হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 25

0
4022
হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 25
হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part 25

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part:25

writer: সুলতানা ইতি

তানভীর : নিহাল আপনার ডক্টর যাচ্ছে আপনার সাথে, উনি সময় মতো আপনাকে নিয়ে প্লেনে উঠবে, আমার একটু কাজ আছে আমাকে যেতে হচ্ছে
নিহাল: ঠিক আছে তুমি যাও

তানভীর অফিসে এসেই আনুশার সাথে দেখা করে

তানভীর : ম্যাম আর্জেন্ট ফোন করে ডাকলেন কেনো,,কোন ইম্পরট্যান্ট কাজ পড়েছে কি?

আনুশা: হুম এটাও একটা ইম্পরট্যান্ট কাজ, তুমি সুন্দর পুর গ্রামে যাও সেখানে হাসান মঞ্জিল নামে একটি দুই তালা বাড়ি আছে বাড়িটির বর্তমান মালিকের সাথে গিয়ে কথা বলো আর ওটা কিনার ব্যাবস্থা করো

তানভীর : ম্যাম কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করবো

আনুশা: তুমি বলবে আমি বাড়িটি কার জন্য নিচ্ছি,,এই তো,,,বাড়িটি আমি নিহাল হাসানের জন্য ই নিচ্ছি কারন বাড়িটি নিহালদের

তানভীর : কিন্তু ম্যাম নিহালের বাড়ি থাকতে ও আশ্রমে কেনো থাকছে

আনুশা: ওহ মিঃ তানভীর এতো প্রশ্ন করতেছেন কেনো কাজ টা পারলে বলুন,নইলে আমি নিজেই যাচ্ছি,

তানভীর : না ম্যাম আমি পারবো,, এই তো আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি
আনুশা: গুড

তানভীর চলে যাওয়ার একটু পরেই অন্নি অফিসে আসে
আনুশা: আরে অন্নি তুই কি ব্যাপার হঠ্যাৎ অফিসে

অন্নি: হুম এলাম তোর সাথে কিছু কথা ছিলো তাই,কথাটা আর ও আগেই বলতাম কিন্তু তুই এতো ব্যাস্ত ছিলি যে, তোকে আর বলতে পারিনি
আনুশা: হুম বল শুনছি

অন্নি: কি শুনবি আমার কাছে থেকে, তুই শুধু আমাকে বল তুই এই সব কি শুরু করছিস

আনুশা: আমি কি করলাম বল

অন্নি: কি করলি মানে তুই জানিস না তুই কি করছিস,এই নিহাল কোথায় থেকে উদয় হলো আর ওর জন্য তুই এতো কিছু করছিস কেনো

আনুশা: আমি এসব কেনো করছি তুই পরে বুঝবি,,প্লিজ তুই এই সব ব্যাপারে বাসায় কাউকে কিছু বলিস না

অন্নি: বাসায় বলবো না মানে বাসায় তো আমি সবার আগে জানাবো
আনুশা,: তুই এমন কিছু করবি না

অন্নি: আমি একশো বার করবো,,ওই নিহালের বাচ্ছা তোর জীবনটা তছনছ করে দিয়েছি,আর তুই তার জন্য এতো কিছু করছিস কেনো করছিস,ওকে এখনো ভালোবাসিস

আনুশা: ও আমার সাথে যা করেছে তার শাস্তি ও পাচ্চে অন্নি,আমি আর ওকে কি শাস্তি দিবো,আর ভালোবাসি,,অন্নি তুই জানিস যাকে করুনা করা যায় তাকে ভালোবাসা যায় না।

অন্নি: কিন্তু তোর এই সব কিছুর কারনে তানভীর কষ্ট পাচ্ছে, ও তোকে কতোটা ভালোবাসে তুই বুঝতেও পারবি না

আনুশা: আমি জানি অন্নি, আমি সব বুঝতে পারি আমি একজন মানুষ, আমার ও মন বলে কিছু আছে

অন্নি: এতোই যখন বুঝতে পারিস তখন তানভীর কে বলছিস না কেনো

আনুশা: তানভীর এখন আমাকে ভালোবাসে ব্যাপার টা আমার কাছে অনেক ভালো লাগে,আমার মন খারাপ থাকলে জোঁকার সেজে হলে ও আমার মুখে হাসি আনতে রাজি, ও আমার জন্য সব করতে পারে।
এই সব আমি ফিল করি,কিন্তু যখন তানভীর আমার ফাস্ট জানবে তখন কি ও আমাকে ভালোবাসবে,
তখন যদি ও আমাকে নিহালের মতো দূরে সরিয়ে দেয়,সেটা আমি সহ্য করতে পারবো না

অন্নি: তানভীর কে অতীতের কথা শুনানোর দরকার ও নেই

আনুশা: ওকে যদি আমি সত্যি টা না বলি তা হলে ওকে ঠকানো হবে,আর আমি কাউকে ঠকাতে চাই না

অন্নি; তুই থাম তো তোর এই সব কথা শুনতে আমার একদম ভালো লাগছে না আমি গেলাম,কাউকে ভালোবাসে, এটা প্রকাশ করতে পারবে না যত্তসব
#
আনুশার ফোন ভেজে উঠলো তানভীর ফোন করেছে
আনুশা: ইয়াহ তানভীর বলো

তানভীর : আনুশা এরা তো আমাদের কাছে বাড়িটি বিক্রি করতে রাজি হচ্ছে না
আনুশা: কি বলছো তুমি,,আচ্ছা তুমি ওখানেই থাকো আমি আসছি

আনুশা কয়েক ঘন্টার মধ্যে সুন্দরপুর গ্রামে পৌছে গেলো

তানভীর : ও তুমি এসেছো,দেখো এরা বাড়িটি কিছুতেই বিক্রি করবে না বলছে
আনুশা: আচ্ছা আমি দেখছি,,বাড়িটির বর্তমান মালিক রফিক উল্লাহ আমি উনার সাথে কথা বলে দেখছি
তানভীর : তাই বলো

আনুশা বাড়ির ভিতরে গেলো,বহু পুরনো স্মৃতি মনের কোনাই আকি ঝুকি মারছে
আনুশা: মিঃ রফিক আপনি বাড়িটি কেনো বিক্রি করতে চাইছেন্না,মার্কেট প্রাইজ এর থেকে আর ও তিন গুন বেশি দেয়া হচ্ছে আপনাকে,তবু ও কেনো বিক্রি করবেন্না

রফিক: বাড়িটি আমি বিক্রি করবো না আমার টাকার দরকার নেই, তবুও আপনি কেনো বাড়িটি ঝোর করে কিনতে চাইছেন

আনুশা: তো আপনি বাড়িটি বিক্রি করবেন্না তাই তো

রফিক: আর কতো বার বলতে হবে

আনুশা: ফাইন বিক্রি করার দরকার নেই আমি ও কিনবো না,,কোর্টে দেখা হবে তখন আর টাকা ও দিতে হবে না আর বাড়িটি ও আমার হয়ে যাবে

রফিক: আপনি আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমাকে হুমকি দিচ্ছেন

আনুশা: ভুল বললেন বাড়িটি আপনার নয়, এটা নিহাল হাসানের বাড়ি, আর এটার লিগেল কোন দলিল আপনার কাছে নেই এটা আমি সিউর

রফিক: মা নে মানে,কি বলছেন এই সব

আনুশা: ঠিকই বলছি বাড়িটি তো নিহাল হাসান বিক্রি করেনি ঝোর করে পাওনা টাকা উসুল করার জন্য দখল নিয়েছেন,আবার বড় বড় কথা ছাড়ছেন,আপনাকে আমি এতো কিছু বলছিই কেনো যা বলবো সব আদালতে বলবো

রফিক: এমন করবেন না ম্যাম সাহেব,আমি বাড়িটি বিক্রি করবো

আনুশা: দ্যাটস এ গুড,মিঃ তানভীর টাকা টা উনাকে দিয়ে উইলে সাইন করিয়ে নিন,

তানভীর : টাকা দিয়ে সাইন করিয়ে নিলো,
আনুশার কথা মতো বাড়িটি পাহারা দেয়ার জন্য আর পরিষ্কার করার জন্য দুইজন ক্যায়ারটেকার রেখে যায়।

আনুশা,: সো মিঃ তানভীর, অল ওকে
তানভীর : ইয়াহ,

*
তো যাওয়া যাক দুইজনে গাড়িতে উঠলো
তানভীর : চুপ করে বসে আছে মনে হাজার ও প্রশ্ন উকি ঝুকি দিচ্ছে,উত্তর পাবে না তাই প্রশ্ন গুলো আনুশাকে করছে না

আনুশা: তোমার মনে জমে থাকা প্রশ্ন গুলো করতে পারো তানভীর, আজ উত্তর পাবে

তানভীর আনুশার কথায় চমকে উঠলো আনুশা কি করে আমার মনের কথা বুঝতে পারলো

আনুশা: ভালোবাস আমায়?

তানভীর : চমকে উঠে,এ্যা

আনুশা: এ্যা নয় জানতে ছেয়েছি ভালোবাস আমায়?

তানভীর : তোমার কি মনে হয় এতো গুলো বছর ধরে কেউ কাউকে ভালো না বাসলে এই ভাবে তার পিছে পড়ে থাকে

আনুশা: ড্রাইভার গাড়ি থামিয়ে একটা জায়গাতে পার্ক করুন,তানভীরের দিকে তাকিয়ে বল্লো এখানে পাশেই একটা ছোট্ট লেকের পাড় আছে খুব নিরিবিলি,ওখানে কি একটু বসবে “তুমি আমার সাথে”

তানভীর : আনুশার কথা শুনে আমি কি করবো বুঝতে পারছি না, আমার তো রিতি মতো পাগলু ডান্স দিতে ইচ্ছে করছে

আনুশা: কি হলো যাবে না

তানভীর : হুম একশো বার যাবো চলো দুইজোনে গিয়ে লেকের পাড়ে বসলো আনুশা চুপ করে আছে আর তানভীর তো কি বলবে খুশিতে পাগল প্রায়
তানভীর : আনুশা জায়গাটা খুব সুন্দর এই রকম সুন্দর জায়গাতে তোমাকে নিয়ে অনন্ত কাল যদি পার করতে পারতাম,জীবনে আর কিছু চাওয়ার থাকতো না

আনুশা: আজ তোমাকে কিছু কথা বলবো,সে গুলা শুনলে তুমি হয় তো আর আমাকে ভালো না ও বাসতে পারো, অন্নি বলেছিলো কথা গুলো তোমাকে না জানাতে, কিন্তু আমি কাউকে ঠকাতে চাই না,,তাই কথা গুলো তোমার জানা দরকার

তানভীর : বলো,,কি এমন কথা যা শুনলে আমি আর তোমাকে ভালোবাসবো না

আনুশা: তা হলো শুনো,, নিহাল আমার কে হয়,,ও আমার হাজবেন্ড,
না এখন আর নেই ছিলো, বিয়ের দিন রাতেই ও আমাকে ডিভোর্স দেয়

তানভীর : হোয়াট কিন্তু কেনো
আনুশা তানভীর কে প্রথম থেকে সব কথা বল্লো
সব কথা শুনে তানভীর একদম চুপ হয়ে গেলো

আনুশা: সব তো শুনলে,এখন নিশ্চয়ই আমাকে ভালো বাসো না

একটা ডিভোর্সি মেয়েকে কেউ ভালো বাসে না,সমাজের চোখে সে একটা নিকৃস্ট মেয়ে,তা ও আবার বাসর রাতেই স্বামি তাকে ডিভোর্স দিয়েছে,,কেউ ভালোবাসে না এদের,
তুমি কেনো সবার বিপরীত হতে যাবে,,তানভীর তুমি আমাকে ভালো না বাসলেও আর আমি কষ্ট পাবো না,,,কষ্টের মধ্যে জীবন যার তার আবার কষ্ট কিসের

তানভীর এতোক্ষন আনুশার কাছে থেকে একটু দূরেই বসা ছিলো এইবার আর দূরে থাকতে পারলো না একদম আনুশার গাঁ ঘেসে বসলো,

আনুশা একটু অভাক চোখে তানভীরের দিকে তাকায়

তানভীর : তো এই সেই কারন যার জন্য তুমি ছয়টা বছর আমার ভালোবাসায় সাড়া দাওনি,পাগলের মতো তোমার পিছনে ঘুরিয়েছ আমাকে,
আনুশা:,,,,,,,,,,

তানভীর : এই তোমাদের মেয়েদের সবছেয়ে বড় দোষ কি জানো,পৃথিবীর সব মানুষ কে একরকম মনে করা, খুব ভালোবাসতাম তোমায় আর তুমি আমায় কাঁদিয়েছ দিনের পর দিন,কতো রাত যে না ঘুমিয়ে কেটেছে তার কোন ইয়াত্তা নেই,,
অনেক কষ্ট দিয়েছো, তোমার মতো একটা ডিভোর্সি মেয়েকে আমি আর ভালোবাসতে পারবো না,
তোমার উচিৎ ছিলো কলেজের প্রথম দিনই আমাকে সত্যি টা বলে দেয়া,তা হলে আমি আর তোমার পিছনে এতোটা সময় নষ্ট করতাম না

আনুশা: তানভীরের কথা গুলো গায়ে কাটার মতো আঘাত করছে,তানভীর ও সবার মতো,হায় আল্লাহ মানুষ ছিনতে আমি এতো ভুল করি,আনুশা কান্নায় ভেঙে পড়ে

তানভীর : আনুশা কাদছে আমি যে আর সহ্য করতে পারছি না। এই পাগলি কি ভেবেছো তুমি কথা গুলো আমি মন থেকে বলেছি, আরে নারে পাগলি ওগুলা তো এমনি বলেছি,দেখছিলাম তোমার এক্সপ্রেশন কেমন হয়,,
সবাই এক নয় আমি অন্য সবার মতো নয় আমি তোমাকে এখন ভালোবাসি,এই বলে আনুশার মাথা তানভীরের বুকের সাথে জড়িয়ে নেয়

আনুশা তখন ও কাদছিল এই কান্না কষ্টের নয়,এই কান্না সুখের কারো নিস্বঃস্বার্থ ভালোবাসা পাওয়ার আনন্দ

তানভীর : আনুশার চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বল্লো আর কখনো এই চোখে আমি পানি আসতে দিবো,এই বার তো একটু হাসি চাই

আনুশা: চোখে কান্না মুখে হাসি,অদ্ভুত এক সুন্দর লাগছিলো আনুশা কে

তানভীর : উলে উলে আমার কলিজাটা কে কতো কিউট লাগে

আনু্শা: আর তুমি ও তো কম সুন্দর নও স্যার

তানভীর : উলে উলে তাই,, তবে তোমার এই সত্যি টা আর ও আগে বলার উচিৎ ছিলো, কেনো মিছেমিছি এতো টা বছর একা কষ্ট পেয়েছো,আমরা দুজনে কষ্ট টা ভাগ করে নিতাম,,

আনুশা: তানভীরের কথা শুনে কি বলবো বুঝতে পারছি না,,এতো সুখ আমার কপালে ছিলো

তানভীর : তবে ম্যাডাম আপনি আমায় অনেক কষ্ট দিয়েছেন তার শাস্তি তো আপনাকে পেতেই হবে

আনুশা: ঠিক আছে কি শাস্তি দিবে বলো আমাকে শাস্তি দিলে যদি তোমার কষ্ট টা একটু কমে তা হলে আমি কষ্ট পেতে রাজি

তানভীর : সত্যি, ঠিক আছে এখন আমাকে একটা ইয়ে দাও।

আনুশা: অভাক হয়ে তা হলে এটা আমার শাস্তি

তানভীর : এজ্ঞে হ্যা কেনোনা এর থেকে কঠিন উপায়ে কোন শাস্তি আছে বলে আমার মনে হয় না

আনুশা: ফাজিল একটা চলো বাসায় চলো সবাই চিন্তা করছে হয়তো

তানভীর : কেউ চিন্তা করছে না যে চিন্তা করতো সে এখন তোমার সাথেই আছে
আনুশা: তাই না,চলো বলছি

তানভীর : আমার ইয়েটা

আনুশা: দুষ্ট একটা,এখন কোন ইয়ে টিয়ে পাবে না বুঝলে, সব কিছুর একটা সময় আছে

তানভীর : তা হলে আমার সময় টা কখন হবে, এক মিনিট তুমি বাসর রাতের কথা ইংগিত করছো না তো

আনুশা: তানভীর তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না

তানভীর : না, আর কখনো আটকাবে ওনা,,আজই বাসায় গিয়ে আম্মু কে তোমাদের বাসায় পাঠাবো,বিয়ের কথা পাকা করতে

আনুশা: না আজ নয়,অন্নির। বিয়েটা হয়ে যাক

তানভীর : ওহ তাই তো তানিমের বিয়ে নিয়ে আমার অনেক প্ল্যান সেগুলা সফল করতে হবে না

আনুশা,হুম ঠিক বলেছো আমার ও,
এইভাবে আনুশা আর তানভীরের এক সাথে পথ চলা শুরু হয়

কেটে গেলো আর ও কয়েকটা দিন।, অন্নির বিয়ের সময় ঘনিয়ে এলো, খুশিতে সবাই মাতোয়ারা

আনুশা অন্নি কে ফোন করলো
আনুশা: অন্নি আজ তুই আর তানিম আমার সাথে দেখা করতে পারবি
অন্নি: কেনো বলতো

আনুশা: নাহ তেমন কিছু না তোদের বিয়ে নিয়ে আমার আর তানভীরের কিছু কথা বলার ছিলো

অন্নি: বাবাহ এখানে ও তানভীর এখন তো দেখছি আমার বন্ধুটা তানভীর কে চোখে হারায়,,আচ্ছা আসছি আমরা

তানভীর : আনুশা ওদের আসতে বলেছো তো
আনুশা: হুম বলেছি কিছুক্ষনের মধ্য এসে পড়বে

কিছুক্ষন পর অন্নি তানিম হাজির আনুশার অফিসে,
আজ কাল অফিসের তেমন কোন রুল নেই কাজের সময় কাজ,আর অন্য সময় আনুশার ক্যাবিনে বসে চার জনের আড্ডা হয়,অফিস স্টাফরা ও অনেক খুশি ম্যাডাম এর এই পরিবর্তনে

অন্নি: বল কেনো ডেকে ছিলি আমাদের
আনুশা: একটু ওয়েট কর তোরা ঠান্ডা কিছু খা,,তানভীর আসুক তার পর বলছি

অন্নি: এটা ও তানভীর কে ছাড়া বলা যাবে না

আনুশা: যেহেতু প্ল্যান টা দুজনে মিলে করেছি তা হলে আমি একা বলবো কেনো

অন্নি: ওহ তাই তো, তাই তো,কি বলো তো তানিম আমার মনে হয় তোমার আর আমার মধ্য একটু ভালোবাসা কম আছে

তানিম: কিই তুমি বলতে চাইছো আমি তোমায় ভালোবাসি না
অন্নি: তাই তো মনে হচ্ছে

আনুশা: এই তোরা থামবি, ঐ তো তানভীর এসে গেছে

তানভীর : সবাই এসে গেছে,তা হলে তো এবার কথা টা শুরু করা যায়

অন্নি: হুম কথা টা শুনার জন্যই তো এলাম, তো বলুন দুলাভাই
তানভীর : আনুশা তুমি শুরু করো

আনুশা: শুন আমি আর তানভীর চাই যে তোদের দুজনের হলুদ অনুষঠান একটা জায়গাতে হতে,,আলাদা, আলাদা ছেলের বাড়ি মেয়ের বাড়ি দরকার নেই,একটা বাড়িতেই সব হবে কি বলিস

তানিম: কার কাছে কথা টা কেমন লাগলো জানি না। তবে আমি বলবো একটা চমৎকাড় আইডিয়া তোমরা দিয়েছো,

অন্নি: আর আমি ও,কিন্তু তোদের এই রকম প্ল্যান করার কারন কি

তানভীর : কি আবার কিছুই না,এমনি আরকি

অন্নি: আমাকে উল্লুক ভানানো হচ্ছে

আনুশা: তো তুই কি বলতে চাইছিস

অন্নি: যাতে তোরা দুজন একসাথে থাকতে পারিস আনন্দ করতে পারিস এক সাথে, আর দুই বাড়িতে অনুষঠান হলে তো দুজন কে দুই বাড়িতে থাকতে হবে তা এই বুদ্ধি

তানভীর : এ্যা

অন্নি:এ্যা নয় হ্যা

আনুশা:তুই যখন সব বুঝেই গেছিস তা হলে তোর থেকে লুকিয়ে লাব নেই,হুম আমরা এই জন্য বলেছি

সবার এই ভাবে হাসি আড্ডার মাঝেই বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো কাল হলুদ, আনুশা আর তানভীরের কথা অনুযায়ী পুরো অনুষঠান আনুশাদের বাড়িতে হবে,আয়োজন ও প্রায় শেষ

হলুদের দিন নাচ আর গানের আয়োজন করা হয়েছে
অন্নির ইচ্ছে ওর হলুদ অনুষ্ঠানে আনুশা গান গাইবে কিন্তু আনুশা রাজি হচ্ছিলো না,সেই স্কুল লাইফে গান গাওয়ার বাজে অভ্যাস ছিলো,তার পর তো লাইফে যা হলো হাসি আনন্দ জীবন থেকে চলেই গেছিলো, অন্নি আর আনুশার মাঝে তানভীর এসে জয়েন করলো

তানভীর : তুমি কাকে কি বলছো অন্নি,এই শাঁকচুন্নি গাইবে গান,,আরে এ কি গান পারে নাকি,এর তো গলা হচ্ছে ফাটা বাঁশের মতো,,যে শুনবে তার কানের পর্দা ফেটে যাবে

আনুশা: কিইই আমি শাঁকচুন্নি আমার গলা ভালো নয়????

অন্নি: এই জন্য বলছি আনু দেখিয়ে দে এদের যে আমরা মেয়েরা ও কোন অংশে ওদের থেকে কম নয়

তানভীর : ছাড়ো তো অন্নি তোমার বান্ধুবী ভয় পাচ্ছে তাই গাইতে রাজি নয়

আনুশা: ঠিক আছে আমি রাজি,,দেখি কে কাকে হারায়

তানভীর : হারাবে মানে আমি তো গান গাইবো না আমি নাচ করবো

অন্নি: ওকে ফাইন একজন গান আরেক জন নাচ,হয়েই গেলো


হলুদের দিন সন্ধায় পার্লার থেকে মেয়েরা আসলো অন্নিকে সাজাতে,
অন্নি চায় আনুশা ও সাজবে কিন্তু আনুশা বলেই দিলো ও এতো ভারী মেকাপ করবে না,কি আর করা,, অন্নিকে সাজানো শুরু করলো পার্লারের মেয়েরা

আর কিছুক্ষন পরে অনুষঠান শুরু হবে তাই আনুশা রেডী হতে এলো,অনেক বাছ বিছার করে অবশেষ এ লাল একটি লেহেঙ্গা পরলো,যদি ও হলুদে সবাই শাড়ি পরেছে কিন্তু আনুশা একদমই শাড়ি পরতে যানে না

এদিকে অনুষ্ঠান শুরু হলো,তানভীর রেডী হয়ে তানিমের সাথে বসে আছে যেহেতু দুটো স্টেজই সামনা সামনি সো আনুশাকে দেখতে সুবিধে হবে

কিন্তু আনুশা এখনো ও আসছে না কেনো,অন্নি তো একা বসে আছে,, সবাই আসছে অন্নিকে হলুদ ছোঁয়াতে, অন্নির হলুদ ছোঁয়া হলে সবাই তানিম কে হলুদ ছোয়াতে যায়,ব্যাপার টা খুবই সুন্দর লাগছে তানভীরের কাছে, এই প্রথম সে এই রকম বিয়ে দেখছে, ছেলে মেয়ের এক সাথে হলুদ ছোঁয়া, তা ও আবার আনুশার দৌলতে দেখার সৌভাগ্য হলো,কিন্তু আমার মনের রানি আনুশাকে দেখতে পাচ্ছি না কেনো
এদিকে গানের আর নাছের অনুষ্ঠান শুরু হতেও আর দেরি নেই হঠ্যাৎ ই তানভীরের অন্নির পাশে চোখ পড়ে

তানভীর : এ আমি কাকে দেখছি এই প্রথম আনুশাকে এই রকম ড্রেস এ দেখছে তানভীর, তাই চোখ টা ভালো করে মুছে নিলো সত্যি কি আনুশা,নাকি মনের ভুল

আনুশার ও তানভীরের দিকে চোখ পড়ে আজকে তানভীর কে ও খুব সুন্দর লাগছে

আনুশা: ও আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে কেনো,আনুশা ইশারায় তানভীর কে বল্লো কি হয়েছে

তানভীর : ইশারায় মাথা ঝাকিয়ে বল্লো কিছু হয়নি, & আজ তোমাকে হেব্বী লাগছে

আনুশা : লজ্জা পেয়ে তানভীরের দিক থেকে চোখ সরিয়ে নেয়

প্রথমে নাচ হবে তাই আগে তানভীরকে নাচতে হবে,
তানভীর : কতো করে বললাম জান নাচ টা পরে দাও,আগে গান হবে না,ম্যাডাম এর একটাই কথা আগে নাচ পরে গান এখন বুঝো আমার কি অবস্থা
নাচ শুরু হলো
তানভীর
” সোনা আজ শেষ করো দিন গোনা
বুঝে ও কেনো বুজছো না
আমি হেব্বী রোমান্টিক
আর অল্প ডিমান্ডিং”
তানভীর এই গানটার নাছ দেয়

আনুশা: ইসস নাচের কি শ্রী,তা ও আবার এই রকম একটা গানের নাছ

কিন্তু তানভীরের নাচ আনুশার পছন্দ না হলে ও উপস্থিত সবার খুব ভালো লাগে, তারা তানভীর কে আবার ডান্স করতে বলে,কিন্তু ম্যাডামএর অর্ডার একটা ডান্সের পরে একটা গান হবে, তাই সবাইকে বল্লো,শুনুন আপনারা এখন গান হবে তার পর আবার ডান্স হবে ততক্ষনে আপনারা গান টা ইনজয় করুন

তানভীর আনুশার কানে কানে ফিস ফিস করে বল্লো দেখলে কেমন ফাটিয়ে দিলাম

আনুশা: ইহহহ এটা কোন ডান্স হলো,বাজে, বিস্রি, জগন্য,ইয়াক

তানভীর : এহহ দেখবো এখন নিযে কতো ভালো গান গায়,

আনুশা: একটু ভাব নিয়ে বল্লো,ওকে ফলোমি
আনুশা স্টেজে গিয়ে গান শুরু করলো,

” অতলে অতলে বুকেরি ভিতরে
রয়েছো আকা আমার এ অন্তরে
অতলে অতলে বুকেরি ভিতরে
রয়েছো আকা আমারই অন্তরে

দিবা নিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে,ভালোবাসি, ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে

হুমমমম লাগেনা ভালো তুমি হিনা
আমার হৃদয়ে তুমি শিশির মালা
হুমমমম দুচোখে আছো স্বপ্নে থাকো,
রয়েছো আমার সবুজ আদরে

দিবানিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে ভালোবাসি,ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে

হুম্ম বাছেনা প্রানটা দূরে গেলে
আমার চোখের একটু আড়ালে
জীবনে তুমি মরনে ও রবে
একই সাথে রবো কবরে

দিবানিশি মনের মাঝে তোমার নামে
বৃষ্টি ঝরে,ভালোবাসি, ভালোবেসে
যাবো সারা জনম ধরে””

গানটা সবার এতো পছন্দ হয়েছে যে কি বলবো সবার হাত তালি আর শিটি বাজানোই বুঝিয়ে দিচ্ছে

তানভীর তো পুরো অভাক,আজ যেন সে সম্পূর্ণ নতুন এক আনুশাকে দেখছে,,এই দিনটা কোন দিন ভুলার নয়,তানভীর এই সব ভাবছে
আনুশা তানভীরের পাশে এসে
কি কেমন দিলাম বলো

তানভীর : হুম সেটাই ভাবছি,আমি আজ তোমাকে সম্পূর্ণ নতুন রুপে দেখছি

আনুশা: তাইই,এই বার রেডি হও স্যার এবার যে আবার তোমার ফালা,,কিন্তু উপস্থিত সকলের ইচ্ছে তানভীর আর আনুশার একটা কাপেল ডান্স দেখবে

কিন্তু আনুশা তো নাচ পারে না তাই রাজি হচ্ছিলো না।

তানভীর : তুমি আসো আমি আছি তো, আমি সম্পূর্ণ তোমাকে হেল্প করবো

আনুশা: ব্যাপারটা তা নয়,আমি তো কোন দিন নাচিইনি,,

তানভীর : আমি আছি ত এসো

তার পর তানভীর আর আনুশা মিলে একটা হিন্দি গানের নাচ দিলো

“সান্সচমে তেরি সান্সউমে লেতু
বুঝে সান্সসায়ে মুঝে সান্সসায়ে
রুহুনেজুলি রেসকেকে খুসবো
তুঝ সান্সসায়ে মুজে সান্সসায়ে
তুঝ সান্সায়ে”
এই গান টার নাছ দেয়,,সবার হাত তালিই বলে দিচ্ছে কাপেল ডান্স টা সবাই অনেক ইনজয় করেছে, স্টেজ থেকে নামার পর অনেকই আনুশা আর তানভীরেরর সাথে পরিচিত হতে আসে

।এই ভাবে হইচই এর মধ্যে হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়,,সবাই ক্লান্ত হয়ে ঘুমাতে গেলো

পরদিন বিয়ে সবাই সবার কাজ নিয়ে ব্যাস্ত,আনুশা তো এতো ব্যাস্ত যে তানভীর ওকে সকাল থেকে কয়েকবার খুজেও কিন্তু পায়নি

তানভীর : এই আনুশাকে যে কই পাই একটা গিফট এনেছি ওর জন্য, কিন্তু ওকে তো পাচ্ছি না, যাই ওর রুমে রেখে আসি

এদিকে অন্নিকে বউ সাজানো হয়ে গেছে,অন্নি আনুশাকে ঝোর করে রেডী হতে পাঠালো

আনুশা: ওহ বউ সাজটা দেখতেই দিলো না আরে বাবা বিয়ে তো ওর আমি একটু পরে রেডী হলে কি হতো কিন্তু না কে শুনে কার কথা
নিজে নিজে বকতে বকতে রুমে ডুকলো

to be continue :আগামি কাল শেষ পর্ব দিয়ে দিবো

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে