হারিয়ে যাওয়া, পথ খুঁজে পাওয়া part: 21
লেখা –সুলতানা ইতি
তানভীর: আজ কতো গুলো বছর পর আনুশাকে দেখলাম ও ঠিক আগের মতোই আছে একটুও চেঞ্জ হয়নি,ও তো জানে না ওকে দেখার পর আমার বুকের ভিতরে চলাৎ করে ঢেউ বয়ে যাওয়া শুরু করলো,, বুকের রক্ত আবার নিজের গতীভেগে ফিরে এসেছে
আজ অনেক বছর পর,আশার আলো দেখেছে এই দুই চোখ তোমাকে ফিরে পাবার আশা, আর তোমাকে হারিয়ে যেতে দিবো না,
কিন্তু আজ যদি ও আমকে এই চাকরি থেকে বের করে দেয় তা হলে তো ওর কাছা কাছি থাকা খুব কঠিন হয়ে যাবে
অন্নি: মিঃ তানভীর
তানভীর : ও অন্নি ম্যাম আপনি,আসুন আমাকে চাকরি থেকে বের করে দিতে বলেছে তাই না
অন্নি: না তা বলেনি,আমি আছি না
তানভীর : হাহ সত্যি তো আনুশা আমাকে ওর অফিসে রাখবে
অন্নি: হুম, আচ্ছা শুনুন আপনার সাথে আমার কথা আছে
তানভীর : জি বলুন
অন্নি: আরে অফিসে না, অফিস শেষ এ বাইরে কোথায় ও মিট করবো আমরা কেমন
তানভীর : ওকে
আনুশা: অন্নি এখন ও কি করছে একটু পরে যে মিটিং শুরু হবে সে দিকে খেয়াল নেই তার,ইন্টার কমে রত্নাকে ফোন করে বল্লো আনুশাকে পাঠিয়ে দিতে
কিছুক্ষন পর অন্নি এসে, ম্যাম চলুন মিটিং এর সময় হয়ে গেছে
আনুশা: আপনার তা হলে মনে আছে
অন্নি; মনে থাকবে না কেনো ক্লাইন্টরা এসে গেছে আসুন মিটিং শুরু করা যাক
আনুশা আর অন্নি মিটিং রুমে গেলো & ভালো ভাবে ডিলটা ফাইনাল করলো
অন্নি: যাক আনুশার অনেক ইচ্ছে ছিলো এই ডিলটা যেন ঠিক ভাবে হয় এখন,কোন ঝামেলা হয়নি এই অনেক
দুপুরে লাঞ্চের বিরতি,অন্নি: ম্যাম বাসা থেকে আপনার খাবার পাঠিয়েছে আপনি খেয়েনিন
আনুশা: আপনি খাবেন না,
অন্নি: আমি ক্যান্টিনে খেয়ে নিবো
আনুশা: কোথায় ও খেতে হবে না আমরা দুজনে খাবারটা খেতে পারবো
অন্নি: যাহ এখন কি হবে ভেবেছিলাম,লাঞ্চ এর সময় তানভীর এর সাথে কথা বলে নিবো সেটা ও তো হলো না, এখন কি করবো
আনুশা: কি এতো ভাবছেন অন্নি, চলুন খেয়ে নিবেন
অন্নি: হুম,,
খাওয়া শেষ এ। অফিসের কিছু কাজ ছিলো অন্নি সব গুলো তাড়া তাড়ি শেষ করে নিলো,,
আনুশা: এতো তাড়া হুড়া করে কাজ করছিস কোথায় ও যাবি নাকি
অন্নি: হ্যারে সরি,ম্যাম আসলে আম্মু ফোন করেছিলো, কি জানি কাজ আছে, যেতে হবে তাই
আনুশা: ও আন্টি ফোন করেছিলো তো তাড়া তাড়ি যা কাজ করতে হবে না, নিশ্চয় খুব দরকারে ডেকেছে
অন্নি: যাক বাচা গেলো আমার মিথ্যা বলাটা বুঝতে পারেনি নইলে তো সব ভেস্তে যেতো, অন্নি অফিস থেকে বের হয়ে তানভীর কে মেসেজ করে দিলো আনুশা কে কি বলে অফিস থেকে বের হবে সব বলে দিলো
তানভীর মেসেজ পেয়ে আর দেরি করলো না,আনুশার ক্যাবিন এর বাইরে থেকে নক করলো
আনুশা: ওহ নো এ কে অফিসে রাখলে ও শুধু কাজের অযুহাতে আমার কাছে আসতে ছাইবে, বাট অফিসে না রেখে ও উপায় নেই,,,,ইয়েস
তানভীর : ম্যাম এখানে আসার পর, বাড়ি থেকে ফোন এসেছে হঠ্যাৎ করে নাকি আমার আম্মুর শরির টা খুব খারাফ হয়ে গেছে,এখন ম্যাম আমি ছাড়া তো আম্মুর কেউ নেই কে দেখবে বলুন
আনুশা: এতো ঘুরিয়ে পেছিয়ে না বলে সোজাই তো বলতে পারেন, যে আপনার ছুটি লাগবে
তানভীর : ইয়ে মা,মানে ম্যাম
আনুশা: আর কিছু বলতে হবে না যান,আপনার আম্মুর কাছে যান,, আর হ্যা রোজ রোজ এই ভাবে কাজে ফাঁকি দেয়ার জন্য ছুটি চাইবেন্না
তানভীর : জি ম্যাম,
বেরিয়ে পড়লাম উফ বাচলাম,যে ভাবে উকিলের মতো জেরা করা শুরু করছে,এখন মিস অন্নির দেয়া ঠিকানায় পৌছাতে হবে
আনুশা: অফিসের কাজ গুলো শেষ করে আজ বাড়িতে যাবো বিদেশ থেকে আসার পর মা আর আপুকে একদম সময় দেয়া হয়নি
এর মাঝে একবার সুমি আপু জামাইয়ের সাথে দেখা করবো,,আপুর সাথে উনি সংসার করতে চায়কি চায় না,জানতে হবে
তানভীর ঠিকানা অনুযায়ী পৌছে গেলো,,স্থান একটা কফি শপ
অন্নি: উফ এই তানভীর ছেলেটা আসছে না কেনো,আনুশা ছুটি দিয়েছে তো ওকে
তানভীর : সরি সরি অনেক্ষন ওয়েট করতে হলো তাই না
অন্নি: ও আপনি এসে গেছেন, যাক তা হলে আনুশা কে ম্যানেজ করতে পারলেন
তানভীর : একটু কষ্ট হয়েছিলো, বুঝেনই তো ম্যাম বিজনেস এর ব্যাপারে কোন কম্প্রোমাইজ করতে চায় না
অন্নি: তা বুঝি না আবার,,আচ্ছা কি খাবেন বলুন অর্ডার করি আগে
তানভীর : আমার কফি হলেই চলবে
অন্নি: ওকে এক্সকিউজমি ভাইয়া দুইটা কফি দেন, এই টেবিলে
তানভীর : তা কেনো ডেকেছেন জানতে পারি
অন্নি: ইয়াহ অবশ্যই জানবেন দাড়ান কফি খেতে খেতে বলবো, আমার আবার খাওয়ার সময় গল্প করা খুব পছন্দ,, এই তো কফি এসে গেছে
তানভীর : এই বার তা হলে শুরু করা যাক
অন্নি: হুম,আপনি জানেন তো আমি আনুশার কি হই
তানভীর : কেনো আপনি আনুশার পিএ, এটা না জানার কি আছে
অন্নি: আপনার জানার মধ্যে একটু ভুল আছে আমি ওর পিএ প্লাস আমি ওর বেষ্ট ফ্রেন্ড,প্লাস বোন, কেনো না আনুশার আম্মু আমাকে মেয়ের মতোই স্নেহ করে
তানভীর :????? বলেন কি,তা হলে আপনারা একজন আরেক জন কে আপনি করে বলেন কেনো
তানভীর : আমাদের মহাররানীর মতে অফিস কাজের জায়গা,কোন ফ্রেন্ড আড্ডার জায়গা নয়,কাজের জায়গাতে সবাই সবাইকে আপনি করে সম্মান দেখিয়ে কথা বলতে হবে
তানভীর : জিও, লভলি, আপনার বান্ধুবী কে দিয়ে সব সম্ভব
অন্নি: তা ঠিক,বাট কথা হচ্ছে আমার মনে হয় আপনি অনেক ভালোবাসেন আনুশা কে তাই না
তানভীর : খুশি হয়ে আপনি জানেন কি করে নিশ্চয় আনুশা বলেছে তাই না,তা হলে আপনার সাথে আমামার গল্প ও করেছে,আমি জানি তো ও আমাকে মনে মনে ভালো বাসে কিন্তু মুখে বলতে চায়না
অন্নি: এতো এক্সাইটেড হওয়ার মতো কিছু বলেনি, ওকে,
আমি সেই স্কুল লাইফ থেকে আনুশার বন্ধু,,ওকে ভালো করে চিনি,বুঝি ওর মনের ভাষা,, আমাকে ও বলেছিলো আপনার কথা,কলেজে একটা ছেলে ডিস্ট্রাব করে,আমি ভাবলাম এই রকম অনেক ছেলেই আছে টাইমপাস করার জন্য মেয়েদের পিছনে ঘুরে,, তাই এতো গুরুত্ব দিই নি,,,আপনি ছিলেন না সে দিন এয়ারপোর্ট এ, আমার মনে ও ছিলো না আপনি সেই,,
তানভীর : হুম আমি গেছিলাম সেদিন আনুশার সাথে দেখা করতে, ভেবেছিলাম ওর সাথে আর কোন দিন দেখা হবে না,,কিন্তু আবার যে ওকে দেখতে পাবো আমি তা কল্পনা ও করিনি, ওকে দেখে আমার বুকের ভিতর চলাৎ করে উঠে, আপনি বুঝতে পারবেন্না,তখন আমার মনের ভিতরে কি চলছিলো আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না,,
অন্নি: হুম বুঝতে পেরেছি আমি,আজ এই টা বুঝলাম যে আপনার মতো করে আনুশা কে কেউ ভালোবাসতে পারবে না,, তাই আমি চাই আপনি আনুশার মন জিতুন ওর মনে একটু একটু করে জায়গা করে নিন
তানভীর : কিন্তু কি করে আনুশা তো আমাজে সহ্যই করতে পারে না।
অন্নি: সুযোগ টা আমি আপনাকে করে দিবো
তানভীর : কি করে,,
অন্নি: বাবা মা অনেক দিন থেকেই আমার বিয়ের কথা বলছে, কিন্তু আনুশার কথা ভেবে আমি চুপ ছিলাম,এখন আমি সেই বাহানায় অফিসে যাবো না আর আমার পরে সব কাজ আপনি দেখবেন,এই দায়িত্ব আমি আপনাকে দিবো
তানভীর : কিন্তু ম্যাম আপনার জায়গায় যদি আপনার বান্ধুবী আরেক জনকে নিয়ে আসে
অন্নি: আনবে না কারন চাকরিটা আমি ছাড়বো না, আপনি শুধু আমার এপসেন্স এ আমার কাজ গুলো দেখার বাহানায় আনুশার কাছা কাছি যাবেন,এমন কিছু করবেন যাতে ও আপনার প্রতি ইমপ্রেস হয়ে যায়
তানভীর : আমার একটা প্রশ্ন ছিলো
অন্নি: হুম বলুন
তানভীর : আনুশার জীবনে কি এমন হয়েছে যে সে ছেলেদের সহ্য করতে পারে না, আর বিয়ের মতো একটা পবিত্র বন্ধন কে সাপোর্ট করে না
অন্নি: (নাহ আনুশা ফাস্ট সম্পর্কে আমি তানভীর কে কিছু বলবো না,তানভীর যদি সব জেনে আনুশা কে আর ভালো না বাসে,তা হলে মেয়েটার মনটা আবার ভেঙে যাবে)নাহ তেমন কিছুই নেই,এমনি ওর বিয়ে হয়ে গেলে ওর মা কি করবে, কে দেখবে তাকে তাই জন্য আর কি
তানভীর : ও আচ্ছা তাই,,ঠিক আছে অনেক কথা হলো এবার তা হলে উঠা যাক
অন্নি: হুম চলুন
আনুশা আজ অনেক দিন পর বাড়িতে সবার সাথে গল্প করছে
সুমি: আনু আজ না ছোট বেলার কথা খুব মনে পড়ছে এখন শুধু বড় আপু থাকলে ভালো হতো
আনুশা: তা ঠিক বলেছিস,বড় আপু তো এখন আসতে পারবে না, অনেক কাজ নাকি ওর,
সুমি: হুম, কি করা আমরা দুই বোন মিলে আড্ডা দিই,অন্নি থাকলে ও হতো অন্নি কোথায় রে
আনুশা: আন্টি ফোন করেছিলো তাই দেখা করতে গেছে
সুমি: ওহ
আনুশা: আপু তুই কি আর ভাইয়ার কাছে ফিরে যাবি না
সুমি; কি করে যাবো মানুষ টা কে আমি এতো বছরে ও একটা সন্তান দিতে পারিনি,,
আনুশা: আজ কাল এই রকম তো হয়েই থাকে,, তোরা বাচ্চা দত্তক নিবি তা হলেই তো হয়
সুমি: তা হলে তো ভালোই হতো কিন্তু আমার শাশুড়ি এতে রাজি নয়,আর তোর দুলা ভাই মায়ের কথার উপরে কথা বলে না
আনুশা: ঠিক আছে আমি দুলা ভাইয়ের সাথে কথা বলবো,, এমন সময় আনুশার ফোন বেজে উঠলো
আপু অন্নি ফোন করেছে কথা বলে আসি
অন্নি বল কি খবর আন্টি কেমন আছে
অন্নি: সব ঠিক আছে জানিস আব্বু আমার বিয়ে এক রকম ফাইনাল করে ফেলেছে
আনুশা: হোয়াট তোকে না জানিয়ে বিয়ে ফাইনাল করে কি করে
অন্নি: এখন ঠিক হয়নি, বাসার সবার ছেলেকে পছন্দ ইতালি থেকে এসেছে,ইতালি তে নাকি ছেলের বিজনেস আছে,,কালকে দেখতে আসবে ছেলে পক্ষ আমাকে,তুই আসবি তো
আনুশা: তুই তা হলে কাল অফিসে আসতে পারবি না
অন্নি: তুই ও তো অফিসে যাবি না,তুই অফিসে গেলে এখানে আসবে কে
আনুশা: আমি পরে যাবো
অন্নি: পাত্র পক্ষ চলে গেলে তুই আসার কি দরকার,,আর তুই পাত্র পছন্দ না করলে আমি বিয়ে করবো না
আনুশা: কি বলছিস তুই, বিয়ে করবি তুই ছেলের সাথে থাকবি তুই আর পছন্দ করবো আমি,ইম্পসিবল
অন্নি: আমি ওতো কথা বুঝি না তুই আসবি,,বায়
আনুশা: যাহ কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না,,এখন না যেয়ে কোন উপায় নেই,ও সব সময় আমার পাশে থেকেছে,আর আমি ওর জীবনের ইম্পরট্যান্ট সময়ে থাকবো না তা ও তো হয় না একদিন অফিসে না গেলে কিছু হবে না,,,মহনাকে সব বুঝিয়ে দিবো, আর তানভীর তো আছেই,,ও দেখে নিবে সব আমি জানি
to be continue