Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
শেষ পর্ব
ইশানের দুলাভাই বেশিদূর পালাতে পারে নি।
তাকে পুলিশ ধরে ফেললো।
কিন্তু তাকে দুই একটা চড় দিতেই আসল সত্য বের হয়ে আসলো।
ইরার স্বামী বললো,আমি এ সবের কিছুই জানি না।
ইরা আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বললো ঔষধের দোকান থেকে এটা কিনে আনো।
আমি কাগজটা খুলেও দেখি নি।
কিন্তু দোকানদার বললো নাই এটা।
আমি চলে আসতে ধরলাম।
হঠাৎ দোকানদার বললো এটা হবে না তবে অন্য প্রডাক্ট হবে।।।
আমি বললাম হলেই হলো।
সেটা নিয়ে আমি ইরা কে দেই।
আমি আর কিছু জানি না।
বা ইরা কে জিজ্ঞেস ও করি নি সে এই টা দিয়ে কি করবে?
এবার একটা মহিলা পুলিশ ইরার কানে দুই টা চড় দিলো।
ইরা চুপ হয়ে থাকলো।
আবার গালে দুই টা চড় মারলো।
ইরা কাঁদতে কাঁদতে বললো আমার বাবার বাড়ি আর আমাকেই দিনে রাতে ছোট হয়ে থাকতে হয়।
আর কোথা থেকে উড়ে এসে অচেনা অজানা মেয়ে পুরো সংসারের মালিক হয়ে বসে আছে।
আমি তো মার কোন ক্ষতি করতে চাই নি।
আমি শুধু দিশাকে কষ্ট দিতে চাইছিলাম।
আর আমার এক বোকা স্বামী ওকে আনতে বলেছিলাম হাত চুলকানোর ঔষধ।
যা ধরার সাথে সাথে চুলকানি শুরু হবে।।।
ও কিছু না বুঝে সায়ানাইড ক্যামিকেল এনেছে।
কিন্তু কথায় আছে রাখে আল্লাহ মারে কে?
ক্ষতি করতে চাইলাম দিশার ক্ষতি হলো আমার মায়ের।
এই বলে ইরা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো।
ইশান নিজের কানকেও বিশ্বাস করতে পারছে না।
সে এসব কি শুনছে?
ইরা এসব কি বলছে?
সবাই অবাক হলো ইরার কথা শুনে।
দিশাকে একটু শাস্তি দেওয়ার জন্য আজ তার নিজের মা সারাজীবন এর জন্য অচল হয়ে পড়ে থাকলো।
পুলিশ ইরা আর তার স্বামীকে ধরে নিয়ে গেলো।
পুরো বাড়ি টা কিছুক্ষণের মধ্যে একদম ফাঁকা হয়ে গেলো।
এখন বাড়িতে শুধু ইশান আর তার বাবা থাকলো।
ইশান ঠিক করলো তার বাবার অফিসে জয়েন করবে।।।
এভাবে একা একা আর কতই বসে থাকে সে?
ইশান চাকরিতে জয়েন করলো।
এদিকে দিশাও বসে থাকলো না।
সে তার বান্ধুবী সীমার অফিসে জয়েন করলো।
এইভাবেই চলছিলো,,,,,,,
ইশান আর দিশাকে ফিরিয়ে আনতে যায় না।
আর দিশাও নিজের থেকে যায় না।
কিন্তু ইশানের বাবা সেটা কিছুতেই মানতে পারলেন না।
এভাবে ছেলেমেয়ে দুই টা চোখের সামনে কষ্ট পাচ্ছে তা কি করে সহ্য করা যায়?
একদিন ইশানের বাবা নিজেই গেলো দিশাকে আনতে।
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
সে হ্যাঁ বা না কিছুই বললো না।
ইশানের বাবা বললো দিশা মা ভুল সবাই করেছে।
আমিও ভুল করেছি,ইশানও করেছে।
আমাদের ফ্যামিলির সবাই তোমার সাথে অন্যায় করেছে।
সেজন্য সবার হয়ে আমি ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
কিন্তু ইশান যে তোমাকে ভালোবাসে
তোমাকে ছাড়া তার জীবন যে অপূর্ণ সেটা কি বিশ্বাস করো?
যদি ইশানের ভালোবাসা নিয়ে তোমার সন্দেহ হয়ে থাকে, যদি ওর সাথে আর থাকার ইচ্ছা না থাকে তাহলে ওকে ডিভোর্স দিয়ে দাও।
এভাবে বিবাহিত দুইজন ছেলেমেয়ে আলাদা থাকা জায়েজ না।
এটা সমাজের চোখেও খারাপ দেখায়।
এখন সিদ্ধান্ত তোমার হাতে।
যদি ইশানের বউ হয়ে সারাজীবন কাটাতে চাও তাহলে ফিরে এসো।
আর ইশান কে কষ্ট দিও না।।।
ছেলেটার মুখের দিকে আমি তাকাতে পাচ্ছি না।
এই বলে ইশানের বাবা কেঁদে ফেললো।
দিশা চুপ করেই থাকলো।
তার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।
সে তো নিজেই ইশানের জন্য পাগল।
সে তো নিজেই তাকে ছাড়া ভাবতে পারে না কিছু।
কিন্তু আজ এমন এক অবস্থায় এসে দুইজন দাঁড়িয়েছে, যে দুইজন দুইজনকে ছাড়া দিব্যি চলাফেরা করছে।
হয় তো কষ্ট হচ্ছে।
কিন্তু কেউ প্রকাশ করছে না।
ইশানের বাবা চলে গেলো।
দিশা চিৎকার করে কেঁদে উঠলো।
এমন তো হওয়ার কথা ছিলো না।
তাদের এতো বছরের সম্পর্ক?
এতো ভালোবাসার বন্ধন?
এতো এতো বিশ্বাস,এতো এতো স্মৃতি সব আজ চাপা পড়ে আছে কিছু মান অভিমানের কাছে।
পরের দিন দিশা অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।
হঠাৎ ইশান আসলো।
সে কোন কথা না বলে চুপচাপ বসে পড়লো।
দিশা তো ইশান কে দেখে অবাক!
ইশান এসেছে!
কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।
মনে হচ্ছে কত অচেনা দুইজন!
সীমা বললো দিশা কখন যাবি?
হলো তোর?
কিন্তু বাহিরে এসে দেখে ইশান।
তুই?
–মানে?
–কিসের মানে?
–দিশা নাকি আজ বাড়ি যেতে চেয়েছে?
সেইজন্য নিতে এলাম।
সীমা তো অবাক!
আমি তো জানি না।
–বাবা তো বললো দিশা কে নিয়ে আয়।
আজ ও আসবে।
–কি বলিস?
কখন বলেছে?
দিশা তো নিজেই অবাক।
সে একবারের জন্যও যেতে চায় নি।
ইশানঃকি হলো?
চুপচাপ আছো যে?
যাবে না?
দিশা মাথা নাড়লো।
দিশা অনেক চিন্তা করে দেখলো যদি আজকেও সে না যায় তাহলে তার শশুড় অনেক মন খারাপ করবে।
তার শশুড় তার উপর কত টা বিশ্বাস করে ইশান কে পাঠিয়েছে।
যে দিশা আজ বাড়ি আসবে।
দিশা ইশান কে বললো তুমি চলে যাও এখন।
কারন আমি অফিস যাবো।
অফিস ছুটি হলে নিজেই চলে যাবো।
ইশানঃআমিও তো অফিসে যাবো।
ঠিক আছে।
এই বলে ইশান চলে গেলো।
সীমা বললো তুই কখন যেতে চেয়েছিস যে আমি একবারও শুনলাম না।
দিশাঃযেতে চাই নি।
সীমাঃইশান না বললো তুই তোর শশুড় কে বলেছিস আজকেই যাবি।
দিশাঃবাবা,মিথ্যা বলেছে ইশান কে।
যাতে ইশান আবার আমাকে নিতে আসে।
সীমাঃতুই যেতে রাজি হলি যে?
দিশাঃইশান অনেক কষ্টে আছে।
ও আমার দিকে একবার ও তাকায় নি?
কারন আমার দিকে তাকালেই আমি ওর ছলছল করা চোখ দুইটা দেখে ফেলবো।
সীমাঃআমি কিন্তু তোকে অনেকবার বলেছি যে ইশান কে আর কষ্ট দিস না।
ও ভুল করেছে।
সেটা তোকে বার বার বলেছে।
তবুও শুনিস নি?
দিশাঃবাদ দে ওসব পুরানো কথা।
চল অফিসে যাই।।।
দিশাও অফিসে চলে গেলো।
দিশা কিছুতেই কাজে মনোযোগ দিতে পারছে না।
এদিকে অফিসটাও ছুটি হচ্ছে না।
অন্যদিকে ইশান তার বাবা কে বলতেও পারছে না যে তাকে আজ একটু তাড়াতাড়ি বাড়ি যেতে হবে।
কিন্তু তার বাবা নিজেই ইশান কে বললো আজ বাড়ি যা।
কাল ঠিক সময়ে অফিস আসিস।
ইশান তার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো সে বাড়ি এখনো আসে নি।
অফিসেই আছে।।।
ইশানের বাবা বললো তাতে কি হয়েছে?
যাবে তো?
ইশান আর কোন কথা না বলে বাড়ি চলে গেলো।
সে নিজের রুমে ঢুকতেই দেখে রুম টা আজ গোছানো।
কে গুছিয়ে রাখলো?
সে দৌঁড়ে তার মায়ের রুমে গেলো।
যা ভেবেছে সেটাই।
দিশা তার আগেই এসেছে।
দিশা তার শাশুড়ীর রুমে ঢুকে নার্স এর সাথে কথা বলছে।
ইশান রুমে ঢুকলো।
কি হয়েছে মার?
নার্সঃকিছু হয় নি স্যার।
ম্যাডাম এমনিতেই জিগ্যেস করছিলেন এখন কেমন অবস্থা ওনার?
ইশান আর কোন কথা না বলে রুমে চলে গেলো।
দিশাও কিছুক্ষণ গল্প করে রুমে চলে গেলো।
কেউ কারো সাথে কথা বলছে না।
মনে হচ্ছে কেউ কাউকে চেনে না।
ইশান বুঝতে পারছে না কি ভাবে কথা বলা শুরু করবে?
দিশাও বুঝতে পারছে না কি বলবে?
দিশা ফ্রেশ হওয়ার জন্য বাথরুমে গেলো।
হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠলো।
ইশান গিয়ে খুলে দিলো।
ইশান গিয়ে দেখে তাদের ফ্রেন্ড রা এসেছে।
তোরা?
–বিরক্ত করলাম?
–না,না।
–মনে মনে তো বিরক্তই হয়েছিস?
–মনের খবর যখন এতই পড়তে পারস তাহলে এসেছিস কেনো?
–না এসে থাকতে পারলাম না।
ভাবলাম বন্ধুর থেকে আজ একটা ট্রীট না নিলেই নয়।
চল না আজ বাহিরে গিয়ে ঘুরে আসি?
–না,আজ যাবো না।
–দিশাও খুশি হবে।
চল সবাই মিলে যাই।
ইশান অনেকগুলো টাকা বের করে তার ফ্রেন্ড দের দিলো।
আর বললো তোরা নিজেরাই আনন্দ কর গিয়ে।
যা এখন।
–দোস্ত পরে যাই।
দিশার সাথে একটু দেখা করি?
–দিশা ফ্রেশ হচ্ছে।
ও এখন কথা বলবে না।।।
তোরা যা তো?
এই বলে ইশান দরজা বন্ধ করে দিলো।
কিছুক্ষণ পর আবার কলিংবেল বাজলো।
ইশান খুলে দিলো।
ইশানঃআবার কি?
–দোস্ত, দুই টা নোট শর্ট পড়েছে।
আর দুই টা নোট দে।
তাহলে মনের মতো একটা পার্টি দিতে পারবো।
ইশান রাগ না করে দিয়ে দিলো।
ইশান রুমে চলে গেলো।
দিশা গোসল করে বের হয়েছে।
দিশা চুল ঝাড়তেছে।
ইশান দাঁড়িয়ে থেকে দেখতে লাগলো।
দিশার কেমন জানি লজ্জা লাগতে লাগলো।
আর বলতে ইচ্ছে করলো জীবনেও কি চুল ঝাড়া দেখো নি?
ওভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?
কিন্তু দিশার সংকোচ হতে লাগলো।।
সে কিছুই বললো না।
ইশান আর চুপ করে না থেকে বললো তোমার না অফিস পাঁচটায় ছুটি হয়?
আজ এতো তাড়াতাড়ি ছুটি হয়েছে?
দিশা ইশানের দিকে তাকালো আর বললো তোমার অফিস কি প্রতিদিন এই দুপুরেই ছুটি হয়?
ইশানঃআমি আজ একটু তাড়াতাড়ি আসলাম।
দিশাঃআমিও তাড়াতাড়ি আসলাম।
ইশানঃকেনো?
দিশাঃতুমি কেনো তাড়াতাড়ি এসেছো?
ইশান কোন উত্তর দিলো না।
হঠাৎ আবার কলিং বেল বেজে উঠলো।
ইশানঃকে আবার এলো?
দিশাঃআমি খুলে দিচ্ছি।
ইশানঃথাক,লাগবেনা।
আমি দিচ্ছি।
ইশান গিয়ে দেখে তার বাবা এসেছে।
বাবা তুমি এতো তাড়াতাড়ি?
–দিশা এসেছে?
–হ্যাঁ।
–কই?
এই বলে ইশানের বাবা দিশার কাছে গেলো।
খুব ভালো লাগছে তোমাকে দেখে।।।
বাড়ি টা মনে হচ্ছে ভরে গেছে।
দিশাঃবাবা কিছু খাবার করে দেবো?
বাবাঃএসেই রান্না করবে?
আজ বাহিরের খাবার খাবো।
ইশান বাহির থেকে কিছু কিনে আন তো?
ইশানঃআমি আবার কখন যাবো?
অন্য কাউকে বলো।
বাবাঃবাহিরের লোকের হাতে খাবার আনতে দেবো না আমি।
তুই যাবি আনতে।
তাড়াতাড়ি আন।
দিশাঃতার আর কি দরকার?
তারচেয়ে আমরা সবাই মিলে খেয়ে আসি?
বাবাঃবুদ্ধি টা কিন্তু খারাপ না।
যাও তোমরা দুইজন রেডি হয়ে নাও।
দিশাঃআপনি যাবেন না?
বাবাঃনা,আমি আবার কেনো যাবো?
তোমরাই যাও।
দিশাঃতাহলে আমিও যাবো না।
বাবাঃতোমার শাশুড়ী কে রেখে একা যাওয়া ঠিক হবে না।
তুমি আর ইশান গেলেই হবে।
দিশা রেডি হলো।
কিন্তু ইশান হঠাৎ করে দিশাকে জড়িয়ে ধরলো।
দিশা কোন কথা বললো না।
ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
দিশাঃকি হলো?
ইশানঃতুমি আমায় ছাড়া এতোদিন কি করে ছিলে?
দিশা কোন উত্তর দিলো না।
ইশানঃআমি এটা ভাবতেও পারি নি এতোদিন এভাবে আলাদা থাকবো?
আর যদি কখনো এভাবে ছেড়ে চলে যাচ্ছো তাহলে আমি নিজেকেই শেষ করে দেবো।
দিশাঃকি বলছো এসব?
আর যাবো না কোথাও।
শুধু কি তোমার কষ্ট হয়েছে?
আমার হয় নি?
আমিও যে কি করে দিন গুলো কাটায়ছি তা শুধুমাত্র ওপরওয়ালাই জানে।
ইশানঃআজ থেকে আমাদের সংসার নতুনভাবে শুরু করবো।
যেখানে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না।
কোনো রাগ অভিমান ও থাকবে না।
আর কোনো ঝগড়াও না।
Only ভালোবাসা থাকবে।
দিশাঃঝগড়া তো থাকবেই।
ঝগড়া না করলে ভালোবাসা হবে কি করে?
ইশানঃতাই?
তাহলে চলো আরেকটু ঝগড়া করি।
তারপর না হয় ভালোবাসবো।
দিশাঃনা,এখন ঝগড়া করার কোন মুড নাই।
বাহিরে থেকে এসে তারপর।
ইশান আর দিশা বাহিরে গেলো বেড়াতে।
সমাপ্ত
গল্পটি কেমন লেগেছে সবার?
অবশ্যয় জানাবে।
Amon sister in law jar ache tader jonno somobedona janacchi. Writer, khub valo likhecho. Golper theme ta different chilo. Thank you so much for the story.