Gangstar In Love Part-45+46

0
3103

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 45

💙💐..
..
..
..
..
..

পরেরদিন সকালে🌅~

জোরে গানের আওয়াজে রাত্রি আর নিপার ঘুম ভেংে যায়। নিপা একরাশ বিরক্তি আর রাগ নিয়ে ঘুম থেকে ওঠে যায়।

নিপা;; কে রে এই সাজ সকাল বেলা এভাবে উদুম ভাবে গান বাজাচ্ছে,,, উফফফ কানের বারো টা বাজিয়ে দিলো রে।

নিপা বিছানা ছেড়ে গানের শব্দ অনুসরণ করে সেদিকেই এগিয়ে গেলো। নিপা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে কারন গানের শব্দ রান্নাঘর থেকে আসছে। নিপা তার এলোমেলো চুলগুলো তে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে লাগলো। গেতেই তার চোখ চড়কগাছ। কেননা আইরাত কিচেন এপ্রোন পরে চুলগুলো বেধে হাতে একটা ফ্রাইপেন নিয়ে তাতে ডিম ভাজছে। তার সাথে তুমুল গান বাজাচ্ছে আর নেচে যাচ্ছে। নিপা আইরাতের এমন অবস্থা দেখে হাসবে না কাদবে খুজে পাচ্ছে না। আইরাতের হঠাৎ চোখ যায় নিপার ওপর। দেখে নিপা পাগলের মতো দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত নিপাকে দেখে এক ভেটকি দেয় দাতঁ বের করে। নিপা আইরাতের কাছে এগিয়ে গিয়ে তাড়াতাড়ি করে কপালে, গলায় হাত দেয়। আইরাত অদ্ভুত চোখে তাকিয়ে থাকে।

নিপা;; আচ্ছা হয়েছে কি তোর,, তুই ঠিক আছিস তো?

আইরাত;; আরে ঠিক আছি মানে 100% ঠিক আছি, যাকে বলে একদম বিন্দাস।

নিপা;; তাহলে তুই এই সকাল সকাল এগুলো…!

আইরাত;; আরে বেবি চিল, এমন গোমড়া মুখ করে রাখলে হয় নাকি। সবসময় ফুরফুরে মেজাজে থাকবি এই আমার মতো।

নিপা;; হ্যাঁ হ্যাঁ তা তোকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে।

আইরাত;; আজ ব্রেকফাস্ট আমি নিজে বানিয়েছি, তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।

নিপা;; আইরু

আইরাত;; বলো বেবি।

নিপা;; সবসময় এমন হাসি খুশি থাকবি (আইরাতকে তার দিকে ঘুড়িয়ে দুগালে হাত রেখে)

আইরাত;; হুমমমম 😊,, এবার জলদি চল।

রাত্রি;; এইযে দেহো আইসা গেছি।

আইরাত;; এগুলো কি ভাষা?

রাত্রি;; খাটি বাংলা।

আইরাত;; দারুন 😅

সবকিছু গুছিয়ে তারা সবাই খেতে বসলো। খাওয়ার মাঝেই নিপা বলে ওঠলো…

নিপা;; আচ্ছা আজকে না আমাকে একটু নিরবের সাথে দেখা করতে যেতে হবে।

রাত্রি;; আয়য়য় হায়ায়ায় টুরু লাভ।

নিপা;; চুপ কর, আমাকে বলছিস টুরু লাভ নিজের ভান্ডা ফুটো করে দিই!!

আইরাত;; তোরা কি বলছিস আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না।

নিপা;; আচ্ছা আমি ঢুকিয়ে দিচ্ছি।

রাত্রি;; নিপু দেখ বেশি বারাবারি করছিস কিন্তু তুই যেমন টা ভাবছিস তেমন টা না আসলে।

নিপা;; মুখ অফ কর পেত্নি। এই এই আইরু জানিস আমাদের রাত্রি না প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে।

আইরাত;; কিইইইইইইইইইইই

নিপা;; আজ্ঞে জ্বি,

আইরাত;; তো কে এই মহান ব্যাক্তি যার প্রেমে আমাদের রাত্রি হাবুডুবু খাচ্ছে?!

নিপা;; আসলে উনি হচ্ছেন আপনার হাসবেন্ডের ছোট ভাই উরফে আপনার দেবর অয়ন আহমেদ চৌধুরী।

আইরাত;; হাহাহা, আমার আগে থেকেই এই দুটোর ওপর সন্দেহ ছিলো। সারা দিন রাত ফোনে একে অন্যের সাথে কথা বলবে, রোজ দেখা করবে। ভাই ঘাবলা যে এদের মাঝে আছে তা আগে থেকেই জানতাম। তো মিস রাত্রি খান কতো দিন ধরে চলছে এইসব।

রাত্রি;; আরে ধুর কিসের কতোদিন,, এখনো তো বলাই হলো না যে কতোটা ভালোবাসি অয়নকে।

নিপা;; এই হলো গোয়ালের গাধা আই মিন গাধি।

রাত্রি;; 😟☹️

আইরাত;; আরে সোজাসাপটা বলে দে না যে ভালোবাসিস।

রাত্রি;; এহহহহ আসছে, আমি কেন বলতে যাবো ওই আমাকে বলবে।

আইরাত;; তাহলে তো তোকে অপেক্ষা করতে হবে।

রাত্রি;; কিন্তু..

আইরাত;; কিন্তু কি!

রাত্রি;; যদি অয়ন অন্য কাউকে ভালোবেসে থাকে তাহলে!

আইরাত;; এটা কখনোই সম্ভব না কারণ আমি যতটুকু অয়ন কে চিনি তাতে তার পক্ষে এই সব প্রেম ট্রেম করা কখনোই সম্ভব না। বলতে পারিস সে আব্রাহামের মতো আসলে দুই ভাই তো একই রকমের।

রাত্রি;; কিন্তু যদি সে আমাকে ভালো না বাসে তাহলে কি হবে?

আইরাত;; এমন প্রশ্নই আসে না, অয়ন অনেক চাপা স্বভাবের,, যদি কাউকে তার ভালো না লাগে তাহলে বলে দেয় আর তার সাথে তেমন একটা কথাও বলে না কিন্তু তোর ক্ষেত্রে হয়েছে অন্যটা। তোর সাথে তো সারাদিনই চিপকে থাকে।

রাত্রি;; আরে ধুর এভাবে বলছিস কেন 🙈

নিপা;; আহা লজ্জা বতি লতা।

আইরাত;; এইসব লজ্জা টজ্জা না ছার আর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অয়নকে বলে দে।

রাত্রি;; হুমমমম

আইরাত;; আচ্ছা আমি একটু আজ আমার চৌধুরীর কাছে যাবো।

রাত্রি;; ওহহহ।

নিপা;; রাত্রি রেডি হয়ে যা আমার সাথে তুইও যাবি।

রাত্রি;; ওমা আমি কেন যাবো নিরব ভাইয়া আর তোর মাঝে,, আমি বাবা কাবাবের ভিতরে হাড্ডি হতে চাই না।

নিপা;; অয়নও আসছে।

রাত্রি;; হ্যাঁ তো কি,,,, কিহহ অয়নও আসছে!!

নিপা;; হুমমম আমি আসতে বলেছি।

রাত্রি;; অনেক ভালো করেছিস,, আমি গেলাম এখনই রেডি হতে।

আইরাত;; আরে কিন্তু তোর খাবার টা…… যাহ বাবা চলে গেলো।

অয়নের নাম শুনতেই রাত্রি খাবার ছেড়ে দৌড়ে রেডি হতে চলে গেলো। রাত্রির এমন কান্ডে নিপা আর আইরাত জোরে হেসে ওঠলো।

রাত্রি আর নিপা চলে গেলো অয়ন আর নিরবের সাথে দেখা করতে। এদিকে আইরাতও চৌধুরী ভবনের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে।
আইরাত একমনে গাড়ি ড্রাইভ করে যাচ্ছে আর সেখানে আব্রাহাম তাকে দেখে কি রিয়েক্ট করবে তাই ভাবছে সে। বেশ অনেক সময় পর আইরাত তার গাড়ি নিয়ে চৌধুরী ভবনের সামনে চলে গেলো। আইরাত গাড়ি নিয়ে, সামনে তাকাতেই দেখে বিশাল দেহি দু-দুটো বডিগার্ড দাড়িয়ে আছে হাতে তাদের ইয়ায়ায়া বড়ো বন্দুক। অন্য সময় হলে সেই বডিগার্ড গুলো সসম্মানের সাথে মেইন গেট খুলে দিত কিন্তু আজ তারা আইরাতকে দেখার পরও সেই ঠাই দাঁড়িয়ে আছে। এতে আইরাতের বেশ রাগ হলো। আইরাত ছোট ছোট চোখে তাদের দিকে একবার তাকিয়ে গাড়ি থেকে নেমে গেলো। তাদের সামনে গিয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; গেট খুলো।

বডিগার্ড;; __________

আইরাত;; কথা কি কান দিয়ে ঢুকে না, গেট খুলো।

বডিগার্ড;; সরি ম্যাম স্যারের কড়া অর্ডার আপনাকে যেন ভিতরে ঢুকতে না দেওয়া হয়।

আইরাত;; কিহহহহহ,, এতো বড় কথা। তোমাদের সাহস কি করে হয় আমার সাথে এভাবে কথা বলার। তোমরা জানো আমি কে।

বডিগার্ড;; ম্যাম এখন এই সময়ে আমরা আপনাকে চিনতে পারছি না। আমরা দুঃখিত।

আইরাত;; একবার ভিতরে যেতে পাই তারপর সবার আগে তোমাদের ওই স্যারের মাথা ফাটাবো তারপর তোমাদের মাথা ফাটাবো। এতো বড় কলিজা আমাকে কিনা বলে ভিতরে যেতে মানা করেছে,,
আব্রাহামের বাপের বাড়ি নাকি 😤,, ওহ না কি বলছি আমি আব্রাহামের বাবার বাড়িই তো😑। উফফ এবার মনে হচ্ছে আমি নিজেই এদের পাল্লায় পরে পাগল হয়ে যাবো। ধুর ছাই।

আইরাত মুখ গোমড়া করে, কপাল কুচকে গাড়ির ওপরে উঠে বসে পরে। বাচ্চাদের মতো করে হাত-পা ছড়িয়ে দিয়ে, ঠোঁট উল্টিয়ে গাড়ির ডিকির ওপর বসে আছে। মনে মনে আব্রাহামের পুরো চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করে ফেলছে সে। আর আইরাতের এই সবকিছুই আব্রাহাম খুব করে পর্যবেক্ষণ করছে করিডর থেকে, আইরাতের কান্ড দেখে মুচকি হাসছে সে আর আরামছে কফি খাচ্ছে। আইরাত অনেক ক্ষন ধরে বসে আছে এবার সে বোর হয়ে নিজের নখ কামড়াতে থাকে। এইবার আইরাতের মাথায় এক শয়তানি বুদ্ধি কাজ করে। পাশে তাকিয়ে দেখে কিছু ছেলেমেয়ে খেলা করছে। আইরাত গাড়ির ডিকি থেকে ফট করে নেমে পরে এবং সেই বাচ্চাগুলোর দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত সেই বাচ্চাগুলোকে অনেক গুলো চকলেট দেয় আর বলে যে আব্রাহামের বাড়ির পিছনের বাগান থেকে অনেক গুলো ফুল তুলে আনতে কেননা আব্রাহাম তার বাগান কে খুব ভালোবাসে। কখনোই কাউকে কোন ফুল ছিড়তে দেয় না। এই বাগানটা আব্রাহামের নিজের হাতে তৈরি এবং খুব শখের। আর আইরাত এটাও জানে যে তার বাগানের গাছ গুলোতে কেউ হাত দিলে তুলকালাম কান্ড বাধিয়ে দিবে। ছেলেমেয়ে গুলোকে আইরাত অনেক গুলো চকলেট দিয়ে ঠিক যেভাবে যেভাবে করতে বললো তারা ঠিক সেভাবেই করে যাচ্ছে। তাদের চলে গেতেই আইরাতের মুখের কোণে ফুটে ওঠে বিশ্বজয় করা হাসি। নিজের দুহাত ভাজ করে বলতে শুরু করে।

আইরাত;; হিহিহি,, এবার দেখি আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী আপনি কি করেন।

বাগানে গিয়ে বাচ্চাগুলো ইচ্ছে মতো ফুল ছিড়তে থাকে। বাগানের পাশেই কাজ করছিলো বাগানের মালি। বাচ্চাদের হাসাহাসির শব্দ শুনে সেদিকে গেলে তিনি দেখতে পান অনেক গুলো বাচ্চা একসাথে ফুল তুলছে। তা দেখে মালি তাদের দিকে তেড়ে এলো। বাচ্চাগুলোও হো হো করে হাসতে হাসতে দৌড়ে পালালো। মালি কাকুও তাদের। পিছনে ছুটছে। মালি কাকু এবার মেইন গেট খুলে তাদের ধাওয়া করছে। বডিগার্ড রা তাদের মতো করেই দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাস এইতো সুযোগ। আইরাত এবার ইচ্ছে করেই তার গাড়িতে উল্টো পাল্টা কিছু একটা করে রাখলো। যার ফলে গাড়ির সামনের ডিকি দিয়ে ধোয়া বের হতে লাগলো। আইরাত এবার ইনোসেন্ট ফেইস বানিয়ে বডিগার্ড দের ডাক দিলো।

আইরাত;; এই যে বিশাল দেহি মানুষ গুলো একটু শুনবেন।

আইরাতের এমন ডাকে তারা বোকা বনে গেলো। তবুও বলে উঠলো।

বডিগার্ড;; জি ম্যাম বলুন।

আইরাত;; আসলে বলছি কি যে মানলান তোমাদের স্যার আমাকে ভিতরে যেতে মানা করেছে কিন্তু আমাকে একটু হেল্প তো করতেই পারো নাকি!!

বডিগার্ড;; জ্বি ম্যাম বলুন আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি।

আইরাত;; দেখো না আমার গাড়ি থেকে কিভাবে ধোঁয়া বের হচ্ছে,, প্লিজ একটু দেখো কি হয়েছে।

বডিগার্ড;; জ্বি ম্যাম এখনই দেখছি।

বডিগার্ড রা আইরাতের গাড়ির কাছে এসে কি হয়েছে তা দেখতে থাকলো।

আইরাত মনে মনে;; এইতো সুযোগ এখনই আমাকে ভিতরে যেতে হবে,, মানে মানে এখন এখান থেকে কেটে পরি।

বডিগার্ড রা গাড়ি দেখতে থাকলে আইরাত ধীরে ধীরে পিছিয়ে যেতে থাকে। গেটের প্রায় কাছে চলে এলে আইরাত উল্টো দিক হয়ে দেয় এক দৌড়। দৌড়ে যাওয়ার আওয়াজ শুনতে পেরে বডিগার্ড রা পিছনে তাকায় দেখে যে আইরাত সেখানে নেই। তার মানে ভিতরে চলে গেছে। দুজন বডিগার্ডই এক দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে ওঠে…

বডিগার্ড১;; আমরা হয়তো ভুলে গিয়েছিলাম যে আইরাত ম্যাম আসলে কার বউ মিস্টার. আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী স্যারের বউ। সাইকো তো হবেই। ম্যাম কিভাবে গাধা বানিয়ে ভিতরে চলে গেলো দেখলি। বুঝতেই পেলাম না।

বডিগার্ড২;; কি আর করার এখন তো ম্যাম ভিতরেই চলে গিয়েছেন।

আইরাত একদৌড়ে বাড়ির ভিতরে হলরুমে চলে গেলো। কিন্তু আজব কেউই নেই ঘরের ভেতরে। সব গেলো কই। আইরাত এইসব কিছু ভাবতে লাগলো আর গলা ফাটিয়ে বলতে লাগলো।

আইরাত;; হ্যালো, কেউ কি আছে।

এভাবে বেশ কয়েকবার ডাকার পরও যখন কেউ কোন সাড়া দিলো না তখন আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে পাশে থাকা এক বড়ো কাচের ফুলদানি তুলে নিলো। হাতে সেই ফুলদানি নিয়ে হলরুমের মাঝ বরাবর এসে দাড়িয়ে গেলো। চোখ মুখ শক্ত করে বন্ধ করে সমস্ত শক্তি দিয়ে ফুলদানি দিল এক আছাড়। সাথে সাথেই বিকট শব্দে ফুলদানি ভেংে চুরমার হয়ে গেলো। আইরাত দুহাত দিয়ে কান চেপে ধরে। আব্রাহাম তার রুমে ল্যাপটপে কাজ করছিলো কিন্তু ড্রইংরুম থেকে এমন বিকট আওয়াজ আসাতে দ্রুত ল্যাপটপ রেখে সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে পরে। নিচে নামতেই দেখে সারা ফ্লোরে কাচ টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। আব্রাহাম বেশ ভালো করেই জানে যে এটা আইরাতের কাজ ছাড়া আর কারোরই না। আব্রাহাম নিচে গিয়েই থেমে পরে কারণ আইরাত তাকে দেখে একগাল হেসে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহামকে দেখে আইরাত বলে উঠলো…

আইরাত;; হাই মাই হেন্ডসাম মাফিয়া সাইকো (একহাত তুলে)

আব্রাহাম;; ড্রামাকুইন একটা।

আব্রাহাম ওপরে উঠে চলে যেতে নিলে আইরাত দৌড়ে আব্রাহামের সামনে এসে হাত দিয়ে পথ আটকে দাঁড়ায়।

আইরাত;; আরে আরে, যাচ্ছো কোথায়?

আইরাত এই প্রথম আব্রাহামকে তুমি বলে সম্বোধন করলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে ভ্রু কুচকে দাঁড়িয়ে আছে।

আইরাত;; আপনি এমন কেন বলুনতো, বউকে কেউ এভাবে একা ফেলে রেখে যায়? (কোমড়ে হাত রেখে)

আব্রাহাম চারিদিকে বিরক্তি নিয়ে একবার চোখ বুলিয়ে আইরাতকে বলে ওঠে।

আব্রাহাম;; কি হচ্ছে এইসব?!

আইরাত;; সাইকোগিরি, (আব্রাহামের কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে) আপনিই না বলতেন যে সমানে সমানে না মিললে চলে না। আর আপনি যেহেতু সাইকো তো আপনার বউকেও তো সাইকো হতে হবে তাই না।

আব্রাহাম;; এটা আবার কি নতুন ড্রামা শুরু করলে তুমি? আর তুমি ভিতরে এলে কি করে বাইরের গার্ড গুলো কিভাবে আসতে দিলো।

আইরাত;; ওহ হো আপনিও না, আপনার কি মনে হয় যে ওদের মতো ছোট খাটো গার্ড আমাকে মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরীকে আটকাতে পারবে। হ্যাঁ মানলাম যে তারা দেখতে বিশাল কিন্তু আমার কাছে ছোটই।

আব্রাহাম;; আলতু-ফালতু বকা বন্ধ করো আর রাস্তা ছাড় ওপরে যাবো। আমি কোন পাগলের সাথে কথা বলতে চাই না।

এই বলেই আব্রাহাম আইরাতের পাশ ঠেলে ওপরে চলে যেতে নিলো। আইরাত আব্রাহামের বাম হাত ধরে থামিয়ে দিলো। আব্রাহাম একবার তার হাতের দিকে তাকিয়ে আবার আইরাতের দিকে তাকালো।

আইরাত;; প্লিজ ক্ষমা করে দিন না আমাকে, আমি বুঝতে পেরেছি আমার ভুল। প্লিজ এভাবে আর দূরে দূরে থাকবেন না।

কথাগুলো বলতে বলতে আইরাতের চোখে পানি জোড় হয়ে গেলো। চোখে পানি দেখে আব্রাহামের বুকে মোচড় দিয়ে উঠলো। পরক্ষনেই আব্রাহাম চোখ সরিয়ে নিলো আইরাতের কাছ থেকে। হাত এক ঝটকায় ছাড়িয়ে নিয়ে ওপরে চলে গেলো। আব্রাহামের পিছু পিছু আইরাতও দৌড়ে ওপরে যেতে থাকলো।

আইরাত;; আব্রাহাম দেখুন প্লিজ এভাবে চলে যাবেন না। সরি তো। অনেক বেশি সরি আর এমন হবে না। আব্রাহাম প্লিজ থামুন আব্রাহাম।

আইরাত আব্রাহামকে ডাকতে ডাকতে তার পিছু ছুটতে লাগে। কিন্তু আব্রাহাম আর কোন কথা না বলে সে তার মতো করে ওপরে যেতে লাগে। আব্রাহাম এক সময় তার রুমের ভিতরেই চলে গেলো। আইরাত আর কোন উপায় না পেয়ে আব্রাহামকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।

আইরাত;; থামতে বলছি না আপনাকে, কথা কেন শুনেন না আপনি বলুন তো, আচ্ছা সরি বলছি তো আর এমন টা হবে না। আর একটা সুযোগ দেওয়া যায় না আমাকে। আব্রাহাম প্লিজ।

আব্রাহাম এবার আইরাতকে ঘুড়িয়ে সামনে এনে দাড় করিয়ে দিলো। আব্রাহাম আইরাতের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে এগোতে থাকে। আইরাতও আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে পিছাতে থাকে। আব্রাহাম যত আইরাতের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আইরাত তত পিছিয়ে যাচ্ছে। এবার আইরাতের কেমন যেন মনে হচ্ছে।

আইরাত;; আআআপনি এএমন ভাভাবে এগিয়ে আসছেন কেকেন?!

আব্রাহাম কোন কথা না বলে লাগাতার আইরাতের দিকে এগিয়েই আসছে, দৃষ্টি তার আইরাতে স্থির। আইরাত মাথা নিচু করে পিছিয়েই যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ আব্রাহামের সামনে এগোনো থেমে যায়। আইরাত তা বুঝতে পেরে আব্রাহামের দিকে তাকায়। আব্রাহাম সাথে সাথে আইরাতের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে ঠাসসস করে দরজা লাগিয়ে দেয়। আব্রাহামের এমন কান্ডে আইরাত পুরো বেআক্কেল হয়ে যায়। পরক্ষনেই আইরাত খেয়াল করে যে আইরাত আব্রাহামের রুমের বাইরে চলে এসেছে। আর আব্রাহাম মূলত তাকে তার রুম থেকে বাইরে বের করার জন্যই এমন করে তার দিকে এগিয়ে আসছিলো। এখন আইরাত বাইরে আসতেই আব্রাহাম ঠাসস করে দরজা লাগিয়ে দিলো। আইরাতের এবার রাগে মাথায় আগুন ধরে গেলো। আইরাত জোড়ে তার দরজায় থাপরাতে লাগে।

আইরাত;; আব্রাহাম এটা কিন্তু মোটেও ঠিক না, আপনি এভাবে আমাকে রুম থেকে বের করে দিতে পারেন না। আব্রাহাম দরজা খুলুন। আব্রাহাম।

আইরাত বেশ বুঝতে পারলো যে আব্রাহাম অনেক রেগে আছে তার থেকে। আইরাত এবার রাগ নিয়ে দরজাতে কিল ঘুষি লাথি যা পারে সব দিতে থাকলো। আইরাত বুঝে গেলো যে আব্রাহাম এখন আর কোন ক্রমেই দরজা খুলবে না।

আইরাত;; আপনি দরজা খুলবেন না তাই তো আচ্ছা ঠিকআছে না খুললেন,, আমিও দেখবো যে আপনি কিভাবে দরজা না খুলে থাকেন। আমি এখান থেকে কোথাও যাবো না এখানেই থাকবো আমি। দেখি আপনি কি করতে পারেন। আপনি ঘাড় তেড়া তো আমিও ঘাড় তেড়ার বউ। আমি এখানেই বসে থাকবো দেখি আপনি কি করতে পারেন, হাহ্।

আইরাত আর কিছুই না বলে ঘরের পাশে থাকা সোফার ওপরে পা গুটিয়ে বসে পরলো। গালে দুহাত দিয়ে মুখ চুপসে বসে আছে সে। আর খানিক পরে পরেই আব্রাহামের দরজার দিকে তাকাচ্ছে। আর আব্রাহাম আইরাতের এই সকল পাগলামো কথা ঘর থেকে শুনছিলো আর চাপা হাসি হাসছিলো। সত্যি বলতে আব্রাহাম কোন রাগই করে নি আইরাতের থেকে কিন্তু সে শুধু দেখতে চায় যে আইরাত আব্রাহামের প্রেমে কতোটুকু পাগলামি করতে পারে আর কি পর্যায়ে যেতে পারে। আব্রাহাম তার পিছনে তাকিয়ে বাকা হেসে আবার ল্যাপটপে কাজ করাতে মন দেয়। সামনেই আইরাতের ইয়ায়ায়ায়া বড়ো এক ছবি রাখা।











❣️❣️চলবে~~~~~

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 46

🖤🥀..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম ওর মতো করে কাজ করেই যাচ্ছে। কাজের ওপর তার গভীর মনোযোগ। আর ওদিকে বসে থাকতে থাকতে আইরাতের কোমড় ব্যাথা হয়ে গেছে। বার বার আইরাত অসস্থি নিয়ে আব্রাহামের ঘরের দিকে তাকাচ্ছে। কিন্তু আব্রাহামের তো বের হওয়ার নামই নেই। অবশেষে আইরাত চিল্লিয়ে বলে ওঠে…

আইরার;; এই যে চৌধুরী শুনছেন, আমি কিন্তু আর বসে থাকতে পারছি না,, পিঠ-কোমড় ব্যাথা হয়ে গেলো আমার। প্লিজ দরজা টা খুলুন না দয়া করে।

______________________

ওপর পাশ থেকে কোন আওয়াজই এলো না। আইরাত আবার মুখ লটকিয়ে বসে রইলো। প্রায় ঘন্টা খানিক পার হয়ে গেলো কিন্তু এবার আইরাতের কোন সাড়াশব্দ নেই। এবার আব্রাহামের খেয়াল হলো যে সময় তো অনেক চলে গিয়েছে আর আইরাত যে পরিমান বকবক করে এতোক্ষণ তো চুপচাপ বসে থাকার মেয়ে ও না তাহলে। আব্রাহাম এবার ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ১ ঘন্টার ওপর হবে আইরাতের কোন কথা কানে আসছে না। এবার আব্রাহাম কপাল কুচকে দরজার সামনে চলে গেলো। একবার ভাবতে লাগলো যে দরজা খুলবে কি খুলবে না। কিন্তু ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এসে এক সময় সে দরজা খুলেই দিলো। দরজা খুলার পর বাইরে কাউকে না দেখতে পেয়ে আব্রাহাম আরো অবাক হলো। কিন্তু নিজের সামনে একটা ব্রাউন কালারের বক্স দেখতে পেলো। কেউ তো এখানে নেই তাহলে এখানে এই বক্স কে রেখে গেলো। এইটা নিশ্চয় আইরাতের কাজ আব্রাহাম তা বুঝতে পেরে একহাত কোমড়ে দিয়ে আরেক হাত দিয়ে কপালের উপরের অংশ স্লাইভ করতে থাকে। তার কেমন যেন সন্দেহ হচ্ছে। আচ্ছা দরজা না খুলার জন্য আইরাত তার ওপর কোন রিভেঞ্চ নিচ্ছে না তো আবার। অনেক ভাবনা-চিন্তার পর আব্রাহাম সেটা খুলে ফেললো। কিন্তু এবার ঘটলো বিপত্তি। আইরাতের রাখা সেই বক্সটি খোলার সাথে সাথেই ফট করে স্প্রিং-এর সাহায্যে
এক ব্যাঙের মাথা ওপরে বেরিয়ে আসে। কিন্তু সেটা আব্রাহামের মুখের কাছে আসতেই আব্রাহাম চট করে তার ডান হাত দিয়ে ব্যাঙের মাথা ধরে ফেলে। এবার সে তার ঘাড় হাল্কা কাত করে তাকিয়ে থাকে। আর ভাবতে থাকে যে আইরাতের মতো পাগল মেয়ে মনে হয় খুব কমই রয়েছে। আব্রাহামের চোখ যায় এবার বক্সের পাশে থাকা একটা সাদা চিরকুটের ওপর। আব্রাহাম ভ্রু উচিয়ে তাকিয়ে থাকে,, চিরকুট টা চোখের সামনে নিয়ে সামনে-পিছনে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে নিলো। তারপর সেটা খুলে দেখে তাতে কালো কালি দিয়ে বেশ সুন্দর করে লেখা “” কি ভেবেছেন, আজ দরজা খুললেন না দেখেই কি পার পেয়ে যাবেন কখনোই না চৌধুরী, এখন তো চলে গেলাম কিন্তু পরে আবার আসবো। এতোদিন আপনি পাগলামি করেছেন আমি শুধু দেখে গেছি আর এখন আমার পালা। আমি পাগলামি করবো আর আপনি দেখবেন। পিকচার তো সবে শুরু আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া আর হ্যাঁ চৌধুরী আরো একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা I Love You ❤️ ভালোবাসি চৌধুরী আপনাকে””।

চিঠি টা পরা মাত্রই আব্রাহামের চোখে-মুখে হাসির ঝলক ফুটে ওঠে। আব্রাহামের মুখে তার অজান্তেই হাসির রেশ ফুটে ওঠে। আব্রাহাম কি বলবে ভেবে পায় না। কিন্তু আব্রাহাম আবার তার হাসি থামিয়ে এক নয়নে চিঠিটার দিকে তাকিয়ে থাকে। আইরাত এই প্রথম থাকে ভালোবাসি বলছে যদিও আব্রাহাম আগে থেকেই জানতো যে আইরাত তাকে ভালোবাসে কিন্তু নিজের মুখ ফুটে কখনোই বলে ওঠা হয়নি। কিন্তু আজ আইরাত তাও বলে দিয়েছে। আব্রাহাম তার বাম হাত দিয়ে তার মাথার পিছনের চুলগুলো তে ঝারা দেয়। বাইরে থেকে সেই ব্যাঙের মাথা আর চিঠি তা নিয়ে ঘরে এসে গেলো। টেবিলের ওপরে সেই বক্স টা রেখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে আবার হুট করেই হেসে দেয়। এবার সেখান থেকে উঠে গিয়ে করিডরে এসে দাঁড়ায়। মুখ থেকে তার যেন হাসি সরার নামই নিচ্ছে না। মুচকি হাসি লেগেই আছে তার ঠোঁটের ভাজে।



অয়ন;; নিপা তোমরা কোথায়, আমি আর নিরব তোমাদের জন্য বসে অপেক্ষা করছি প্লিজ জলদি এসে পরো!!

নিপা;; আরে এইতো এসে পরেছি রাস্তায় আছি আর মাত্র ৫ মিনিট।

অয়ন;; আচ্ছা মানে আসলে রাত্রি কোথায়?

নিপা;; আহা মজনু আছে আছে রাত্রিও আছে ওকে নিয়েই আসছি।

অয়ন;; আরে ধুর কিযে বলো না তেমন কিছুই না।

নিপা;; এই একদম চুপ,, দুই শয়তানকেই বেশ ভালো করে চেনা আছে। আর সত্যি টা আমরা সবাই জানি। এখন কেবল মুখ দিয়ে বলা বাকি একে ওপরকে।

অয়ন;; সেটাও বেশি দেরি নেই।

নিপা;; হাহাহাহা, আচ্ছা রে ভাই আসছি আমরা কেমন এখন রাখি।

অয়ন;; ওকে বইনা।

নিপার সাথে কথা বলে অয়ন ফোন কেটে দেয়। নিপা আর রাত্রি যাচ্ছে তাদের সাথে দেখা করতেই। বেশ খানিক সময় পর তারা তাদের জায়গায় এসে গেলো। তারা মূলত একটা রেস্তোরাঁয়। তারা আসতেই নিরব নিপা কে দেখে এগিয়ে গেলো। এবং অয়ন সেখানে টেবিলেই দাঁড়িয়ে গেলো রাত্রি কে দেখে। তারা এসে টেবিলে বসে পরলো।

নিরব;; তো আসতে কোন কষ্ট হয়নি তো?

রাত্রি;; না ভাইয়া একদম না।

নিপা;; তো কি খবর তোমাদের?

নিরব;; অনেক ভালো, তোমরা বলো কি খবর?

রাত্রি;; বেশ ভালো, আর সামনে তো আরো ভালো হতে চলেছে কেননা সামনে আপনাদের বিয়ে বলে কথা।

নিরব;; তা আর বলতে।

নিপা;; আরে অয়ন তুমি কিছু বলছ না কেন, এতো চুপচাপ আজ?!

অয়ন;; ___________(এক চোখে রাত্রির দিকে তাকিয়েই আছে)

নিপা;; অয়ন, অয়ন।

অয়ন;; আব.. হ্যাঁ হ্যাঁ হুমম নিপা বলো।

নিরব;; কোথায় হারিয়ে গেলি ভাই!

অয়ন;; আরে নাহ নাহ কোথাও না।

রাত্রি;; গিয়ে দেখো কোন জানি গফ এর কথা ভাবছে।

অয়ন;; এইইই একদম উল্টো পাল্টা কথা বকবে না আমার ওইসব গফ টফ নেই।

রাত্রি;; তাহলে এতো ভাবনা কিসের হুমম বলো!

অয়ন;; সব তোমাকে কেন বলবো?

রাত্রি;; না বললে আমার শুনার জন্য বয়েই গেছে।

নিপা;; এই নাও আবার শুরু এইই থাম।

রাত্রি;; আচ্ছা ভাইয়া বিয়ের প্লেন কি বলেন…!

নিরব;; আগামীকাল আমরা আবির আহমেদ আংকেলের বাসায় যাবো।

নিপা;; মানে আব্রাহাম ভাইয়ের বাড়ি!

নিরব;; হুমমম ওয়েট আইরাত কোথায়? আসেনি আজ?

রাত্রি;; ভাইয়া সে আব্রাহাম ভাইয়ের কাছেই গেছে।

অয়ন;; কিহ দাভাইয়ের কাছে!?

রাত্রি;; হুমমম আর নিরব ভাইয়া আপনি তো তাদের পুরো বেপার টা জানেনই নতুন করে আর বলার কিছুই নেই।

নিরব;; হ্যাঁ তা তো জানি। এখন শুধু আব্রাহাম ভাইয়ের রাজি হলেই হলো।

নিপা;; আমার মনে হয় না আব্রাহাম ভাই এতো তাড়াতাড়ি রাজি হবে। আইরাতকে ভাইয়া মাত্রার থেকে বেশি ভালোবাসে জানি কিন্তু দুজনই তো আর বাকা কম না। দুটোই সমান।

অয়ন;; যাই হোক আমি এখন শুধু এইটাই চাই যে আমার দাভাই আর বউমনি একসাথে থাক ভালো থাক।

রাত্রি;; আয় হায়ায়ায় শেষে কিনা আমার ক্রাশই আমার বোনের বিয়ে করা বর বের হলো,, হায় আমার ফাটা কপাল ( কপালে হাত দিয়ে)

অয়ন;; এই মেয়ে তুমি কি বললে!

রাত্রি;; কোথায় কি বললাম!

অয়ন;; আমার দাভাই তোমার ক্রাশ, লজ্জা করে না একজন বিবাহিত ছেলের ওপর ক্রাশ খেতে।

রাত্রি;; আরে আমি কি তখন জানতাম নাকি!

অয়ন;; হয়েছে হয়েছে।

নিপা;; আল্লাহর ওয়াস্তে তোরা থাম প্লিজ। তোদের ঝগড়াতে জীবন যাবো।

রাত্রি;; ধুর খিদে পেয়ে গেলো এই বাদরের চক্করে। নিরব ভাইয়া…

নিরব;; জ্বি বলেন শালিকা।

রাত্রি;; এখন কি খাবার অর্ডার দিবেন নাকি না খাইয়ে মারবেন!?

নিরব;; এমা ছি ছি এগুলো কি বলো আমি এক্ষুনি বলছি।

রাত্রির এমন পাগলামো কথাতে অয়ন মুচকি হেসে দেয়। তারপর তারা খেতে থাকে আর জমিয়ে আড্ডা দেয়। তারপর বের হয়ে পরে যার যার বাড়ির উদ্দেশ্যে। যাওয়ার আগে নিরব নিপা কে ছাড়তে না চাইলেও রাত্রি আর অয়নের চাপা বাজিতে ছেড়ে দেয়। আল্লাহ জানেন বিয়ের দিন এদের জন্য পাত্র আর পাত্রী পক্ষের কি হাল হয় তার ওপর আইরাত বোম🔥 তো আছেই।

আইরাত তার বাসায় গিয়ে গরম গরম কফি খাচ্ছে আর ভাবছে যে কাল কি করা যায়। নিপা আর রাত্রি তাদের বলে দিয়েছে যে তারা কাল চৌধুরী ভবনে যাচ্ছে। আর আইরার তো আব্রাহামকে চৌধুরী ছাড়া এখন ডাকেই না। আইরাত ফ্রেশ হয়ে ভেজা চুলে বার বার হাত দিচ্ছে আর আব্রাহামের করা সেইসব পাগলামির কথা ভাবছে। আগে কতো সাইকোই না ছিলো কিন্তু এখন একদম গোমড়া মুখো। আচ্ছা বেপার নাহ বেপার নাহ এখন নিজের করা পাগলামি তে তার চৌধুরীকে পাগল করবে। আইরাত এই সব কিছু নিজের মনে ভাবছে আর হেসে যাচ্ছে। তখনই রাত্রি আসে দেখে যে আইরাত এভাবে নিজের মনে মনেই হেসে যাচ্ছে। রাত্রি তা দেখে নিজের গলা খাকাড়ি দেয়। আইরাত নিজের পাশে তাকিয়ে দেখে রাত্রি দাঁড়িয়ে আছে তা দেখে আইরাত রাত্রির হাত ধরে টেনে এনে নিজের পাশ ঘেষে বসিয়ে দেয়।

রাত্রি;; তো মনে মনে এতো কি মনকলা খাওয়া হচ্ছে শুনি?!

আইরাত;; আরে ধুর কিছু না।

রাত্রি;; আব্রাহাম ভাইয়ের কথা বুঝি!

আইরাত;; হুমমম,, জানি না কি হবে আব্রাহাম অনেক বেশিই রাগ করে আছে আমার ওপর। কথা পর্যন্ত ঠিক ভাবে বলে না। (মন খারাপ করে)

রাত্রি;; আরে বেবিজান মন খারাপ করিস না তো। যেখানে ভালোবাসা থাকে সেখানে রাগ, অভিমান, তিক্ততা সবই থাকে কিন্তু এই সামান্য জিনিস গুলো না ভালোবাসার কাছে খুবই ঠুনকো। আব্রাহাম ভাই তোকে পাগলের মতো ভালোবাসে নিজের থেকেও বেশি আর কি কিছু দিনের জন্য একটু রাগ করলো আর তাই তুই এতে এতো মন খারাপ করে রেখেছিস। চেয়ার আপ বেবি।

আইরাত;; কিন্তু সবই তো আমার জন্যই হয়েছে,, আমিই আব্রাহামকে সবসময় ভুল বুঝে গেছি।

নিপা;; নাহ একদম না, তোর দিক থেকে ভাব, তোর জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো এই একই কাজ করতো। কারণ তোর ওপর দিয়ে যা গেছে তা অনেক কিছু। তুইও তোর দিক দিয়ে ঠিক আছিস। নিজের বাড়ি থেকে তুলে আনা, বাবা-মার কাছ থেকে দূরে থাকা, বিয়ে করা আবার তুই ভেবেছিলি আব্রাহাম ভাই খুন করেছে তোর বাবা মাকে। যদিও তা তোর ভুল ধারনা ছিলো। মানলাম আব্রাহাম ভাই তোর ওপর অন্যায় করেছে কিন্তু ভাই তার শাস্তি পেয়ে গেছে আর তা হচ্ছে তোর থেকে দু-দুবছর দূরে থাকা। ভাই এতো টা দিনের জন্য তোর থেকে দূরে থেকেছিলো যাকে সে নিজের অস্তিত্ব ভাবতো তার কাছ থেকে দূরে থেকেছে যা আব্রাহাম ভাইয়ের জন্য যথেষ্ট শাস্তি ছিলো। হ্যাঁ অবশ্য ভুল তোরও ছিলো কিন্তু তুই তা বুঝতে পেরেছিস আর এখন সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। তুই শুধু তোর সাইকো বরের সাইকো বউ হয়ে থাক ( পাশের রুম থেকে এসে আইরাতের পাশে বসে কথা গুলো বলে ওঠলো)

আইরাত;; অবশ্যই তা আর বলতে।

রাত্রি;; কিন্তু লাড্ডু তো এখন আমাদের নিপুর মনে ফুটছে কারণ সামনে তো তার বিয়ে।

নিপা;; ধুর এভাবে কি বলছিস।

আইরাত;; কেন লজ্জা লাগছে বুঝি। বাসর ঘরের কথা চিন্তা করে।

রাত্রি;; হ্যাঁ তাই হবে আমি সিওর।

নিপা;; কি বললি হারামিরা দাড়া দেখাচ্ছি মজা।

আইরাত-রাত্রি;; দৌড়া, দৌড়া।

নিপাকে এভাবে কথা বলে জ্বালানির জন্য নিপা আইরাত আর রাত্রির পিছনে বালিশ নিয়ে দৌড়াতে লাগলো আর তারা ছুটতে লাগলো এদিক ওদিক। শুরু হলো তাদের তিনজনের মাঝে খুনশুটি।










🌿🌿চলবে~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে