#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 08
জান্নাত চোখ মেলে তাকাতেই একরাশ চিন্তা নিয়ে আবির ওর কাছে এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– এখন কেমন লাগছে? ঘুম হয়েছে ঠিক মতো?
জান্নাত ওর মুক্তার মতো নয়ন জোড়া নিয়ে আবিরের দিকে তাকায়৷ ও মুহূর্তেই খুব লজ্জা পেয়ে যায় আবিরকে এতটা কাছে দেখে৷ সাথে সাথে ওর কপালে একটু ব্যথাও অনুভব করে। তাই ভ্রুকুচকে যায় ব্যথায়। জান্নাত কপালে হাত দিলে আবির আবার জিজ্ঞেস করে উঠে,
– বেশি ব্যথা করছে কি?
~ হঠাৎ একটু ব্যথা করে উঠলো। তবে এখন ঠিক আছি। আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ৷ (লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে)
আবির জান্নাতের কাছ থেকে সরে এসে ওর ফোনটা নিয়ে জানালার কাছে এসে রিয়াদকে কল দেয়৷ এই ফাঁকে জান্নাত আস্তে আস্তে উঠে বসে৷ আবিরের বিশাল বড়ো রাজকীয় রুমখানা দেখে জান্নাত হা করে বিষ্ময়কর ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে৷ ও শুনছে আবির ফোনে বলছে,
– ওর ঘুম ভেঙেছে৷ কপালে নাকি ব্যথা করছে। তুই তাড়াতাড়ি ঔষধ নিয়ে চলে আয়৷ একদম দেরি করবি না৷.. হুম আয়৷
জান্নাত অজান্তেই মুচকি হেসে দেয় আবিরকে এত চিন্তিত দেখে৷ ও ভাবতেও পারে নি এত বড়ো একটা সেলেব্রিটি মানুষের কাছে শেষমেশ ওর ঠাই হবে৷ এ যেন অবিশ্বাস্য ব্যাপার। আবির কথা শেষ করে ঘুরতেই দেখে জান্নাত উঠে বসেছে৷ ও দ্রুত ওর কাছে এসে অস্থির কণ্ঠে বলে,
– আরে আরে উঠেছো কেন? তুমি না অসুস্থ? শুয়ে থাকো। একটু পরই ডাক্তার আসছে৷
~ আপনি শান্ত হন৷ আমি এখন একদম ভালো আছি৷ আসলে আমি একটু…(জান্নাত কেমন জানি লজ্জা পাচ্ছে)
– তুমি কি? বলো। প্লিজ একদম সংকোচ করবে না বলো।
~ একটু ওয়াশরুমে যাবো। (মাথা নিচু করে লজ্জাসিক্ত কণ্ঠে বলল)
– ওহ! সরি সরি। ওই যে ওয়াশরুম। যাও কোন সমস্যা নেই।
~ ধন্যবাদ।
জান্নাত বেড ছেড়ে তড়িঘড়ি করে উঠে দাঁড়াতেই সাথে সাথে ওর মাথা ঘুরানি দেয়৷ ও নিজেকে সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নিলে আবির খপ করে ওকে ওর বাহুডোরে ধরে ফেলে। জান্নাত এখন সম্পূর্ণ আবিরের সাথে মিশে আছে। আবির চিন্তিত স্বরে দ্রুত বলে উঠে,
– একি! কি হলো? পড়ে যাচ্ছিলে কেন?
~ হঠাৎ মাথাটা ঘুরানি দিলি। (খুব লজ্জা পেয়ে)
– কি বলো! বেশি ঘুরাচ্ছে মাথা?
~ না একটু৷
– তুমি একা বোধহয় যেতে পারবে না। আমি দিয়ে আসি।
~ আরে না না পারবো। (লজ্জায় অবস্থা খারাপ)
– আহ! বললাম তো পারবে না৷ আসো।
আবির জান্নাতের আর কোন কথা না শুনে ওকে সম্পূর্ণ কোলে তুলে নেয়৷ জান্নাত মুহূর্তেই ভীষণ অবাক হয়ে যায়৷ ও মনে মনে ভাবে, হায়! হায়! এ কি হচ্ছে? উনি কি এখন আমাকে নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকবে নাকি! জান্নাতের পুরো মুখ লজ্জায় লাল টুকটুকে হয়ে গিয়েছে। ও কিছু বলতেও পারছে না৷ আবিরের শরীর থেকে আসা অদ্ভুত একটা মনমাতানো ঘ্রাণ আর উষ্ণতা জান্নাতকে কেমন জানি স্তব্ধ করে দিয়েছে। এর আগে কখনো এমন এক্সপেরিয়েন্স হয় নি ওর। জান্নাত যখন এসব ভাবছিল তখন আবির ওকে কোলে তুলে ওয়াশরুমের সামনে এনে নামিয়ে দেয়৷ জান্নাত হাপ ছেড়ে বাঁচে। ও তো চিন্তায় ছিল আবির আবার ওকে নিয়ে সোজা ওয়াশরুমেই না ঢুকে পড়ে! আবির ওকে খুব সাবধানে নামিয়ে দিয়ে বলে,
– কিছু মনে করো না৷ একটা রিকোয়েস্ট করি৷ তুমি তো অসুস্থ তাই ওয়াশরুমের দরজাটা লাগিও না৷ আমি প্রমিজ করছি কোন ইমার্জেন্সি ছাড়া আমি এখানে আসবো না৷ কিন্তু তুমি দরজাটা দিও না৷ নাহলে ভিতরে তোমার কিছু হলে আমি বাইরে থেকে কিছুই করতে পারবো না। এগুলো সব বুলেট, বোমা প্রুফ দরজা। সো বুঝতেই পারছো।
আবিরের আকুতি মাখানো কথা, কেয়ার আর সুন্দর মুখখানা দেখে জান্নাত যেন মুহূর্তেই মুগ্ধ হয়ে যায়৷ ও আস্তে করে বলে,
~ আপনার উপর আমার পূর্ণ বিশ্বাস আছে। ভয় নেই আমি দরজা দিব না৷ আপনি সত্যিই খুব ভালো মানুষ। তাই তো আপনাকে সবাই এত পছন্দ করে।
– থ্যাঙ্কিউ। (হাসি দিয়ে)
বলেই আবির সোজা বারান্দায় চলে যায়৷ যাতে জান্নাত আনইজি ফিল না করে। আবির চলে গেলে জান্নাত ওয়াশরুমে যায়। সবার আগে নিজেকে বিশাল বড়ো আয়নায় একবার দেখে৷ কপালে ব্যান্ডেজ, পরনে জানোয়ারের দেওয়া সেই ড্রেসটা। এটা দেখেই জান্নাতের খুব কান্না পায়৷ ওর মন চাচ্ছে এই ড্রেসটা খুলে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে ফেলুক। কিন্তু ওর তো আর কোন জামা কাপড় নেই। সব ওর বাসায়৷ জান্নাত কি আর করবে এটা পরেই থাকে। খুব সাবধানে চোখে মুখে পানি দিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে চলে আসে। এসে দেখে আবির এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে৷ জান্নাত এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা তোয়ালে দেখে। কিন্তু সেটা তো আবিরের৷ ও ধরতে পারবে না এটা। তাই ও আস্তে আস্তে হেঁটে বারান্দার দরজার কাছে গিয়ে বলে,
~ এই যে একটু শুনুন…
আবির এক সেকেন্ডের ভিতর পিছনে ঘুরে দেখে জান্নাত দাঁড়ানো। ও দ্রুত ওর কাছে গিয়ে ওর হাত ধরে। আবিরকে এত অস্থির দেখে জান্নাত শুধু লজ্জায় পাচ্ছে। আবির ওকে বলে উঠে,
– কোন সমস্যা? তুমি একা একা এখানে আসতে গেলে কেন? আমাকে ডাক দিতে?
~ না না ঠিক আছি৷ একটা কথা ছিল।
– হ্যাঁ হ্যাঁ বলো।
~ জি একটা তোয়ালে দেওয়া যাবে? মুখটা একটু মুছতাম।
আবির তাকিয়ে দেখে জান্নাতের মুখটা ভিজে আছে। ও দ্রুত ওর আলমারি থেকে একটা নতুন তোয়ালে বের করে জান্নাতের হাতে দেয় আর বলে,
– আমি আসলেই অনেক কেয়ারলেস। সরি। আমার এটা আগেই ভাবা উচিৎ ছিল। আজ থেকে এটা তোমার।
~ আরে প্লিজ সরি বলবেন না৷ আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে আমার জন্য আপনাকে। আমিও অনেক সরি।
আবির জান্নাতকে ধরে ওর বেডের কাছে এনে দিতে দিতে বলতে থাকে,
– কপাল ফেটে মনে হয় তোমার মাথাটাও গেছে। তাই খালি উলটা পালটা বলছো৷ তোমার মাথায়…
আবির কথা শেষ করার আগেই কে যেন দরজায় নক দেয়। ও জান্নাতকে রেখে মনিটরে দেখে ওর লোক। সাথে একটা ব্যাগও। আবির দরজা খুলতেই ওর লোকটা বলে উঠে,
– স্যার আপনি যা চেয়েছিলেন নিয়ে এসেছি।
– গুড তুমি যাও।
– ওকে স্যার৷
আবির ব্যাগটা নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে জান্নাতের কাছে এসে ব্যাগটা রেখে ও বলে,
– তুমি এবার খুব খুশি হবে৷
~ কেন?
– এই ব্যাগের মধ্যে কি আছো জানো?
~ কি?
– একটা মানুষের কাটা মাথা।
~ কি!
জান্নাত প্রচন্ড ভয় পেয়ে দাঁড়িয়ে যায়। আবির হাসতে হাসতে বলে,
– আরে ভয় পেয়েও না। মজা করলাম। তোমার ওই বাসায় যত ড্রেস ছিল সব নিয়ে এসেছি। আপাতত এগুলো পরো পরে সুস্থ হলে নতুন কিনে দিব।
আবিরের কথা শুনে জান্নাত যেন খুশিতে আত্নহারা হয়ে যায়। ও অসুস্থ শরীর নিয়ে দ্রুত ব্যাগটা খুলে দেখে, হ্যাঁ সত্যিই ওর জামা কাপড়। জান্নাত অসম্ভব খুশি হয়ে বলে,
~ অসংখ্য অসংখ্য অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। আপনি যে কি উপকার করেছেন বলার বাইরে৷ আমি আমার পরনের ড্রেসটা আর পরতে চাই না৷ পারলে আগুনে জ্বালিয়ে দি এটা৷ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
আবির হাসে জান্নাতকে এত খুশি দেখে৷ মেয়েটা বড্ড মায়াবী আর মিষ্টি। জান্নাত একটা ড্রেস নিয়ে দ্রুত ওয়াশরুমে চলে যায়৷ হৃদয় এর দেওয়া এই ড্রেসটাকে ও ঘৃণা করে৷ আর এক মুহূর্ত ও এই ড্রেসটা পরতে চায় না। জান্নাত ৫ মিনিট পর বের হয়ে আসে, একটা আকাশি কালারের স্যালোয়ার পরেছে। ওকে এতটা সুন্দরী লাগছিল যে আবির রীতিমতো হা করে তাকিয়ে ছিল৷ তার উপর জান্নাত ওর ঘনকালো চুলগুলো ছেড়ে দিয়েছিল। আবির শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। জান্নাত সেটা বুঝতে পেরে ভীষণ লজ্জা পায়৷ ও হৃদয় এর ড্রেসটা আবিরের কাছে এগিয়ে দিয়ে বলে,
~ একটা রিকোয়েস্ট করলে রাখবেন?
– রাখবো।
~ এটা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েন৷
– ঠিক আছে।
~ জিজ্ঞেস করবেন না কেন?
– আমি সব জানি৷ হৃদয় নামে ছেলেটা তোমার সাথে কি কি করেছে সবই আমি জানি৷
আবিরের কথা শুনে জান্নাতের মুখখানা মুহূর্তেই মলিন হয়ে যায়। আবির বুঝতে পারে জান্নাতের খুব খারাপ লাগছে। তাই ও জান্নাতকে বলে,
– সবার জীবনে এমন একটা বড়ো ঢেউ আসে। কখনো কাউকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। আবার কখনো কেউ বেঁচে যায়৷ তুমি বেঁচে গিয়েছো জান্নাত৷ আর মন খারাপ করো না। আমার এখানে তোমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না৷
~ জানেন, সেদিন ওই ভাইটা না আসলে আমি হয়তো আর দুনিয়ার আলোই দেখতে পারতাম না৷
– নেহালের কথা বলছো?
~ আপনি চিনেন তাকে? (অবাক হয়ে)
– হুম। আমার ভাইয়ের মতো ও।
~ সত্যি?
– হ্যাঁ।
~ আপনারা আসলেই অনেক ভালো। কিন্তু উনি ওখানে আমাকেই বাঁচাতে গেলেন কিভাবে?
আবির চিন্তায় পড়ে যায়। জান্নাতকে কোন ভাবে জানতে দেওয়া যাবে না ওদের আসল পরিচয়। আবির একটু ভেবে বলে,
– আরে ও তো পুলিশ। ওখানে অভিজানে গিয়েছিল।
~ ওওও। আচ্ছা হৃদয় এর কি হয়েছে? আপনি জানেন?
– ও আর ওর বন্ধু এই দুনিয়াতে আর নেই। নেহালের হাতে গুলি খেয়ে মারা গিয়েছে।
~ কি! কি বলছেন এগুলা?( খুব ভয় পেয়ে)
– হ্যাঁ। ও আর ওর বাবা মিলে বাইরের দেশে মেয়েদের পাচার করে, ড্রাগস সাপ্লাই করে৷ ওদের ধরতেই নেহাল কাজ করছে৷
~ আপনি এসব কি বলছেন? ওরা এত খারাপ?
– হুম। তোমাকেও সেদিন পাচার করে দিত ওরা, যদি নেহাল না বাঁচাতো।
জান্নাত এবার কেঁদেই দেয় আবিরের কথা শুনে৷ আবির ওর কান্না দেখে কষ্ট পায়। তাই দ্রুত ওর কাছে গিয়ে বলে,
– প্লিজ কান্না করো না৷ ওরা ওদের সব পাপের শাস্তি পাবে। তুমি প্লিজ শান্ত হও?
~ কতটা বিশ্বাস করে ছিলাম ওই জানোয়ারটাকে। কিন্তু সুন্দর মানুষের আড়ালে ভিতরটা যে এত জঘন্য তা বুঝতেই পারি নি। জানেন আমার মনে হয়েছিল আমি ওকে ভালবেসে ফেলেছি। ও আমাকে পাওয়ার জন্য এত নিচে নেমেছে যে আমার কাছে ভাষা নেই তা বলার। ও আমার মন নিয়ে খেলেছে। জীবনে প্রথম কাউকে বিশ্বাস করেছিলাম। কিন্তু….আমি ওকে ঘৃণা করি খুব খুব বেশি ঘৃণা করি।
জান্নাত খুব কষ্ট পাচ্ছিলো। আবিরের কপালের রগগুলো রাগে কষ্টে খাড়া হয়ে যায়। হাত দুটো মুঠ করে আছে ও। ওর এখন মন চাচ্ছে ওর পিস্তলটা বের করে আরমান খানের বুকটা ঝাঝরা করে দিতে। কেন ওর ছেলেকে এরকম বানালো ও? কেন? আবির জান্নাতকে এভাবে আর কাঁদতে দেখতে পারে না৷ ওর একদম কাছে গিয়ে কোন কিছু না ভেবে ওকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে। জান্নাতও আবিরকে জড়িয়ে ধরে ওর বুকে অঝোরে কান্না করতে থাকে৷ খুব কান্না পাচ্ছিল ওর। এত কিছু হলো ঠিক মতো একটু কাঁদতেও পারে নি ও। আবির ওর মাথার পিছনে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে অনেক কিছু ভাবছে মনে মনে। তবে একটা বিষয় ওকে খুব ভাবাচ্ছে৷ ও যখনই জান্নাতের কাছে আসে ওকে স্পর্শ করে, ওর মধ্যে কেমন জানি একটা ভালো লাগা কেমন জানি একটা অদ্ভুত শান্তি ও অনুভব করে। এর কারণ কি? ওরা দুজনই একা তাই? মাইশার কাছ থেকে কখনো ও এরকম অনুভূতি পায় নি। নাকি জান্নাত সৎ তাই? আবির বুঝতে পারছে না৷ জান্নাত অনেকক্ষণ কাঁদার পর ওর হুশ হয় ও এখন কোথায় এবং কার কাছে আছে। ও অসম্ভব মানে অসম্ভব লেভেলের লজ্জা পায়। সাথে সাথে আবিরকে ছেড়ে দূরে সরে অন্যদিকে ফিরে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলতে থাকে,
~ আল্লাহ এ আমি কি করেছি। সরি সরি। প্লিজ আমাকে খারাপ ভাববেন না৷ আমি এ ধরনের মেয়ে না৷ আমি ইচ্ছা করে এমন করিনি। সরিইইইই।
আবির পিছনে দাঁড়িয়ে হেসে হেসে বলে,
– জড়িয়ে তো ধরলাম আমি। সরি তো আমার বলা উচিৎ তুমি কেন বলছো?
~ আমাকে শান্ত করতেই তো…
– আচ্ছা বাদ দেও৷ চলো নাস্তা খাবে৷
~ না মানে…আমাকে একটু সময় দিন। আমি…
– আচ্ছা বুঝেছি। আমি নিচে আছি। তুমি চলে এসো।
~ আচ্ছা।
আবির ওর রুমের বাইরে এসে নিজের হাত দুটোর দিকে তাকিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ভাবতে থাকে,
– জান্নাতও তাহলে ওর মতো ধোকা খেয়েছে। মেয়েটা একদম একা আর অসহায় ঠিক ওর মতো। তাহলে কি করা উচিৎ? আরমান খান তো শেষ হয়ে যাবে। সে সাথে জান্নাতের জীবনের ঝুঁকিও শেষ। তাহলে ওকে কি করবে? আবির গভীর ভাবনায় পড়ে যায়৷ কিন্তু মন মতো একটা উত্তর খুঁজে পায় না৷ তার উপর জান্নাত যদি ওর কাছে থাকে তাহলে ও যে কিং সেটা যদি ও জানে তাহলে কি হবে? জান্নাতের সবচেয়ে জীবন ঝুঁকি ওর কাছে। আবিরের মাথা যেন কাজ করছে না আর। ও আর না ভেবে নিচে চলে আসে। জান্নাতও কিছুক্ষণ পর চলে আসে। ও নিচে আসতেই রিয়াদও চলে আসে। এসে জান্নাতের ড্রেসিং করে মেডিসিন দিয়ে চলে যায়। তারপর ওরা একসাথে নাস্তা করে।
এদিকে,
নেহাল আর নিলয় মিলে মাস্টার প্ল্যান করে। প্রথমে ওরা ঠিক করে একে একে আরমান খানের সব সিক্রেট বেইস মানে যেখানে ড্রাগস বানানো হয় আর ওর লোকজন থাকে সেসব জায়গাগুলো টাইম বোম লাগিয়ে উড়িয়ে দিবে৷ তারপর সোজা আরমানকে অ্যাটাক করবে৷ প্ল্যান অনুযায়ী ওদের স্পাইরা আরমান খানের সব সিক্রেট বেইসে বোমা লাগিয়ে দিয়ে আসে। দুপুর দুইটায় পুরো ঢাকা শহর কেঁপে উঠে। নিমিষেই আরমান খানের সব শেষ। তারপর নেহাল আর নিলয় মিলে পুরো ব্ল্যাক স্যাডো গ্যাং নিয়ে অ্যাটাক করে আরমান খানের কাছে। প্রচুর গোলাগুলির পর আরমান খান মারা যায়। সেটাও নেহালের হাতে। আবির জান্নাতকে নিয়ে দুপুরের খাবার খেতে বসেছিল৷ ঠিক তখনই ওর ফোনে নিলয়ের ম্যাসেজ আসে। যে আরমানের পুরো গ্যাং শেষ। আবির হাসি দিয়ে ফোন রেখে দেয়। জান্নাত আবিরকে দেখে বলে,
~ হাসছেন যে?
– হৃদয় এর বাবা মানে আরমান খান শেষ। তোমার আর কোন ভয় নেই। এখন আর তোমার পিছনে কোন গুন্ডা আসবে না৷
~ আপনি এত ইজি ভাবে এগুলো কিভাবে বলেন? আপনার ভয় করে না?
আবির ভেবে দেখে, আসলেই তো। ওর ভয় পাওয়া উচিৎ। এবার ও অভিনয় শুরু করে৷ ও বলে,
– আরে আমি বেশি ভয় পেলে হাসি। আসলে ভিতরে ভিতরে অনেক ভয় পাচ্ছি আমি। দেখো আমার হাত কাঁপছে।
জান্নাত আবিরকে দেখে চিন্তিত স্বরে বলে,
~ আচ্ছা আর ভয় পেয়েন না। আল্লাহ ভরসা।
– ঠিক আছে। তুমিও পেয়ো না। এবার মন দিয়ে খাও৷
~ জি।
আবির মনে মনে হাসছে৷ যে নিজের হাতে কত খারাপ মানুষকে মেরেছে তার হিসাব নাই আর সে পাবে ভয়! হাহা। জান্নাতকে অনেক ইনোসেন্ট লাগছে। আবির খেতে খেতে জান্নাতের দিকে তাকাচ্ছে। ওর পাশেই বসা। জান্নাত মন দিয়ে খাবার খাচ্ছে। মনে হয় অনেক দিন পর মেয়েটা ভালো মন্দ খাচ্ছে। কোথায় পাবে ভালো খাবার! ওর তো আবিরের মতো কেউ নেই। অনেক কষ্ট করে চলতে হয়। আবির ভাবছে এই মেয়েকে সরিয়ে দিলে ও কি করবে? এদিকে জান্নাত খুব তৃপ্তি করে খাচ্ছিল। এত এত মজার মজার খাবার ও জীবনেও খায় নি। ও খেতে খেতে হঠাৎ আবিরের দিকে আড়চোখে তাকাতেই দেখে আবির ওর দিকে কেমন অন্যমনস্ক হয়ে তাকিয়ে আছে। কিছু একটা নিয়ে ভাবছে এরকম লাগছে। জান্নাতের কেমন অস্বস্তি লাগছে। ও আস্তে করে বলে উঠে,
~ কি হলো আপনি খাবার খান না কেন?
জান্নাতের কথায় আবির ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে। আর বলে হ্যাঁ হ্যাঁ খাচ্ছি আমি। এরপর ওদের খাওয়া দাওয়া শেষ হলে আবির হল রুমে এসে বসে। নিলয়ও চলে এসেছে৷ এসে জান্নাতের সাথে পরিচয় হয়েছে৷ জান্নাত এখন একদম ভালো আছে। ওর খাওয়া দাওয়া শেষ হলে ও ভাবে, এখন কি করবে? করার তো কিছু নাই। হঠাৎ ওর মাথায় আসে, ও ওখানে কি করছে? ওর বাসাতো এটা না৷ আর এখন তো বিপদও নেই। তাহলে ওর এখানে এভাবে আবিরের মাথার উপর থাকাটা একদম ঠিক হচ্ছে না। ওর নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছে। এমনিতেই আবিরকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে ও। নাহ! ও আর এখানে থাকবে না৷ এখনি ওর বাসায় চলে যাবে। এসব ভেবে ও সোজা আবিরের সামনে গিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ায়। আবির ওর দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে জান্নাত কিছু বলবে৷ তাই ও জিজ্ঞেস করে,
– কিছু বলবে? নাকি কোন কিছু লাগবে? বলো সমস্যা নেই।
~ আমি বাসায় যাবো। আপনি অনেক কিছু করেছেন আমার জন্য। আর না প্লিজ। আমি এখন ভালো আছি। আর যারা আমাকে মারতে চেয়েছিল তারাও ত নেই তাই না৷ তাহলে আমি আমার আগের জীবনে ফিরে যেতে পারবো। আমাকে একটু বাসায় দিয়ে আসুন প্লিজ।
আবির যেন পুরো স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ও কোন ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সত্যি বলতে আবির চায় না জান্নাত যাক। কিন্তু জান্নাতের কথায়ও যুক্তি আছে৷ এখন আর ও এখানে কেন থাকবে! কোন অধিকারে থাকবে? একটা সিঙ্গেল মেয়ে এভাবে একটা সিঙ্গেল ছেলের বাসায় কেন থাকবে? জান্নাতই সঠিক। আবিরের মনটা কেন জানি খুব খারাপ হয়ে যায়৷ জান্নাতের সেবা করতে, ওকে দেখতে, ওর কথা শুনতে খুব ভালোই লাগছিল। এই তো কাল রাতেই ও এসেছে৷ কিন্তু আবিরের মনে হয় জান্নাত ওর কতদিনের চেনা৷ কিন্তু জান্নাত চায় না এখানে থাকতে। আবির কখনোই ওকে জোর করতে পারবে না। তাই ও বলে,
– ঠিক আছে চলে যাও।
জান্নাত খুব খুশি হয়ে যেই কিছু বলতে যাবে ওমনি হঠাৎ করে পিছন থেকে…..
চলবে…?