Gangstar In Love Part-43+44

0
3631

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 43

🧡🍂..
..
..
..
..
..

আইরাতকে তারা টেনে হিচড়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে যেতে থাকে, আইরাত তাদের কাছ থেকে ছুটার জন্য প্রাণপন চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কিন্তু কোন লাভ হয় না। আব্রাহাম তাদের গাড়ির পিছনে ঝড়ের গতিতে ছুটে চলেছে। আব্রাহামের আর বুঝতে বাকি নেই যে যারা আইরাতকে তুলে নিয়ে গেছে তারা দুলালেরই লোক ছিলো। রাগে কটমট করছে সে। কিন্তু তাদের গাড়ি বেশ বাকা ভাবে চলছে এলোমেলো ভাবে। আরো বেশ কিছুক্ষন ড্রাইভ করার পর তাদের গাড়ি উল্টো ইউ ট্রার্ন নিয়ে চলে গেলো। এতে করে তাদের গাড়ি আব্রাহামের চোখের আড়াল হয়ে গেলো। আব্রাহামের মাথায় এখন আগুন জ্বলছে। তবে বেশ ভালো করেই জানে যে এই গাড়ি কোথায় গিয়েছে তা হলো “বাগানভিলা”। কেননা দুলালের সব অপকর্ম সেই জায়গাতেই হয়। আব্রাহাম সেই জায়গার রাস্তা ধরলো। হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠলে কানে থাকা ব্লুটুথ অন করে কথা বলতে থাকে আব্রাহাম।

আইরাত;; আহহ কি করছেন কি আপনারা প্লিজ ছাড়ুন আমাকে, এভাবে তুলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন?

দুলাল;; আমার কাছে জানেমান।

আইরাত;; দুলাল, আপনি? (অবাক হয়ে)

দুলাল;; হ্যাঁ আমি, কেন তুমি কাকে আশা করেছিলে!

আইরাত;; আপনি আমাকে এভাবে ধরে আনলেন কেন, যেতে দিন আমাকে প্লিজ।

দুলাল;; তা আর হচ্ছে না জানেমান।

আইরাত;; ছিহ, আপনি আমার বাবার কতো বিশ্বাসী একজন ছিলেন আপনি কোনোদিন এমন কাজও করবেন তা আমি ভাবতেও পারিনি।

দুলাল;; আমি শুধু এই কাজ না আরো অনেক কিছুই করেছি।

আইরাত;; ছাড়ুন আমাকে।

দুলাল;; কোন কথা বলবি না চুপ করে বোস।

দুলালের ধমকে আইরাত ভয় পেয়ে গেলো, চুপ হয়ে গেলো সে।

ওদিকে নিপা আর রাত্রি চিন্তায় চিন্তায় মরে যাচ্ছে, আইরাত কখনো তাদের না বলে কোথাও যায় না কিন্তু আজ গিয়েছে আর অনেক সময় পার হয়ে গিয়েছে কিন্তু তার আর আসার নাম নেই। আবার ফোন করলে ফোনও ধরছে না। এখন বেশ চিন্তা হচ্ছে তাদের। রাত্রি আর কোন উপায় না পেয়ে অয়নে কে ফোন দিলো। রাত্রির call দেখে অয়ন মুচকি হেসে রিসিভ করে।

অয়ন;; হ্যালো রাত্রি,,

রাত্রি;; অয়ন, অয়ন (বেশ ঘাবড়ে গিয়ে)

অয়ন;; রাত্রি কি হয়েছে তুমি এমন করছ কেন সবকিছু ঠিক আছে তো?

রাত্রি;; অয়ন, আইরু

অয়ন;; বউমনি (ফিসফিস করে)
কি হয়েছে আইরাতের?

রাত্রি;; আইরাত সেই সকাল বেলা বাসা থেকে বের হয়েছে কিন্তু এখনো বাসায় আসার কোন নাম গন্ধ নেই, ফোনও অফ দেখাচ্ছে খুব চিন্তা হচ্ছে।

অয়ন;; আচ্ছা শুনো আমি আসছি প্লিজ তোমরা চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

রাত্রি;; আচ্ছা।

অয়ন আর কিছু না বলে ফোন কেটে দিয়ে সোজা রাত্রিদের ফ্লেটে চলে যায়। গিয়ে দেখে নিপা চোখ মুখ ফুলিয়ে রেখেছে কান্না করতে করতে,, রাত্রিও অনেক টাই ভয় পেয়ে আছে। অয়নকে দেখে রাত্রি দৌড়ে তার কাছে যায়।

রাত্রি;; অয়ন তুমি এসেছ,, দেখো না আইরু…

অয়ন;; রাত্রি প্লিজ কুল ডাউন,, কিছুই হবে না এভাবে ভেংে পরো না। এতো তাড়াতাড়ি এভাবে ভয় পেলে চলে। তুমি প্লিজ আ……

অয়নের কথার মাঝেই তার ফোন বেজে ওঠে। তাকিয়ে দেখে আব্রাহামের ফোন, তড়িঘড়ি করে ফোন ধরতেই ওপর পাশ থেকে আব্রাহাম রেগে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; অয়ন, ৫ মিনিটের মধ্যে দুলালের “বাগানভিলা” তে চলে আয়। Move fast….

অয়ন;; আসছি ভাই।

আব্রাহামের এমন গর্জে কথা বলাতে অয়ন বেশ বুঝতে পারলো যে আব্রাহাম জানে আইরাত কোথায় আছে। অয়ন তাড়াতাড়ি করে ফোন কেটে রাত্রি কে বলে ওঠলো…

অয়ন;; রাত্রি আমি যাচ্ছি ওকে, আর তুমি প্লিজ ভয় পেয় না, আইরাতকে নিয়ে আসবো আমরা। নিজের এবং নিপার খেয়াল রেখো বায়।

রাত্রি;; কিন্তু তুমি এভাবে কো……

রাত্রির কথা বলার আগেই অয়ন দ্রুত পায়ে নেমে গেলো। রাত্রি গিয়ে নিপার পাশে বসে পড়লো।

দুলাল কিছুক্ষণ পরই তার আস্থানায় পৌঁছে গেলো। আইরাতের একহাত ধরে টেনে গাড়ি থেকে বাইরে বের করে দিলো। আইরাত এখনো ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে কিন্তু দুলাল তাকে জোর করে নিয়েই যাচ্ছে। আইরাতকে এক ঘরের ভিতরে এনে ধাক্কা দেয়। আইরাত তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে ধরে কিন্তু আবার কিছু একটা হাত দিয়ে ধরে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। ঘর বেশ অন্ধকার, অনেক ধুলোবালি দিয়ে ভরা, অন্ধকার ঘরের মাঝখানে হলুদ এক বাতি জ্বলছে। আইরাত এইসব কিছুই দেখে নাক ছিটকালো। তখন দুলাল পিছন থেকে এসে আইরাতের হাত ধরে টেনে নিয়ে এক চেয়ারে বসিয়ে দেয়। আইরাত এখন অনেক চিল্লাচ্ছে ছাড়া পাওয়ার জন্য কিন্তু দুলালের ধমকে আবার চুপ হয়ে যায়, চোখ দিয়ে গড়িয়ে পরছে অঝোড় ধারায় পানি। চেয়ারের সাথে বেশ শক্ত করেই আইরাতকে বেধে দেওয়া হয়। বাধার পর দুলাল আইরাতের দিকে কিছুটা ঝুকে বসে আইরাত তীব্র ঘৃণা আর রাগ নিয়ে অন্যপাশে তাকায়। তা দেখে দুলাল হেসে দেয়। কিছুদুর গিয়ে দুলাল বলে ওঠে….

দুলাল;; এভাবে নাক ছিটকে লাভ নেই, এখন থেকে তোমাকে আমার সাথেই থাকতে হবে। একমাত্র তোমাকে পাবার জন্য, একমাত্র তোমাকে পাবার জন্যই এতোদিন এইসব নাটক করা তোমার বাবার সাথে। এতোদিন বিশ্বাসী ব্যাক্তি হওয়ার ভন্ডামি করে চলেছি আমি। আগে যদি আমি জানতাম যে আশরাফুল আহমেদ চৌধুরীর এতো সুন্দরী একটা মেয়ে আছে তাহলে আমি আরো আগেই সব কাহানি শেষ করে দিতাম।

আইরাত;; মা মামানে!

দুলাল;; ওহ হো জানেমান তুমি এখনো মানেই বুঝতে পারো নি আমার কথার,, আচ্ছা বেপার নাহ আমি আছি তো বুঝিয়ে দিচ্ছি।

দুলালের এমন গা ছাড়া কথায় আইরাত কপাল কুচকে তার দিকে তাকায়। দুলাল আবার বলতে শুরু করে।

দুলাল;; তোমার প্রিয় পাপা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং আম্মু আতিয়া আহমেদ চৌধুরী তাদের আর কেউ না বরং এই আমি মেরেছি আমি।

দুলালের কথায় আইরাতের মাথায় যেন পুরো আকাশ ভেংে পরে,, অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে থাকে আইরাত, যেন চোখের পলক ফেলতেও ভুলে গেছে সে। আইরাত হড়বড়িয়ে বলে ওঠে…

আইরাত;; কি বববলেছেন আআপনি কি কককরে…

দুলাল;; হ্যাঁ, তোমার পাপা-আম্মু কে আমিই মেরেছি এই আমার নিজ হাত দিয়ে।

দুলাল হুট করেই একদম আইরাতের কাছে এসে পরে আইরাত সাথে সাথে মাথা নিচু করে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

দুলাল;; দেখো, দেখো এই যে নিজ হাত দিয়েই তাদের খুন করেছি আমি। কিসের জন্য জানো জানেমান শুধু তোমাকে পাওয়ার জন্য আর সম্পত্তির জন্য কিন্তু সম্পত্তির ওপর তেমন লোভ না থাকলেও তুমিই ছিলে আমার সবচেয়ে বড়ো লোভ। আশরাফুল আহমেদকে আমি প্রথমে ভালোয় ভালোয় সম্পত্তির পেপারে সাইন করতে বলেছিলাম কিন্তু তিনি করেন নি। আমি এটাও বলেছিলাম যে আমাকে যেন তার একমাত্র মেয়ের সাথে বিয়ে দেয় কিন্তু তার বদলে তিনি কি করেছেন জানো, আমাকে কুকুরের মতো বেধরক মেরেছেন। সেইদিন, সেইদিন থেকেই আমার মনের মধ্যে জেদ আরো বেড়ে যায় যে দুনিয়া এদিক থেকে ওদিক হয়ে গেলেও তোমাকে আমি আমার করেই ছাড়বো কিন্তু না তা আর হলো কই। কোথা থেকে যেন এই আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী নামে লোকটা উড়ে এসে জুড়ে বসলো। তারপর তোমাকে তুলে নিয়ে গেলো বিয়েও হয়ে গেলো তোমাদের। আমার মনে হলো তোমাকে আমি হারিয়ে ফেলেছি, পাগল পাগল হয়ে গেলাম আমি। কিন্তু আমার কাছে আরো একটা চান্স ছিলো আর তা কি জানো জানেমান। তোমার সেই ভুল ধারণা যে তোমার বাবা-মাকে আব্রাহাম চৌধুরী মেরেছে। আসলে তা ভুল আব্রাহাম কখনোই কিছুই করেনি। আব্রাহাম নির্দোস। তোমার So called husband নির্দোস। তবে আইরাত তুমি আব্রাহামেরও সম্পূর্ণ পরিচয় জানো না। তা কি জানো?! আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী একজন #আমেরিকান গ্রেট মাফিয়া। অল আন্ডারগ্রাউন্ড প্রায় তার হাতের মুঠোয় থাকে। একজন মাফিয়া তোমার স্বামী। আর আমি যখন তোমার বাবা-মাকে পাশান ভাবে জানে মেরে দেই তার খানিক বাদেই আব্রাহাম সেখানে পৌঁছায় এবং গিয়ে তাদের লাশ খুজে পায়। তোমার পাপা আশরাফুল চৌধুরীর পেটে বাজে ভাবে ছুরি ঢুকে ছিলো তাই তা আব্রাহাম তার হাত দিয়ে তুলে আনতে যায় তখনই রক্তে তার চোখ-মুখ একাকার হয়ে যায়,, হাতে ছুরি থাকে, শার্টে লেগে থাকে তরতাজা রক্ত ব্যাস পারফেক্ট একজন খুনির প্রতিবিম্ব হওয়ার জন্য। এইটুকুই কাফি আর তখন তুমিও চলে এলে। এইবার জমলো খেলা। আব্রাহামের তোমাকে তুলে নিয়ে জোর করে বিয়ে করার জন্য, তোমাকে তোমার বাবা-মা-ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে রাখার জন্য তুমি তো আব্রাহামের ওপর আগে থেকেই ক্ষেপে ছিলে তার ওপর ওইদিন তোমার বাবা-মার লাশের পাশে আব্রাহামকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে ভেবে নিলে যে সেই তাদের খুনি। পরবর্তীতে আব্রাহামের ওপর গুলিও পর্যন্ত তুমি চালালে। যখন আমি এইসব শুনলাম তখন ভাবলাম যে যাক তাহলে তোমার আমার পথের মাঝের কাটা আমার বিনা পরিশ্রমে সরে গেছে কিন্তু না আমি আবারও ভুল ছিলাম (রেগে দেয়ালে চড় দিয়ে)। আব্রাহামকে গুলি করার পর নাকি, পর নাকি আর তোমাকেও কোথাও পাওয়া যাচ্ছে না এই তো আমার প্রাণে পানি থাকলো না তার কারণ আমি তো শুধু তোমাকেই নিজের করে পেতে চেয়েছিলাম। এখন যদি তুমিও আমাকে ছেড়ে চলে যাও তাহলে কেমন হলো। কারণ তুমি শুধু আমার, শুধু আমার। তুমি যদি আমার না হও তাহলে কারোরই হতে পারবে না। আমি জানি না কেন তবে আমি আমার মনকে কোন ভাবেই বুঝাতে পারছিলাম না যে তুমি আর নেই। এর জন্য আমি পুরো ১টা বছর শহরে তন্নতন্ন করে তোমাকে খুজে গিয়েছি। কিন্তু ফলাফন ছিলো শূন্য। কিন্তু একদিন, একদিন আমার এক লোক বাইরে তোমাকে দেখতে পায় যা আমি জেনে যাই৷ আবার আমার আশার আলো ফুটে ওঠে। আবার আমি তোমাকে খোঁজার জন্য রাতদিন এক করি। পেয়েও যাই। কিন্তু ওইযে ওই আপদ টা আব্রাহাম ওই আবার এসে আমার রাস্তা তে বাধ সাধলো। কিন্তু আজ হাহাহা, আজ আর তা হয়নি জানেমান আজ আমি সুযোগ বুঝে তোমাকে তুলে এনেছি আমার কাছে। (অট্টহাসি তে ফেটে পরে)। এবার, এবার তোমাকে আমার হতে আর কেউ আটকাতে পারবে না আর কেউ না, তুমি আমার আইরাত তুমি আমার।

দুলালের কথায় আইরাতের পুরো দুলিয়া ঘুরে গেলো। সে সপ্নেও ভাবেনি যে এমন কিছু একটা হবে তার সাথে। তাহলে, তাহলে আব্রাহাম তাকে এতোদিন যা যা বলে এসেছে তার সবকিছুই ঠিক ছিলো, সত্য ছিলো। আব্রাহাম বারবার আইরাতকে বলে গেছে যে সে কিছুই করে নি কিন্তু আইরাত কখনোই আব্রাহামকে বুঝে উঠতে পারেনি, আসলে আইরাত তাকে বুঝতে চায়নি। আর আজ যখন সকল সত্য আইরাতের চোখের সামনে এলো তখন সে নিজের ভুল বুঝতে পারলো। ঠিক কতটা অন্যায় করেছে সে আব্রাহামের ওপর তা আজ আইরাত হারে হারে টের পাচ্ছে। বেচেঁ থাকার ইচ্ছেটাই কেমন যেন মরে গেছে আইরাতের। নিজের ওপর নিজেরই এখন অস্বাভাবিক রাগ হচ্ছে তার। কেন আব্রাহামকে ভুল বুঝলো তার কথার কোন মূল্য দিলনা আইরাত, আর আজ এর জন্য আইরাতকে আফসস করতে হচ্ছে। দুলালের দিকে শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আইরাত। গলা দিয়ে কোন কথা বের হচ্ছে না,, এক বড়ো আঘাত পেয়েছে সে। সত্য জানার পর ভিতর থেকে এক ধাক্কা খেয়েছে সে যার ফলে আর কোন কথাই গলা দিয়ে বেরুচ্ছে না। সবকিছু চারিপাশে কেমন যেন থমকে গেছে। নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারছে না আইরাত।

আইরাত;; জানোয়ার, ছোট লোক। তুই কি ভেবেছিস আমাকে এভাবে তুলে আনলেই সবকিছু তুই পেয়ে গেলি নাহ ভুল তুই। আমি জানি আব্রাহাম এখানে আসবে, আমাকে একা এভাবে ফেলে আব্রাহাম কোথাও যাবে না। না ই আমি কখনো তোর ছিলাম আর না ই কখনো হবো। এই ভুল ধারণা তুই যত তাড়াতাড়ি তোর মন থেকে বের করে দিবি ততই তোর পক্ষে ভালো হবে। আর শুনে রাখ তোর মতো জানোয়ারকে আমি কেন পৃথিবীর কোন মেয়েই ভালোবাসতে পারবে না।

আইরাতের এমন কথায় দুলাল অনেক রেগে গেলো। তার পাশে কাচের কিছু বোতল পরে ছিলো তা তুলে সজোড়ে ঢিল মারলো। আইরাত তা দেখে চোখ বন্ধ করে নিলো। দুলাল আইরাতের দিকে তেড়ে এসে বলল…

দুলাল;; জানেমান অনেক বেশিই বকবক করো তুমি এবার নিজের মুখটা একটু বন্ধ রাখো।

এই বলে দুলাল আইরাতের মুখ বেধে দিলো। আইরাত অনেক চেচাচ্ছে কিন্তু কোন কিছুই আর শোনা যাচ্ছে না মুখ বাধার ফলে। দুলাল আইরাতের মুখ বেধে দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো ঠিক তখনই ঘরের মাঝে থাকা বাতি টা ঠাসসস করে ফেটে গেলো। সজোড়ে এক আওয়াজ হলো। এতক্ষন যত টুকু আলোর দেখা ছিলো বাতি ফেটে যাওয়াতে সেটুকুও আর থাকলো না। পুরো ঘর অন্ধকার, পিনপতন নীরবতা বিরাজ করছে। এবার এক কন্ঠস্বর ভেসে এলো…

আব্রাহাম;; “যদি কিছু মন-প্রাণ দিয়ে চাস এবং পাওয়ার চেষ্টা করিস তাহলে তা তুই একদিন না একদিন ঠিকই পাবি কিন্তু অবশ্যই সেটা বৈধ হতে হবে”
কিন্তু দুলাল তুই পাসনি কারণ কি জানিস সেটা অবৈধ ছিলো, যার ওপর তোর কোনপ্রকার কোন অধিকার না ছিলো আর না আছে। আইরাত আমার বিয়ে করা বউ তার দিকে তোর কুনজর পরেছে। আমি তোকে আগেও অনেক বার সাবধান করেছি, তোর পাঠানো সব কুকুরদেরও বলেছি যে আমার আইরাতের কাছ থেকে একশ হাত দূরে থাকবি কিন্তু তোরা থাকিস নি। ওইযে একটা কথা আছে না “লাতো কে ভুত বাতো ছে নেহি মানতে” It’s like that.. ভেবেছিলাম তোর মতো ক্ষুদ্র কীটকে ওয়ার্নিং দিলেই চলে যাবে কিন্তু না তুই তো এবার তোর ওকাদ এবং যোগ্যতার বাইরে চলে গিয়েছিস,, তুই তোর লিমিট ক্রস করে ফেলেছিস। এবার তোকে মরতে হবে।

আব্রাহাম এই কথা গুলো অন্ধকারে থেকেই বলছিলো। আর ঘরের সেই বাতিটা আব্রাহামই গুলি করে ফাটিয়ে দিয়েছিলো। আব্রাহামের কন্ঠ শুনে আইরাতের প্রাণে প্রাণ চলে এলো। দুলাল শুধু এদিক ওদিক খুজে চলেছে আব্রাহামকে।

দুলাল;; বাহহ এখন তো দেখি লাইলির মজনুও এসে পরেছে। তো অন্ধকারে কেন সাহস থাকলে সামনে এসে কথা বল।

দুলালের কথায় আব্রাহাম কিছু বললো না। এবার ঘরের চারপাশে আলো জ্বলে উঠলো। সবকিছুই এখন পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। অনেকক্ষন অন্ধকারে থাকায় হুট করেই চারিদিকে এভাবে আলো জ্বলে ওঠাতে আইরাত চোখ মুখ কুচকে ফেললো। দুলাল শুধু অবাক হয়ে তার চারদিকে আব্রাহামকে খুঁজে যাচ্ছে। আব্রাহাম তখন দুলালের পিছন দিক থেকে ডাক দিলো…

আব্রাহাম;; ওদিকে কি দেখছিস এদিকে দেখ, আমি এখানে।

দুলাল আব্রাহামের দিকে তাকালো। দেখলো যে আব্রাহামের কোন হেলদুল নেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তা দেখে দুলাল বলে ওঠে৷

দুলাল;; ভালোভাবে বলছি চলে যা।

আব্রাহাম দুলালের কথা শুনে বাকা হাসি হাসে।

আব্রাহাম;; দেখ, লাস্টবারের মতো বলছি আইরাতকে ছেড়ে দে, তোর সাথে আমার কোন শত্রুতা নেই অযথা শত্রুতার হাত বাড়িয়ে নিজের মরণ নিজে ডেকে আনিস না।

দুলাল;; হাহা, মামার বাড়ির আবদার নাকি। আইরাত শুধু আম….

দুলাল বাকি কিছু বলতে পারলো না তার আগেই আব্রাহাম দুলালের বুকে জোরে এক লাথি দিলো। দুলাল তা সামলাতে না পেরে পিছনে থাকা দেওয়ালের সাথে বারি খেলো। এতে দেওয়ালে থাকা চকচকে কাচগুলো একদম দুলালের বুকে পেটে পিঠে ঢুকে গেলো,, শরীরের এপাশ-ওপাশ হয়ে গেলো। দুলালের মুখ দিয়ে খানিক রক্তও বের হয়ে পরলো। দুলাল আব্রাহামের দিকে আবার কোন রকমে এগিয়ে যেতে ধরলে আব্রাহাম এবার দুলালের শার্টের কলার ধরে আব্রাহামের মাথা দিয়ে তার মাথায় সমস্ত শক্তি দিয়ে আঘাত করে। এতে দুলালের দিন-দুনিয়া সব অন্ধকার হয়ে গেলো। মাথা ফেটে গেছে তার। মাথার চিপ বেয়ে রক্ত ধারা বয়ে যেতে লাগলো। এবার আব্রাহাম তাকে ধাক্কা দিয়ে মাটিয়ে ফেলে দিলো। আব্রাহাম তার বুকের ওপর তার পা দিয়ে চাপ দিয়ে ধরে রেখে দিলো। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো একটা লম্বা লোহার শিক রাখা, এক থাবাতে সেটা আব্রাহাম তার হাতে নিয়ে নিলো। হাতে নিয়ে দুলালের একদম বুকের বাম পাশ বরাবর ঢুকিয়ে দিলো। প্রচন্ডভাবে চিৎকার দিয়ে উঠলো সে। রক্ত ছিটে এলো। সারাঘরে বয়ে গেলো রক্তের বন্যা। দুলাল গলা কাটা মুরগির মতো ছটফট করছে। আব্রাহাম সেভাবেই দুলালের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিন্তু হঠাৎ করেই এবার তার মাথায় আইরাতের খেয়াল আসে। সে ঘাড় বাকিয়ে আইরাতের দিকে তাকায়। আইরাত যেন পাথর হয়ে গেছে। তার মধ্যে আদৌ প্রাণ নামক কিছু আছে কিনা তা বুঝা বড়ো দায়। ফাটা চোখে আব্রাহামের দিকে তাকিয়ে আছে। আইরাত জানে যে আব্রাহামের রাগ বরাবরই একটু বেশি কিন্তু আব্রাহামের এই রুপ, এই রুপ যেন আইরাতের কল্পনারও বাইরে ছিলো। আইরাত কখনো ভাবেনি যে আব্রাহাম তার সামনে কোনদিন এইভাবেও আসবে। দুলাল যেভাবে আইরাতকে তুলে নিয়ে এসেছিল তাতে আইরাত ভয় পেয়েছিলো। কিন্তু পরে যখন আব্রাহাম এলো যেন আইরাত নিজের জীবন ফিরে পেয়েছে এমন মনে হলো। কিন্তু এখন, এখন আইরাতের উল্টো আব্রাহাম কে দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। ভয়ে সারা শরীর থরথর করে কাপছে আইরাতের। মুখ বন্ধ থাকাতে কিছু বলতেও পারছে না সে। আব্রাহাম আইরাতের অবস্থা বুঝতে পারলো। কিন্তু এবার হলো তার বিপরীত। আব্রাহাম আইরাতকে দেখে থামার বদলে আরো বেশি হিংস্র হয়ে উঠলো। আব্রাহামের রাগ যেন এখন সপ্তম আসমানে পৌঁছে গেছে। আব্রাহাম এবার দুলালের দিকে তাকালো দেখলো দুলালের মাঝে এখনো জীবন বাকি আছে। আব্রাহাম তা দেখে সেই লোহার শিকটা তার হাত দিয়ে একটানে তুলে ফেললো। দুলাল আবার চিল্লিয়ে ওঠে। এবার আব্রাহাম সেই শিকটা সোজা দুলাল ডান চোখে ঢুকিয়ে দেয়, চোখ বেড়িয়ে আসে,, এবার আর আইরাত তার নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না মাথা ঘুড়িয়ে অন্যপাশ তাকিয়ে থাকলো। আব্রাহাম আবার শিকটা তুলে এবার বাম চোখের ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো। শিকটা মুচড়াতে থাকে। এবার শিক তুলে দূরে ছুড়ে ফেলে দেয় সে। এক হাটু ভাজ করে দুলালের পাশে বসে পরে আব্রাহাম। দুলালের বুকে যেখানে শিক ঢুকানো হয়েছিল সেই ক্ষত স্থানে দুহাত দিয়ে নিজের পুরো শক্তি দিয়ে তার বুক একদম ছিড়ে ফেলে আব্রাহাম। দুহাত দিয়ে দুলালের দেহ টাকে একদম ক্ষত বিক্ষত করে ফেলেছে সে। পুরো সাইকোর মতো আচরণ করছে আব্রাহাম। কেউ এখন আব্রাহামকে দেখলে নিশ্চিত জ্ঞান হারাবে। প্রচুর পরিমাণে হিংস্র লাগছে তাকে দেখতে। আইরাত এবার আর নিজেকে স্থির রাখতে পারলো না ভয়ের চোটে জোরে কান্নাই করে দিলো। আব্রাহামের যত রাগ আছে তার সবটুকুই দুলালের ওপর ঢেলে উঠে দাড়ায় সে। দুলাল মৃত্যুর কোলে ঢলে পরে। আব্রাহামের তেজ তবুও থেকেই যায় অবশেষে রাগ সামলাতে না পেরে দুলালের লাশকে নিজের পা দিয়ে বেশ জোরে এক লাথি দেয় এবং দুলালের ক্ষত বিক্ষত লাশ দূরে গিয়ে পরে। দুলালের লাশ দেখে যে কেউ ভাববে যে তাকে কোন এক জংলী জন্তু মেরে খুবলে খুবলে খেয়েছে।

আব্রাহাম;; তোর ওই অপবিত্র রক্তে আমি নিজের হাত অপবিত্র করতে চাই না।

এই বলে নিজের হাত পরিষ্কার করে নিলো। তারপর সে আইরাতের কাছে এগিয়ে যায়।











❤️❤️চলবে~~~~~
.

#Gangstar In Love🖤🥀___A psycho love story””

#Writer; Tamanna Islam

#part__ 44

🤎🦋..
..
..
..
..
..

আব্রাহাম আইরাতের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাত এখনো ভয়ে চোখ মুখ কুচকে মাথা নিচু করে আছে। আব্রাহাম তার দুহাত ভাজ করে আইরাতের দিকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়েই আছে। আজ এই প্রথম আইরাতের চোখে আব্রাহাম তার জন্য এতো ভয় দেখছে। আশেপাশে আর কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে আইরাত পিটপিট পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো। সামনে তাকাতেই আব্রাহামের ভাজ করা দুহাত চোখে পরে। মাথা উঁচু করে তাকাতেই দেখে আব্রাহাম অগ্নি চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আব্রাহাম আইরাতের দিকে কিছুটা ঝুকে একে আইরাত সাথে সাথেই আবার চোখ কুচকে মাথা নিচু করে ফেলে। আব্রাহাম এবার আইরাতের হাতের বাধন খুলে দিতে থাকে। আইরাত অবাক চোখে শুধু আব্রাহামের কান্ড দেখে যাচ্ছে ,, সে লোকটা একটু আগেই পশুর থেকেও হিংস্র আর ভয়ংকর ছিলো আর এখন কিনা তাকে দেখে মনে হচ্ছে যে তার থেকে বেশি কেয়ার আর কেউই করতে পারবে না। বাধন খুলে দেওয়ার পর আব্রাহাম আইরাতের বসে থাকা চেয়ারের পাশে দুহাত দিয়ে আইরাতের বেশ কাছে ঝুকে বসলো,, আইরার মাথা এখনো নিচু করেই বসে আছে। আব্রাহাম খেয়াল করলো যে আইরাত তার ভয়ে এখনো থরথর করে কাপছে। আব্রাহাম ক্ষীণ নিঃশ্বাস ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আইরাতের মুখ থেকে কাপড় সরিয়ে দিলো। আইরাত যেন এবার তার বুক-মন ভরে শ্বাস নিচ্ছে। জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে আর আড়চোখে আব্রাহামকে দেখে যাচ্ছে। এবার আব্রাহাম বলে উঠলো…

আব্রাহাম;; চলো এখান থেকে।

আইরাত;; _____________

আব্রাহাম;; চলো,,

আইরাত;; আআপনি এএএভাবে দুদুদলালকে মেমেরে ফেললেন!

আব্রাহাম চলে যেতে নিয়েছিলো আইরাতের এমন প্রশ্নে আব্রাহাম আবার পিছন ফিরে তাকায়।

আব্রাহাম;; কেনো তোমার বুঝি ওর জন্য খুব খারাপ লাহছে (এক ভ্রু উচু করে)

আইরাত;; আমমি ততা বলিনি আসলে..

আব্রাহাম;; এখন আমি কাকে কিভাবে মারবো তার কৈফিয়ত কি তোমাকে দিতে হবে। মাফিয়া আমি, এই সব খুন খারাবা না করলে আমার মাথা ঠিক থাকে না and It’s not a big deal… Now come… (দাতেঁর চোয়াল শক্ত করে)

আব্রাহাম এই কথা বলেই আর এক মূহুর্ত আইরাতের জন্য না দাঁড়িয়ে চলে গেলো। আইরাত এই প্রথম দেখলো যে আব্রাহাম তার সাথে এতো রুড ভাবে কথা বলছে। এতে আইরাতের বেশ খারাপ লাগে এতে,, আর আব্রাহামকে এতোদিন ভুল বুঝার জন্য তার ওপর করা অন্যায়ের জন্য, তার থেকে দূরে থাকার জন্য এখন আইরাতের মাঝে বেশ অনুশোচনা কাজ করছে। আইরাত আব্রাহামকে এভাবে চলে যেতে দেখে নিজের আশেপাশে চোখ বুলায়। প্রচুর ভয়ানক লাগছে এখন এই ঘরটা। হুট করেই আইরাতের চোখ যায় ঘরে পরে থাকা রক্তাক্ত-ক্ষত বিক্ষত দুলালের লাশ টা। আইরাতের গা কেমন শিউরে উঠে,, গুলিয়ে যায় সবকিছু। ভয় পেয়ে এক দৌড় দিয়ে আইরাত দ্রুত সেই ঘর ত্যাগ করে। বাইরে যেতেই দেখে আব্রাহাম অয়নের সাথে কথা বলছে। তার মানে অয়নও এখানে এসে পরেছে।

আব্রাহাম;; আমি এখন ওকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি, ট্রাই করবো যেন বেশি একটা ভয় না পায়।

তখনই আব্রাহামের সব বডিগার্ড রা এসে পরলো। দুলালের চেলাদেরও তারা ধরে নিয়েছে। তারা এখন আধা মরা, জীবন মরণের মাঝে ঝুলছে।

অয়ন;; আচ্ছা দাভাই, আর বউমনি তো…

আব্রাহাম;; কোন কথা না অয়ন, ও থাকতে চায় না আমার কাছে, ভয় পায় আমাকে দেখে ও ঘৃণা করে। আমি আর কিছুই করবো না ওকে ওর মতো করে ছেড়ে দিবো। শুধু এইটা যেনে রাখ আমি ওকে অনেক বেশিই ভালোবাসি। আর আমার ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আইরাত একদিন নিজে আমার কাছে ফিরে আসবে। আর আমি ওর জন্য অপেক্ষা করবো।

অয়ন;; দাভাই…

আব্রাহাম;; অয়ন তোর কাজ এইটুকুই ছিলো বডিগার্ড র’ এসে গিয়েছে এবার তুই রাত্রির কাছে যা, তাদের গিয়ে বল যে আইরাত একদম ঠিক আছে। আমরা একটু পরেই এসে পরবো।

অয়ন;; ঠিকআছে ভাই।

অয়ন মুচকি হেসে আব্রাহামকে জড়িয়ে ধরে। আব্রাহামও তাকে শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে। অয়ন আইরাতের দিকে এক নজর তাকিয়ে তারপর চলে যায় রাত্রিদের ফ্লেটে। আইরাত তাকিয়ে দেখে যে আব্রাহামের সকল বডিগার্ডরা গাড়ি থেকে ঘাড় ধরে এক এক করে দুলালের সাথে যারা কাজ করতো তাদের নামাচ্ছে।তাদের অবস্থা অনেক বেশিই খারাপ। আইরাত দেখে আব্রাহাম দাঁড়িয়ে আছে। আএ এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে তাতে তাকে দেখে এমন মনে হচ্ছে যেন কিছুই হয়নি। আইরাত ধীর পায়ে আব্রাহামের দিকে এগিয়ে যায়। আইরাতকে তার দিকে এগিয়ে আসতে দেখেও আব্রাহাম না দেখার ভান করে। আইরার তার একদম কাছে চলে আসলে আব্রাহাম কোঠর গলায় বলে উঠে..

আব্রাহাম;; গাড়িতে ওঠো।

আইরাত;; (আইরাত কিছু না বলে শুধু ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, আজ কেন জানি আব্রাহামের সব কথা গুলো তার পাথর সমান লাগছে)

আইরাতকে কিছু বলতে না দেখে আব্রাহাম এবার নিজেই গিয়ে গাড়ির ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসে পরে। আব্রাহামের এমন হুটহাট চলে যাওয়াতে আইরাত বোকা বনে গেলো।

আইরাত মনে মনে;; কি লোক রে বাবা দ্বিতীয় বার জিজ্ঞেস পর্যন্ত করলো না। আইরাত আবার তার পাশে তাকিয়ে দেখলো আব্রাহামের বডিগার্ড গুলো দুলালের লাশ ধরে ধরে আনছে। আর দুলালের লাশ থেকে তার মাংস গুলো সব খয়ে খয়ে পরছে,, ইশশশশশ কি ভিবৎস দৃশ্য। আইরাত এই সবকিছু আর না দেখতে পেরে দ্রুত গিয়ে আব্রাহামের পাশে বসে পরলো।





অন্যদিকে, অয়ন জলদি গাড়ি ঘুড়িয়ে রাত্রির কাছে চলে যায়। ওপরে রাত্রির ঘরে চলে গেলে কলিংবেল বাজানোর আগেই রাত্রি হুড়মুড় করে দরজা খুলে দেয়। অয়ন রাত্রি কে দেখে চুপ হয়ে যায়। অয়নের মুখে চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে। রাত্রির তা দেখে কলিজা শুকিয়ে গেলো। রাত্রিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিপাও জলদি করে ছুটে এলো। রাত্রি তাড়াতাড়ি করে অয়নের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো।

রাত্রি;; অয়ন, একা কেন তুমি? তুমি না বললে আইরু কে নিয়েই আসবে তাহলে আইরু কোথায়? (অয়নের আশে পাশে তাকাতাকি করে)

অয়ন;; বউমনি, আইরাত বউমনি।

অয়নের এমন কথায় রাত্রি বেশ অবাক হয়ে গেলো।

রাত্রি;; বউমনি! বউমনি মানে?!

অয়ন;; রাত্রি-নিপা, আমি ঠিক জানি না যে আমি কিভাবে কোথা থেকে শুরু করবো। আর কিভাবেই বা বলবো কিন্তু এমন অনেক কিছুই আছে যা তোমাদের অজানা।

নিপা;; কি বলছ তুমি এইসব অয়ন?

অয়ন;; প্লিজ নিপা ভুল বুঝবে না কিন্তু সত্য জানার পর হয়তো তোমরা অনেক বড়সড় একটা ঝটকা খেতে পারো কিন্তু এই সত্য তোমাদের মেনে নিতেই হবে।

রাত্রি;; অয়ন প্লিজ কিথা ঘুড়িয় না সোজাসোজি বলো।

অয়ন;; নিপা-রাত্রি আইরাত কোন অনাথ আশ্রমে বেড়ে ওঠে নি। আইরাতের পুরো নাম নুজাইফা বিনতে আইরাত আর আইরাত আব্রাহামের দাভাইয়ের বউ। মিসেস. আইরাত আব্রাহাম আহমেদ চৌধুরী।

নিপা;; অয়ন কি বলছ এইসব, আইরাত কিভাবে আব্রাহামের?!

অয়ন;; বিশ্বাস করতে কষ্ট হলেও এটাই সত্যি। আইরাত আব্রাহাম দাভাইয়ের বিয়ে করা বউ এবং আমার বউমনি হয়। আইরাত রাজনৈতিক নেতা আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী এবং আতিয়া আহমেদ চৌধুরীর একমাত্র মেয়ে। আর এই আশরাফুল আহমেদ চৌধুরী আর আমাদের বাপি আবির আহমেদ চৌধুরী আপন ভাই। সম্পর্কে আব্রাহাম দাভাই, আইরাত বউমনি এবং আমি আপন চাচাতো-জেঠাতো ভাইবোন। কিন্তু আইরাত বউমনির বাবা আমাদের পুরো পরিবার কে ধ্বংস করে দেয় একমাত্র সম্পত্তি এবং শক্তির লোভে। আব্রাহাম দাভাই আইরাত বউমনি কে প্রথম দেখাতেই ভালোবেসে ফেলে এবং জোর করে এনে বিয়ে পর্যন্ত করে। কিন্তু দুলাল নামে এক জানোয়ার আইরাত বউমনির ওপর নজর দেয়। আশরাফুল আহমেদ এবং আতিয়া আহমেদ কে এই দুলাল মেরে ফেলে। তখন আব্রাহাম দাভাই তাদের লাশের কাছে গিয়ে তাদের বাচানোর চেষ্টা করে আর তখনই আইরাত বউমনি এসে সবকিছু ভুল বুঝে, ভুল বুঝে যে আব্রাহাম দাভাই বউমনির বাবা-মা কে খুন করে। তারপর রাগ-ক্ষোভে বউমনি দাভাইয়ের ওপর গুলিও চালায়। কিন্তু ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস দেখো আচমকা তখন এক ট্রাকের সাথেই আইরাত বউমনির এক্সিডেন্ট হয়। আর তখনই তোমরা বউমনিকে রাস্তায় অভাবে খুঁজে পাও। এমন কোন জায়গা নেই যেখানে বউমনিকে খুজিনি কিন্তু কোথাও পাইনি। আর যখন পেলাম তখনও বউমনি নিজের মনে ভাইয়ের জন্য ভুল ভাবনা আর একরাশ ঘৃণা নিয়ে বসে ছিলো। আইরাত বউমনি কে না পেয়ে আমার ভাই কেমন যেন পাগল হয়ে গিয়েছিলো। আর আজ এই দুলালই আইরাত বউমনি কে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো কিন্তু আব্রাহাম ভাই দুলালকে আজ খুন করেছে নিজ হাতে কারণ সে আব্রাহাম ভাইয়ের কলিজাতে হাত দিয়েছে।

~~

অয়নের পুরো কথা শুনে নিপা ধুপ করে বিছানাতে বসে পরে এবং রাত্রির চোখ দিয়ে টপ করে পরে।

নিপা;; আমার কেন যেন সবকিছু কাল্পনিক লাগছে, কিছুই বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।

রাত্রি;; আমি খুশি যে আইরাতেরও পরিবার আছে সব আছে কিন্তু আইরাত একটাবারের জন্য কি আমাদের বলতে পারেনি।

অয়ন;; রাত্রি (রাত্রির গালে নিজের দুহাত রেখে)
রাত্রি প্লিজ দেখো যা হয়েছে হয়েছেই প্লিজ সবকিছু এবার মেনে নাও।

রাত্রি;; হ্যাঁ তাইতো।

নিপা;; আইরাত কোথায় অয়ন?

অয়ন;; আব্রাহাম দাভাই তাকে নিয়ে আসছে।

নিপা;; ওহহ্

অয়ন;; তোমারা থাকো আমি আসি এবার। রাত্রি নিজের খেয়াল রেখো এন্ড প্লিজ আইরাত এলে সব বুঝে নিও। নিপা আমি যাই।

নিপা;; হুমমম।

অয়ন তাদের সবকিছু বলে দিয়ে তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে আসে। কিন্তু রাত্রি আর নিপা যেন এখনো এক ঘোরের মাঝে আছে। অয়নের বলা সব কথাগুলো তাদের কানে বাজছে।

ওদিকে আব্রাহাম আর আইরাত গাড়িতে করে যাচ্ছে। আজ আইরাতের মন মেজাজ শান্ত নেই। কেমন যেন ছটফট করছে আইরাত। অন্যান্য দিন আব্রাহাম বারবার আইরাতের দিকে তাকায় আর কথা বলে কিন্তু আজ, আজ যেন কেউ মুখে তালা লাগিয়ে দিয়েছে। আইরাত বারবার আব্রাহামের দিকে তাকাচ্ছে সে বারবার চাইছে যে আব্রাহাম যাতে তাকে কিছু বলে কিন্তু না আব্রাহাম কোন কিছুই না বলে একদম সোজা তাকিয়ে ড্রাইভ করেই যাচ্ছে।চোখজোড়া তার সামনে একদম স্থির। যেন নিজের মাঝে কোন অনূভুতি নেই। আইরাত আব্রাহামের এমন বিহেভ সহ্য করতে পারছে না। তাই আইরাত এবার কান্না করে দিলো। আব্রাহাম বেশ বুঝতে পেলো যে আইরাত তার দিকে মায়া ভরা চোখে তাকিয়ে কানছে কিন্তু তাতেও যেন আব্রাহামের কোন হুশ খেয়াল নেই সে তার মতো করেই গাড়ি লাগাতার চালিয়ে যাচ্ছে। আইরাত এবার সামনের দিকে ঘুড়ে বসে থাকলো কোন কথায় যেন তার মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না। আব্রাহাম কে সে কি বলবে, কি বলে নিজের ভুল ভাংবে তা আইরাতের জানা নেই। কিন্তু নিজের ভিতরে যে অনুশোচনা সে বয়ে বেড়াচ্ছে তা আর নিজের ভিতরে দমিয়ে রাখা কোন ক্রমেই সম্ভব না তার পক্ষে। কিন্তু আব্রাহামের এমন ভয়ানক রুপ দেখার পর আইরাতের আর সাহস হচ্ছে না আব্রাহামকে কিছু বলার যদি আব্রাহাম আইরাতের ওপরে ক্ষেপে যায় তাহলে। আইরাত এইসব ভেবেই ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করে চলেছে।

প্রায় ২৫ মিনিট পরে আব্রাহাম হঠাৎ করেই জোড়ে ব্রেক কষে গাড়ি থামায়। আইরাত আব্রাহামের দিকে তাকায়, কিন্তু নাহ্ এইবারও আব্রাহামের কোন হেলদুল নেই সেই একই ভাবেই সামনের দিকে তাকিয়ে আছে সে। মনে হচ্ছে কোন পাথর। আইরাত কিছু না বুঝেই আব্রাহামের দিকে ডেবডেব করে তাকিয়ে থাকে। আব্রাহাম তা দেখে বলে ওঠে…

আব্রাহাম;; আমরা এসে পরেছি।

আইরাত আব্রাহামের কথা শুনে গাড়ির জানালা বাইরে সম্পূর্ণ তাকিয়ে দেখলো যে তারা তাদের ফ্লেটের নিচে দাঁড়িয়ে আছে। আইরাত আবার আব্রাহামের দিকে তাকায়।

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; ________________

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; আব.. আআমি

আব্রাহাম;; বাসার সামনে এসে পরেছি গাড়ি থেকে নামো।

আইরাত;; আব্রাহাম আপনি (হিচকি তুলে)

আব্রাহাম;; গাড়ি থেকে নামতে বলেছি শুনতে পাও না তুমি!!

আব্রাহামের এমন ধমকে আইরাতের আত্মা কেপে উঠলো। পুনরায় আর আইরাতের কোন কথা বলার সাহস হলো না। ঘটঘট করে আইরাত গাড়ি থেকে নেমে পরে। নেমে গাড়ির বাইরে আব্রাহামের পাশে জানালার কাছে এসে দাড়ালো আইরাত। আইরাত কিছু একটা বলতে যাবে তার আগেই আব্রাহাম বলে ওঠে…

আব্রাহাম;;।”আজ থেকে তুমি মুক্ত, তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি চাইছিলে তাই না, নাও দিয়ে দিলাম আমি আমার কাছ থেকে তোমাকে মুক্তি, তোমার ওপর আমার আর কোন অধিকার থাকলো না, আজ থেকে তুমি মুক্ত আইরাত”।


আব্রাহাম এই কথা গুলো এক নাগারে বলে গেলো শেষের কথাটা বলার সময় আব্রাহাম এক নজর আইরাতের দিকে তাকায় কিন্তু পরক্ষণেই আবার চোখ ফিরিয়ে নিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায় আর আইরাত সেখানেই ঠাই দাঁড়িয়ে থাকে। আব্রাহাম এভাবে তাকে রেখে চলে গেলো। আব্রাহামের প্রতিটি কথা যেন আইরাতের ভিতরে একদম দুমড়েমুচড়ে দিচ্ছে। মনে হচ্ছে কেউ ছুরি দিয়ে আইরাতের ভেতরটা একদম ক্ষত-বিক্ষত করে ফেলছে। আইরাত বেশ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে স্থিরভাবেই চোখের পানি ফেলতে লাগলো। তারপর আপনমনে সামনে এগিয়ে ভিতরে চলে যেতে লাগে।

আইরাত ওপরে ওঠে ভিতরে গেতেই নিপা বলে ওঠে…

রাত্রি;; এসেছিস?!

আইরাত;;____________

রাত্রি;; আইরু মানলাম তোকে একদিন ওভাবে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পেয়েছি কিন্তু বিশ্বাস কর কখনোই তোকে পর মনে করিনি,, নিজের বোনের চেয়েও ঊর্ধ্বে ভেবেছি তোকে।

আইরাত;;_____________

নিপা;; তোকে কতটা নিজের ভেবেছি তা কেবল আমরাই জানি। কিন্তু তুই, তুই কি করেছিস আইরাত। আমরা তোকে কতো জিজ্ঞেস করেছি যে কি তোর আসল পরিচয় কিন্তু তুই আমাদের বলিস নি। একটা বার কি আমাদের তোর সত্য জানানোর প্রয়োজনবোধ করিসনি তুই। এতো টাই পর হয়ে গিয়েছিলাম আমরা।

রাত্রি আর নিপার এই কথা গুলো আর মেনে নিতে পারছে না আইরাত তাই আর কিছু না বলে আইরাত সোজা তাদের শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরলো এবং অঝোর ধারায় কেদে দিলো।

আইরাত;; নারে তোরা কেউই আমার পর না। না ই কখনো ছিলি আর না ই কখনো হবি। তোরা আমার কাছে যে ঠিক কতোটা গুরুত্বপূর্ণ তা কেবল আমিই জানি। তোদের আমি পর কখনো ভাবতেই পারিনা। আমি অনেক ভেবেছি যে তোদের সত্য টা বলে দিই কিন্তু আমার ভয় করতো এই ভেবে যে যদি তোরা আমাকে ভুল বুঝে আমার ফেলে চলে যাস তাহলে। তোদের অনেক ভালোবাসি রে অনেক বিশ্বাস কর। (ফুপিয়ে ফুপিয়ে কেদে)

আইরাতের নাজেহাল অবস্থা দেখে রাত্রি আর নিপা আইরাতকে ছেড়ে দাঁড়ালো। নিপা আর রাত্রি আইরাতকে শান্তনা দিয়ে চুপ করানোর অনেক চেষ্টা কিরছে

রাত্রি;; আচ্ছা ব্যাস ব্যাস হয়েছে এইবার হয়েছে প্লিজ থাম চুপ কর। একটু শান্ত হো।

নিপা;; আইরু শান্তি হো।

নিপা আর রাত্রি অনেকক্ষণ চেষ্টা করে আইরাতকে চুপ করালো।




রাতে🌃~~

আইরাত বারান্দায় হাত-পা জোড়সড় করে বসে আছে। দুহাতের ভাজে নিজের মুখ লুকিয়ে রেখেছে। বারবার ফুপিয়ে কেঁদে উঠে সে। নিপা আর রাত্রি অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে কিন্তু কোন লাভই নেই। আইরাত এখন যে পরিস্থিতি তে রয়েছএ তাতে করে তাকে একা থাকতে দেওয়াই উত্তম। আইরাত অনেকক্ষণ যাবত কান্না করে বুক ভাসানোর পর মুখ উঁচু করে তাকায়। চোখের পানি মুছে চোখ মুখ শক্ত করে তাকায়। এবং সিন্ধান্ত নেয় যে কালকেই আব্রাহামের বাড়িতে যাবে চৌধুরী ভবনে।

আইরাত;; অনেক হয়েছে আর না। অনেক দূরে দূরে আমি থেকেছি আর আপনাকেও কষ্ট দিয়েছি আর না। এখন আপনি আমার পাগলামি দেখবেন।











❤️❤️চলবে~~~~~

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে