In Depths of Love Part-08

0
2556

#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০৮ || [ লাস্ট পার্ট ]
__________________________________________

রিমি চিৎকার দিয়ে ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠে। রিমির এত জোরে চিৎকারে রোমানের ঘুম ভেঙে যায়। রিমিকে ঘাবড়াতে দেখে রোমান পাশের টেবিল থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে রিমিকে দেয়। রিমি এক নিমিষেই গ্লাসের পুরো পানি ঢকঢক করে খেয়ে ফেলে।

রোমান রিমির কাঁধে হাত রেখে বলল,
–‘কি হয়েছে? এত জোরে চিৎকার কেন করলে? খারাপ কোনো স্বপ্ন দেখছিলে না-কি?’

রিমি রোমানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আর বলে,
–‘পারব না, আমি আপনাকে ছাড়া থাকতে পারব না।’

–‘কি হয়েছে সে-টা তো আগে বলবে?’

–‘খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। না, না অনেক খারাপ স্বপ্ন দেখেছি।’

–‘কি এমন দেখেছো? যার এত ভয় তোমার!’

রিমি রোমানকে পুরোটা খুলে বলল। রিমির কথা শুনে রোমান হু হা করে হাসতে থাকল। রোমানের এত সিরিয়াস মুহুর্তে হাসি দেখে রিমির প্রচুর রাগ হলো। রিমির দিকে তাকিয়ে রিমিকে রাগে ফুসতে দেখে অনেক কষ্টে তার হাসি দমন করে বলল,
–‘আরে পাগলী! এটা তো একটা স্বপ্ন ছিল। বাস্তব তো আর না। এত ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।’

–‘আপনার সাথে আমার আর কথা নেই। যান!’

–‘আরে রাগ করো না। আচ্ছা, তোমাকে একটা কথা বলি। আমি চাই না এই ঘটনাটা পরবর্তীতে আমার জীবনে কোনো প্রকার প্রভাব ফেলুক।’

রিমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘কি ঘটনা?’

রোমান ওর ফোন নিয়ে গ্যালিরে ঢুকল। সেখান থেকে একটা মেয়ের ছবি বের করে রিমির হাতে ফোনটা দিল।

–‘এইযে, এই মেয়েটা হলো তিথী! যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। কিন্তু এই মেয়েটাই আমার নামে পুলিশ কেস করেছিল যে, আমি না-কি প্লে বয়। অনেক মেয়ের সাথে না-কি রাত কাটিয়েছি। কিভাবে ও পারল আমার বন্ধুত্বের সম্পর্কটাকে এভাবে নষ্ট করে দিতে? কিভাবে? ওর এই ধোঁকার জন্য আমি ভয় পাই, যদি তুমিও আমাকে ধোঁকা দেও। তাই তোমার সাথে এত খারাপ বিহেভ করেছি এতদিন। আই’ম সর‍্যি, রিমি! পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও।’

–‘আপনার সর‍্যি বলার কোনো প্রয়োজন নেই। আপনার জায়গায় আমি থাকলে আমিও নিশ্চয় এমনটাই করতাম। আমি কেন? যে কারো করাটা স্বাভাবিক। আর আই’ম সর‍্যি, আমি জানতাম না আমার বোন আপনার সাথে এত বাজে একটা কাজ করেছে! জানলে ওকে ঠিক শাস্তি দিতাম।’

–‘ওয়েট! ও তোমার বোন মানে?’

–‘তিথী আমার খালাতো বোন হয়।’

–‘তাই তো তোমার গুনগান করলে ও এত জেলাস ফিল করত।’

–‘মানে?’

–‘মানে, তোমার মনে আছে! তুমি একদিন তোমার গাড়ি নিয়ে তাড়াহুড়োয় কোথাও যাচ্ছিলে। তখন তোমার গাড়ির সাথে লেগে এক পিচ্চির হাত-পা ছিলে যায়। তখন লোকজন তোমায় যেতে দেয় না। তখন আমিই তো ওদের বুঝিয়ে তোমাকে যেতে সাহায্য করি।’

–‘ওটা আপনি ছিলেন?’

–‘হ্যাঁ! তোমাকে ওদিন প্রথম দেখাতে ভালোবেসে ফেলি। আমি গাড়িতে এসে যে-টা তিথীকে বলি। ও তখন একবারো বলে নি, তুমি যে ওর বোন। বরং যতবার তোমার কথা তুলতাম, ও জেলাস হত। আমি তো ভেবেছিলাম তোমায় আমি কখনো পাব না। তাই তো তোমার সাথে দেখা হয় না আমার আর। কিন্তু ভাগ্যের কি পরিহাস! ওইদিন রিধি আর রোহানের বিয়েতে তোমাকে দেখি। আমি আর দেরি করতে চাইতাম না। যদি তুমি হারিয়ে যাও। তাই ও দিন তোমার মা-বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। এজন্য দেখো, আজ আমরা একসাথে।’

–‘ওহ, আসল মিস্ট্রি তাহলে এখানে। যাক গে, এইসব বাদ! তিথী আর যখন আপনার সাথে এত বাজে একটা কাহিনী ঘটাল। আপনি তাহলে ওরে শাস্তি কেন দিলেন না? কেন ছেড়ে দিয়ে রেখেছেন?’

–‘বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল ও আমার। কিভাবে ওকে শাস্তি দেই? বলো! চাইলেও যে পারতাম না।’

–‘আই আন্ডারস্ট্যান্ড। আসল বন্ধুত্বের সম্পর্কগুলো এমনই হয়। কিন্তু আমি ওর থেকে জেনেই ছাড়ব, কেন ও আপনার সাথে এমনটা করল?’

–‘তা নাহয় জেনে নিও। কিন্তু তাই বলে আমাদের ঘুরাঘুরি টা যেন স্পয়েল না হয়। সে-টা জানি মাথায় থাকে।’

–‘হুম, থাকবে।’

–‘আচ্ছা, তাহলে এখন ঘুমাও। সকালে আমরা ঘুরার জন্য বের হব!’
___________________🍁🍁

দু’জনে সকালে ফ্রেশ হয়ে খেয়ে রেডি হয়ে নিল। দু’জনে আজ মেচিং ক্লথস পড়েছে। দু’জনের গায়েই সাদা রঙের পোশাক।

রিমি খুশিতে খুশিতে বলল,
–‘চলেন, এবার আমরা যাই।’

–‘হ্যাঁ, যাব তো। রূপা আর হৃদয়কেও ফোন করে একসঙ্গে গেলে কেমন হয়?’

–‘উফফ! সেই দারুন হয়। তাহলে আর দেরি কিসের? আমি রূপাকে কল দিচ্ছি।’ বলে রিমি ফোন নিয়ে রূপাদের নিচে রিসেপশনে যেতে বলল।
.
.
.
চারজনে রিসেপশনে একসাথে হওয়ার পর ওরা সবাই মিলে ঘুরতে গেল। সমুদ্রের ধারে গিয়ে রিমি হাত ছড়িয়ে দিয়ে চিৎকার করছে। সমুদ্রের ঢেউয়ে পানি এসে রিমির শাড়ি ভিজিয়ে দিচ্ছে। প্রচন্ড বাতাসে রিমির খোলা চুলগুলো মুক্তভাবে উড়ে বেড়াচ্ছে। রিমি এতে উৎফুল্ল হয়ে উঠছে। রিমিকে এত খুশি দেখে সবাই খুব খুশি। রিমি হঠাৎ তার আনন্দ উপভোগ করা বাদ দিয়ে পিছনে তাকাল। সবাইকে এক জায়গায় স্থির থাকতে সে দৌঁড়ে তাদের দিকে আসছে। রোমানসহ বাকিরা রিমিকে আস্তে আসতে বলছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা? রিমি ওর মত দৌঁড়ে আসছে। আসার সময় একটা মেয়ের সাথে খুব জোরে ধাক্কা লাগে রিমির। রিমি সেদিকে পাত্তা না দিয়ে সবার কাছে এসে উপস্থিত হলো।

–‘এই তোমাকে বারবার বলছি না আস্তে ধীরে আসতে? কথা কি কানে যায় না? বেশি বুঝো কেন সবসময়?’ (ধমক দিয়ে রোমান বলল)

–‘ঘুরতে এসেও বকা দিবেন? যান, আপনার সাথে আর কথা নেই। আড়ি!’

রিমিকে মুখ ফোলানো দেখে সবাই ফিক করে হেসে দিল। রোমান রিমির সামনে গিয়ে কান ধরে বলল,
–‘সর‍্যি! আর বকব না। প্লিজ কথা অফ করো না!’

–‘আচ্ছা! বাট আমাকে অনেক চকলেট আর আইসক্রিম কিনে দিতে হবে। নাহলে আবার আড়ি!’

–‘জাস্ট এটুকুই?’

–‘হ্যাঁ!’

–‘আচ্ছা দিব কিনে। এবার হ্যাপি?’

–‘অনেক।’

সবাই যে যার মত করে উপভোগ করছে। কিন্তু রিমির চোখ বারবার চেয়ারে বসে থাকা মেয়েটার দিকে! কারণ অনেকক্ষন ধরে মেয়েটা রিমির উপর নজর রাখছে। রিমি মেয়েটাকে দেখতে পাচ্ছে না। কারণ মেয়েটার মুখ ঢাকা!

রিমি রূপাকে বলে মেয়েটার কাছে যেতে লাগল। রিমিকে দেখে মেয়েটা তার বসা থেকে উঠে হাঁটতে শুরু করে। রিমিও পিছু নিতে থাকল। এক টাইম তারা রিসোর্টের ছাদে চলে আসে। মেয়েটা ছাদের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে। রিমি মেয়েটার কাঁধে হাত রাখতেই মেয়েটা তার দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।

–‘আমি খেয়াল করছিলাম আপনি অনেক সময় ধরে আমার দিকে লক্ষ্য রাখছেন! কিন্তু কেন?’

রিমির কথা শুনে মেয়েটা তার মুখ বের করল। মেয়েটার মুখ দেখে রিমি অবাক হয়ে বলল,
–‘তুই? তুই এখানে কেন?’

–‘তোকে শেষ করতে এসেছি।’

–‘আমাকে? কিন্তু কেন? কি করেছি আমি?’

–‘কি করিস নি, তাই বল!’

–‘দেখ, তিথী! কথা না ঘুরিয়ে সোজাসাপটা উত্তর দে।’

–‘তাহলে শোন। রোমানের সামনে আমি যাই না কারণ, ওকে মিথ্যা কেসে আমি ফাঁসিয়েছি। আর কেন ফাঁসিয়েছি জানিস?’

রিমি মাথা ঝাঁকিয়ে না উত্তর দিল। তিথী আবার বলা শুরু করল,
–‘মনে আছে, তুই একদিন গাড়ি এক্সিডেন্ট করছিলি। সেদিন রোমান তোকে হেল্প করেছিল। আমি তোকে দেখেছিলাম ওইদিন, বাট তুই তাড়াহুড়ো থাকায় তোকে ডাকি নি আর। রোমান যখন তোর কথা বলল, তখন ওরে বলতে চেয়েছিলাম ওইটা আমার বোন হয়। কিন্তু ও তোর এত প্রশংসা করল, যা আমার সহ্য হয় না। তাই আর বলিনি তোর কথা। আর সহ্য হবে কি করে? আমি যে ওকে বড্ড ভালোবাসতাম।’

–‘ভালো যদি বাসতি! তাহলে মিথ্যা মামলা কেন দিলি?’

–‘ওইদিনের পর রোমান সবসময় তোর কথা বলত। একদিন তো বলেই ফেলে তোকে অনেক ভালোবাসে ফেলেছে। আমি যে ওরে ভালোবাসি, এটা তো ও জানে না। ওইদিন জানাতে চেয়েছিলাম, বাট তুই সেদিন পথের কাঁটা হয়ে আসিস। তাই যখন দেখলাম, রোমান আমার থেকে বেশি তোর কথা বলে। তখন ডিসিশন নেই, ওকে শেষ করে দিব আমি। ও যখন আমার হবে না, তখন আর কারো হবে না। তাই মিথ্যা মামলায় ফাঁসাই। কিন্তু দেখ, ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস! সে-ই রোমানের বউ তুই আজ। কিন্তু এটা স্থায়ী হতে দিব না আমি।’ বলে তিথী রিমির গলা চেঁপে ধরে।

রিমি বারবার চেষ্টা করেও ছাড়াতে পারে না নিজেকে। ওর শ্বাসকষ্ট হতে শুরু করে। ওইসময় রোমান এসে রিমিকে তিথীর হাত থেকে ছাড়ায়। আর পুলিশ ডেকে ওকে ধরিয়ে দেয়। যাওয়ার সময় শুধু তিথী বলে,
–‘খুব খারাপ হবে! রিমি খুব খারাপ হবে।’ তারপর পুলিশরা তিথীকে ধরে নিয়ে গেল।

রোমান রিমিকে জড়িয়ে ধরে বলে,
–‘রিমি তুমি ঠিক আছো তো?’

–‘হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। বাট আপনি এখানে কিভাবে?’

পাশ থেকে রূপা বলে উঠে,
–‘তুই আমাকে বলে গিয়েছিলি না তুই ওই মেয়ের পিছে যাচ্ছিস। তার কিছুক্ষন পর রোমান তোকে খুঁজে না পেয়ে আমার কাছে আসে। আমি তখন বলে দেই। আর আমরা খুঁজতে খুঁজতে উপরে এসে দেখি এই কাহিনী!’

রিমি রোমানের দিকে তাকিয়ে বলল,
–‘আপনি সব শুনেছেন?’

–‘হ্যাঁ! ভাবতে পারছি, শুধুমাত্র এই জন্য আমার বেস্ট ফ্রেন্ডটা এত খারাপ হয়ে যাবে।’

–‘যা হওয়ার গেছে গেছে। এখন আমাদের নতুন লাইফ শুরু করার টাইম। আগের সব কিছু ভুলে যান।’

রোমান মুচকি হেসে রিমিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলল,
–‘অনেক ভালোবাসি তোমাকে রিমি। আমার মৃত্যুর আগ অব্দি তোমার সাথে কাটাতে চাই আমি।’

–‘আমিও অনেক ভালোবাসি আপনাকে। আমিও তো এটাই চাই।’

এভাবেই বেঁচে থাকুক তাদের ভালোবাসা।

_____________সমাপ্ত 💖💖

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে