#love_is_like_a_Cocktail
Writer: Abir Khan
Part: 01
আবিরের বাম হাতে একটা গুলি লেগেছে। ফিনকি দিয়ে রক্ত ঝরছে শুধু। রক্ত আটকাতে ওর পরনের শার্টটা খুলে হাতে পেচিয়ে ডান হাত দিয়ে চেপে ধরে পালাচ্ছে ও। একটা ওয়েলকাম পার্টিতে ওকে ইনভাইট করা হয়৷ ও অনেক সিকিউরিটি নিয়ে গেলেও হঠাৎ করে ওর উপর এবং ওর লোকের উপর শত্রুপক্ষ অ্যাটাক করে। আবির ভাবতেই পারে নি এমন কিছু হবে৷ ওর অনেক লোককে শত্রুপক্ষ মেরে ফেলেছে। যারা বেঁচে ছিল তারা কোন মতে ওকে বাইরে বের করে দেয়। কিন্তু একটা গুলি এসে ওর বাম হাতে লাগে৷ রাত এখন প্রায় ২ টার মতো বাজে। আবির এদিক ওদিক দৌড়ে একটা বাসার ভিতর ঢুকে পড়ে। কারণ ওর পিছনে ছিল শত্রু পক্ষের বাকি লোকেরা। আবির যে বাসায় ঢুকে সে বাসার একদম উপর তলায় ও চলে যায়। যাতে ওকে খুঁজে না পায়৷ ব্যথায় ওর অবস্থা খুব খারাপ। যে করে হোক গুলিটা বের করতেই হবে। আবির দেখে একটা ফ্ল্যাট বাসা। ও দ্রুত বেল দেয়। কয়েক বার বেল দিতেই দরজাটা কে যেন খুলে৷ আবির ওর হাতের পিস্তলটা নিয়েই ধাক্কা দিয়ে ভিতরে ঢুকে যে দরজাটা খুলেছিল তার মুখ চেপে ধরে৷
আবির এবার খেয়াল করে ও একটা মেয়ের মুখ চেপে ধরে আছে। সে চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ওর দিয়ে ভীতু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আবির মেয়েটার মুখ চেপে ধরেই দরজাটা আগে লাগিয়ে দেয়। তারপর মেয়েটার মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে রাগী ভাবে বলে,
– একটা যদি চিৎকার কিংবা উল্টো পালটা কিছু করেছিস তাহলে তোর মাথার খুলি এখনই উড়িয়ে দিব৷
মেয়েটা এই গভীর রাতে এরকম ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়ে ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। আবির ওকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরেছিল। ও আবার বলে,
– আমি যদি মুখের উপর থেকে হাত সরাই তাহলে তুই কি চিৎকার চেচামেচি করবি?
মেয়েটা দ্রুত মাথা নাড়িয়ে ইশারায় না না বলে। আবির আবার জিজ্ঞেস করে,
– আমি যা যা বলবো তা তা ঠিক মতো করবি?
মেয়েটা এবার ভীষণ ভয়ে জোরে জোরে মাথা নাড়িয়ে ইশারায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলে। আবির আস্তে আস্তে হাত সরায়৷ ওর শরীর থেকে অনেক রক্ত ঝরেছে। তাই মাথাটা সমানে ঘুরপাক খাচ্ছে। আবির মেয়েটাকে ছেড়ে দিয়ে ওখানেই দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসে পড়ে৷ মেয়েটা ওর কাছ থেকে ছাড়া পেয়ে অস্থির হয়ে পিছনে সরে ছটফট করতে থাকে। মেয়েটার মনে হচ্ছে ওর পা দুটো তার সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। মুখটা চাচ্ছে চিৎকার করে কারো সাহায্য চাইতে। খুব ভয় করছে ওর৷ এদিকে আবির মাটিতে বসে হাত থেকে শার্টটা খুলতেই গলগল করে রক্ত ঝরছে। মেয়েটা এই দৃশ্য দেখে আরও ভয় পেয়ে যায়৷ টিভিতেই এমন দৃশ্য দেখেছে। কিন্তু বাস্তবে যে কখনো দেখতে হবে তা ও কল্পনাও করে নি। এদিকে আবির ব্যথায় কাতরাতে কাতরাতে মেয়েটাকে বলে,
– একটা ছুরিকে ভালো করে গরম করে নিয়ে আয়। সাথে একটা বাটি আর মেডিকিট আছে না সেগুলো দ্রুত নিয়ে আয়।
মেয়েটা আবিরের কথা মতো সেগুলো নিয়ে আসলো। একটুও দেরি করলো না। গরম ছুরিটা আবিরের দিকে এগিয়ে দিলে ও বলে উঠে,
– এখানে বস। আমি পারবো না৷ তুই এটা এখানে ঢুকিয়ে গুলিটা বের কর৷
মেয়েটা ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে ইশারায় না বলে। আবির ওর পিস্তলটা উঠালে মেয়েটা আবিরের কথা মতো কাজ শুরু করে৷ খুব সুক্ষ্ম ভাবে গুলিটা বের করে অনেক সুন্দর করে ড্রেসিং করে দেয় মেয়েটা। আবির অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কাজ শেষ হলে ও আবার জিজ্ঞেস করে,
– আপনি কি ডাক্তার?
মেয়েটা ভীতু কণ্ঠে বলে,
~ না। তবে ডাক্তারি পড়ছি।
এই প্রথম আবির মেয়েটার মিষ্টি মধুর কণ্ঠ শুনল। সে দেখতে যেমন বেশ সুন্দরী তার কণ্ঠটাও ঠিক একই। মিষ্টি মধুর। তবে এখন কান্না করায় আর ভয়ে তাকে অন্যরকম লাগছে৷ চোখমুখে ভীষণ ভয় আর ভয়। আবির সেটা বুঝতে পেরে বলে,
– অ্যাম রিয়েলি সরি, আপনাকে এভাবে ভয় দেখানোর জন্য। ভয় নেই আমি আপনাকে কিছু করবো না। আমার শত্রুরা আমাকে গুলি করেছে। তাই বাঁচতে আপনার এখানে আসা। আর গুলিটাও বের করা জরুরি ছিল। তাই একটু অভিনয় করে আপনাকে ভয় দেখিয়ে কাজটা করাই। থ্যাংকস হেল্প করার জন্য৷
মেয়েটা চুপচাপ আবিরের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ওহ! একটা কথা তো বলাই হয় নি। আবির মুখে মাক্স পরা ছিল। যাতে ওকে কেই চিনতে না পারে। আবির কথা শেষ করে ওর ডান হাত দিয়ে আস্তে করে মাক্সটা সরায়৷ এবার মেয়েটা পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। মানে নিজের চোখকে সে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ ও কি ঠিক দেখছে! ও তো আবিরকে চিনে। শুধু ও না দেশের অনেক মানুষ আবিরকে চিনে৷ মেয়েটা স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। কোন রকম নিজেকে সামলে মেয়েটা আবিরের কাছে এসে ওকে অবাক নয়নে দেখে বলে,
~ আপনি আবির আহমেদ? দেশের সুপার স্টার নায়ক আবির আহমেদ আপনি? (ভীষণ অবাক কণ্ঠে)
– জি।
~ আপনার এ অবস্থা হলো কিভাবে? আর আপনি পিস্তল এসব কই পেলেন? (চিন্তিত কণ্ঠে)
– শান্ত হন আমি বলছি। আমি কে তা তো বুঝতেই পারছেন। আসলে আমার যতটা না ফ্যান-ফলোয়ার তার চেয়ে আমার শত্রুর সংখ্যা বেশি। মিডিয়াতে যে কাজ করি তাই। আর এটা আমার না, আমার বডিগার্ডদের। জাস্ট আত্নরক্ষার জন্য সাথে এনেছি।
~ আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না এত বড়ো ফেমাস নায়ক আমার সামনে তাও আবার এভাবে! আমি বোধহয় এখনো স্বপ্ন দেখছি কিংবা ঘুমের ঘোরে হয়তো।
– জি না এটা সত্য। আর আমি সত্যিই সরি আপনাকে এরকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেওয়ার জন্য৷ আজ রাতটা একটু থাকতে দিন কাল সকালেই আমি চলে যাবো।
~ না না কোন সমস্যা নেই আপনি থাকুন। আসলে আমি তো ভেবেছিলাম আপনি কোন বড়ো গুন্ডা বা মাফিয়া। তাই অনেক ভয় পেয়েছিলাম আর ঘাবড়ে গিয়েছিলাম।
– আরে না না৷ আমি অভিনয় করছিলাম। আচ্ছা আমাকে একটু স্যালাইন দিবেন? অনেক রক্ত গিয়েছে শরীর থেকে। খুব ব্যথা আর খারাপ লাগছে।
~ জি অবশ্য দিব৷ একটু অপেক্ষা করুন।
মেয়েটা উঠে চলে যায়। আবির এই ফাঁকে ওর ফোনটা বের করে ওর লোকদের ম্যাসেজ করে দেয়৷ তারপর মেয়েটা চলে আসলে ও দ্রুত ফোনটা পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে। মেয়েটা এসে,
~ নিন।
– থ্যাংকস।
আবির একঢোকে স্যালাইন খেয়ে ফেলে। তারপর মেয়েটার দিকে গ্লাসটা এগিয়ে দিতে দিতে বলে,
– কিছু মনে না করলে আপনার নাম কি জানতে পারি?
~ আমি জান্নাত ইসলাম।
– বাহ! খুব সুন্দর নাম। উহহ!
~ ইসস! অনেক ব্যথা করছে? আপনার তো হাসপাতালে যাওয়া উচিৎ।
– না না। এখন বের হলে বিপদ। কাল যাবো।
~ আচ্ছা আপনি বসুন৷ আমি স্যুপ বানিয়ে নিয়ে আসি। খেলে ভালো লাগবে৷
– না না, আপনি আর কষ্ট করবেন না। এমনিতেই অনেক ঝামেলায় ফেলে দিয়েছে আপনাকে।
~ দেখুন আমি তো ডাক্তারি পড়ছি এটা আমার দায়িত্ব রোগীর সেবা করা। আমি সেটাই করছি। আর আপনি এখানে না বসে বরং সোফাতে বসুন৷ ভালো লাগবে।
– না না। এখানেই ঠিক আছি। আমার সারা গা জুড়ে রক্ত। শুধু শুধু আপনার সোফাটা নষ্ট হবে। আমি এখানেই ঠিক আছি।
~ সমস্যা নেই। চাইলে বসতে পারেন। আমি ওয়াশ করে ফেলবো নি।
– এখানেই ঠিক আছি।
~ ওহ! তাহলে আমি স্যুপ নিয়ে আসছি।
– আচ্ছা একটা প্রশ্ন ছিল?
~ জি?
– আপনি কি এখানে একা থাকেন? আর কাউকে দেখছি না যে?
~ জি একাই। আমি ছাড়া আমার পরিবারে আর কেউ নেই।
জান্নাত কথা শেষ করে দ্রুত আবিরের সামনে থেকে চলে আসে। আবির অবাক নয়নে জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। জান্নাত রান্না ঘরে এসে বুকে হাত দিয়ে আগে নিজেকে শান্ত করে। ফ্রিজ থেকে ঠান্ডা পানি বের করে ডকডক করে খেয়ে নেয়৷ গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল ওর। জান্নাতের এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না ওর ক্রাশ মানে আবির আহমেদকে কখনো এভাবে ও দেখতে পারবে। ও নিজেকে শান্ত করতে করতে আবিরের জন্য স্যুপ বসিয়ে দেয়। ২০/২৫ মিনিট পর স্যুপ হয়ে গেলে ও সেটা নিয়ে আবিরের কাছে যায়। খুব লজ্জা লাগছে ওর। আবিরের মতো এত বড়ো একজন ব্যক্তি ওর বাসায়। ও কি রকম বিহেভ করবে ভেবে পাচ্ছে না। তাও নিজেকে কোন মতে সামলে আবিরের কাছে যায়। যেয়ে বলে,
~ আপনার স্যুপ রেডি।
– আমি সত্যিই অনেক দুঃখিত আপনাকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার জন্য৷
~ না না সমস্যা নেই। মানুষের সেবা করলে আল্লাহ তায়ালা অনেক খুশি হন৷ আমিও তাই করছি।
আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দেয়। সত্যি বলতে ওর খুব কষ্ট হচ্ছে। ও শুধু অপেক্ষায় আছে কখন সকালটা হবে৷ তবে জান্নাতের সেবা ওর অনেক ভালো লাগছে। জান্নাতের কাছ থেকে আবির স্যুপটা নিতে নিলে জান্নাত ওকে থামায়। আর আস্তে করে মাথা নিচু করে বলে,
~ আপনি তো দুই হাত ব্যবহার করতে পারবেন না। আর অনেক ক্লান্তও আপনি। যদি কিছু মনে না করেন আমি খাইয়ে দি আপনাকে?
আবির বেশ অবাক হয়। নিজের দিকে তাকিয়ে বলে,
– ঠিক বলেছেন। আমার যা অবস্থা মনে হয় না নিজে কিছু খেতে পারবো। কিন্তু আপনাকে এভাবে কষ্ট দেওয়াটা…
~ প্লিজ…
– আচ্ছা আচ্ছা দিন৷
জান্নাত লজ্জাসিক্ত মুখখানা নিয়ে আবিরকে স্যুপটা খাইয়ে দেয়। আবির পুরোটা সময় জান্নাতের দিকে তাকিয়ে ছিল। খাওয়া শেষ হলে আবির বলে,
– এবার আপনি গিয়ে শুয়ে পড়ুন। আমি এখানেই ঠিক আছি।
~ কোন সমস্যা হবে না তো?
– না না একদম না৷ আপনি গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।
জান্নাত ভিতরে ওর বেড রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে। আবির মেইন গেইটের সামনে ওভাবেই বসে থাকে। ও পিস্তলটা হাতে নিয়ে সেটার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ওর চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। কিছু একটা আবির ভাবছে। কিন্তু কি?
পরদিন সকালে,
জান্নাত আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকায়৷ ভোরের আলো এসে ওর চোখে পড়ছে। সাথে সাথে ও একলাফে উঠে বসে। আবির! আবিরকে দেখতে হবে৷ জান্নাত দ্রুত বেড ছেড়ে উঠে বাইরে এসে পুরো থ। নিজের চোখকে ও যেন বিশ্বাস করতে পারছে না৷ জান্নাত দেখে….
চলবে..?