গল্প : হবু বউ পাঠ: ০৯

0
3131

গল্প : হবু বউ পাঠ: ০৯

লেখক: অর্দ্র ( MR…..Mehedi Rubi)
নতুন বউয়ের ঘোমটা তুলে আমি বউয়ের দিকে তাকাতেই অবাক যেন আমি আমার চোখ দুটোকে বিশ্বাস করতে পারছিনা ।
আমার প্রচন্ড রকম রাগ হচ্ছে এখন নিজের বাবা মায়ের প্রতি ।
আমি যেন বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি ।কিছুই বলতে পারছি না ।একটা পাথরের মতো বসে আছি । ক্রমশ আমার রাগ বাড়ছে আর আস্তে আস্তে আমার চোখ দুটোর রং কালো থেকে লাল হচ্ছে।
আর আপনারা ভাবছেন আমি এইরকম রাগ হচ্ছি কেন ,,,,,,,
আসলে নতুন বউটা আর কেউ নয় সেই মেয়েটা । আপনারা বলছেন তাহলে তো ভালোই হলো আসলে বিষয় সেটা না বিষয়টা হচ্ছে আমার সাথে এতো নাটক কেন ।
আমার এখন মনে হচ্ছে আমার আপন কেউ নেই কারন আমার বাবা, মা ,বোন , দুলাভাই সবাই জানত যে ঐ মেয়েটাই আমার হবু বউ ছিল ।
আমার এই রকম ভাবে তাকিয়ে থাকা এবং রাগ হওয়া দেখে রুবি বলে উঠলো কী হলো আপনার কথা বলছেন না কেন আর আপনার চোখ গুলো এমন লাল হয়ে যাচ্ছে কেন ।
আমার মাথায় যেন কিছুই ঢুকছে না মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হয়ে যাচ্ছে । আর আমার মাথায় শুধু একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে সবাই মিলে আমার সাথে এমন করলো কেন ।
আমার কোনো রেসপন্স না পেয়ে রুবি আবারো বলল ,,,,
আমি বুঝতে পারছি ,, আপনার মনে হয় শরীর খারাপ লাগছে আপনি শুয়ে পড়ুন । আমি আপনার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি ।
রুবি এই কথা বলে আমার মাথায় হাত দিতে যাবে ঠিক সেই সময় আমি ওর হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দিয়ে বললাম ,,,
কোনো দরকার নেই তোর এই আদিখ্যেতা করার । (আমি)
রুবি মাথা নিচু করে নিল । হয়তবা কান্না শুরু করেছে।
আমার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই,, আমি আজকে এর একটা হ ‍ ্যাস্তনেস্ত করেই ছাড়বো।
আমি বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালাম দরজার দিকে পা বাড়াবো ঠিক সেইসময় সে আমার হাত চেপে ধরলো । আমার হাত ধরায় আমার হাতের ওপর পানির মতো কিছু একটা পড়ল অনুভব করলাম ।
আমি হাতটা ছাড়িয়ে নিতে চাইলেই পারছি না কারন নিজের বিবেক চাচ্ছেনা ।
অবন্তী আমাকে বলছে দেখেন অন্তত আজকের দিনটায় সিনকৃয়েট করবেন না । বাড়িতে অনেক লোকজন । আব্বু অপমানিত বোধ করবেন । ( রুবি )
ওর কথায় যুক্তি আছে দেখে আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
তবে আপনি খবরদার আমার কাছে আসার চেষ্টা ও করবেন না । ( রাগ করে বললাম কথাটা )
ঠিক আছে । ( রুবি )
তারপর আমি বললাম আপনি ঘুমান । আর একটা কথা সবাই যেন বুঝতে পারে যে আমরা দুজনেই অনেক খুশি । (আমি)
হুম ঠিক আছে। কিন্তু আপনি ঘুমাবেন না । ( রুবি)
এই মেয়ে এই বেশি কথা বলতে না করছি না । আর একটা কথা বললে খবর আছে । (আমি)
রুবি আর কিছু না বলে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ল । আমি সোফায় গিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু একটুও ঘুম আসছিল না । কেন জানি শুধু একটা কথাই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে যে আমি কী দোষ করেছিলাম যে আমাকে এমন শাস্তি দিয়েছে ।
আপনারা কী বলেন এইটা কি শাস্তি না । আমার সাথে সবাই অভিনয় করেছে ।
রাতে আর ঘুম হলো না সকালে ফ্রেশ হয়ে বাইরে বের হতেই দেখি দুলাভাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে ,,,
ভাইয়ের হাঁসি দেখে বুঝতে পারলাম যে এখন আমাকে নিয়ে কিছুক্ষণ উপহাস করা হবে ‌।
তাই আর কিছু না ভেবে বাইরে চলে আসলাম ।
হায় রে কপাল বাহিরে এসেও শান্তি নেই । সবাই দেখি একই কথা জিগায় কি রে রাতে ঘুম কেমন হলো ।
আমি সবাইকেই বলছি ভালো ভালো কিন্তু কেউ মানতেই চাচ্ছেনা । কারন সারারাত জেগে থাকার কারণে চোখ দুটো লাল হয়ে আছে ।
তাই আমি আর বাইরে না থেকে ভেতরে আসলাম । ভেতরে আসতেই আম্মুর ডাক শুনলাম ।
আম্মুর ডাকে সাড়া দিয়ে আম্মুর কাছে গেলাম সেখানে দেখি আব্বু ও আছে ।
আমি যেতেই আব্বু বললেন বিকেলে তোমার শ্বশুর বাড়িতে যেতে হবে তোমাদের ঐখান থেকে লোকজন আসবে ।
আমি কিছু না বলে ঐখানে থেকে চলে আসলাম । আমার কেমন জানি কিছুই ভালো লাগছে না । আমার রুমের দিকেও যেতে পারছি না যে গিয়ে একটু ঘুমাবো প্রচন্ড ঘুম , রাগ মিলিয়ে একদম বিরক্তিকর ব্যাপার মনে হচ্ছে আমার । যাইহোক আমি আর বাসায় না থেকে চলে আসলাম বাইরে । গাড়ি টা নিয়ে বাসায় থেকে অনেকটা দুরে। আবার এখানে এসেও ভালো লাগছে না । আমি আসলে বুঝতে পারছি না যে আমার সাথে এমন কেন হচ্ছে । কোথাও গিয়েও একটু ও শান্তি লাগছে না ।
যাইহোক আমি গাড়িটা একটা লেকের পাড়ে দাড় করিয়ে গাড়ি থেকে নেমে বসে আছি । কেমন জানি ভালো লাগে আমার এমন জায়গায় বসে থাকতে । বসে থাকতে থাকতে কখন যে দুপুর হয়ে গেছে সেদিকে আমার খেয়ালই নেই ।
সকাল থেকে এখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি তারপরও একটু ও খিদের জ্বালা বুঝতে পারছি না ।
যাইহোক ফোনটা ও পকেট থেকে বের করে আরো বড় ধরনের শকড খেলাম
। কারন সকাল ১০ টার পর থেকে এখন পর্যন্ত ১০০ টার ও বেশি কল আর ৫০ টার বেশি মেসেজ । আমি আর কিছু না ভেবে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। অতঃপর বাসায় এসে যা দেখলাম তা আমার ধারনার বাইরে ।
এসে দেখি আব্বু বসে আছে আর সবাই রুবি কে থামানোর চেষ্টা করছে আসলে রুবি প্রচন্ড রকম কান্না করছে আর হ ‍্যা এখনো আমার শ্বশুর বাড়ি থেকে কেউ আসেনি।
আমাকে দেখে বাবা বসা থেকে উঠে এসে সরাসরি এক চড় বসিয়ে দিলেন । আমি কোনোভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না । আরেক টা বিষয় দেখে অবাক হলাম যে আমাকে চড় মারা দেখে রুবির কান্না আরো বেড়ে গেল।
আব্বু শুধু বলল তোর সাহস হয় কীভাবে ,,,, এটুকু বলতেই ভাইয়া এসে আব্বু কে থামিয়ে দিয়ে বলল,,,,
আব্বু তুমি বস আমি বলছি ( ভাই)
তারপর ভাইয়া আমাকে টানতে টানতে আমার রুমে নিয়ে আসলো ,,,,
কী তোর কী কোনো বুদ্ধি নাই না সব হারায় ফেলেছো ।( ভাই)
কেন কী হয়েছে ভাইয়া । আমি আবার কী করলাম। (আমি)
তুমি কোথায় গিয়েছিলে । তোমার ওয়াইফ এখন পর্যন্ত কিছুই খায়নি । আর তোমাকে কত বার ফোন করেছে দেখ তো । মেয়েটা সেই সকাল থেকে কান্না করেই যাচ্ছে ।( ভাই)
ও আচ্ছা । শ্বশুর বাড়ির লোকজন কখন আসবে ।(আমি)
এইতো কিছুক্ষণ এর মধ্যে চলে আসবে। আর শোন তোমার ঠোঁটের কোণে কেটে গেছে ঐখানে পরিষ্কার করে নাও ।( ভাই )
তারপর ভাইয়া চলে গেল । আর আমি বাথরুমে গিয়ে একদম গোসল সেরে বের হলাম । এই বাবা এইটা কী রুবি এখনো রুমে আসেনি । আমি দরজার সামনে গিয়ে দেখি এখন ও নিচে বসে কাঁদছে আর ভাবি আম্মু কিছুতেই ওর কান্না থামাতে পারছেনা ।
এই অব্যাহত যদি ওদের বাড়ির লোকজন দেখে তাহলে কী ভাববে আপনারাই বলেন।
আমি ওপর থেকেই ডাক দিলাম ,,,,
ভাবি ও কে উপরে নিয়ে আস তো । (আমি)
ও মা একি ঐ মেয়েকে কোনোভাবেই উপরে আনা যাচ্ছে না । ও আসতেই চাইছে না । আমি এটা দেখে একটা প্রস্তুতি নিলাম আমি রুমে গিয়ে একটা টিশার্ট পরে সরাসরি নিচে এসে ওর সামনে দাঁড়ালাম ‌ । কিন্তু মেয়েটা এখনো কেঁদেই চলেছে ।
আমি ভাবি কে বললাম উপরে যেন খাবার টা দিয়ে দেয় আর ইশারায় বললাম আম্মু কে এখান থেকে নিয়ে যেতে । আসলে তখন সেখানে শুধু ভাবি আর আম্মুই ছিল ।
তারপর ভাবি আম্মু কে নিয়ে চলে গেল আর আমি হাঁ হাঁ কী ভাবছেন ,,,,
আমি রুবি কে একদম কোলে তুলে নিয়ে উপরে চলে আসলাম । কোলে তুলে নিতেই ও পুরোপুরি অবাক হয়ে গেছে আর কান্নাও থেমে গেছে । রুমে ও কে নিয়ে আসতে আসতে ভাবলাম রুবি কে একটু হাসাতে হবে না হলে পরে সমস ‍্যা হতে পারে । কারন কোনো মানুষ অনেক কান্নাকাটি করতে করতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে। এখন ভয় একটাই । যাইহোক রুমে নিয়ে এসে নীলা কে নামাতেই খেয়াল করলাম ও খুবই লজ্জা পেয়েছে । আর নামিয়েই বললাম বাবারে এতো ভারি । ও দেখি আমার দিকে তাকিয়ে আছে মনে হয় কিছু বলবে ,,,,,
আপনি খুবই খারাপ মানুষ । বুঝলেন। (রুবি)
আমি: হুম তারপর ।
তারপর আর কিছুই না,,,, বলে ও উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসছে ওর চোখের চাহনি গুলো অন ‍্য রকম দেখাচ্ছে । ও আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে আর আমি কিছু বুঝতে পারছি না কী করবো । ও করো এগিয়ে আসছে এবার আমি পিচাচ্ছি ও এগিয়ে আসছে আর আমি পিছিয়ে যাচ্ছি । একসময় আমি দেওয়ালের সাথে ঠেকে গেলাম কিন্তু ও থামছেই না এগিয়েই আসছে আস্তে আস্তে ও একদম আমার কাছে চলে এসেছে আমি ওর নিঃশ্বাস এর শব্দ ও শুনতে পাচ্ছি । আস্তে আস্তে ও ওর মুখটা আমার দিকে এগিয়ে নিয়ে আসছে । একদম কাছাকাছি চলে এসেছে আমার কেমন জানি লাগছে ,,,, কিন্তু রুবি তো থামছেই না ।
এমন সময়,, ঠক ,ঠক ঠক,,,,,

চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে