খেলাঘর. পর্ব-৩২
লেখা- সুলতানা ইতি
আয়াপের কথা শুনে ছেয়ে আছে তার দিকে নির্ঝরিণীর মুখে তার কোন কথা নেই পুরো বরফের মতো জমে গেছে
আয়াপ- হেই তুমি কি সবার সামনেই এমন নার্ভাস ফিল করো নাকি,আমাকে দেখলেই এমন হয়ে যাও
নির্ঝরিণী কোন কথা বল্লো না শুধু ঠোট দুটো নড়ে উঠলো কিন্তু কোন শব্দ বের হয়নি
আনিশা-ওকে আপনারা পরে কথা বলবেন এখন কেক কাটতে হবে, চলুন
কেক কাটার পর আবির বল্লো
আয়াপ একটা গান ধর আজকের দিনে তুই গান না গাইলে কেমন দেখায় বলতো
আয়াপ গান তো গাইবো ই, গান ই তো আমার প্রান
আয়াপ গান ধরলো
“নির্ঝরে বৃষ্টি করেছে সৃষ্টি
মনের মাঝে ভালো লাগার নতুন আবেশ
এলো মেলো ভেবে যায় মন তোমাকে সারাক্ষন
এতো ভালোবাসে তোমায় মন, তবু ও লাগে অচেনা অচেনা…
নির্ঝরে বৃষ্টি……..
দিলে এক পলক দেখা
তখন ই হয়েছে লেখা আছো তুমি
হৃদয়ে আঁকা
হোওওওও নির্ঝরে বৃষ্টি করেছে সৃষ্টি
মনের মাঝে ভালো লাগার নতুন ছোয়া ”
নির্ঝরিণী তনয় হয়ে গান শুনছিলো বাইরে বৃষ্টির ছন্দ গানের ছন্দ মিলেমিশে একা কার হয়ে গেছে মনে হচ্ছে গানের প্রতিটা শব্দ আমার জন্য গাওয়া
আয়াপের গান শেষ হতেই সবাই আরেকটা গাওয়ার জন্য রিকুয়েস্ট করলো
আয়াপ- গাইজ গান তো আমি গাইবো,তোমাদের কথা আমি ফেলতে পারবো না,কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে
আমন্ত্রিত সব মেহমান এক স্বরে বলে উঠলো শর্ত যা ই হোক তারা মানবে তবু ও তারা গান শুনবে
আয়াপ- আমার সাথে আরেক জনের গান গাইতে হবে আর সে হচ্ছে আনিশার পাশে দাঁড়ানো কোকিলা কন্ঠি প্লিজ চলে আসুন
নির্ঝরিণীর আবার হার্টবীট বেড়ে যায় সাথে সাথে চোখ বুঝে ফেললো
আনিশা- কিরে আয়
নির্ঝরিণী – আ,মি আমি
আনিশা- তুই পরে তোতলাস আগে আয় আনিশা হাত ধরে আয়াপের পাশে দাড় করিয়ে দিলো
আয়াপ গান শুরু করলো
“নাম টা তোমার জানা কি যাবে
ঠিকানাটা পাওয়া কি যাবে???হোওওওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানা টা পাওয়া কি যাবে
এই টুকু বলে নির্ঝরিণী কে বল্লো এই বার তোমার গাওয়ার কথা
নির্ঝরিণী লজ্জা পেয়ে গেলো আয়াপের এর এমন কথা তে
আয়াপ লজ্জা পেতে বলিনি গান গাইতে বলেছি
এবার নির্ঝরিণী সব লজ্জা সংকোচ ভুলে গাইতে শুরু করলো
??নামটা না হয় আমার রাখো তুমি তোমার. নিজের মতো করে ডাকবে যে নামে আমায় সারাটি জীবন ধরে ???
হোওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানাটা পাওয়া কি যাবে??????????
কেড়ে নিয়েছো মন তুমি প্রথম দেখায়,, পরিচয় না জানলে খুঁজবো তোমায় কোথায়
ছুঁয়েছ এই মন প্রথম দেখায় যখন পেয়ে যাবে পরিচয় ভেবনা এতো এখন
হোওওও নাম টা তোমার জানা কি যাবে ঠিকানা টা কি পাওয়া কি যাবে ?????????????
নিজের দেয়া নামে আগে ডাকো আমায় পরিচয় পরে না হয় দেয়া যাবে তোমায় ?????????
পড়েছি বেকায়দায় কি আর করা যায় আজ থেকে কোকিলা বলে ডাকবো যে তোমায়
হোওওও নাম টা আমার এখন বলা যাবে ঠিকানাটা এখন দেয়া যাবে ??নাম টা আমার এখন বলা যাবে ঠিকানাটা এখন দেয়া যাবে
“”” আমার নাম “”””????????
নির্ঝরিণী নাম না বলে গান বন্ধ করে দিলো চারিদিকে করতালিতে মুখর
নির্ঝরিণী আবার এসে আনিশার পাশে দাড়ালো
আনিশা- খাবার রেডি চল খাবি, সবাইকে খেতে দিলো প্রতি টেবিলে দুজন করে
কাকতালিয়ে ভাবে আয়াপ আর নির্ঝরিণী এক টেবিলে পড়ে গেলো
আয়াপ কে দেখে নির্ঝরিণীর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো
আয়াপ- তোমার বান্ধুবীর কাছে শুনলাম তুমি বেশ ছটফট করা মেয়ে,অনেক কথা বলো কিন্তু আমার সামনে আসলে কথা বলো না কেনো
নির্ঝরিণী কিছু বল্লো না শুধু মুচকি হাসলো
আয়াপ নির্ঝরিণীর হাসি দেখে আপন মনেই বলে উঠলো
“ঐ মেয়ে তোর মুচকি হাসি দেখে
হৃদয় আমার উঠলো জেগে
প্রেমের উজান যায় বয়ে
আমার এই মন সাগরে
প্রেমের খেয়া পার করে আয়না,
আমার এ মন পিঞ্জরে
যতন করে আদর দিয়ে রাখি তোকে
হিয়ার মাঝে,তোর ঐরেশমি চুলের মাঝে
রাখতে দিবি কি
আমার হৃদয় নিংড়ানো ফুল
চলে আয়না হিয়ার মাঝে
রাখবো তোর সব ই বায়না
ভিজবো দুজন একই সাথে
দুজনারে প্রেম সাগরে
ও সখি তুই করিস না আর বাহানা”
নির্ঝরিণী খাওয়া কম্পলিট না করে উঠে গেলো
আয়াপ- যাক ভাভা চলে গেলো? হয় হয় এমনি হয় কতো মেয়ের ক্রাশ আমি আর আমার ক্রাশ আমাকে পাত্তাই দিচ্ছে না,নিজেই নিজের কথায় হাসলো
রাত বারোটা বাজে আনিশা নির্ঝরিণী কে বল্লো ঝড় তুই থেকে যা না আজ
নির্ঝরিণী – নারে আপু বকবে তা ছাড়া আপু আমায় নিতে আসবে
আনিশা- বাইরে বৃষ্টি হচ্ছে তোর আপু মনে হয় আজ আর আসতে পারবে না
নির্ঝরিণী – আপু যখন একবার আসবে বলেছে তখন আসবেই আমি বরং গেইটে গিয়ে অপেক্ষা করি তা ছাড়া বৃষ্টি এখন থেমে গেছে
আনিশা- ওকে, তুই যা ভালো বুঝিস
নির্ঝরিণী গেইটের সামনে অনেক্ষন দাঁড়িয়ে রইলো
দূর থেকে আয়াপ নির্ঝরিণী কে দেখছে
মেয়েটা এতো সুন্দর কেনো আহামরি সুন্দরী না হলে এতো ভালো লাগে কেনো তাকে
সব সময় দেখতাম মেয়েদের গালে টোল পড়ে আর এমন টোল পড়া মেয়েদের উপর কতো ছেলে ই ক্রাশ খায়, আমি ও এমন ক্রাশ খেয়েছি,কিন্তু এই মেয়ে তো পুরো ভিন্ন,
এই মেয়ে হাসলে তার থুঁতনির দু পাশে টোল পড়ে কি সুন্দর ই না লাগে তাকে এই রকম আন কমন সুন্দর্য আমি আর দেখিনি থুঁতনির দু পাশে টোল তো কখনো ই দেখিনি
কপালের উপর পড়ে থাকা গুচ্ছ চুল যেন ওর সুন্দর্যের আরেক উপমা একটা মেয়ের এতো গুলো আকর্ষনিয় সুন্দর্য থাকতে পারে,সেই প্রথম দিনের ওর লজ্জা মেশানো হাসি আমায় পাগল করে দিয়েছে তার পর দৌড়ে স্টেজ থেকে নেমে যাওয়া হার্ট ছেপে বসে থাকা সব কিছু যেন এতো মহময়ী লাগছে কেনো?
কিন্তু ও এখানে দাঁড়িয়ে আছে কেনো,কেউ কি আসবে তাকে নিতে? আমি কি জিজ্ঞাস করবো? যদি আমায় ছ্যাচড়া মনে করে, ধেৎ মনে করুক তাতে আমার কি গিয়ে জিজ্ঞাস করি
– এখানে দাঁড়িয়ে আছো যে,কেউ কি আসবে?
নির্ঝরিণী এক পলক তাকিয়ে আবার দৃষ্টি সরিয়ে বল্লো
– হুম
আয়াপ- কে বয় ফ্রেন্ড?,নিজে প্রশ্ন করে নিজেই মনে মনে বল্লো আল্লাহ যেন উওর টা হ্যাঁ না হয়
নির্ঝরিণী নিচের দিকে তাকিয়ে বল্লো
আমার আপু আসবে
আয়াপ যেন হাফ ছেড়ে বাচলো,একটা হাসি দিয়ে বল্লো
– এতো রাতে মনে হয় তোমার আপু আসবে না
নির্ঝরিণী – আপু যখন একবার আসবে বলেছে না এসে আর থাকবে না
আয়াপ- দেখো বৃষ্টি মনে হয় আবার শুরু হবে চলো তোমায় নামিয়ে দিই তোমার বাসায়
এই বৃষ্টির রাতে তোমার আপু আর আসবে না মনে হয়
তুমি চাইলে আমি তোমাকে ড্রপ করতে পারি আমার সাথে গাড়ি আছে
নির্ঝরিণী – কোন দরকার নেই আমার আপু আসবে বলেছে যখন তখন আসবে ই
আয়াপ- এতো রাতে একা দাঁড়িয়ে থাকা সোভা পাচ্ছে না প্লিজ চলো তোমায় নামিয়ে দিয়ে আসি, ট্রাস্ট মি,কোন প্রব্লেম হবে না
নির্ঝরিণী আয়াপের দিকে আবার তাকালো না, নিঃসন্দেহ একে বিশ্বাস করা যায়,মানুষের অপরাধ তার চোখের চাহনিতে লুকিয়ে থাকে এর চোখ তা বলছে না
আয়াপ- দাঁড়িয়ে না থেকে চলো তো
নির্ঝরিণী আর কোন কথা না বলে গাড়ির পিছনের সিটে গিয়ে বসলো
আয়াপ আর কিছু বল্লো না একটু কথা বলার সুযোগ পেয়েছে এতেই হলো,সামনের সিটে আসতে বললে যদি কিছু মনে করে
আয়াপ গাড়ি স্ট্রাট দিলো
গাড়ির লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে নির্ঝরিণী কে একবার দেখে বল্লো
– তোমার নাম টা এখন ও জানা হয়নি বলবে কি তোমার নাম টা
– নির্ঝরিণী
আয়াপ- নির্ঝরিণী, নিরজোহর একজন কন্ঠ শিল্পী, চাইলে তুমি ও ভালো গাইকা হতে পারবে যদি চাও আমি তোমায় হেল্প করবো
নির্ঝরিণী – আপু বকবে এই সব বললে
আয়াপ- তোমার আপু কি বদরাগী নাকি
নির্ঝরিণী এবার জোর গলায় কন্ঠে একটু ঝাঁজ মিশিয়ে বল্লো
– কাউকে না দেখে তাকে ভালো করে না ছিনে,তার ব্যাপারে মন্তব্য করা ঠিক নয়, আমার আপু অনেক ভালো ‘ my sister world best sister’
আয়াপ মনে মনে বলছে যাক ভাভা কি এমন বললাম যে এতো রিয়েক্ট করতে হলো
– ওহ তাই, ভালো তো খুব ভালো
মিথিলা আজ রুমের দরজা বন্ধ করে বসে আছে কি করবে কিচ্ছু তার মাথায় আসছে না
আয়ান কয়েক বার এসে ডেকে গেছে তবু ও কোন রেসপন্স করেনি, কয়েক দিন পর আয়ান আর নির্ঝরের পরীক্ষার ফি আসবে কোথা থেকে দিবে এতো টাকা,কেনো ই বার বার আমার সাথে এমন হচ্ছে
এর মাঝে নির্ঝরিণী এসে যায়,বাসায় এসে আয়ানের কাছে সব কথা শুনে নির্ঝরিণী ভয় পেয়ে যায়, আপু তো এমন কখনো করে না আজ তা হলে কি হলো,আমাকে আনতে যাবে বলে তা ও গেলো না, কি হয়েছে আপুর
চলবে
ভুল ক্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন