হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৮
#আরিশা অনু
–আরে আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলনা শয়তান ব্যাটা একটা রোহান কে বকা দিতে দিতে আলমারির দিকে এগিয়ে গেল অনন্যা….
–অনেক গুলো বছর পর আবার এই আলমারিটা স্পর্শ করছে অনন্যা।একটা সময় রোহান আর ওর ড্রেস গুলো পাশাপাশি খুব যত্ন করে গুছিয়ে রাখতো অনন্যা আর এখন অনুমতি নিয়ে আলমারি খুলতে হচ্ছে ভাবতেই চোখ বেয়ে দুফোটা জল গড়িয়ে পড়লো অনন্যার। আলমারি খোলার পর অপজিটে রোহানের ড্রেসগুলো দেখে কান্নার জোর আরো বেড়ে গেল আমার।গুছিয়ে রাখা কাপড় গুলোর উপর থেকে একটা টি শার্ট উঠিয়ে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বেডের উপর বসে পড়লাম।সেই চেনা গন্ধে ভরে আছে টি-শার্ট টা। পুরো রুম জুড়ে কতনা স্মৃতি জড়িয়ে আছে সব যেন চোখের সামনে ভাসছে আমার।
— এইতো সেদিনের ঘটনা বারান্দায় দাড়িয়ে রোহান আর আমি এক মগ কফি শেয়ার করে খেতাম।কি এক বাহানা ছিল ওর কফির মগে প্রথম চুমুক আমায় দিতে হবে তারপর আমি ঠিক যেখানে ঠোঁট ছুয়েছি সেখানে ঠোঁট রেখে পাগোলটা কফি খেত ওর ভাষায় এতে নাকি ভালোবাসা দ্বিগুন হয়। পাগলটা পারেও এক এক সময় এক এক টা পাগলামি করতে।অতিতের কথাগুলো ভাবতে ভাবতে কান্না চোখে হেসে ফেললো অনন্যা। তারপর হঠাৎ রান্নার কথা মাথায় আসতে তাড়াহুড়া করে বেড ছেড়ে উঠে পড়লো ও….
–কাজ করতে করতে হঠাৎ ল্যাপটপের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম অনন্যা আমার একটা টি-শার্ট বুকে চেপে ধরে কাঁদছে।খুব খারাপ লাগছে ওকে এভাবে দেখে।কেনো অনন্যা কেনো এমন প্রতারনা করলে আমার সাথে তুমি? কোন সুখ টার অভাব আমি রেখেছিলাম তোমার যার জন্য আমায় এভাবে ঠকালে।জানি কোনো উওর তোমার কাছে নেই ক্ষনিকের মোহে পড়ে তুমি আজ সব হারিয়েছো অনন্যা।তোমার পাপের শাস্তি তুমি হাড়ে হাড়ে দেখতে পাবে এবার।প্রতিটা দিন আমি যে ভাবে জ্বলেছি দিনের পর দিন কষ্ট পেয়েছি তোমাকে তার দ্বিগুণ কষ্ট যদি আমি ফেরত না দিয়েছি তো আমার নাম ও রোহান খান না।তারপর সব ভাবনা বাদ দিয়ে আবার কাজে মন দিল রোহান……,,
–এতক্ষণ অতিতের ভাবনায় ডুবে ছিলাম মনেই ছিলনা যে সময় পেরিয়ে যাচ্ছে হঠাৎ খেয়াল হতেই বেড ছেড়ে উঠে আলমারির দিকে এগোলাম।টি-শার্ট টাই আলতো করে ঠোঁট ছুইয়ে ভাজ করে আবার আগের জায়গায় রেখে দিলাম।আলমারির ডান সাইডে তাকাতেই কনফিউজড হয়ে গেলাম কারন এখানে দুইটা ড্রেস রাখা আছে। সবুজ আর সাদার কম্বিনেশনে একটা সেলোয়ার আর কমলা কালারের একটা শাড়ি বুঝতে পারছিনা কোনটা পরবো…..
–ভালো করে খেয়াল করে দেখলাম ড্রেসগুলোর উপর একটা কাগজ পড়ে আছে কৌতুহল নিয়ে কাগজটা হাতে নিলাম।কাগজের ভাজটা খুলে দেখি তাতে লেখা আছে…..
…………শাওয়ার নিয়ে সেলোয়ার টা পরবা তাহলে রান্নার সময় কমফোর্টেবল হবে।আর হ্যাঁ রান্না শেষে ফ্রেশ হয়ে অবশ্যই শাড়িটা পরবা…..
(রোহান)
–রোহানের পাগলামি দেখে হেসে ফেললাম পাগল টা এখনও কত কেয়ার করে আমার।তারপর ভাবনা চিন্তা বাদ দিয়ে সেলোয়ার টা নিয়ে এগোলাম শাওয়ার নিতে……
–শাওয়ার শেষে মাথা মুছতে মুছতে এসে ড্রেসিংটেবিল এর সামনে দাড়ালাম।শাওয়ার নিয়ে অনেকটা হালকা মনে হচ্ছে এখন।হঠাৎ মিরোরের দিকে চোখ যেতেই দেখলাম একটা হলুদ কালারের কাগজ আটকানো মিরোরের সাথে।তাতে কিছু লেখা।খেয়াল করে দেখলাম কাগজ টাই লেখা আছে…..
……..চুলদিয়ে যে টপটপিয়ে পানি পড়ছে সেদিকে খেয়াল আছে আপনার ম্যাম।এখনও সেই পাগলিটাই রয়ে গেছ। ভালোকরে চুলটা মুছে ফেলো নয়তো ঠান্ডা লেগে যাবে কিন্তু……
(রোহান)
–চিঠিটা পড়ে চুলের দিকে তাকিয়ে দেখি সত্যি চুল দিয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে বাট ও এটা আগে থেকে জানলো কি করে?পাগলটার পাগলামি গুলো দেখে খুশিতে কেঁদে ফেললাম।এখনো সেই আগের মত পাগল টাই রয়ে গেছে।তারপর মাথাটা ভালোকরে মুছে ভেজা শাড়িটা বারান্দায় মেলে দিয়ে এগোলাম কিচেনের দিকে।
–কিচেনে এসে ফ্রিজ খুলে মাথা আমার পুরো হ্যাং হয়ে গেল।সবজি,মাছ,মাংশ আরো কত কি এই সব এখন আমায় রান্না করতে হবে নাকি। ও আল্লাহ এমনিতেই আমার মাজা ব্যাথা করছে তারপর আবার এইসব একলা হাতে কাটাকাটি রান্না করতে করতে আমি নির্ঘাত মারা পড়বো আজ।একা একা বক বক করছিলাম আর সবজি গুলো নিয়ে টেবিলের উপর রাখছিলাম হঠাৎ সামনে দেয়ালের দিকে চোখ যেতেই দেখি লম্বা একটা কাগজ লটকানো ওয়ালের সাথে। কাগজটাই লেখা আছে…..
…………অনুসোনা আজ রান্না করবা বিরিয়ানি,রোস্ট, চিলি চিকেন,চিংড়ি মাছের মালাইকারি,কাতলা মাছের কালিয়া,সরষে ইলিশ,ছোট চিংড়ি দিয়ে শাক ভাজি আর সালাদ ব্যাস এগুলো।আর হ্যাঁ অবশ্যই সাবধানে রান্না করবা কিন্তু পাখি………..
(রোহান)
–এত্তবড় লিস্ট দেখেতো আমার মাথায় ঠাডা পড়ল।ওরে জালিমের ঘরের জালিম এই ছিল তোর পেটে পেটে এতক্ষণ আলগা পিরিত দেখালি এই লিস্ট ধরাই দিবি বলে।আর কিছু বাকি ছিল কি তোর লিস্টের। মনডা চাইছে আজ সত্যি তোর খাবারে বিষ মিশিয়ে দিতে একা একা রোহান কে বকে যাচ্ছে অনন্যা আর কাজ করছে…….
–ওদিকে রোহান অনন্যার কথাশুনে হেসে গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। অনুসোনা সবে তো শুরু আগে আগে দেখো কিয়া হোতাহে বলে রোহান আবার হাসতে লাগলো…..
.
.
.
.
.
—রান্না শেষ করতে করতে মাগরিবের আজান পার হয়ে গেছে।আমার এখন নাকের জল চোখের জল এক হওয়ার অবস্থা। কত দ্রুত যে সব কাজ করেছি তা শুধু একমাএ আমি জানি…..
–ওরা যে কোনো মুহুর্তে এসে যেতে পারে। মাঝে রোহান কয়েকবার ফোন করে জিজ্ঞেস ও করেছে রান্না শেষ হইছে কিনা।খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে রেখে ফ্রেশ হতে যাব তখনি কলিংবেল বেজে উঠল। ফ্রেশ হওয়া আর হলনা ওরা বোদহয় এসে গেছে তাই মাজায় পেঁচিয়ে রাখা ওড়নাটা খুলে ঠিক করতে করতে এগোলাম দরজার দিকে…..
.
.
.
.
.
Continue….
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)