#In_Depths_of_Love
Ramisa Ishrat
|| সূচনা পর্ব ||
রিমির ঠোঁট দিয়ে অঝোরে রক্ত বেরিয়েই যাচ্ছে! হাতের অবস্থাও খুব একটা ভালো না! রিমি কোনো কিছু করতে পারছে না, শুধু বসে থেকে নিজের চক্ষু জোড়া দিয়ে অজস্র অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। রিমির চোখের সামনে কিছুক্ষন আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো ভাসতেই ওর গাঁ কেঁপে উঠছে!
ফ্ল্যাশব্যাক………..🍁🍁
রিমি আর রোমান রূপার রিসিপশনে গিয়েছিল। রূপা হলো রিমির বেস্ট ফ্রেন্ড। ওর বিয়ের কোনো ফাংশনে রিমি এটেন্ড করতে পারে নি। পারবে কি করে? রোমান তো ওকে আসতেই দেয় নি। রিসিপশনেও আসতে দিবে না! কিন্তু রূপার এত জোরাজোরির কাছে হার মেনে রোমান রিমিকে নিয়ে আসে। এসেই তো ঘটে বড় এক বিপত্তি! তার চেয়ে না আসায় মনে হয় শ্রেয় ছিল!
রিমি একটা কাতান শাড়ি পরেছে। রিমি দেখতে এমনিই সুন্দর। আর সে হালকা সাজ দিয়েছে। যাতে করে ওকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত কিছু ছেলে রিমির দিকে আড়চোখে তাকিয়ে ছিল, যেটা রোমানের চক্ষুগোচর হয় নি। তার উপর ছেলেগুলো বলাবলি করছিল মেয়েটা সেই! এতে রোমানের মেজাজ বিগড়ে যায়। সে সেখানে ছেলেগুলোকে বেধরম মারে। এক পর্যায়ে ছেড়ে দেয় আর রিমিকে নিয়ে অনুষ্ঠান ছেড়ে গাড়িতে নিয়ে এসে বসায়। নিজেও বসে পরে আর ফুল স্পিডে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে। রাস্তায় দু’জনের একজনো “টু” শব্দটি পর্যন্ত করে নি।
বাসায় পৌঁছাতেই রিমিকে গাড়ি থেকে নামিয়ে ওর হাত শক্ত করে চেপে ধরে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসতে লাগে। অনেক রাত হওয়ায় সবাই ঘুমিয়ে পরেছিল আর রোমানের কাছে বাড়ির আরেকটা চাবি ছিল। তার জন্য কোনো প্রবলেম হয় নি। রিমিকে টেনে একেবারে রুমে নিয়ে এলো রোমান। এসে ওকে বিছানায় ছুড়ে মেরে দরজা লাগিয়ে দিল। আকস্মিক ঘটনায় রিমি ঘাবড়ে গেল। কেন জানি ওর মন বলছিল, “আজ অনেক বড় বিপদ হতে চলেছে ওর সাথে”। রোমান দরজা লাগিয়ে সোজা রিমির দিকে এগিয়ে এসে ওর চুলের মুঠি ধরে ওকে টেনে তুলল। এতে রিমি ব্যথায় কুকিয়ে উঠে। রোমান সেদিকে পাত্তা না দিয়ে কড়া গলায় ওঠে,
–‘বেশি বার বেড়েছিস তাই না? কে বলেছে তোকে এই পাতলা শাড়ি পরতে? দেখলি না ছেলেগুলো কিভাবে তোর দিকে তাকিয়ে ছিল? এত শখ কেন নিজের শরীর অন্যদের দেখানোর? বল!’
রিমি কোনো রকমে বলে,
–’আ…আমি তো পা…পাত….পাতলা শাড়ি পরি ন……..!’
রিমি ওর পুরো কথা শেষ করতে পারল না! তার আগেই রোমান টেবিলে থাকা গ্লাস ছুড়ে ফেলে। গ্লাসটা পরে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। রিমি তো একদিকে ভয়ে, অন্যদিকে ব্যথায় মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারছে না। রোমান রাগে রিমিকে ধাক্কা দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে যায়! ধাক্কাটা খুব জোরে মারায় রিমি টাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পরে যায় আর ওর ঠোঁট, হাত সেই ভাঙা গ্লাসের টুকরোর সাথে লেগে কেটে যায়।
বর্তমানে…………🍁🍁
রিমি অনেক কষ্টে উঠে ড্রেসিং টেবিলের দিকে হাঁটতে লাগল। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় রিমির চোখ পরতেই ও দেখল, ওর ঠোঁটের রক্তগুলো জমাট বেঁধে ঠোঁটটা ফুলে উঠেছে। কান্না করার ফলে রিমির চোখের কাজলটা লেপ্টে গেছে, চোখ জোড়াও ফুলে গেছে। রিমি আর না ভেবে ড্রেসিং টেবিলের উপরে থাকা ফাস্ট এইড বক্সটা নিয়ে ওর ঠোঁট আর হাতের রক্তগুলো পরিষ্কার করে ফেলল। সাথে মলমও লাগিয়ে নিল। তারপর আলমারির কাছে গিয়ে আলমারি খুলে ড্রেস বের করে নিয়ে ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে ঢুকে গেল।
(চলুন এবার পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক, কে এই রিমি? আবার কে এই রোমান?
রিমি হলো আমির শেখ আর আহানা শেখের মেয়ে। রিমিরা দুই বোন। রিমির বড় বোনের নাম রিধি, ওর কয়েক মাস আগে বিয়ে হয়ে গেছে। আর রিমি হলো ছোট, যার বিয়ে হয়েছে এই রোমানের সাথে।
এদিকে, রোমান হলো সাজ্জাদ খান আর সায়রা খানের একমাত্র ছেলে। রোমানদের পরিবার হলো যৌথ পরিবার মানে ওর মা-বাবা, দাদী, চাচা-চাচি, তাদের ছেলে-মেয়ে, ফুপি সবাই মিলে একসাথে থাকে। আপাতত এটুকুই যথেষ্ট! বাকিটা গল্পে ধীরে ধীরে জানতে পারবেন)
ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে রিমি। কিছুটা রাগে আর ক্লান্তিতে সে না খেয়েই বিছানায় গা এলিয়ে দেয়। কিছুক্ষন বাদে সে ঘুমের রাজ্যে পারি দেয়।
.
.
.
এদিকে, রোমান বারে বসে ড্রিংকস করছে আর ওই ছেলেগুলোর কথা ভেবে রাগে কটমট করছে। করাটাই স্বাভাবিক! রোমান যে রিমিকে না অন্য কারো সাথে সহ্য করতে পারে, না কেও ওর দিকে চোখ তুলে তাকায় সেটা পারে! গ্লাস চুমুক দিতেই খেয়াল করে ওর গ্লাসের ড্রিংকস শেষ। বারে থাকা ছেলেটাকে উদ্দেশ্য করে খানিকটা চেঁচিয়ে বলে,
–‘এই আমার গ্লাস ফাঁকা দেখতে পাচ্ছিস না? তাড়াতাড়ি আমার গ্লাসে ড্রিংকস দে!’
রোমানের চেঁচানো শুনে সামনে থাকা ছেলেটা ঘাঁবড়ে যায়! সে দ্রুত বোতল থেকে রোমানের গ্লাসে ড্রিংকস ঢেলে দেয়।
রোমান গ্লাসে কয়েক চুমুক দিতেই ওর চোখটা হঠাৎ ওর হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে যায়। ও খেয়াল করে দেখল ১১:৪৭ বাজে! কি জানি ভেবে ড্রিংকস এর গ্লাস হাত থেকে রেখে কোর্ট কোন রকমে কাঁধে ঝুলিয়ে টলতে টলতে বাহিরে বেরিয়ে আসে। এসে গাড়ির দরজা খুলে সে ভিতরে বসে ঠাস করে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সামনে তাকিয়ে সবকিছু ঝাপসা দেখতে পায় রোমান। তাই মাথাটা নাড়িয়ে, চোখ জোড়া হাত দিয়ে কচলে নেয়। পরে যখন ঘোলাটে ভাব কমে গিয়ে চারদিকে স্পষ্ট দেখতে পেল, তখন গাড়ি স্টার্ট দিল। আপন গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে রোমান। একেবারে বাড়ির গেটের সামনে এসে গাড়িটা দাঁড় করায়।
বিরবির করতে করতে সে তার রুমে গিয়ে পৌঁছাল। দরজা লাগিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে দেখে কেও একজন বিছানায় ঘুমিয়ে রয়েছে। রোমান ভালো করে খেয়াল করে দেখল মেয়েটা আর কেও না, বরং রিমিই! রোমান বেডের কাছে গিয়ে হাঁটু গেঁড়ে বসল। রিমিকে ভালো করে পরক করে দেখতে লাগল সে। রিমির হাতের দিকে চোখ যেতেই দেখল হাত ব্যান্ডেজ করা। ব্যান্ডেজের উপরে রক্তগুলো ভেসে উঠেছে। আনমনেই রোমান বলে উঠে,
–‘ আই’ম সর্যি, রিমি! আমি তো তোমাকে হার্ট করতে চাই নি। ওই ছেলেগুলো যেভাবে বলাবলি করছিল, আবার তার উপর অতীতের ঘটনা! দু’টো মিলিয়ে আমি আমার রাগটাকে কন্ট্রোল করতে পারি নি। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি রিমি। কিন্তু সে-টা আমি প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। যদি তুমিও আমাকে চিট করো! না, এ কিছুতেই আমি হতে দিব না।’ বলে রোমান সোজা বেলকনিতে গিয়ে সেখানে থাকা রকিং চেয়ারে বসে আকাশের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল।
_______________🍁🍁
জানালা ভেদ করে করে আসা রোদটুকু রিমির চোখে পরতে চোখ-মুখ কুঁচকে ফেলে সে। হাত দিয়ে মুখটা আড়াল করতে চাইলেও পারে না। তাই এক প্রকার বাধ্য হয়েই শোয়া থেকে উঠে বসল। চোখ কচলিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে কাওকে পেল না। কিন্তু চোখগুলো তো বড্ড অবাধ্য! খুঁজেই চলেছে বারবার। একপ্রকার বিরক্তি নিয়েই রিমি বেলকনির দিকে পা বাড়ালো। সেখানে রকিং চেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটিকে দেখে যেন রিমির চোখে জোড়া তৃষ্ণা মেটাল। কিন্তু বেলকনির আর রোমানের এই রকম অবস্থা দেখে রিমির কেমন যেন ভয় বিরাজ করতে লাগল!
চলবে…..☘️☘️