খেলাঘর/ পর্ব-৩৭
লেখা- সুলতানা ইতি
ইহান- অরণির বাসায় যাবো তুই কি আমার সাথে যাবি
মিথিলা- হুম চল
মিথিলা আর ইহান অরণিদের ড্রইং রুমে বসে আছে, এখন ও ভেতরে যাওয়ার অনুমিত পায়নি অরণি নাকি এখন যেতে না নিষেধ করেছে এই নিষেধ করার পিছনে কি কারন থাকতে পারে অরনি কি কাঁদছে কান্না ছাপানোর জন্য ই কি এই নিষেধ
বেশ কিছু সময় পার হয়ে যাওয়ার পর অরনির
মা এসে বল্লো তোমরা এসো
মিথিলা উঠে দাড়ালো অনুমতি পাওয়ার পর এক সেকেন্ড ও দেরি করেনি সোজা অরনির রুমে চলে আসলো অরনি বালিশে হেলান দিয়ে বসে আছে
ইহান মিথিলার পিছন পিছন অরনির রুমে যায়
অরনি দুজন কে এক সাথে দেখে খানিক টা হাসার চেষ্টা করলো কিন্তু হাসি টা কান্না হয়ে বেরিতে আসতে চাইছে তাই অরনি হাসি টা ছাপা দিয়ে রেখেছে
মিথিলা অরনি কে জড়িয়ে ধরে বল্লো
– তুই একটাবার আমার সাথে যোগাযোগ করিস নি কেনো অরু
অরনি- প্লিজ অরু বলে ডাকিস না স্মৃতির পাতা ছাপা দিয়ে রেখেছি অনেক কষ্টে
তার পর বল কেমন আছিস, তোর সব কথা শুনেছি রাহির কাছে, আমার জন্য তুই ইহান কে ফিরিয়ে দিয়েছিস
মিথিলা অরনির মুখে হাত ছাপা দিয়ে বল্লো নিজেকে দুষছিস কেনো অরু এটা আমার ভাগ্য, ভালো আছি আমি খুব ভালো আছি ভাই বোন কে নিয়ে শুধু একের পর এক প্রিয়ো মানুষ গুলো হারিয়ে যাচ্ছে আমার জীবন থেকে
অরনি- খুজে নে এমন কাউকে যে সবাইকে হারানোর ব্যাথা ভুলিয়ে দিতে পারবে
মিথিলা- থাক বাদ দে এই সব
অরনি এবার ইহানের দিকে তাকালো
– ক্ষমা করেছিস তো আমায়
ইহান অরনির দিকে তাকিয়ে আছে চোখ দিয়ে এক নাগাড়ে পানি ঝরছে
অরনি- কাঁদছিস কেনো তোরা, একদম কাঁদবি না আমার তো এটা ভেবে ভালো লাগছে যাওয়ার আগে তোদের দুজন কে এক সাথে দেখতে ফেলাম, খুব অপরাধবোধ লাগছিলো আমার জন্য তুই মিথিলা কে ভুল বুঝেছিস অরনি একটু হাসলো ভালো লাগছে তোদের দুজন কে এক সাথে
ইহান- বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম আমরা চারজন, কি থেকে যে কি হয়ে গেলো, অরু তোর অনেক অভিমান আমার উপর তাই না রে
অরনি- তুই আমার সব ছেয়ে প্রিয়ো মানুষ ছিলি কিন্তু তোর প্রিয়ো ছিলো মিথিলা ভাগ্যের খেলায় মিথিলা তোর থেকে আলাদা হয়ে গেছে,ভেবেছি এই বুঝি তোকে পেয়ে যাবো কিন্তু তুই নিখোঁজ হয়ে গেলি আমি নিজে সুদূর দেশে পাড়ি জমালাম, কখন যে জীবন টা একটু একটু করে মরনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে টের ই পাইনি, জীবনের এই খেলাঘরে আমি হেরে গেছি ইহু তোর ভালোবাসাতে ও হেরে গেছি,তাতে আফসোস নেই, আমার একটা কথা রাখবি তোরা দুজনে
মিথিলা প্রশ্ন বোধক দৃষ্টিতে ছেয়ে আছে অরনির দিকে,
ইহান – কি কথা বল
অরনি- তুই আর মিথিলা তোরা দুজন আবার এক হয়ে যা
মিথিলা- এই সব কথা থাক এখন অরু আমাদের কারো জীবন ই এখন আর আগের মতো নেই, তুই ভাব এখন যদি আগের সময় টা থাকতো আমাদের ছয় চোখের মিলনে হাসি দুষ্টুমি মিশে থাকতো কিন্তু তা নেই আছে প্রিয়োজন হারানোর ভয়, আছে দুঃখ, আছে চোখ ভরা জ্বল
মিথিলা থামতেই ইহান বল্লো
– সময় মানুষ কে অনেক কিছু শিখিয়ে যায় অরু, হয়তো তোর মনে এখন প্রশ্ন জাগবে কিন্তু আমি তোকে বলছি আজ নয় অন্য দিন তোকে সব বুঝিয়ে দিবো
অরনি- থাক আমার আর সময় হবে কি না জানি না,যদি না হয় আমার কবরে এক মুঠু মাটি দিতে যখন আসবি তখন বলিস আমি শুনে নেবো, আমি সেদিন ও থাকবো তোর আশে পাশে হয়তো বা বাতাসে মিশে কিংবা পাখির ডাক হয়ে
ইহান কিছু বলতে পারলো না অরনির কথা গুলো বুকে গিয়ে বিঁধছে না বুঝেই অরু কে কষ্ট দিয়েছি অন্যায় কিছু করেনি ভালোবেসেছে তাও নিরবে, শুধু শুধু মেয়ে টা কে ভুল বুঝে কষ্ট দিয়েছি
মিথিলা ভাবছে অন্য কথা, বিধির কি ইচ্ছে যার জন্য এতো আয়োজন তা কেই নিয়ে যাচ্ছে, তা হলে কেনো এতো কষ্ট কেনো এতো হাহাকার
অরনি- তোরা যা আমার এখন ঘুম পাচ্ছে
মিথিলা আর ইহান অরনির দিকে ছেয়ে আছে
অরনি -কি হলো যা
মিথিলা বেরিয়ে এলো এসেই একটা রিক্সা ডেকে উঠে পড়লো
মিথিলারা চলে যাওয়ার পর অরনি কান্নায় ভেঙে পড়লো, কি পাপ করেছি আমি আমাকেই কেনো শাস্তি দিলে আল্লাহ কান্নায় ভেঙে পড়ে অরনি আজ হারানো সব বন্ধু ফিরে এসেছে শুধু হারানো হাসি খুশি গুলো ফিরে আসেনি জীবন এমন কেনো ঘুরে ফিরে প্রিয়ো মানুষ গুলোর সাথে দেখা হলে তখন প্রিয়ো অনুভূতি গুলো কেনো সাথ দেয় না, সত্যি জীবনের খেলা বুঝা অনেক কঠিন
মিথিলা রিক্সায় বসে আকাশ পাতাল ভাবছে অরনির লাস্ট কথা টা নিয়ে ও অনেক ভেবেছে কিন্তু কোন কুল কিনারা পায়নি
হঠ্যাৎ মিথিলা খেয়াল করলো রিক্সা চলছে না
পাশে তাকাতেই দেখে ইভান চুপ চাপ দাঁড়িয়ে আছে
মিথিলা রিক্সাওয়ালা কে কর্কশ কন্ঠে বল্লো
– কি হলো আপনি রিক্সা থামিয়েছেন কেনো,
রিক্সাওয়ালা – আপা এই বেডা গাড়ি থামাইতে কইছে
মিথিলা- আপনি যান তো
ইভান- প্লিজ মিথিলা ফিরে চলো
মিথিলা- মানে কি কোথায় ফিরে যাবো আমি তো আমার বাসায় যাচ্ছি
ইভান- ঐ বাসায় না আমাদের বাসায় চলো
মিথিলা- স্যরি আমাদের বাসা বলতে কোন বাসা আছে সেটা আমার জানা নেই,প্লিজ পথ ছাড়ুন
ইভান- ঠিক আছে পথ ছাড়বো আমার একটা কথার উত্তর দাও তো
মিথিলা- আপনার কোন কথার উত্তর আমি দিবো না
ইভান- নায়ার ভাই ইহানের সাথে কোথায় গিয়েছিলে গাড়িতে করে
মিথিলা- এক্সকিউজমি কি বলতে ছাইছেন আপনি আমি যেখানে যাই যার সাথে ই যাই তাতে আপনার কি
ইভান- না তুমি ইহানের সাথে যোগাযোগ রাখবে না একজন প্রতারকের ভাই কখনো ভালো হয় না
মিথিলা তাচ্ছিল্য হাসি হেসে বল্লো
প্রতারকের ভাই যদি ভালো না হয় তা হলে একজন প্রতারক কি করে ভালো হয়
ইভান- আমি বুঝতে পারিনি মিথি প্লিজ একটা সুযোগ দাও
মিথিলা- আপনি রাস্তায় দাঁড়িয়ে সিনক্রিয়েট করছেন কেনো,কি পাব্লিকের হাতে ধোলাই খেতে ইচ্ছে করছে,আপনি যদি এখান থেকে এখন না যান তা হলে আমি এই কাজ টা ই করবো আর তাতে আপনার মান সম্মান বাড়বে না নিশ্চয়ই
মামা আপনি প্লিজ রিক্সা ঘুরিয়ে নিন এখানে দাড় করিয়ে রাখার কোন মানে হয় না
মিথিলা বাসায় চলে এলো, নির্ঝরিণীর মুখ টা কেমন থম থমে
মিথিলা- কি হয়েছেরে নির্ঝর
নির্ঝরিণী – বড় আপু এসেছে
মিথিলা-ভালো কথা,তুই মুখ এমন প্যাচার মতো করে রাখছিস কেনো
নির্ঝরিণী – দুলা ভাই আপু কে মেরেছে
মিথিলা – মানে,কেনো
নির্ঝরিণী – আমি জানি না আপু রুমেই আছে তুমি আপুর সাথে কথা বলো
মিথিলা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো এমন কেনো হচ্ছে আমার সাথে কোন।দিক থেকে কোন ভালো খবর পাই না, কি যে হয়েছে
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন