#Love_with_vampire [২০]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
তখনই অহনার কানে একটা শব্দ এলো।এমন মনে হলো যেনো দেয়ালের ওপারে ভারি কোনো কিছু ধুপধাপ আঁচড়ে পড়ছে। অহনা আতঙ্কে জমে গেলো।কি এভাবে আঁচড়ে পড়ছে?
অহনা ফ্লোর থেকে উঠে দারালো।ভয়ে ভয়ে ভেতরে কিসের শব্দ হচ্ছে সেটা দেখার চেষ্টা করলো।তেমন কিছু নজরে পড়ছে না,শুধুই অন্ধকার। সূর্যের আলোতেও এই অন্ধকার কাটছে না কেন?
অহনা অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে সে ঘরে যাবে,ভেতরে কি আছে তার মুখোমুখি হবে।তবে অহনার কেন জানি মনে হচ্ছে তার কোনো বিপদ হবে না,এমনটা কেন মনে হচ্ছে সে জানে না।হঠাৎ মনে পড়লো সেই সাধকের কথা।সাধক লোকটি তো বলেছিলো ঘরের ভেতরে একটা গ্রন্থ আছে।তাহলে কি সেই গ্রন্থটাই রক্ষা করছে এই শক্তি?।
দেয়ালের ভাঙ্গা অংশের ওপর পায়ে ভর করে ভেতরে প্রবেশ করলো অহনা।চারিদিকে কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না,শুধুই অন্ধকার।অহনার বুকটা ধরপর করতে লাগলো ভয়ে।সেই অন্ধকারে একটু সামনে পা বাড়াতেই কি যেন একটা পায়ে বাঁধলো। পায়ে আকষ্মিকভাবে কিছু একটা বাঁধার কারনে অহনা মুখ থুবড়ে পড়ে যায়।ভয়ে একটা অস্ফুট স্বরে চিৎকার করে উঠে অহনা।
___________
ডাঃক্লার্ক কিছু বইপত্র জোগাড় করেছে।সেগুলোয় চোখ বোলাচ্ছে এমন সময় একজন নার্স হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে বললো ” স্যার তাড়াতাড়ি চলুন, মিস অহনার শরীর থেকে আবারো রক্ত পড়ছে “।ডাঃক্লার্ক প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বইটা খোলা রেখেই উঠে চলে গেলেন।
রুম নাম্বার ৩০৮।অহনার নিথর শরীর বেডে পড়ে আছে।ঘরের দরজার কাছে ভয়ার্ত চাহনি নিয়ে দারিয়ে আছে ডাঃ মনসুর।ভয়ে তার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে আছে।রুমে ডাঃমনসুর ব্যাতিত আর কাউকে দেখতে পেলো না ডাঃ ক্লার্ক।কাছে গিয়ে মনসুরের উদ্দেশ্য বললো
” মিস অহনার হাত দিয়ে কি আবারো রক্ত পড়ছে? ”
মনসুর কোনো কথা বললো না।হাসের ইশারায় ক্লার্ককে মিস অহনার হাতের দিকে দেখিয়ে দিলো।ক্লার্ক অহনার হাতে দিকে তাকাতেই একটু ভয় পেলো।চশমাটা খুলে পরিষ্কার করে আবারো চোখে দিলেন।দিয়ে অহনার কাছে দারালেন। নার্স যা বললো সেটা সত্যি! হাত দিয়ে রক্ত পড়ছে সারা হাত কেমন থেঁতলে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে।টপটপ করে পড়তে থাকা রক্ত ক্লার্ক একটা টিউবে নিলেন।এই রক্ত তিনি নিজেই পরিক্ষা করবেন বলে ঠিক করলেন।মনসুরের দিকে তাকিয়ে বললেন ” এনার হাতটা ভালো ভাবে পরিষ্কার করে তারপর ব্যান্ডেজ করে দিন। নইলে ইনফেকশন হয়ে যাবে!”।ডাঃ মনসুর কোনো উত্তর দিলেন না।তাকে দেখে বেশ বোঝা যাচ্ছে সে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে, আপাতত দারিয়েই থাকবে,ক্লার্ক যখন বেড় হয়ে যাবে তার পেছন পেছন সেও বেড় হবে।
নিরুপায় হয়ে ক্লার্ক নিজেই অহনার হাতের রক্ত ধুয়ে সেখানে ড্রেসিং করে ব্যান্ডেজ করে দিলেন।সাথে সাথে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলো।ব্যান্ডেজ শেষে অহনার হাতের কব্জির কিছিটা ওপরে একটা সিরিঞ্জে করে কিছিটা রক্তও নিলেন।দুই রক্তের মধ্যে সম্পর্ক তিনি নিজেই গবেষণা করবেন।
_______________
গুহার ভেতর সাধক একটা বলয় তৈরি করলেন।সেখানে দেখছেন অনুভব রক্তাক্ত অবস্থায় বালির ওপর পড়ে আছে।ঘরটা পুরোপুরি অন্ধকার।অহনাও ইতোমধ্যে সেই ঘরে ঢুকেছে। সাধক মত্ত হয়ে গুহার বাহিরে বেড় হলেন।বলতে লাগলেন, মুক্তি,মুক্তির সময় এসে গেছে, হাহাহাহাহা।
তিনি তার ঝোলাটা কাঁধে নিলেন।নিয়ে হাঁটতে শুরি করলেন যেই বাড়িতে অহনা এবং অনুভব থাকে।মনে মনে বললেন ” আমি জানতাম রে মা তুই পারবি,তুই পারবি অসাধ্য সাধন করতে।আমি আসছি,একটু অপেক্ষা কর।”
সাধক হাটতে হাটতেই বিড়বিড় করে কি যেন বললেন।সামনে ছোট থেকে বড় আকারের একটা বলয়ের সৃষ্টি হলো।তিনি চোখ বন্ধ করলেন,তার শরীর ঘামতে লাগলো।বেশ কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে তিনি অহনার ভেতরে থাকা আত্মার সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন।কিন্তু পারছেন না। তিনি আরো জোরে জোরে হাঁটতে লাগলেন।
______________
অহনা মুখ থুবড়ে বালির ওপর পড়ে আছে।হাতে ভর করে ওঠার চেষ্টা করলো।নিচে কিসের সাথে পা বিঁধে গেলো সেটা দেখার জন্য অহনা নিচে তাকানোর ব্যার্থ চেষ্টা করলো, কেননা সে নিজেও জানে,অন্ধকারে সে কিছুই দেখতে পারবে না।তবুও নিচে তাকালো,অহনার ইচ্ছে করছে জিনিসটা কি সেটা জানতে।মনে মনে ভাবছে একবার ছুঁয়ে দেখবে কি না।
পরোক্ষনে একটা উদ্ভট বিষয় তার মনে হলো,এটা কি অনুভব?।অনুভূতি একবার হতে শুরু হলে তা থেমে থাকে না,কিছুক্ষণ চলতে থাকে,ইচ্ছে করলেই সেই অনুভব বন্ধ করা সম্ভব হয় না,নির্দিষ্ট একটা সময় পর্যন্ত এই অনুভূতি কাজ করে আপনা আপনি বন্ধ হয়ে যাবে।এই বিষয়টা এখন অহনার ক্ষেত্রে ঘটছে,তার মনে একটা অনুভূতি কাজ করছে।সেটা ভালো নয়,খারাপ,খুব খারাপ।অহনার মনে হচ্ছে অনুভব নিচে উপুড় হয়ে শুয়ে আছে,তার সারা শরীর থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে,।হয়তো মুখের অনেকটা অংশ থেঁতলে গিয়েছে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে তার দিকে,সে চোখ অসম্ভব লাল,চোখের নিচ দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে।অহনা এসব চিন্তা করতে চাচ্ছে না।কিন্তু এই চিন্তা একটা সময় পর্যন্ত হয়েই থেমে গেলো।
অনুভূতিটা সত্যি না মিথ্যে সেটা দেখার খুব ইচ্ছে করছে অহনার।তার শরীর কাঁপছে, হাত কাঁপছে। থরথর করে কাঁপছে। কাঁপা কাঁপা হাত নিয়ে অন্ধকারে নিচে পড়ে থাকা অনুভবের শরীরে একটু স্পর্শ করেই আঁতকে উঠল অহনা।দুই হাত দিয়ে নিজের মুখ চেপে ধরলো,প্রচন্ড ভয়ে তার এখন খুব কান্না পাচ্ছে। তবুও নিজেকে একটু সামলে নিয়ে আবারো দ্বিতীয়বার ছুঁয়ে দেখলো। অহনা বেশ বুঝতে পারলো এটা একটা মানুষের শরীর।অহনা হাত একটু ওপরে তুলতেই অনুভবের চুলে অহনার হাত পড়লো।চুলে হাতের স্পর্শ পড়তেই অহনা একটু ভড়কে গেলো,এই চুলগুলো তার পরিচিত মনে হচ্ছে।পিঠে হাত দিতেই বুঝলো সে শার্ট পরিহিত, এবং শার্ট ভিজে চপচপ করছে।সেই ভেজাটা কিছুটা পিচ্ছিল।নিশ্চই রক্তে মাখামাখি হওয়া শার্ট।অহনার মনে একটা ক্ষীন ভাবনা এলো,এটা কি অনুভব? অনুভব কি রক্তাক্ত অবস্থায় এভাবে পড়ে আছে?।
অহনা কাঁপা কাঁপা স্বরে বার কয়েক অনুভব,অনুভব বলে ডাকলো।কোনো উত্তর পেলো না।অহনা এবার একটা হাসির শব্দ পেলো।অহনা চমকে উঠে দারালো।ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো, কে? কে হাসছে? “।এবারেও কোনো উত্তর পাওয়া গেলো না।
ঘরে এবার আলো আসা শুরু করছে।গাঢ় অন্ধকার সূর্যের আলোয় কিছিট কেটেছে।চারদিকটা আবছা আবছা বোঝা যাচ্ছে।একটু,আর একটু পরেই ঘরের আলো আরো বাড়তে লাগলো।ঘরে এখন তেমন আলো না থাকলেও এই আলোয় বেশ সব বোঝা যাচ্ছে। অহনা চারপাশটা একবার ভালো করে চোখ বুলিয়ে নিলো।
ঘরে তেমন কিছুই নেই।শুধু চারদিকে প্রকান্ড মস্ত বড়বড় জানালা।সেই জানালায় লতাপাতা পেচিয়ে আছে।বাহিরে থেকে তো এই জানালা গুলি চোখে পড়েনি।অহনা নিচে তাকালো,সেখানে মাটি,বা কংক্রিটের ফ্লোরের বদলে বালি।সে বালি গাঢ় কালো রঙ্গের। ঠিক মাঝখানে ছাদের একটু অংশ ফুটো হয়ে বলো পড়ছে।আলো পড়ার যায়গাটায় কি যেনো আঁকা।দেয়ালের কোনে অহনার চোখ পড়লো।একটা ছায়া সেখানে কেমন দল বেঁধে আছে।সেটা নড়ছে,বাতাসে যেমন চুল উড়ে সেভাবেই সেই ছায়ার দলটাও নড়ছে।
ছায়াটা এবার ধীরে ধীরে লম্বা হচ্ছে।লম্বা হয়ে একটা মানুষের মতো দেখাচ্ছে, মনে হবে কোনো মানুষ দারিয়ে আছে,যার দেহ নেই কিন্তু ছায়া আছে।অহনা বুঝতে পারলো এটা একটা মেয়ের ছায়া।কেননা ছায়ার শরীরের গঠন বোঝা যাচ্ছিলো।শরীরের গঠন বলতে বোঝা যাচ্ছিলো ছায়াটার চুল অনেক বড়,মাটিতে ছুঁই ছুঁই করছে,কোমড় সরু,বু’ক এবং কোমড়ের নিচ অংশটা মোটামুটি আকারের…..
চলবে?
#Love_with_vampire [২১]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
শরীরের গঠন বলতে বোঝা যাচ্ছিলো ছায়াটার চুল অনেক বড়,মাটিতে ছুঁই ছুঁই করছে,কোমড় সরু,বু’ক এবং কোমড়ের নিচ অংশটা মোটামুটি আকারের…
অহনা ভয়ে ভয়ে চোখে তাকিয়ে আছে, মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না। এখন কি করা উচিৎ সে নিজেও জানেনা।তবুও কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো, ” কে তুমি? “।বলার সাথে সাথে ছায়াটা মনে হলো কেমন নড়েচড়ে উঠলো। মাথা ঘুড়িয়ে তাকালো অহনার দিকে।অহনা রীতিমতো ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ছায়াটা চাপা অস্পষ্ট স্বরে বললো
” এখান থেকে চলে যাও, চলে যাও, নইলে কেউ বাঁচবে না ”
” কি…কি…কিন্তু তু..তু..তুমি কে? ”
হাসির শব্দ ভেসে আসলো।ছায়াটা ভয়ঙ্কর ভাবে হাসছে।এই ভয়ঙ্কর হাসির শব্দে অহনার বুকের ভেতরটা ছ্যাত করে উঠলো।এই হাসির সৃষ্টি অন্য কোনো ভূবণে।
অহনা দু-হাতে মুখ চেপে ধরে ফুপিয়ে কান্না করছে।ছায়াটা আবারো চাপা স্বরে বললো
” চলে যাও এখান থেকে, তোমরা এই গ্রন্থ কিছুতেই নিতে পারবে না।আমি এর রক্ষা করবো।চলে যাও,নইলে শেষ হয়ে যাবে ”
অহনা কিছুটা বিষ্মিত হলো।অহনা যেই গ্রন্থ নেওয়ার জন্য এখানে এসেছে এই ছায়াটা কি সেই গ্রন্থের কথাই বলছে? এই ছায়াটা কি সেই গ্রন্থকে রক্ষা করছে? কিন্তু আমি কিভাবে বোঝাবো আমি এই গ্রন্থের যথাযথ ব্যাববার করবো, সে কি আমার কথা শুনবে?।
অহনা ভয়ে ভয়ে ছায়াটার দিকে তাকিয়ে বললো
” হে পবিত্র আত্মা, আমি তোমার কোনো ক্ষতি করতে আসিনি,আর এই গ্রন্থটিও সাথে নিয়ে যেতে আসিনি।আমি আমার স্বামীকে ভয়ঙ্কর অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে এই গ্রন্থটা আমার খুব প্রয়োজন। আমায় সাহায্য করো তুমি!”
উত্তরপ কিছুটা সময় নিয়ে ছায়াটা খসখস আওয়াজে বললো ” কে তোর স্বামী,এই ভ্যাম্পেয়ার? ”
অহনার কিছুটা রাগ হলো।রাগকে চেপে ধরে বললো ” আমার স্বামীকে বাঁচাতে এই গ্রন্থের আমার প্রয়োজন। তুমি কি আমায় সাহায্য করবে? ”
” হাহাহাহা,, ”
অহনা এই হাসির শব্দে ভয়ে পেছনে সরে গেলো।কি কুৎসিত আওয়াজ, একটা পোড়া পোড়া গন্ধ নাকে ভেসে আসছে,মনে হচ্ছে এই গন্ধে পেটের ভেতর থেকে সবকিছু বেড়িয়ে আসবে।পেছনে সরে যেতেই অহনার চোখ পড়লো অনুভবের ওপর।এতোক্ষণ সে অনুভবকে তেমন লক্ষ্য করেনি। অহনা দেখলো সারা ঘরে কালো বালির আস্তোরণ,আর সেখানে অনুভবের নিথর শরীর পড়ে আছে,তার সারা শরীর থেকে রক্ত পড়ছে।সেই রক্তে সেখানকার বালিও ভিজে উঠেছে। অহনা চিৎকার দিয়ে দৌড়ে অনুভবের কাছে যায়।অনুভবের মাথা নিজের কোলে নেয়,কাঁদো কাঁদো গলায় বলে
” অনুভব,এই অনুভব,কি হয়েছে আপনার? চোখ বন্ধ করে আছেন কেন? কি হয়েছে আপনার বলুন না, এভাবে কে মেরেছে আপনাকে? কি হলো বলুন না, অনুভব,এই অনুভব ”
অনুভব কোনো কথা বলছে না।চোখ বন্ধ করে আছে।অহনা অনুভবের নাকের কাছে হাত এনে বোঝার চেষ্টা করলো শ্বাস চলছে কি না।হাত দিতেই অহনা হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলো অনুভবের দিকে।
অনুভবের শ্বাস চলছে না।অহনা বুঝতে পারছে না এখন সে কি করবে।তখনি অহনার মনে পড়লো ফাহাদ স্যারের কথা।ফাহাদ স্যার হলো বায়োলজির শিক্ষক।কলেজে ওঠার দ্বিতীয় দিন’ই তিনি ক্লাসে এই বিষয়ে বলেছিলেন যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে গেলে কিভাবে কি করতে হবে।
বিষয়টা সহজ।দুইহাত সোজা করে বুকের কাছে একটা হাতের ওপর আরেকটা হাত রাখতে হবে।দুইহাত একদম সোজা রাখতে হবে।হাটুর ওপর ভর করে বসে বুকে চাপ দিতে হবে।হাটু গেঁড়ে বসার কারন হচ্ছে এতে চাপটা জোরে দেওয়া যায় এবং অনেক্ক্ষণ সময় নিয়ে করা যায়।এরপর বুকে চাপ দিতে হয়,প্রতিটি চাপে যেন বুক পাঁচ,ছয় সেন্টিমিটার ওপর নিচ হয়।তাহলে ফুসফুসে অক্সিজেনের সরবরাহ হতে থাকবে।
অহনা হাটুতে ভর করে বসে দুইহাত অনুভবের বুকের ওপর রাখলো,এরপর চাপ দিতে থাকলো।আনুমানিক কিছুক্ষণ চাপ দেওয়ার পরেও অনুভবের শ্বাস চলছে না।
অহনার আরেকটা চিকিৎসার কথা মনে পড়লো।অহনা ঝুঁকে এসে অনুভবের ঠোঁটের সাথে নিজের ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিয়ে প্রবল চাপে ফু দিলে সেই অক্সিজেন সাপ্লাই কাজ করে।বেশকিছুক্ষন অহনা এভাবে অনুভবের ঠোঁটে ঠোঁট রেখে অক্সিজেন সাপ্লাই দিলো।একসময় অনুভব একটু নড়ে উঠলো।অহনার চোখ চকচক করে উঠলো।সে এক মূহুর্ত সময় নষ্ট না করে আবারো ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
অনুভব এবার ধীরে ধীরে চোখ মেলছে।অহনা কান্নামিশ্রিত কন্ঠে বললো
” আ….আপনি ঠিক আছেন তো? শ্বাস নিতে পারছেন? ”
অনুভব কিছুটা গোঙানির মতো করে বললো ” হু ”
____________
ডাঃক্লার্ক অহনার শরীরের রক্ত এবং হাত থেকে পড়া রক্ত দুটোরই স্যাম্পল টেস্ট করলেন।রিপোর্টে যা দেখলেন তা অবাক হওয়ার মতোই।অহনার শরীরে যে রক্ত সেটার গ্রুপ এ.বি পজেটিভ।তাতে কোনো সমস্যা নেই,সমস্যা হলো হাত থেকে গড়িয়ে পড়া রক্তে।সেই রক্তের কোনো গ্রুপ তিনি বেড় করতে পারলেন না।এমন মনে হচ্ছে যেন এই রক্ত পৃথিবীর কোনো মানুষের মধ্যেই নেই।রক্তে থ্রম্বোসাইটের পরিমান শূন্য, এমনকি সাধারণ মানুষের রক্তের পি.এইচ ৭.৩৫-৪৫ এর মধ্যেই,কিন্তু এই রক্তের পি.এইচ ৫।এমনকি রক্তে লিউকোসাইটের পরিমানও নেই বললেই চলে।
এরমধ্যেই তিনি আরেকটা বিষয় পরিক্ষা করেছেন আর সেটা হলো অহনার ফুসফুস ঠিক মতো কাজ করছে কি না,তিনি যথারীতি পরিক্ষা করে দেখলেন অহনার ফুসফুস স্বাভাবিক মানুষের মতে না,খুবই দ্রুত ওঠা নামা করছে।ডাঃক্লার্কের মনে হচ্ছে মিস অহনার সকল বিষয় জানা দরকার।সে অন্য সাধারণ মেয়ের মতো স্বাভাবিক নয়।
তিনি তখনি ফাইল থেকে অহনার বাবা,মায়ের ঠিকানা যোগাড় করে সেখানো চলে গেলেন।দরজায় কলিংবেল চাপতেই বুড়ো করে একজন লোক দরজা খুললেন।তার দাঁত একটাও নেই।মুখ অনেকটা ভেতরে চলে গিয়েছে।তিনি খুলখুল শব্দে কি যেন বললেন,।ডাঃক্লার্ক সেটা বুঝতে পারলেন না।তিনি বুড়ো লোকটি তাকে ভেতরে আসার ইশারা দিলেন।ডাঃক্লার্ক সোফায় বসলেন।বুড়ো লোকটা ভেতরে গেলো।খুব সম্ভব তিনি এই বাড়ির কেয়ার টেকার আর তিনি অহনার বাবাকে ডাকতে গেছেন।
কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন ভদ্রমহিলা এসে উপস্থিত হলেন।ইনি অহনার মা।তিনি এসে সামনের সোফায় বসলেন।বিনয়ী ভাবে বললেন
[তারা ইংরেজিতেই কথা বলছেন।সেটার বাংলারুপ]
” ডাঃ আপনি? আমার মেয়ের বিষয়ে কি কিছু বুঝতে পারলেন? ”
” এখনো তেমন বুঝতে পারছি না।মিস অহনার বিষয়ে আমার কিছি জানার ছিলো।যদি বলতেন ”
” হ্যা অবশ্যই। তার আগে বলুন চা খাবেন না কফি? ”
” কফি ”
” রহিম চাচা এককাপ কফি আর এককাপ চা নিয়ে এসো তো ” বুড়ো লোকটির দিকে তাকিয়ে বললেন।
” এখন বলুন অহনার বিষয়ে কি জানতে চান ”
” তেমন কিছু না,এই মিস অহনার ছোট বেলার কোনো ছবি আছে কি? আর শিশু থাকা অবস্থায় ওর মধ্যে কি অস্বাভাবিক কোনো কিছু আপনার চোখে পড়েছে?যা অন্য শিশুর মধ্যে থাকে না? ”
” অহনার তো তেমন কিছু আমার চোখে পড়েনি।ওর আচরন সাধারন শিশুর মতোই ছিলো ছোট বেলার কিছু ছবি আমি পাঠিয়ে দিবো আপনার কাছে ”
” আচ্ছা আমি আসি,”
” সে কি কফি খেয়ে যান? ”
” অন্য একদিন খাবো,এখন যেতে হবে।”
” আচ্ছা ”
ডাঃক্লার্ক উঠে দারালেন।তার কাছে মনে হলো এই মহিলা তাকে সত্যি বলছে বা। কিছু একটা লোকাচ্ছে। কিন্তু সেটা কি? এসব ভাবতে ভাবতে তিনি দরজার কাছে যেতেই চোখ পড়লো বুড়ো লেকটার দিকে।এর আগেও তার চোখে চোখ পড়েছে ক্লার্কের।প্রত্যকবারই মনে হয়েছে সে কিছু বলতে চায়।তার কথা শোনা দরকার। ডাঃক্লার্ক চোখের ইশারায় তাকে বাহিরে ডাকলেন।
ডাঃক্লার্ক গাড়িতে অপেক্ষা করলেন।বুড়ে লোকটা আসলেন।এসে বাংলায় কিছু বলছেন যা ডাঃ ক্লার্ক কিছুই বুঝতে পারছে না। ডাঃ ক্লার্ক তার ড্রাইভারকে বললো যে এই লোকটিতে বলো তিনি যা বলতে চান সেটা যেনো লিখে দেয়।তার কথা আমি বুঝতে পারছি না।
ড্রাইভার বলার পর বিড়ো লোকটি কিছি বললেন, বলে চলে গেলেন।ক্লার্ক ড্রাইভারের কাছে জানতে চাইলো তিনি কি বললেন।ড্রাইভার বললো ” স্যার ইনি এই বাড়িতে কাজ করে,পড়ালেখা খুব কম,টেন পাস,হাতের লেখা খারাপ,একটু কষ্ট করে বুঝে পড়তে বলেছে”।
বেশ কিছুক্ষন তিনি হাতে একটা কাগজ নিয়ে আসলেন।সেটা ডাঃ ক্লার্কের হাতে দিয়ে দৌড়ে চলে গেলেন।মনে হচ্ছে তিনি বড়ো অন্যায় কিছু করে ফেলেছেন।
ডাঃক্লার্ক কেবিনে এসে কাগজটা বেড় করলেন।মনে হচ্ছে ক্লাস টু,থ্রির বাচ্চার হাতের লেখা।লেখাটা বেড় করতেই ঠিক মাঝখানে চোখ পড়লো ডাঃ ক্লার্কের।সেটা দেখে ক্লার্ক হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে রইলেন।সেখানে লেখা ছিলো
” অহনা মা এনাদের সন্তান না।আর আমার অহনা মা’র অনেক আলাদা ক্ষমতা ছিলো ”
ডাঃক্লার্ক এইটুকু দেখে চোখের চশমা খুলে টেবিলে রেখে চেযারে বসলেন।এতোক্ষণ তিনি দারিয়েই কাগজটা খুলেছিলেন।তিনি গম্ভীর হয়ে ভাবলেন,
” এ আবার নতুন এক রহস্যই উন্মোচন হলো ”
চলবে?