Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০২
ইশান আর দিশার বিয়ে হয়ে গেলো।
সবাই দিশা কে ইশানের রুমে বসে রাখলো।
কিছুক্ষন পর ইশান রুমে ঢুকলো।
দিশা বড় একটা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
ইশান দিশার সাথে কোন কথা না বলে ঘোমটা টা খুলে ফেললো।
দিশা আবার ঘোমটা দিলো।
ইশান বিরক্ত হয়ে আবার খুলে ফেললো।
দিশা এবার রেগে গিয়ে বললো আপনি বার বার ঘোমটা ফেলে দিচ্ছেন কেনো?
সমস্যা কি আপনার?
ইশান বললো এটা আমার রুম।
আর রুমে তুমি আর আমি ছাড়া কেউ নেই।
দিশাঃতো কি হইছে?
তাই বলে আপনি এইভাবে ঘোমটা সরাবেন?
ইশান দিশার একেবারে কাছে গেলো।
ইশানঃএবার নাটক করা বাদ দাও।
অনেক হয়েছে।
দিশাঃকিসের নাটক?
আর আপনি জানেন না নতুন বউ এর ঘোমটা ধীরে ধীরে সরাতে হয়।
ইশান হাসতে লাগলো।
তুমি নতুন বউ???
দিশাঃমানে কি?
আপনার কি মনে হয় আমার আগেও বিয়ে হয়েছে?
ইশানঃপ্লিজ এখন একটু চুপ করো।
আমি ঝগড়া করার মুডে নাই কিন্তু।
দিশাঃআমি কখন ঝগড়া করলাম?
ইশানঃতার আগে বলো তোমাকে আমি এগুলো শিখিয়েছি?
আর কে বলেছে তোমাকে এসব বলতে?
দিশাঃআপনি এসব কি বলছেন?
আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
ইশানঃআবার আপনি আপনি করছো?
দিশাঃস্বামীকে তো আপনি করেই বলতে হয়।
ইশান এবার জোরে করে বললো দিশা এবার একটু চুপ করো।
দিশাঃচুপ করবো কেনো?
ইশান দিশার মুখ টিপে ধরলো।
আর বললো তোমাকে বলেছিলাম তোমার বাড়ির কেউ যেনো এগুলো বলে।
আর তুমি নিজে এসে বলতে গেলে কেনো?
এমন ভাবে বললে যা আমি নিজে শুনেই অবাক হয়েছি।
দিশাঃবাড়ির কেউ এসব কথা বলার সাহস পাচ্ছিলো না।
তাই নিজেকেই বলতে হলো।
তাছাড়া তোমরা কতগুলো গিয়েছো হিসেব করেছো একবার?
এতো টাকা খরচ করে আমার বাবা খাওয়ালো আর তোমার মা বলে কিনা পাত্রী পছন্দ হয় নি।
তাই চুপ করে থাকতে পারি নি।
নিজেই নিজের বিয়ের ব্যবস্থা করেছি।
ইশানঃতোমার মাথায় আসলেই বুদ্ধি নেই।
মাথামোটা কোথাকার।
এখন যে মা ভাবলো তুমি বেয়াদব একটা মেয়ে।
আদবকায়দা জানো না।
এখন মার মন জয় করবে কি করে?
দিশাঃসেটা না হয় আমার উপরই ছেড়ে দাও।
ইশানঃএতো সহজ না বুঝলে?
দিশাঃতোমার মতো বদমেজাজি ছেলে কে যদি কন্ট্রোল এ আনতে পারি তাহলে তোমার মা কে পারবো না?
ইশানঃআমি বদমেজাজি?
আর আমি তোমার কন্ট্রোলে কবে আসলাম?
কি বুঝাতে চাচ্ছো?
দিশাঃকিছু না।
তুমি কি ঝগড়া করেই রাত টা শেষ করবে?
ইশানঃতুমি যে ব্যবহার দেখিয়েছো তাতে তো আমার মাথায় ঘুরছে।
না জানি আমার পরিবারের বাকি সব সদস্যদের কি হচ্ছে?
এই বলে ইশান চলে যেতে ধরলো।
দিশাঃআবার কই যাচ্ছো?
ইশানঃমার সাথে আরেকবার দেখা করে আসি।
দিশাঃএখন তোমার মা হয় তো ঘুমাইছে।
ডিস্টার্ব করার কি দরকার?
ইশানঃতুমি বুঝবে না এসব।
ইশান চলে গেলো।
ইশানের মা কাঁদতেই আছে।
মাঝে মাঝে ইশান তার মা কে শান্ত্বনা দিচ্ছে।
মা কেঁদে আর কি হবে?
বিয়ে তো হয়েই গেছে।
তবে কথা দিচ্ছি এই মেয়েটাকে আমি অনেক ভদ্র একটা মেয়ে বানাবো।
বড়দের যাতে সম্মান করে কথা বলে সেগুলো শিখিয়ে দেবো।
ইশানের বাবা বললো আমার বিশ্বাস ইশান পারবে।
ইশানের মা ইশানের বাবার কথা সহ্য করতেই পারছে না।
তুমি চুপ করো।
একটা কথাও বলো না।
সব দোষ তোমার।
তুমি কেনো খোঁজখবর না নিয়েই মেয়ে দেখতে গেলে?
এমন বেয়াদব মেয়ের সাথে আমার ছেলেটা কি করে থাকবে?
ইশানের খালা এগিয়ে আসলো।
আপা এটা কি হলো?
আমার মেয়েটার এখন কি হবে?
তুই তো বলেছিলি এমনি শুধু মেয়ে দেখতে যাবো।
কিন্তু এরা তো বিয়ে টাই দিয়ে দিলো।
আমার মেয়ে কে কার সাথে এখন বিয়ে দেবো?
ইশানের মা বললো আমি কি করে জানি যে এরা জোর করে বিয়ে টাই দিয়ে দেবে?
ইশানের খালু বললো আমরা এতো গুলো মানুষ এসে কিছুই করতে পারলাম না।
সবই কপাল।।।
ইশানের মা আবার কেঁদে উঠলো।
ইশান তার মা কে জড়িয়ে ধরে আছে।
ইশানের বাবা বললো তোর মায়ের কাছে আমি আছি।
তুই দিশার কাছে যা।
ইশানের মা চিৎকার দিয়ে উঠলো আমাকে একবার শুধু ধরে দেখো?
খবরদার ধরবে না।
ইশানের বাবা বললো তুমি আমার উপর রাগ দেখাচ্ছো কেনো?
আমি কি করেছি?
ইশান তার বাবা কে বললো তুমি যাও তো এখন।
দেখছো না মায়ের মন খারাপ।
ইশানের বাবা ইশান কে বললো মনে হচ্ছে বিয়ে টা আমি করেছি।
তোরা আমার উপর রাগ দেখাচ্ছিস কেনো?
ইশান তার বাবা কে বললো বাবা প্লিজ এখন কথা বলো না।
ইশানের বাবা বুঝতে পারলো না কিছু।
তার দোষ কোথায়।
সবাই তাকে দোষারোপ করছে কেনো?
ইশানের বাবা তার জামাই এর কাছে গেলো।
তোমার জন্য আমি ইশানের মায়ের বকা শুনছি।
তুমি কেনো বলছো না এই মেয়ের খবর তুমি আমাকে দিয়েছো।।।
ইশানের দুলাভাই বললো বাবা আপনার হাতে পায়ে ধরি।
আমার নাম বলে দিয়েন না।
শাশুড়ী আম্মা এমনিতেই আমাকে গাধা বলে।
আর যদি শোনে এই মেয়ের খোঁজ আমি দিয়েছি তাহলে এবার আর বাড়িতেই উঠতেই দেবে না।
ইশান তার মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।
তবুও তার মায়ের ঘুম আসছে না।
ইশানের বাবা ভয়ে আর কোন কথাই বললো না।
হঠাৎ ইশানের বাবা বলে উঠলো মেয়েটা ঘরে একা একা আর কতক্ষণ বসে থাকবে?
ইশান তুই দিশার কাছে যা।
ইশান বললো বাবা তোমার কবে বুদ্ধি হবে?
আর তুমি মাকে কবে বুঝবে?
মা কে এই অবস্থায় রেখে আমি কি করে ঘরে যাই?
ইশানের মা কাঁদতে কাঁদতে বললো তোর বাবা এমনি।
এতোবছর যে কি করে পার করলাম তা আমিই জানি।
অন্য কোনো মেয়ে হলে জীবনেও থাকতো না।
ইশানের বাবা বললো কথাটা ঠিকই বলেছো।
কিন্তু সেটা তোমার জায়গায় আমার নাম হবে।
ইশানের মা বললো কি বললে তুমি?
ইশানের বাবাঃকিছু না।
এবার ছেলেকে রুমে যেতে দাও।
ঘরে নতুন বউ একা একা বসে আছে।
ইশানঃবাবা তুমি এমন করছো কেনো?
বউ বসে আছে তো কি হইছে?
আগে মায়ের সেবা করি।
তারপর বউ।
ইশানের মা বললো বাবা তুই এখন রুমে যা।
আর খবরদার ওই মেয়ের সাথে বেশি একটা কথা বলবি না।
বেয়াদব মেয়ে একটা।
ইশানঃঠিক আছে মা।
তুমি ঘুমাও।
আমার চিন্তা করো না।
এই বলে ইশান রুমে চলে গেলো।
কিন্তু গিয়ে দেখে দিশা ঘুমাইছে।
ইশান দিশাকে ডাকতে লাগলো।
এই দিশা,,,,,,,
ওঠো,,,,
ঘুমায়ছো নাকি?
দিশার কোন সাড়াশব্দ নাই।
ইশান আবার দিশাকে ডাক দিলো।
দিশা একটু নড়েচড়ে শুইলো।।।
আর ঘুমন্ত কন্ঠে বললো কি হয়েছে?
ইশানঃকাপড় চেঞ্জ নাই করতেই ঘুমায়ছো কেনো?
দিশাঃসকালে করবো।
এখন আর ডিস্টার্ব করো না তো।
খুব ঘুম পাচ্ছে।
এই বলে দিশা ইশানের কোলের মধ্যে শুয়ে পড়লো।আর ইশানের হাত টা তার মাথায় দিলো।
আর বললো চুলগুলো বুলিয়ে দাও।
ইশান তাই আর ডিস্টার্ব করলো না।
দিশার চুল গুলো বুলিয়ে দিলো।
দিশা ঘুমিয়ে গেলো।
ইশান দিশার কপালে একটা কিস করলো।
পাগলি একটা মেয়ে।
এতো কথা যে কিভাবে বলে?
হায় আল্লাহ আমার পাগলী টাকে একটু বুদ্ধি দাও।
আর সে যেনো আমার মায়ের মন জয় করতে পারে।
আজ থেকে সারাজীবনের জন্য তাকে কাছে পেলাম।
পাঁচ বছরের রিলেশন আজ পূর্নতা পেলো।
সৃষ্টিকর্তার কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া।
এই বলে আবার একটা কিস করলো কপালে।
ইশান যে কখন ঘুমাইছে নিজেও জানে না।
সকালবেলা ইশানের বোনের ডাকে দিশার ঘুম ভেংগে গেলো।
তিনি শুধু বারবার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছেন।
দিশা দরজা খুলে দিলো।
ইশানের বোন দিশা কে বললো তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
পাশের বাসার আন্টিরা দেখতে এসেছে।
দিশা বললো কি দেখবে?
ইশানের বোন বললো তোমাকে দেখবে?
দিশাঃআমাকে দেখার কি আছে?
ইশানের বোন এবার একটু রাগ হলো।
এতো কথা বলো কেনো তুমি?
তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে এসো।
দিশা রেডি হয়ে আসলো।
ইশানের বোন বললো খবরদার কারো সাথে তর্ক করবে না।
যা প্রশ্ন করবে শুধু তারই উত্তর দেবে।
দিশা মাথা নাড়লো।
পাড়াপ্রতিবেশি মহিলারা বউ দেখার জন্য এসেছে।
দিশা অনেক অবাক হলো।
সবাই এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো?
মনে হচ্ছে কোরবানির পশু দেখতে এসেছে?
দিশা চুপ করেই থাকলো।
হঠাৎ করে এক মহিলা দিশার মাথার কাপড় সরিয়ে চুল দেখতে লাগলো।
দেখি কত বড় চুল?
ওমা,,,,,
চুল দেখি শুকনা।
গোসল করে নি নতুন বউ?
দিশার খুব রাগ হলো।
কি ধরনের অভদ্রতা এসব?
সে শান্তভাবে বললো আমি দেরীতে উঠেছি।
ফ্রেশ না হতেই আপনারা দেখার জন্য এসেছেন।
তাই গোসল না করেই শুধুমাত্র কাপড় টা পরে চলে এসেছি।
ছিঃ ছিঃ কি বলে রে বাবা!
ইশানের মা কোথায় তুমি?
তোমার ঘর থেকে তো রহমত বরকত উঠে গেলো।
ইশানের বোন বললো মা কে ডাকছেন কেনো?
মার শরীর ভালো না।
আর দিশা এমনি বললো যে গোসল করে নি।
আপনারা এখনো মান্দাতার আমলেই পড়ে আছেন।
ও গোসল করেছে।
আর চুল গুলো হেয়ার ড্রাইয়ার দিয়ে শুকায়ছে।
তাই শুকনা।
তাই না দিশা?
দিশা কোন উত্তর না দিয়ে তার ননদের দিকে তাকালো।
দিশার ননদ বললো আপনাদের সবার দেখা হয়ে গেছে?
দিশা এখন চলে যাবে।
হঠাৎ এক মহিলা বললো তোমার বাবা রা কি কি দিলো?
দিশাঃবুঝলাম না।
——— টাকা পয়সা কিছু দিলো না?
ঘরের আসবাবপত্র?
দিশাঃটাকা পয়সা দেবে কেনো?
আমার শশুড় কি ফকির নাকি?
তাছাড়া আমি তো কোন অকেজো পন্য নই।
তাই টাকা দিয়ে বিক্রি করে দিবে।
—বা রে বা, নতুন বউ এর এতো কথা।
দিশাঃকি বললাম আমি?
দিশার ননদ বললো দিশা তুমি ঘরে চলে যাও।
দিশা বললো আপু দাঁড়ান একটু।
আমার আরো কথা আছে।
আমি হলাম আমার বাবার অনেক আদুরে মেয়ে।
আমার বাবার অনেক বড় এক মূল্যবান সম্পদ।
সেই মূল্যবান জিনিষ টাই তো বাবা দিয়ে দিছে।
আর কি দেবে?
পাড়াপ্রতিবেশি আন্টিরা বিড়বিড় করতে লাগলো।
ইশানের মা এ কোন বউ নিয়ে এলো।
এমন বেয়াদব বউ তো আমাদের এলাকায় একটাও নাই।
দিশার ননদের ভয় হতে লাগলো।
কখন যে এই কথাটা তার মায়ের কানে যায়।
এতো করে বললাম চুপচাপ থাকবে।
তা না করে শুধু কথার পিঠে কথা বলে।
মা এইজন্য মনে হয় Love Marriage করতে দেয় নি ইশান কে।
কারন এই বউ গুলো অনেক পাকা হয়।
স্বামী আগে থেকেই চেনা থাকে তাই কথা বলতে ভয় পায় না।
কিন্তু দুঃখের বিষয় তার ছেলে Love Marriage ই করেছে।
মা যেদিন শুনতে পাবে সেদিন যে কি হবে সৃষ্টিকর্তায় তা ভালো জানে।
চলবে,,,,,,,,,,