Love Marriage
মুমতাহিনা জান্নাত মৌ
পর্ব ০১
——— পাত্রী পছন্দ হয় নি ভালো কথা।
যাওয়ার আগে খরচের টাকা টাকা টা দিয়ে যান।
——— কিসের খরচের টাকা?
গোষ্ঠীসহ এসে যে খেয়ে গেলেন সেই টাকা কে দেবে?
বাবা বাজার করেছে পনেরো হাজার টাকার।
আর আমার মা,চাচীরা যে পরিশ্রম করে রান্না করেছে তার দাম পাঁচ হাজার টাকা।
আর হ্যাঁ অবশ্যয় আমার টাকাটাও দিয়ে যাবেন।
পার্লারে যাওয়া আসা সহ সব মিলে খরচ হয়েছে পাঁচ হাজার টাকা।
সর্বমোট পঁচিশ হাজার টাকা।
পাত্রীর মুখে এমন কথা শুনে সবাই অবাক।
বিশেষ করে পাত্রের মা।
পাত্রীর নাম ছিলো দিশা।
পাত্রের মা তার স্বামীকে শুধু চিমটি কাটছে।
আর ফিসফিস করে বলছে ওঠো না কেনো?
আর এক মুহুর্ত ও থাকা যাবে না।
পাত্রের বাবা উঠতে ধরলো।
সেই কথা শুনে দিশা বললো আংকেল আগেই ওঠা যাবে না।
আগে আমার দাবী মানতে হবে।
পাত্রের বাবা বললো আমরা তো এতো টাকা সাথে করে আনি নি।
দিশা তখন বললো তাহলে আজকেই আপনার ছেলের সাথে আমার বিয়ে দিতে হবে।
এখন ভেবে দেখুন কি করবেন?
পাত্রের মা হঠাৎ করে বলে উঠলো এখানে ভাবার কি আছে?
তোমার সাথে তো আমার ছেলের জীবনেও বিয়ে দেবো না আমি।
দিশা বললো তাহলে গুনেগুনে তিরিশ হাজার টাকা দিন।
একটা টাকা কম দিলে হবে না।
পাত্রের বাবা বললো মা তখন না পঁচিশ হাজার টাকার কথা বললে?
দিশা বললো আংকেল আমি যে সেজেগুজে এতোক্ষন ধরে বসে আছি আপনাদের সামনে তার কি কোনো মূল্য নেই?
পছন্দ হোক বা না হোক খুশি মনে কিছু তো দিবেন।
তাই এর জন্য পাঁচহাজার ধরেছি।
পাত্রের মা রেগে গেলো।
আমরা একটা টাকাও দেবো না।
দেখি তুমি কি করো?
এই বলে তিনি তার স্বামীকে আবার একটা চিমটি দিলেন।
উঠতেছো না কেনো?
সামান্য একটা মেয়েকে দেখে কেনো ভয় পাচ্ছো?
পাত্রের বাবা বললো আমি এখন কি করবো?
মেয়েটা খুব সিরিয়াস মনে হচ্ছে।
হয় টাকা দিতে হবে তা না হলে তোমার ছেলের সাথে বিয়ে দিতে হবে।
পাত্রের মা তার স্বামীর দিকে এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো?
কি বললে তুমি?
পাত্রের বাবা বললো আমি কিছু জানি না।
তুমি যেভাবে পারো ম্যানেজ করো।
আমি এর ভিতর নাই।
পাত্র চুপ করে বসে আছে।
পাত্রের নাম ছিলো ইশান।
ইশান দিশার এমন সাহস দেখে খুব অবাক হলো।
ছেলে হয়েও তো তার এতো সাহস নেই।
দিশার কথাবলার স্টাইল দেখে সে পুরাই পাগল হয়ে গেলো।
আর এতো সুন্দর করে সেজেছে মনে হচ্ছে আজকেই বিয়ে তার।।।
দেখতে যেমন সুন্দর,তেমনি তার অনেক গুন।
মা যে কেনো মেয়েটাকে পছন্দ করছে না ইশান বুঝতে পারছে না।
ইশানের মা এবার ইশান কে বললো তুই কিছু বল?
চুপ করে আছিস কেনো?
ইশান লজ্জাবতী মেয়েদের মতো নিচ মুখ হয়ে বললো আমি কি বলবো?
ইশানের মা সেই কথা শুনে আরো রেগে গেলো।
কি বলবি মানে?
মেয়েটা যে আমাদের কে ফাঁদে ফেলছে,
জোর করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তুই তবুও কিছু বলবি না?
ইশান তখন বললো উনি তো বিয়ের প্রস্তাব ও দিয়েছেন?
আমরা না হয় সেই শর্তটায় মেনে চলি।
ইশানের মা সেই কথা শুনে ইশানের কান টেনে ধরলো।
তুই এতো কিছুর পরও এই মেয়েটাকেই বিয়ে করতে চাচ্ছিস?
ইশান বললো লাগছে আমাকে।
ছাড়ো।
ইশানের মা ছেড়ে দিলো কান টা।
ইশান তখন বললো আমার কি দোষ?
আমি কি পাত্রী দেখতে আসতে চেয়েছি?
কত করে বললাম আমি পাত্রী দেখতে যাবো না।
তোমরা যাকে পছন্দ করে আনবে তাকেই বিয়ে করবো।
তবুও জোর করেই আমাকে আনলে।
এখন তো আমাকে এই মেয়েকেই ভালো লেগেছে।
আমার গার্লফ্রেন্ড এর সাথেও বিয়ে দিচ্ছো না।
এখন এ মেয়ে টাকে ভালো লাগলো তাকেও তোমাদের পছন্দ হচ্ছে না।
ইশানের মা বললো এই মেয়ে তোর কিভাবে পছন্দ হলো?
যে বড়দের সম্মান করতে জানে না।
ছিঃ তোর চয়েচ এতো খারাপ?
না জানি তোর গার্লফ্রেন্ড টা আরো কত বেয়াদপ?
এই কথা শুনে ইশানের বাবা ইশানের মা কে বললো ছেলে কে তো যেকোন একটা মেয়ের সাথে বিয়ে দিতেই হবে।
ছেলের ও যখন চয়েচ হয়েছে,
আবার মেয়েটাও বিয়ে করতে চাচ্ছে তাহলে বিয়ে তে রাজি হওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
ইশানের মা মাথায় হাত দিয়ে কাঁদতে লাগলো।
তোমরা নিজের মানুষ ই আমার বিপক্ষে চলে যাচ্ছো।
এখন তো শত্রুপক্ষ আরো শক্তিশালী হলো।
তুমি তোমার ছেলেকে এখানেই বিয়ে করাও আমি চললাম।
এই বলে ইশানের মা চলে যেতে ধরলো।
দিশা তাকে আটকালো।
না,না,আন্টি যাওয়া যাবে না।
আগে আমার দাবী মানতে হবে।
ইশানের মা আরো জোরে কাঁদতে লাগলো।
তিনি ইশানের বাবা কে বললেন তোমার কাছে কত টাকা আছে?
ইশানের বাবা বললো একটা টাকাও নাই।
ইশানের মা রেগে গেলো।
টাকা নেই মানে?
এতোদিন পকেটে এতো টাকা থাকে আর আজ ফকিরের মতো টাকা না নিয়েই মেয়ে দেখতে এসেছো?
ইশানের বাবা বললো মিষ্টি যে নিলাম দশ কেজি সেখানেই সব শেষ হয়েছে।
ইশানের মা বললো এতো করে বললাম এতো গুলো মিষ্টি নাও না।
তবুও শুনলে না।।।
এখন টাকা দিতে না পারলে এই বদমায়েশ মেয়েটার সাথেই আমার ছেলেকে বিয়ে দিতে হবে।
ও বাবা রে কি হবে এখন?
আমার ছেলের জীবন টা শেষ।
কার কুনজর লেগেছে বাবা।
ইশানের মা ইশানের গায়ে থু থু ছিটিয়ে দিলো।
বাবা তোর জন্য ভালো বউ আনতে পারলাম না।
আমাকে মাফ করে দিস।
তোর বাবা কে কত বললাম আমার বোনের মেয়ে তানিয়া কে দিয়ে বিয়ে করাও।
উনি তো শুনলেনই না।
এখনকার মেয়েরা কত বিপদজনক দেখেছো?
আর তার সাথে মেয়ের মা বাবারাও।
মেয়েকে ব্যবসায় নামিয়ে দিয়েছে।
এখন কি করি?
ইশান বললো মা আমার কাছে পাঁচ হাজার আছে।
ইশানের মা দৌঁড়ে ইশানের কাছে গেলো দে দে টাকা টা।
এই বলে তিনি টাকা টা নিয়ে দিশার হাতে দিলো।
আর বললো বাকি টাকা পরে দিয়ে যাবে।
দিশা বললো আমি বাকির ব্যবসা করি না।
ইশানের মা বললো এই ব্যবসা কত দিন ধরে করছো?
দিশাঃআজকেই ফাস্ট।
আপনার ছেলের সাথে বিয়ে টা না হলে ভাবছি এই ব্যবসা টাই continue করবো।
বউ সাজার শখও মিটবে।।
টাকাও কামাই হবে।
ইশানের মা কাঁদতে লাগলো।
এই কোন চক্ররে পড়লাম রে?
তিনি ইশানের বাবা কে বললেন এই মেয়ের খোঁজ কোন ঘটকে দিয়েছে?
এরে কাছে পেলে চিবিয়ে চিবিয়ে খাইতাম।
ইশানের বাবা তার জামাই এর দিকে তাকালো।
তার জামাই হাত জোড় করে বললো তার নাম যেনো না বলে।
কারন ইশানের দুলাভাই এই মেয়ের কথা বাসার সবাই কে বলেছে।
সেই কথা শুনে সবাই দিশা কে দেখতে এসেছে।
ইশান রা আসার সাথেই আগে খাওয়াদাওয়া করানো হয়েছে।
তারপর মেয়েকে সবাই মিলে অনেক প্রশ্ন করেছে।
দিশার উত্তর শুনে ইশানের মা সবার সামনেই বলে দিয়েছে এ মেয়ে তার পছন্দ হয় নি।
কিছুতেই তার ছেলের বউ সে হতে পারবে না।
ইশানের দাদী প্রশ্ন করেছে একটু হেঁটে দেখাও তো?
দিশা বললো আমি তো পায়ে হেঁটেই এখানে এসেছি?
তখন দেখেন নি?
তাহলে এখন হাঁটতে বলছেন কেনো?
ইশানের বাবা বললো মা তুমিও না সেই আগের যুগে পরে আছো।
এগুলো আগে দেখতো।
এখন এগুলো কে মানে?
ইশানের মা ইশানের বাবার দিকে তাকালো।
ইশানের বাবা ভয় পেয়ে বললো আর কোন কথাই বলবো না।
তোমরাই প্রশ্ন করো।
আর তোমরাই বিচার করো।
ইশানের খালা প্রশ্ন করেছে মা তুমি কি রান্না করতে পারো?
দিশা উত্তর দিয়েছে আমি কি কাজের মেয়ে তাই রান্না করতে পারবো?
ইশানের খালা বললো শুধু কি কাজের মেয়ে হলেই রান্না শিখতে হয়?
মেয়ে হলে তাকে রান্না শিখতেই হবে।
দিশাঃকেনো শিখবো রান্না?
কি দরকার?
তাছাড়া মা তো আছেই।
ইশানের খালাঃযখন বিয়ে হবে তখন তো আর মা থাকবে না।
নিজেকেই তো সব কিছু করতে হবে।
দিশাঃমা না থাকলো শাশুড়ী মা তো থাকবে।
তখন তিনি রান্না করে খাওয়াবেন।
আমার মা যদি সারাবছর রান্না করে খাওয়াতে পারে শাশুড়ী মা কেনো খাওয়াবে না?
ইশানের মা রেগে গেলো সেই কথা শুনে।
তিনি অনেক কষ্টে তার রাগ কন্ট্রোল করলেন।
তারপর বললেন ঠিক আছে সবই বুঝলাম।
কিন্তু তোমার বাবা মা কি তোমাকে কোন ভদ্রতা শেখায় নি?
এভাবে বড়দের মুখে মুখে তর্ক করছো?
দিশা বললো আন্টি উচিত কথা বললেই কি সে অভদ্র হয়ে যায়?
যেটা বাস্তব আমি সেটাই বলেছি।
ইশানের মা তখন বললো তোমরা ওঠো সবাই।
মেয়ে আমার পছন্দ হয় নি।
ইশানের বাবা বললো আমি কয়েকটা প্রশ্ন করি?
দিশাঃজি অবশ্যয়?
ইশানের বাবাঃতুমি চা বানাতে পারো মা?
দিশাঃযে চা টা এখন খাচ্ছেন সেটা আমিই বানিয়েছি।
এখন আপনিই বলুন পারি কিনা?
ইশানের বাবা বললো ফাস্ট ক্লাস চা।
খুব সুন্দর হয়েছে।
এই মেয়েকে ঘরের বউ করায় যায়।
ইশানের মা তার স্বামীকে বললো বাসায় যেতে দাও শুধু তোমাকে চায়ের বালতি টে ডুবে রাখবো।
চা ভালো হলেই হবে নাকি?
মেয়ের অন্য দিক ভালো না?
ইশানের মা তার জামাই কে বললো তুমিও টাকা আনো নি?
তার জামাই বললো মা আমি মানিব্যাগ টা ভুলে রেখে আসছি।
ইশানের মা বললো তুমি আসলেই একটা গাধা।
এইভাবে টাকা না নিয়ে তোমরা কি করে মেয়ে দেখতে এসেছো?
হঠাৎ ইশানের খালু বললো আপা আমার কাছে দশ হাজারের মতো হবে।
দিশা বললো হবে না হবে না।
পুরো তিরিশ হাজার চাই আমার।
ইশানের মা বললো আমি মামলা করবো তোমাদের নামে।
দিশাঃসেটা পরে দেখা যাবে।
তাড়াতাড়ি আপনাদের সিদ্ধান্ত জানান।
ইশানের বাবা বললো আমাকে শুধুমাত্র দশ মিনিটের জন্য বাহিরে যেতে দাও।
আমি আমার ফোনটা বিক্রি করে তোমাকে পুরো টাকা দিয়ে দেবো।
দিশাঃসেটাও হবে না।।
এখনি দিতে হবে।
তা না হলে তো অন্য আরেকটা অপশন তো আছেই।
ইশানের দুলাভাই অনেক সাহস নিয়ে তার শাশুড়ী আম্মাকে বললো আম্মা এখন কি করার আছে?
ভাগ্য কে মেনে নিতেই হবে।
ভাগ্যের উপর আমাদের তো কোনো হাত নেই।
ইশানের বোন ও এগিয়ে এলো মা এটাই মনে হয় আল্লাহর ইচ্ছা।
দেখতেই তো পারছো কিভাবে বিপদে পড়লাম?
এখন এই বিয়ে টা মেনে নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপাই নাই।
ইশানের মা ইশান কে বললো তোর কি মতামত?
তুই তোর গার্লফ্রেন্ড কে বিয়ে করবি?
না এই মেয়েটাকে?
ইশান বললো মা তুমি যখন একাবার না করেছো তখন আমি সেই কাজ কিভাবে করি?
তুমি যেহেতু প্রেম করে বিয়ে করা পছন্দ করো না তাই আমি আমার ভালোবাসার মানুষ কে সেই কবে বিসর্জন দিয়েছি।
এখন তোমরা সবাই মিলে যাকে দিয়ে করাবে তাকেই বিয়ে করবো আমি।
ইশানের মা রেগে গেলো।
সোজা কথা বল।
হ্যাঁ বা না।
ইশান একটু ঢোক গিললো আর বললো যে পক্ষে লোকজন বেশি সেই পক্ষকেই তো সমর্থন করা উচিত।
ইশানের মা বললো ও তুই ও এদের পক্ষেই।
তাহলে ঠিক আছে।
সবার যখন এই মেয়েটাকেই পছন্দ তাহলে এর সাথেই বিয়ে দাও।
ইশানের খালা আর খালু বললো আপা কি বলছো এসব?
এই মেয়ের সাথে ইশানের বিয়ে দাও না খবরদার।
তোমার জীবন একেবারে শেষ করে দিবে।
ইশানের মা বললো তাছাড়া আর উপাই নাই রে বোন।
ইশান আবার এই সুযোগে তার প্রেমিকা কে বিয়ে করতে চাইবে।
প্রেমের বিয়ে আমি জীবনেও মেনে নেবো না।
ইশানের বাবা বললো ঠিক বলেছো তুমি।
এই মেয়েকে বিয়ে করা ছাড়া তো আর উপাই দেখছি না।
ইশানের মা রেগে গিয়ে বললো তুমি চুপ করো।
তোমার জন্যই এমন হলো।
শেষমেষ অভদ্র একটা মেয়ের সাথে ছেলের বিয়ে দিতে হচ্ছে।
বাসায় গিয়ে এর বিচার করবো আমি।
তুমি কার কথা শুনে এই অভদ্র ফ্যামিলি তে মেয়ে দেখতে এসেছো?
এখন কি হবে আমার?
পাশের বাসার ভাবী টাকেই কি বলবো এখন?
কত বড় মুখ করে বলেছি অনেক বড় ফ্যামিলিতে ছেলের বিয়ে দেবো।
আর মেয়ে তো হবে সেই রকমের ভদ্র।
ইশানের মা আবার কাঁদা শুরু করলো।
চলবে,,,,,,,,,,,,,,,,
ভালো লাগলে অবশ্যয় লাইক এবং কমেন্ট করবে সবাই।