Love Marriage Part-11

0
1608

Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ১১
ইশানের মায়ের রিপোর্ট দেখে ডাক্তার নিজেই কেঁদে ফেললেন।
তিনি কথা বলতে পারতেছিলেন না।

ইশান বললো ডাক্তার আমার মায়ের কি হয়েছে?

ডাক্তার বললো আগে বলেন আপনার মায়ের কোনো বড় শত্রু আছে কিনা?

–শত্রু?
কিসের শত্রু?

ডাক্তার বললেন শত্রু না থাকলে এই জঘন্য কাজ টা করলো কে?

ইশানের মেজাজ খারাপ হতে লাগলো।
ডাক্তার সাহেব আসল কথা বলুন।
কি হয়েছে আমার মায়ের?

ডাক্তারঃআপনার মা জীবিত থেকেও মৃত।
কারণ তিনি আর কথা বলতে পারবেন না।
আবার চলাফেরাও করতে পারবেন না।
তার পুরো শরীর প্যারালাইজড হয়েছে।

মানে কি?
কি বলছেন এসব

–হ্যাঁ ঠিকই বলছি।
সায়ানাইড খুবই মারাত্মক একটি রাসায়নিক যৌগ।
যার এক ফোঁটা কেউ খেলে সাথে সাথে সে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
যেহেতু রোগী সায়ানাইড খায় নি তাই তার মৃত্যু হয় নি।
কিন্তু এই মারাত্মক ক্যামিকেল শরীরে লাগানোর ফলে তা রক্তের মাধ্যমে পুরো শরীরে চলে গিয়েছে।
এই জন্য রোগীর পুরো শরীর অবশ হয়েছে।

সেই কথা শুনে সবাই চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো।
সবাই শুধু বলছে কে করলো এই কাজ?
ইশানের মায়ের এতোবড় শত্রু কে???

ইশান একেবারে নীরব হয়ে গেলো।
সে কোন কথাই বলতে পারছে না।

ডাক্তার জানালো এখন রোগীর অনেক সেবা করতে হবে।
তাকে বুঝতে দেওয়া যাবে না যে সবাই তার জন্য কষ্ট পাচ্ছে।
সবসময় তার সাথে একটা লোক থাকতেই হবে।

ডাক্তার আরো বললো যে এই কাজটা করেছে তার উদ্দেশ্য রোগীকে ধীরে ধীরে কষ্ট দেওয়া।
যদি সে রোগীকে মারতে চাইতো তাহলে এটা খাওয়াতে পারতো।
বা অন্য কোনো ক্যামিকেল খাইয়ে মারতে পারতো।
কিন্তু সে কেনো এটা তেলের সাথে মিশালো সেটাই বুঝতে পারছি না।

ইরা কাঁদতে কাঁদতে বললো আর এসব বলেন না ডাক্তার সাহেব।
আমার কিছুতেই সহ্য হচ্ছে না।

ইশান তার মায়ের কাছে গেলো।
তার মা কে এভাবে পড়ে থাকা দেখে সে চিৎকার করে উঠলো।
মা ওঠো।
ওঠো মা।
তুমি যদি আমার সাথে কথা না বলো তাহলে আমি কার সাথে কথা বলবো?
আমি কার কোলে ঘুমাবো?
কে আমার চুল টেনে দেবে?
ইশান পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।

দিশা নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো।
কারন তেলটা রোজ সেই মালিশ করে দেয়।
সে কি করে নিজেকে নির্দোষ প্রমান করবে?
তার কথা কে বিশ্বাস করবে?
এটা ভাবতেই দিশা কেঁদে উঠলো।
সে ইশান কে কোনো শান্ত্বনা দিতেও পারছে না।
দিশার খুব খারাপ লাগতে লাগলো।

ডাক্তার জানালো রোগীকে এখানে না রেখে বাসায় নিয়ে গিয়ে ট্রীটমেন্ট করেন।
ওনার ভালো করে সেবা করেন।
যদিও সুস্থ হবেন না আর তবে যত দিন হায়াত আছে ততদিন বেঁচে থাকবেন।

সেই কথা শুনে সবাই পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
কি হয়ে গেলো এটা?

ইশানের মাকে বাসায় আনা হলো।
তার সেবার জন্য একটা নার্স রাখা হলো বাসায়।

দিশা যেই তার শাশুড়ীর রুমে গেলো ইশানের বাবা রেগে গেলো।
তোমাকে এ রুমে আসতে হবে কেনো?
তোমার কোন প্রয়োজন নাই এখানে।

–কি বলছেন বাবা?
মার এখন অনেক সেবার দরকার।
আমাকে থাকতেই হবে সবসময়।

ইরা রেগে গেলো দিশার উপর।
লজ্জা শরম বলতে যদি কিছু থাকতো তাহলে আর এ রুমে আসতে না

দিশা কাঁদতে লাগলো।
তোমরা সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছো কেনো?
আমি কেনো এই কাজ করতে যাবো?
তোমরা বিশ্বাস করো আমি এ কাজ করি নি।

ইরা বললো তাছাড়া এ বাড়িতে বাহিরের কে আছে?
তুমিই তো একমাত্র বাহিরের লোক।

–আমি বাহিরের লোক?
কি বলছো তোমরা?
আমি এ বাড়ির বউ।
তোমাদের মতো আমিও এ বাড়ির একজন সদস্য।

দিশা ইশানের কাছে গেলো।
সবাই কি বলছে তুমি শুনতে পাচ্ছো না?
আমাকে কেনো দোষারোপ করছে এরা?
অন্তত তুমি কিছু বলো।

ইশান কোন উত্তর দিলো না।

ইরা বললো মা তোমাকে সবসময় বকতো।
ইশান তোমার থেকে মা কে বেশি ভালোবাসতো।
তাছাড়া মা যদি জানতো তোমার love marriage এর কথা তাহলে কি হতো?
সেই জন্য হিংসা করে এসব করেছো তুমি।

ইশান কোন কথা না বলে বাহিরে চলে গেলো।

দিশা কাঁদতে কাঁদতে রুমে চলে গেলো।

ইশান সারারাত বাহিরেই থাকলো।
দিশা অনেকবার ফোন দিলো।
কিন্তু ফোন না ধরে অফ করে রাখলো।

সকালবেলা দিশা রান্নাঘরে রান্না করতে গেলো।
কিন্তু গিয়ে দেখে তানিয়া রান্না করছে।

দিশাঃতুমি রান্নাঘরে কি করো?

তানিয়াঃইরা আপা আজ থেকে আমাকে রান্না করতে বলেছে।

দিশাঃকেনো?

তানিয়াঃতা তো আমি জানি না।
ইরা আপা বললো আপনি যেনো রান্নাঘরের আশেপাশে না আসেন।

দিশা ইরার কাছে গেলো।

দিশা কে দেখে ইরা বললো তুমি কি জন্য এসেছো তা আমি ভালো করেই জানি।
শুধু আমি না।
বাবা আর ইশান ও চায় তুমি যেনো সংসারের কোন কাজকর্ম না করো।
খাবারে যদি অন্য কোন ক্যামিকেল মিশিয়ে আমাদের সবাই কে মেরে ফেলো।

দিশা এবার রেগে গেলো।
আপনি কিন্তু এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।
এই বিষাক্ত ক্যামিকেল টা আবার আপনি মেশান নাই তো?

ইরাঃকথাবার্তা সাবধানে বল।
আমি আমার মাকে কেনো এতো কষ্ট দিবো?

দিশাঃকারন আপনার মা তো সারাক্ষণ আপনাকেও বকতেন।
আপনার স্বামীকে অপমান করতেন।

ইরাঃএটা অন্যরকমের বাড়াবাড়ি হচ্ছে দিশা?

দিশাঃকথাগুলো শুনতে কেমন লাগলো?
আমাকে যখন বলো তখন আমারও এইভাবেই লাগে।

দিশা চলে যেতে ধরলো।
কি মনে করে যেনো আবার ফিরিয়ে এলো।
আর ইরা কে বললো তোমার তো আর এক মাস পরেই বাড়ি ছাড়ার কথা ছিলো?
এখন কি ছাড়বে?
না মার সেবা করার অজুহাতে এই বাড়িতে এখন সারাজীবন এর জন্য থেকে যাবে?
আর আরেকটা কথা শোনো,এটা আমার সংসার।
আমার ঘর।
আর আপনার এটা বাবার বাড়ি।
আমার স্বামীর বাড়ি।
তাই অধিকার টা আমার বেশি।
বুঝেছেন?
কোন কিছু বলার আগে ভেবেচিন্তে বলবেন।

ইরা রেগে গেলো।
সে কাঁদতে লাগলো।
আর বললো বাবা আগে বাড়ি আসুক।
সব বলে দেবো।
মা অসুস্থ হওয়ার সাথে সাথে উনি সংসারের মালিক হয়ে বসে আছেন।
তোমার সংসার করা শিখিয়ে দেবো আজ।

দিশা ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো।
সবাই কেনো তাকে এভাবে দোষ দিচ্ছে?

ইশান সারারাত সারাদিন বাহিরেই থাকলো।

রাতের বেলা হঠাৎ ইশান রুমে ঢুকলো।
দিশা বিছানায় শুয়ে আছে।
কিন্তু ইশান বেশিক্ষণ রুমে থাকলো না।
সে চলে যেতে ধরলো।

দিশা তাড়াতাড়ি করে বিছানা থেকে উঠলো।
আর ইশান কে জড়িয়ে ধরলো।
সে কাঁদতে কাঁদতে বললো সারারাত সারাদিন কই ছিলে?
আমি যে তোমাকে নিয়ে টেনশন করতে করতে একেবারে শেষ হয়ে যাচ্ছি।
তুমিও কি আমাকেই সন্দেহ করছো?
তোমার বাড়ির লোক আমার সাথে যা নয় তাই ব্যবহার করছে।
আমাকে রান্নাঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
রান্না করতেও দিচ্ছে না।
আমি তাই রাগ করে সারাদিন কিছুই খাই নি।
তুমি সবাইকে একটু বলে দাও যে আমার সাথে কেউ যেনো আর খারাপ ব্যবহার না করে।

ইশান দিশাকে সরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

দিশাঃকি হলো?
কিছু না বলে আবার কই যাচ্ছো?
আমি কিন্তু আর এসব সহ্য করতে পারছি না।

ইশান তার মায়ের রুমে গেলো।
তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
তার মা চোখ খুললো।

–তুমি ঘুমাও নি মা?
এখনো জেগে আছো?

ইশান লক্ষ্য করলো তার মা কাঁদছে।
তাই সে তার মায়ের চোখের পানি মুছিয়ে দিলো।
তারপর কপালে একটা চুমু দিলো।

তার মাকে জিজ্ঞেস করলো মা তোমার কাকে সন্দেহ হচ্ছে?
তুমি যার কথা বলবে আমি তাকে তোমার চোখের সামনেই খুন করে ফেলবো।
এই বলে ইশান কাঁদতে লাগলো।

ইশান তার মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে পড়লো।

দিশা অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলো।
কিন্তু ইশান এখনো আসছে না কেনো?
তাই সে তার শাশুড়ীর রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে ইশান ঘুমিয়ে পড়েছে।
তাই তাকে আর ডাক দিলো না।
সে ঘরে চলে গেলো।

পরের দিন সকালে তুমুল ঝগড়া লেগে গেলো।
দিশাকে আজকেও রান্না ঘরে ঢুকতে দিচ্ছে না।
তানিয়ার এরকম বাড়াবাড়ি দেখে দিশা রেগে গেলো।
সে রাগ করে বললো তুমি আমাকে বারণ করার কে?
তোমরা সবাই একজোট হয়ে এই কাজ টি করো নি তো?

সেই কথা তানিয়া ইরা কে বলে দিলো।
ইরা রাগ করে এসে দিশাকে একটা চড় মারলো।
মুখ সামলিয়ে কথা বলবে।
তুই আমার মাকে মারতে চেয়েছিস।

দিশা কি বসে থাকার মেয়ে নাকি সেও কষে একটা চড় দিলো।
আমি মারার কোনো চেষ্টাও করি নি।
আর আমি কি পাগল যে নিজে প্রতিদিন তেল মালিশ করে দেই আবার নিজেই সেই তেলে ক্যামিকেল মেশাবো?

ইরা তার বাবা, ইশান কে ডাকতে লাগলো।
দেখে যাও তোমরা।
এই মেয়ের উদ্দেশ্য হলো পুরো বাড়ি দখল করা।
সবাই কে এক এক করে মেরে ফেলা।

ইশান সবকিছু শুনে এতো রেগে গেলো যে সব দোষ মনে হয় দিষার।
সে চিৎকার করে বলতে লাগলো কি হচ্ছে এসব?
আমি কি বাড়ি থেকে বের হয়ে যাবো?
এতো অশান্তি কেনো এ বাড়িতে?
হয় এ বাড়িতে সবাই থাকো তা না হলে চলে যাও।
আমি একটু শান্তি চাই।

দিশা রাগ করে ঘরে চলে গেলো।

দিশা উপুড় হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
হঠাৎ সে তার ঘাড়ে গরম নিঃশ্বাস অনুভব করতে লাগলো।
সে সামনে ঘুরতেই ইশান তাকে জড়িয়ে ধরলো।
তার গলা,ঘাড়ে কিস করতে লাগলো।
দিশা ভাবলো তখন ওভাবে ইশান বকা দিলো দেখে মনে হয় রাগ ভাংগাতে এসেছে।
তাই দিশাও ইশানের আদরে অন্য এক জগতে হারিয়ে গেলো।
হঠাৎ ইশান থামলো।

দিশাঃকি হলো?

ইশান শান্তভাবে নরম গলায় বললো তুমি কেনো মার সাথে এতোবড় অন্যায় করলে?
বলো?

দিশাঃআমি?
আমি করেছি?

ইশানঃতাছাড়া এ বাড়িতে আর কে আছে?

দিশা কাঁদতে লাগলো আর বললো বাড়ির সবাই আমাকে দোষ দিচ্ছে।
তবুও চুপ করেই আছি।
এখন তুমিও এসব বলছো?
তোমরা সবাই চাচ্ছো টা কি?
আমি এখন কি করবো?

ইশান দিশাকে বিছানা থেকে টেনে তুললো আর বললো আমার মাকে ফিরিয়ে দাও।
তুমি ছাড়া এ কাজ আর কেউ করে নি।
কারন তুমি সবকিছু নিয়েই ফাজলামি করো।
তুমি ইচ্ছা করেই সব করেছো।

দিশা কিছুক্ষণ চুপ হয়ে থাকলো।
আর বললো ঠিক আছে মেনে নিলাম এটা আমিই করেছি।
এখন আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত?

ইশান দিশাকে মারতে লাগলো।
আমি জানি তুমি এটা করেছো।।।
এটা তোমারই কাজ।
আজ তোকে আমি মেরেই ফেলবো।

না,না।
মেরে ফেলবো না।
তোর পুরো শরীরে আমি সায়ানাইড ঢেলে দিবো।
যেরকম কষ্ট আমার মা পেয়েছে সেইরকম কষ্ট আমি তোমাকেই দিবো।

দিশা বললো আনো।
তাড়াতাড়ি আনো।
আমার গায়ে কেনো ঢালবে?
আমাকে খাইয়ে দাও।
একবারে মরেই যাই।
আমি এখন সব বুঝতে পারতিছি।
এটা তোমাদের সবার চক্র।
তোমরা আমার সাথে চক্রান্ত করতেছো।
তা না হলে সবাই একজোট কেনো হয়েছো?

ইশান দিশাকে আবার একটা মারলো।
মাথাভর্তি তোর শুধু শয়তানি বুদ্ধি।
তুই অকাম ও করবি আবার তোর বড় বড় কথা।

এটা কি?(এই বলে ছোট্ট একটা বোতল দেখালো)

দিশা বললো Nail Polish Remover.

–এটা কি তোমার?

–হ্যাঁ।

–আচ্ছা ঠিক আছে এটা Nail Polish Remover.
তাহলে এখন একটু Nail এ লাগাও দেখি।

–আমার নখে তো এখন Nail Polish নাই।
এখন কেনো লাগাবো?

ইশান দিশাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিলো।
তুই লাগাবি না কারন এটা Nail Polish Remover না।
এটাই সেই বিষাক্ত সায়ানাইড।
যা আমি আমাদের আলমারিতে পেয়েছি।

কথায় আছে না চোর চুরি করার সময় কিছু না কিছু প্রমাণ রেখে যায়।
তুমি ভুল করে এটা আমার পকেটে রেখেছো।
তুমি নিজে মুখে তো জীবনেও স্বীকার করতে না।

এই বলে ইশান দিশাকে মারতে লাগলো।

দিশার মন মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।
সে ইশানের হাত টেনে ধরলো।
খবরদার!!!!
আমার গায়ে আর হাত দিবি না।
তুই কে রে আমার গায়ে হাত দেওয়ার?
এতো নাটক বা কাহিনী করার কি আছে?
বললেই তো হয় আমাকে আর ভালো লাগে না।
এইভাবে আমাকে না ফাঁসালেও হতো।
আরে বোকা আমি যদি এ কাজটি ঠিকই করতাম তাহলে সেটা আর তেলের ভিতর মিক্স করতাম না।
আর এই জিনিস ঘরেও রাখতাম না।

আচ্ছা তোমরা যখন আমাকে হাতেনাতে ধরেই ফেলেছো তাহলে আমার কি শাস্তি হওয়া উচিত?
দাও আমাকে শাস্তি।

–তোকে মেরে ফেললেও আমার রাগ করবে না।
এখন তোকে আমি এমন একটা শাস্তি দেবো যা তুই জীবনেও কল্পনা করতে পারবি না।
তুই তিলে তিলে মারা যাবি কিন্তু মরবি না।
এই বলে ইশান চলে গেলো।

দিশা ইরার রুমে গেলো।
গিয়ে দেখে তানিয়া আর ইরা গল্প করছে।
দিশা বললো খেলা টা তাহলে ভালোই শুরু করেছো।
আমার সাথে এত বড় অন্যায় করে তোমরা কেউ ভালো থাকবে না।
তোমাদের এমন শাস্তি হবে যা কল্পনার বাহিরে।
আমার আর ইশানের ভালোবাসা তোমাদের সহ্য হয় নি তাই তোমরা এ কাজ করেছো।

ইরা বললো অকাম করার সময় মনে ছিলো না?
এখন ধরা পরে আমাদের দোষ দিচ্ছো?

দিশা খাওয়াদাওয়া সব বন্ধ করে দিলো।
তার একমাত্র ভরসার মানুষ হলো ইশান।
যে তাকে সবসময় আগলিয়ে রাখে।
আজ যখন সেই মানুষটিই তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে সেখানে এ জীবনের মানেই হয় না।
দিশা তবুও ধৈর্য ধরে থাকলো।
যদি ইশান বুঝতে পারে।

কিন্তু ইশান এমন একটা সিদ্ধান্ত নিলো যে দিশা সেটা জীবনেও কল্পনা করে নি।
সে যদি দিশা কে বাড়ি থেকে বের করে দিতো তবুও একটা কথা ছিলো।
সে দিশা কে যদি মেরে ফেলতো সেটাও দিশা হাসিমুখে মেনে নিতো।
কিন্তু ইশান দিশাকে বাড়ির বাহিরে যেতে দিলো না।
আর সবাই কে ঘোষণা দিলো সে দিশার চোখের সামনে তানিয়া কে বিয়ে করবে।
দিশা এই বাড়িতেই থাকবে।
সংসারের সব কাজ করবে।
ইশান মনে করে দিশার জন্য এর চেয়ে বড় শাস্তি আর হতে পারে না।

দিশা এই কথা টা শুনে কিছুক্ষনের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলো।
আর বললো হ্যাঁ তুমি আমার জন্য পারফেক্ট শাস্তির ব্যবস্থা করেছো।
তবে তোমার এই স্বপ্ন জীবনেও পূরন হবে না।
কারণ আমি কোনো দোষ করি নি।
তাই আমার জন্য এই শাস্তি প্রাপ্য না।
আজ তোমাদের সবার আনন্দের দিন।
এই দিন টা না আসলে আমি বুঝতাম ই না কে কেমন?
কার মনে কি চলছে?

তবে দিন আমার ও একদিন আসবে ইশান।
সেদিন আমি মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকবো।
আর তুমি আমার কাছে নত হবে।
তুমি এতো কাঁদবে এতো কাঁদবে যে আমার কিছুই মনে হবে না।
আজ যেমন আমি কাঁদছি তোমরা সবাই হাসতেছো।
সেদিন আমি হাঁসবো তোমরা কাঁদবে।
এই বলে দিশা বাড়ি থেকে বের হতে ধরলো।

ইশান দিশার হাত টেনে ধরলো।
আর বললো কই যাচ্ছো তুমি?
এই বাড়িতে থেকেই তোমাকে তোমার শাস্তি ভোগ করতে হবে।

–আমি থাকবো না এ বাড়িতে।
আমাকে ছেড়ে দাও ইশান।

–না।
তোমাকে আমি মারবোও না,
আর বাড়ি থেকে বের করেও দিবো না।
তুমি এই বাড়িতেই থাকবে।
এই বলে দিশাকে ঘরে বন্দি করে রাখলো।

ইশান তার মায়ের কাছে গিয়ে কাঁদতে লাগলো।
অপরাধ যাই করুক শাস্তি তো তাকে পেতেই হবে।
তাই না মা?
আর মা তোমার কি মনে হয় শাস্তি টা কি ঠিক আছে?

সবাই হয় তো ভাবতেছে এরকম শাস্তি কেনো দিলাম দিশাকে???

কারণ একসাথে আমার দুটো কাজ হলো।
দিশা তার অপরাধের শাস্তিও পেলো।
আর আমি ওকে যে কথা দিয়েছিলাম কোনদিন ওকে চোখের আড়াল করবো না।
ওকে সারাজীবন আগলে রাখবো।
ও যতই অপরাধ করুক মা আমি ওকে অনেক বেশি ভালোবাসি।
ওকে না দেখে আমি কিছুতেই থাকতে পারব না।

ওকে আমি কোনদিন কষ্ট দিবো না সে প্রমিজ ও করেছিলাম।
কিন্তু সেটা আর রাখতে পারলাম না।
ওকে আজ অনেক মেরেছি।
ও নিশ্চয় অনেক কাঁদছে।

দিশা কেনো তোমার সাথে এমন করলো মা?
কেনো?
ও নিজের বিপদ কেনো ডেকে আনলো?
ও কেনো একটিবার আমার কথা ভাবলো না।
ওর অনেক ফাজলামি মেনে নিয়েছি।
কিন্তু এবার তো সে কোন ফাজলামি করে নি।
মারাত্নক অপরাধ করেছে।
আমার মায়ের সাথে অন্যায় করেছে।
আমার মায়ের জীবনের সব আনন্দ কেড়ে নিয়েছে।
ইশান কাঁদতে লাগলো।

তার পাশে আজ কেউ নাই।
সে আর কাকে বিশ্বাস করবে?
যে একমাত্র বিশ্বাসের যোগ্য ছিলো সেই যখন বিশ্বাসঘাতকতা করলো তখন আর কে বুঝবে তার কষ্ট?

সবাই সবার মতামত অবশ্যয় জানাবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে