গল্প : হবু বউ পাঠ : ০৮
লেখক : অর্দ্র(MR)
আমি রুমে আসতেই আমার ফোন টা বেজে উঠলো। অপরিচিত নাম্বার দেখেও সাত পাঁচ না ভেবে রিসিভ করলাম । কিন্তু মেজাজটা খারাপ থাকায় একটু কটমট করেই বললাম হেলো ।
কিন্তু একি ঐপার থেকে শুধু হাসির আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ।
আমার বিরক্তি আরো বেড়ে যাচ্ছে । মেজাজটা আরো বেশি খারাপ হচ্ছে । আপনারাই বলেন, কার মেজাজ খারাপ হবে না এইরকম অবস্থায় । একে আব্বু কে ঐ বজ্জাত মেয়েটা মিথ্যা কী সব বানাই বলছে আর এখন আবার ফোনে এইরকম বিরক্তি আর ভালো লাগছে না ।
আমি আবার ও বললাম হেলো কিন্তু একই কাহিনী এবারো শুধুই হাসির শব্দ ।
আমি এইবার আর চুপ থাকতে পারলাম না ,,,,
ঐ বজ্জাত মেয়ে তুই কী পাইছিস রে । যেদিন থেকে আমার পেছনে রাগা শুরু করছস সেদিন থেকেই প্রায় সময় আমার জন্য একটা না একটা বাঁশ তৈরি হয়েই থাকে । আমি কী দোষ করেছি । দয়াকরে এইবার আমারে একটু রেহাই দে বোন ।( এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো শেষ করেছি আমি )
এইবার উত্তর পেলাম ,,,
এই তো জ্বালানো মাত্র শুরু । এখনও তো সারাজীবন পরেই আছে । এখনি এই অবস্থা । আর হ ্যা আমি আপনার বোন না । ( মেয়ে )
আপনি আমার যাই হোন না কেন আগে বলেন আমার আব্বুর কাছে কী বলেছেন । (আমি)
কই নাতো আমি তো কিছুই বলিনি । (মেয়ে )
দেখেন মেজাজটা এখন খুবই খারাপ আছে প্লিজ আর এখন এমন কিছু করতে বাধ্য করবেন না যে পরে আপনাকে এর জের টানতে হয়। (আমি)
ঐ আমাকে ভয় দেখান হ ্যা । আমি আর আপনাকে ভয় পাই না ।এখন আমি বুঝে গেছি আপনাকে কীভাবে শাস্তি পাওয়াতে হয়। ( মেয়ে)
একটু শান্ত হয়ে বললাম । দেখেন আপনি দয়াকরে বলুন আমি আপনার কী ক্ষতি করেছি , যার জন্য আমাকে এর মাশুল দিতে হচ্ছে । (আমি)
কই তখন মনে ছিল না যে আমি একটা মেয়েকে থাপ্পড় দিতে চাচ্ছি কোন সাহসে।
( মেয়ে)
ওওওওওও তাহলে এই কারণে আমার নামে বিচার এসেছে । আর আমি যে আপনাকে ওদের হাত থেকে বাচালাম এটার কী ।(আমি)
তো কী হয়েছে । বাঁচিয়েছেন ভালো কথা আমাকে তো রাগ না দেখালেও পারতেন । ( মেয়ে )
না তখন আমার উচিত ছিল সিনেমার নায়কদের মতো আপনাকেও কোলে তুলে নিয়ে আমার গাড়িতে বসানো । তাই না বজ্জাত মেয়ে। (আমি)
এটুকু না হলে করতেন । কী হতো একটু কোলে তুলে নিলে। ( মেয়ে)
সরি মাফ করবেন । আমি যেন আপনাকে আর আমার চোখের সামনে না দেখি ।
বলেই ফোনটা কেটে দিলাম । আসলে মেয়েটার কথা শুনে আমার রাগ আরো বেশি হচ্ছিল । আর ভালো লাগছিল না তাই লাইনটা কেটে দিলাম।
যাইহোক তারপর থেকে আর কোনো সমস্যা করেনি মেয়েটা । এভাবেই চলতে চলতে বিয়ের দিন চলে আসলো । আজকে গায়ে হলুদের দিন সন্ধ্যার পর ভাবি এসে আমাকে ভাবির ফোনটা দিয়ে বলছে নে ধর ওই মেয়েটা কথা বলবে । ( আপু)
না আমি ধরতে পারবো না । ( আমি)
আপনারা ভাবছেন ভাবির কাছে কেন ফোন করেছে আসলে ও আমার কাছে ফোন করেছে কিন্তু আমি রিসিভ করিনি ।
ভাবি : তুই ফোনটা ধরবি না আমি আব্বুকে ডাকবো ।
আসলে আমি আব্বুকে ভয় পাই । আর আমার বাসার সবাই হয়েছে মনে হচ্ছে আমার বিয়ে রুবির সাথে না মেয়েটার সাথেই হচ্ছে।
যাইহোক আমি ফোন টা ধরলাম ,,
আমি কোনো কথা বলছি না দেখে ফোনের ঐপার থেকে আওয়াজ আসলো কেমন আছেন ।
আমি : ভালো তো থাকতে দিলেন না । আবার জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছি ।
মেয়ে : তাই বুঝি । আচ্ছা ঠিক আছে আপনাকে কথা দিলাম আজকের পর থেকে আর আপনাকে জ্বালাতন করবোনা ফোন করে ।
আমি : সত্যি ।
মেয়ে : হুম সত্যি ।
আমি : তবে ভালো থাকবেন । আপনি আপনার রাস্তা দেখেন আর আমারটা দেখি ।
মেয়ে : ওকে ভালো থাকবেন বাই ।
আমি ও কে বাই বলতে যাবো তার আগেই লাইনটা কেটে দিল । বুঝলাম না ।
যাইহোক আজকে আমার বিয়ে । অনেকটা টেনশনে আছি । বুঝেন তো আপনারা নতুন বিয়ে করছি না মানে বিয়ে করছি নতুন তাই আর কি।
সারাটা দিন কেটে গেল বিয়ের সব কাজ শেষ নতুন বউ নিয়ে বাসায় চলে আসলাম।
কিন্তু আমার পোড়া কপাল এখনো বউয়ের মুখখানা দেখি নাই । শুধু শুনলাম যে আমার বউ নাকি সুন্দর ।
আর একটা আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে আমি সেদিন মেয়েটা কে এখানেই নামিয়ে দিয়ে গিয়েছিলাম বাট আজকে তো একবারো দেখলাম না মেয়েটাকে । আজকে অনেক খারাপ লাগছে এইটা ভেবে যে অনেক খারাপ ব ্যাবহার করেছি মেয়েটার সাথে । এরপর ফোন করে সরি বলে দেব ।
বাড়িতে আসার পরে সবাই নতুন বউ নিয়েই ব্যস্ত আমার দিকে কারো কোনো খেয়াল নেই। আসলে নতুন বউ বাড়িতে নিয়ে আসতে আমার যে একটা অবদান আছে সেটা কেউ মনে হয় জানেই না ।
আমার অবস্থা এখন ডাস্টবিনে ফেলে আসা খাবার এর মতো কেউ একবার তাকিয়েও দেখছে না আমার দিকে ।
আমার এই অবস্থা দেখে ভাইয়া আমার কাছে এসে বলছে কী ব ্যাপার ভাই কষ্টে আছত মনে হয় ।
আমি বললাম কী যে বলেন না ভাই কষ্টে থাকবো কেন ।
এর পর আরো কিছু কথা হলো ভাইয়ার এর সাথে । ও আপনারাও শুনবেন ,,, না আমার বলতে লজ্জা লাগছে বুঝেন তো প্রথম বিশ্বযুদ্ধ না মানে নতুন বিয়ে করেছি ।
তাও শুনবেন আচ্ছা শুনেন
ভাইয়ার এর কাছে থেকে কিছু টিপস্ নিলাম আর কী কীভাবে বিড়াল মারতে হয়।আসলে আমি আমার ভাইয়ের সাথে ফ্রি।
এভাবে অনেক টা সময় পার হয়ে গেল । ভাই আমার অবস্থা দেখে উঠে গেল একটু পরে এসে আমাকে বলছে চলো রুমে যাবে তোমার জিনিস একা একা বসে আছে ।
আমি : কী বলেন জিনিস মানে । এখন আবার কিছু জিনিস নিয়ে যেতে হবে ।
ভাই : আমি বলছি তোমার বউ না মানে তোমার ওয়াইফ একা একা রুমে বসে আছে যাও তাড়াতাড়ি ।
আমি : ও আচ্ছা ।যাই তাহলে ,,,,
দু’পা সামনে আগাতেই মনের মধ্যে ধক করে উঠল । আমার ঘরের দরজার সামনে গিয়ে আবার পেছনের দিকে দৌড় ভাইয়ের কাছে গিয়ে থামছি।
ভাই : কী হলো ।
আমি : না কিছু না এমনিতেই ভয় লাগছে ঘরে যেতে তুই একটু আমার সাথে যাবি ।
ভাই : হায় আল্লাহ এই তো শুধু বড়ই হয়েছে । এখন ছোট বাচ্চা ।ঐ তারাতাড়ি যাবি না আমি আব্বুকে ডাকবো ।
আমি : ভাইয়া তুইও ।
ভাই : আআআআব্বুউউউউ
পুরোপুরি চিৎকার না করতেই আমি দৌড় এক দৌড়ে দরজার কাছে ।
তারপর দু তিন বার বুকে ফুঁ দিয়ে রুমে ঢুকবো তখনি কেউ পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে দরজা আটকে দিল ।।
আমার এই রকম অবস্থা দেখে আমার নতুন বউ একটু হেসে ফেললো ।
আমি অসহায় হয়ে শুধু একটু হাসির শব্দ পেলাম। যাইহোক বউ এসে আমার পায়ে সালাম করে আবার গিয়ে বিছানায় বসলো ইয়া বড় একটা ঘোমটা দিয়ে ।
আমি কী করবো বুঝতে পারছি না । আমি এখনো দাঁড়িয়েই আছি ।
আমার এই রকম দাঁড়িয়ে থাকা দেখে বেচারা আমার বউ বলল দাঁড়িয়েই থাকবেন না এদিকে এসে বসবেন।
আমি বউয়ের কথা শুনে একটু স্বস্তি পেলাম । আমিও আর দাঁড়িয়ে না থেকে বউয়ের পাশে গিয়ে বসলাম ।
আমার প্রচন্ড ঘাম হচ্ছে দেখে রুবি আমাকে বলে উঠলো ভয় পাচ্ছেন কেন এতো ।
আমি : না মানে প্রথম বিয়ে করছি তো তাই ।
রুবি : কীইইই আরো বিয়ে করার ইচ্ছা আছে নাকি।
হায়রে কপাল কী বলতে কী বলছি এসব।
আমি : না মানে ভুলে বের হয়েছে কথাটা ।
রুবি : ও আচ্ছা আর যেন ভুল না হয়।( ধমকের সুরে)
এই বার আমার একটু সন্দেহ হলো রুবির কন্ঠ শুনে । আসলে আমার পরিচিত কন্ঠ । মনে হচ্ছে এর আগেও শুনেছি কন্ঠ টা ।
সেদিকে মাথা ঘামিয়ে বললাম ,,,
আমি : আচ্ছা ঠিক আছে।
একটু সময় চুপ থেকে বললাম আমি আপনাকে দেখতে চাচ্ছি । যদি ঘোমটাটা সরাতেন।
রুবি : কেন আপনি সরাতে পারছেন না ।
আমি : ও আমিই সরাবো ।
রুবি : নয়ত কী আপনার ভাই কে ডাকবেন ।
আমি : না না তার দরকার নেই আমিই সরাচ্ছি ।
এটা বলেই আমি ঘোমটা সরিয়ে যেই মাত্র বউয়ের মুখের দিকে তাকিয়েছি তাতেই আমার চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছিনা ,,,,,,,,,,,
চলবে