো।কিছু হবেনা পরে যেও।না এক্ষুনি যেতে হবে।আয়েশা কে ছেড়ে দিলো ইমান সবসময় কেন এমন করো?ভালো লাগেনা কিন্তু বাথরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল ইমান।ফ্রেশ হয়ে নাও খাবার গরম করছি বলে বেরিয়ে গেল আয়েশা।বের হতেই রাহেলা বেগম সামনে এসে দাড়ালেন কি বৌমা জানো তো বাসায় মেহমান আছে এতক্ষন রুমে বসে থাকলে কি চলে?
মন খারাপ হয়ে গেল আয়েশার।জি মা আমি খাবার রেডি করছি পাকঘরে এলো আয়েশা।তরকারি গরম করে নিলো। সেই সাথে মেহমানদের খাবার গুলো ও গরম করে নিলো।
অবন্তী আর রুহী পাশাপাশি শুয়ে আছে।এতিমখানায় সবার ব্যবহার কেমন সেটা জিজ্ঞেস করছিলো অবন্তী।হঠাৎ রুহীর হাতের লাল দাগটির দিকে চোখ পড়লো অবন্তীর।শক্ত কিছু দিয়ে মেরেছে বলে মনে হচ্ছে।তোর হাতে কিসের দাগ এটা?ক কই কিছু নাতো লুকানোর চেষ্টা করতে করতে রুহী বলল।একদম লুকাবিনা রুহী দেখা।ইসসস কি অবস্থা করেছে।কে করলো এমন?আরে আপু বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম।তেমন কিছু নয় সেরে যাবে হাতের ওপর উড়না টেনে দিলো রুহী।মিস জেনিফার মহিলা দজ্জাল খুব মারে ওদের সেই মারেরই দাগ এটা।রুহীকে জড়িয়ে ধরলো অবন্তী খুব কষ্টে আছিস না রুহী?মা তোকে পছন্দ করেননা নাহলে তো এখানেই থাকতে পারতি।
আরে না অবন্তী আপু ঐখানেই ঠিক আছি আমি।হ্যা দেখলাম কেমন ঠিক আছিস বলতে গিয়ে চোখে পানি চলে এলো অবন্তীর।আপু কাঁদছো কেন?দেখো আমার জীবনে ও একদিন সুখ আসবে আর সেদিন বেশি দূরে নেই।হুম রুহীর মাথায় হাত বুলালো অবন্তী।শাহজালাল বিমান বন্দরে লন্ডন থেকে কিছুক্ষন আগেই নামলো s3334 বিমানটি।একেএকে প্যাসেন্জাররা নামতে গিয়ে আটকালে পুলিশ আগে নামা যাবেনা।কারন এখন বিখ্যাত ব্যাবসায়ী অারমান আহমেদ এর ছেলে রোয়েন আহমেদ নামবে।তার কথা শুনলে পুলিশ ও ভয় পায়। তার মাফিয়া দলের বস সে।কালো স্যুট সানগ্লাস পরে নামলো রোয়েন পিছনে কয়েকজন বডিগার্ড আছে।নামার সময় সকল প্যাসেন্জার সাইড দিলো রোয়েনকে।হেঁটে হেঁটে টার্মিনালের কাছে এলো ওরা।পিছন থেকে একজন বডিগার্ড রোয়েনের কাছে এলো স্যার আপনার ফোন।ফোন রিসিভ করে কানের সামনে ধরলো রোয়েন।ওপাশ থেকে কেউ একজন কিছু বলল।জাস্ট কিল হিম বলে কল কেঁটে দিলো রোয়েন।কালো একটি গাড়ি নিতে এসেছে রোয়েনকে।ড্রাইভার বের হয়ে দরজা খুলে দিলো।গাড়িতে ঢুকে বসলো রোয়েন।
আজ অবন্তীর এ্যান্গেজমেন্ট।আনিলা বেগম রুহী কে দিয়ে এটা সেটা করিয়ে নিচ্ছে কখনো মসলা বাট কখনো সবজি কাঁট ঘর ঝাড়ু দে। রুহী চুপচাপ কাজ গুলো করে নিচ্ছে।অবন্তী গোলাপী লেহেঙ্গা পরে নিলো।এটা নুহাশদের বাসা থেকে দিয়েছে।পার্লার থেকে সেজে মাত্র ফিরলো ঘরে।পাকঘরে উঁকি দিতেই রুহীকে দেখলো অবন্তী।রুহী এখনো কাজ করছিস?ওরা একটু পর চলে আসবে। এখনো রেডি হসনি আয় আমার সাথে।আপু একটু বাকি আছে কাজ শেষ করে নিই?না রুহী এগুলো ছাড় বুয়া আছে তো?বুয়াকে ছুটি দিলো মামী।কি??? মা!!! ম!!! রুম থেকে দৌড়ে এলো
আনিলা বেগম এমন চেঁচাচ্ছিস কেন?বুয়াদের ছুটি
দিলে কেন?কেন আবার কি ছুটি চাইলো তাই দিলাম।আগে তো ছুটি চাইলে ও দিতেনা এখন কেন রাগী গলায় প্রশ্ন করলো অবন্তী?রুহী আছেনা বুয়া দিয়ে কি করবো আমরা?কয়েকটা দিনের এলো রুহী।আসতেই এমন শুরু করেছো ওর সাথে? হ্যা তো কি হয়েছে?ও কোন কাজ করবেনা আমার সাথে থাকবে।চল রুহী!!না আপু করে নিই আপনি বসুন।ভেংচি দিয়ে উঠলো আনিলা বেগম মা মেয়ের মধ্যে ঝগড়া লাগিয়ে ভালো সাজা হচ্ছে তার।মা তুমি শুধু শুধু ওকে কেন দোষ দিচ্ছো?
তো কাকে দিবো?কাল সাপিনী যেখানে যায় আগুন লাগিয়ে দেয় নিজের মাকে তো মেরেছে এখন এখানে এসেছে।অবন্তীর আর সহ্য হলো না রুহীর হাত ধরে টানতে টানতে রুমে নিয়ে এলো।লাল রং এর লেহেঙ্গা বের করে রুহীর কাছে দিলো অবন্তী এটা পরে আমার কাছে আয় সাজিয়ে দেবো।জামাটি হাতে নিয়ে বাথরুমে চলে গেল রুহী।কিছুক্ষনপর লেহেঙ্গা পরে বেরিয়ে এলো রুহী। এমনিতে ভীষন সুন্দরী ও তারওপর লাল রং একদম পরীর মতো লাগছে ওকে।বাহ রুহী আমিই তো তোর প্রেমে পড়ে গেলাম রে।কি যে বলো না আপু লজ্জায় মাথা নিচু করলো রুহী। রুহীর হাত ধরলো অবন্তী থাক আর লজ্জা পেতে হবেনা বস ড্রেসিংটেবিল এর চেয়ার দেখিয়ে বলল রুহী।হুম রুহী বসলো।অবন্তী খুব সুন্দর করে সাজালো বোনটিকে।কিছুক্ষনের মধ্যে নুহাশ ও তার পরিবার চলে এলো।সবাইকে ড্রয়িংরুমে সোফায় বসানো হলো।রুহী অবন্তীকে সোফায় এনে সবার সামনে বসালো।রুহী মামনি যা তো নাস্তা গুলো নিয়ে আয় আনিলা বেগম বলল( নিজেকে ভালো বানানোর চেষ্টা)।জি মামী রুহী পাকঘরে চলে গেল।রাহেলা বেগম বলে উঠে বেয়াইন কে এই মেয়ে?আমার ননদের মেয়ে আনিলা বেগম হেসে বললেন।ওহ খুব সুন্দরী।আনিলা বেগম জ্বলেপুড়ে শেষ হ্যা সুন্দরী।রুহী নাস্তা নিয়ে টেবিলে রাখলো।রায়ান আনিলা বেগমের ভাইয়ের ছেলে। তার লোলুপদৃষ্টি পড়েছে রুহীর ওপর। খুব বিশ্রী ভাবে রুহীর শরীর পর্যবেক্ষণ করছে। রুহী রায়ানের দিকে তাকাতেই খেয়াল করলো বিষয়টি।ভ্রু কুঁচকে অন্যদিকে চলে গেল।আংটি বদল হলো নুহাশ ও তার পরিবার চলে যাওয়ার জন্য উঠে পড়লো। বিদায় নিয়ে চলে গেল ওরা।আনিলা বেগম রায়ান কে থাকতে বলতেই সে রাজি হয়ে গেল।রাতে মামার পাশে রায়ান বসলো। ভালো আছেন ফুপা?রায়ান কে একদম পছন্দ না আফজাল সাহেবের। তারপরও গেস্ট সে কথা বলতে হবে।হ্যা ভালো। তুমি কেমন আছে?জি ভালো।ফুপা আপনার ভাগনী রুহীর বিয়ে হয়েছে?ভ্রু কুঁচকালো আফজাল সাহেব কেন বলতো?না মানে এমনিই।দেখো রায়ান আমার ভাগনীর দিকে নজর দিবেনা।কিছু না বলে উঠে চলে গেল রায়ান।সে তো রুহীকে নিয়ে ছাড়বে।।
চলবে