খেলাঘর /পর্ব-৩৯
লেখা-সুলতানা ইতি
সারা পথে নির্ঝরিণী কান্না করেছে,বাসায় এসে দেখে কেউ নেই আয়ান কলেজে আপু অফিসে একা বাসা পেয়ে নির্ঝরিণী চিৎকার করে কাদতে লাগলো,ছেলেরা এমন কেনো
কিছুক্ষন পর আয়ান বাসায় ফিরলো নির্ঝরিণী কে বাসায় দেখে বল্লো
– কিরে আজ শো তে যাসনি
নির্ঝরিণী – গিয়েছি, চলে এসেছি
আয়ান- তা হলে তোর আয়াপ খানের গাড়ি কলেজের সামনে দেখলাম যে
নির্ঝরিণী কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– হয়তো কারো জন্য দাড়িয়ে ছিলো
আয়ান- ওহ হতে পারে বেছারা তো গাড়ি থেকে নামলেইই সবাই ছিনবে সেটা আবার আরেক প্রব্লেম,কবে তোর এমন জনপ্রিয়তা হবে
নির্ঝরিণী- উফফ ভাই চুপ করতো, ভালো লাগছে না নির্ঝরিণী উঠে চলে গেলো
আয়ান- আরেহ এতো রেগে আছে কেনো,নিশ্চয়ই আয়াপকে মনের কথা বলতে না ফেরে এই অবস্থা
মিথিলার অফিসে নিজের ক্যাবেনি বসে কাজ করছিলো ইন্টার কমে ডাক পড়লো, ইহান ডাকছে
মিথিলা- কিরে ডাকছিলি? কিছু কাজ ছিলো সেগুলা ই করছিলাম
ইহান- ওহ তোর কাজ কি শেষ
মিথিলা- হুম কেনো
ইহান- অরণি দের বাসায় যাবো,চল
মিথিলা – কেনো
ইহান গম্ভীর হয়ে বল্লো গেলেই বুঝবি তা ছাড়া আজ সেখানে সবাই থাকবে
মিথিলা আর কিছু বল্লো না অরণি দের বাসায় গিয়ে মিথিলা সত্যি সারপ্রাইজড হলো, সাম্মি রাহি সবাই সেখানে
মিথিলা গিয়ে সাম্মি কে ঝড়িয়ে ধরলো
– তুই তো আমায় ভুলেই গিয়েছিস সাম্মি
সাম্মি- ভুলিনি ইহানের থেকে তোর রোজকার খবর পাই
মিথিলা- ওহ তোর সাথে তো ইহানের বেশি কথা হয় এখন
অরণি আজ অসুখের কথা ভুলে গিয়ে বল্লো
– আজ সবাই এক হয়েছে, আজ কিন্তু আমি রান্না করে সবাইকে খাওয়াবো
মিথিলা- মাথা খারাপ? এই অসুস্থ শরির নিয়ে তুই যাবি কিচেনে
অরনি- মনে নেই মিথি তোর, ছয় বছর আগে তোর বার্থডে তে তুই আমাদের রান্না করে খাইয়েছিস,কথা ছিলো আমার বার্থডে তে আমি তোদের এমন ই রান্না করে খাওয়াবো, আজ আমার বার্থডে
মিথিলা ইহানের দিকে তাকায় আজ অরণির বার্থডে বলেই কি অফিসের কাজ ফেলে এসেছে
ইহান মিথিলার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে ছয় বছর আগের স্মৃতিতে ফিরে গেছে ইহান,ইহান মনে মনে প্রশ্ন করছে মিথিলা কে,মিথি আজ তোকে সেই ছয় বছর আগের মতো প্রপোজ করলে কি তুই ফিরিয়ে দিবি, আজ যে তোকে আমি ঠিক আগের মতো ই ভালোবাসি
মিথিলা ও আজ ইহানের চোখের ভাষা বুঝতে চাইছে,
মিথিলা আর ইহানের অবস্থা দেখে সাম্মি পাশে থেকে গলা খাকানি দিলো
– এহ এহেম্ম
সাম্মির গলার আওয়াজে ইহান বাস্তবে ফিরে এলো
মিথিলা ও নিজেকে সামলে নিলো
ইহান- এ কি করছি আমি ছয় বছর আগের জীবন আর আজকের জীবনের সাথে অনেক অমিল,আজ আমার জীবন একজনের সাথে বাধা আছে আমি কেনো সেটা ভুলে যাই,,
রাহি- এই তোরা কি ভাবনায় মজে থাকবি নাকি দুজনে
মিথিলা- না মানে
রাহি- ঠিক আছে আর না মানে করতে হবে না,চল অরনি সবার জন্য অপেক্ষা করছে ডাইনিং এ
ডাইনিং এ গিয়ে সবাই অবাক সেই আগের মেনু সেদিন মিথিলা যা যা রান্না করেছে চার জনের জন্য আজ অরণি ঠিক তা তাই রান্না করেছে
মিথিলা- হ্যারে এতো বছরে ও তুই সেদিনের খাবারের মেনু গুলো ভুলিস নি তাই না
অরণি – তোর সাথে তো আমার সব দিক থেকেই মিলে যায় মিথি, যেমন খাবারের মেনু গুলোর কথা তুই ও তো ভুলিস নি,ভুললে আজ ছিনতে পারতি না
মিথিলা আর কিছু বল্লো না,চুপ চাপ বসে পড়লো
ইহানের গলা দিয়ে খাবার নামছে না,ইহান বুঝে গেছে অরু কেনো সেই দিনের মেনু আজকের লাঞ্চে রেখেছে,সেদিন আমি মিথিলার রান্নার অনেক প্রশংসা করেছি,অরু চায় আজ ও সেদিনের মতো ওর রান্নার প্রশংসা করি
কিন্তু কি করে বুঝাবো অরু তোকে সেদিনের মতো কোন কিছুই আজ নেই, সব কিছু পরিবর্তন হয়ে গেছে
খাবার টেবিলে বসে কেউ ই খেতে পারছে না সবার চোখে পানি, অরণি ও আজ কাঁদছে
ইহান কোন ভাবে কয়টা খেয়ে হাত ধুয়ে উঠে যায়
তার গলা দিয়ে খাবার নামছে না
ইহান কে উঠে যেতে দেখে অরনি ও উঠে গেলো, একে একে সবাই খাবার অসম্পূর্ণ রেখেই উঠে যায়
ইহানের খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু ছেলে হয়ে কাঁদতে ও পারছে না, লজ্জা করছে তার কাঁদতে
– তোরা কথা বল আড্ডা দে, আমি আসি, এই বলে ইহান কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে বেরিয়ে যায়
মিথিলা ও বাসায় চলে আসে অরণি সামনে থাকলে কেমন যেন অসহায় লাগে যদি এমন কোন কিছু থাকতো যা দিয়ে অরু কে আগের মতো সুস্থ করা যেত, তা হলে তাই ই করতাম আমি
মিথিলা বাসায় এসে ক্লান্ত শরির টা এলিয়ে দিলো বিছানায়
নির্ঝরিণী এসে মিথিলার পাশে বসলো নিজেকে অনেক টা স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে
মিথিলা- কিরে কিছু বলবি,তোর চোখ ফুলে আছে কেনো
নির্ঝরিণী – আজ কলেজে যাইনি,সারা দিন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি তাই চোখ ফুলে গেছে
মিথিলা- তুই না সকালে বলেছিস আজ কলেজে যেতেই হবে তোর
নির্ঝরিণী – হুম পরে শরির টা কেমন জানি করছিলো তাই যাইনি
মিথিলা – অহ আচ্ছা
নির্ঝরিণী -বড় আপু ফোন করেছিলো,সেদিন যাওয়ার পথে দুলাভাইয়ের সাথে দেখা হয় আর তাদের মধ্যে অনেক কথা হয়,….
মিথিলা নির্ঝরিণী কে থামিয়ে বল্লো
– দুলাভাই মানে বড় আপুর জামাইর সাথে দুলাভাইর দেখা, মানে ইভানের দেখা
নির্ঝরিণী – হুম
মিথিলা – হুম তার পর
নির্ঝরিণী – দুলাভাই বলছে বড় দুলাভাইয়ের দেশের বাইরে যাওয়ার সব খরচ দিবে
মিথিলা- মানে কি, আপু ইভানের কাছে এই সব কথা বলেছে
নির্ঝরিণী – হুম,আপু বল্লো আপু নাকি কিছু বলেনি সোহাগ ভাইয়া ইভান ভাইয়ার কাছে কথার কথা বলেছে
মিথিলা- উফফ এখন ঐ লোকের সাহায্য নিতে হবে?এখন কয়টা বাজে নির্ঝর বলতো
নির্ঝরিণী – পাঁচটা
মিথিলা- ইভান তো এখন বাসায় থাকে না ওর নতুন বাসার ঠিকানা জানি না এখন
নির্ঝরিণী – তুই কি নিষেধ করবি নাকি
মিথিলা- মানা করতেই হবে ইভানের কাছে থেকে আমার পরবিবার কোন অনুগ্রহ নিক এটা আমি চাই না,আর তা ছাড়া সোহাগ ভাইয়ের মতো লোক দেশের বাইরে গিয়ে বাড়িতে টাকা পয়সা দিবে এটা অবিশ্বাস্য ,
নির্ঝরিণী – ঠিক বলেছিস
মিথিলা- ইভানের নাম্বার আছে তোদের কাছে
নির্ঝরিণী – আয়ানের কাছে আছে
মিথিলা-নাম্বার টা নিয়ে আয় তো
নির্ঝরিণী আয়ানের কাছে থেকে নাম্বার এনে দিলো মিথিলা ইভানকে কল করলো
দুই তিন বার রিং হয়ে যাওয়ার পর কল রিসিভ করলো ইভান
মিথিলা -আপনি কোথায় এখন
ইভান- মিথিইইই তুমি আমায় কল করেছো কি সৌভাগ্য আমার
মিথিলা- আজাইরা কথা বন্ধ করুন আপনি কোথায় আছেন বলুন
ইভান- বাসায় আছি, কেনো
মিথিলা- এখন ই ক্যাফটেরিয়া তে চলে আসুন
ইভান- আমি দু মিনিটে রেডি হয়ে এক মিনিটে আসছি
মিথিলা কল অফ করে দিলো
নির্ঝরিণী – আপু এখন না গেলেই নয়, এখন তো একটু রেষ্ট নিতে পারতি
মিথিলা- না এখন রেষ্ট নিলে ও শান্তি পাবো না
আচ্ছা আমি আসিরে মিথিলা বেরিয়ে যায়
– উফফ মিথিলা আমায় ফোন করে দেখা করতে বলেছে, ই্সস আমি আর ভাবতে পারছি না
ইভান তাড়াহুড়ো করে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসে
ক্যাফেটেরিয়াতে ইভান অনেক্ষন বসে আছে কিন্তু মিথিলা আসেনি
উফফ মিথি আসতে লেইট করছে কেনো, আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না
বেশ কিছুক্ষন পর মিথিলা আসে
ইভান- বসো আর কি খাবে বলো
মিথিলা- আমি এখানে আপনার সাথে গল্প করতে আসিনি,যাস্ট কিছু কথা বলতে এসেছি
ইভান- ঠিক আছে বলো
মিথিলা – এই যে শুনুন এই রকম ভালো মানুষীর মুখোশ পরবেন না আমার সামনে, আমি ছিনি আপনাকে,
ইভান……
– মহান হওয়ার ইচ্ছে আপনার তাই না আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠানোর কথা কে বলেছে আপনাকে, আমি বলেছি? বলিনি তো তা হলে? শুনুন আমরা চাইলে আমার দুলা ভাইকে দেশের বাইরে পাঠাতে পারি তার জন্য আপনার মতো লোকের সাহায্য লাগবে না কিন্তু আমরা তাকে পাঠাতে চাই না
ইভান- আমি জানি তো কেনো পাঠাতে চাও না,বড় আপু আমায় বলেছে,ট্রাস্ট মি, মিথি ভাইয়া কে যেখানে পাঠাবো উনি আমার লোকেদের চোখ ফাঁকি দিয়ে কোন খারাপ কিছু করতে পারবে না
মিথিলা- উফফ আপনি এভাবে কথা বলবেন না আপনার কাছে থেকে এভাবে কথা শুনতে আমি অভ্যাস্ত নই,আপনি প্লিজ আমাদের কে আমাদেত মতো করে থাকতে দিন
ইভান- তো আমি কি তোমাকে ডিস্টার্ব করেছি নাকি,তুমি তো আমার সাথে দেখা করতে আসছো, আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছিলো তাই চলে এলে তাই না
মিথিলা- সাট আপ,যাস্ট সাট আপ,আপনার মতো লোকের সাথে দেখা করা কথা বলার কোন ইচ্ছে আমার নেই
ইভান এবার রেগে যায়
– আমার সাথে কেনো কথা বলবে তোমার প্রেমিক আছে না ইহান তার সাথে কথা বলতে ঘুরতে ভালো লাগবে এখন
মিথিলা- ছিঃ আপনার মতো লোকের কাছে এটাই আশা করা যায়,শুনুন আমি কোথায় যাই কার সাথে ঘুরি সেটা আমার ব্যাপার আপনি প্লিজ আমার ফ্যামেলীর লোকদের থেকে দূরে থাকবেন,আমি আপনাকে সহ্য করতে পারি না,আপনার এই মুখ টা না যাস্ট অসহ্য
মিথিলা এক নিশ্বাসে কথা গুলো বলে বেরিয়ে যায় ইভান পিছন থেকে ডাকলে মিথিলা সেদিকে পাত্তা দেয়নি
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন