#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| পর্ব-০২ ||
___________________________________
রোমানের ঘুম ভেঙে গেলে পাশে রিমিকে দেখে এক আকাশ পরিমাণ অবাক হয়! কেননা কাল যে ব্যবহার করেছে, তার পরে রিমি যে ওর কাছে আসবে; সে-টা রোমানের কল্পনার বাহিরে ছিল। কিন্তু রিমিকে দেখে রোমানের মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। তার ভালোবাসা যে তাকে ভুল না বুঝে, তার কাছে এসেছে এটাই তার কাছে অনেক বড় পাওয়া।
রিমি রোমানের মুখের সামনে হাতের তুরি বাজিয়ে বলে উঠে,
–‘ওহ হ্যালো! ওভাবে কি তাকিয়ে আছেন? ভূত-প্রেত দেখলেন নাকি আবার?’
–‘ভূত-প্রেত নয়, বরং একটা পরী দেখেছি। কি অপরূপ মায়ায় ভরা তার চেহারা!’
–‘আপনার কি মাথাটা গেছে? না-কি কাল রাতে বেশি ড্রিংকস করার ফলাফল এটা? কোনটা?’
–‘উহুহহহ! আমার মাথা একদম ঠিক আছে।’
–‘যদি ঠিকই থাকত, তাইলে আপনি এই দিন-দুপুরে পরী কই দেখলেন? শুনি!’
–‘চোখের সামনে যদি এত রূপসী মেয়ে থাকে, তাহলে কি করব? বলো! মেয়েটা তো আর পরীর চেয়ে কম না!’
রিমি চারদিক ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল। রোমান রিমির কর্মকাণ্ডে হু হা করে হেসে দিল। রোমানের এরূপ হাসি দেখে রিমি বলল,
–‘কি হলো কি আবার? আপনি এভাবে পাগলের মত কেন হাসছেন?’
–‘তোমার কাজ দেখে!’ বলে আবার অট্টহাসিতে মেতে উঠল
–‘আমি আবার কি করলাম? যে এত হাসা লাগবে আপনার!’
–‘তুমি নিশ্চয় এতক্ষন আমার কথাটা শুনে পরী খুঁজছিলে?’
–‘ইইয়ে মানে….!’
–‘কি তাইতো?’
–‘হুম।’
রোমান বসা থেকে উঠে এসে রিমির পাশ ঘেঁষে দাঁড়াল। আচমকা এমন হওয়ায় রিমি খানিকটা ঘাবড়ে যায় এবং শুকনো একটা ঢোক গিলে।
রিমিকে রোমান তার কাছে টেনে নিয়ে ওর কানের কাছে ফিসফিস করে বলে,
–‘এইযে! এই মেয়েটা হলো পরী। আমার ছোট্ট রাজ্যের পরী!’
রোমানকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে বলল,
–‘আপনার পাগলামি কথাবার্তা আপনার কাছেই রাখুন। এখন আমার প্রশ্নের জবাব দিন তো! বেলকনির এই অবস্থা কি করে?’
–‘তেমন কিছু না! কাল রাতে মাথায় অনেক রাগ, সাথে কষ্ট হয়েছিল তাই একের পর এক ড্রিংকসের বোতলগুলো ভেঙেছি।’
—’যত্তসব ন্যাকামো! আমারে কাল ওভাবে বকে, হার্ট করে এখন বলতেছে তার রাগ আর কষ্টের জন্য নাকি বোতল ভেঙেছে। লাইক সিরিয়াসলি? আপনি আর কষ্ট! যদি কষ্টটা বুঝতেন তাহলে এভাবে আমাকে এত কষ্ট দিতেন না। দেওয়ার আগে অনেক বার ভাবতেন।’
(বিরবির করে কথাগুলো বলল)
–‘কিছু কি বললে তুমি?’
–‘ক…কই…কিছু বলি নি তো আমি!’
–‘মনে হলো কিছু বললে। যাই হোক সার্ভেন্ট ডেকে এগুলো পরিষ্কার করিয়ে নিও। আমি ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে গেলাম।’
রিমি দু’দিকে মাথা দুলিয়ে “হ্যাঁ” জবাব দিল। রোমান ওয়াশরুমে যেতে রিমি সার্ভেন্টকে ডেকে বেলকনি পরিষ্কার করতে বলে নিজে অন্য রুমে ফ্রেশ হতে গেল।
.
.
.
ড্রাইনিং টেবিলে বসে সবাই খাবার খাচ্ছে। খেতে খেতে সায়রার চোখ রিমির হাতের দিকে যায়। রিমির হাতে ব্যান্ডেস দেখে রিমিকে প্রশ্ন করল,
–‘রিমি মা! তোমার হাতে কেটে গেছে কিভাবে?’
প্রশ্ন শুনে রিমির কাশি উঠে যায়। হঠাৎ এমন প্রশ্নের সম্মুখীন সে হবে ভাবতে পারে নি! সে রোমানের দিকে তাকিয়ে দেখল সে নিশ্চিন্তে বসে খাচ্ছে। তার কাছে কোন ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে না।
–‘আসলে আম্মু, কাল রূপার রিসিপশনে গিয়েছিলাম না? ওখানে কাঁচের গ্লাস হাত থেকে পড়ে ভেঙে যায়। ওই ভাঙা কাঁচ হাতের ভিতর ঢুকে এই অবস্থা!’
–‘আমাকে আগে কেন বলো নি? এতটা কেয়ারলেস হলে কি হয়? এরপর থেকে সমসময় খেয়াল রাখবা নিজের। মনে থাকে জানি?’
–‘হ্যাঁ, আম্মু! মনে থাকবে এরপর থেকে।’
খাওয়া শেষ করে উঠে দাঁড়িয়ে রোমান বলল,
–‘আম্মু, আমি তাহলে কাজের জন্য বের হচ্ছি।’
–‘আচ্ছা বাবা! সাবধানে দেখে যাস।’
রোমান মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেল। আর এদিকে সবাই যার যার মত খাওয়া শেষে কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ল।
রিমি উপরে যেতে নিলে পিছন থেকে সায়রা ডেকে বলল,
–‘রিমি মা! তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। তাই তুমি আগে আমার সাথে আমার রুমে চলো।’
–‘আচ্ছা চলেন আম্মু।’
দোতলায় এসে সবার প্রথমের রুমে ঢুকে সায়রা দরজা লাগিয়ে দিল। রিমির পাশে গিয়ে বসে বলতে লাগল,
–‘আমি তো তোমার মা-ই তাই না? তাহলে আমার থেকে মিথ্যা লুকিও না।’
–‘আ..আমি কি লুকালাম আপনার থেকে আম্মু?’
–‘তোমার হাত কিভাবে কেটেছে? আমি কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পারছি। রোমানের জন্যই তোমার হাত কেটে গেছে তাই না?’
–‘না, আম্মু! রোমানের জন্য আমার হাত কাটে নি।’
–‘মিথ্যা কেন বলছো? সত্যিটাই বলো। নিজের ছেলে বলে যে তুমি তার নামে আমার কাছে বিচার দিতে পারবা না বা সে তোমাকে কষ্ট দিলে সে-টা বলতে পারবা না! এমনটা কিন্তু নয় রিমি।’
–‘সর্যি আম্মু। আমি এই কথা বলে আপনাকে টেনশনে ফেলতে চাই নি।’
–‘সর্যি বলতে হবে না আর। আমি বুঝতে পেরেছি। আর একটা কথা তোমায় বলি। অবশ্য আমি পুরো কাহিনিটা তোমায় বলতে পারব না, নিষেধ আছে। বাট সামান্য একটু বলতেই পারি।’
রিমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল,
–‘কি কাহিনী আম্মু?’
–‘আসলে আমার ছেলে আগে একদম এরকম ছিল না। কিন্তু তিথী নামের এক মেয়ের জন্য এমন হয়ে গেছে। আমার ছেলের মেয়েদের প্রতি কোনো প্রকার নেশা ছিল না। কিন্তু ও তোমাকে প্রথম দেখে অনেক ভালোবেসে ফেলছে। প্লিজ ও রাগের মাথায় কিছু বললে তুমি একটু মানিয়ে নিও। দেখো তোমার ভালোবাসা পেয়ে অতীতের সব ঘটনাগুলো ভুলে যাবে।’
–‘কি ঘটনা আম্মু?’
–‘সর্যি মা! এটা আমি তোমাকে বলতে পারব না। রোমান নিষেধ করে দিছে আমায় এই ঘটনাগুলো কাওকে বলতে। যদি জানার বেশি ইচ্ছে থাকে তাহলে রোমানের কাছে থেকে জেনে নিও।’
–‘আম্মু প্লিজ আপনি বলেন আমাকে। রোমান এই বিষয়ের কোনো কিছু জানতে পারবে না।’
–‘আমাকে জোর করো না রিমি। আমি বলতে পারব না।’
–‘প্লিজ আম্মু, আমাকে বলেন ঘটনাটা!’
–‘আমি পারলে বলতাম। বাট আমি পারব না।’
–‘আম্মু প্লিজ!’
হঠাৎ দরজার পাশ থেকে কেও একজন উঁচু গলায় বলল,
–‘কি হচ্ছে এখানে? কি জানার ব্যাপারে এত রিকুয়েষ্ট করা হচ্ছে?’
রিমি আর আহানা দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে রোমান দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।
–‘রোমান তুই না অফিসে গেলি কাজে? আবার এলি যে?’
–‘আসলে আম্মু আমি একটা ফাইল ভুলে গেছি। সে-টাই নিতে এসেছিলাম। বাট যাওয়ার সময় রুমে এত চ্যাঁচামেচি শুনে দাঁড়ালাম। বাই দা ওয়ে, তোমরা কি নিয়ে আলোচনা করছিলে?’
–‘কই? কিছু না তো। তুই তোর কাজে যা, নাহলে লেট হয়ে যাবে।’
–‘হ্যাঁ যাচ্ছি।’
রোমান রুমে চলে গেলে রিমিও সায়রাকে বলে রোমানের পিছুপিছু রুমে চলে আসে।
চলবে……☘️☘️