হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পার্ট-২৪
#আরিশা অনু
-ঘড়ির কাটায় রাত ১১:২৫ রুহিকে নিয়ে রোহান রুমে ঢুকলো……
-মামনি এবার আমরা ঘুমাই চলো অনেক রাত হয়ে গেছে….
-বাবাই আমাল(আমার) গল্প না শুনলে ঘুম আছেনা(আসেনা)আম্মু আমায় গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেয় প্রতিদিন বলল রুহি….
-আচ্ছা সোনা মামনি আমি ও আজ আমার মা কে গল্প বলে ঘুম পাড়িয়ে দেব হবেতো তাহলে….?
-হ্যাঁ বাবাই হবে….
-তারপর রুহিকে আমার বুকের মধ্যে নিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে গল্প বলা শুরু করলাম।কিছুক্ষণের মধ্যে ও ঘুমিয়ে গেল।কি নিঃষ্পাপ লাগছে বাচ্চাটা কে।মনে হচ্ছে খুব শান্তিতে ঘুমাচ্ছে আমার বুকে।রুহির মায়া ভরা মুখটা দেখলে যেন পৃথিবীর সব কষ্ট কে ভুলে থাকা যায়। অদ্ভুত ভাবে মেয়েটার চোখ,নাক,মুখ সব আমার সাথে মেলে কেন যেন বার বার মনে হয় ও আমার ই অংশ।কিন্তু কিভাবে রুহি আমার অংশ হবে ও তো….. ভাবতে ভাবতে আবার মন খারাপ হয়ে গেল।
-রুহির কপালে একটা হামি দিলাম।পাশে তাকালাম অনন্যা ও যেন আজ অনেক শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। ইস্ কত ভালো হতো যদি সারাজীবন এভাবে থাকতে পারতাম। আজ আমার জীবনটা স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে হচ্ছে।হোকনা অতি অল্প সময়ের জন্য তারপর ও তো এত বছর ধরে বুকের ভেতর জ্বলতে থাকা আগুন কিছুটা প্রশমিত হল।
-এখক্ষণ অনন্যার দিকে তাকিয়ে কথাগুলো ভাবছিলাম। তারপর এগিয়ে যেয়ে ওর কপালে একটা হামি দিয়ে দুচোখ বন্ধ করলাম।চোখ বন্ধ করতেই রুহি আর অনন্যার মুখটা ভেষে উঠলো। অনেক বছর পর আজ একটু শান্তিতে ঘুমাতে পারবো….
.
.
.
.
-একঝালক রোদ এসে মুখের উপর পড়তের আরামের ঘুমটা ভেঙে গেল অনন্যার…
-আড়ামোড়া ভেঙে উঠতে যেয়ে ও ব্যাথায় কাঁকিয়ে উঠে আবার শুয়ে পড়লো বেচারি।
-কি হল বুঝতে পারেনি এখনো বেচারি তাই মাথায় হাত দিতেই বুঝলো ব্যান্ডস করা।হুট করে পাশে তাকাতেই চোখ আটকে গেল অনন্যার।
-রোহানের বুকে মুখগুজে শুয়ে আছে একটা ছোট্ট পরি সে পরি টা আর কেউ নয় আমার কলিজার টুকরা রুহি।
-রুহি এখানো কি করে আসলো নাকি রোহান আসলো আমার বাসায় কিন্তু আমার এক্সিডেন্ট হল যে তাহলে আমি কোথায় এখন আর রুহি কি করে আসল? নাকি আমি স্বপ্নে আছি? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না পুরো মাথা আওলা ঝাওলা লাগছে এখন আমার।মাথা চেপে ধরে উঠে বসলাম।সারা রুমে চোখ বুলাতেই বুঝতে পারলাম এটা রোহানের রুম।আর আমি এখন রোহানের বাসায় আছি কিন্তু কিভাবে আসলাম এখানে? আমিতো রাস্তার উপর পড়ে ছিলাম আর রুহি এখানে কিভাবে আসলো না না রুহির কথা রোহান কিছুতেই যানতে পারে না আমার মনের ভুল এটা।
-হাত দিয়ে চোখ ডলে আবার তাকিয়ে দেখি আগের মতই রোহানের বুকের মধ্যে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে রুহি।অপূর্ব এক দৃশ্য বাবা মেয়েকে এভাবেই তো দেখতে চেয়েছিলাম আমি কিন্তু রোহান কি মেনে নিতে পারবে সবটা? আনমনে ভাবতে ভাবতে হঠাৎ কার ডাকে হুস ফিরলো অনন্যার।
-এই অনন্যা তুমি উঠলে কেনো শুয়ে পড় আমি নাস্তা রেডি করে এনে তোমায় ফ্রেশ করে দেব। খবরদার ততক্ষণ যেন বেড ছেড়ে এক পা ও নামবা না বলে দিচ্ছি।আমার কথা শুনে অনন্যা হা করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে আমি কিছু না বলে হালকা হেসে উঠে পড়লাম বেড ছেড়ে।রুহিকে বুক থেকে নামিয়ে বেডে শুইয়ে দিলাম আর কপালে একটা চুমু দিলাম।পিচ্চিটার ঘুমন্ত মুখটা দেখতে এত ভালো লাগছে যে বলে বোঝাতে পারবোনা।এসব ভাবতে ভাবতে রুম ছেড়ে বেরিয়ে পড়লো রোহান।
-আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি সত্যি এগুলো হচ্ছে আমার সাথে কিচ্ছু বুঝতে পারছিনা।রোহানের এই হঠাৎ পরিবর্তন আমাকে বড্ড ভাবাচ্ছে আজ।তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবনা বাদ দিয়ে কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম আবার। নয়তো রোহান এসে এভাবে বসে থাকতে দেখলে মাথা খাবে আবার।আস্তে আস্তে মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলাম।রোহান যে এত সহযে রুহিকে মেনে নিবে বুঝতেই পারিনি। তবে সবকিছু জানার পর কি হবে সত্যি যানিনা আমি।
-কাল অনন্যার রান্না করা খাবার গুলো এখনো কিছুটা ফ্রিজে রাখা আছে তাই গরম করে খাবারগুলো উপরে নিয়ে যাচ্ছিলাম তখন ই তৃধার সাথে দেখা হয়ে গেলো ড্রয়িং এ।
-বাহ্ তুমি তো একেবারে গিরগিটি কে ও হার মানিয়ে গেছো রোহান।কখন কোন সময় রং বদলে ফেলছো বোঝা দাই।তো যে বউকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা করছো তার অতীতের কাহিনি কি এত দ্রুত সব ভুলে গেছো? আর যদি ভুলে যেয়ে থাকো তাহলে বলো আমি না হয় কষ্ট করে আবার মনে করিয়ে দি?
-সামনে থেকে সরো তৃধা তোমার ফালতু কথা শোনার মুডে নেই এখন আমি কথাটা বলে পাশ কাটিয়ে উপরে চলে আসলাম।
-কি আমি ফালতু কথা বলি ঐ মেয়ের জন্য আমায় ফালতু বলা তাই না দেখো এবার আমি কি করি। শুধু অপেক্ষা করো একটু যাকে নিয়ে এত আদিক্ষেতা করছো তাকে নিজেই বাড়ি থেকে বের করে দেবে তুমি রোহান। আর এটা তৃধার প্রমিজ তোমায় একা একা রাগে গজ গজ করতে করতে কথাগুলো বললো তৃধা।
-রুমে যেয়ে খাবার গুলো পাশের টেবিলে রেখে এগিয়ে গেলাম অনন্যার দিকে।চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে ও তাই পাশে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম ঘুমিয়ে পড়েছো কি?
-কেবলমাএ চোখটা লেগে আসছিল তখন রোহানের কথা শুনে ঘুমটা ভেঙে গেল তাই বললাম না ঘুমাইনি।
-আচ্ছা উঠে বসো তাহলে চলো ফ্রেশ করে দি তোমায় খাওয়ার পর মেডিসিন আছে সেগুলো ও খেতে হবে তো।
-রোহান কে যত দেখছি তত অবাক হচ্ছি আমি ও কি সত্যি এখনো আগের মত ভালোবাসে আমায় নাকি সব অভিনয় করছে। মনে মনে এগুলো ভাবতে থাকলাম তখনি রোহানের কথায় হুস ফিরলো আমার।
-কি হল ওঠো..?
-হুম উঠছি।
-উঠে বসতেই রোহান আচমকা কোলে তুলে নিল আমায়। আরে আরে কি করছো পাগল হয়েছো নাকি।নামাও আমায় পড়ে যাব তো রোহান।
-হ্যাঁ পাগল হয়ে গেছি চুপ থাকো তো।তারপর ওকে ওয়াশরুমে নিয়ে যেয়ে নামিয়ে দিলাম।শুনো ফ্রেশ হয়ে আমায় ডাক দিবা আমি এসে নিয়ে যাব খবরদার বেসি পাকনামি করতে যাবানা বলে দিচ্ছি।কথাগুলো বলে ওয়াশরুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে চলে আসলাম।
-কি বলে গেল পাগলটা। আবার আগের মত পাগলামি শুরু করছে ও।সামান্য জ্বর আসলেও আগে এমন পাগলামি করতো বেড ছেড়ে নামতে দিতনা একদম এখনো তাই শুরু করেছে পাগলটা।তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।
-ফ্রেশ হয়ে বাইরে আসার সাথে সাথে পাগলটা কোলে তুলে নিলো।জানি ওকে বলেও কোনো কাজ হবেনা তাই চুপ করে থাকলাম।বেডের কাছে যেয়ে নামিয়ে দিল পাগলটা।
-চুপচাপ বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি এখনি।
-হুম।
-খাবার এনে ওর পাশে বসলাম। দেখি হা করো তো।
-কোনো কথা না বলে হা করলাম। ও খাইয়ে দিচ্ছে আমায় আর আমি চুপচাপ খাচ্ছি।পাঁচ বছর পর ওর হাতে খাবার খাচ্ছি চোখে পানি এসে গেছে আমার।অনেক কষ্টে চোখের পানিটা আটকে রাখলাম আমি। কিছু অনুভূতি মুখে বলে প্রকাশ করা যায়না। আমাদের অনুভূতি গুলো হারিয়ে যায়নি ঢাকা পড়েছিল কিছু অভিমানের আড়ালে।
-এই বউ কি এত ভাবো হুম? খাবার শেষ হয়ে গেছে অথচ তুমি এখনো হা করছো। আবার কি খাবার আনবো খুদা কি খুব বেশি লাগছে আজ আমার বউ পাখিটার।
-রোহানের কথায় হুস ফিরলো আমার। না না আমার পেট ভরে গেছে আর খাবনা।
-আচ্ছা বউ তাহলে তুমি বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসি কেমন?
-হঠাৎ খেয়াল হল রোহান আমায় বউ বলল। অনেক দিন পর বউ শুনলাম ওর মুখে। হালকা হেসে বললাম যাও ফ্রেশ হয়ে নাও অফিসে যাবেতো আবার।
-হুম বউ যাব বলে ওর কপালে একটা চুমু দিয়ে প্লেট গুলো সরিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে চলে গেলাম।
-ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রুহি উঠে গেছে। আরে মামনি তুমি উঠে গেছ।
-হ্যাঁ বাবাই আমি স্কুলে যাবতো।
-না মামনি আজ তোমার স্কুল আর আমার অফিস ছুটি আজ শুধু আমরা মজা করবো।
-ইয়ে সত্যি বাবাই রুহি আনন্দে রোহানের গলা জড়িয়ে ধরলো।
-বাবা মেয়ের কাজ দেখে চোখে পানি এসে গেল আমার।তারপর বললাম স্কুল যাবেনা মানে রোহান তুমি যেন একদম আদর দিয়ে বাদর বানাবে না ওকে।
-আমার মেয়ে তো প্রিন্সেস বাদর কেন হবে। আচ্ছা মামনি তুমি বসো তোমার আম্মুকে আমি মেডিসিন দিয়ে আসি।
-আচ্ছা বাবাই।
-মেডিসিন গুলো অনন্যাকে খাইয়ে রুহিকে ও ফ্রেশ করে খাইয়ে দিলাম।তারপর বসে পড়লাম তিনজন আড্ডা দিতে।
-রোহানের কথা শুনে রুহি হেসে গড়িয়ে পড়ছে আর আমি বাবা মেয়ের কাজ দেখে হাসছি। চোখে আজ আনন্দের অস্রু আমার।অনেক বছর পর আমার বুকের খা খা টা কমলো আজ। এটাই তো চেয়েছিলাম আমি।আজ যেন আমার সব চাওয়া পূরন হওয়ার দিন মনে মনে কথা গুলো ভাবলো অনন্যা।
.
.
.
.
.
Continue….