Khatarnak Isq Part-13 and Last part

0
2916

#Khatarnak_Isq.[Impossible Love]
#Sumaiya_Moni.
#Part_13.[ অন্তিম পর্ব ]
_______________________
দিন শেষে রাত হয়ে এলো।চার দিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। চাঁদের ছিঁটেফোঁটাও নেই আকাশে। এদিকে যুদ্ধের জন্য এলেন ও জ্বীন রা প্রস্তুত।ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের বাহিরে সবাই এক জোট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এলেন সবাইকে বলে কয়ে দিচ্ছে। সবাই প্রস্তুত আছে। নিজের বিশাল ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীন সৈন্য নিয়ে যুদ্ধের উদ্দেশ্য গেল এলেন।চোখে ভয়ংকর রাগ।

অন্যপ্রান্তে..

স্যাম নেকড়েদের নিয়ে জিনানের সাথে হাত মিলিয়েছে। তারাও যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত। কিন্তু তাদের চেয়ে এলেনদের লোক সংখ্যা বেশি।এটা জিনান জানত। তাই তিনি একটু চিন্তিত।

-“জিনান আপনি এত টেনশন নিবেন না। আমাদের শক্তি দিয়ে মারব এলেনকে।” স্যাম বলে।

-“তুমি বুঝতে পারছো না। এলেন কোনো সাধারণ ভ্যাম্পায়ার নয়। ভ্যাম্পায়ার মন্সটার। আমরা ওর সামনে কিছুই না। খুব শক্তিশালি এলেন।” টেনশন নিয়ে কথাটা বললেন।

-“আহহ! আপনি এত টেনশন করবেন না। আমাদের কাছে কায়রা আছে। এলেনকে নত হতেই হবে আমাদের কাছে।”ইয়ান বলে।

-“হুম! কায়রাকে দিয়ে এলেনকে জব্দ করব। ”

-“সব কিছু এতটা সহজ না!” এলেন উড়ে তাদের সামনে নিচে নামতে নামতে বলে কথাটা।

তারা চমকে যায় এলেনকে দেখে। স্যাম এলেন নামটা মুখে উচ্চারণ করতেই মুখের ভেতর রুপোর তৈরি তলোয়ার ঢুকিয়ে দেয়। স্যাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এলেন জিনান ও ইয়ানের দিকে হিংস্র চোখে তাকিয়ে বলে,
-“এবার তোদের পালা।”

-“আয় দেখি কে কাকে মারে।” বলেই জিনান, ইয়ান ঝাঁপিয়ে পড়ে এলেনের উপর। তিন জনের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়ে গেছে। বাহিরেও তুমুলযুদ্ধ শুরু হয়েছে।

আলফি আস্তে আস্তে মাথায় হাত দিয়ে দেখল কেটে গেছে। ওঠে বসতেই নিজেকে কোনো এক শক্তির দ্বারা আবদ্ধ থাকতে দেখে নিজেকে। যার কারণে এক পাও সামনে যেতে পারছে না। বাহিরে প্রচন্ড শব্দ হচ্ছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ চলছে। আলফি নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। নিজের শক্তি দিয়ে বার বার বেঁধে রাখার শক্তিকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু হচ্ছে না। হঠাৎ খট করে একটা শব্দ হয়। আলফি সামনে তাকিয়ে দেখে এরোন এসেছে। এরোন কোনো কথা না বলে রুপোর তৈরি তলোয়ার দিয়ে চার দিকে আঘাত করতেই আলফির শরীর হালকা হয়ে যায়। আলফি মুক্ত হয়ে যায়। মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলফি এরোনকে জিজ্ঞেস করে,
-“বাহিরে কী হচ্ছে এরোন ভাইয়া?”

-“যুদ্ধ!”

আলফি অবাক হয়ে যায়। বলে,
-“যুদ্ধ! ”

-“হ্যাঁ! এসো আমার সাথে।”

আলফি বের হবার আগে ইমতিয়াজকে মুক্ত করে বের হয়। আলফি বাহিরে নজর ফেলতেই রূপপরিবর্তন করে ফেলে। হিংস্র পরীর রূপ ধারণ করে নিজের জ্বীনি তলোয়ার নিয়ে হামলা করে নেকড়ে ও দুষ্ট জ্বীন দের উপর। ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনরা আলফিকে দেখে যুদ্ধ থামিয়ে তাকিয়ে থাকে। আলফি এক এক করে ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনদের মেরে ফেলছে। সাথে এরোন,ইয়াঙ্কও।

এইপ্রান্তে….

এলেন এখনো ইয়ান ও জিনানের সাথে মারামারি করছে। তারা দু’জন এলেনের সাথে পেরে উঠছে না। এলেনের শক্তির কাছে দুষ্ট জ্বীনের শক্তি কিছুই না এমনটা মনে হচ্ছে। মারামারির এক পর্যায় আলফি সেখানে উপস্থিত হয়। আলফিকে দেখে ইয়ান তেড়ে আসে ওর কাছে। এলেন চিল্লিয়ে আলফিকে বলে,
-“আলফি তুমি এখান থেকে চলে যাও। আমি একাই ওদের সাথে লড়াই করবো।”

-“নাহ!”

বলেই আলফি ইয়ানের সাথে মারামারি করতে থাকে। চারজনের মধ্যে তুমুল মারামারি চলতে থাকে। ইয়ান,জিনান এক পর্যায় শক্তি হারিয়ে দুর্বল হয়ে যায়। আলফি এই সুযোগে তলোয়ার দিয়ে প্রথমে ইয়ানের বুকে গেথে দেয়। ফের ঘুরে গিয়ে জিনানের বুকে ঢুকিয়ে দেয়। তাঁদের মৃত্যু হয়ে যায়। কালো ধোঁয়ার মতো তাঁদের দেহ বাতাসে মিশে যায়।
আলফি নিচের দিকে তাকিয়ে আছে হাতে তলোয়ার নিয়ে। চোখের কোণায় পানি। যাকে এতদিন মামা বলে ডেকেছে। যার আদরে বড় হয়েছে তাকে আজ নিজ হাতে মেরে ফেললো। নাক টেনে চোখের পানি মুছে ফেলে। নিজেকে শক্ত করে তলোয়ার মুঠিবদ্ধ করে দাঁড়ায়। এলেন পিছন থেকে হেঁটে আলফির কাছে আসে।

যুদ্ধ শেষ,সব কিছু শান্ত হয়ে গেছে । আলফি ওদের জ্বীনজাতিদের নিয়ে রাজ্যে ফিরে আসে। সাথে এলেন,এরোন ইয়াঙ্কে নিয়ে। ভ্যাম্পায়ার রা এখন জ্বীনদের বন্ধু বলা যায়। ইমতিয়াজ জ্বীন ও ভ্যাম্পায়ার দের সামনে দাঁড় করিয়ে ঘোষণা করে,
-“আমাদের রাজ্যের শাহজাদী কায়রার সাথে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের কিং আরলেনের বিবাহ হবে।”

কথাটা শুনে আলফি,এলেন ইমতিয়াজের দিকে তাকায়। ওরা বুঝতে পারছে না এটা কিভাবে সম্ভব।

ইমতিয়াজ হেসে বলে,
-“তোমরা অবাক হয়েছো তাই তো? সত্যিটা শোনো তাহলে। আলফির বাবা ছিল জ্বীন। আর মা ছিল ভ্যাম্পায়ার। তারাও ভালোবেসে বিয়ে করেছেন। তাঁদের বিয়ের পর অনেক ভ্যাম্পায়ার ও জ্বীনরা ক্ষেপে যায়। যার কারণে তারা বেশিদিন এক সাথে থাকতে পারে না। এবিলের বাবার হাতে মৃত্যু হয় তাঁদের। জিনানকে বিশ্বাস করে মামা বলে দাবী করে তাঁর হাতে তুলে দেই। কিন্তু তিনি তোমাকে তাঁর খারাপ কাজে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। কালো জাদুর মাধ্যমে তোমাকে মেরে জ্বীনি তলোয়ার পেতে চেয়েছিল। কিন্তু তা আর হলো না।”

আলফি,এলেন অবাক হয়ে যায় তাঁর কথা শুনে। শুধু তারা নয় এরোনো অবাক হয়। কিন্তু ইয়াঙ্ক সব জানত। ইমতিয়াজ আরো বলে,
-“এই যে ইয়াঙ্ককে দেখছো। ওনি তোমার আসল মামা। তোমার মা এলিসার আপন ভাই। ”

আলফি ইয়াঙ্কের দিকে তাকায়। ইয়াঙ্ক মৃদু হাসে। আলফি মামা বলে ডেকে তাকে জড়িয়ে ধরে।

-“তাঁর মানে আলফি অর্ধেক ভ্যাম্পায়ার,অর্ধেক পরী?” এলেন প্রশ্ন করে।

-“হ্যাঁ!”

-“এই জন্য আমি আলফির রক্ত খেতে পারিনি। কারণ আলফির শরীরে ভ্যাম্পায়ারের শক্তি ছিল।”

-“হ্যাঁ,আরলেন।”

এলেনের কাছে সবটা খোলাসা হয়। বুঝতে পারে সব।

-“কায়রা আমাকে মাফ করে দেও। আগে বলতে গিয়েও বলতে পারিনি আমি।”

-“মাফ চেয়ে আমাকে ছোট করবেন না চাচ্চু। আপনি কোনো অন্যায় করেননি।”

ইমতিয়াজ মুচকি হেসে আলফির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

দুই দিন পর।

রাতে…

আজ এলেন ও আলফির বাসর রাত। আলফি বিছানায় বসে আছে চুপটি করে। খুব ধুমধাম ভাবেই ওদের বিয়ে হয়েছে। ছিল না কোনো কিছুর কমতি। এলেন একটি গোলাপ ফুল হাতে নিয়ে এসে বসে। আলফির দিকে তাকিয়ে থুতনিতে হাত রেখে উঁচু করে।

-“আলফি? তোমাদের ইসলামে কী যেন বলে? ও হ্যাঁ! মাশাআল্লাহ! ”

আলফি হেসে দেয়। এলেনও ঠোঁটে হাসি রেখে বলে,
-“কী? ঠিক হয়নি?”

-“হয়েছে।”

এলেন গোলাপ ফুল আলফির দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
-“সবার ভালোবাসার মতো আমাদের ভালোবাসাটা এক নয়। আমাদের ভালোসাটার নতুন নাম দরকার। আর সেই নামটা হবে #Khatarnak_Isq. কী নাম ঠিক আছে?”

আলফি প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসে। এলেনের হাত থেকে ফুলটা নেয়। এলেন আলফিকে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বলে,
-“আই লাভ ইউ কায়রা। ”

-“লাভ ইউ টু আরলেন।”

দুজনে ভালোবাসার সমুদ্রে ডুব দেয়। নিজেদের ভালোবাসায় মগ্ন হয়ে যায়।এক হয়ে যায় জনম জনমের জন্য।

-“শালার এলেন বিয়ে করে মজা করে বাসর ঘর করছে। আর আমি এখনে সিংগেল রয়ে গেলাম।” এরোন বিরক্ত নিয়ে কথাটা বলে। লিনার এরোনের পিছনে দাঁড়িয়ে কথাটা শুনে হাসতে থাকে।এরোন ঝড়ের বেগে লিনারের সামনে এসে মুখে কাছে গিয়ে বলে,
-“আমারও একদিন সময় আসবে। তখন তোমার এই কুটকুটি হাসি ফুসসস হয়ে যাবে। ডাকলেও দেখা মিলবে না হুহ!”

লিনার এরোনের কপালে এক আঙুল রেখে দূরে সরিয়ে বলে,
-“আগে আসুক সেই দিন। তারপর দেখা যাবে নে।” কিছুটা ভাব নিয়ে বলে লিনার।

-“ওক্কে বেবি….! হবে।”

-“কী হবে?”

-“প্লে!”

-“শয়তান!”

-“আরে না আমি ভ্যাম্পায়ার!” হেসে দিয়ে লিসারকে জড়িয়ে ধরে। লিনারও হেসে দেয়।

সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছানোর জন্য নদী যেমন নিজেই নিজের রাস্তা খুঁজে নেয়। সত্যিকারের ভালোবাসাও ঠিক তেমন,দেখতে যতোই অসম্ভব,ভয়ংকর হোক না কেনো। নিজেই নিজের পূর্নতা পাবার রাস্তা খুঁজে নেয়।

সমাপ্ত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে