হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি পাঠ-১৪
#আরিশা অনু
–রুম থেকে বেরিয়ে অনন্যা কে সারা বাড়ি খুজলাম বাট কোথাও পেলাম না।হঠাৎ খেয়াল হলো ওতো আগে একটু রেগে গেলেই ছাদে চলে যেত আজও গেল না তো নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো রোহান। তারপর সব চিন্তা বাদ দিয়ে আগালাম ছাদের দিকে……!!
–একটু পর ছাদে যেয়ে দেখি অনন্যা ফ্লোরে বসে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে কাঁদছে বুকের ভেতরটা জ্বলে উঠলো আমার। আস্তে আস্তে ওর দিকে এগিয়ে যেয়ে ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসলাম।তারপর দুহাত দিয়ে ওর মুখটা উপরে তুললাম। ওর মুখটা দেখে বুকের ভেতরটা ছ্যাৎ করে উঠল। কাঁদতে কাঁদতে পুরো চোখমুখ লাল করে ফেলেছে মেয়েটা…..!!!
–মুখ তুলে আমার দিকে অসহায় চোখে তাকিয়ে আছে খুব খারাপ লাগছে ওকে এভাবে দেখে। তারপর ও উঠে দাঁড়িয়ে কিছু না বলে চলে গেলো আর আমি চুপচাপ আগের মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। সব ভাবনা বাদ দিয়ে আগালাম নিচের দিকে……,,,
–ছাদে বসে কাঁদছিলাম কখন যে রোহান এসেছে খেয়াল ই করিনি আমি।একটু পর ও যখন আমার মুখটা ওর দুহাত দিয়ে উপরে তুললো তখন দেখলাম আমি।ও কিছু বলার আগেই নিজেকে সামলে নিয়ে ছাদ থেকে চলে আসলাম। নতুন করে আর কিছু শোনার ইচ্ছা নাই আমার। নীচে এসে সোজা কিচেনে ঢুকলাম। দুপুরে যেহেতু রোহান খেতে আসবে তাই এখন থেকে সব রেডি করে রাখা ভালো তাহলে রান্না করার সময় কোনো কিছু খুঁজতে হবেনা আর…..,,,
–সবকিছু ঠিকঠাক করছিলাম তখন একটা মেয়ে ডাকতে আসলো। এতোক্ষন মেয়েটাকে আমি দেখিনি এই মাত্র দেখলাম…..!!!
–নতুন আফা আপনারে রোহান স্যার ডাকতাছে জলদি আহেন,,,,,
–ঠিক আছে তুমি যাও আমি আসছি বললো অনন্যা….,,,
–আচ্ছা আফা তারপর মেয়েটা চলে গেল…..!!!
–ইচ্ছা না থাকার সত্ত্বেও আগালাম ড্রয়িং রুমের দিকে। এসে দেখি রোহান সোফায় বসে ল্যাপটপে কি যেন করছে। কি বলবো বুঝতে পারছিনা তারপরও বললাম স্যার কিছু বলবেন….???
–হ্যাঁ বলবো বলে মাথাটা তুলে অনন্যার দিকে তাকালাম। তারপর বললাম বসো। অনন্যা কিছু না বলে চুপচাপ আমার পাশে বসে পড়লো…!!!
–শোনো আজ বিরিয়ানি রান্না করবা সাথে গরুর মাংসের ঝাল, চিকেন ফ্রাই করবা আর সালাদ করবা। উফ্ কতদিন যে তোমার হাতে এগুলো খাইনা বলে থামলো রোহান। হঠাৎ ওর হুস ফিরলো অনন্যার দিকে তাকিয়ে মনে মনে নিজের পাগলামির কথা ভেবে হেসে উঠল রোহান। তারপর অনন্যার সাথে কথা বলা শেষ করে অফিসের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো রোহান….,,,
–এখনো সেই আগের মত পাগলামিটা আছে, হালকা হেসে কথাটা বলে উঠলো অনন্যা তারপর রান্নার সবকিছু তৈরি করতে এগলো কিচেনের দিকে…..!!!
–আবার পিরিত জমে উঠেছে দেখছি নতুন করে বাট স্যরি রোহান বেবি অনন্যার হাতের খাবার যে তোমার খাওয়া হবেনা আজ। অনন্যা আজ যা রান্না করবে তা খাওয়ার পর তুমি সাত জন্ম পর্যন্ত মনে রাখবা আর সেই ব্যবস্থা আমি নিজে করবো বলে শয়তানি হাসি দিল তৃধা। এতোক্ষণ রোহান আর অনন্যার কথাগুলো আড়াল থেকে শুনছিল তৃধা তারপর হাসতে হাসতে উপরে চলে গেল ও…!
.
.
.
.
–অফিসে এসে কোনো কাজে মন বসছে না রোহানের। আর তাই ল্যাপটপ অন করে দেখতে লাগলো অনন্যা কি করছে। অনন্যা যাতে কোনো ছেলের সাথে কথা না বলতে পারে সে জন্যই রোহান বাসায় কাজ দিয়েছে অনন্যা কে….
–এতোক্ষণ ধরে উপরের কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হঠাৎ খেয়াল করলাম অনন্যা আজ কলাপাতা কালারের শাড়ি পরেছে সাথে হালকা সাজ বেশ মানিয়েছে ওকে এই সাজে। ইশ্ বাসায় থাকতে এটা খেয়াল যে কেন করলাম না তাহলে সামনে থেকে দুচোখ ভরে দেখতে পেতাম তখন। অবশ্য তখন কান্নাকাটি করে চোখ মুখের যে হাল করেছিল মেয়েটা তাতে ওর মুখের দিকে বেশিক্ষণ তাকানোর মত ক্ষমতা ছিলনা আমার……,,,
–আজ আবার কোমরে শাড়ি গুজে রান্নায় লেগে পড়েছে পাগলিটা পাক্কা গিন্নি গিন্নি লাগছে ওকে এখন। উফ্ কখন যে লাঞ্চ টাইম হবে আর বাসায় যেয়ে অনন্যার হাতের রান্না খাবো।কতদিন পর ওর হাতের বিরিয়ানি,গরুর মাংস, চিকেন ফ্রাই খাব ভাবতেই জ্বিভে জল চলে আসছে আমার। এতোক্ষণ রোহান অফিসে বসে বসে এগুলো ভাবছিল তারপর ভাবনা বাদ দিয়ে আবার কাজে মন বসালো…..,,,
–উফ্ আর কিছুক্ষন পর রোহান বাসায় আসবে অথচ আমার রান্না এখনো বাকি সেই সকালে এসে কিচেনে ঢুকেছি কিন্তু এখনো রান্নাটা শেষ করতে পারলাম না। আর দশ মিনিটের মধ্যে সব কমপ্লিট হয়ে যাবে তারপর সব খাবার টেবিলে গুছিয়ে রেখে আমি ফ্রেশ হতে যাব। অনেকক্ষণ ধরে কিচেনে থাকায় ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছি অসস্তি লাগছে এখন…..।
–কিছুক্ষন পর রান্না শেষ করে সবকিছু টেবিলে গুছিয়ে রেখে আমি ফ্রেশ হতে চলে গেলাম আর রুমকি কে বলে গেলাম কিচেনের বাকি কাজগুলো সেরে ফেলতে। ওহ্ রুমকি হচ্ছে সেই মেয়েটা যে আমায় সকালে ডাকতে এসছিল। ইতিমধ্যে রুমকির সাথে বেশ ভাব জমে গেছে আমার। মেয়েটা বেশ চটপটে স্বভাবের খুব সহজে যে কোনো মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা আছে মেয়েটার মাঝে।সকাল থেকে আমার সাথে আছে কখন কোনটা লাগবে মুখফুটে বলার আগেই এগিয়ে দিয়েছে মেয়েটা।খুব ভালো মেয়েটা….,,,
–ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি রোহান চলে এসেছে তাই ওকে ফ্রেশ হতে বলে আমি টেবিলে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কিনা তাই চেক করতে আসলাম….!!!
–একটু পর রোহান ফ্রেশ হয়ে খেতে চলে আসলো। আমিও হাসিমুখে খাবারগুলো ওর প্লেটে বেড়ে দিলাম। খাবার মুখে নিয়ে ও এমন ভাবে তাকালো আমার দিকে যে আমার আত্মা কেঁপে উঠলো ভয়ে…..!!!
.
.
.
.
.
Continue
(ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)