#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
পর্ব:7
#লেখিকা_Arshi_khan
(COME BACK MY LOVE:ফিরে আশা আমার ভালোবাসা)
সাত বছর পর দেশে ফিরছি।মনের কোনে অনেক না বলা কথা লুকায়িত রয়েছে। ফেমেলির সবাই কে ছেড়ে থাকার এত্ত দিনের সংগ্রাম শেষ হতে চলল তাহলে।সেই 2004 এর শেষের দিকে সিঙ্গাপুর এর উদ্দেশ্য রওনা হয়েছিলাম।আব্বু আম্মু বোনদের ভালো রাখার দ্বায়িত্ব পালন করতেই এত্ত দূর পথে যাওয়া। এবার নাহয় ভালোবাসার মানুষটির জন্য ফিরে এসে তার দ্বায়িত্ব পালন করাটা খুব বেশিই জরুরী।2011সালে দেশের মাটিতে পা রাখতেই মনে হল অনেক অনেক পরিবর্তন এসেছে।জদিও দেশে আশার আরেকটা কারণ ছোট বোন আয়েশার বিয়ে ।আর বিদেশ থাকার ইচ্ছে নেই।এবার নাহয় আমার ছোট বউয়ের জন্য একেবারে দেশে থেকে যাব।আব্বুর সাথে দেখা হতেই আব্বু আমাকে দেখে অবাক হয়ে আবার অন্য দিকে তাকালেন। সে এদিক ওদিক খুঁজছে কাউকে।আমিও আব্বুর পাশে দাড়িয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ। কিন্ত আব্বুর কোন হেলদোল দেখলাম না।সে আমাকে দেখে বিরক্ত মনে হচ্ছে। তাই একটু দূরে গিয়ে দাড়াল। সিরিয়াসলি আমার আব্বু আমাকে চিনতে পারেনি?বুঝলাম অনেক পরিবর্তন এসেছে তাই বলে চিনবেই না।এখন আগের মত শুকনো আর ছোট ছেলেটা নেই।গত সাত বছরে বয়সের সাথে শারীরিক গঠন এর সাথে চেহারার ও পরিবর্তন এসেছে।ছোট ছোট পশম গুলো চাপ দাড়িয়ে রুপান্তরিত হয়েছে,জীম করার কারণে এখন ও ফিট আছি,টানা সাত বছর বিদেশের সাবান শেমপো মেখে অনেক ফর্সা ও হয়েছি।তাই বলে আমার বাপ আমাকে না চিনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।তাহলে আমার ছোট বউ তো বলবে আয়ান ভাই এটা তুমি হতেই পারোনা।বিদেশ গিয়ে নিশ্চিত পরিবর্তন হয়ে গেছে।ও বলা হয়নি এখনও ওকে বাচ্চা বউ বলছি কেন?দুই বছর আগে ওকে একটা NOKIA ফোন কিনে দিয়েছিলাম মানে আমি টাকা দিয়েছি আব্বু কিনে দিছে।ওকে কল দিলে ও ধরত ঠিকি কিন্ত কথা বলত না।অনেক দিন এমন করার পর আমি একদিন জিজ্ঞেস করি কথা বলনা কেন রুত?ও উত্তর এ বলেছিল ও নাকি জানতো ফোনে শুধু বিদেশ থেকে কথা বললে শুনা যায় কিন্ত এই দেশের কেউ কথা বললে শুনা যায়না তাই ও চুপ থাকত।কলেজ পড়ুয়া মেয়ে এমন কথা বললে বাচ্চা এইতো বলব।দূর এখন এসব না ভেবে আব্বুর কাছে যাই।
আব্বু আর কত্তক্ষন অপেক্ষা করবে?এবার তো চল।(আব্বুর সামনে গিয়ে আয়ান)
কে তুমি বাবা আমাকে আব্বু বলছ কেন?(আব্বু অবাক হয়ে)
আমি কে মানে?তুমি এখন ও আমাকে চেননি আব্বু?(আয়ান অবাক হয়ে আব্বুর হাত ধরেই)
আয়ান বাবা তুইইইই এটা?(আব্বু অবাক হয়ে আয়ান এর হাত ধরেই)
হ্যা এটাই আমি।সত্যি তুমি আমাকে চিনতে পারেনি?(ব্রু কুচকেই আয়ান)
না বাবা।সত্যি তোকে আমি চিনতে পারিনি।আমার ছোট্ট ছেলে এত্ত হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে যে চেনাই দুষ্কর। (আয়ান কে জড়িয়ে আব্বু)
তাহলে আম্মু আমাকে চিনবেতো?(আয়ান হতাশ কন্ঠে)
তা পরে দেখা যাবে এখন চল বাড়ি ফেরা যাক। (আব্বু খুশি মনে)
আমি আব্বুর সাথে চলছি আমার গন্তব্যে।যেখানে আমার আম্মু, বোনেরা বোনের হাজবেন্ড রা আর আমার তিনটা ভাগ্নে ও ভাগ্নি আছে।আমেনার এক ছেলে এক মেয়ে আর আছমার একটাই ছেলে।ওদের বিয়ে আর বেবিদের আমি দেখি নাই।এই প্রথম দেখব। সেইরকম একটা ফিলিংস হচ্ছে।তার থেকেও সেই সাত বছর আগে রেখে যাওয়া আমার রুত কত্তটা পরিবর্তন হয়েছে তা দেখার জন্য মনটা ভিষন ভাবে লাফালাফি করছে।বাড়িতে পৌঁছে আমি এক দফা ধাক্কা খেলাম। কারণ সব গুলো বাড়ি মোটামোটি দালান করা হয়েছে।আর প্রতিবার এর থেকে এবার ও আমাদের বাড়ি তিনতালা দালান এ পরিবর্তন হয়েছে। আল্লাহ চাইলে সব সম্ভব। আমি আমার সপ্ন বিসর্জন দিয়ে ভুল করিনি।কারণ সবার সব আশা আমি পূর্ন করতে সক্ষম হয়েছি। এর থেকে বড় আর কিছুই নেই আমার কাছে।সবাই যেন আমাকে দেখে বিশাল ধাক্কা খেয়েছে।এত্ত চেঞ্জ কিভাবে তা ভেবেই যেন সবাই অস্থির হচ্ছে। বোনদের মধ্যেমনি এখন আমি।ভাগ্নে ভাগ্নি দের কে কোলে নিয়ে তিনজন কেই তিনটা স্বর্ণের চেইন পরিয়ে দিয়েছি। প্রথম বার দেখছি বলে কথা।বোনদের দুই হাজবেন্ড কে ও আংটি দিয়েছি।ছোট বোনের জন্য ও তিন ভরি স্বর্ণের সেট এনেছি।আর আমার রুত এর জন্য এনেছি একবুক ভালোবাসা।দেখি আমার রুত আমাকে এই খালি হাতে স্বীকার করে কিনা।ওদের আসতে বলেছিল আব্বু। কিন্ত আংকেল বলেছে এখন রুত বড় হয়েছে আমার সাথে বিয়ের আগে ওকে আর এখানে আনবেন না।যদি আমার মন চায় ওকে দেখে আসতে তাহলে যেতে বলেছেন।আমি তারপর ফ্রেস হয়ে আম্মুর হাতে খাবার খেলাম। বরাবর এর মতো আমার ফেভারিট সব খাবার এই রান্না করেছেন।ও বলা হয়নি আমার বুড়ি আর ও চারবছর আগেই তার বুড়োর কাছে পড় পাড়ে পারি জমিয়েছে।মারা যাওয়ার চারদিন পর আমি খবর পেয়েছি।আমার বুড়ির কথা সত্যি হল আমি এসে আর আমার বুড়ির দেখা পেলাম না।প্রবাসীদের জীবনের সুখ ঐ টাকা কামানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।তাদের না আছে পরিবারের কোন সুখ দুঃখে অংশীদার হওয়ার সুযোগ আর না আছে নিজের অসহায় সময় কারো সেবা পাওয়ার অধিকার। একটু জ্বর হলেও সেখানে জিজ্ঞেস করার মতো লোক নেই ।অথচ এখানে আম্মুর কাছে একটু ঠান্ডা লাগলেও হাজার যত্ন শুরু হয়ে যায়।আম্মুর হাতে খাওয়ার পর একটু রেস্ট নিলাম। রুতকে দেখার সৌভাগ্য হবে বলে মনে হচ্ছে না।সামনের সপ্তাহে আয়েশার বিয়ে এর আগে ওদের বাড়ি গেলে কেমন দেখায় সেই জন্য পুরো সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।
পরের দিন সকালে গ্রামে ঘুরতে গেলাম। পুরাতন সব বন্ধুদের ডেকে পাঠালাম।সব ব্যাস্ত লাইফ লিড করে ।সবাই ঢাকাতে ব্যাবসা করে।ওদের মধ্যেই বেশির ভাগ এই ঢাকাতে তাই আসতে পারেনাই।যারা আসছে তাদের সাথে কিছুক্ষণ গল্প করে বাড়ি ফিরে আসলাম। অনেক দিন পর পুকুরের পাড়ে গেলাম গোসল করার জন্য। কিযে আনন্দ লাগছে বলে বোঝানা সম্ভব না।
গোসল করে এসে দুপুর এর খাবার খেয়ে একটু রেস্ট নিতে গেলাম। এমন সময়ই আম্মু এসে আমার পাশেই বসল। (মনে মনে)
কিছু বলবা আম্মু?(উঠে বসে আম্মুর হাত ধরেই আয়ান )
হ্যা বাবা।আসলে হয়েছিকি!(আমতা আমতা করে আম্মু)
কি হয়েছে বল।কোন সমস্যা!টাকার লাকবে?কত্ত বল আমি ব্যাংক থেকেই তুলে আনি।(আয়ান আম্মুর উদ্দেশ্য একনাগারে)
কোন সমস্যাই না।আর না কোন টাকা লাগবে।আসলে আমি চাই তুই কালকে সকালে গিয়ে রুতবাকে নিয়ে আসবি আর ওদের বাড়ি দাওয়াত ও দিয়ে আসবি।আর সেই কথাই বলতে আসছি।(আম্মু আয়ান এর হাত ধরেই)
কিন্ত ওকেই কি আংকেল দিতে এখন রাজি হবে তাও আবার আমার সাথে?(হতাশ কন্ঠে আয়ান)
তুই যদি বলিস রুত ঠিকি আসবে।আর ওর আব্বুর কথা তোর ভাবতে হবেনা।ওনার সাথেই আমি ফোনে কথা বলে নিব।তুই যা।ছোট ননদের বিয়ে একটা ছেলের বউ থাকবেনা তাকি হয়?(আম্মু )
আব্বু কে বলেছ?(আয়ান)
হ্যা বলেছি।উনি বলল দাওয়াত দিতে গেলে রুতকে ও সাথে যেন নিয়ে আসিস।তাইতো তোকে কালকে যেতেই বললাম। আর তাছাড়া এত্ত বছর পর আসলি শশুর বাড়ি দেখা না করলে কেমন দেখায়?(আম্মু আয়ান এর হাত ধরে)
আচ্ছা যাব।
কথা বলা শেষ এ আমার মনে মনে ড্যান্স দিতে লাগল এই ভেবে যে আমি আমার বউ কে এত্ত দিন পর দেখতে পারব।তবে আম্মুর সামনে তো আর ড্যান্স দিতে পারলাম না।তাই আম্মুর যাওয়ার অপেক্ষা করতে লাগলাম। আম্মুর যাওয়ার পর আমার মনে রুতকে নিয়ে ই ও কথা খেলা করতে লাগল। ফাইনালি সাত বছর এর অপেক্ষার অবসান কালকে ঘটলেই হবে।আমার রুত এর প্রতি আমার জমানো ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ কালকে হচ্ছে।ওকে না দেখা চোখ গুলো কে কালকে পিপাসা মেটানোর সুযোগ দেওয়া হলেই আমি খুশি।এখন শুধু সকাল হওয়ার অপেক্ষা।
সকালে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে ব্রেকফাস্ট করে নিলাম। তারপর চললাম রুত এর গ্রামের উদ্দেশ্য। রাস্তার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। এখন ওদের বাড়ি আসতে টাইম খুব কম লাগে।তবে চিনতে আমার বেশ বেগ পেতে হল।আমি শুধু আংকেল বলে এসেছি।আর কাউকে বলতে নিষেধ করেছি।আংকেল আমাকে নিতে এসেছে স্টান এ।আমাকে দেখে প্রথম উনিও ভেবাচেকা খেয়ে বসলেন।আমাকে দেখেও উনি না চিনতে পেরে বাসের দিকে তাকিয়েই থাকলেন।আমি আংকেল এর কাছে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর উনি আমাকে চিনতে পারলেন। আর একটু লজ্জিত বোধ করলেন।আংকেল রিক্সা ডেকে আমাকে নিয়ে চলল তাদের বাড়ির উদ্দেশ্য। বাড়িতে পৌঁছানোর পর থেকে জামাই আদর এর কোন সীমা নেই।প্রায় এক ঘন্টার মধ্যেই বিশ রকমের খাবার দেওয়া হয়েছে। এদিকে আমার বউ ভার্সিটি গিয়ে বসে আছে।এইটা কোন কথা!আরো কিছুক্ষণ জামাই আদর চলতেই থাকল।দুপুর এর খাবার খাওয়ার পর আমি রুত এর রুমে গিয়ে বসলাম আর ফেসবুকিং করতে লাগলাম।সিঙ্গাপুর এ একটা ফ্রেন্ড এর সাথে মেসেজ করছিলাম। হঠাৎই রুমে একটা মেয়ে এসে ওরনা খাটের উপর রেখে ওয়াশরুম চলে গেল। আমি জানালাম পাশে বসে থাকার কারনে আমাকে খেয়াল করেনি হয়ত।এই হয়তো আমার সেই পিচ্চি বউ টা।আমি স্তব্ধ হয়ে ওর ওরনাটা হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। একটা মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে এসে লাগছে।আমি ওরনাটা আমার নাকের কাছে নিতেই যাব ওমনি একজন রমনি ছো মেরে ওরনাটা কেড়ে নিল।আমি মুচকি হেসে সামনের রমনির দিকে নিশঃপলক তাকিয়েই থাকলাম। (আয়ান মনে মনে)
কে আপনি?আমার রুমে আমার ওরনা নিয়ে বসে আছেন কোন সাহসে?(চিৎকার করে রুতবা)
নিশ্চুপ (মুচকি হেসে আয়ান)
হাসছেন কেন?আম্মু আম্মু দেখ না কে যেন আমার রুমে এসে বসে আছে।(রুতবা চিৎকার করেই)
কি হল কি এমন করে চিৎকার করছিস কেন?(আম্মু দৌড়ে এসে)
এই লোকটা কে ?আর উনি আমার রুমে কি করছে?যে কেউ রুমে ঢুকে যায় আর তোমরা সেদিকে কোন নজর এই রাখ না।এই জন্য আমার এখানে থাকতে বিরক্তি লাগে।আর এইযে আপনি কে?কখন থেকে জিজ্ঞেস করছি এখন ও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করছেন না কেন?আর এমন হাসছেন এইবা কেন?(চিৎকার করেই রুতবা)
তুই ও ওকে চিনতে পারি নি?(আম্মু অবাক হয়ে রুতবার উদ্দেশ্য)
কে উনি যে আমার চিনে রাখতে হবে?(রাগি সুরে রুতবা)
আন্টি আপনি গিয়ে রেস্ট করেন।আমি রুত এর সাথে কথা বলে নিচ্ছি। আপনার টেনশন করতে হবেনা।আমি কে তা বুঝতে ওর দেরি হবেনা আশা করি।(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়েই)
আচ্ছা বাবা।(আন্টি বলেই বেরিয়ে গেল)
এভাবে যেখানে সেখানে ওরনা রেখে যাওয়ার তো কোন কারণ দেখছিনা।তুমি ওয়াশরুম যাবে মাথায় গোমটা দিয়ে।তানা করে ওরনা যেখানে সেখানে ফেলে আশেপাশে নজর না দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুম যাওয়ার কি কারণ শুনি একটু?(আয়ান আস্তে করে খাটের উপর বসে)
আয়ান ভাই তুমি কবে আসলে?(কান্না সিক্ত নয়নে আয়ান এর উদ্দেশ্য রুতবা)
রুত আমার প্রশ্নের উত্তর টা আগে দাও।তারপর বলছি।(আয়ান রুতবার হাত ধরেই)
ভুল হয়ে গেছে।(মাথা নিচু করে রুতবা)
তার জন্য তোমার শান্তি বরাদ্দ করা হবে।আর তা হল এই মুহুর্তেই আপনার থেকে আমার পাওনা ভালোবাসা গুলো চাই।(রুতবার কোমর জড়িয়ে আয়ান)
আয়ান ভাই আমাকে ছাড় আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে?(রুতবা মাথা নিচু করেই আয়ান এর উদ্দেশ্য)
রুত তুমি ভয় পাচ্ছ?(রুতবার মুখ দুই হাতে নিয়ে আয়ান)
নিশ্চুপ।(ঘনঘন নিশ্বাস ছেড়ে রুতবা)
ওকে সরি ।আমার এভাবে তোমাকে ধরা উচিত হয়নি।এখন যে জন্য আসছিলাম আসলে এই সপ্তাহে আয়েশার বিয়ে। সেই উপলক্ষ্যে আম্মু বলল তোমাকে নিয়ে যেতে।এখন যাওয়া না যাওয়া তোমার উপর নির্ভর করে।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)
আমার তো সেই অধিকার নেই আয়ান ভাই। (রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়ে)
কিসের অধিকার?(আয়ান ব্রু কুচকে)
আমার আর তোমার বিয়ের এখন আর কোন ভেলু নেই আয়ান ভাই। আর তাই আমার কোন অধিকার ও নেই। (রুতবা শান্ত কন্ঠে)
তাহলে তুমি কি চাইছ আমাদের আবার বিয়ের ব্যবস্থা করব?নাকি তোমার অন্য কোন মতামত আছে?(আয়ান রুতবার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে)
নিশ্চুপ। (রুতবা মাথা নিচু করে)
তুমি যদি চাও আমি আয়েশার বিয়ের পর আমাদের বিয়ের ব্যবস্থা করব।তাহলে এখন আমার সাথে চল।আর যদি তোমার অন্য কোন মতামত থাকে তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। আর তাছাড়া তোমার উপর আমার অধিকার আসলেই নেই।আর না তোমার উপর আমার কোন চাপ আছে।কারণ যাদের ইচ্ছাতে আমাদের বিয়ে হয়েছিল তারাই এখন আর বেঁচে নেই।(আয়ান দাড়িয়ে রুতবার সামনে)
নিশ্চুপ (রুতবা মাথা নিচু করে)
এভাবে চুপ থাকার মানে কি রুত?(আয়ান কান্না সিক্ত নয়নে)
নিশ্চুপ (রুতবা)
ঠিক আছে আমি চলে যাচ্ছি। ভাল থেক রুত।
বলেই হাটা দিলাম। যাদের জন্য এত্ত বছর প্রবাস জীবন পাড় করলাম তাদের কাছে আমার ভেলু ঠিক এত্তটাই যে আমার কথা বা ইচ্ছার কোন দাম তাদের কাছে নেই।আমি রুম থেকে বেরিয়ে আন্টির থেকে কোনরকম বিদায় নিয়ে বাইরে চলে আসলাম।রুতকে বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিতো তাই এখন মনের কোনে ভিশন কষ্টের আভাস পাচ্ছি।একটু সামনে যেতেই একটা রিক্সা ও পেয়ে গেলাম। রিক্সা তে চড়ার সাথে সাথেই ঝড়ের গতিতে রুত ও এসে আমার পাশে বসে পড়ল। আমি অবাক হয়ে ওর দিকে তাকাতেই দেখি ও রেগে আমার দিকে তাকিয়েই আছে।(মনে মনে)
তুমি এখানে কেন?(আয়ান অবাক চোখেই)
গাধা কোন কথা বলবি ধাক্কা মেরে রিক্সার থেকে ফেলে দিব।(রুতবা রাগি সুরে)
রুত তুমি আমাকে তুই করে কথা বললে?(আয়ান অবাক হয়ে)
তোরে তো মন চাইতাছে এখন ঐ পুকুরে চুবাই।কিন্ত পারব না তাই চুপচাপ আছি।আর একটা কথা বলবিনা।এখন আমার বাসার থেকে গিয়ে আমার জামা কাপর এর ব্যাগ নিয়ে আসবি যা।(রুতবা দাঁতে দাঁত চেপে)
রুত বেয়াদবি করছ কেন?(আয়ান রাগি সুরে)
আরে মামা এদিকে কি দেখেন আপনি একটু সামনে তাকিয়ে থাকেন।আর আয়ান ভাই তোমারে আমি বলছি গিয়ে আমার জামা কাপর এর ব্যাগ টা নিয়ে আস।(রুতবা আয়ান এর উদ্দেশ্য)
কেন?(আয়ান ব্রু কুচকে)
আমি আমার আয়ান ভাই এর সাথে আমার শশুর বাড়ি যাব সেই জন্য। (রুতবা মুচকি হেসে)
এখন তো আমাদের বিয়ের কোন ভেলু নেই রুত।তাহলে কেন আমার সাথে যাবে?(আয়ান রুতবার দিকে তাকিয়ে)
তোমার এইসব ফালতু কথা আমার ভাল লাগছেনা ।তুমি কি আমার ব্যাগ আনবে নাকি আমি আবার যাব?(রুতবা দাঁতে দাঁত চেপে)
যাচ্ছি।
এই মেয়েটার কখন কি হয় বোঝা মুশকিল। আমি ওদের বাড়ি যেতেই আন্টি আমাকে একটা ব্যাগ ধরিয়ে দিল। আমি ব্যাগ নিয়ে আবার রিক্সার কাছে চলে আসলাম। রিক্সা তে বসতেই মামা রিক্সা চালাতে শুরু করল। আমি শুধু রুত এর কাহিনী দেখছি।ও আমার পাশে বসে চুল গুলো বেধে ওরনা দিয়ে হিজাব এর মত বেধে নিল।তারপর হঠাৎই আমার দিকে তাকালো।ওর তাকানো দেখে ভরকে গেলাম। (আয়ান মনে মনে)
এমন করে কি দেখ আয়ান ভাই?(রুতবা আয়ান এর হাত ধরে)
নিশ্চুপ।(হাতের দিকে তাকিয়েই আয়ান)
আয়ান ভাই আমাকে বিয়ে করবে কবে আবার?(রুতবা আয়ান এর ঘারে মাথা রেখে হাত ধরে)
তুমি চাও আমাদের বিয়ে আবার হোক?(আয়ান রুতবার মাথায় নিজের মুখটা ঠেকিয়ে)
আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি আয়ান ভাই। কেন বোঝনা তুমি?আমি তোমার উপর অভিমান করেছিলাম তাই একটু আগে কথা বলিনি।তুমি বলেছিলে পাচঁবছরের জন্য যাবে।কিন্ত তুমি সাত বছর থেকে এসেছ।এখন বল আম্মু বলার কারণে আমাকে নিতে এসেছ।কেন আয়ান ভাই তোমার মনে আমার জন্য কি একটুও ভালোবাসার সৃষ্টি হয়নি যার দরুন আমাকে জোর পূর্বক নেওয়ার কথা বলতে।আবার বল আমার মতামত এই প্রাধান্য দিবে।কেন আয়ান ভাই আমার উপর তোমার কোন জোর নেই?(রুতবা কান্না করে আয়ান এর উদ্দেশ্য)
আমি নিশ্চুপ থাকলাম।এই রাস্তার মধ্যে ওকে আর রাগাতে চাইনা।যা হবে তা আমার আর আমার রুত এর মাঝে হবে।আমি ওর কপালে আস্তে করে চুম্বন করলাম। কিছুক্ষণ পর ও সোজা হয়ে বসে পড়ল।আমি একটা সিএনজি নিলাম আমাদের গ্রামে যাওয়ার জন্য।সিএনজির পেছনে আমি আর রুত বসে আছি।ও একটু দুরে বসে বাইরে তাকিয়েই আছে।আমি আস্তে করে ওর পাশে বসে পড়লাম। ও আমার দিকে তাকিয়ে আবার বাইরের দিকে তাকালো।আমি ওর আর একটু কাছে গিয়ে ওর হাতটা আমার হাতে নিয়ে বসে পড়লাম। ও হাতটা ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।
রুত এমন কর কেন?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)
আমার ইচ্ছে তাই এমন করি।(রুতবা রাগি লুক দিয়ে)
তাইনা।
বলেই ওর কোমর জড়িয়ে ধরলাম। ও নিশ্চুপ হয়ে বসে পড়ল। আমি মুচকি হেসে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকলাম।
বাড়িতে পৌঁছানোর পর আম্মু ওকে দেখে অনেক খুশি হল।ও গিয়ে ফ্রেশ হয়ে রিতু ,মিরাজ আর আবরার এর সাথে খেলতে লাগল।আমি ওকে এই জন্য এই বাচ্চা বলি।রাতের খাবার এর সময় সবাই একসাথে খেতে বসলাম। খাওয়ার পর সবাই সবার রুমে ঘুমাতে চলে গেল। রুত কে এইবার আয়েশার রুমে দেওয়া হয়েছে।আমি রুমে চলে আসলাম। কিন্ত কিছুতেই ঘুম আসছেনা।তাই ছাদে চলে আসলাম। মাত্র একটা সিগারেট ঠোঁটে রেখে ধরাতেই যাব ওমনি রুত কোথার থেকে এসে সিগারেট টা কেড়ে নিয়ে দূরে ফিকে মারল। আমার জিনিস না বলে ধরে ফিকে মারাটা আমার কাছে একটা রাগের কারণ। আর ও আমার সিগারেট টা ফিকে মারার কারণে রাগটা একটু বেশিই বেড়ে গেল।
কি সমস্যা না বলে তুমি আমার সিগারেট দূরে ফিকলে কেন?(রুতবাকে দেওয়াল এর সাথে চেপে ধরে আয়ান)
বেশ করেছি এমন আরো অনেক কিছুই করব।যা আমার পছন্দ না সেই জিনিস টা তোমার ঠোঁট কেন তোমার শরীরকে স্পর্শ করবে তা আমি মানব না।আর যেখানে তোমার ঠোঁট গুলো আমার সবচেয়ে পছন্দের জিনিস তা কেন ঐ জঘন্য জিনিস স্পর্শ করবে?(রুতবা হালকা চিৎকার করে)
তাই নাকি?(আয়ান রুতবার আরো কাছে গিয়ে)
সরো আমি ঘুমাতে যাব।আমার খুবই ঘুম পাচ্ছে। (রুতবা মুখটা ঘুরিয়ে)
কি জিজ্ঞেস করলাম?(আয়ান রুতবার কপালে কপাল ঠেকিয়ে)
কি জিজ্ঞেস করেছ?(রুতবা আয়ান এর দিকে তাকিয়ে)
আমার ঠোঁট জোড়া তোমার পছন্দের?(আয়ান রুতবার আরেকটু কাছে দাড়িয়ে)
আগে সরো তারপর বলছি।(আয়ান এর পেটে হাত দিয়ে ধাক্কা দিয়ে রুতবা)
কেন সরব?(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য মুচকি হেসে)
তাহলে কি চিপকেই থাকবা নাকি?(রুতবা ব্রু কুচকে)
হুম থাকব।যদি বল সারারাত চিপকে থাকব কোন সমস্যা নেই।(ডেভিল হেসে আয়ান)
অসভ্য লোক সরো আমার সামনের থেকে।লাগাম লাগাও ঠোঁটে।(রুতবা চোখ বড় করে)
লাগাম লাগানোর জন্য আমার আরেক জোরা লিপস এর প্রয়োজন পড়বে।যদি বল তো এখনি লাগাম টা লাগাই।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য চোখ টিপ দিয়ে)
ছি আয়ান ভাই এসব কোন ধরনের কথা?(রুতবা আয়ান এর ঠোঁটে হাত দিয়ে )
আমার বউ এর সাথে আমি এর থেকে ও লাগাম বিহিন কথা এবং লাগাম বিহিন কাজ করতে প্রস্তুত আছি।তুমি যদি বল তো!(ঠোঁট থেকে হাত সরিয়ে আয়ান)
আগে বিয়ের ব্যবস্থা কর তারপর দেখা যাবে। (মুখ ঘুরিয়ে রুতবা)
ওকে। এখন এই মুহূর্তেই ঘরে যাও।নাহলে তোমার সর্বনাশ এর কারণ আমি হয়ে যাব।(আয়ান হঠাৎই ঘুরে দাড়িয়ে)
আমিও আস্তে করে ঘরের উদ্দেশ্য চলে আসতে নিলাম।কিন্ত কি মনে করে আবার দাড়িয়ে পড়লাম। আর আস্তে আস্তে ওর সামনে গিয়ে একটা অসাধ্য সাধন করে ফেললাম। ওর মাথাটা নামিয়ে ওর কপালে আর গালে ঝড়ের গতিতে দুটো চুম্বন করেই দৌড়ে নিচে চলে আসলাম। নাহলে সত্যি আয়ান ভাই আমার আজকে খবর করে ছাড়ত।(রুতবা মনে মনে)
এমন টা করে তোমার প্রতি ভালোবাসা পাওয়ার আকর্ষন আরো বাড়িয়ে কেন দিলে রুত?আর কয়েক টা দিন অপেক্ষা করার ধৈর্য দাও আমাকে আল্লাহ তুমি।এসব ভাবনার মাঝেই রুমে চলে আসলাম। আর ও নানান চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লাম। (আয়ান মনে মনে)
*********(চলবে)********