#MEANINGLESS_LIFE_PARTNER
পর্ব:সূচনা
#লেখিকা_Arshi_khan
আট বছরের একটা মেয়েকে বিয়ে করার মতো মিনিংলেস একটা কাজ করতে বাধ্য করেছে আমার ফেমেলির লোক।ওর মতো বাচ্চাকে যে এখন ও মাঝেমধ্যেই বিছানার উপর হিসু করে সে কিনা আমার বিয়ে করা বউ। ভাবতেই সারা শরীর ঝংকার দিয়ে উঠছে।গাড়িতে বসে যখন ওকে নিয়ে ফিরছি ও ওর টেডি নিয়ে আমার আম্মুর কোলে ঘুমে বিভোর। বাড়ি ফিরতে এখন ও ঢের দেরি ততক্ষণ এ আমার পরিচয় টা আপনাদের দিয়ে নেই।
আমার নাম মোহাম্মদ আয়ান শেখ।বয়স এক সপ্তাহ আগেই পনের পেড়িয়ে ষোল তে পা দিলাম আরকি।এইবার ক্লাস টেইন এ উঠেছি।আমি আমার বাবা আর মায়ের প্রথম সন্তান। আমার পড়ে আরো তিনজন আছে।আমেনা ,আছমা এবং আয়েশা।আমার ফেমেলির মধ্যেই মানে চৌদ্দ গোষ্ঠীর প্রথম ছেলে সন্তান আমি এই।আমাদের ফেমেলি যৌথ ফেমেলি।তিন চাচা ও আমার আব্বুর মোট বারোজন সন্তান। তার মধ্যেই আমি এই একমাত্র পুত্র সন্তান।আমার দাদাজান হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন আর সেই সুবাধে অনার শখ জাগে আমার বিয়ে দেখে অককা তুলার।আর সেই জন্য ঐ বুড়ার কথাতে আমার আব্বু মহাশয় এই পদক্ষেপ নেন।কারো মিনিংলেস শখ পূরণ করতে এইটুকু বাচ্চার সাথে আমার বিয়ে করিয়ে দেন।সকালে পালাতে চেয়েছিলাম কিন্ত আব্বুর মেন গেটে বসে জালি বেতে তেল দেওয়া দেখে আবার চুপচাপ ঘরে ফিরে গেছিলাম।জদিও এমন বিয়ে আমি মানতে নারাজ।কিন্ত কিছুই করার নেই।আর রইল পরে আমার বউ তার নাম মোসাঃ রুতবা হোসাইন ।বয়স তো আগেই বললাম আট বছর। বাবা মায়ের বড় মেয়ে।ওর পরে একটা ছেলেও আছে আমার শশুর এর।সে এখন ও কোলেই চরে বেড়ায়।কারণ তার বয়স মাত্র দেড় বছর। রুতবা এইবার ক্লাস থ্রি তে পড়ছে।আমার শশুর মশায় আব্বুর বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে আমার দাদার মনের বাসনা পূরণ করতে পিছপা হয়নি।এদিকে আমি আছি মহা টেনশন এ।আমার তেরো বছরের একটা গার্লফ্রেন্ড আছে।ও আমার স্কুল এর ক্লাস সেভেন এ পরে।ওকে আমার ভিষন ভাল লাগে।কিন্ত ও যখন জানবে ওকে রেখে আমি রুতবা কে বিয়ে করেছি তখন ও ভিষন কষ্ট পাবে।কারণ ও ও আমাকে পছন্দ করে।(আয়ান গাড়ির বাইরে তাকিয়েই মন খারাপ করে)
আন্টি আমি চিপস খাব।(ঘুমের থেকে উঠেই রুতবা)
এই নাও মা।আর শোন নতুন জায়গাতে কিছু খেতে মন চাইলে আমাকে এসে বলবে যদি অন্য কাউকে লজ্জা লাগেতো কেমন!(আম্মু রুতবার মাথায় হাত দিয়ে)
আচ্ছা। আয়ান ভাই তুমি খাবে নাও?(চিপস এর প্যাকেট আয়ান কে এগিয়ে দিয়ে)
তুমি এই খাও।(বিরক্তিকর সুরে আয়ান)
আঙ্কেল আপনি খাবেন?(চিপস এগিয়ে রুতবা,)
না আম্মু তুমি খাও।(আব্বু মুচকি হেসে)
আন্টি খাও?(রুতবা মুচকি হেসে)
না আম্মু আমার পেট ভরা তুমি খাও আমি পরে খাবনে।(মুচকি হেসে আম্মু)
সে মনের আনন্দে চিপস খাচ্ছে। তার যে কিছুক্ষণ আগে বিয়ে হল তা নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই।কারণ বিয়েটা তার কাছে অনেকটা পুতুল বিয়ের মতো ছিল। আমি ওর দিকে তাকাতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। আমার বয়স প্রাপ্য বয়স না হলেও বিয়ে সংসার বউ এসব বিষয়ক ধারণা বেশ আছে।তার উপর সাইন্স এর স্টুডেন্ট হওয়ার সুবাদে সব কিছু একটু বেশিই আয়ত্তে আনতে আমার সময় লাগেনা।তাই আমার কাছে রুত শুধুমাত্র একজন #MEANINGLESS_LIFE_PARTNER হিসেবেই গন্য হবে।রুতবা কে সবাই রুতবা বললেও আমি কোনদিন রুতবা বলে ডাকিনা।আমার কাছে ওর নামের এই রুত অংশ টুকুই ভাল লাগে।এসব হাজার ভাবনার মাঝেই আমরা বাড়ি পৌঁছে গেলাম। আমার বাড়ি বিক্রমপুর এ অবস্থিত ।আর রুত দের বাড়ি আমার বাড়ির থেকে আরো এক ঘন্টার পথ।তাও বিক্রমপুর এর আরেক গ্রামে অবস্থিত। যাইহোক রুতকে শাড়ি পড়ানোর কারণে ও হাটতে পারছেনা আর গাড়িতে তিনজন এর সিট পেছনে তাই আম্মু ওকে কোলেই রেখেছিল। কিন্ত আম্মুর পা জিম ধরার কারণে গাড়ির থেকে নামতেই ওকে আমার কোলে দিয়ে দিয়েছে।অনেক বিয়েতে দেখেছি হাজবেন্ড রা তাদের বউ দের পাঁজকোলে তুলে বাড়ি প্রবেশ করে।আর আমি আমার বউ কে এক প্রকার বাচ্চাদের যেভাবে নেয় সেইভাবে নিয়ে বাড়িতে ঢুকেছি।দাদুর শরীর অসুস্থ দেখে আর দুইজন এই বাচ্চা দেখে বিয়ের কোন আওয়াজ করা হয়নি।তবে আমরা বড় হলে আমাদের বড় করে অনুষ্ঠান করার চিন্তা করে রাখা হয়েছে।মানে আরো দশ বারো বছর আমার নিজের বউ কে একজন গার্ডিয়ান হিসাবে লালন পালন করে বড় করে তারপর বউ হিসাবে পাচ্ছি। ওকে কোলে করে আনতে আমার কেন জানি একটুও কষ্ট হয়নি।কারণ ও ওনেক শুকনা আর বয়স অনুযায়ি গ্রথ একটু কম।ওকে কোলে নিয়ে এই আমি সোজা দাদুর ঘরে গেছি।সে দেখে কান্না করে ভাসিয়ে দিচ্ছে সাথে আমার বাড়ির সবাই ও মরা কান্না জুড়ে দিয়েছে।শুধু আম্মু বাদে।কারণ আম্মু খুব স্ট্রং পার্সোনালির পার্সোন।তিনি এক হাতে পুরো সংসার সামলান বললেই চলে। আর সবাই ও কাজ করে কিন্তু আম্মু বাড়ির বড় বউ হিসাবে বেশ বিচক্ষণ।যদিও আব্বু বিদেশ থাকার কারণে আব্বু বড় হওয়ার সত্ত্বেও আমার মেজ বাবা আর সেজ বাবা বিয়ে করে ফেলেছিল।তাই আমি তাদের পাচঁ মেয়ের থেকে তিন জনের ছোট।আর দুইজন আমার ছোট।ওদের সবার সাথেও পরিচিত হবা কোনদিন। কারণ আমার গল্প যে অনেক বড় হতে চলেছে।দাদুর রুমে রুত কে রেখেই আমি আমার রুমে চলে এসেছি।আমাদের বাড়িটা তে ছয়টা বড় বড় রুম দিয়ে উঠানো হয়েছে।তিনটা তিনটা করে সেম ডিজাইন করে দুই সাইটে ঘর আর মাঝখানে উঠান।প্রতিটা ঘরের ভেতর তিনটা করে রুম।তবে আমাদের টা তে দুইতালা কাঠের ও টিনের ঘর বলা চলে।কারণ আর কারো ছেলে নেই বলে আমার দাদু তাদের একতালা টিনের ঘর তুলে দিয়েছেন। যদিও সব আব্বুর পাঠানো বিদেশ এর টাকা দিয়ে।আর আমার জন্য শুধু আমার আব্বুর দুইতালা ঘর পেয়েছে।দুইতালাতে আমার দুই বোন ঘুমায়।আর নিচের তালায় এক রুম আব্বু আর আম্মুর সাথে আয়েশার। অন্য রুমটা আমার এই রুমের ভেতর একটা ছোট টয়লেট বানিয়ে দিয়েছে আব্বু ।যাতে রাতে আমার বা আমার ছোট বোনদের বাইরে যেতে ভয় না লাগে।আমি রুমে এসে পাঞ্জাবি টা খুলে রুমের গেটের উপর মেলে দিলাম।অনেক ঘেমে পাঞ্জাবি ভিজে একাকার। তারপর বাড়ির উত্তর দিকের আম গাছের দিকে চলে গেলাম। নতুন কয়েকটা আম পেকেছে ছোট বাবার গাছের।আর এই গরমের রাতে ঘুম আনানোন বেস্ট ওয়ে এই পাকা আম।দাদুর রুম থেকে ধীরে ধীরে সবাই বেরিয়ে যার যার ঘরে চলে যাচ্ছে। কারণ অলরেডি নয়টা বাজে।এমনে সময় আটটা সাড়ে আটটার মধ্যেই সবাই গেট লক করে দেয়।কারণ দেশ গ্রামে রাত জাগে না মানুষ ।আমি গাছ থেকে কোঠা দিয়ে পাকা আম পেরে সেখানেই খাওয়া শুরু করে দিলাম। একটা রেখে তাও আম্মুর জন্য। কারণ আমার বোনেরা তেমন পাকা আম খায়না।রুম থেকে হাসির শব্দ আসছে।এদিকে ব্যাঙ এর ডাক আর মশার উপদ্রব এ আমার অবস্হা খারাপ তাই আম খেতে খেতেই আবার রুমে চলে আসছি।এসে দেখি রুত আর আয়েশা বসে হাড়িপাতিল দিয়ে খেলছে।আমি দেখেও না দেখার ভান করে রুমে এসে আরাম করে আম খাচ্ছি। কিছুক্ষণ পর দেখি রুত এই রুমের দিকে একবার তাকায় আবার খেলাতে মন দেয়।আবার তাকায়।তাই আমি ওকে ডাক দিলাম।
এই রুত এদিকে এসো।(আয়ান রুতবার উদ্দেশ্য)
হ্যা আয়ান ভাইয়া কিছু বলবে?(আয়ান এর হাতের দিকে তাকিয়েই রুতবা)
তাকিয়ে ছিলা কেন?(আয়ান ব্রু নাচিয়ে)
এমনেই।(এখন ও হাতের দিকে তাকিয়েই রুতবা)
আচ্ছা তাহলে যাও খেল।(আয়ান বলেই আবার আম খেতে লাগল)
কি পচা ছেলে আয়ান ভাইয়া জান আম আমার অনেক পছন্দের তাও পাকা আম অথচ একটু খেতে সাধল না।আমিতো তখন চিপস সেধে ছিলাম।তাহলে আমাকে একটু আম দিলে কি হতো?(বিরবির করে রুতবা খেলার জায়গাতে এসে )
কিছুক্ষণ পর আম্মু রুমে আসল পোলাও আর গরুর মাংস নিয়ে।আম খেয়ে পেট ভরে গেছে।তাই আম্মুকে বললাম সবাই খেয়ে আমার জন্য রেখে দিতে পরে খাব।সবার রান্না একসাথে করা হলেও খাবার যে যার ঘরেই খায়।কারণ একেকজন এর পোলাপাইন একেক রকম। বড় ছোট নিয়ে মারামারি কারাকারি এর জন্য সবাই আলাদা খায়।মানুষ বুঝে খাবার বেড়ে দেওয়ার পর যে যার রুমে চলে যায়।তাই আমি একটু দেরিতে খাই সব সময়ই।
রুতবা আর আয়েশাকে আম্মু খাইয়ে দিচ্ছে। কারণ দুইজন এই হাত দিয়ে খেতে পারেনা।আয়েশা আর রুত এক মাসের ছোট বড়।আর আমার আর দুইবোন আমেনা তের বছর আর আছমার এগারো বছর। যাইহোক ওরা খাবার খাচ্ছে দেখে আমি একটু টিভি ছাড়লাম।আজকে শুক্রবার ছিল কিন্তু সিনবাদ টা দেখতে পারিনি।আমার সবচেয়ে প্রিয় নাটক।কি আর করা বিটিভিতে ছায়াছবি ছেড়েছে তাই দেখতে লাগলাম। আর এদিকে গান শুনে রুত খাবার রেখে নাচতে শুরু করেছে।তাই রিমোট রেখে আমি নিজের রুমে চলে আসলাম। আর আসার আগে আম্মুর হাতে একটা আম দিয়ে আসলাম।প্রচন্ড ঘুম পাচ্ছে তাই সেন্টো গেঞ্জি খুলে লাইট অফ করে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম।
হঠাৎই নাকে পাকা আমের গ্রান পেতেই আমি সামনে হাতরাতে লাগলাম। হাতে ছোট শরীর লাগতেই লাফিয়ে উঠলাম ।
ভূত ভূত ভূত (চিৎকার করে আয়ান)
কি হয়েছে বাবা?(আম্মু দৌড়ে এসে আয়ান এর উদ্দেশ্য)
আমার বিছায় কেউ শুয়ে আছে?(আতঙ্কিত কন্ঠে আয়ান)
হ্যা রুতবা ঘুমিযেছে।তা তুই চিৎকার করলি কেন বাবা?(আম্মু লাইট জ্বালিয়ে আয়ান এর হাত ধরে)
ও এখানে কেন?(বিরক্তিকর সুরে আয়ান)
উপরে যেই খাট সেখানে আমেনা আর আছমা ঘুমায় আমাদের সাথে আয়েশা আছে।আর তুই তো জানিস রুতবা তোর আর আয়েশার সাথে ছাড়া থাকতে চায়না।তাই তোর এখানে ঘুমিয়েছে।(আম্মু শান্ত সুরে)
তা শুয়েছে ভাল কথা আম নিয়ে কেন আমার খাটে উঠছে পিপড়া আসব তো?(মুখ ভার করে আয়ান)
তুই নাকি কিছুক্ষণ আগে আম খেয়েছিলি ওকে সাধিস নাই কেন বাবা?(আম্মু আয়ান এর হাত ধরে)
ওতো চায়নি আর আমেনা আছমা আর আয়েশা তো পাকা আম খায়না তাই ওকে ও সাধা হয়নি।কেন কোন সমস্যা?(আয়ান ব্রু কুচকে)
তা নিয়ে কিছুক্ষণ আগে কান্না করে বিচার দিয়েছে আমাদের কাছে।যে ওকে না দিয়ে তুই আম খেয়েছিলি আর ও তাকানোর কারণে ওকে ডেকেও নাকি আম দেসনি এতে ও কষ্ট পেয়েছে।তাই আমাকে যখন আমটা দিলি ও চেয়ে নিয়ে তারপর ঘুমিয়েছে।সকালে উঠে খাবে বলে।(আম্মু রুতবার পাশে বসে ওকে সোজা করে বালিশে শুইয়ে)
ও চাইলে তো আমি দিতাম এই।ও চাইতে পারল না!(আয়ান হালকা রাগ করে)
ওকে দেখেছিস কারো চাওয়ার অপেক্ষা করে।চাওয়ার আগেই সবাইকে দেয় তারপর নিজে খায়।তাহলে তুই কেন ওর চাওয়ার অপেক্ষা করবি?আর একটা কথা বাবা বিয়েটা যেভাবেই হোক ও তোমার বউ ওর ভাল মন্দ সব আমাদের থেকে বেশি তুমি বুঝবে।যদিও ছোট বাচ্চা। কালকে বা পরশু এসে ওর আব্বু আম্মু নিয়ে যাবে।কিন্ত ও যখন মাঝেমধ্যেই আসবে তখন ও লজ্জা বা সংকচ এর কারণে কিছু না চাইতেও পারে।আর আমার মতে তুমি বুঝদার ছেলে ওর ভাল মন্দ সব কিছু তুমি দেখে রাখবে।তাই কিছু খেতে নিলে ওকে দিয়ে খাবে।আবার ওকে জিজ্ঞেস করবে কিছু খেতে চায় কিনা?বুঝলে বাবা?(আম্মু আয়ান এর উদ্দেশ্য)
আচ্ছা ঠিক আছে এই কথা যতদিন ও আমার কাছে থাকবে আমি মনে রাখব এসব বিষয়।এখন যাও ঘুমাতে নাহলে আয়েশা উঠে যাবে আর কান্না করবে।(আয়ান আম্মুর উদ্দেশ্য )
আচ্ছা। (বলেই ঘুমাতে চলে আসলাম আম্মু )
আমি আবার গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটা সময় ঘুমে বিভোর হয়ে গেলাম।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই এমন কিছু দেখলাম যা দেখে লজ্জার কারণে না কিছু বলতে পারছি আর না কিছু করতে। কি একটা মুশকিল এ পড়লাম রে বাবা!(আয়ান মনে মনে)
****************(চলবে)************