#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 47
💚🌿..
..
..
..
..
..
তুমুল গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে আইরাত। তার সাথে গান তো আছেই “সাকি সাকি”। গানের সাথে সাথে তাল মিলিয়ে মাথা দুলিয়ে যাচ্ছে সে। তার এমন কান্ড দেখে রাত্রি আর নিপা হাবার মতো করে বসে আছে। রাত্রি একবার আইরাত আবার একবার তার ফোনের দিকে তাকাচ্ছে আর নিপা মুখে একটা পানসে ভাব এনে রেখেছে।
আইরাত;; সামনে বিয়ে আর বউ নাকি এমন মুখের বারো টা বাজিয়ে রয়েছে। বলি যে একটু হাস, হাসলে তো মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না।
নিপা;; আমি তোর কান্ড দেখছি। বিয়ে আমার কিন্তু ধুম ধারাক্কা বাজাচ্ছিস তোরা।
আইরাত;; এইটা হচ্ছে “যার বিয়ে তার খবর নেই পাড়া-পড়শীর ঘুম নেই”।
রাত্রি;; আইরু তোর মতো হলেও তো ভালো হতো।
আইরাত;; মানে বুঝলাম না!
রাত্রি;; মানে আব্রাহাম ভাই তোকে যেভাবে তুলে এনে বিয়ে করেছে ওয়াও কি রোমান্টিক বেপার।
আইরাত;; তখনকার সিচুয়েশন টা আলাদা ছিলো একদম আলাদা। আর সেই সময়ে যদি তুই থাকতি তাহলে হয়তো বেপার টা তোর কাছেও তেমন সুবিধের হতো না।
রাত্রি;; হুমম বুঝলাম, কিন্তু এখন আমরা যাচ্ছি কোথায়?
আইরাত;; আমরা না আমি, তোদের আমি বাইরে সেই কফিশপে নামিয়ে দিবো। সেখানে নিরব ভাইয়া আছে। আর অয়ন এখন অফিস থেকে সেই কফিশপেই যাচ্ছে, এদিকে তোরাও যাচ্ছিস তারপর তোরা সবাই মিলে একসাথে এসে পরিস চৌধুরী ভবনে।
নিপা;; আর তুই?
আইরাত;; আরেহ আমি তো এখন আমার চৌধুরীর কাছে যাবো। সে তার অফিসে যায় নি একটা মিটিং ছিলো তা বাসা থেকেই সামলে নিয়েছে আর বাকি কাজ গুলো অয়ন এবং মেনেজার সামলে নিয়েছে। সো আব্রাহাম বাসাতেই আছে।
রাত্রি;; আহা ভালোবাসার অভাব নেই দেখছি।
আইরাত;; আবার জিগায়!
নিপা;; আচ্ছা হয়েছে আইরু তাহলে এবার তাড়াতাড়ি আমাদের নামিয়ে দে।
আইরাত;; আচ্ছা।
আইরাত আবার গান ছেড়ে দিল। তার বেশ খানিক সময় পর আইরাত নিপা আর রাত্রিকে কফিশপের কাছে নামিয়ে দিল। নামিয়ে দিয়ে চৌধুরী ভবনের দিকে গাড়ি ঘুড়িয়ে চলে গেলো। এক সময় গাড়ি চৌধুরী ভবনের মেইন গেটের কাছে এসে থেমে গেলো। আইরাত তাকিয়ে দেখে যে আজ বাইরে কোন গার্ড নেই। তা দেখে এক শান্তির হাসি হাসে, কেননা আজ অহেতুক কোন শয়তানি কাজ করতে হবে না তাকে। আইরাত গেটের ফাক দিয়েই ভিতরে এক নজর দেখে নিলো। আবার গাড়িতে বসেই ভাবতে লাগলো যে আজ আবির আহমেদ চৌধুরী বাড়িতে আছেন। জানি না আইরাতকে দেখে উনি কি রিয়েকশন দিবেন। তবুও আইরাত এক গভীর শ্বাস ছেড়ে গাড়ির দরজা খুলে বাইরে নেমে পরে। গেটের কাছে দাঁড়াতেই আইরাতকে দেখে বাগানের মালি এক প্রকার দৌড়ে এলো।
রামু;; আরে আইরাত আম্মাজান যে, আপনারে কতটা দিন পরে যে দেখবার পাইলাম।
আইরাত;; জ্বি রামু কাকা। কেমন আছেন আপনি?
রামু;; জ্বি আম্মাজান বহুত ভালাই আছি, তা আপনে কেমন আছেন?
আইরাত;; আলহামদুলিল্লাহ ভালো রামু কাকা।
রামু;; আরে আম্মাজান আপনে বাহিরে খারায় আছেন কেন, ভিতরে আসেন ভিতরে আসেন।
এই কথা বলে রামু তড়িঘড়ি করে করে গেট খুলে দেয়। আইরাত হেসে ভিতরে চলে আসে।
আইরাত;; কাকা,
রামু;; জ্বি আম্মাজাম।
আইরাত;; বাপি বাড়ি আছে?
রামু;; জ্বি আম্মাজান উনি আজকে বাড়িতেই আছেন, কিন্তু উনি ইদানীং কেমন জানি শুকায় গেছেন, মুখে হাসি নাই আগের মতো। বিশেষ কোন কারণ ছাড়া কথাও ঠিকঠাক বলেন না। শুধু আব্রাহাম বাবার কারণে উনি এখন মাঝে মাঝে হাসে। আপনার কথা অনেক বেশি মনে করেন উনি। আসলে নিজের কোন মেয়ে নাই তো তাই আপনারে নিজের মেয়ের থেকেও বেশি ভালোবাসে। এতোদিন তো আপনে ছিলেন না কিন্তু এইযে আপনি আইসা গেছেন না এখন সব কিছু আগের মতো ভালা হইয়া যাইবো।
আইরাত;; হ্যাঁ কাকা সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবার। (হাতের উল্টো পাশ দিয়ে চোখের পানি মুছে)
কাকা তাহলে আমি ভিতরে যাই কেমন!
রামু;; জ্বি আম্মাজান আপনি যান।
এই কথা বলে আইরাত চলে যায়।
।
।
।
বেলা বাজে ১১ টা কিন্তু আব্রাহামের এখনো ঘুম থেকে ওঠার কোন নামই নেই। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছে। আবার সকালে মিটিং ছিলো তা এটেন্ড করার পর হালকা একটু ঘুমিয়েছে। সাদা ধবধবে বিছানাতে অগোছালো ভাবে ঘুমিয়ে আছে আব্রাহাম। কালো পেন্ট পরে আছে, বাট বডিতে কোন কাপড় নেই। চুলগুলোও অগোছালো হয়ে আছে। মুখের মায়ার যেন শেষ নেই। খুব বেশি সুন্দর লাগছে তাকে। তখনই আইরাত আব্রাহামের ঘরে ঢুকে পরে। ঘরে গিয়েই দেখে আব্রাহামের এই অবস্থা। আইরাত মুখে হাত দিয়ে হেসে দেয়। হাতে থাকা কফিটা বেডের পাশের টেবিলে রেখে দেয়। আইরাত বেশ ভালো করেই জানে যে ঘুম থেকে ওঠে আব্রাহাম কড়া কফি খায় তা না হলে নাকি তার সারাদিন কেমন বোরিং লাগে। আইরাত কফিটা রেখে আব্রাহামের পাশে বসে পরে। কিছুটা ঝুকে আব্রাহামের মুখের দিকে তাকায়। মুচকি ভাবে হেসে ওঠে সে। আবার আব্রাহামের মুখের কাছে ঝুকে গালে একহাত ঠেকিয়ে তাকিয়ে থাকে। পুরো বাচ্চা লাগছে আব্রাহামকে। বালিশে বেশি ভর দিয়ে শুয়ে থাকার কারণে দুগালের মাংস চেপে এসেছে। যার ফলে তার ঠোঁট দুটো ছোট হয়ে এসেছে। হালকা গোলাপি ঠোঁটে ভাজের দিকে তাকিয়ে আছে আইরাত। চুল গুলো কেমন এলোমেলো হয়ে আছে। আইরাত তার হাত দিয়ে চুল গুলো তে মিলিয়ে দেয়। তাতে যেন আব্রাহাম আরাম পেলো। সে আরো আয়েশ করে চোখ বন্ধ করে নিলো। এতে আইরাত কপাল কুচকে সোজা হয়ে বসলো। কারণ আইরাত আব্রাহামকে জাগানোর চেষ্টা করছে কিন্তু ইনি কি মাথায় হাতের ছোয়া পেয়ে আরো আরাম করে ঘুমোচ্ছেন।
আইরাত;; কি অদ্ভুত, আমি চাচ্ছি যে ঘুম থেকে ওঠে পরুক কিন্তু না হচ্ছে তার বিপরীতে। দাড়ান ঘুম ছুটাচ্ছি আপনার।
এই বলে আইরাত তার হাত আব্রাহামের কানের কাছে নিয়ে গেলো। হাতে পরনে থাকা চুড়ি গুলো আব্রাহামের কানের কাছে নিয়ে বাজাতে থাকলো। ঝনঝন শব্দ হতে থাকে। এতে আব্রাহাম বেশ বিরক্তিবোধ করলো। সে তার মাথা ওপরপাশে ঘুড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলো। এবার আইরাতের মেজাজ গেলো চটে। রাগ নিয়ে অন্য দিকে তাকাতেই আইরাতের চোখ পড়লো গরম গরম কফির মগের ওপর। আইরাত আবার শয়তানি হাসি হাসে। কফির মগটা আইরাত হাতে নিয়ে ধীরে ধীরে আব্রাহামের বাম হাত টা তুলে ফেললো। তার হাতের এক আঙুল তুলে কফির গরম মগের ভিতরে চেপে ধরে। ২-৩ সেকেন্ড গেতেই আব্রাহাম চিল্লিয়ে ওঠে তার হাত সরিয়ে নেই। আর আইরাত এক ঝটকাতে সেখান থেকে উঠে গিয়ে দূরে সরে দাঁড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে হাসতে থাকে।
আব্রাহাম;; এই মেয়ে তুমি কি পাগিল নাকি?!
আইরাত;; আপনিই না বলতেন যে পাগলের বউ তো পাগলই হতে হবে তাহলে করলাম না হয় একটু পাগলামি। তাতে ক্ষতি কি হুমম
আব্রাহাম;; ওহহ গড আমি এই কার পাল্লায় পরেছি। আর এই তুমি আমার ঘরে কি করছ বের হও এক্ষুনি।
আইরাত;; এহহহহ বের হও এক্ষুনি (বেংগ করে) ভুলে যাবেন না এটা আমারও ঘর। যতটা আপনার ততটাই আমার বুঝলেন।
আব্রাহাম;; তোমার ঘর তাই না, তো আছে কোন প্রমাণ তোমার আছ।
আইরাত;; আমি নিজেই প্রমাণ। আমি আপনার বিয়ে করা বউ আর কি চাই আপনার।
আব্রাহাম;; মুক্তি চাইতে মুক্তি দিয়ে দিয়েছি তোমাকে আর কি চাও আর কামন ইয়ার আমি অন্তত তোমার মতো বেহেনজি কাউকে বিয়ের করে নিজের বউ বানাবো না। (আইনার সামনে দাঁড়িয়ে)
আইরাত;; ওইইইই আপনি কি বললেন আমি, আমি বেহেনজি।
আব্রাহাম;; হুমমম একদম।
আইরাত;; মুখ সামলে কথা বলবেন বলে দিচ্ছি নয়তো….
আব্রাহাম এবার এক নিমিষেই আইরাতের কাছে গিয়ে তাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আইরাতের এতোক্ষণে হুস ফিরলো যে আব্রাহামের গায়ে কোন কাপড় নেই। কালো পেন্টে জিম করা ফর্সা বডি বেশ ভালো মানিয়েছে। এভাবেই আইরাতের কাছে আসাতে আব্রাহামের সামনে থাকা চুলগুলো কপালে ঠেকে যায়। আব্রাহাম অনেক ঝুকে চোখ ছোট ছোট করে আইরাতের দিকে তাকিয়ে আছ। আইরাত যেই দেখলো যে আব্রাহামের গায়ে কোন কাপড় নেই সেই সাথে সাথেই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে।
আব্রাহাম;; তা না হলে কি করবে শুনি?!
আইরাত;;____________
আব্রাহামের এমন নেশা ধরানো কথায় আইরাত কিছুই বলে না শুধু নিচের দিকে চোখে নিয় তাকিয়ে থাকে। লজ্জায় গাঢ় লাল হয়ে গেছে সে। আব্রাহামের এভাবে আইরাতকে ধরায় এবার আইরাতের কাধে থাকা তার ওরনা কাধের বেশ নিচে নেমে পরে। তার কাধখানা উন্মুক্ত হয়ে যায়। আব্রাহানের চোখ পরক্ষণেই সেখানে যায়। বুকের ঠিক ওপরের তিল টায় চোখ আটকে যায় আব্রাহামের। নেশা না করেও আব্রাহামের কেমন নেশা ধরে যায়। আইরাতের দিকে তাকিয়ে দেখে আইরাত চোখ বন্ধ করে নিচু হয়ে আছে। আইরাতের সামনের অবাধ্য ভাবে খুল নিচে পরে যায়। আব্রাহাম আইরাতের কানের কাছ গিয়ে ধীরে ধীরে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; মুখ সামলে কথা না বললে কি করবে বলো।
আইরাত;; ক্কি কিছু কিছু না, আপনি প্লিপ্লিজ আমাকে ছেছেড়ে দা…….
আইরাত আর কিছু বলে ওঠতে পারে না। আব্রাহাম আর তার লোভ সামলাতে না পেরে, আইরাতকে আর কিছু একটা বলার সুযোগ না দিয়েই তার গলাতে মুখ ডুবায়। কোমড় চেপে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে আইরাতকে। আইরাতও তার এক হাত আব্রাহামের কাধের ওপর রাখে। আইরাত এবার কোন বাধা দেয় না। সে আবেশে চোখ বন্ধ করে ফেলে। আব্রাহাম যেন হাজারো বছরের তৃষ্ণা মিটাচ্ছে। নাক মুখ সব ডুবিয়ে দিয়েছে সে আইরাতের ঘাড়ে।
আইরাত চেয়েও আব্রাহামকে নিজের থেকে দূরে সরাতে চাইছে না। থাক না সময় টা এমনই। প্রায় অনেক সময় পর আব্রাহাম আইরাতের কাধ থেকে মুখ সরিয়ে নেই। সামনে তাকিয়ে দেখে যে আইরাত এখনো তার চোখ জোড়া বন্ধ করেই আছে। লজ্জার ফলে আব্রাহামের সাথে ঠিক মতো চোখও মিলাতে পারছে না সে। আব্রাহাম এবার আইরাত কে ছেড়ে দূরে সরে গেলো। আব্রাহাম এবার টেবিলে থাকা কফিটা হাতে নিতে উল্টো দিকে ঘুড়ে আইরাতের উদ্দেশ্যে বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; এবার ছেড়ে দিলাম পরেরবার আর ছাড়ছি না।
আইরাত;; ছেড়ে আর কোথায় দিলেন (ফুসফিস করে)
আব্রাহাম;; কিছু বললে!?
আইরাত;; না না কোথায় কি বললাম, আচ্ছা আপনি তো ঘুম থেকে ওঠে পরেছেন এবার আমি নিচে যাই।
আব্রাহাম;; দাড়াও, আগে বলো তুমি এখানে কি করে এলে।
আইরাত;; বারে আমার বাপির বাড়ি আমি আসবো না এ কেমন কথা।
আব্রাহাম;; বের হও রুম থেকে।
আইরাত;; যাবো না।
আব্রাহাম;; খুব তো তেড়া তুমি।
আইরাত;; (আব্রাহামের কাছে গিয়ে টুক করে তার গালে চুমু দিয়ে) আপনার থেকে বেশি না চৌধুরী।
আব্রাহাম;; তবে রে…
আব্রাহাম আইরাতের পিছু নিলে আইরাত খিলখিল করে হেসে দৌড় দেয়। কিন্তু আবার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে আব্রাহামকে বলে ওঠে।
আইরাত;; এই যে চৌধুরী…
আব্রাহাম তার দিকে এক ভ্রু উচিয়ে তাকায়।
আইরাত;; একটা কথা বলতে তো ভুলেই গেছি।
আব্রাহাম;; আবার কি!
আইরাত;; আপনাকে না খালি গায়ে অনেক বেশিই হ্যান্ডসাম লাগে।
আইরাত এই কথা বলে আব্রাহাম কে বেংগ করে চলে যায়। আইরাত চলে গেতেই আব্রাহাম জোড়ে হেসে দেয়। আব্রাহাম ভাবতেও পারেনি যে সকাল সকাল উঠেই তাকে আইরাতের এই সব পাগলামো কান্ড দেখতে হবে। তবে দেখে ভালোই হয়েছে। আজ পুরো দিন আব্রাহামের অনেক ভালো কাটবে। আব্রাহাম হেসে একটা সাদা টাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমে চলে যায়।
কিছুক্ষন আগে~
আইরাত যখন সিড়ি বেয়ে বাড়ির ভিতিরে যায় তখনই আইরাতের চোখ যায় বাগানে বসে থাকা তার বাপি আবির আহমেদ চৌধুরীর দিকে। মুখের সামনে বই ধরে খুব গম্ভীর ভাবে বসে আছে। আইরাত দেখলো যে পাশেই চা রাখা আছে চায়ের পাশেই কাপ ভরে চিনি রাখা আছে কিন্তু তার বাপির সেটার দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই। সে তার মতো করে বই পরেই যাচ্ছে। আইরাত খানিক ভাবতে লাগলো যে যিনি আগে আইরাতের হাতের চা এর জন্য দিনরাত এক করে ফেলতো, বাড়ি মাথায় করে নিত সে চা পাশে রেখে বই পরছে। চা এক সময় ঠান্ডাই হয়ে গেলো। যিনি চা খাওয়ার সময় চিনি চিনি করে আইরাতের কাছে বাহানা করতো সে আজ তার দিকে তাকিয়েও দেখছে না। সবকিছু আইরাতের জন্য। তার বাপি এখনো আইরাতের জন্য অপেক্ষা করছে। আইরাত ধীর পায়ে তার বাপির দিকে এগিয়ে যায়। পিছনে দাঁড়িয়ে দেখে তার বাপি হুমায়ুন আহমেদ এর -অপেক্ষা বইটা খুব মনোযোগ দিয়ে পরছে। আইরাত তার দুহাত পিছনে রেখে কিছুটা ঝুকে তার বাপির পাশে গিয়ে বলে ওঠে।
আইরাত;; বাপি, কার জন্য অপেক্ষা করছ তুমি?!
আইরাতের কন্ঠস্বরকে চিনতে আবির আহমেদ এর একটুও ভুল হয়নি। আইরাতের কন্ঠ শুনে তিনি পিছন ফিরে তাকালো। আইরাতকে দেখে আবির আহমেদ কোন কিছু বললো না। খুব শান্ত ভাবেই আবির আহমেদ তার চেয়ার থেকে ওঠে দাড়ালো। আস্তে করে আইরাতের দিকে এগিয়ে গেলেন তিনি।
আবির আহমেদ;; আআআইরা আইরাত মা আমার।
আইরাত;; হ্যাঁ বাপি আমি তোমার মেয়ে আইরাত।
আবির আহমেদ;; আইরাত মা আমার।
এই কথা বলেই আবির আহমেদ আইরাতকে নিজের বাহুতে জড়িয়ে ধরলেন। অঝোরে কান্না করতে লাগলেন তিনি। আইরাতেরও চোখের পানির শেষ নেই। আবির আহমেদ যেন এতোদিনে তার প্রাণে প্রাণ ফিরে পেয়েছেন। আইরাত কে নিয়ে হাউমাউ করে কেদে দিলে৷ তিনি।
আবির আহমেদ;; মা রে কোথায় ফেরে রেখে চলে গিয়েছিলি তুই। জানিস তোকে কতো করে খুজেছি আমরা। কিন্তু কিন্তু যেদিন আব্রাহামের মুখে তোর কথা শুনলাম সেদিন আর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। আমি জানতাম তুই একদিন না একদিন ঠিক ফিরে আসবি। আমার ঝরে পরা পরিবারকে তুই একদিন ঠিক জোড়া লাগিয়ে দিবি। আমার পরিবার এক হবে। আজ আমার মন বলছে আমি ঠিক আছি আমার ধারণা একদম ঠিক। অনেক মনে পরেছে রে তোর কথা, অনেক। আর আমার ছেলে টার যে কি হাল হয়েছিলো তোকে ছাড়া তা আর মুখে বলতে। কিন্তু এখন আমার চিন্তা নেই কারণ তুই এসে গেছিস। আমার ঘরের লক্ষী চলে এসেছে। আর যাস না মা আমাদের ছেড়ে আএ দূরে যাস না। (খুব করে কেদে)
আইরাত;; না বাপি আমি আর কোত্থাও যাবো না। কখনো না। আমি আমার এই বাপির কাছেই থাকবো সবসময়। আচ্ছা বাপি আব্রাহাম কোথায়?
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম তো ওর ঘরে,
আইরাত;; আচ্ছা বাপি আমি এখন উনার ঘরে যাচ্ছি কেমন। আর শুনো অয়ন আসছে বুঝলে আর সাথে নিরব ভাই ও।
আবির আহমেদ;; ওহহ আচ্ছা আচ্ছা,
আইরাত;; বাপি আরো একটা সারপ্রাইজ আছে তোমার জন্য!!
আবির আহমেদ;; কি মামনি?
আইরাত;; Guess what?
আবির আহমেদ;; নাহ মাথায় আসছে না মামনি তুই ই বলে দে না!!
আইরাত;; অয়ন আর নিরব ভাইয়া আসছে কিন্তু সাথে তাদের দুজনের হবু বউদেরও নিয়ে আসছে।
আবির আহমেদ;; কিহ
আইরাত;; যা শুনেছ তাই।
আবির আহমেদ;; আচ্ছা আজকে কি কোন স্পেশাল ডে!! নয়তো আমি আজকে এতো গুলো সারপ্রাইজ একসাথে পাচ্ছি কেন।
আইরাত;; কারণ, এখন সবাই একসাথে থাকবে। আর কোন বিপদ আপদ আমাদের ধারে কাছেও আসতে পারবে না (তার বাপিকে জড়িয়ে ধরে)
আবির আহমেদ;; আচ্ছা মা বুঝেছি। এবার তুই যা আব্রাহামের ঘরে আর আমি এদিকে সব কিছু আয়োজন করে নিচ্ছি।
আইরাত;; আচ্ছা বাপি।
এই কথা বলে আইরাত ওপরের ঘরে অর্থাৎ আব্রাহামের রুমে চলে যায়।
।
।
চৌধুরী ভবনকে মোটামুটি ভালোই সাজানো হয়েছে। কেননা আজ ছোট খাটো একটা Family get-together আছে।
খানিক বাদেই অয়ন রাত্রি, নিপা আর নিরব এসে পরে। আইরাত তাদের দেখে এগিয়ে গিয়ে কথা বলতে থাকে। তাতপর সবাই বসে পরে। তখনই আবির আহমেদ চলে আসে। নিরব গিয়ে উনাকে জড়িয়ে ধরলেন। সবার মাঝেই একটা ভালো আমেজ বসবাস করছে। কিন্তু কোথায় কি যেন একটা নেই আর তা হলো আব্রাহাম। হুমমম আব্রাহাম নেই। আইরাত তাদের বলে ওঠে গিয়ে আব্রাহামের ঘরে যায়। গিয়ে দেখে আব্রাহাম ব্লেক কালার পেন্ট পরে, নেভি ভ্লু কালার একটা শার্ট পরে আইরাত সামনে দাঁড়িয়ে বডি তে পারফিউম দিচ্ছে। শার্টের হাতা গুলো ফোল্ড করা। মাথার চুলগুলো উড়ছে মুখে চাপদাড়ি। আইরাত আব্রাহামকে দেখে একদফা ক্রাশই খেয়ে গেলো। আব্রাহাম আইরাতকে দেখেও না দেখার ভান করে। আইরাত এবার আব্রাহামের কাছে গিয়ে তার পিছন দিক থেকে জড়িয়ে ধরে।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
🥰🥰চলবে~~~~~
#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””
#Writer; Tamanna Islam
#part__ 48
🍃🍃..
..
..
..
..
..
আইরাত সোজা এসে আব্রাহামকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহাম আয়নাতে দেখে যে আইরাত তাকে জড়িয়ে ধরে তার কাধে মাথা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। আব্রাহামের এখন অনেক ইচ্ছে করছে যে আইরাতকে নিজের সামনে এনে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরার। কিন্তু সে এখন তা করবে না। আয়নার দিকে তাকিয়েই সে মুচকি হেসে উঠে। আবার কোঠর গলায় বলে ওঠে…
আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এসব!
আইরাত;; ______________
আব্রাহাম;; কিছু বলছি তোমায়।
আইরাত;; ইশশশ এতো বেশি কথা বলেন কেন, কানা নাকি আপনি দেখছেন না কি হচ্ছে। আমি আপনাকে জড়িয়ে ধরে আছি।
আব্রাহাম;; এভাবে হুট করেই যে কারো রুমে ঢুকতে নেই আর এমন করে জড়িয়ে ধরা তো দূরের কথা। সামান্য টুকু ম্যানার্স নেই তাই না।
আইরাত;; এইই আমি যথেষ্ট ম্যানার্স জানি কিন্তু আপনার ক্ষেত্রে কোন কিছুই কাজ করে না।
আব্রাহাম;; কে হই আমি তোমার যে এতো অধিকার খাটাও?
আইরাত;; কিইই এতো বড়ো কথা, কে হন আপনি আমার! আপনি জানেন না কে হন আপনি আমার?
আব্রাহাম;; যদি আমি জানতাম তাহলে কি আর তোমাকে জিজ্ঞেস করতাম।
আইরাত এবার আব্রাহামের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পরলো।
আইরাত;; এই যে চৌধুরী শুনে রাখুন আপনি আমার সবকিছু, আমার পুরো দুনিয়া। আপনি আমার, শুধুই আমার।
আব্রাহাম;; (এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে) অনেক হয়েছে নাটক এবার সামনে থেকে সরো।
আব্রাহাম আইরাতের বাহু ধরে সামনে থেকে সরিয়ে নিজের কলার ঠিকঠাক করতে লাগে। কিন্তু আইরাতের মুখে বারো টা বেজে গেছে। সে কপাল কুচকে ঠোঁট উল্টিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামের এই মূহুর্তে আইরাতের এমন ফেইস দেখে অনেক হাসি পাচ্ছে কিন্তু তা কোন মনে দমিয়ে রাখছে।
আইরাত;; সবাই আপনার জন্য নিচে অপেক্ষা করছে তাড়াতাড়ি এসে পরুন।
এই কথা বলার পর আইরাত সেখানেই আবার দাঁড়িয়ে থাকে এই ভেবে যে যদি আব্রাহাম তার সাথে কোন কথা বলে। কিন্তু আব্রাহাম তা টের পেয়ে যায়। সে দিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করে আবারও নিজে তৈরি হওয়াতে মনোযোগ দেয়। এমন একটা ভাব ধরে যেন তার পাশে কেউই নেই। আব্রাহামের এমন বেপরোয়া ভাব দেখে আইরাতের যেন ধীরে ধীরে রাগ হচ্ছে। এমন ভাবে নিজেকে রেডি করছে যেন আজ তার বিয়ে হাহ্। আইরাত এক ভেংচি কেটে রেগে চলে যায়। যাওয়ার সময় দরজা সজোরে লাগিয়ে রেখে যায়। ঠাসসস করে শব্দ হয়। আইরাত যাওয়ার পর আব্রাহাম বাকা চোখে সেদিকে তাকায়। সে বেশ বুঝতে পারছে যে আইরাত রেগে গেছে। আব্রাহামের আর কি হাসতে হাসতে লুটপাট। আইরাত নিচে গিয়ে মুখ ফুলিয়ে দিয়ে সোফায় বসে পরে। আইরাতের এভাবে নিচে নামায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাতের এমন মেজাজ দেখে আবির আহমেদ ওপরের ঘরের দিকে তাকায়। তিনি কিছুটা আন্দাজ করতে পারেন। আইরাতকে বলে ওঠে…
আবির আহমেদ;; আইরাত মামনি কি হয়েছে এভাবে মুখ ফুলিয়ে আছ কেন?
আইরাত;; না বাপি তেমন কিছুই না এমনি।
আবির আহমেদ;; আব্রাহাম কোথায়! সে আসেনি?
আইরাত;; আসছে (মুখ অন্যদিক ফিরিয়ে)
এবার আবির আহমেদের ধারণা স্পষ্ট হলো যে আব্রাহামের সাথেই তার কিছু হয়েছে। সবার মাঝ থেকে অয়ন বলে ওঠলো…
অয়ন;; বউমনি!
আব্রাহাম;; হুমমম বলো।
অয়ন;; বউমনি প্রচুর ক্ষিদে পেয়েছে প্লিজ সবার জন্য কিছু বানাও না।
আবির আহমেদ;; না না থাক এতো কষ্ট করে এখন আর রান্নাঘরে যেতে হবে না আমি কোন এক স্টাফ কে বলে দিচ্ছি।
আইরাত;; বাপি, কিছু হবে না আমাকে যেতে দাও। আর এখন আমি রান্না শিখে নিয়েছি আগের মতো আর বাজে হয় না। খেতে পারবে।
আইরাতের কথা শুনে ঘরে থাকা সবাই হেসে দিলো।
আবির আহমেদ;; না রে মা না আমি আসলে তা বলিনি।
আইরাত;; 😒
আবির আহমেদ;; বলছিলাম যে এই গরমে তুই রান্না করতে যাবি একা একা।
রাত্রি;; না না আংকেল একা কেন আমি আর নিপু যাচ্ছি তো আইরুর সাথে।
নিপা;; জ্বি আংকেল এইতো যাচ্ছি।
আইরাত;; না কারো কোথাও যেতে হবে না। আমি একাই রাখবো (ওপরে আব্রাহামের রুমের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে)
রাত্রি;; পারবি তো!
আইরাত;; আইরাত পারে না এমন কিছুই নেই।
নিপা;; এখন শুধু রান্না টা করতে পারলেই হলো। (মুখ টিপে হেসে)
আইরাত;; থাপ্পর খাবি একটা ফইন্নি।
এই বলে আইরাত আবার এক নজর সিড়ির দিকে তাকিয়ে রেগে রান্না ঘরে চলে যায়। কিন্তু রান্নাঘরে গিয়ে পরলো আরো এক বিপদে। কে কি খাবে তা তো কিছুই শুনে এলো না তাহলে এখন কি রাধবে। রান্নাঘরের ডেস্কের ওপরে হাত রেখে ভাবতে লাগলো সে। পরক্ষণেই মনে পরলো “বিরিয়ানি” এর কথা। এটা সবারই পছন্দের। তো যেই ভাবা সেই কাজ। আইরাত লেগে পরলো বিরিয়ানি রান্নার কাজে।
তার বেশ খানিক পরই আব্রাহাম নিচে ড্রইংরুমে নেমে এলো।
আব্রাহাম;; Hay what’s up guy”s!! (সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে)
নিরব;; আব্রাহাম ভাই। (উঠে আব্রাহামের কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরে)
আব্রাহাম;; কেমন আছিস তুই?
নিরব;; অনেক ভালো ভাই, তুমি কেমন আছ?
আব্রাহাম;; হ্যাঁ ভালোই।
আবির আহমেদ;; এই তোর সময় হলো আসার!
আব্রাহাম;; কেন বাপি কি হয়েছে?
আবির আহমেদ;; সবাই এখানে অপেক্ষা করছে আর তোর কিনা এতো দেরি আসতে।
আব্রাহাম;; সরি বাপি। আচ্ছা তো নিরব এখন কি তোকে নাম ধরে ডাকবো নাকি জামাই বলে ডাকতে হবে কোনটা?
নিরব;; আর আমারও এখন থেকে আইরাতকে ভাবি বলে ডাকতে হবে।
অয়ন;; তা তো ডাকবি কিন্তু দাভাই নিরবকে এখন জামাই বলেই ডাক।
আব্রাহাম;; এই তুই চুপ কর, তোরও খবর আছে সবকিছু জানি আমি।
অয়ন;; না মানে আসলে দাভাই।
আব্রাহাম;; থাক অনেক হয়ে না মানে আর বলতে হব্র না।
অয়ন;; 😁
আব্রাহাম;; তো নিপা রাত্রি তোমরা কেমন আছ?
নিপা;; জ্বি ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ ভালোই আছি।
রাত্রি;; ভালো আর থাকলাম কোথায় ভাইয়া!
আব্রাহাম;; ওমা কেন শালিকা?
রাত্রি;; প্রথমত আগে যদি জানতাম যে আপনি আমার বোনের জামাই তাহলে আপনার ওপর আমি জীবনেও ক্রাশ খেতাম না, কিন্তু না জানার ফলে আপনি আমার পূর্ব জনমের ক্রাশ। আর দ্বিতীয় এখন শুধু ক্রাশ না যে আমার প্রেমে বা আমি যার প্রেমে এক প্রকার হাবুডুবু খাচ্ছি তাদের দুজন থেকে কেউই কাউকে বলতে পারছি না।
রাত্রির এমন কথা শুনে আব্রাহাম ফিক করে হেসে দেয় সাথে বাকিরাও। কিন্তু অয়নের তো বারো দুগুণে চব্বিশটা বেজে গেলো। এসি থাকার পরেও ঘেমে নেমে একাকার হয়ে যাচ্ছে সে। ফাটা চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়ে আছে। আসলে অয়ন ভেবেছে রাত্রি অন্যজনকে ভালোবাসে।
অয়ন;; ক্কি কি বববললে তুতুমি ভালোবাস তুতুমি কিন্তু কাকাকে?
নিপা;; আরে ভাই আস্তে আস্তে,, পরের টা পরেই জেনো এতো আগে জেনে কি করবে।
অয়ন;; না মানে..
রাত্রি;; কি না মানে, চুপ থাকো তুমি।
অয়ন;; ☹️😞
নিরব;; আরে অয়ন সবুড়ে মেওয়া ফলে সুতরাং ধৈর্য ধর।
সবার এতো কথার মাঝেও আব্রাহামের মনে যেন শান্তি নেই। বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছে সে। তার দুচোখ যেন শুধু আইরাতকেই খুঁজে যাচ্ছে। সবাই এখানে তাহলে আইরাত কোথায় মেয়েটা গেলো কই। আব্রাহাম আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে জিজ্ঞেস করে ফেললো…
আব্রাহাম;; বাপি..
আবির আহমেদ;; হুমমমম
আব্রাহাম;; না আসলে বলছিলাম কি যে আইরাত কোথায়?
আবির আহমেদ;; না আমি কি করে বলবো, তোমার বউ তুমি খবর রাখো না।
আব্রাহাম;; ধুর বাপি ঢং না করে বলো তো।
আবির আহমেদ;; পাজি ছেলে আগে তুই বল, তুই কেন আমার মেয়েটাকে বকেছিস এখানে এসেও মুখ লটকিয়ে বসে ছিলো।
আব্রাহাম;; আরে না বাপি আমি কেন ওকে বকতে যাবো।
আবির আহমেদ;; হুমমম হয়েছে বুঝছি।
আব্রাহাম;; আচ্ছা বাপি বলো না আইরাত কোথায় ভালো লাগছে না ওকে ছাড়া। প্লিজ বলো।
আবির আহমেদ;; আমি জানি না তোর বউ তুই খুঁজে বের করে নে।
আব্রাহাম;; বাপি🙁
আবির আহমেদ;; হাহাহাহাহা,, আচ্ছা যা আইরার রান্নাঘরে আছে।
আব্রাহাম;; কিহহ বাপি তুমি ওকে আবার রান্নাঘরে পাঠিয়েছ। যদি কিছু হয়ে যায় হাত পা পুড়ে যায় তাহলে। বাপি তুমিও না…
আবির আহমেদ;; আরে নাহ আমার দোষ নেই আইরাত নিজেই জিদ করেছে।
আব্রাহাম;; আমি যাচ্ছি।
এই বলেই আব্রাহাম তড়িঘড়ি করে সেখানে থেকে চলে যায় কিচেনে। কিন্তু সেখানে গিয়েই আব্রাহামের পা থেমে যায়। চোখ সামনে আটকে যায় তার। কেননা সামনে আইরাত তার ওরনা কোমড়ে বেধে রান্না করছে। চুলগুলো পিছনে বাধা, কিন্তু সামনে কিছুটা চুল এলোমেলো হয়ে বের হয়ে আছে। এই গরমে তার ওপর রান্না করার ফলে প্রচুর ঘেমে গেছে সে। কপালে, গলায়, ঘাড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। মাঝে মাঝে সে তার হাতের উল্টো পাশ দিয়ে কপাল মুছে যাচ্ছে। চুল গুলো ঠিক করছে কিন্তু সেগুলো অবাধ্য, আবার সামনে এসে পরছে। কোমড়ে ওরনা বেধে রেখেছে সে কিন্তু তাতেও সেখানকার খানিক কাপড় উঠে গিয়ে কোমড়ের কিছুটা অংশ দেখা যাচ্ছে। আর আব্রাহাম মুগ্ধ নয়নে আইরাতকে দেখে যাচ্ছে। এখন এই মূহুর্তে আইরাতকে দেখে পুরো দমে একজন টিপিকাল ওয়াইফ লাগছে। আইরাতকে এই রুপে দেখে আব্রাহামের পক্ষে নিজেকে আটকে রাখা অনেক কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। নিজেকে আর কন্ট্রোলে রাখতে পারছে না সে। আব্রাহাম ধীর পায়ে আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত তার রান্না করাতে এতো টাই মগ্ন হয়ে ছিলো যে আশে পাশে তার কোন খেয়ালই নেই। আব্রাহাম এসে আইরাতের পিছনে দাঁড়িয়ে পরে। এক নয়নে আইরাতের গলার দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা গলাতে ঘামের বিন্দু গুলো যেন মুক্তোর ন্যায় জ্বলজ্বল করছে। আব্রাহামের কেমন নেশা ধরে যায়। সে আর নিজেকে ধরে রাখতে না পেরে হাত দিয়ে আইরাতের কোমড় ঝাপ্টে ধরতে আর তার ঘাড়ে নাক দিয়ে ঘষতে থাকে। আব্রাহামের এমন আচমকা কান্ডে আইরাত চিল্লিয়ে ওঠে। হাতে থাকা ঘুটনি টা নিচে পরে যায়। আইরাত চিল্লিয়ে উঠলে আব্রাহাম হাত দিয়ে তার মুখ ধরে ফেলে। আইরাত বেশ ভয় পেয়ে যায় যার ফলে সে ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে থাকে।
আইরাত;; আব.. আব্রাহ…
আব্রাহাম;; হুশশশশশ.. চুপ
আইরাত;; আআপনি এএএখানে..
আব্রাহাম;; কি করছ এখানে তুমি হুমমম,, রান্নাঘরে আসতে বারণ করেছিলাম না তোমায় তার পরেও এসেছ?
আইরাত;; না মানে আসলে সবাই বললো যে আমার হাতের বানানো কিছু একটা খাবে তাই চলে এলাম বানাতে। (খুব কষ্টে বললো কথাটা)
আব্রাহাম আর কিছু না বলে আইরাতকে ধরে সেখানে বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থাকলো। কোমড়ে স্লাইভ করছে আইরাতের। আইরাত আব্রাহামের এমন করাতে ঠিক মতো কাজ করতে পারছে না। আব্রাহামকে ছাড়তে বললে ছাড়ছেও না। কি আর করার সেভাবেই রান্নার কাজ সব শেষ করলো।
আব্রাহাম;; তো কি রান্না করছো।
আইরাত;; বিরিয়ানি।
আব্রাহাম;; হুমম
এই বলে আব্রাহাম চলে গেলো। আইরাত অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে
আইরাত;; যাহ বাবা, না মানে বিরিয়ানির কথা শুনলে যার কিনা খুশির সীমা থাকে না সে আজকে বিরিয়ানির নাম শুনেও শুধু “হুমম”। কিছুই বললো না অনেক আজব তো। ধুর আমার রান্না তো শেষ এখন আমি যাই। আইরাত বিরিয়ানি এনে টেবিলে স্টাফদের সাহায্য নিয়ে সাজিয়ে দিলো।
অয়ন;; ওয়াও বউমনি স্মেল জাস্ট আমেজিং। তাড়াতাড়ি খেতে দাও।
আইরাত;; স্মেল তো ভালো এখন শুধু খেতে ভালো হলেই হলো।
নিরব;; আরে ভাবি তুমি এতো চিন্তা করছ কেন বলতো,, আমাদের একমাত্র ভাবি রান্না করেছে তো অবশ্যই ভালো হবে, হতেই হবে।
আইরাত;; বাপি, আসো খেতে বসো। রাত্রি নিপু তাড়াতাড়ি আয়।
রাত্রি;; আসছি বেবিজান।
আইরাত;; আর এইযে চৌধুরী.. আপনাকে কি খাবার টেবিলে আসার জন্য আলাদা ভাবে ইনভিটেশন দিতে হবে নাকি!!
আব্রাহাম;; No need, i am coming…
আইরাত মনে মনে;; আমেরিকান ইংরেজের বাচ্চা।
সবাই খাবার টেবিলে বসে পরে। সবাইকে আইরাত নিজ হাতে খাবার সার্ভ করে দেয়। আইরাতকে তাদের সাথে খেতে বসতে বললে সে বসে না এই ভেবে যে যদি উল্টা পালটা হয় তো। সবাই খাবার মুখে দেয়। কিন্তু আইরাত খাবার টেবিলের পাশে দাঁড়িয়ে ফিংগার ক্রোস করে চোখ খিচে বন্ধ করে থাকে৷ সবাই খাবার মুখে দিয়েই থ মেরে যায়। কারো মুখ দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না। সবাই এক লোকমা খাবার মুখে তুলে চুপ মেরে বসে থাকে। সবার এমন রিয়েকশন দেখে আইরাতের তো কাদো কাদো অবস্থা। আইরাত ভাবতে থাকে যে নিশ্চিত খাবার জঘন্য খারাপ হয়েছে তাই সবার এমন সশা। আচ্ছা এখন যদি সবাই মিলে আইরাতকে গনপিটুনি দেয় তাহলে কি হবে। কিন্তু আইরাতের ভাবনাতে ছেদ ঘটিয়ে অয়ন বলে ওঠে।
অয়ন;; বউমনি ফাটাফাটি হয়েছে।
নিরব;; ভাবি আমি আমার পুরো লাইফে এমন বিরিয়ানি খাই নি। কি বলে যে ধন্যবাদ দিবো তোমাকে।
নিপা;; আইরু ফাটিয়ে দিয়েছিস পুরা।
রাত্রি;; তুই এতো ভালো রান্না করে থেকে শিখলি।
আবির আহমেদ;; আমি তো আরো নিবো।
সবাই তো আইরাতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তা দেখে আইরাত যেন এক বিশ্বজয় করা হাসি দিলো। সবাই আইরাতের রান্না খেয়ে অনেক কিছুই বললেও আব্রাহামের কোন সাড়াশব্দ নেই। সে তার মনের মতো করে খেয়েই যাচ্ছে। আইরাতের দিকে তাকাচ্ছে না পর্যন্ত তা দেখে আইরাতের মেজাজ বিগড়ে গেলো তবুও চুপ থাকলো।
।
।
।
সবাই সবকিছু শেষে আবার একসাথে বসে পরলো। এবার নিরব আর নিপার বিয়ের কথা চলছে। কিন্তু দুঃখের বেওয়ার হলো এই যে নিরবের বাবা-মা বলতে কেউ নেই তারা মারা যায় যখন নিরব খুব ছোট ছিলো। কিন্তু আবির আহমেদ, আব্রাহাম,আইরাত,অয়ন,রাত্রি, নিপা এদের সবাইকে পেয়ে যেন নিরবের পিরিবার পূর্ণ হয়ে গেছে। নিরব নিপার বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো ১৮ই আগস্ট। ধীরে ধীরে চৌধুরী বাড়িতে বিয়ের আমেজ বয়ে যায়। ধুম পরে গেলো নিরব-নিপার বিয়ের। এর মাঝেই অয়ন রাত্রির প্রেমে আরো গভীর ভাবে পরছে। আর আইরাত তো পুরো বাড়িকে মাতিয়ে রাখছে আর আব্রাহামকে জ্বালানো যে তার নিত্য দিনের কাজ। তারাও ধিরে ধিরে কাছে আসছে,,,
(কাল প্রচুর মাথা ব্যাথা ছিলো তাই গল্প দিতে পারিনি তবে আজকে বিকেলে একটা বোনাস পার্ট দেয়া হবে😊)
।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
🤎🖤চলবে~~~~~