হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part:26শেষ পর্ব

0
4862

হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে পাওয়া part:26শেষ পর্ব

লেখা –সুলতানা ইতি

 

আনুশা নিজে নিজে বকতে বকতে রুমে ডুকলো

কি পরবে আজ সেটাই ভাবছে হঠ্যাৎ ই চোখ গেলো বিছানার উপরে একটা প্যাকেট পড়ে আছে,কৌতুহোল নিয়ে আনুশা প্যাকেট টা হা তে নেয়

আনুশা: এই প্যাকেট টা এখানে কে রেখে গেছে,দেখি তো কি আছে এর মধ্যে, প্যাকেট খুলে আনুশা তো অভাক একটা শাড়ি, আর সাথে একটা চিঠি,আনুশা চিঠি টা পড়তে শুরু করলো

ওগো আমার মনের রানী,
তুমি নিশ্চই এতোক্ষনে শাড়িটা পেয়েচো, আর এখন মনে মনে হাসছো,এই ভেবে যে ডিজিটাল যুগে আমি তোমাকে চিঠি লিখেছি,কি করবো বলো ফোনে কি সব কথা বলা যায়,কিছু কথা চিঠিতেই মানায়,আমি চাই তুমি আজ শাড়ি চুড়ি পরে বনলতা সেনের মতো সাজবে,আমি জানি বনলতা সেন জীবনানন্দ দাস এর গল্পের নাইকা এর বাস্তবে কোন অস্তিত্ব নেই,কিন্তু আমি চাই সেই অস্তিত্ব টা আজ সবাই দেখুক তুমি আমার বনলতা সেন, এটা সবাই জানুক,

?তানভীর?

আনুশা: চিঠিটা পড়ে যেন ঠোটের কোনায় হাসিটা লেগেই আছে, আচ্ছা শাড়িটা দেখি ওয়াও ব্ল্যাক আমার ফেভারিট কালার,আচ্ছা কেউ কালো শাড়ি পরে বনলতা সেন সাজে, দূর যাই ফ্রেশ হয়ে আসি,আনুশা ফ্রেশ হয়ে শাড়িটা পরতে আসলো,
এমা আমি তো শাড়ি পরতে জানি না এবার কি হবে কিন্তু পরতে তো হবে না পরলে তানভীর মন খারাপ করবে, শাড়ির কুছি গুলাই থাকছে না বার বার খুলে যাচ্ছে

এমন সময় তানভীর : আনুশা তুমি,এহহহহ আমি কিছু দেখিনি বলেই চোখে হাত দিয়ে পিছনে ফিরে গেলো

আনুশা: আরে দূর কি বলো তুমি শাড়ি তো পরতে পারছি না, কুছি গুলো একটু ধরে দাও তো,

তানভীর : ও তাই, আমি ভেবেছি কি

আনুশা: হুম তুমি তো ভাববেই সারাদিন মনের মধ্যে বোধবুদ্ধি নিয়ে থাকো তো তাই

তানভীর যত্ন করে শাড়ির কুছি ভাজ করে ধরলো,আনুশা শাড়িটা পরে নিলো
তানভীর : ওয়াও লুকিং সো বিউটি ফুল,

আনুশা: লজ্জা পেয়ে পিছনে ফিরে চুল বাধতে যায়

তানভীর : বাধা দেয়, চুল বেধো না বনলতা সেন চুল বাধে না
খোলা চুলে তানভীর একটু ফুল কানের কাছে গুঁজে দিলো,দুজনেই আয়নার দিকে তাকিয়ে দুইজনকে দেখছে,আজ তোমার থেকে চোখ ফেরানো যাচ্ছে না আনুশা

আনুশা: আর দেখতে হবে না এবার যাও তো বরযাত্রী আসার সময় হয়েছে
তানভীর ;হুম যাচ্ছি

আনুশা গিয়ে অন্নির পাশে বসলো অন্নি: বাবাহ আনু কি সেজেছিস রে তুই,আজকে তো কেউ আমাকে দেখবে না সবাই তোকে দেখার জন্য লাইন ধরবে

আনুশা: চুপ করতো বিয়ের কনেদের এতো কথা বলতে নেই
বর এসেছে বলে সবার হইচই পড়ে গেলো

কিছুক্ষনের মধ্যে বিয়ে পড়ানো শেষ খাবারের পর্ব ও শেষ
আনুশা: অন্নি তুই বসতো আমি একটু আসছি

অন্নি: কই যাচ্ছিস আমার খুব একা একা লাগছে

আনুশা: আসছি,আনুশা মিষ্টি নিয়ে তানভীর আর তানিমের কাছে গেলো

আনুশা: দুলাভাই একটা মিষ্টি খান

তানিম: মুছকি হেসে আর খেতে পারবো না শালিকা

আনুশা: তানভীর কে বল্লো বেয়াই আপনি একটা মিষ্টি খান

তানভীর : না বেয়ান খাবো না

আনুশা: এমন বললে আমি শুনবো নাকি,প্লিজ বেয়াই
তানিমের অন্য বন্ধুরা তানভীর খেয়ে নে বেয়ান এতো কষ্ট করে আনলো

তানভীর : ওকে দিন বেয়ান,আনুশা এই নিন,(খাও খাও চান্দু খেলে টের পাবে)

তানভীর : মুখে দিয়ে চিবানোর পরে উহা হাহহ হাহহহ মিষ্টি ঝাল কেনো
তা ও এতো ঝাল আমার মুখ পুড়ে যাচ্ছে

আনুশা: হিহিহিহি,বেয়াই বোঝ এই বার মিষ্টিতে একদম ধানি লংকা দিয়েছি,হহিহিহহি, আমি গেলাম,ঝালে তানভীরের চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে গেলো,(আচ্ছা এই শোধ আমি তুলবোই)

এই ভাবেই হাসি আনন্দের মাঝে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো,অন্নি শশুড় বাড়ির পথে পা বাড়ালো
কেটে গেলো আর কয়েক সপ্তাহ

তানভীর : আনুশা এই বার মাকে তোমাদের বাড়ি পাঠাই আমাদের বিয়ের কথা বলার জন্য

আনুশা: হুম আমি ও তাই ভাবছি, আর দেরি করে কি হবে বলো,
তানভীর : হুম কালই পাঠাবো

আনুশা: তানভীর এই ফাইল গুলো একটু দেখে দাওতো
তানভীর : হুম দিচ্ছি

এমন সময় দরজায় কেউ নক করলো

আনুশা: ইয়েস,তাকিয়ে দেখলো নিহাল,এসেছে, তুমিইই

নিহাল: হুম তোমার সাথে একটু কথা ছিলো
আনুশা: হুম বলুন

নিহাল: মিঃ তানভীর আপনি যদি একটু

ও এখানেই থাকবে নিহাল যা বলার ওর সামনে বলো

তানভীর : না থাক আমি বাইরে একটু ওয়েট করি

আনুশা: না তানভীর তুমি এখানেই থাকবে,নিহাল তোমার যদি কিছু বলার থাকে তো বলো নইলে আসতে পারো

নিহাল: না মানে বলছিলাম কি দেখো আমি এখন আগের মতো হাটতে পারি
আনুশা: হুম তো

নিহাল; আমি জানি আমি তোমার প্রতি খুব অন্যায় করেছিলাম, আর কোন কিছুর বিনিময় আমার ক্ষমা হয়না তবু ও বলছি চলো আনুশা আবার নতুন করে সব শুরু করি,আর কোন দিন তোমার হাত ছাড়বো না

আনুশা: স্টপ মিঃ নিহাল আপনি আমার সাথে নতুন করে কি শুরু করবেন,যা পুরোনো হয়ে গেছে তা নতুন করে শুরু করা যায় না,আর আমার হাত টা তো আমি ধরতেই দিয়েছিলাম,আপনি ধরে রাখতে পারেননি সেটা আপনার অক্ষমতা

নিহাল: তবু ও কি

আনুশা: ভালোবাসি না আপনাকে,আপনার মতো মানুষদের করুনা করা যায় ভালোবাসা যায় না, সো আপনি আসতে পারেন,দরজা টা ঐ দিকে
চরম অপমানিত হয়ে নিহাল চলে যায়

আনুশা কান্না করতে শুরু করে কেনো এমন হলো আমার সাথে
তানভীর : প্লিজ আনুশা কেদোনা আমি আছি তো

আনুশা: তানভীর তুমি বলেছিলে না তোমার আম্মু কে কাল পাঠাবে আমাদের বাড়িতে,কাল নয় তুমি আজই পাঠাও আর এক্ষুনি

তানভীর : কিন্তু আনুশা
আনুশা: তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাও কি না বলো

তানভীর : হুম চাই

আনুশা: তা হলে এক্ষুনি যাও তোমার মাকে নিয়ে আমাদে বাড়িতে এসো
তানভীর : ওকে

তানভীরের আম্মু তো আগেই আনুশাকে পছন্দ করতো তাই আজ ছেলের কথা শুনে আর দেরি করেনি চলে আসে আনুশাদের বাড়িতে এন্ড বিয়ের ডেইট ফাইনাল করে সাতদিন পর বিয়ে

আনুশার কাছে এই সাতদিন ও বেশি মনে হচ্ছে,কিন্তু কি করা সব আয়োজন করতে হবে তো(নিহাল কে বোঝাতে ওর মতো বেইমানের জন্য আমি অসুখী নই)

তানিম আর অন্নি আনুশার বিয়েতে কমর বেধে নেমে পড়ে কাজ করতে, আনুশা বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এই অনেক,
আনুশার আম্মু ও অনেক খুশি মেয়েটার জীবনটা হয় তো এবার সুখের হবে আনুশার বিয়ের কথা শুনে আত্মিয় স্বজন সবাই আনন্দে আটখানা,সবার অপেক্ষার পালা শেষ করে এলো সে কাংখিত দিন,আনুশার বিয়ের দিন
দুই বাড়িতে বিয়ের আনন্দ

পার্লারের মেয়েরা আনুশাকে একটা পরি সাজিয়ে দিয়েছে আনুশার বিয়ের লেহেঙ্গা টা নীল,তানভীরের পছন্দ ওর বউ বিয়ের দিন নীল পরবে মনে হচ্ছে আকাস থেকে নীল পরী মাটিতে নেমে এসেছে

এর মধ্যে বর যাত্রী এলো আনুশার দুই দুলা ভাই তানভীর কে ভিতরে আসতে দিচ্ছে না ফিতা কাটার জন্য, তানভীর অস্থির, আর ওর দুলা ভাইয়েরা দুষ্টামি করে ভিতরে আসতেই দিচ্ছে না, অনেক ঝোরা ঝোরির পরে তানিম তানভীর কে নিয়ে ভিতরে আসলো
যথা সময়ে বিয়ের কাজ সম্পূর্ণ হলো

এইবার কন্যা সম্পাদান করবে আনুশার আম্মু,তানভীরের হাতে তিনি মেয়েকে তুলে দিলেন,বাবা আমার কলিজা আমার বুকের ধন আনুশা,আমার ছোট মেয়ে খুব আদরের ওকে আজ তোমার হাতে তুলে দিলাম তুমি ওকে দেখে রেখো

আনুশা: মা এমন করে বলছে যেন আমাকে পর করে দিচ্ছে আনুশা মাকে জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলো মা তুমি এমন করে বলো না মা,আমাকে কেনো পর করে দিচ্ছো আমি তোমার ছোট্ট আনু হয়ে থাকতে চাই এই ভাবেই প্রলাপ করে কাদছে আনুশা
অন্নি ওকে ঝোর করে গাড়িতে উঠায় তা ও আনুশা অন্নি কে ছাড়তে চায় না খুব ঝোরে জড়িয়ে ধরে কান্না করে

অন্নি অনেক বুঝিয়ে তানভীরের পাশে বসিয়ে দিলো আনুশা কে গাড়ি চলছে,আনুশার কান্নাও থেমে এসেছে কারন তানভীর যে আছে তার পাশে,

তানভীর : কাদছো কেন পাগলি আমি আছি তো তোমার পাশে, আনুশার হাত টা তানভীর শক্ত করে ধরে রাখে
ঘন্টা খানেকের মধ্যে ওরা পৌছে যায়,

তানভীরের আম্মু আনুশা কে বরন করে ঘরে তলে
কিছুক্ষন পর আনুশাকে বাসর ঘরে দেয়া হলো

আনুশা ঘোমটা দিয়ে বসে আছে,সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো নানা ফুলের গন্ধে ঘরটা একদম সুবাসিত
কিছুক্ষিন পর তানভীর রুমে প্রবেশ করলো,

তানভীর : আনুশার ঘোমটা সরিয়ে,জানো আনুশা আজ তোমাকে একদম রানীর মতো লাগছে

আনুশা: লজ্জা পায় তানভীরের কথা শুনে

তানভীর : আয় হায় লজ্জাবতী লাজুক লতা,এতো লজ্জা ফেলে হবে
আনুশা: মানে

তানভীর : মানে আর কি বলবো,একজন মানুষ তার ডায়েরী তে চুপি চুপি তার স্বপ্নের কথা লিখেছিলো ছোট্ট একটা সংসার থাকবে, সেখানে বরকে অনেক ভালোবাসবে আর বরের থেকে ভালোবাসা আদায় করে নিবে আর সেই ঘরে একটা ছোট্ট প্রিন্সেস থাকবে সে সারা ঘর

আনুশা আর বলতে দিলো না তানভীর কে,কিইই তুমি আমাকে লুকিয়ে আমার ডায়েরী পড়েছিলে
তানভীর হাসতে হাসতে পড়বো না ডায়েরীর প্রথম পাতায় যে আমার লিখা ছিলো

আনুশা: হুম ঐ কবিতাটা আমার খুব ভালো লাগে তাই তো যত্ন করে রেখে দিয়েছি

যাবে নাতো কখনো আমাকে ছেড়ে, জীবন নদীর মাঝ পথে হাত ছেড়ে দিবে না তো

তানভীর : প্রশ্নই আসেনা ছয় বছর ঘুরে ভালোবাসা পেয়েছি কি হাত ছেড়ে দেয়ার জন্য

হে আমার মনের রানী আমাদের প্রিন্সেস কি করে আসবে ভেবেছো কিছু

আনুশা: ইসসস তুমি ও না লজ্জায় তানভীরের বুকে মুখ লুকালো তানভীর ও আনুশা বুকে জড়িয়ে দরলো যেন হারিয়ে না যায়

শুরু হলো আনুশা তানভীরের পথ চলা, যে পথ আনুশা হারিয়ে ফেলে খুব কান্না করেছিলো, জীবনের হাসি আনন্দ ভুলে গিয়েছিলো আজ সে পথ নতুন রুপে খুঁজে পেয়েছে আনুশা,এ যেন হারানো পথ নতুন রুপে ধরা দিয়েছে

,,,,,,,,,,,,,সমাপ্ত,,,,,,,,,,,,

,,,,কিছু কথা,,,,
আমার যে সব প্রান প্রিয় বন্ধুরা তাদের মূল্যবান সময় ব্যায় করে আমার লিখা গল্পটা পড়েছে& আমাকে লিখার অনু পেরনা জুগিয়েছে তাদের জন্য রইলো আন্তরিক অভিনন্দন

আমার একজন ফ্রেন্ডস বলেছিলো গল্পের ইন্ডিং টা যেন নিহালের সাথে হয় তাকে বলছি বন্ধু, যাকে একবার ঘৃনা করা হয়,তাকে কোন দিন ভালোবাসা সম্ভব নয়,আনুশা নিহালকে ঘৃনা করে, সেখানে ভালোবাসা সম্ভব নয়

,,,সবাই ভালো থাকবেন,,,

1 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে